শেষ থেকে শুরু পর্ব ২২
Sabihatul sabha
আসিফ অভ্রকে দেখে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো।
অভ্র এতোদিন পর চোখের সামনে নিজের ভাইকে দেখে এগিয়ে আসলো জড়িয়ে ধরতে অথচ আসিফ সরে গেলো। অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো অভ্র! আগে ত আসিফ অভ্র কে ভালোবেসে জড়িয়ে ধরতো। এক সাথে হাজারও স্মৃতি আছে দুই ভাইয়ের, মানুষ এদের দেখলো হিংসে করতো ভাইদের মধ্যে এতো মিল কিভাবে থাকে.? আর আজ সেই ভাই নিজ থেকে সরে গেছে!
আসিফ অভ্র থেকে দৃষ্টি সরিয়ে তাকালো দূরে দাঁড়িয়ে থাকা জবার দিকে।
সবাই আসিফের দৃষ্টি খেয়াল করে সিঁড়ির দিকে তাকালো।
জবা ঘাবড়ে গেলো সবার এমন তাকানো দেখে।
পুলিশ অফিসার এগিয়ে আসলো। এই অফিসার আর কেউ নয় আয়ান চৌধুরী। কি দিন আসলো চৌধুরী বাড়ির ছেলের হাতেই বন্দী হচ্ছে চৌধুরী বাড়ির সম্মান।
শফিক সাহেব বলে উঠলো, ‘ আসিফ তুমি বেঁচে আছো.? এতোদিন কোথায় ছিলে.?’
আসিফ শান্ত দৃষ্টিতে শফিক সাহেবের দিকে তাকিয়ে নিজের মা’য়ের দিকে দৃষ্টি দিল।
মা’য়ের দৃষ্টিতে কি আছে.? ভয়.? অনুতাপ..? নাকি ছেলেকে ফিরে পাওয়ার আনন্দ.? না আসিফ কিছুই বুঝতে পারছে না।
‘ আস্তে ছোট আব্বু এতো তাড়া কিসের.? এসেই যেহেতু পরেছি কিছু জানার ত বাকি থাকবেন না।’
শার্লিন বেগম বলে উঠলো, ‘ কিন্তু তোমার সাথে পুলিশ কেন
? আর তুমি বসো আমরা আস্তে ধীরে সবকিছু শুনি। ‘
আসিফ গম্ভীর কন্ঠে বললো,’ আমার কোনো এক্সিডেন্ট হয়নি আমাকে ইচ্ছে করে মে’রে ফেলার প্লান করা হয়ে ছিল।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
সবাই চমকে একে ওপরের মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ কে এমন কাজ করলো.? আমাদের শত্রুর শেষ নেই জানি তবে যে এমন কাজ করেছে শুধু একবার বলো, তার নিশ্বাস বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত সে মৃত্যুর জন্য ছটফট করবে।’
আসিফ আয়ানের দিকে তাকিয়ে ইশারা করে বললো,’ উনাকে নিয়ে যান’
কুলসুম বেগম সেই আগের মতো স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অভ্র একবার নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে আসিফের দিকে তাকিয়ে অবাক কন্ঠে বললো,’ ভাই তোমার মাথা ঠিক আছে.? কি করছো.? আম্মুকে কেন নিয়ে যাবে.?’
আসিফ কিছু না বলে সোজা হেঁটে উপরে সেই পুরনো নিজের রুমটায় চলে গেলো।
আয়ান বুক টানটান করে কুলসুম বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,’ এখন আপনাকে আমাদের সাথে যেতে হবে। চৌধুরী বাড়ির সম্মান বলে হাতে কিছু লাগাচ্ছি না।’
এমনিতেই আয়ানের কুলসুম বেগমের উপর ভীষণ রাগ জমে ছিল। বিয়াটা আয়ান শুধু মাত্র কুলসুম বেগমের জন্য করতে হয়েছে। এই মহিলার হুকুম কেউ অমান্য করতে পারে না৷ আজ আয়ান যেনো সুযোগ পেয়েছে।
অভ্র রাগী কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আয়ান আম্মু তোমার বড় আম্মু হয় সম্মান দিয়ে কথা বলো।’
আয়ান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে অভ্রর শার্টের কলার ঠিক করে দিয়ে বললো,’ ছোট ভাই যার সম্মান আছে মানুষ তাকেই ত সম্মান দেয় তাই না.? ‘
অভ্র আয়ানের এমন কথায় থমকে গেলো। এটা আয়ান.? যাকে কুলসুম বেগম সব সময় নিজের ছেলের চোখে দেখে এসেছে.? অভ্র আয়ানের আচরণে মায়ের মুখের দিকে তাকালো।
কুলসুম বেগম আগের মতোই কঠিন কন্ঠে বললো,’ দেরি করছো কেন.? নিয়ে চলো।’
আয়ান কিছুটা রেগে বলে উঠলো, ‘ আস্তে এখন আপনি একজন আসামী।’
কুলসুম বেগম আয়ানের সাথে চলে গেলো। অভ্র পেছন থেকে চোখের শান্তনা দিতে চাইলো মা কে। সে আসবে মা’কে ছাড়াতে ওর আম্মু এমন নয়! নিজের সন্তান কে কখনো মা মারতে কিভাবে চাইতে পারে.?
অভ্র পেছন ফিরে জবার দিকে তাকালো। জবা এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এদের রংতামাশা দেখছিল। দেখতে বেশ ভালোই লাগছিল একজনের প্রতি আরেক জনের তিব্র ঘৃণা, তাচ্ছিল্য।
শফিক সাহেব, শরিফ সাহেব অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখলেন সবকিছু । তারা জেনো কিছুই বুঝতে পারছেন না কি হচ্ছে! আর আসিফ কাউকে কিছু না বলে নিজের রুমে চলে গেলো! সে ত নিজের মা কে নিজের থেকেও বাশি ভালোবাসতো আজ নিজেই তাকে পুলিশের হাতে তুলে দিল! অপরাধীর খাতায় নাম দিল কিন্তু কুলসুম বেগম করেছেটা কি.?
শরিফ সাহেব অভ্রর কাঁধে হাত রেখে বললো,’ আমি এখনি শহরের সবচেয়ে বড় উকিলের সাথে কথা বলছি। ‘
অভ্র কিছু বললো না।
শফিক সাহেব কেমন করে যেনো শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে তাকালো।
শায়েলা সিদ্দিকী এমন ভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেনো এখানে কিছুই হয়নি।
শার্লিন বেগম টেনশনে একটু পর পর পানি খাচ্ছে আর শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে তাকিয়ে কান্নার সুরে বলে উঠলো, ‘ বড় ভাবির কিছু হবে না ত ভাবি! আমার খুব টেনশন হচ্ছে,, আসোনা একবার গিয়ে দেখে আসি, বাসায় আমার মন বসছে না।’
শায়েলা সিদ্দিকী বিরক্তি কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ বার বার ঘ্যানঘ্যান করবি না ত আমার কাছে৷ এতো দরদী হলে তুই যা আমার এখন অনেক কাজ। পুরো সংসার ত এখন থেকে আমাকেই সামলাতে হবে। ‘
শার্লিন বেগম বোকার মতো বললো,’ কেন.? তুমি সামলা বা কেন.? ভাবিকি আর আসবে না.?’
শায়েলা সিদ্দিকী তৃপ্তির ঢেঁকু তুলে বললো,’ মনে ত হয় না!’
শার্লিন বেগম অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে।
অভ্র জবার হাত শক্ত করে ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। জবা নিজের হাত ছুটানোর জন্য অভ্রর হাতে ঘুষি দিচ্ছে, এক পর্যায়ে কামড় দিয়ে বসলো।
অভ্র ব্যাথায় চোখ বন্ধ করে নিল তাও জবার হাত ছাড়লো না।
জবা যখন দেখলো অভ্রর হাত থেকে রক্ত ঝড়ছে সে নিজ থেকে কামড় ছেড়ে দিয়ে অবাক দৃষ্টিতে অভ্রর দিকে তাকালো।
অভ্রর চোখ মুখ অসম্ভব লাল হয়ে আছে। জবা ভয়ে একদম চুপ হয়ে গেলো।
অভ্র নিজের রুমে জবা কে এনে ছুঁড়ে ফেললো ফ্লোরে
ফ্লোরে পরে জবা হাতের কনুইয়ে ভীষণ ব্যাথা পেলো। ব্যাথায় চোখ মুখ খিঁচে রাগী চোখে অভ্রর দিকে তাকিয়ে আবার ভয়ে জমে গেলো।
অভ্র এতোটা রেগে গেছে দেখে জবা কি করবে বুঝতে পারছে না।
অভ্র জবার সামনে ঝুকে বলে উঠলো, ‘ তুমি করেছো ইচ্ছে করে তাই না.? এখন শুধু অপেক্ষা করো আমি কি করি! আমার মা’য়ের দিকে বিনা কারনে আঙ্গুল তুলা মানুষদের আমি আঙ্গুল ভেঙে দেই আর তুমি কিনা তাকে জেলের ভেতর থেকে ঘুরিয়ে আনছো! আজকের মধ্যে আমি মা’কে ছুটিয়ে আনছি তারপর আসিফ ভাইয়ার সাথে বাকিটা বুঝে নিব। ততক্ষণ তুুমি এই রুমে বন্দী থাকবে।
জবা ফ্লোর থেকে উঠে একটু সাহস জুগিয়ে বলে উঠলো, ‘ ভুলে যেও না আমি তোমার কে.? তোমার ভাই কিন্তু বাড়িতেই আছে অভ্র, তোমার আমার উপর এমন করার কোনো অধিকার নেই আর তোমার কাছে প্রমাণ কি আমি তোমার আম্মুকে ফাঁসাতে চাচ্ছি!.?
অভ্র জবার দুই বাহু চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ আমার থেকে ভালো তোমাকে কে চিনে.? এইসব কিছু তোমার জন্য হচ্ছে, তুমি আসিফ কে ব্ল্যাকমেইল করে ছিলে এমনটা করতে তাই না.?
জবা অভ্রর চোখে চোখ রেখে বলে উঠলো, ‘ আর আমি এমনটা কেন করবো!.?’
অভ্র এক হাতে জবার চুলগুলো কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে বললো,’ মা’য়ের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য! শহরের সবচেয়ে বড় উকিল মায়া তালুকদার এর মৃত্যুর প্রতিশোধ! ‘
জবা হাল্কা হাসলো অভ্রর কথা শুনে। ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো অভ্রের কাছে, একদম কাছে গিয়ে চোখ তুলে অভ্রের দিকে তাকালো।
জবা তাকানো দেখে অভ্রর হৃদপিণ্ড কেঁপে উঠল, বুকের ভেতর কেমন করে উঠলো।
জবার চোখে পানি ছলছল করছে। দেখে মনে হচ্ছে এখনি বুঝি জল গড়িয়ে পরবে অথছ মেয়েটা কতো সুন্দর করে চোখের জল আড়াল করে ফেললো।
অভ্র ঢুক গিলে চোখ বন্ধ করে বললো,’ জবা আমার থেকে একটু দূরে সরে যাও’
জবা যেনো আরও কাছে আসতে চাইলো। এমনিতেই জবার নিশ্বাস অভ্রের ঘাড়ে আছড়ে পড়ছিল। এখন যেনো একজনের হার্টবিট অন্যজন শুনতে পাচ্ছে।
অভ্র নিজেই জবার থেকে দূরে সরে যেতে নিয়ে খেয়াল করলো পেছনে আর যাওয়ার জায়গা নেই, দেওয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেছে।
অভ্র কাঁপা কন্ঠে বললো,’ জবা সরে দাঁড়াও আমার বের হতে হবে।’
জবা বাঁকা হেঁসে আঙ্গুল রাখলো অভ্রর উন্মুক্ত গলায়। গলার মাঝে আঙ্গুল দিয়ে আঁকাবাকা করতে করতে বললো,’ এতো সহজ ভাবে মায়া তালুকদারের মৃত্যুর শাস্তি কিভাবে দেই বলেন অভ্র.? মায়া তালুকদারের খুনিকে ত আমি নিজ হাতে খু’ন করবো! পুলিশের হাতে কেন তুলে দিব! এমনটা হলে কি এতো কিছু সহ্য করি এতোদিন!.? এতো বোকা কেন আপনি.? ‘
অভ্র যতোটা রেগে জবাকে নিয়ে এসেছিল এখন নিজেকেই ভীষণ অসহায় মনে হচ্ছে এই মেয়ের সামনে।
এই যে শাড়ি পড়া, চুল ছাড়া, চোখে গাড়ো কাজল, সাজগোজ বিহীন মেয়েটাকে এখন মনে হচ্ছে অভ্রর সামনে সদ্য ফোঁটা এক পদ্মফুল! চাইলেও অভ্র তার উপর রাগ করতে পারছে না, কিছু বলতে পারছে না।
জবার আঙ্গুলের ছুঁয়া জেনো অভ্রকে অশান্ত করে তুলছে।
অভ্র না চাইতেও কাঁপা কাঁপা হাত জোড়া চলে গেলো জবার শাড়ির ভাঁজে।
শাড়ির ভাজে কোমরে ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেতেই জবা কেঁপে উঠল। হুঁশ ফুরলো সে অভ্রর কতোটা কাছে চলে এসেছে! লজ্জায় অভ্রর ঘার থেকে হাত নিয়ে আসতে চাইলে অভ্র চটজলদি জবার হাত চেপে ধরলো।
জবা কিছু বুঝে উঠার আগেই অভ্র হাল্কা করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল জবার ঠোঁটে।
জবা লজ্জায়, ভয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে ঠোঁট ছুয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
অভ্র ঠোঁট দুই সেকেন্ডের জন্য ছুয়ে সাথে সাথে ওকে ছেড়ে দূরে সরে গেলো।
জবা ফ্রিজ হয়ে ঠোঁটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ।
অভ্র আয়নার সামনে গিয়ে আয়নার মাঝে জবার পেছনটা দেখলো।
স্বাভাবিক হাল্কা রাগী কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আজ তুমি এই রুমে বন্দী থাকো যতক্ষণ না আম্মু ফিরছে। ‘
অভ্র হাতে ঘড়ি, সাদা শার্ট, চোখে চশমা দিয়ে চুল ঠিক করতে করতে বেড়িয়ে গেলো।
জবা শুধু চুপচাপ তার যাওয়া দেখলো। সে বুঝতে পারছে না অভ্রর এমন কাজে সে রাগ করবে নাকি লজ্জা পাবে.? মনে ত হচ্ছে লজ্জা পাচ্ছে কিন্তু কথা ছিল রেগে যাওয়ার!
অভ্র সারাদিন বহু দৌড়াদৌড়ি করেছে, কোনো ভাবেই কিছু করতে পারেনি। পুরো পুলিশ ডিপার্টমেন্ট একটা কথাই বলছে সিআইডি অফিসার নিরুপমা নিরু ম্যামের সাথে কথা বলেন। অথচ অভ্র এই সিআইডি অফিসার কেই খুঁজে পাচ্ছে না। আয়ান চিনেও অস্বীকার করছে সে নিরুপমা নিরু কে চিনেনা।
বারেক অবাক হয়ে কয়েক বার জিজ্ঞেস করলো, ‘ স্যার উনি আপনার বড় আম্মু হয় তাও আপনি এমন আচরণ কেন করছেন.?? আপনি ত অচেনা কাউকেও হেল্প করেন অথচ আপনার আপন মানুষের বিষয় আপনি এমন কেন.?’
আয়ান কিছু বলেনি তবে রাগী চোখে বারেকের দিকে তাকিয়ে বুঝিয়ে দিল আরেকটা কথা বললেও তোমাকেও লকাবে ঢুকিয়ে দিব!
বারেক এতো এতো প্রশ্ন মনে নিয়ে মুখে আঙ্গুল দিয়ে তালা দিয়ে রেখেছে।
আসিফ আশার পর একবারও রুম থেকে বের হয়নি।
লতিফার সাহস হয়নি ঢেকে খাবার দেওয়ার।
শায়েলা সিদ্দিকী বেলীকে রাগী কন্ঠে বলেছে,’ এভাবে রুমে শুয়ে বসে আর কতো.? একটু ত কাজে হাত বাড়াতে পারো! এক ত আমার ছেলের উপর ঝেকে বসেছো তার উপর ছেলেটার একটু খেয়ালও রাখছো না! এমন হলে আমি বিপরীত কিছু ভাবতে বসবো।’
বেলী শায়েলা সিদ্দিকী আচরণে অবাক হয়ে বললো,’ আপনি ঠিক আছেন মেঝো আম্মু.? আর বিপরীত কিছু মানে বুঝলাম না!’
শায়েলা সিদ্দিকী বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ তুমি খুব বুদ্ধিমতী মেয়ে আশা করি আমি বুঝাতে হবে না। আমার বোনের মেয়ে কিন্তু রেডি।’
বেলী শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ কুকুরের পেটে কখনো ঘি হজম হয় না আপনার অবস্থা হয়েছে এখন এমনটা। আপনার ছেলেকে পারলে আজ রাতেই হাজার খানেক মেয়ের সাথে বিয়ে পরিয়ে দেন তাতে আমার কিছুই যায় আসে না।’
বেলী শায়েলা সিদ্দিকীর মুখের উপর ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দিল।
শায়েলা সিদ্দিকী রেগে বলে উঠলো, ‘ আজ আমার ছেলে বাড়ি আসুক তোর এই দেমাগ বের করবো আমি! ‘
সবাই জেনো অবাকের উপর অবাক হচ্ছে হঠাৎ শায়েলা সিদ্দিকীর এমন রুপ দেখে। এতোদিন তাহলে কুলসুম বেগমের জন্য সে মুখের উপর আলাদা একটা মুখোশ লাগিয়ে রেখেছিল.?
লতিকা কে কাজ থেকে বের করে দিল। সেই ছোট থেকে লতিকা এই বাড়িতে কাজ করে আসছে আজ একদিনে জেনো শায়েলা সিদ্দিকী সবকিছু পাল্টে দিচ্ছে।
লতিকা কাঁদতে কাঁদতে বলে উঠলো, ‘ আফা আমি কই যামু.? আমি ত বুঝ হওয়ার পর থাইকা এখানেই থাহি’
শায়েলা সিদ্দিকী সোফায় পা ঝুলিয়ে বললো,’ তা আমি কিভাবে জানবো! সারাজীবন ত আর আমরা পালতে পারবো না এখন নিজের আশ্রয় গিয়ে খুঁজো ‘
লতিকা ছলছল নয়নে শার্লিন বেগমের দিকে তাকালো। আজ জেনো চাইলেও শার্লিন বেগম কিছু বলতে পারছে না। হঠাৎ করে এতোকিছু মাথা জেনো কাজ করছে না।
‘ আফা নতুন কাজের মাইয়া রাখলে কি কিছু বুঝবো.?’
‘ নতুন রাখবে তোমাকে কে বলেছে.?’
‘ তাইলে.?’
‘ বাড়িতে এতোগুলা মহিলা থাকতে কাজের মহিলার কি দরকার.? বারতি টাকা খরচ করার কোনো মানে হয় না! ‘
শার্লিন বেগম রেগে নিজের রুমে চলে গেলেন।
মধ্য রাতে অভ্র বাসায় ফিরলো। ক্লান্ত মস্তিষ্ক, ক্লান্ত শরীর। মা জেলের মাঝে কিভাবে থাকবে.? আমি কিভাবে বিছানায় ঘুমাবো.?
অভ্র লাইট জ্বালাতেই জবার মায়াবী মুখটা নজরে আসতেই সকল ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো।
জবা নিচে গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে।
অভ্র কোমরে হাত রেখে লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে শান্ত করে বললো,’ এই ঠান্ডায় মেয়েটা নিচে কেন শুয়ে আছে.? একটুও নিজের খেয়াল রাখে না!’
অভ্র কোলে করে জবাকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে কপালের চুলগুলো সরিয়ে হাল্কা কপালে চুমু দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
অভ্র আসিফের রুমে কড়া নাড়তেই আসিফ দরজা খুলে দিল।
অভ্র কিছু না বলে চুপচাপ গিয়ে শুয়ে পরলো আসিফের বিছানায়।
আসিফ গম্ভীর কন্ঠে জিজ্ঞেস করলো,’ এই রুমে কেন.?’
অভ্রর সহজ স্বীকারোক্তি, ‘ জবা আমার রুমে ঘুমাচ্ছে ‘
আসিফ বেশি কিছু বললো না।
শায়েলা সিদ্দিকী বসে বসে নাস্তা করছে। বেলী দাঁতে দাঁত চেপে নাস্তা বানাচ্ছে।
শার্লিন বেগম চুপচাপ মেয়েকে হেল্প করছে।
বেলী রাগী দৃষ্টিতে শার্লিন বেগমের দিকে তাকাতেই শার্লিন বেগম বলে উঠলো, ‘ শশুর বাড়িতে কাজ করেই খেতে হয় ‘
বেলীর কথা বাড়াতে ইচ্ছে হলো না। কাল রাতে ভেবেছিল আয়ান আসলে ঝগড়া করবে অথচ আয়ান রাতে বাড়িতে আসেনি।
শায়েলা সিদ্দিকী জবার জন্য রাগে গজগজ করছে।
জবা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে।
শায়েলা সিদ্দিকী জবার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,’ কোথায় ছিলে.? এখন সময় হলো নিচে আসার.?’
জবা বাঁকা হেঁসে শাড়ির আঁচল কোমরে গুঁজে বললো,’ শাশুড়ী আম্মা কল দিয়ে বললো আসছে তাই স্পেশাল নাস্তা বানাতে আসলাম সাথে আপনার কিছু লাগবে মেঝো আম্মা!.?’
শায়েলা সিদ্দিকী অবাক হয়ে থমথমে মুখে বললো,’ শাশুড়ী আম্মা মানে.? ‘
‘ সে কি আপনি আমার শাশুড়ী আম্মাকে চিনেন না.? আচ্ছা আমি চিনিয়ে দিচ্ছি দরজার দিকে তাকান।’
শায়েলা সিদ্দিকী দরজার দিকে তাকাতেই দেখলো কুলসুম বেগম প্রবেশ করেছে। কুলসুম বেগমের হাটায় সব সময় রাজ্যকীয় ভাব থাকে।
শেষ থেকে শুরু পর্ব ২১
কুলসুম বেগম কে ফিরে আসতে দেখে শায়েলা সিদ্দিকী জবার দিকে তাকালো।
জবা শায়েলা সিদ্দিকীর কানে ফিসফিস করে বলে উঠলো, ‘ আপনার খেলা এখানেই শেষ ! ‘