পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৩

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৩
সাদিয়া আক্তার

আজকে আকাশটা কেমন গুমোট ভাব ধরেছে। সূর্য মামার সাথে মনে হয় অভিমান করেই এই গুমোট ভাব ধরেছে। এই আবহাওয়ায় বারান্দায় বসে হাতে একটা বই নিয়ে সাথে এককাপ চা উফফফ অস্থির একটা ব‍্যাপার স‍্যাপার তবে পরীক্ষায় ব‍্যস্ত থাকা পুনম তা করতে না পেরে আকাশের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট উল্টে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল। পাশেই মিহি পুনমের মনোভাব বুঝতে পেরে হাতে চিমটি কেটে বলল — থাক বান্ধুবী মন খারাপ করে না এইটু পরেই তো বাসায় চলে যাবি তখন নাহয়

— উহ হবে না বাসায় লোকজন ভর্তি,,,
— তাহলে আর কি বসে থাক,, আর এই তোর শিহাব ভাই কখন আসবে রে??
— জানিনা,,
বলেই আবার আশে পাশে তাকায় পুরো ক‍্যাম্পাস ভর্তি মানুষজন সবার সাথে তার বাবা অথবা মা আছে। পুনমের সাথেও এসেছে এবার তার আব্বু। পুনম ভাবতেও পারেনি তারও এমন ভাগ্য হবে তবে এস এসসির থেকেই প্রত‍্যেক পরীক্ষার সময় তার আব্বু তাকে দিয়ে আসত।।।
— পুনম ঐতো পুনম মামা,,
শিহাবের ডাক শুনে সেদিকে তাকায় পুনম মিহি। পারভেজ সাহেবের সাথে আসছে শিহাব ।। পরভেজ সাহেব সামনে এসেই মেয়ের সামনে একটা জ‍্যুসের বোতল ধরিয়ে ফাইল পত্র হাতে নেয়। আরেকটি বোতল মিহিকেও ধরিয়ে দেয়। মিহি চুপচাপ এই আদর টুকু নিয়ে নেয়।।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— কিরে এখানে বসে আছিলি ক‍্যান পুরো ক‍্যাম্পাস চষে বেড়িয়েছি তোর জন‍্য??
— সামনে অনেক ভীর বের হতে পারছিলাম না
আর কেউ কথা বাড়ায় না হাটতে শুরু করে পারভেজ সাহেবের হাত ধরে হাটছে পুনম। ভীর ঠেলে বাইরে আসতেই অটো ধরে পারভেজ সাহেব। শিহাব সামনে ড্রাইভারের পাশে বসে। পিছনে মিহি পুনম ও পারভেজ সাহেব বসে। পৌনে একঘন্টা পর তারা নিজেদের বাসায় পৌছায়। ভিতরে ঢুকতেই দেখে ড্রয়িং রুমে আড্ডার আসর বসেছে। পারভেজ সাহেবের দুই বোন। বোন জামাই দুই ভাই। মেয়ের জামাই সবাই আলোচনায় ব‍্যস্ত। রোজিনা বেগম চাদনী বেগম নিপা বেগম সেখানে উপস্থিত নেই।
রোজিনা বেগম অবশ‍্য ঘরে মেয়ের জামাইয়ের সামনে লজ্জায় আসেনি। লিমনকে দেখে পারভেজ সাহেবও লজ্জা পায়। পুনম সবার সাথে কুশল বিনিময় করে নিজের ঘরে যায় মিহিকে নিয়ে।
দুপুরে খাওয়া দাওয়ার ম‍ধ‍্যে ঠিক হয় আজ বিকালে বারবিকিউ পার্টি করবে ছাদে সাথে নিশাদেরও আসতে বলবে। পারভেজ সাহেব নিশাকে ফোন করলে সে সাফ জানিয়ে দেয় সে আসতে পারবে না। নিশারা এখন ঢাকাতেই থাকে। মন খারাপ করে পুনম ও পারভেজ সাহেব।

— মন খারাপ করিস না পূর্ণ দেখিস নিশা একদিন ঠিক ওর ভুল বুঝতে পারবে।
শেষে বিড়বিড় করে বলে — যেমন আমি বুঝতে পেরেছি। সৌন্দর্যই সব না জীবনে ভালো ভাবে বেচে থাকতে হলে মনটা সুন্দর থাকা সবচেয়ে জরুরি।
— কিছু বললা আপু
— হু,, নাহ
বলেই আবার লিমনের দিকে তাকায় এই লোকটাকে কবে এতো ভালোবেসে ফেলল রুপশা যে এখন এর অবহেলা সহ‍্য হয় না। মনে হয় সেই আগের ডমিনেট লিমনই ভালো ছিলো এখন স্বাধীনতা পেয়েও তার কাছে বন্দীর সমান।

খাওয়া দাওয়া শেষে সবাই একটা ভাত ঘুম দিচ্ছে শুধু ঘুম নেই তিনজনের চোখে চন্দ্র পুনম ও চাদনী বেগম। চাদনী বেগম পাটি বিছিয়ে ফ্লোরে বসে পিঠা বানাচ্ছে। সবাই যখন এসেছে এই উছিলায় একটু পিঠা পুলি করার জন‍্যই বসেছে। পুনম না পারলেও নিজের সাধ‍্য মতো সাহায‍্য করছে।
চাদনী বেগমের পায়ে ঝিনঝিন ধরেতেই দুই পা মেলে দিল। ঠিক তখনই কোথা থেকে চন্দ্র ফ্লোরে চাদনী বেগমের কোলে শুয়ে পড়ল।
অবাক হয় চাদনী বেগম পুনম। — এই ফ্লোরে শুয়েছিস কেনো বাপ?? উঠঠ

— উহু ঘুম পাচ্ছে আম্মু ঘুমাব চুল গুলো টেনে দাও।
চাদনী বেগমের কোলে মুখ গুজে বলল।
— আমার হাতে আটা লেগে আছে বাবা উঠে যা হাত ধুয়ে আসি,,
— তোমার হাতে লেগে আছে অন‍্য কারো হাতে তো না সেই নাহয় দিক।
চাদনী বেগমের বুঝতে বাকী নেই কার কথা বলছে তবে যার কথা বলছে তার এই দিকে কোনো ধ‍্যান নেই সে। কাজের মেয়ে মিনু কখন আসবে সেই দিকে নজর দিচ্ছে।
— পুনম মা আমার চন্দ্রের চুল গুলো একটু টেনে দে না দেখ আমার হাতে আটা নাহলে আমিই দিতাম।
— আমিহহ
ঢোক গিলে বলল পুনম সে মুক্তির কাছে শুনেছে চন্দ্র নিজের শরীরে তার আম্মু ব‍্যতীত কারো স্পর্শ মানতে নাড়াজ। তবে চাদনী বেগম বলছে এমন করে মুখের উপর না করাও যাচ্ছে না।

— হ‍্যা তুই কিরে দে আমার হাতে আটা দেখিস না।
পুনম চাদনী বেগমের ডান দিকে এগিয়ে যায় । তার কাপা কাপা হাতটা চন্দ্রের মাথায় রাখে নরম সিল্কি চুল গুলো পুনমের ছোট্ট হাতে মুঠোয় চলে আসে। ধীর হাতে টেনে দিতে আরামে চোখ মুদে আসে চন্দ্রের। চন্দ্রের মনে হচ্ছে সে পৃথিবীর সবচেয়ে ভাগ‍্যবান পুরুষ এবং সুখী পাশাপাপাশি বসা এই দুই নারী তার সুখের কারণ।
একজনের কোলে শুয়ে আরেকজনের নরম হাতে আদুরে টানে মিনিটের মধ‍্যে গভীর ঘুমে চলে যায় চন্দ্র।।
চন্দ্রের যখন ঘুম ভাঙ্গে ঘড়িতে তখন বিকাল পাচঁটা বাজে। তখনও সে চাদনী বেগমের কোলে শায়িত। আড়মোরা ভাঙ্গে সে বহুদিন পর তার এমন শান্তির ঘুম হয়েছে। উঠে দেখে চাদনী বেগম সেভাবে বসেই মিনুকে মুরগি কাটার নির্দেশনা দিচ্ছে। চন্দ্রকে উঠতে দেখে বলল — উঠে পরেছিস বাপ এখন যানা একটু কয়লার ব‍্যবস্থা কর।

চন্দ্র মাথা নাড়িয়ে চারিদিকে তাকায়। চাদনী বেগম পুত্রের মনোভাব বুঝতে পেরে বলল — তোর চাচীর কাছে গেছে পুনম চন্দ্র মুচকি হেসে মায়ের কপালে চুমু দিয়ে চলে যায়। চাদনী বেগম অনেকদিন পর ছেলের ঠোঁটের কোণে হাসি দেখে প্রানটা জুড়িয়ে যায়। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করল তার ছেলের এই হাসি যেনো বহাল থাকে চিরকাল।
ছাদে প্রবেশ করে চন্দ্র পিছন পিছন আসে রাব্বি হাতে একটা কয়লার বস্তা। তারা আসতেই লিমন বলল — ঐ তো আমাদের হিরো সাহেব এসে পরেছেন দেখবা একটু পরেই হিরোইনেরও আগমন ঘটবে।
তার পরপরই পুনম রুপশা মুক্তি একসাথে প্রবেশ করলে। সকলে ” হৌহৌ” বলে একটা চিৎকার দেয়।
মুক্তি বুঝতে পারলেও পুনম রুপশা বুঝতে পারে না কি হলো??

— সবাই এমন গরুর মতো হাম্বা করছ কেনো??
— তুই বুঝবিনা রুপশা এটা আমাদের টপ সিক্রেট বলা যাবে না ম‍্যান টু ম‍্যান। তাই না লিমন ভাই??
লিমন হেসে মাথা নাড়ায়। রুপশা সেদিকে একপল তাকিয়ে আবার বলল — এই তোমাদের কোনো বাজে মতলব নেই তো?? থাকলে বাদ দাও আমার জামাইকে এর ধারে কাছেও যেনো ঘেসতে না দেখী।
— রুপশারে কি কথা মনে করাইলি এখন দেহী তৃষ্ণা লাগছে।
শিহাবের কথা শুনে তখনই চন্দ্র গম্ভীর স্বরে বলল
— এক লাথিতে ছাদ থেকে ফালাই দিয়ে সব তৃষ্ণা মিটে যাবে।
চন্দ্রের কথা শুনে পুনম ভাবল যাক চন্দ্র ভাইটা এর বিপক্ষে তবে চন্দ্রের দ্বিতীয় কথা শুনেই তার মনোভাব পাল্টে গেলো

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২২

— যা হবার রাতে হবে এখন কচিকাচা বাচ্চারা আছে। পুনমের দিকে তাকিয়ে বলল। পুনম হতবাক দৃষ্টিতে তাকায় এই লোক আস্ত একটা হাড়ে বজ্জাত লোক ছিঃ,,,, মনে মনে ভেবে নজর অন‍্য দিকে ঘুরিয়ে নেয়। পুনমকে নজর ঘুরাতে দেখে চন্দ্র চক্ষু হাসে। যা সবার নজরে পরে না চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বলে শুরু করা যাক বারবিকিউ পার্টি।
মুরগিতে মসলা মাখিয়ে শিকে ঢুকিয়ে। কয়লাতে আগুন জ্বালিয়ে তা পুরানো হয় আজকে এগুলো দিয়েই ডিনার হবে। চিকেন বারবিকিউ নান,, সাথে কয়েক রকমের পিঠা।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৪