শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৬

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৬
Sabihatul sabha

আয়ান ভদ্র মহিলার দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ সত্যি এটা আপনার বাড়ির ঠিকানা..? ”
‘ কি আজব! আপনাকে আমি ভুল ঠিকানা কেন দিব.?’
আয়ানের পাশে দাঁড়ানো বারেক বলে উঠলো, ‘ আন্টি আপনার ছেলে লাস্ট যেই মেয়েটাকে সাথে নিয়ে বের হয়ে ছিল তার কোনো ছবি আছে.?’
ভদ্র মহিলা বেশ রেগে গেলো বারেকের উপর!
‘ আমাকে কোন দিক দিয়ে আন্টি মনে হয়.?’
বারেক ছত্রিশটা দাঁত বের করে হেঁসে বললো,’ সরি দাদি’
মহিলা আরও রেগে গেলো ‘ এই অসভ্য ছেলেকে পুলিশ কে বানিয়েছে.? আমাকে দেখে তোর আন্টি! দাদি মনে হয়!.?’

মহিলার রাগ দেখে বারেক কাদু কাদু মুখে আয়ানের দিকে তাকালো। মহিলার পাশে উনার নাতনি বলে উঠলো, ‘ ভাইয়া কিছু মনে করবেন না দাদিজান একটু এমনি, আপনি একটু ভাইয়াকে খুঁজে বের করার চেষ্টা করুন, বুঝেন ত একমাত্র ছেলে আম্মুর অবস্থা খারাপ টেনশন করে আজ দুইদিন কোনো খুঁজ খবর নেই!’
আয়ান ভদ্রমহিলার দিকে তাকিয়ে বললো,’ আপু আপনার আর কিছু বলার আছে.? আমরা যথেষ্ট চেষ্টা করবো হিরন কে খুঁজে বের করার’
ভদ্রমহিলা এইবার আর রাগ করলো না, বেশ লাজুক হেঁসে বললো,’ আবার আসবো’
উনার নাতনি কপালে হাত রেখে বলে উঠলো, ‘ এক ত বাড়ির অবস্থা খারাপ ভাইকে পাওয়া যাচ্ছে না, আর এইদিকে বুড়ির এই বয়সে ভীমরতি হয়েছে! ‘

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

দাদি নাতনি যেতেই বারেক বলে উঠলো, ‘ স্যার ফাইল রেডি করবো.?’
আয়ান মোবাইল বের করে বললো,’ কোনো প্রয়োজন নেই! ‘
বারেক মাথা হেলিয়ে বললো,’ স্যার দাদির বয়সী মহিলা কে আন্টি বললাম তাও মন বরলো না ডিরেক্ট আপু! দেশ কতো ডিজিটাল হয়ে গেছে স্যার!’
‘ এক রাতে ইতিহাস পাল্টে যায় সেখানে বুড়ির মন আপু টাইপ হতেই পারে বারেক! উনি শরীর দিয়ে বুড়ি হতে পারেন কিন্তু মনের দিন থেকে এখনো ১৬-১৭ বছরের আপু বয়সী!’
বারেক হেবলার মতো তাকিয়ে রইলো আয়ানের দিকে।
‘ এভাবে তাকিয়ে না থেকে কাজে মন দাও বারেক’
‘ স্যার আরেকটা কথা’
‘ হুম জলদি বলে বের হও’

‘ স্যার কি করলে বউ রাগ করবে না.?’
আয়ান মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে বারেকের দিকে তাকালো।
‘ বারেক বিয়ে তুমি করেছো তুমি আমার থেকে ভালো জানবে!’
‘ স্যার বিয়ে করেও বুঝতে পারছি না সোজা করলেও দোষ বাঁকা করলেও দোষ, যেই রাস্তায় যাই তাতেই দোষ, কাল রাত ত বউ সারারাত রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে ‘
‘ তুমি নিশ্চয়ই ভুল কিছু করেছো! সারাদিন কাজ করে স্বামী বাড়িতে আসলে বউরা ব্যাস্ত হয়ে পরে স্বামীর কি লাগবে! কি করলে স্বামী খুশি হবে আর তোমাকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রেখেছে! ‘

‘ স্যার এই গুলো একটা সময় আমিও ভাবতাম কিন্তু বিয়ের পর বুঝা যায় আসল খেল! বউ নয় তখন ( হাত গুলো সাপের মতো করে দেখিয়ে বললো) সাপ হয়ে ধরা দেয়। বউ সেজেগুজে বললো,’ কেমন লাগছে.? আমি বলে ছিলাম লিপস্টিকের কালারটা মানায়নি সাথে মুখের পাউডার বেশি হয়ে গেছে। তাতেই বললো আমি নাকি মেকআপ চিনিনা, আগে মেকআপ কোনটা কিভাবে দিলে কেমন লাগে শিখে তারপর বাড়িতে জায়গা হবে।’
আয়ান খুব মন দিয়ে বারেকের কথা শুনলো। সে মেকআপের বিষয় সতর্ক হয়ে গেলো।
বারেক ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ স্যার কখনো বিয়ে করিয়েন না! বিয়ের পর জীবনটা নিজ হাতে গরম তেলে ছেড়ে দেওয়ার মতো ‘
আয়ান বারেক কে কাজে লাগতে বলে নিরুপমার নাম্বারে কল দিল।
বারেক যেতে যেতে বলে উঠলো, ‘ স্যার আমার কথা আজ গুরুত্ব দিচ্ছেন না! একদিন বুঝতে পারবেন!’
জবা ব্যালকনিতে বসে ছিল তখনি কল আসলো।

‘ হ্যালো’
‘ নিরুপমা আমি পুলিশ অফিসার আয়ান ‘
‘ জ্বি বুঝতে পেরেছি কল কেন দিয়েছেন.?’
‘ একটা জরুরি কথা ছিল’
‘ যাই বলবেন জলদি বলুন’
‘ আপনি কি সব সময় ট্রেনের অপেক্ষায় থাকেন একটু বেশি কথা বললে ট্রেন চলে যাবে’
‘ মানে.?’
‘ সব সময় কল ধরেই বলেন যা বলবেন জলদি বলুন আর কল রাখুন! কেন আপনার কি মনে হয় আমি আমার সময় নষ্ট করে ফালতু কথা বলবো!’
‘ আপনার সময়ের খবর ত জানিনা কিন্তু আমার সময়ের অনেক দাম! ‘
আয়ান লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বললো,’ হিরন নামের কাউকে চিনেন!.?’
নিরুপমার সোজাসাপটা উত্তর ‘ কিসের হিরন.?’
‘ ওই যে আমি বাড়ির ঠিকানা দিয়ে ছিলাম, ঈশা মেয়েটার কেইসের বিষয়! ‘
‘ ওহ্ হুম নাম ত মনে নেই তবে কি হয়েছে.? ‘

‘ ওই বাড়ি থেকে আজ দুইজন এসেছিল তাদের ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না, খুব সুন্দর একটা মেয়ের সাথে বের হয়ে ছিল এই বিষয় কিছু জানেন.?’
‘ কেমন সুন্দর মেয়ে.? আর একটা মেয়ের সাথে বের হয়েছে তাতে কি হয়েছে.? আপনি এইসব ফালতু খবর শুনাতে কল দিয়েছেন.? এটা আপনার বিষয় আমাকে কেন বলছেন.?’
‘ কারণ ওইদিন ওই বাড়িতে আপনার যাওয়ার কথা ছিল যদি দেখে থাকেন কিছু তাই বললাম! আর ওই মেয়ের সাথে বের হওয়ার পর থেকে হিরন কে পাওয়া যাচ্ছে না, তাদের ভাস্যমতে মেয়েটা অসম্ভব রূপবতী ছিল যাকে বলে চাঁদের পরী’
নিরুপমা বিরক্ত হয়ে বললো,’ আপনি বসে বসে হয় ছেলেটাকে বের করুন না হয় আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখুন চাঁদ উঠেছে কিনা! চাঁদ না উঠলে বুঝবেন চাঁদের পরী এখনো পৃথিবীতে আছে আর চাঁদ উঠলে বুঝবেন চাঁদের পরী নিজের সাথে ওই হিরন নাকি হিরা যাই হোক নিয়ে গেছে! ‘
আয়ান বোকার মতো মোবাইলের দিকে তাকিয়ে রইলো। নিরুপমা আয়ান কে কিছু বলতে না দিয়ে কল কেটে দিয়েছে।

বুড়ির কথা শুনে ত মনে হচ্ছে না মেয়েটা নিরুপমা! এমন নিম পাতার মুখে এতো মধুর কথা বের হবে না, আর নিরুপমা ত এতো সুন্দরী নয়! কি জানি হতেও পারে আয়ান ত নিরুপমার মুখ এখনো দেখেনি। সুন্দরী মেয়েদের কথাও সুন্দর হয়, ওরা মিষ্টির মতো দেখতে কথা বললে মনে হয় মধু ঝড়ে পরছে আর এটা ত একটা করলা, নিম পাতা না না ওইটা নিরুপমা নয়। তাহলে কার সাথে হিরন বের হয়ে ছিল.??
আয়ান ঠিক করলো সে আজ ঈশার সাথে দেখা করবে তারপর হিরনের বিষয়টা ভেবে দেখবে।

জবা কথা শেষ করে সামনের ব্যালকনির দিকে তাকিয়ে দেখলো অভ্র ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
জবা অভ্র কে পাত্তা না দিয়ে চলে আসতে চাইলে অভ্র বলে উঠলো, ‘ কে ছিল.? কার সাথে আমাদের মারার প্লান করছো!.?’
জবা চোখ মুখ খিঁচে পেছন ফিরে ফিক করে হেঁসে বললো,’ মনে করো তোমার ভাইয়ের সাথে! ‘
অভ্র ভ্রু কুঁচকে বললো,’ মানে!.?’
জবা মাথা হেলিয়ে কাঁধ ঝাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ হ্যা তোমার পুলিশ ভাইকে জিজ্ঞেস করছিলাম কিভাবে মারলে নিজেও মজা পাব আর পাপিরাও যন্ত্রণা পাবে!’
অভ্র গম্ভীর মুখে বলে উঠলো, ‘ তুমি এতোক্ষণ আয়ানের সাথে কথা বলেছো!.?’
জবা দুই হাত বুকের উপর রেখে বললো,’ কোনো সন্দেহ আছে.?’
‘ তোমরা মেয়ে জাতিরা এমন কেন.? একজনের মৃত্যু হতে না হতেই আরেক জনের কাঁধে ঝুলে পড়ার কতো আগ্রহ! অন্তত তোমাকে এমন ভাবিনি!’

‘ আমরা ত অনেক কিছুই ভাবিনা তবে হয়ে যায় সেখানে আমিও না হয় অন্য সব নারীদের তালিকায় পরলাম ভিন্নতা মানায় না! আর তোমরা পুরুষদের কে বলে এতো মানবতার ফেরিওয়ালা হতে….? ‘
অভ্র প্রচন্ড রাগে চোখ মুখ লাল করে তাকিয়ে আছে জবার দিকে।
জবা অভ্রের মুখের উপর ঠাসস করে ব্যালকনির দরজা লাগিয়ে দিল।
রাগে অভ্র দেওয়ালে একটা লাঠি মেরে চোখ মুখ বন্ধ করে রাখলো। এই মেয়ে ওকে পাগল বানিয়ে তারপর শান্ত হবে! এক ত বিয়ের নাটক করছে, দ্বিতীয় নিজের সাথে বাড়ির সবগুলোকে আঙ্গুলের ইশারায় নাচাচ্ছে অথচ কেউ বুঝতেই পারছে না! এদিকে আরেক হাবলা একে পুলিশ হতে কে বলেছে.? এ ত মজলু হওয়ার দরকার লাইলীর প্রেমে পুরো দুনিয়া ভুলে বসে আছে চোখের সামনের ছলনা ধরতে পারছে না।
সবাই কে দোষ দিয়ে লাভ কি.? নারীর ছলনা এতোটাই ভয়ংকর যতক্ষণ না সে নিজ থেকে ধরা দেয় তাকে ধরার ক্ষমতা কারো নেই।

জবা বিছানার উপর মোবাইল রেখে ঘুরতেই বেলী এসে জবাকে ঝাপটে ধরে বলে উঠলো, ‘ ভাবিইইই!!’
‘ আস্তে আস্তে বেলী’
‘ এই নাও মিষ্টি মুখ করো’
‘ কিসের.? ‘
‘ আমার বিয়ের’
বেলী কে লজ্জা পেতে দেখে জবা হেঁসে বললো,’ কি বেপার ননদী লজ্জায় লাল হয়ে গেছো!’
‘ তার কথা ভাবতেই আমার শরীর শিউরে ওঠে লজ্জায় চারপাশ ঘিরে ধরে ‘
‘ কে সে আমার ননদীর রাজ্যের রাজা.?’
‘ তুমি তাকে চিনো’
জবা অবাক হয়ে বললো,’ আমি কিভাবে চিনি.?’
‘ এই বাড়ির কেউ!’
জবা অবাক হয়ে বললো,’ এই বাড়ির.? কে.?’
‘ অভ্র ভাই’
জবার হাত থেকে মিষ্টি পরে যেতে নিল।
‘ কি হয়েছে.? তুমি ঠিক আছো.?’

জবা নিজেকে সামলে নিয়ে বললো,’ আমি ঠিক আছি। শুভকামনা বেলী’
বেলী মুচকি মুচকি হেসে অভ্রের বিষয় বলতে শুরু করলো, বিয়েতে কোন ড্রেস পরবে, কিভাবে নাচবে, কে কে আসবে, কিভাবে আয়োজন করবে সবকিছু জবা কে শোনাচ্ছে। জবা চুপচাপ সবকিছু শোনলো।
বেলী কথা বলতে বলতে ব্যালকনির দরজা খুলে সামনের ব্যালকনিতে কফি হাতে অভ্র কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ইশারায় জবাকে এখানে আসতে বললো।
জবা বুঝলো না এর আবার কি হলো.?

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৫

জবা আসতেই লজ্জায় লাল হওয়া মুখে বেলী বলে উঠলো, ‘ আমার উনি এতো হট কেন ভাবি.? দেখলেই দিলে কুচ কুচ হতা হে! আমার হট চকলেট বয়! শুধুই আমার!..।
জবা ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ হুম শুধুই তোমার! ‘

শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৭