প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১৪
মারশিয়া জাহান মেঘ
ধ্রুব ফোন কলের বাহানায় আঁধারীনির পেছন পেছন গেল। আঁধারীনি পেছনে কাউকে অনুভব করে পিছন ফিরে তাকালো। ধ্রুবকে দেখে বললো,
“আপনি কি করছেন আমার পেছন পেছন?”
“এই পথ দিয়ে তুই-ই যেতে পারবি? আমরা কেউ যেতে পারব না?”
“না তা কেন হবে? আপনার স্মিতাকে ছাড়া আসলেন যে?”
“ডানা দুটো বেশি উড়ছে তাই না?”
“আমিতো মেয়ে নই, পরী। ডানাতো উড়বেই তাই না?”
“জ্বীন পরী?”
“ধ্রুব ভাই…..”
আঁধারীনি আর শায়ান পাশাপাশি বসে আছে। ধ্রুব হঠাৎ চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো। আঁধারীনির দিকে এক পলক তাকিয়ে শায়ানকে বললো,
“তোর হাতের ফুলটা আমায় একটু দেতো।”
“কেন!”
“দে না…”
শায়ানের হাত থেকে ফুলটা নিজেই নিয়ে নিলো ধ্রুব। হাটু গেড়ে স্মিতার সামনে বসে বললো,
“উইল ইউ ম্যারি মি স্মিতা?”
আঁধারীনি থমকে গেল মুহুর্তেই। ধ্রুব স্মিতাকে বিয়ে করবে! চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ালো সে। শায়ানের চোখে-মুখে অন্য ভাবনা। আপাতত এইটা নিয়ে ভাববে না সে। সে নিজেও উঠে দাঁড়ালো। তারপর বললো,
“Say Yes Smita.”
স্মিতা চারিদিকে চোখ বুলিয়ে মুখে দু হাত রেখে বললো,
“ইয়েস ধ্রুব। আই উইল ম্যারি ইউ।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আঁধারীনির চোখ জোড়া ছলছল করছে। নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু, পরিস্থিতি ভালো নয়। আর বেশিক্ষণ এইখানে থাকলে তার দূ’র্ব’ল’তা ধ’রা পড়ে যাবে। সে দৌড়ে সেইখান থেকে চলে গেল। স্মিতা বললো,
“ওর আবার কি হলো?”
ধ্রুব আঁধারীনির যাওয়ার পথে তাকিয়ে বললো,
“যা হবার কথা ছিল, তা হলো।”
শায়ান ছুটল আঁধারীনির পেছন পেছন।
[৩৮]
“তুমি কাঁদছ কেন আঁধার? হঠাৎ!”
“এমনি শায়ান ভাইয়া, চোখে কিছু পড়েছে বোধহয়।”
শায়ান ফেরালো আঁধারীনিকে। তারপর দেখলো, আঁধারীনির চোখ লাল হয়ে আছে। শায়ান অন্ধকারে তীর ছুঁড়ার মতো বললো,
“ধ্রুবকে তুমি পছন্দ করো?”
আঁধারীনি সঙ্গে সঙ্গে বললো,
“না, না শায়ান ভাইয়া। এইসব কি বলেন? উনি আমার কাজিন।”
“তাহলে এমন রিয়েক্ট করলে কেন?”
“কোথায়? আমার হঠাৎ খারাপ লাগছিল, তাই ওয়াশরুমের দিকে আসলাম, চোখে-মু’খে পানি দিতে।”
“সত্যিতো?”
“হ্যাঁ, একদম সত্যি। বিলিভ মি…”
“বিলিভ করলাম, ফ্রেশ হয়ে নাও জলদি, আমি ওয়েট করছি তোমার জন্য।”
“থাক, আপনাকে ক’ষ্ট করে দাঁড়াতে হবে না। আমি যেতে পারব।”
“তোমাকে নিয়েই যাব। আমি দাঁড়ালাম এইখানে। যাও…”
“ঠিক আছে।”
আঁধারীনি শায়ানকে মিথ্যে বলেছে। ভীষণ মিথ্যে বলেছে। তার হৃদয় ভে’ত’র থেকে আ’ঘা’ত পাচ্ছে। যা প্রকাশ করার মত নয়। চোখে-মু’খে পা’নি দিয়ে চোখের লালচে ভাবটা মুছে ফেলার তীব্র চেষ্টা চালালো আঁধার, কিন্তু পারলো না। অনেক চেষ্টা করেও। অবশেষে, ভালো করে ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরুলো সে। বেরুতেই দেখতে পেলো, শায়ানের সাথে দাঁড়ানো স্মিতা আর ধ্রুব। আঁধারীনিকে দেখতেই শায়ান বললো,
“ঠিক আছ এখন?”
আঁধারীনি ধ্রুবর দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমার কি হয়েছে শায়ান ভাইয়া? যে ঠিক থাকব না।”
ধ্রুব বুঝতে পারে আঁধারীনির খোঁ’চা স্বরুপ কথা। ধ্রুব বললো,
“সোজা প্রশ্নের জবাব, সোজাভাবে দিতে পারিস না আঁধার?”
“না ধ্রুব ভাই, আল্লাহ আমাকে ত্যাঁড়াভাবে তৈরি করেছেতো? তাই ত্যাঁড়া ত্যাঁড়া এনসার দিই।”
স্মিতা বললো,
“তোমরা দুজন আমাদেরকে অভিনন্দন জানালে না যে?”
শায়ান বললো,
“বিয়ের দিন জানাব, আজ তুলে রাখলাম।”
আঁধারীনি বললো,
“প্রেম অবধি কত-শত সম্পর্কই টিকে। বিয়ে অবধি যাও, তারপর না অভিনন্দন আশা করিও। অন্তত আমার তরফ থেকে।”
কথাগুলো বলেই শায়ানের হাত ধরে আঁধারীনি বললো,
“শায়ান ভাইয়া চলুন ওইদিকে যায়। এইখানে ভালো লাগছে না।”
“আচ্ছা চলো…”
ধ্রুব মনে মনে বললো,
“এত তেজ কোথা থেকে আসে তোর আঁধার? তেজে নিজেতো পুড়ছিসই, সাথে আমাকেও পুড়াচ্ছিস।”
গা’লে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আঁধারীনি। সামনে দাঁড়িয়ে আছে ধ্রুব। চোখ থেকে আগুন ঝড়ছে রা’গে। আঁধারীনি মৃদু চি’ৎ’কা’র করে বললো,
“কোন অ প রা ধে আমাকে মা’র’লে’ন আপনি?”
“আমার সামনে অন্য ছেলে নিয়ে এত নাটক করার জন্য।”
“কোন অধিকারে এইসব দেখতে যান আপনি?”
“ভালোবাসার অধিকারে।”
আঁধারীনি পুনরায় বললো,
“কিসের অধিকারে? কি বললেন আপনি?”
“কিছু না।”
“না না, বলুন। একটু আগের কথাটা আবার বলুন। একটু আগে কি যেন বলছিলেন? ভালোবাসা না কি যেন?”
ধ্রুব প্রসঙ্গ এড়াতে ওই জায়গা ত্যাগ করার উদ্দেশ্যে হাঁটা শুরু করলো। দাঁড়ালেই সমস্যা। হাজারটা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। আঁধারীনির চলাফেরা স’হ্য হচ্ছিলো না তার। তাই সুযোগ পেয়ে থা’প্প’ড় বসিয়ে দিলো গা’লে। ধ্রুব নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। আর কতদিন পারবে সে নিজেও জানে না। তখনি ধ্রুবর সামনে এসে দাঁড়ালো শায়ান। ধ্রুব ভ্রু কুঁচকে বললো,
“কি খে’লা খেলছিস ধ্রুব? কি প্ল্যান তোর?”
ধ্রুব রহস্যময় হাসলো। বললো,
“তুই আমার প্ল্যান জেনে কি করবি শায়ান? যেইটা তোর করা দরকার ওইটা তুই কর। আমাকে ফলো করাটা এই মুহুর্তে বোকামি।”
প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১৩
“তোর হাবভাব ভালো লাগছে না ধ্রুব। কথা ছিল মন জিতে নেওয়ার। এরমধ্যে স্মিতা কোত্থেকে আসলো? ওকে বিয়ের প্রপোজালও করে ফেললি? আসলে কি করতে চাচ্ছিস? খেলা কঠিনভাবে খেলে নিজেকে হারানোর পথে নিচ্ছিস। অবশ্য, শাফায়েত খন্দকার শায়ানের কাছে আজ অবধি সবাই হেরেই গেল। জিতলো আর না।”
ধ্রুব শব্দ করে হেসে বললো,
“হারার জন্য তৈরি হ শায়ান, আঁধারের জন্য পৃথিবীর সবকিছু আমি করতে রাজি। আর এইটাতো সামান্যতম বা’জি।”