অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২৫

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২৫
ইয়াসমিন খন্দকার

আরিশা নিজের চোখের জল মুছে বলে,”এতদিন আমি অনেক ভুল করেছি। তবে আজ আমি সবাইকে সমস্ত সত্যটা খুলে বলবো যে আমার সাথে ঠিক কি কি হয়েছে।”
আরিশা এই কথাটুকু বলেই একবার জাঈদের দিকে তাকালো। জাঈদের দৃষ্টিতে লুকিয়ে ছিল কৌতুহল। আফিফাও বলে উঠল,”হ্যাঁ, বোনু তুই বল তোর সাথে এরা কি কি অন্যায় করেছে। এদের ভালো মানুষির মুখোশ টেনে ছুড়ে ফেল। আমি তো জানতামই, এই লম্পট জাঈদকে তুই নিজের ইচ্ছায় কখনোই বিয়ে করতে পারিস না৷ তুই সবাইকে আজ সমস্ত সত্যটা বল।”

আরিশা এবার বলা শুরু করে,”তোমার আর নির্ঝর ভাইয়ার বিয়ের দিন মিস্টার জাঈদ শেখ এর লোকজন আমায় তুলে নিয়ে যায়। ওরা আমায় তুমি ভেবে তুলে নিয়ে গেছিল। পরবর্তীতে যখন দেখে এটা আমি তখন হতবাক হয়ে যায়। কারণ ওদের উদ্দ্যেশ্য ছিল তোমায় তুলে নিয়ে গিয়ে তোমার সাথে জাঈদ শেখের বিয়ে দেওয়া। পরে যখন তা হলো না, তখন জাঈদ শেখ প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ হয়ে আমার মাথায় বন্দুক ধরল। আমাকে ভয় দেখিয়ে, ব্ল্যাকমেইল করে এই বিয়েটা করতে বাধ্য করল। আর তারপর সবার সামনে মিথ্যা বলতে বাধ্য করল। ও আমায় হুমকি দিয়েছিল যদি আমি ওর কথামতো না চলি তাহলে তোমার আর নির্ঝর ভাইয়ার জীবন ধ্বংস করে দেব। সেজন্যই আমি বাধ্য হয়ে ওর সব কথা মেনে চলি৷ কিন্তু এখানে নিয়ে আসার পরও জাঈদ শেখ আর ওর মা মিলে আমার উপর নারকীয় অত্যাচার চালায়৷ পরে সন্ধ্যা আপুরা এখানে এলে তাদের সামনেও আমাকে মিথ্যা বলতে বাধ্য করে যাতে করে সন্ধ্যা আপুর সাথে জাঈদ শেখের বিয়ে দিতে পারে।”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

ইভা চৌধুরী এসব শুনে নিজের বোন জামিলা শেখকে জিজ্ঞেস করেন,”এই মেয়েটা এসব কি বলছদ জামিলা? তুই এভাবে আমদের সাথে প্রতারণা করলি? এভাবে আমার মেয়ের জীব নিয়ে খেললি।”
জামিলা শেখ এসব কথা অস্বীকার করে বলেন,”এই মেয়েটার কথা তুমি বিশ্বাস করো না, আপা৷ এ সমস্ত কিছু মিথ্যা বলছে। আমি তোমাকে আসল সত্যটা জানাচ্ছি।”
সন্ধ্যা এবার রাগী মুখে এগিয়ে এসে বলে,”ব্যস, অনেক হয়েছে। তোমার মুখে আর কোন মিথ্যা গল্প আমরা শুনতে চাই না খালা। মম, ড্যাড তোমরা চলে এসো। আমি আর এক মুহুর্ত এখানে থাকব না।”
“সন্ধ্যা, আমার কথাটা শোন।”

কিন্তু সন্ধ্যা আর দাঁড়ায় না। সন্ধ্যা সপরিবারে চলে যাবার পর আফিফা আরিশার হাত শক্ত করে ধরে বলে,”আমিও আমার বোনকে এই নরক থেকে নিয়ে যাব এখন। ওর এখানে থাকার আর কোন প্রয়োজন নেই।”
এমন সময় জাঈদ শেখ এগিয়ে এসে বলে,”আরিশা আমার স্ত্রী। আমার অনুমতি ছাড়া ওকে নিয়ে যাওয়ার কোন অধিকার তোমার নেই।”

আফিফা জাঈদকে চোখ রাঙানি দিয়ে বলে,”কিসের স্ত্রী? আমার বোনকে তুমি ভয় দেখিয়ে বিয়ে করেছ,এটা কোন বিয়েই নয়। এই বিয়ে আমি মানি না। আমার বোন এখন আমার সাথেই যাবে।”
জাঈদ আরিশাকে আরিশার দিকে তাকিয়ে বলে,”তুমি কি তোমার আপ্পির সাথেই যেতে চাও?”
আরিশা আজ আর কোন ভয় না পেয়ে বলে,”হ্যাঁ, আমি আপ্পির সাথেই যাব। এত দিন আপনি আমায় ভয় দেখিয়ে আটক করে রেখেছিলেন তবে এখন আর না। আমি আর আপনাকে ভয় পাবো না। আপনার কোন অন্যায় আমি মেনে নেবো না।”

জাঈদ এগিয়ে এসে আবেগপ্রবণ স্বরে আরিশাকে বলে,”আমাকে ছেড়ে যেও না আরিশা, আমাকে একটা সুযোগ দাও। আমি সত্যি তোমার সাথে সংসার করতে চাই কারণ আমি…”
জাঈদ নিজের পুরো কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই আরিশা তার গালে ঠাস করে থা**প্পড় বসিয়ে দেয়। জাঈদ একদম হতবাক হয়ে যায়। আরিশা ক্রোধিত কন্ঠে বলে,”এটা কি আপনার নতুন কোন নাটক?”
“বিশ্বাস করো, আরিশা। আমি কোন নাটক করছি না। আমি যা বলছি একদম মন থেকে বলছি। হ্যাঁ, মানছি আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে জোর করে,ভয় দেখিয়ে তোমায় বিয়ে করেছি। বিয়ের পরেও তোমার সাথে অনেক খারাপ ব্যবহার করেছি, তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমি সেসব কিছুর জন্য মন থেকে অনুতপ্ত। আমাকে শুধু একটা সুযোগ দাও, আমি কথা দিচ্ছি আমি সম্পুর্ণ বদলে যাব।”

জামিলা শেখ বলে ওঠেন,”এসব তুমি কি বলছ জাঈদ? এই মেয়েটার সামনে তুমি অনুরোধ করছ!”
আরিশা নিজেও কিছুটা অবাক হয়ে যায়। জাঈদ এগিয়ে এসে আরিশার হাতটা আলতো করে ধরে বলে,”আফিফার প্রতি আমার যা অনুভূতি ছিল তা শুধুই ছিল আমার জেদ এবং দাম্ভিকতা কিন্তু তোমার প্রতি আমার সত্যিকারের অনুভূতি জন্মেছে। তাই আমি অনুরোধ করছি, আমাকে তুমি ফিরিও না আরিশা।”
আরিশা কিছু বলবে তার আগেই আফিফা বলে,”এর নাটকে তুই একদম ভুলিস না বোনু। এসব কিছুই এর নাটক তোকে এখানে আটকে রেখে আরো কষ্ট দেয়ার জন্য। এর মতো লম্পট ছেলেদের একদম বিশ্বাস করতে নেই। তুই আমার সাথে ফিরে চল।”

জাঈদ আরিশার হাত শক্ত করে ধরে ছিল৷ আরিশা একটা ঝটকা দিয়ে সেই হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,”আপনার এই নাটকে আমি ভুলবো না মিস্টার জাঈদ শেখ। আপনাকে আমি হারে হারে চিনে ফেলেছি। আপনি আমার সাথে যা যা অন্যায় করেছে তার জন্য মৃত্যুর আগে অব্দি আমি আপনাকে ক্ষমা করবো না।”
বলেই আরিশা আফিফার হাত ধরে বলে,”আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো আপ্পি। আমি আর এক মুহুর্তও এখানে থাকতে চাই না। এখানে থাকতে গেলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।”
“তুই একদম চিন্তা করিস না। তোকে আমি আর এই নরকে থাকতেও দেবো না। তোকে এখান থেকে বের করার জন্যই তো আমি এসেছি।”

বলেই আফিফা আরিশাকে নিয়ে বের হতে যাবে এমন সময় জাঈদ আবারো তাদের পথ আগলে দাঁড়ায়। আরিশার কাছে আকুতি-মিনুতি করতে থাকে যেন সে না যায়। তবে আরিশা এবার আরো কড়া গলায় বলে,”আমার সামনে থেকে সরে দাড়ান। নাহলে এর ফল ভালো হবে না।”
“আমি তোমায় এখান থেকে কোথাও যেতে দেবো না।”
আফিফা বলে ওঠে,”আমি কিন্তু এবার পুলিশ ডাকতে বাধ্য হবো।”
জামিলা শেখ রেগে বলেন,”আমাদেরকে তুমি পুলিশের ভয় দেখাচ্ছ? সাহস তো কম নয়৷ সিকিউরিটি, কোথায় তোমরা? জাঈদকে আটকে ধরো। এই আপদগুলোকে বিদায় হতে দাও।”

জামিলা শেখ এর আওয়াজ পেয়ে ৪ জন সিকিউরিটি গার্ড এসে জাঈদকে আটকে রাখে। এই সুযোগে আফিফা আরিশাকে নিয়ে যেতে থাকে। জাঈদ শেখ চিৎকার করে বলতে থাকে,”আমাকে ছেড়ে যেও না আরিশা। আমি সত্যি তোমায় ভীষণ ভালোবেসে ফেলেছি। তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। আমার একটা সুযোগ দাও শুধু, আমি অতীতের সব ভুলের প্রায়শ্চিত্ত করব, আরিশা প্লিজ..”
কিন্তু আরিশা দাঁড়ায় না। আফিফার হাত ধরে সে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। তারা একটু সামনে আগাতেই হঠাৎ করে আদৃতা তাদের সামনে এসে বলে,”এসব কিছু তোমাদের দুই বোনের সাজানো নাটক তাই না?”
আফিফা বলে ওঠে,”এসব কি বলছ তুমি আদৃতা?”

“চুপ, আর একদম নাটক করবে না। তোমরা দুই বোন মিলে চক্রান্ত করে আমার আর সায়নের বিয়েটা ভেঙে দিয়েছ। আমি কিছু বুঝি না ভেবেছ, তোমরা আমার ভালো সহ্যই করতে পারো না। আমার বাবা যে এত বড়লোক, আমার লাইফস্টাইল এত ভালো সেটা তোমাদের সহ্য হয় না। তাই তো, প্রথমে তুমি আমার ভাইকে বিয়ে করলে আর এখন নিজের বোনকে আমার ভালোবাসার মানুষের পেছনে লেলিয়ে দিয়েছ।”
আরিশা রেগে বলে,”মুখ সামলে কথা বলো। আমার আপ্পি তোমার ভাইয়ের পেছনে পড়ে নি বরং তোমার ভাই পড়েছিল। আর আমি তোমার ভালোবাসার মানুষকেও কেড়ে নিতে চাই নি।”
আদৃতা বলে,”চোরের মায়ের আবার বড় গলা। একবার শুধু আমায় বাড়িতে ফিরতে দাও, তারপর এর শেষ দেখে ছাড়ব।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২৪

বলেই আদৃতা বাড়ির দিকে রওনা দেয়। আফিফা আরিশাকে ভরসা দিয়ে বলে,”চিন্তা করিস না, বোনু। আমি সব সামলে নেব।”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ২৬