প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১২

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১২
মারশিয়া জাহান মেঘ

ধ্রুব পারফিউম দিয়ে মাত্রই চুল ঠিক করছিল, তখনি কল আসে তার ফোনে। স্মিতা কল দিয়েছে ওকে। মুখে ফোটে উঠে হাসি। ঝলমলে হেসে কল ধরলো সে। বললো,
“কেমন আছ স্মিতা?”
“ভালো আছি ধ্রুব, তুমি?”
“আলহামদুলিল্লাহ, আমি ভালো আছি।”
“তোমার কথা ভাবছিলাম অনেকদিন ধরে।”
“আমিও। তবে, সা হ স হয়নি কল দিতে।”

“আমাকে কল দিতে তোমার সাহসের প্রয়োজন কেন পড়বে স্মিতা? আ’ম অলওয়েজ ফ্রি ফর ইউ।”
ওপাশ থেকে শোনা গেল, স্মিতার ঝলমলে হাসি। শব্দ দিয়ে ঘেরা হাসি। আঁধারীনি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছে, মেয়েটা সুখ অনুভব করছে ধ্রুবের সাথে কথা বলে। আঁধারীনি দরজার বাইরে থেকে সব শুনছে ধ্রুব আর স্মিতার কথা। সে এসেছিল, ধ্রুবকে নিচে নিয়ে যেতে, ডিনার করার জন্য। দরজাতেই পা থামিয়ে দিলো। ধ্রুব বললো,
“স্মিতা, আসো, একদিন দেখা করি, কথা বলি। অনেকদিন তোমার ওই সুন্দর চোখ, সুন্দর, হাসি দেখি না।”
“কেন তোমার ওই কিয়ারা কোথায়?”
“কিয়ারা আমাকে চায়, আমিতো চাই না।”
“তাহলে তুমি কি চাও?”
“আমি তোমাকে চাই স্মিতা, শুধুই তোমাকে।”
আঁধারীনি আর দাঁড়াতে পারলো না। সরে গেল দরজা থেকে। কল কে’টে দেয় ধ্রুব। শব্দ করে নিজে নিজেই হেসে গড়াগড়ি খায় সে। ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় আঁধারীনিকে পেছন থেকে দেখেই স্মিতার সাথে এমন কথা বলার ভান ধরেছিল সে। আপনমনেই হাসতে হাসতে ভাবলো সে,
“এইবার ঠিক জায়গায় ঢিল মে’রেছি।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ধ্রুব রুম থেকে বেরুতেই দেখলো, আঁধারীনি মলিন হয়ে রেলিং ঘেঁ/ষে দাঁড়িয়ে আছে। ধ্রুব ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো,
“কিরে? তোর ওই শায়ান কোথায়? ওকে নিয়ে না ঘুরতে বের হবি?”
আঁধারীনি ধ্রুবর দিকে এক পলক তাকিয়ে, আবারও আনমনে তাকালো আকাশের দিকে। ধ্রুব পুনরায় বললো,
“কিরে, শায়ানের কথা ভাবছিস নাকি?”
“আমি আপনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছুক নয় ধ্রুব ভাই।”
ধ্রুব সানগ্লাসটা পরতে পরতে বললো,
“মুড সুইং হয়েছে বোধহয়। মেয়েদের এমন মুড সুইং টুকটাক হয়। একটু পরেই আবার ডাকবে, “ধ্রুব ভাই..”।
আঁধারীনি বিরক্ত স্বরে বললো,
” উফস, ধ্রুব ভাই….”
“দেখলি? দেখলি? ঠিক ডেকে ফেললি।”
সেই মুহুর্তেই শায়ান আসলো সেইখানে। ধ্রুব আর আঁধারীনিকে কথা বলতে দেখে বললো,
“কি ব্যাপার? কি কথা হচ্ছে এইখানে? আঁধারীনি, চলো যাই।”
আঁধারীনি ধ্রুবর দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে হাত ধরলো শায়ানের। তারপর বললো,
“চলুন।”

ধ্রুব ফোনটা হাতে নিলো। তারপর কিছু একটা টাইপ করতেই আঁধারীনির ফোন বেজে উঠলো। আঁধারীনি কি এসেছে দেখতেই ফোনটা হাতে নেয়। তারপর দেখে ধ্রুব তাকে ম্যাসেজ করেছে। ম্যাসেজে লেখা,
“শায়ানের সাথে গিয়ে দেখ, তারপর? তারপরেরটা তুই নিজেই দেখে নিস, কি হয়।”
পেছন ফিরে তাকায় আঁধারীনি। ধ্রুব সানগ্লাস ঘুরাতে ঘুরাতে ভাব নিচ্ছে।
থমকে গেল আঁধারীনি। মুহুর্তেই দাঁড়িয়ে গেল সেইখান৷ সঙ্গে সঙ্গেই শায়ানকে বললো,
“যাব না আমি।”
“যাব না মানে?”
“না, মানে… আমার না? আসলে মাথাটা কেমন জানি করছে ভাইয়া। আজ না যাই? অন্য একদিন না হয় যাওয়া যাবে।”
শায়ান বুঝলো না ব্যাপারটা। প্ল্যানিং ছিল তার অন্যটা। তা ক্যান্সেল হয়ে গেল! আঁধারীনিকে সে বললো,
“হঠাৎ খারাপ লাগছে শ’রী’র?”
“হ্যাঁ, আমি বরং এখন রুমে যাই।”
কথাটি বলেই আঁধারীনি রুমের দিকে এগিয়ে গেল। শায়ান সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায় ধ্রুবর দিকে। ধ্রুবর চোখাচোখি হতেই, ধ্রুব শি’ষ দিতে দিতে অন্যদিকে চলে গেল। শায়ানের বুঝতে আর বাকি রইলো না যে আঁধারীনি কেন যায়নি। ধ্রুবই যত ন’ষ্টের মূল?

“ধ্রুব, ধ্রুব, ধ্রুব… কতদিন পর তোমার সাথে দেখা হয়েছে। ভাবতেই আনন্দে বিমোহিত হয়ে যাচ্ছি আমি।”
স্মিতা ধ্রুবকে ঘুরাতে ঘুরাতে কথাটি বললো। আঁধারীনি, শায়ান তাদের পাশেই বসে আছে। পলকহীনভাবে ধ্রুবকে দেখছে আঁধারীনি। রা’গে হাত পা কাঁ’প’ছে ওর। ধ্রুব আড়চোখে তাকায় আঁধারীনির দিকে। আঁধারীনি যে রে’গে ফায়ার তা বুঝতে বেগ পেতে হলো না তাকে। স্মিতা একটু আগেই রিসোর্টে এসেছে। আঁধারীনি স্মিতাকে চিনে। খুব ভালোভাবে চিনে। ধ্রুবর ফোনেই স্মিতার ছবি দেখেছিল সে একটা গ্রুপ পিকে। স্মিতা জ’ড়ি’য়ে ধরলো ধ্রুবকে। আঁধারীনি দাঁড়িয়ে গেল বসা থেকে৷ সে যেই সেইদিকে যাবে, তখনি শায়ান আঁধারীনির হাত ধরে ফেলে। ধ্রুব শ’ক্ত করে জ’ড়ি’য়ে ধরে স্মিতাকে। স্মিতা বললো,
“কত বছর পর তোমাকে দেখেছি ধ্রুব। তুমি ঠিক আগের মতোই হ্যান্ডসাম, স্মার্ট আছ। একদম আমার আগের ধ্রুবর মতো।”

আঁধারীনির বু’ক কেঁ/পে উঠলো। ‘আমার আগের ধ্রুবর মতো!” মিনমিনিয়ে বললো সে। শায়ান বললো,
“চলো আঁধার, আমরা বাইরে চলে যাই। আমার মনে হয়, ওদেরকে একটু আলাদা সময় দেওয়া উচিত আমাদের।”
শায়ান এক প্রকার টে’নেই আঁধারীনিকে রুম থেকে বাইরে বের করলো। ধ্রুব ওদেরকে বেরিয়ে যেতে দেখে ছেড়ে দিলো স্মিতাকে। তারপর অনেকটা গম্ভীর হয়ে স্মিতাকে বললো,
“এক্টিং, এক্টিংয়ের মতো করবে, বেশি ঢ’লা’ঢ’লি আমি পছন্দ করি না। মাইন্ড ইট?”

আঁধারীনি নিজের রুমে বসে আছে মন খারাপ করে। শায়ান অনেক বলেছিল, চলো একটু বাইরে যাই, তোমার ভালো লাগবে। কিন্তু, আঁধারীনি যায়নি। তার মনের অসুখ না সারলে ভালো লাগবে কেমন করে? তখনি দরজা খো’লার শব্দ হলো। আঁধারীনি তাকালো সেইদিকে। ধ্রুবকে আসতে দেখে বিছানা থেকে নামলো। তারপর পাশ কা’টি’য়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই, ধ্রুব হাত ধ’রে ফেলে আঁধারীনির। বললো,
“কোথায় যাচ্ছিস?”
“শায়ান ভাইয়ার কাছে।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১১

ধ্রুবের মে’জা’জটা দ্বিগুণ উগ্র হয়ে গেল। দাঁতে দাঁত চে’পে বললো,
”আমাকে জ্বা’লা’তে আসিস না আঁধার, যেই অনলে আমাকে জ্বালাবি, সেই অনলেই তোকে জ্বালিয়ে আমি দ্বিগুণ ক’ষ্ট দিব।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১৩