পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৫

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৫
সাদিয়া আক্তার

পুনমের জাবির রেজাল্ট পরের দিনই দিয়ে দিয়েছে। সে চান্স পেয়েছে এখন সাবজেক্ট অ‍্যাপ্লিকেশন করবে। এইসব কাজ পারভেজ সাহেব চন্দ্রের উপর দিয়ে দিয়েছে চন্দ্রও বীনা বাক‍্যে মেনে নিয়েছে।
পুনমের এখন অবসর সময় কাটবে। রুপশা মুক্তির ও ইনকোর্স এক্সাম শেষ তাই পরের দিন যাওয়ার আগে লিমন সবাইকে দাওয়াত করে গেছে রিমি ঝিনুক মুক্তি পুনম ওদের সাথে করে নিয়ে গেছে। যদিও ঝিনুক ও পুনমের যাওয়া নিয়ে চন্দ্র ও রিশানের মত ছিলোনা তবুও লিমন তাদের রাজী করিয়ে দিয়েছে।

রুপশাদের বাড়িতে এসেও এই চারজনের ঘুমের নিয়ম ব‍্যঘাত হয়নি তারা এখানেই আড়াআড়ি ভাবে একসাথে শুয়েছে। রুপশা সকাল সকাল রান্নাঘরে ব‍্যস্ত আজকে তার চাচা শশুর ও আসবে তাদের ফ‍্যামিলি নিয়ে। রুপশার শশুর শাশুড়ি তার বিয়ের আগেই মারা গেছে। এই চাচা শশুরই তাদের বিয়ে করিয়েছে। লিমন ও তাকে বেশ মানে তিনি ছাড়া আর কারো সাথে লিমনের কোনো যোগাযোগ নেই। তার ছেলের ঢাকায় চাকরী হয়েছে ছেলের কাছেই বেড়াতে এসেছে তারা তাই লিমনকেও এই ফাকে দেখে যাবে দুপুরে এসে বিকালেই চলে যাবে।।
আটটায় পুনমের ঘুম ভাঙ্গে তাড়াহুড়ো করে উঠে। দেখে সবগুলো এখানে কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাচ্ছে ঘুমাবে নাইবা কেনো কাল রাতে যে তারা অনেক দেরী করে ঘুমিয়েছে। ঝিনুক রিশশানের অভিমান ভাঙাতে ভাঙাতে দেরী করেছে আর তারা তিনজন ঝিনুকের খিল্লি উড়াতে উড়াতে দেরী করেছে।।
পুনম একেবারে ফ্রেশ হয়েই বের হয়। বের হয়ে দেখে লিমন সোফায় বসে কাদছে পুনম দৌড়ে আসে — কি হয়েছে ভাইয়া এভাবে কাদছেন কেনো আপা কই??

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

— বুঝলে পুনম তোমার আপা আমাকে একটুও ভালোবাসে না তার অভাবে আমার ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা এমনিতে তো কান্না আসে না তাই পিয়াজ নিয়ে বসেছি পিয়াজও কাটা হলো মনে সুখে কান্নাও হলো,,
লিমনের কথা শুনে পুনম মুচকি হাসে। ততক্ষণে রনচন্ডি রুপ নিয়ে রুপশা খুন্তি হাতে রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এলো — কি বললে আমি তোমাকে ভালোবাসি না তো কে ভালোবাসে হ‍্যা সারাদিন তোমার ফর্মায়েশ কে পূরণ করে??
— তো তুমি বলতে চাইছ তুমি আমাকে ভালোবাসো??
— হ‍্যা অবশ্যই ভালোবাসি নিজের স্বামীকে ভালোবাসব না,,,
কথাটা শেষ করেই পুনমের দিকে তাকিয়ে রুপশা লজ্জা পায়। দৌড়ে রান্নাঘরে চলে যায়। তার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে লিমন প্রাপ্তির হাসে পুনম মুচকি হেসে আপার পিছনে দাড়ায় ততক্ষণে বাকী তিনজন ও ড্রয়িং রুমে উপস্থিত হয়।

— আরে আপা এতো তাড়াহুড়ো করছ কেনো??
— তাড়াহুড়ো করব না তো কি করব আজকেই খালাটা আসল না তার মেয়ের নাকি জ্বর। আবার আমার চাচা শশুর চাচী শাশুড়ি আসবে এই প্রথম আসবে তারা আপ‍্যায়ন না করলে হয়।
পুনম তাকায় তার আপার দিকে কথার ভাজে কেমন সংসারী সংসারী ভাব সারাদিন রুপচর্চা নিয়ে ব‍্যস্ত আপা কেমন পুরো দস্তে সংসারী হয়ে উঠেছে।
তখনই মুক্তি বলল — আরে চিল কর চার বোন মিলে হাতে হাতে করলে কাজ এমনিতে শেষ হয়ে যাবে।
মুক্তির কথায় ধ‍্যান ভাঙে পুনমে। ড্রয়িং রুম থেকে লিমন চিল্লিয়ে বলল — তাহলে আগে সবাই ব্রেকফাস্টটা করে নাও শালীদের সাথে খাব হলে এখনো না খেয়ে বসে আছি।
— এইরে দেখেছিস এখানও ব্রেকফাস্ট দেইনি চলচল সবাই আগে ব্রেকফাস্ট করবি,,,,
সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করে হাতে হাতে কাজ ধরে পুনমের ঘর গোছানো সুন্দর তাই তাকে আর রিমিকে ঘর গুছিয়ে নেয়ার দায়িত্ব দিয়েছে। লিমন বাজারে গেছে আবার।
বেলা একটা বাজে যোহরের আজান দিতে সবার কাজ শেষ হয়। লিমন গোসল করে মসজিদের দিকে রওয়ানা দিতে দিতে রুপশার উদ্দেশ্যে বলল

— গোসল করে নামাজ পরে একটা শাড়ি পরিও চাচা গ্রামের মানুষ তো বউদের শাড়িতেই পছন্দ করবেন।
রুপশা মাথা নাড়িয়ে গেট লাগায় আজ সে অনেক খুশী অনেক দিন পর লিমন তার সাথে স্বাভাবিক ব‍্যাবহার করছে। এবং আগের চাইতেও ভালো ব‍্যবহার।
গোসল করে নামাজ পরে বসতেই কলিং বেলের আওয়াজ আসল রুপশা গেট খুলে দেখে তার চাচা শশুর চাচী শাশুড়ি। বিয়ের দিন পরিচয় হয়েছিল। রুপশা তাকে সালাম দিলো তারাও সালামের জবাব নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করল।
লিমন তাদের বসায়। রুপশা রান্নাঘর থেকে শরবত নিয়ে তাদের দেয়।
লিমনেরটা দিয়ে ট্রে রেখে লিমনের পাশে বসে।

— বউমা বাসাটা বেশ ভালোই সাজিয়েছো,, ভালোই আছো দুজনে
— জ্বি চাচী আলহামদুলিল্লাহ্ দোয়া করবেন।
— দোয়া তো অবশ্যই করি বউমা আমার বাবা মাহীন ভাইপোটা অনেক কষ্ট করেছে একসময়।
চাচা শশুরের কথা শুনে রুপশা লিমনের দিকে তাকায়। মুখে তার বিষাদের হাসি মনে মনে পণ করে এই লোকটাকে নিজের সর্বস্ব দিয়ে আগলে রাখবে।
এর মধ‍্যে পুনমরা তাদের ঘর থেকে বের হয়ে সালাম দেয় তাদের।
— ওয়ালাইকুম আসসালাম,, বউমা ওরা কারা??
— ওরা আমার বোন চাচা ঐ জন আমার ছোট বোন আর এই জন বড় চাচার মেয়ে আর ওরা ছোট চাচার মেয়েরা,,,,, পুনমদের দেখিয়ে বলল।

চাচীর মুক্তিকে বেশ পছন্দ হয়েছে সে সবার সাথে কথা বলে মুক্তিকে পাশে টেনে সবায়। রিমি ঝিনুক পুনম একে অপরের দিকে তাকায়। তারা কিছু বুঝতে পারে না তবে রুপশা লিমন বুঝে গেছে।
আলাপচারিতার পর তারা খেতে বসেছে আজ রুপশাকে তাদের সাথে বসিয়ে চারবোন বেড়ে দেয়ার দায়িত্ব নিয়েছে।
— হ‍্যা গো বউমার বড় চাচার মেয়েটাকে আমার ইহানের জন‍্য মনে ধরেছে,,,
— চুপ করো ফাতেমা তোমার ছেলেকে আগে বিয়ের জন‍্য রাজী করাও,,
— হ‍্যা সেটাই করাব এইবার ছেলে বিয়ে দিয়েই গ্রামে যাব আমি,,,,,
স্বামীর কাছে ফিসফিসিয়ে বলল ফাতেমা আক্তার। মনে মনে ভাবলেন ওমন মিষ্টি চেহারার মেয়েকে এবার আমার ছেলে ফিরাতেই পারবে না।
খাওয়া দাওয়া শেষে বেশ কিছুক্ষণ গল্প করে রুপশার চাচা শশুররা চলে গেলেন সবচেয়ে তাড়া ছিলো ফাতেমা আক্তারের। সে আজই বাসায় যেয়ে ছেলের সাথে কথা বলবেন।

— যাক বহুদিন পর একটা বিয়ে খাওয়া যাবে কি বলো??
— কার বিয়ে আপা তোমরা কি কোথাও বিয়ে খেতে যাবা??
পুনমের কথা শুনে রুপশা লিমন হাসে। লিমন বলল — সেটা কিছুদিন পর বুঝবে শালিকা তবে এটা সিয়‍্যর বাইরে কোথাও যাচ্ছি না বিয়ে খেতে। বলেই রুপশা লিমন একসাথে হেসে দেয়। আরো কিছুক্ষণ গল্প করে লিমন চলে গেলো রেষ্ট নিতে আর রুপশা চলে গেলো রান্নাঘরে। তার পিছন পিছন পুনমও যায়। মুক্তি লজ্জায় আর সেখানে থাকে না চলে যায় তাদের ঘরে।।
পরের দিন হঠাৎই রুপশাদের বাড়িতে আসে ফাতেমা আক্তার ও তার স্বামী শহিদুল। তখন বাড়িতে শুধু পাচঁ বোন ছিলো লিমন অফিসে ছিলো তাই তারা ভাবছিল শপিং এ যাবে তবে তারা যাওয়ার আগেই তারা আসে।
চাচা শশুর শাশুড়িকে দেখে রুপশা ব‍্যতিব‍্যস্ত হয়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে নিলে তাকে আটকায় ফাতেমা আক্তার।

— বউমা যাওয়া লাগবে না আমরা এখনই বের হয়ে যাব শুধু তোমার সাথে কথা বলার জন‍্য এসেছি,,
রুপশা যদিও কাল বুঝেছে তবুও বলল — কি কথা চাচী আম্মা??
— তোমার ঐ বড় চাচার মেয়ে মুক্তি ওকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে আমার ইহানের জন‍্য। তুমি যদি বল তোমাদের বাড়িতে আমরা কথা আগাতে পারি,,

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৪

— চাচী আম্মা আপনি আমাদের বাসায় গিয়ে কথাটা রাখেন দেখেন তারা কি বলে এই বিষয়ে আমি এখনই কিছু বলতে পারছি না,,, ইস্তত করে বলল রূপশা।
রান্নাঘরে থেকে নাশতা রেডী করতে করতে মুক্তি সবই শুনে তাই লজ্জায় সেদিকে আর পা বাড়ায় না পুনম রিমি ঝিনুক মিলে নাশতা নিয়ে যায়।।

পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ২৬