শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৭
Sabihatul sabha
জঙ্গলের ভেতর একটা লাশ পাওয়া গেছে। কে খু’ন করে জঙ্গলে ফেলে গেলো.?
লাশ দেখে ভয়ে কেউ আগাতে পারছে না। এতো ভয়ংকর ভাবে কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে খু’ন করা সম্ভব নয়!
আয়ান লাশের দিকে তাকিয়ে আছে, লাশের চোখ উল্টে আছে, মাথার চুল পুড়ে আছে সম্ভব ত চুলে আগুন লাগিয়ে দিয়ে ছিল, মুখে ছুরির এতো এতো আঘাত, হাতের পায়ের নখ উল্টে দিয়েছে সবচেয়ে ভয়ংকর যেটা লাশের গোপন অঙ্গ কেটে লাশের পাশে গাছে ঝুলিয়ে রেখেছে।
বারেক ভয়ে থরথর করে কাঁপতে কাঁপতে এসে বললো,’ স্যার এখানে একটা লাশ না, চারটা লাশ তাও একই রকম মৃত্যু । লাশের পাশে গোপন অঙ্গের সাথে একটা চিরকুট তাতে রক্ত দিয়ে লেখা ” পাপ কখনো গোপন করা যায় না তা জ্বলজ্বল করে আকাশের তাঁরার মতো পাপীর মনে ”
গভীর ভাবনায় ডুবে আছে আয়ান। জঙ্গল থেকে আশার পর থেকে আয়ান এমন গম্ভীর হয়ে বসে আছে।
পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট মিটিং বসেছে আয়ান মাত্র সেখান থেকে আসলো।
এই কেইসের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আয়ান কে।
প্রথম লাশটা যে ছিল তার নাম হিরন। হিরনের পরিবারের কারো অবস্থা ঠিক নেই। একমাত্র ছেলের এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছে না৷
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
যতবড় পাওী হোক তাই বলে এতো ভয়ংকর মৃত্যু!!
আয়ান বাকি তিন জনের পরিবারের লোকদের সাথে কথা বলবে বলে মন স্থির করলো। কোনো শত্রুর খবর পেলে ধরতে সুবিধা হবে। খু’ন গুলো দেখে মনে হচ্ছে খুব মাথা খাঁটিয়ে খুন করা হয়েছে। কোনো প্রমাণ ফেলে যায়নি, এতো নিখুঁত ভাবে করা হয়েছে । একদম সিরিয়াল কিলার মনে হচ্ছে!
আয়ান কি মনে করে নিরুপমার কাছে কল দিল।
ওপাশ থেকে কিছু সময় পর রিসিভ হলো।
আয়ান হিরনের মৃত্যুর খবর নিরুপমার কাছে বললো সাথে ওর তিন বন্ধুও ছিল৷ চার জনের একই অবস্থা করে মৃত্যু দেওয়া হয়েছে।
নিরুপমা বেশ অবাক হয়ে বললো, ‘ কি বলছেন.? কিন্তু কেন.? কে করলো.?’
~ তা ত জানিনা তবে পুরো ডিপার্টমেন্ট মিলে খুব জলদি খুনিকে ধরে ফেলবো তারপর বাকিটা জানা যাবে।
নিরুপমা আজ বেশ শান্ত ভাবে কথা বললো আয়ানের সাথে।
আয়ান নিরুপমার সাথে কথা বলে রেখে নিজের সাথেই বলে উঠলো, ‘ এতো বড় একটা মার্ডার সাথে সব টিভি চেনেলে দেখানো হয়েছে অথচ নিরুপমা নিরু এখনো কিছুই জানে না.? সিআইডি অফিসার নিরুপমা নিরু নাম করা একজন সিআইডি হয়ে এত বড় খবর আমার থেকে শুনলো তাও আঠারো ঘন্টা পর! আয়ানের কিছুটা খটকা লাগলো।
বারেক এসে আয়ানের সামনে একটা ফাইল রেখে বললো, ‘ স্যার ঈশা মেয়েটা নিজের কেইস তুলে নিয়েছে!’
আয়ান আরেক ধফা অবাক হয়ে তাকালো বারেকের দিকে।
যে মেয়ে মৃত্যুর সাথে লড়াই করছিল তাও বলেছে আমার সঠিক বিচার চাই, অপরাধীর ধর্ষকের শাস্তি চাই! দুইদিন আগেও ওর বন্ধুরা এসে পুলিশ কে থ্রেড দিয়ে গেছে সেই মেয়ে আজ কেইস তুলে নিল! তাও আবার হিরনের মৃত্যুর সাথে সাথে! কিছুতা একটা কাহিনী আয়ানের চোখের সামনে ঘুরছে কিন্তু আয়ান সঠিক ধরতে পারছে না। মনে হচ্ছে একটা সুত্র ধরলে বাকি গুলো বেড়িয়ে আসবে।
বাড়িতে চলছে বিয়ের আয়োজন।
আরও তিনদিন পর বিয়ে অথচ আয়োজন শুরু হয়ে গেছে আরও দুইদিন আগে থেকে।
শার্লিন বেগম অনলাইনে অফলাইনে ইচ্ছে মতো কেনাকাটা করছেন কিন্তু তাতেও উনার কেনাকাটা শেষ হচ্ছে না।
নিজের একমাত্র মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে যেমন তেমন আয়োজন করবেন না, বিশাল বড় আয়োজন করবেন তাতে কোনো আপত্তি নেই কুলসুম বেগমের। উনারও ইচ্ছে বড় ছেলের বিয়ে ত আর নিজের মতো করে কিছু করতে পারেননি অভ্রের বিয়েতে করবেন।
আয়ানের অফিসে এমনিতেই এতো ঝামেলা তার উপর বাড়ি থেকে একের পর এক কল যাচ্ছে বিরক্ত হয়ে আয়ান মোবাইল বন্ধ করে রাখলো৷
তাতেও তার শান্তি মিলেনি কিছু সময় যেতেই বেলী আর মৌরি এসে হাজির।
আয়ান রেগে বলে উঠলো, ‘ একটু ত লজ্জা কর বেলী নিজের বিয়ে অথচ নিজেই নেচেনেচে বেড়াচ্ছিস কোথায় ঘরের কোনায় বসে কান্না করবি তা না!
বেলী আজ কিছুতেই রাগবে না। চুলগুলো পেছনে দিয়ে বললো,’ শোন আয়ান তুই হয়তো বাংলা সিনেমা ইদানীং বেশি দেখছিস! এইসব সিনেমায় চলে বাস্তবে না। আর আমাকে কোনো জোর করে বিয়েও দেওয়া হচ্ছে না। চুপচাপ আমাদের সাথে চল।
‘ আমি কোথাও যাচ্ছি না’
বেলী খুব ভালো করেই জানে আয়ান কি বললে যাবে।
‘ দেখ আয়ান জবা অপেক্ষা করছে ‘
জবার কথা শুনতেই আয়ানের সুর নিচে নেমে আসলো। আস্তে করে বললো, ‘ জবা যাবে.?’
মৌরি কিছু বলতে চাইলে ইশারায় বেলী চুপ করিয়ে দিল।
রাগে কটমট করে তাকিয়ে রযেছে মৌরি আয়ানের দিকে।
শার্লিন বেগম সেজেগুজে নিচে নেমে আসলো।
বেলী বিরক্ত হয়ে বললো, ‘ তুমি কোথায় যাচ্ছ.?’
‘ আমি তোদের সাথে যাব আমারও কিছু কেনাকাটা বাকি আছে!’
‘ প্লিজ আম্মু আব্বুকে সাথে নিয়ে কিনে নিও আজ আমি আয়ান, মৌরি, জবা, অভ্র যাব!’
‘ জবা কেন যাবে.? ‘
‘ আম্মু তিন দিন ধরে কিনছো তাতেও শেষ হচ্ছে না এখন জিজ্ঞেস করছো জবা কেন যাবে.? তুমি চাও তোমার মেয়ের বিয়েতে সে পুরনো কাপড় পরুক.?
‘ এটা কখন বললাম.? তবে সাবধানে বেলী জবা কিন্তু প্রেগন্যান্ট কিছু হয়ে গেলে বড় ভাবি কাউকে ছাড়বে না।’
‘ ঠিক আছে ‘
জবা ওদের সাথে যেতে চায়নি শায়েলা সিদ্দিকী বুঝিয়ে বললেন। বেলী না হয় কষ্ট পাবে, আয়ান কে বললেন বিশেষ খেয়াল রাখতে।
মৌরি শুধু দর্শক হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখে রাগে দুঃখে শুধু বলে আমারও সময় আসবে সহ্য করে নেই এখন।
আয়ান ড্রাইভিং সিটে বসতেই পাশের সিটে মৌরি বসে গেল। আয়ান একবার জবার দিকে তাকালো। ইচ্ছে ছিল জবা পাশে বসবে অথচ এই হাফম্যান্টেল ওদের মাঝে হাড্ডি হতে চলে এসেছে!
হসপিটালের সামনে আসতেই অভ্র ওদের সাথে যোগ দিল। সমস্যা হলো মৌরি কিছুতেই পেছনে বসবে না ওর নাকি মাথা ঘুরায়।
অভ্র বললো রিক্সা করে চলে যাবে ও আয়ান বললো, ‘ আরে ভাই লজ্জা পাওয়ার কি আছে হবু বউ আর বিয়ে করা বউ একই জিনিস ওর পাশে বস । ‘
অভ্র গম্ভীর মুখে বলে উঠলো, ‘ ও আমার বোন আর বোনের পাশে বসতেই পারি’
রাগে পিত্তি জ্বলে উঠলো বেলীর। আজ বাদে কাল বিয়ে এখনো নাকি বোন!.?
বেলী সরে গেলো জবার অন্য সাইডে জবা কিছু বলার সুযোগ ও পেল না অভ্র ওর পাশে বসে গেল। বেচারি এখন দুইজনের মাঝে।
অভ্র মুচকি হেঁসে ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ বলা ত যায় না জায়গা এভাবে বদলেও যেতে পারে! ‘
ফিসফিস করে বলার কারণে জবা বাদে কেউ শুনলো না। জবা হেঁসে বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ জায়গা বদলানো যায় বেলী ভাগ্য নয়!’
বেলী গাল ফুলিয়ে গাড়ির বাহিরে তাকিয়ে থাকলো।
সারারাস্তা মৌরি বকবক করেছে আয়ান চুপচাপ শুনেছে কোনো উত্তর দেয়নি। পেছনের সবাই বেশ বিরক্ত মৌরির বকবকের উপর ।
আয়ান শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ মৌরি এইবার ত একটু চুপ কর! মাথা ধরে আছে।’
মৌরি বেলীর দিকে তাকালো।
বেলী অভ্রের কথা শুনে গাল ফুলিয়ে বসে আছে এদিকে মৌরি ও গাল ফুলিয়ে বসে রইলো আয়ানের উপর।
জবা গাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় শাড়ির সাথে পা আঁটকে পরে যেতে নেয় খুব সাবধানে অভ্র সামলে নেয় জবা কে।
আয়ান ব্যাস্ত হয়ে বলে উঠলো, ‘ তুমি ঠিক আছো.?’
জবা মাথা নেড়ে বুঝালো সে ঠিক আছে।
অভ্র বিরবির করে বলে উঠলো, ‘ এই এক মেয়ে যার আশেপাশে সবাই প্রকাশে হোক আর গোপনে মরে যাক তাতে ওর কিছুই যায় আসে না। অথচ ও একটু চুট পেলেই হাজার মানুষ হাজির। ‘
অভ্র কে দেখে মনে হলো সে এই বিয়েতে বেশ খুশি। নিজে পছন্দ করে নিজের জন্য কিনলো। মাঝে মাঝে এটাসেটা আয়ান কেও পছন্দ করে দিল।
জবা শুধু চুপচাপ দাঁড়িয়ে রইলো। ওর এইসব একদম ভালো লাগে না। কাজিন কারো বিয়েতে ত জবা ভুলেও যেতে চাইতো না শুধু বিয়ের দিন একটু হাজিরা দিয়ে আসতো৷ ওর ড্রেসআপ দেখলে হতাশ হয়ে তাকাতো কাজিনরা। যেখানে সবাই কি পরবে বিয়েতে এক সপ্তাহ আগে থেকে উত্তেজনা সেখানে জবা একটা লেডিস্ প্যান্ট শার্ট পরে হাজির।
জবার জন্য বেলী পছন্দ করে কিনলো।
অভ্র জবার দিকে তাকিয়ে আয়ানকে বললো,’ তোর না হওয়া হবু বউ আর বর্তমানে ভাবিকে এইটা দিতে পারিস ভালো লাগতে পারে।
আয়ান অনেকক্ষণ ধরে খুঁজছিল জবাকে কি দেওয়া যায়! শাড়িটা আয়ানেরও পছন্দ হয়ে যায় তাই নিয়ে নিল। বাড়িতে গিয়ে জবাকে দিবে গোপনে।
বাড়িতে আসতে আসতে রাত হলো। মার্কেট করে ওরা আবার গিয়ে ছিল সিনেমা হলে সেখান থেকে ফিরতে রাত হয়ে গেছে।
কুলসুম বেগম কাউকে কিছু বললেন না। বাড়ির সবাই যেনো ভেবে নিয়েছে বিয়ের আগে কেউ কাউকে কিছু বলবে না কোনো ঝামেলা করবে না।
সবাই নিজেদের রুমে চলে গেলো।
জবা নিজের রুমে যাবে তখনি পেছন থেকে অভ্র বলে উঠলো, ‘ পাপ কখনো গোপন করা যায় না তা জ্বলজ্বল করে আকাশের তাঁরার মতো পাপীর মনে’
শেষ থেকে শুরু পর্ব ১৬
জবা ভয়ে ভয়ে পেছন ফিরতেই দেখলো অভ্র মোবাইলে কারো সাথে কথা বলছে।
জবা হাফ ছেড়ে বাচলো পা বাড়ালো রুমের দিকে তখনি আবার শুনতে পেলো,’ এই কথাটা আমি আগেও কোথাও শুনেছি!’
পা থমকে যায় জবার, জবা খুব ভালো করে বুঝতে পারছে অভ্র ইচ্ছে করে ওকে শোনাচ্ছে! অভ্র কি ওকে সন্দেহ করছে.???