পারমিতা পর্ব ৪৮
Nabila Ahmed
–রিয়ন!!!!!!
নিজের অজান্তেই মিতার মুখ থেকে বেরিয়ে আসে।
বাতাসের গতি বেড়ে চলেছে, মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে,বৃষ্টির গতিও বেড়ে গেছে। মনে হচ্ছে হঠাৎ করেই অরিয়নের মনের মধ্যে থাকা, এতোদিনের জমানো সব কষ্ট ঝড়ের মাধ্যমে বেড়িয়ে আসছে।
পার্কের দুপাশে দুজন মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে রইল। চারিপাশে শুধু বৃষ্টি পড়ার শব্দ শোনা যাচ্ছে,কিন্তু মিতা এই বৃষ্টির শব্দের সাথে অরিয়নের অস্বাভাবিক হৃদ স্পন্দনও শুনতে পারছে। অরিয়ন সম্পূর্ণ ভিজে গেছে বৃষ্টিতে। অবাক দৃষ্টিতে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মিতার দিকে তাকিয়ে আছে অরিয়ন। যেন বিশ্বাসই হচ্ছে না মিতা সামনে দাঁড়িয়ে আছে। অন্যদিকে, অরিয়নকে দেখামাত্রই মিতার হাত থেকে ছাতাটা পড়ে যায়। সেদিকে যেন চোখ গেল না মিতার। এক নজরে শুধু অরিয়নের দিকে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইল।
অসময়ের এই বৃষ্টি যেন কারও উপর করুণাও করছে না। মিতাকেও ধীরে ধীরে নিজের রঙে রাঙানোর জন্য ভিজিয়ে নিতে লাগলো।
অরিয়নের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মিতার ওজন অনেকটাই কমে গেছে। গালগুলো শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। মুখের মধ্যে থাকা সেই কোমলতা ভাবটা যেন সরে গেছে। লাল ছাতা হাতে দাঁড়িয়ে থাকা মিতা, এই বৃষ্টিতে সাদা রঙের একটা থ্রি পিস পড়ে এসেছে। সাদা জামায় হলুদ রঙের ছোট ছোট সূর্য্যমূখি ফুল আঁকা। মিতার পা থেকে মাথা পর্যন্ত একবার দেখে নেয় অরিয়ন, সাদা রঙের জামা খেয়াল করতেই নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুঁটে উঠে অরিয়নের। “বোকা মেয়ে” মনে মনে বলে উঠে অরিয়ন।
বৃষ্টির ঠান্ডা পানিতে ভিজতে শুরু করেছে মিতা। সারা শরীরে যেন শীতলতা বয়ে বেড়াতে শুরু করেছে। মনে হচ্ছে জমে বরফ হয়ে যাবে। বৃষ্টির পানি মিতার শরীরে পরতেই যেন ঘোর কাটলো অরিয়নের। ধীরগতিতে পা বাড়ায় অরিয়ন। আলতো পায়ে এগিয়ে যায় মিতার দিকে। মিতার থেকে ক্ষণিকের জন্যও চোখ সরায় না, মিতার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় হাটু ভেঙ্গে বসে পড়ে। মিতা অরিয়নের চোখে চোখ রেখে অরিয়নকে দেখছে। অরিয়ন মিতার দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় বাম হাত দিয়ে ছাতাটা ধরে। ছাতা হাতে আলতো করে উঠে দাঁড়ায় অরিয়ন।
মিতার মাথার উপর ছাতা ধরে অরিয়ন। নিজেও এগিয়ে যায় মিতার দিকে। দুজন এখন অনেকটাই কাছাকাছি।
অরিয়ন মনে মনে ভেবেছিলো, মিতাকে যখন সামনা সামনি পাবে তখন কঠিন থেকে কঠিনতম শাস্তি দিবে, কিন্তু এখন?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অরিয়ন আলতো করে মিতাকে নিজের বুকে সাথে মিশিয়ে নিলো। নিজের ডান হাত দিয়ে মিতার কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রেখেছে অরিয়ন। অন্যহাতে ছাতা ধরে রেখেছে মিতার মাথার উপর । নিজের বুকের সাথে মিতার মাথা স্পর্শ করতেই যেন স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়লো অরিয়ন। মিতার মাথায় আলতো করে চুমু খায়। চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে অরিয়নের।
জড়িয়ে ধরা মেয়েটার জন্য অরিয়ন কতটা দুর্বল হয়ে পড়েছে তা হয়তো মিতা কোনোদিন জানতেও পারবে না। বৃষ্টির পানি সেই প্রমাণ সাথে সাথেই মুছে দিচ্ছে। জড়িয়ে ধরা মিতার জন্য আজ অরিয়ন যা অনুভব করছে তা হয়তো এই পৃথিবীর সব চাইতে পবিত্রতম এক অনুভূতি। এই অনুভূতিতে নেই শারীরিক চাহিদা, কোনো আকর্ষণ, রূপের প্রতি মোহ বা ছলনা। যা আছে তা শুধুমাত্র স্নেহ,আদর,মায়া, ভালোবাসা আর শান্তি।
অরিয়নের চোখের পানি বৃষ্টির পানির সাথে এক হয়ে মিশে যাচ্ছে মিতার মাথার চুলে।
–আই মিসড ইউ সো মাচ, লাভ।
মিতার মাথার সাথে নিজের গাল স্পর্শ করিয়ে আলতো করে বলে অরিয়ন।
–সো মাচ।
আবারও বলে অরিয়ন।
স্তব্ধ হয়ে থাকা মিতার দু হাত যেন নিজে নিজেই উপরের দিকে উঠতে থাকলো। আলতো করে জড়িয়ে ধরে অরিয়নকে। দু হাত দিয়ে অরিয়নকে জড়িয়ে ধরতেই যেন বাধ ভেঙ্গে গেল মিতার। দু চোখ দিয়ে অনবরত অশ্রু ঝরতে লাগলো,কিন্তু মিতা তা অরিয়নকে বুঝতে দিলো না। অরিয়নের ভিজে যাওয়া পোশাকে মিতার ভালোবাসার চিহ্নটাও মুছে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। দু জন কতক্ষণ একে অপরকে ধরে দাঁড়িয়ে ছিলো তা কারোই জানা নেই।
হঠাৎ বিদ্যুৎ চমকানোর আওয়াজ শুনে ঘোর কাটে দুজনের। মিতা অরিয়ন থেকে সরে এক পা পিছিয়ে আসে। মিতা পিছিয়ে পড়লেও অরিয়ন মিতার হাত শক্ত করে ধরে রাখে। অরিয়ন হাত ধরতেই অরিয়নের দিকে তাকায় মিতা। অরিয়ন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে নিজের সাথে নিজে কিছু নিয়ে লড়াই করছে।
–কেন পালিয়ে গেলি তা জানতে চাইবো না।
নিচের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে অরিয়ন।
মিতা চুপ করে অরিয়নের কথা শুনছে। মাঝে মধ্যে একবার পুরো পার্কটা দেখে নিচ্ছে। এই বৃষ্টিতে কেউ নেই পার্কে। মানুষের কোনো আনাগোনাও শুনছে না মিতা।
–কী ভুল বা দোষ ছিলো আমার তাও জানতে চাইবো না।
আবারও বলে অরিয়ন। প্রতিটা কথায় অভিমান ভেসে উঠেছে।
–কেন ভালোবাসি বলেও এই পদক্ষেপ নিলি, তাও জানতে চাইবো না আমি।
এবার চোখ তুলে মিতার দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
অরিয়ন মিতার দিকে তাকাতেই মিতা নিজের চোখ সরিয়ে নেয়। পাশে থাকা ফুল গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে রইল। মিতার চোখে অশ্রু ছলছল করছে।
–শুধু বলবো, বাড়ি চল।
বলে অরিয়ন।
চৌধুরী মেনশন,চট্টগ্রাম।
বিছানায় হাত পা মেলে শুয়ে আছে আবরার। পাশেই ফোনে অনবরত কল বেজেই চলেছে।
নামের জায়গায় ৩ টি লাভ দেখা যাচ্ছে। গতকাল থেকে কল দিয়েই চলেছে ফাহমিদা। কল ধরেনি আবরার। এখনো কল বেজে যাচ্ছে সেদিকে খেয়াল নেই আবরারের। চোখ বন্ধ করে রেখেছে শুধু। চোখের সামনে সব কিছু যেন বিদ্যুতের গতিতে স্পষ্ট দেখতে পারছে আবরার।
ফ্ল্যাশব্যাক:
মুরাদপুরের একটি কফি শপের সামনে গাড়ি করে এসে দাঁড়িয়েছে আবরার। গতকাল মোবাইলে কথা বলে এখানে দেখা করার কথা জানায় ফাহমিদা। গাড়ি থেকে নেমেই চোখের সানগ্লাসটা ঠিক করে নেয় আবরার, হাতের ঘড়ির দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করে ১০ মিনিট লেট করেছে সে।
অরিয়নের কারণে সব কাজের চাপ এখন আবরারের ঘাড়ে এসে পড়েছে, নিজের জন্য সময় খুজে পাওয়াও মুসকিল হয়ে পড়েছে। সেখানে কফিশপে আসতে পেরেছে তাই অনেক।
কফিশপের নাম চোখের সামনে আসতেই নাক ছিটকায় আবরার। দেখেই বোঝা যাচ্ছে আহামরি কিছুই না। নর্মাল মিডেল ক্লাস মানুষদের জন্য এই কফিশপ। “কি আর করার” ভেবেই শপে ঢুকে আবরার।
যেমনটা ভেবেছিলো ঠিক ততোটাও খারাপ না শপটা, ভিতরে ঢুকতেই এমনটা ভাবে আবরার।
সুন্দর এলিগেন্ট ভাইব দিচ্ছে শপের ইন্টোরিয়রগুলো। আবরার মাথায় হুট করেই হাত রাখে, ফাহমিদাকে কীভাবে চিনবে বুঝতে পারছে না। মিতার প্রতি অনুভূতি থাকলেও মিতার বন্ধুদের প্রতি কোনো ইন্টারেস্ট ছিলো না আবরারের। একবার প্রতি সীটে চোখ বুলায় আবরার। প্রায় হাতেগুনা সব গুলো সীটেই কাপল বসে আছে। এক পাসের দুটি সীটে শুধুমাত্র একজন করে দুটো মেয়ে বসা। আবরারকে খেয়াল করতেই মেয়ে একটা নিজের সীটের থেকে উঠে এগিয়ে আসে। মুখে বিশাল এক হাসি, পরণে একটা স্কার্ট ও টপস। চুলগুলো খোলা। বাঙালি মেয়ে হলেও কেমন যেন ওয়েস্টার্ন ওয়েস্টার্ন একটা ভাইব দিচ্ছে মেয়েটা।
–ইউ আ…
মেয়েটা সামনে আসতেই মুখ খুলে আবরার। কিন্তু আবরারের কথা শেষ হওয়ার আগেই আবরারকে পাশ কাটিয়ে চলে যায় মেয়েটি।
আবরার পিছনের দিকে তাকাতেই লক্ষ্য করে একটি ছেলের হাত ধরেছে মেয়েটি। বুঝতে পারে মেয়েটি ফাহমিদা নয়।
এবার অন্য সীটে একা বসে থাকা মেয়েটির দিকে এগিয়ে যায় আবরার। মেয়েটির মুখ দেখা যাচ্ছে না, নিচের দিকে তাকিয়ে মোবাইলে কিছু দেখতে ব্যস্ত। মেয়েটির পরণে কালো রঙের জামা। সেটা কী থ্রি পিস নাকি অন্য কিছু তা বুঝতে পারছে না আবরার। ওড়না মাথায় পেঁচানো।
–অবুক।
আবরার টেবিলের পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই মুখ তুলে তাকায় ফাহমিদা। হঠাৎ করে কাউকে দেখে ভয় পেয়ে যায়। বুকের উপর হাত রেখে পিছিয়ে যায় কিছুটা।
আবরার এক নজরে তাকিয়ে রইল ফাহমিদার দিকে। বিড়াল চোখের মেয়েটি আবরারকে দেখে প্রথমে কিছুটা অবাক হলেও পরক্ষণেই মুখে বিশাল এক হাসি ফুঁটে উঠে। মুক্তোর মতো দাঁতগুলোর আলতো এক ঝলক দেখতে পায় আবরার।
–আবরার ভাইয়া?
প্রশ্ন করে ফাহমিদা।
বর্তমান।
হঠাৎ করেই চোখ খুলে তাকায় আবরার। চোখেমুখে চিন্তার ছাঁপ পড়েছে। সেদিনের সেই সামান্য এক দেখা আবরারের জীবনটা যে ক্ষণিকেই পরিবর্তন করে দিবে তা কে জানতো!
ফাহিদার মধ্যে তো আহামরি কিছুই ছিলো না, আর বাকি ৫ টা মেয়ের মতো নর্মাল মেয়ে ফাহমিদা,তাও আবরারের জীবনটা যেন রঙে রাঙিয়ে দিলো ফাহমিদা। মিতার শূন্যতাটা ফাহমিদা কবে থেকে পূরণ করতে শুরু করলো তা বুঝতেও পারেনি আবরার।
পাশেই কল বাজতে থাকা মোবাইলের দিকে চোখ যায় আবরারের। ফাহমিদা একের পর এক কল দিয়েই যাচ্ছে।
–হ্যালো?
কল রিসিভ করে বলে আবরার।
–কতগুলা কল দিলাম দেখোনি?
অপর পাশ থেকে বলে ফাহমিদা।
–দেখলে তো কল ধরতাম ই, তাই না? ধরিনি তার মানে দেখিনি। আর কেউ কল না ধরলে বুঝতে হয় যে, সে ব্যস্ত। এই কমনসেন্সটাও নেই তোমার?
রাগান্বিত আবরার বলে।
ফাহমিদা চুপ করে রইল। একটা মানুষ এতোগুলো কল দিলে তা যে কোনো গুরুত্বপূর্ণ কথা বলতেই দিয়েছে,তাও তো আবরারের বুঝতে হবে তা না? উলটো ফাহমিদার সাথে রাগারাগি করা শুরু করে দিয়েছে।
–ঠিক আছে।
ফাহমিদা অভিমানের সুরে কথা বলেই কল কেটে দেয়।
–শি*ট।
বিছানায় মোবাইল ছুড়ে ফেলে দেয় আবরার। একটা ভুল, ভুল বললে ভুল হবে। সবটা তো আবরার জেনেই করেছিলো। এখন তা গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছে। না পারছে নিজের অনুভূতিকে আগলে নিতে আর না পারছে এর থেকে বের হয়ে আসতে।
একপ্রকার হার মেনেই আবারও মোবাইল হাতে তুলে নেয় আবরার। কল দিতে থাকে ফাহমিদাকে কিন্তু কল রিসিভ হচ্ছে না।
–এই মেয়ে আমাকে পাগল না করে শান্তি পাবে না।
কপালের উপর হাত রেখে বলে আবরার।
–যা খুশি করো গিয়ে।
বলেই আবারও বিছানায় গা এলিয়ে দেয় আবরার।
–শুধু বলবো, বাড়ি চল।
বলে অরিয়ন।
মিতা নিজের হাত ছাড়িয়ে নেয় অরিয়নের হাত থেকে। মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। অরিয়ন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো মিতার দিকে।
–কেন?
প্রশ্ন করে অরিয়ন। তবে কথাটা প্রশ্ন কমই মনে হলো।
–তুমি এখানে কেন? তুমি কীভাবে জানলে আমি এখানে?
বলে মিতা।
অরিয়নের সাথে আজ দেখা হয়ে যাওয়ার ব্যাপারটা কী শুধুই কো-ইন্সিডেন্স নাকি অন্যকিছু? কিছুই মিতার মাথায় ঢুকছে না।
–আমাকে দেখে খুশি হস নি তুই।
ব্যাঙ্গাত্মক এক হাসি দিয়ে বলে অরিয়ন।
–বলো কীভাবে জানলে? আর আরিয়ান ভাইয়া কো….. ওয়েট।
কথাটা বলতে গিয়েও থেমে গেল মিতা। মাথার মধ্যে সব কিছু এখন পরিষ্কার হতে শুরু করেছে।
–তুমি সব জানো!
বলে মিতা।
–কেন আরিয়ান? কেন আমি নই?
অভিমানের সুরে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
অরিয়ন কী প্রশ্ন করেছে তা ঠিক বুঝতে পারছে মিতা,তাও কিছু বললো না।
–তোর ভালোবাসা সব কিছুই কী ছলনা ছিলো? মিথ্যে ছিলো? অভিনয় করেছিলি আমার সাথে?
এবার ও মিতা কিছু বললো না। অসহায়ের মতো অরিয়নের দিকে তাকিয়ে রইল।
–সেদিন রাতে আমাদের মধ্যে যা হয়েছে সব কী মিথ্যে ছিলো?
–রিয়ন, কী সব বলছো তুমি?
বলে মিতা।
–ঠিকটাই বলছি। আমি ঠিকটাই বলছি। মিথ্যে না হলে কেন তুই আমাকে রেখে চলে আসলি?
কেন আরিয়ানের সাথে যোগাযোগ রাখলি? কেন আমার কথা একবার ভাবলি না তুই?
মিতার দিকে দু পা এগিয়ে গিয়ে চেঁচিয়ে বলে অরিয়ন।
–কেন ভালোবাসি বলেও চোরের মতো পালিয়ে গেলি তুই? বল।
মিতাকে বার বার প্রশ্ন করতে থাকা অরিয়ন এতোটাই মগ্ন হয়ে পড়েছে যে, মিতার হাতে যে প্রতিনিয়ত চাপ পড়ছে সেদিকে লক্ষ্যই নেই অরিয়নের।
–জবাব দে!
চেঁচিয়ে বলে অরিয়ন।
–কারণ আমি সব জানি।
একটানে অরিয়নের থেকে হাত ছাড়িয়ে চেঁচিয়ে জবাব দেয় মিতা।
–কী জানিস তুই?
ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে অরিয়ন।
–সবটাই। যা আমার জানার প্রয়োজন ছিলো, অনেক আগে থেকেই। যা তোমরা লুকাতে চেয়েছিলে।
অরিয়নের চোখে চোখ রেখে বলে মিতা।
–তুই সব জানিস! কিন্তু কীভাবে?
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–হাহ, অবাক হলে মনে হয়।
তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলে মিতা।
–অবাক হবো? অবাক কেন হবো?
কী বুঝতে না পারার করার মতো বলে অরিয়ন। যেন মিতার কথা কিছুই বুঝতে পারছে না।
–ওহ প্লিজ।
–কী প্লিজ? কী বলতে চাচ্ছিস তুই?
এগিয়ে গিয়ে আবারও মিতার হাত ধরে অরিয়ন।
–কী বলতে চাচ্ছি তা জানোনা?
অরিয়নের চোখের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
–ন…
অরিয়নের কথা শেষ হওয়ার আগেই বিদ্যুৎ চমকায়। ভয়ে লাফিয়ে উঠে মিতা। বৃষ্টি আর বাতাসের গতি যে আগের থেকে বেড়েছে সেদিকে লক্ষ্য করেনি কেউ। দুজন চারপাশে তাকাতেই লক্ষ্য করে আকাশের অবস্থা ভালো না। ঝড়-তুফান এর সংকেত মনে হচ্ছে অরিয়নের।
মিতা নিজেকে একটু শান্ত করার চেষ্টা করলো। অনুভূতিগুলো যেভাবে আক্রমণ করতে শুরু করেছে তাতে এই ঝড়-তুফান কিছুই মনে হচ্ছে না মিতার। অরিয়নের হাতে থাকা ছাতাটা নিজের হাতে নিয়ে নেয়। অরিয়ন থেকে অন্য হাত ছাড়িয়ে আবারও দু পা পিছিয়ে আসে। অরিয়ন মিতার দিকে তাকিয়ে দেখছে মিতা কী করে।
–বাড়ি ফিরে যাও।
নিচের দিকে তাকিয়ে বলে মিতা।
–I love you.
বলে অরিয়ন।
–আকাশের অবস্থা ভালো না।
মিতার অন্য দিকে ঘুড়ে জবাব দেয়।
–Please.
অনুরোধের সুরে বলে অরিয়ন।
–পরী!
উচ্চস্বরে বলে উঠে অরিয়ন। এগিয়ে যায় মিতার দিকে।
কাকভেজা অবস্থায় অরিয়ন মিতার দিকে তাকিয়ে রইল। টিপটিপ বৃষ্টিতে ভিজে গিয়েছে অরিয়ন। চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে।
–বাড়ি চল, পরী।
মিতার হাত আলতো করে স্পর্শ করে বলে অরিয়ন। অধীর আগ্রহ নিয়ে মিতার সম্মতির আশায় আছে অরিয়ন। মনে হচ্ছে একটা না শব্দ অরিয়নকে এখানেই শেষ করে দিবে।
মিতার চোখে পানি ছলছল করছে। চাইছে কোনোমতে যেন নিজেকে শক্ত করতে পারে। বার বার নিজেকে এই মানুষটার সামনে দুর্বল হতে দিবে না। মিতা নিজের হাত অরিয়নের হাত থেকে ছাড়িয়ে নিলো। নিয়ের হাতে থাকা ছাতাটা অরিয়নের দিকে এগিয়ে দেয়।
–আমাকে ভুলে যাও, রিয়ন। আমি এখন অন্য কারোর।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে মিতা।
পারমিতা পর্ব ৪৭
“আমি এখন অন্য কারোর”
“আমি এখন অন্য কারোর”
কথাটা যেন বার বার প্রতিধ্বনির মতো অরিয়নের কানে বাজতে থাকলো। এতোক্ষণ নিজের মধ্যে ধরে রাখা সব অনুভূতিগুলো যেন লুকিয়ে পালালো। ক্ষণিকেই অনুরোধের থেকে সব কিছু যেন ভয়ানক কিছুতে রূপ নিতে শুরু করলো।
–হাহাহহাহাহাহায়াহহাহাহায়াহ।
শব্দ করে হাসতে থাকে অরিয়ন।