অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২১

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২১
ইয়াসমিন খন্দকার

আরিশা সকালে ঘুম থেকে উঠে একটু বাগানের দিকে এসেছে৷ তার মনটা খুব একটা বেশি ভালো লাগছে না। তাই মনটা ভালো করতে আরিশা বাগানে এসে বিভিন্ন ফুল দেখছিল। জাঈদের বাড়ির বাগানটি নানান ফুলে সাজানো। আরিশা বাগানেই ঘোরাফেরা করছিল এমন সময় হঠাৎ করে তার সম্মুখে এসে দাঁড়ায় সায়ন। সায়নকে দেখেই আরিশা বলে ওঠে,”আপনি?”
সায়ন বলে,”বাগানে একটু ঘুরতে এলাম। আমিও কিন্তু আপনাকে দেখে অবাক হয়েছি।”
আরিশা আর কথা না বাড়িয়ে অন্যদিকে যেতে চায়। এমন সময় সায়ন বলে ওঠে,”একটু আসুন না,গল্প করে সময় টা কাটাই।”

আরিশা বলে,”আমার এখন গল্প করার কোন শখ নেই।”
“আপনি হয়তো আমায় ভুল ভাবছেন..আমি কিন্তু কোন বখাটে টাইপ বা গায়ে পড়া ছেলে না। আমি তো জাস্ট আপনার সাথে বন্ধুত্ব করতে চাইছি।”
আরিশা সায়নের উদ্দ্যেশ্যে বলে,”আপনাকে আমি তেমন কিছু মনে করছি না। তবে হ্যাঁ, আমি এভাবে হুটহাট কারো সাথে বন্ধুত্ব করি না। আশা করি, আপনি আর আমাকে এই নিয়ে কিছু বলবেন না।”
বলেই আরিশা অন্যদিকে চলে যায়। সায়ন একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। এদিকে আরিশা একটু আগাতেই কেউ একটা তার হাত ধারণা টান দেয়৷ আরিশা কিছু বুঝে ওঠার আগেই জাঈদের বুকের উপর এসে পড়ে। জাঈদকে নিজের এত কাছে দেখে আরিশা হতবাক হয়ে যায়। দূরে সরে আসার চেষ্টা করলে জাঈদ আরিশাকে নিজের আরো কাছে টেনে এনে বলে,”চুপচাপ এখানে দাঁড়াও। কি কথা বলছিলে ঐ ছেলেটার সাথে?”
আরিশা বলে,”মানে?”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“এমন ভাব করছ যেন ভাজা মাছ উলটে খেতে জানো না! সায়নের সাথে এত কিসের ঘনিষ্ঠতা তোমার? কাল রাতেও দেখছিলাম ওর সাথে কথা বলছিলে। বড়লোকের ছেলে দেখে কি নিজেকে সামলাতে পারছ না? কি ভেবেছ, ওর গায়ে ঢলে পড়ে আমার হাত থেকে মুক্তি পাবে? তাহলে ভুল ভাবছ। তোমার যা রূপ, তোমাকে কেউই গুরুত্ব দেবে না। হয়তোবা শুধু মস্তি করার জন্য…”
জাঈদ নিজের কথা শেষ করতে পারে না। তার আগেই জাঈদের গালে ঠাস করে থা*প্পড় বসিয়ে দেয়। জাঈদ কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিশা তাকে চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,”চুপ..নিজের এই নোংরা মুখ আর খুলবেন না। আপনি যখনই মুখ খোলেন তখনই আপনার মুখ থেকে দূগন্ধযুক্ত কথা বের হয়। আপনি নিজের মুখটা বন্ধ রাখুন সেটাই ভালো। নাহলে কাল মাথা ফাটিয়েছি আর আপনার জিহ্বা টেনে ছিড়ব।”
“তুমি আমাকে হুমকি দিচ্ছ?”

“দিচ্ছি। কি ভেবেছেন আপনি? শুধুমাত্র নিজের আপ্পির কথা ভেবে আমি এখানে আছি জন্য আপনি আমায় কিনে নিয়েছেন? আমায় যা খুশি তাই বলতে পারবেন? যদি এমনটাই ভেবে থাকেন তাহলে ভুল ভাবছেন। আমি আরিশা, আমি কোন কিছুর পরোয়া করি না। আমাকে নিয়ে ভবিষ্যতে এমন জঘন্য কথা বলার আগে দুবার ভাববেন। আর আপনার ঐ খালাতো ভাইয়ের প্রতি আমার কোন আগ্রহ নেই, বুঝেছেন? আপনি বরং তাকে গিয়ে বলে দিন আমার থেকে দূরে থাকতে।”
জাঈদ এবার নিজের গলার স্বরটা কিছুটা নরম করে বলে,”তুমি সত্যি বলছ তো? তোমার সায়নের প্রতি কোন আগ্রহ নেই?”
“না, নেই।”

জাঈদ যেন খুব খুশি হয় এই কথাটা শুনে। অতঃপর আরিশাকে যাওয়ার জন্য পথ ছেড়ে দিয়ে বলে,”বেশ, আমি ওকে বলে দেব যেনো তোমায় আর বিরক্ত না করে। তুমি এখন যাও, নিজের রুমে যাও। আর এখন বেশি বাইরে আসতে হবে না। যথাসম্ভব রুমেই থেকো।”
আরিশা অবাক চোখে জাঈদের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবে,”এনার আবার কি হলো? এমন কথা কেন বলছেন?”
তবে ব্যাপারটা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে নিজের রুমের দিকে তাকালো।

সন্ধ্যা ও সায়ন একসাথে বসে ছিল৷ দুজনই নানান গল্প করছিল। কথায় কথায় সন্ধ্যা বলে ওঠে,”আচ্ছা, ভাইয়া৷ তোমার ঠিক কিরকম মেয়ে পছন্দ, বলো তো?”
সন্ধ্যার কথাটা শুনেই সায়নের সামনে আরিশার চেহারটা ভেসে ওঠে। সায়ন বলে ওঠে,”যার চোখে মুখে থাকবে অদ্ভুত এক মায়া। খুব একটা সুন্দর হতে হবে না তাকে, আমি তার মায়াবী চেহারা দেখেই সারাজীবন কাটিয়ে দিতে পারব। তার নিষ্পাপ মুখশ্রী, রাগী রাগী চোখ, তেজি স্পষ্ট কথাবার্ত সবই যেন আমায় মুগ্ধ করে।”
নিজের ভাইয়ের মুখে এসব কথা শুনে সন্ধ্যা মনে মনে ভাবে,”আদৃতার সাথে তো এর প্রায় সব বৈশিষ্ট্যই মিলে যায়। তার মানে ভাইয়া কি আদৃতা পছন্দ করে?”
এহেন ভাবনা থেকেই সন্ধ্যা সায়নকে প্রশ্ন করে বসে,”তাহলে কি তোমার পছন্দের কেউ আছে?”
সায়ন বলে,”হ্যাঁ, প্রথম দেখাতেই সে আমার মন কেড়ে নিয়েছে।”

“তার নামটা কি/”
“নাম তো বলা যাবে না।”
“আমি বোধহয় কিছুটা বুঝতে পারছি ভাইয়া। তার নামের প্রথম অক্ষর কি ” আ” ”
সায়ন অবাক স্বরে বলে,”হ্যাঁ, আ। কিন্তু তুই কিভাবে বুঝলি?”
“আমার চোখকে তুমি ফাঁকি দিতে পারবে না ভাইয়া। আমি ঠিকই বুঝে গেছি তোমার মনের কথা।তো বল, বাবা-মাকে কি কথাটা জানাবো? তোমার বিয়ের ফুলটা তাহলে ফুটুক।”
সায়ন বলে,”এত তাড়াহুড়ো কেন? আগে তাকে নিজের মনের কথাটা জানাই। আমার প্রতি তার অনুভূতি আছে কিনা সেটাও তো জানতে হবে।”
“তোমাকে এত ভাবতে হবে না। বাকি সবকিছু আমি সামলে নেব।”

বলেই সন্ধ্যা একটা হাসি দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। অতঃপর চলে যায়৷ এদিকে সায়ন একা বসে থাকে। কিছু সময় বসে থাকার পর সায়ন খেয়াল করে যে, আরিশা একা একা কোথাও যেন যাচ্ছিল। তাকে যেতে দেখেই সায়ন আরিশার কাছে গিয়ে পিছন থেকে ডাক দিয়ে বলে,”এই যে শুনুন..”
আরিশা পিছন ফিরে তাকায়৷ তার চোখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। সায়ন সেসবকে পাত্তা না দিয়ে বলে,”আপনি কি এখন ফ্রি আছেন?”
“না, নেই।”
“দু মিনিট একটু দাঁড়াবেন আপনার সাথে কিছু জরুরি কথা আছে।”
“পারবো না।”
“দু মিনিটেরই তো ব্যাপার। একটু দাঁড়ান না।”

এমন সময় হঠাৎ করে জাঈদ সেখানে চলে আসে। জাঈদ এসেই বলে,”কি হচ্ছে টা কি এখানে?”
জাঈদকে দেখামাত্রই আরিশা বলে,”আপনার খালাতো ভাই আমার সাথে দুই মিনিট কথা বলতে চাইছে। আপনিই বলুন,আমার কি করা উচিৎ?”
জাঈদ শক্ত কন্ঠে বলে,”তুমি এখান থেকে যাও। সায়নের সাথে আমি কথা বলে নিচ্ছি।”
আরিশা চলে যায়। আরিশা যেতেই জাঈদ সায়নকে বলে ওঠে,”কি ব্যাপার সায়ন? আমাদের বাড়ির সামান্য একটা আশ্রিতা মেয়ের সাথে তোমার এত কিসের কথা? ”

জাঈদ সায়নের থেকে দুই বছরের বড়। তাই সায়ন জাঈদকে কিছুটা সম্মান দিয়ে বলে,”আসলে জাঈদ ভাই, কি আর বলবো..মেয়েটার ব্যাপারে সব শুনলাম। মেয়েটা কত কষ্টে আছে। কিন্তু মেয়েটা বোধহয় এত কষ্ট ডিজার্ভ করে না। ও তো একটা সুখী জীবন ডিজার্ভ করে তাই না? আপনি একটু ব্যাপারটা ম্যানেজ করে দিতে পারবেন()আমি চাই আরিশাকে একটু সুখী দেখতে। আমি বৈধভাবে ওর দায়িত্ব নিতে প্রস্তুত আছি। ওকে প্রথম দেখাতেই আমি..”
“তুমি যা ভাবছ তা সম্ভব নয়। কারণ আরিশা বিবাহিত।”
“সেটা তো জানি আমি। কিন্তু ওর স্বামী তো ওকে ত্যাগ করেছে। তাহলে অসুবিধা কোথায়?”
“ওর স্বামী ওকে আবার নিজের কাছে ফিরিয়ে নেবে। সমস্যাটা এখানেই। তাই বলছি ওর থেকে দূরে থাকো। এটাই তোমার জন্য ভালো হবে। ”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২০

বলেই জাঈদ স্থান ত্যাগ করে। আর সায়ন জাঈদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,”আমি যা পছন্দ করি তাকে নিজের করেই ছাড়ি। আরিশাও আমার হবে।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২২