বিকেলের প্রণয় পর্ব ৪
Arshi Ayat
চৈতির রুপে পাগল হবে না এমন কোনো পুরুষ আছে নাকি?সাইফুলের খাবারের সাথে ঘুমের ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছিলো ও।বেচারা এখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।এদিকে তার বউ সাজছে পরপুরুষের জন্য।মিলাতের গোলাপ ফুল পছন্দ।তাই বারান্দার টবে হরেকরকমের গোলাপ গাছ লাগিয়েছিলো ও।সেখানে বেশ অনেকগুলো গোলাপও ফুটে আছে।সবগুলো গোলাপ নিজ হাতে সংগ্রহ করে গোলাপের পাপড়িগুলো গোসলের জন্য রাখা হালকা উষ্ণ পানিতে ছেড়ে দিলো।এবার উত্তমরুপে গোসল করে মনের মতো সাজবে নিজের পছন্দের পুরুষের জন্য।এভাবে কখনোই সাইফুলের জন্য নিজেকে তৈরি করে নি সে আর করবেই বা কেন?যে মানুষটা শুধুই খেলার গুটি তার জন্য কিসের সাজসজ্জা?
রেভান ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।কাল পাসপোর্ট অফিসে গিয়ে মায়ের পাসপোর্টটা বানাতে দেবে।তারপর ভাবী,বোন,মায়ের জন্য কিছু কেনাকাটা করবে।সন্ধ্যায় ক্লায়েন্টের সাথে মিটিং করে রাতের ট্রেনে চট্টগ্রাম ফিরবে।মোটামুটি কালকের দিনের প্ল্যান সাজিয়ে শুয়ে পড়লো ও।হঠাৎ কল এলো ফোনে।ছোটো বোন নাইমা ফোন করেছে।রেভান মৃদু হাসলো।পাগলীটা আবার কোনো বায়না করবে নিশ্চিত।আসার সময়ও লম্বা লিস্ট দিয়েছে।ফোন রিসিভ করে কিছু বলার আগেই ওপাশ থেকে ছোটো বোনের ভয়ার্ত গলা শুনে কপালে চিন্তার ভাজ ফুটে উঠলো।কাঁপা স্বরে নাইমা বলছে,’ভাইয়া,বাঁচাও আমাকে।আমি কি করব বুঝতে পারছি না।মায়ফিকের সাথে পালানোর জন্য বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম কিন্তু ওর উদ্দেশ্য ভালো না আমি বুঝতে পেরেছি।ও সিগারেট খেতে যাওয়ার পর ট্রেনের ওয়াশরুমে এসে তোমাকে ফোন করলাম।ও জানে না আমি বুঝে গেছি।’বলতে বলতেই কেঁদে ফেললো নাইমা।রেভান ততক্ষণে বিছানা ছেড়ে দাঁড়িয়ে গেছে।পায়ের রক্ত মাথায় উঠে গেছে ওর।তবুও নিজেকে শান্ত রেখে বলল,’চিন্তা করিস না।আমি আসছি।তুই ওকে বুঝতে দিস না তুই বুঝে গেছিস ওর প্ল্যান।আর সাবধানে থাকিস।ট্রেন থেকে নামার আগে আমাকে কলে রাখিস।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘আচ্ছা,ভাইয়া।’নাইমা চোখ মুছে ফোন রেখে দিলো।আর দেরি করা যাবে না।নয়তো মাশফিকের সন্দেহ হবে।মাশফিকের সাথে ওর একবছরের সম্পর্ক।বাসায় ওর কথা বলার পর বাবা,মা,ভাইয়ারা কেউ মেনে নেয় নি।তাই মাশফিক যখন বলেছিলো ওর সাথে পালানোর কথা তখন ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে সেও রাজি হয়ে যায়।তবে ঘর ছেড়ে বের হওয়ার পরই কেমন যেন লাগছিলো।আর বাসে ঘুমের ভান করে ওর আর ওর বন্ধুদের কথা শুনেই বুঝতে পেরে গিয়েছিলো ওর বদ মতলবের কথা।তবে তখনও কিছু বুঝতে দেয় নি।নিজেকে সংযত রেখে সুযোগের অপেক্ষা করছিলো।
তাড়াহুড়োয় সাইফুল বা চৈতি কাউকেই বলার সুযোগ পায় নি রেভান।অবশ্য ওদের দরজায় একবার নক করেছিলো কিন্তু কোনো সাড়া না পাওয়ায় আর না ডেকে মানিব্যাগ আর ফোন নিয়েই বেরিয়ে পড়ে।চৈতি ওয়াশরুমে ছিলো তাই শব্দ শুনতে পায় নি আর সাইফুল তো ঘুমাচ্ছেই।
গোসল সেরে গোলাপি রঙের ছোটো একটা নাইটি পরে নিজেকে একবার আয়নায় দেখে নিলো।ফর্সা উরুর ওপর গোলাপি রঙটা এত মানাচ্ছে!নিজেই নিজেকে দেখে মুগ্ধ হয়ে গেলো।আয়না থেকে চোখ সরিয়ে ঘুমন্ত সাইফুলের দিকে একবার চেয়ে ঠোঁট বাকিয়ে হাসলো।এরপর সরু কোমরে ছন্দ তুলে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে রেভানের ঘরের দিকে এগোলো।দরজায় নক করতে গিয়ে বুঝলো দরজাটা খোলা।হাসলো চৈতি।কাজ আরও সহজ হয়ে গেলো।দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে ড্রিম লাইটের নরম আলোয় পুরো রুমে কাউকেই দেখতে পেলো না।ওয়াশরুমের দরজাও খোলা,বারান্দায়ও নেই।তাহলে গেলো কোথায়?চৈতি ক্রোধে পাগল হয়ে গেলো মুহুর্তেই।কি করবে এখন?এই ছেলেটাকে ধরাছোঁয়া যাচ্ছে না কেন?
কমলাপুর রেলস্টেশনে এসে থামলো ট্রেন।কথামতো নাইমা ট্রেন থেকে নামার আগে ভাইকে ফোন করলো।রেভান রিসিভ করে ফোনটা লাউড স্পিকারে দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলো কোথায় আছে ওরা।ভাই যেন সহজেই বুঝতে পারে তাই ও ইচ্ছে করে মাশফিককে নানারকম প্রশ্ন করছে কিন্তু মাশফিক কোনোটার উত্তর দিচ্ছে তো কোনোটার উত্তরে ধমকে উঠছে।রেভান বুঝে গেছে ওরা কোথায়।দ্রুত গতিতে ছুটছে সেদিকেই।
স্টেশনে জটলা বেঁধে গেছে।এতরাতেও অনেক মানুষ ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে ওদের।অতঃপর রেল মাস্টার এসে রেভানের হাত থেকে ছুটিয়েছে মাশফিককে।রেভান এখনও রক্তচক্ষু নিয়ে ফুঁসছে।দু’একটা মা’র যে সেও খায় নি তেমন না।আঘাতে ঠোঁট কেটে গেছে।আর মাশফিকের অবস্থা তো আরও করুণ।গালে,ঠোঁটে,কপালে,হাতে সব জায়গায় কেটেছে।প্রেমিক আর ভাই দু’জনের মারামারি দেখে ভীতু নাইমা এককোনায় দাড়িয়ে কাঁদছিল।অতঃপর অপহরণের অভিযোগে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হলো মাশফিককে।
পুলিশ ওকে নিয়ে চলে যাবার পর নাইমা ভাইয়ের কাছে এসে কাঁদতে কাঁদতে বলল,’স্যরি,ভাইয়া।আমার তোমাদের কথা শোনা উচিত ছিলো।নিজের অজান্তেই আমি কতোবড় ভুলে করে ফেলেছি।’
‘যাক শেষ পর্যন্ত ভুল বুঝতে পেরেছিস এটাই অনেক।বের হয়েছিস কখন?’
‘বিকেলে।’
‘তাহলে মা,বাবা,ভাই-ভাবী ওরা এখনও ফোন করলো না যে!’
‘তনিমার গায়ে হলুদ থেকে বিয়ে পর্যন্ত ওর বাড়ি থাকব এটা বলেছি।তাই চিন্তা করছে না।’
‘ঠিকাছে।বাসায় এসব বলার দরকার নেই।সোজা তনিমাদের বাসায় চলে যাবি।’
‘কিন্তু ভাইয়া তুমি আমাকে কিছু বলবে না?’
‘কি বলবো?তুই তো নিজের ভুলে বুঝতেই পেরেছিস।আশা করছি শিক্ষা হয়ে গেলে এমন ভুল দ্বিতীয়বার করবি না।’
নাইমা কান্না ভুলে ভাইকে জড়িয়ে ধরে বলল,’আই লাভ ইউ,ভাইয়া।’
‘হয়েছে।ন্যাকামি করতে হবে না আর।’
রাতের শেষ ট্রেনের টিকিট করে দিয়ে বোনকে আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে পাঠিয়ে দিলো রেভান।তারপর আবার সাইফুলদের বাসার পথ ধরলো।
ঘন্টাখানেক রেভানের জন্য অপেক্ষা করেও যখন রেভান এলো না তখন রাগে নিজের ঘরে এসে শাওয়ারের নিচে দাঁড়িয়ে নিজেই নিজের চুল টানতে লাগলো চৈতি।এভাবে কতক্ষণ ভিজেছে ওর মনে নেই।ঠান্ডায় যখন শরীর কেঁপে উঠলো তখন শাওয়ার অফ করে কোনোরকম বাথরোব জড়িয়ে সাইফুলের পাশে গিয়ে শুয়ে পড়লো।
রেভান যখন সাইফুলদের বাসায় পৌঁছালো তখন মধ্যরাত।ভাগ্যিস দরজার চাবিটা নিয়ে বেরিয়েছিল নাহলে এখন কে খুলতো দরজা?ঘরে ঢুকে সোজা নিজের রুমে এসে শুয়ে পড়লো ও।সাইফুলের পাশে শুয়ে আধোঘুমে রেভানের আসার শব্দটা শুনলো চৈতি।শরীরটা ক্রমশ গরম হয়ে উঠছে।চোখের কোণায় অবজ্ঞার জল।জীবনেও কোনো পুরুষ ওকে অবজ্ঞা করে নি।যাকে চেয়েছে তাকেই পেয়েছে।পুরুষেরা নিজেই ওকে ধরা দিতো।ওর কসরত করতে হয় নি।কিন্তু এই পুরুষটি যেন ওকে দেখেও দেখছে না!
রেভান সকালে ঘুম ভাঙার পর রুম থেকে বেরিয়েই দেখলো ডাইনিং টেবিলে বসে চা খাচ্ছে সাইফুল।ওকে দেখেই সহাস্যে বলল,’কি রে!বন্ধু,আয় বস।তোর ভাবি তো আজকে অসুস্থ।আজকে নাস্তা আমি বানিয়েছি।’
রেভান এসে পাশের চেয়ারে বসে বসে বলল,’কি হয়েছে ভাবির?’
‘কালরাতে ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করেছে তাই এই অবস্থা।কতো বলি নিজের শরীরের যত্ন নাও।কিন্তু শোনে না আমার কথা।’
‘ঔষধ খেয়েছে?’
বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩
‘হ্যাঁ,নাস্তা করিয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি।এখন আবার ঘুমাচ্ছে।তুইও নাস্তা খেয়ে নে।আমি আবার অফিসে যাব।’
রেভান মাথা নাড়লো।একবার ভাবলো কাল রাতের ঘটনাটা বলবে কিন্তু পরে মনে করলো এসব কথা এত ছড়ানো উচিত হবে না।বোনের ভবিষ্যতের প্রশ্ন!
সাইফুল চা শেষ করে উঠবে এমন সময়েই কলিংবেল বাজলো।উঠে গিয়ে দরজা খুলতেই গালের ওপর ভারি কিছুর আঘাত অনুভব করলো।হতভম্ব হয়ে সামনে চাইতেই দেখলো প্লাস্টিকের একটা জুতো এক হাতে উঁচু করে ধরে রণচণ্ডী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মিলাত!