শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৫

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৫
Sabihatul sabha

দেখ বেলী মন মেজাজ এমনিতেই খারাপ তার উপর তোর প্যানপ্যানে মাথা ধরে গেছে।
বেলী রেগে কোমরে দুইহাত দিয়ে আয়ানের সামনে দাঁড়ালো। একটু ঝুঁকে আয়ানের মুখের সামনে আঙ্গুল দিয়ে শাসিয়ে বলে উঠলো, ‘ দেখো..
বেলী আর কিছু বলার আগেই আয়ান বললো,’ কি দেখবো.? তোর মতো পেত্নী কে দেখার থেকে ওই যে দেখছিস, চোখের ইশারায় জানালার পাশের একটা আমড়া গাছ দেখালে যেটার পাতা ঝড়ে গেছে শুধু মাত্র ঢাল দেখা যাচ্ছে সেখানে ঢালের উপর একটা কালো কুচকুচে কাক বসে আছে।
আয়ান সেই কাক কে উদ্দেশ্য করে বললো, ‘ তোকে দেখার থেকে আমি বরং এই কাক কে দেখলে চোখ জুড়িয়ে যাবে সর সামনে থেকে। আসছে চোখ রাঙ্গিয়ে ফালতু আলাপ করতে।’
বেলী চোখ ছোট ছোট করে, বন্ধ ঠোঁট জোরা হাতে করে রেগে বলে উঠলো, ‘ তুমি আমাকে অপমান করলে.? আমি তোমার থেকে হাজার গুণ সুন্দর আছি, তামাটে একটা গায়ের রং নিয়ে এতো ভাব দেখাচ্ছ! ওই কাকের সাথে আমার না তোমার তুলনা করা যায়। ‘

হয়েছে তোর.? এইবার বের হ।
~আমার কোনো ইন্টারেস্ট নেই তোমার উপর যে সং সেজে সামনে দাঁড়িয়ে কথা বলবো!
আয়ান মোবাইল থেকে চোখ সরিয়ে সোজা বেলীর দিকে তাকিয়ে কাটকাট কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ তাহলে এভাবে আমার উপর ঝুঁকে কেন আছিস.?
বেলী সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো,’ এই জন্যই লোকে পুলিশ কে কাঠখোট্টা, পাষান, কসাই বলে’
আয়ান হাই তুলে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলিশ খুঁজে বেলীর উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, ‘ একটা কথা ভুল বললি। কসাই হলো তোর ক্রাশ বলিস আর প্রেমিক পুরুষ বলিস অথবা না হওয়া হবু জামাই ও বলতে পারিস।’
বেলী মুখটা ফাটা বেলুনের মতো চুপসে বলে উঠলো, ‘ আমার যাই হোক তোমার মতো ত জবা জবা করে পিছু পিছু নির্লজ্জের মতো ঘুরঘুর করিনি। ‘

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

বেশ চটে গেলো আয়ান। রাগী কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ দেখ বেলী বেশি বেশি বললে গালে কয়েকটা লাগিয়ে দিব । এমনিতেই বলেছি মন মেজাজ ঠিক নেই৷ এক ত তোর জন্য আমার পুরো লাইফটা নষ্ট হয়ে গেছে আবার এখন আসছিস আমাকেই কথা শুনাতে.?’
বেলীও কম যায় না দ্বিগুণ রাগ দেখিয়ে বলে উঠলো, ‘ তোমাকে বলেছি আমাকে বিয়ে করতে.? আজ তুমি বিয়ে না করলে অভ্র ভাই বাড়ি ফিরলে বড় আম্মু আমাদের বিয়ে দিয়ে দিত।’
আয়ান বসা থেকে দাঁড়িয়ে গেলো। রাগে গজগজ করতে করতে বেলীর দুই গাল শক্ত করে চেপে ধরে বলে উঠলো, ‘ যার জন্য চুরি করেছি সেই বলে চুর! এতো মানুষের সামনে কিভাবে এই মুখটা দেখিয়ে বেড়াতি.? বাড়ির, কোম্পানির কতো বড় ক্ষতি হতো.? ‘
বেলী ব্যাথায় ছটফট করছে।

আয়ান ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দিলো বেলীকে।
বেলী অশ্রু টলটল চোখে বলে উঠলো, ‘ সমাজ, বাড়ি, কোম্পানি এইসবের জন্য আমার জীবনটাই নষ্ট করে দিলে.? আমার ভালোবাসা, আমার মানুষটা এক বাড়িতে থেকেও আমার না, সম্পর্কে সে আজ আমার দেবর। এইসব আমি কিভাবে সহ্য করে বেঁচে আছি!’

আয়ান কিছু বলতে গিয়েও বেলী অশ্রুসিক্ত চোখের দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো। বেশ মায়া হলো নিচে পরে থাকা মেয়েটার জন্য । এই সম্পর্কের বাহিরেও ত এই মেয়েটার সাথে আয়ানের একটা গভীর সম্পর্ক ছিল। ছোট থেকেই এরা একজন আরেকজন কে সহ্য করতে পারে না, দেখলেই ঝগড়া, না দেখা হলেও নিয়ম করে একজন আরেকজনের রুমে গিয়ে একটা না একটা ঝামেলা পাকিয়ে আসবেই। এটাকে ওরা সুন্দর একটা নাম দিয়ে ছিল ” গভীর শত্রুতামু.. বলা যায় শত্রু শত্রু খেলা” আয়ানের ছোট বোন, আয়ান ত সব সময় ছোট বোনের মতোই দেখে এসেছে। ” ছোট বোন যাকে ভেবেছে সে আজ বউ!”
ভাবতেই আয়ান মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো। সে বেলীর হাত ধরে এক টানে দাঁড় করিয়ে টেনে নিয়ে রুম থেকে বের করে দিল।

কয়েক সেকেন্ডে কি হয়ে গেল! বুঝে উঠার আগেই আয়ান বেলীর মুখের উপর ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বিছানায় এসে বসলো। পাশেই অবহেলায় তোয়ালেটা পরে আছে।
আয়ান খুব ভালো করেই জানে বেলী এতোটা রেগে কেন এসে ছিল। তোয়ালেটা নিয়েই ঝগড়া করতে এসে ছিল উল্টো কি থেকে কি হয়ে গেলো।
এরা কি কখনো অন্য স্বামী স্ত্রীর মতো স্বাভাবিক হতে পারবে..? এই গভীর শত্রু শত্রু খেলা শেষ হয়ে কি কখনো একজন আরেকজনের গভীর প্রেমে পড়বে.?

নিরুপমা শিকারী চোখে তাকিয়ে আছে শায়েলা সিদ্দিকীর ঘাবড়ে যাওয়া মুখটার দিকে তাকিয়ে।
শায়েলা সিদ্দিকী মায়াভরা দৃষ্টিতে নিরুপমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, ‘ জবা..
আর কিছু বলার আগেই নিরুপমা কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ আমি জবা নই, আপনার সামনে সিআইডি অফিসার নিরুপমা নিরু তালুকদার। ‘
শায়েলা সিদ্দিকী আশেপাশে তাকিয়ে থমথমে মুখে বলে উঠলো, ‘ তুমি অকারণে আমাকে এখানে এনেছো, আমাকে আর জিজ্ঞেস করার মতো কিছুই নেই এই কেইসে। আমি নিজেই আসিফ কে অপহরণ করেছি, সবকিছু আমি মেনে নিচ্ছি।’

নিরুপমা বাকা হেঁসে চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
নিরুপমার এই নিরবতা বুঝিয়ে দিচ্ছে ঝড়ের পূর্বাভাস। আলিফ নিরুপমার নিরবতা দেখে মনে মনে বলে উঠলো, ‘ এই মহিলার সাথে কিসের শত্রুতামী হতে পারে বড় ম্যামের.? এই দ্বিতীয় বার এখানে নিরুপমা শায়লা সিদ্দিকী কে এনেছে।
আলিফ সিআইডি অফিসে জয়েন হয়েছে আজ চার বছর। চার বছরে দ্বিতীয় বার নিরুপমা দ্বিতীয় বার এই রুমের দরজা খুলেছে।
প্রথম খুলে ছিল আজ থেকে দুই বছর আগে । কি ভয়ংকর মৃত্যু দিয়ে ছিল ওই লোকটাকে ভাবলে এখনো আলিফের গায়ের পশম খাঁড়া হয়ে যায়।
লোকটার দোষ ছিল এই একই। আলিফ ওইদিন ও দেখেছে নিরুপমা কে এই ডায়েরিটা বের করতে । কি আছে এই ডায়েরি তে.? ‘ মায়া তালুকদার ‘ কে.? কি হয়ে ছিল উনার সাথে.?

আলিফের ভাবনার মাঝে ঘর কাটিয়ে হেঁসে উঠলো নিরুপমা। কি ভয়ংকর অদ্ভুত হাসি.. ঘা ছমছম করে উঠলো। এই মাঝ রাতে চারপাশে নিরবতা, রুমে শুধু হাল্কা ডিম লাইট জ্বলছে তার মাঝে নিরুপমার এমন ভয়ংকর হাসি।
শায়েলা সিদ্দিকী অবাক নয়নে তাকালো নিরুপমার দিকে। সেই সকালের শাড়িটা পড়নে, শায়েলা সিদ্দিকী শাড়িটা চিনে। চুলগুলো ছেড়ে রেখেছে চেয়ারে বসার কারনে ফ্লোরে এই লম্বা চুলগুলো হেলদোল খাচ্ছে, বড় বড় টানাটানা চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে, ফর্সা মুখটায় নিরুপমা কে দেখতে কি ভয়ংকর লাগছে।
শায়েলা সিদ্দিকী নিরুপমা কে তেমন গুরুত্ব হিসেবে নিলো না৷ পুরো একটা বছর নিজ বাড়িতে মেয়েটা কে দেখেছে। লাজুক, ভীতু একটা মেয়ে। হঠাৎ প্রশ্ন জাগলো শায়েলা সিদ্দিকী মনে নিরুপমা এতোদিন মিথ্যা পরিচয়ে কেন থেকেছে ওই বাড়িতে.? উদ্দেশ্য কি.?
শায়েলা সিদ্দিকী হঠাৎ বলে উঠলো, ‘ তুমি আসলে কে.?’

নিরুপমা খুব শান্ত কন্ঠে উত্তর দিল ‘ মায়া তালুকদারের মেয়ে নিরুপমা তালুকদার ‘
যা ভেবে ছিল তাই সত্যি হয়ে গেলো!.? নিরুপমা কে ওই বাড়িতে প্রথম দিন দেখেই শায়েলা সিদ্দিকীর এমনটাই মনে হয়ে ছিল। কিন্তু এতো একটা গুরুত্ব দেয়নি।
নিরুপমা শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে ঝুকে বললো,’ চিনতে পেরেছেন.?’
শায়েলা সিদ্দিকী কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলেন, ‘ আ…আমি কিভাবে চিনবো.?’
নিরুপমা টেবিলের উপর ডায়েরির পৃষ্ঠা উল্টাতে উল্টাতে বললো,’ সে কি প্রাণ প্রিয় বান্ধবীর মেয়েকে না চিনতে পারেন তাকে ত চিনার কথা’
কঠিন কন্ঠে বলে উঠলো শায়েলা সিদ্দিকী, ‘ কে আমার বান্ধবী.? আমার কোনো বান্ধবী নেই।’
হঠাৎ নিরুপমার কি হলো কে জানে। নিরুপমা আলিফের পাশ থেকে একটা ছুরি নিয়ে বসিয়ে দিলো শায়েলা সিদ্দিকীর হাতের উপর।

গগন কাঁপিয়ে চিৎকার করে উঠলো শায়েলা সিদ্দিকী। ব্যাথায় মনে হচ্ছে এই বুঝি দেহ থেকে রুহটা বের হয়ে যাবে।
নিরুপমা দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ মিথ্যা কথা এখানে যত ইচ্ছে বলতে পারো তার পরিবর্তে প্রতিটা মিথ্যা কথার জন্য এমন গিফট ও রেডি থাকবে। কথা বলার আগে নেক্সট ভেবেচিন্তে বলবে, এখানে মে’রে ফেললেও কেউ আসবে না তোমাকে বাঁচাতে। তোমার ছেলেও না।
শায়েলা সিদ্দিকী চিৎকার বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করে ঠোঁটের কোনে হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ তুমি আমাকে মারবে না সেটা আমি জানি’
নিরুপমা আলিফের কাছ থেকে পিস্তল নিয়ে ঘুরাতে ঘুরাে বললো, ‘ আচ্ছা তাই নাকি.?’
শায়েলা সিদ্দিকী মুখে ঝুলে আছে শয়তানি হাসি। হাসি ঝুলিয়ে বললো,’ আমার কাছ থেকে তোমার অনেক কিছু জানার আছে। তাই তুমি আমাকে মারতে পারবে না।’
হাত থেকে গড়িয়ে রক্ত পরছে।
নিরুপমা পিস্তল রেখে শায়েলা সিদ্দিকী দিকে তাকিয়ে বললো,’ বাহ্ আমার সম্পর্কে ভালোই বুঝে ফেলেছো,গুড গুড।’

শায়েলা সিদ্দিকীর চোখে মুখে একটুও ভয় নেই। নিরুপমা শায়েলা সিদ্দিকীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ আলিফ ওদের নিয়ে আসো’
আলিফ মিনিট দুয়েকের মধ্যে একটা হাত, মুখ বাঁধা মেয়েকে নিয়ে এসে উপস্থিত হলো।
শায়েলা সিদ্দিকী অবাক হয়ে বলে উঠলো, ‘ ওকে কেন এনেছো..? ‘
নিরুপমা ঝুকে এসে শায়েলা সিদ্দিকীর কানে কানে ফিসফিস করে বললো,’ এক জানোয়ারের মুখ থেকে সত্য কথা বের করতে। ‘
” মৌরি!” হ্যা নিরুপমা মৌরিকে ধরে এনেছে তাতে একটু ভয় পেলেও পর মুহূর্তে শায়েলা সিদ্দিকী মুখে আবার সেই বিশ্রী হাসি ঝুলিয়ে রাখলো।
নিরুপমা অবাক না হয়ে পারলো না। শায়েলা সিদ্দিকী কোনো কিছুতেই ভয় পাচ্ছে না। যতটা সহজ ভেবে ছিল শায়েলা সিদ্দিকীর মুখ থেকে কথা বের করতে পারবে নিরুপমা এখন মনে হচ্ছে তার থেকে অনেক কঠিন হবে।
শায়েলা সিদ্দিকী জানে মুখ খুললেও তার মৃত্যু, না খুললেও মৃত্যু তাহলে সে বলবে কেন.? সে কিছুতেই কিছু বলবে না। বলবে না সে কি করে ছিল মায়া তালুকদারের সাথে।
নিরুপমা বসা থেকে দাঁড়িয়ে আবার টেবিলের উপর দুই হাতের ভর ছেড়ে দিয়ে শায়েলা সিদ্দিকীর দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ কালকের জন্য তৈরি হয়ে নাও। কাল তুমি নিজ মুখেই বলবে মায়া তালুকদারের সাথে কি হয়ে ছিল। ‘

শায়েলা সিদ্দিকী শয়তানি হাসি ঝুলিয়ে তাকিয়ে আছে নিরুপমার যাওয়ার দিকে। মনে হচ্ছে সর্গের কোনো পরী হেঁটে যাচ্ছে, হাঁটায়ও এতো তেজ!
নিরুপমা যেতে যেতে একজন লোককে ইশারা করে বলে উঠলো, ‘ এর হাত থেকে ছুরিটা বের করে কাপর বেঁধে দাও কাল পর্যন্ত ত বেঁচে থাকতে হবে। এক ফোঁটা পানিও দিবে না হাত, পা, মুখ বেঁধে এক কোনায় ফেলে রাখো আর সামনে যত ধরনের সুগন্ধি খাবার আছে ফেলে রেখো এতে খিদে বাড়বে তবে চোখের সামনে খাবার থেকেও খেতে পারবে না।
আলিফ মাথা নিচু করে বললো,’ আর এই মেয়ের কি করবো!.?’
নিরুপমা মৌরির ছলছল চোখের দিকে তাকিয়ে বললো, ‘ পাশের রুমে আঁটকে রাখো। ‘

নিরুপমা হেলেদুলে আস্তে করে দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করলো।
সোফায় মনে হচ্ছে কেউ বসে আছে। জলজন্তু চোখ গুলো দরজার দিকেই তাকিয়ে আছে।
নিরুপমা হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো তিনটার কাটা ছুইছুই।
নিরুপমা হেঁটে সোজা সিঁড়ির গোড়ায় চলে আসতেই হাওয়ার বেগে কেউ একজন এসে নিরুপমার দুই বাহু শক্ত করে চেপে ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।
নিরুপমা এমনিতেই বেশ ক্লান্ত তার উপর অভ্রর এমন আচরণে রেগে গেলো।

~ সমস্যা কি.?
~ কোথায় ছিলে এতো রাত অবদ্ধি.?
~ সেটা তোমাকে বলতে বাধ্য নই।
~ এই বাড়িতে থাকতে হলে বাড়ির বাহিরে পা দেওয়ার আগে আমার পারমিশন নিতে হবে। ভদ্র বাড়ির মেয়েরা রাত তিনটায় বাড়ি ফিরে না।
নিরুপমা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,’ না আমি এই বাড়ির কেউ আর না এই বাড়িতে থাকার আমার কোনো ইন্টারেস্ট আছে। আমি এমনিতেও কাল চল যাচ্ছি।
নিরুপমার এমন কথা শুনে অভ্রর এতক্ষণ জ্বলতে থাকা আগুন চোখে নেমে আসলো আমাবস্যা। সত্যি নিরুপমা চলে যাচ্ছে.? ‘

নিবে যাওয়া রাগটা আবার মাথা চড়া দিয়ে উঠলো। অভ্র নিরুপমার দুই গাল শক্ত করে চেপে ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, ‘ এখনি চলে যাচ্ছ না কেন.? তোমাকে জেনো আর কখনো আমার চোখের সামনে না দেখি!’
অভ্র রেগে নিরুপমা কে রেখেই গটগট করে চলে গেলো।
ফর্সা গাল দুটো কেমন লাল টকটকে হয়ে গেছে অভ্রর আঙ্গুলের আঘাতে। অথচ তেজি নিরুপমা একটা টু শব্দ ও করলো না!.

নিরুপমা সোফায় বসে চোখ বন্ধ করে রেখেছে। রান্না ঘরের টুংটাং শব্দ আসছে। চোখ খুলে কোনো রকম রান্না ঘরে উঁকি দিলো। এতো রাতে রান্না ঘরে কে.? অভ্র ত চলে গেছে।
আসিফ খাবার গরম করে নিরুপমাকে ডাকলো।
নিরুপমার পেটে প্রচুর খিদে ছিল। আসিফ কিভাবে বুঝলো.? এই ছেলেটা কে কিছু বলতে হয় না সে এমনিতেই বুঝে যায় সবকিছু!
নিরুপমা হাল্কা হেঁসে টেবিলে গিয়ে বসলো। আসিফ নিজে খাবার বেড়ে দিলো।
প্রচুর খিদে থাকায় নিরুপমা চুপচাপ খাওয়া শুরু করলো। আসিফ অন্য চেয়ারে বসে চুপচাপ নিরুপমার খাওয়া দেখছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

নিরুপমা খাওয়া বন্ধ করে জিজ্ঞেস করলো, ‘ হাসছো কেন.?’
আসিফ চোখ সরিয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে পকেট থেকে মোবাইল বের করতে করতে বললো,’ এমনি’
নিরুপমা খাওয়া শেষ করে বললো,’ জিজ্ঞেস করবে না কোথায় ছিলাম.?’
আসিফ কপালের সামনে পরে থাকা চুলগুলো পেছনে ঠেলে বললো,’ আমি জানি কোথায় ছিলে’
নিরুপমা সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে উঠতে বললো, আমার উপর নজর রাখছো.?’
আসিফ হাল্কা হেঁসে বললো,’ আমি না অন্য কেউ ‘
নিরুপমার কথা বাড়াতে ইচ্ছে হলো না নিজের রুমে চলে গেলো। আসিফ ছেলেটা অদ্ভুত, সব সময় মুখে হাসি-হাসি ভাব থাকবেই, ভীষণ কেয়ারিং, তাকে কিছু বলতে হয় না মুখ দেখেই বুঝে যায়, শান্তস্বভাবের একটা মিশুক ছেলে, মেয়েরা যাকে এক কথায় বলবে পারফেক্ট আর অভ্র এর সম্পূর্ণ উল্টোটা। নিরুপমা বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিয়ে চোখ বন্ধ করে বললো,’ তাতে আমার কি!.?’

শায়েলা সিদ্দিকীর সামনে পায়ে পা তুলে বসে আছে নিরুপমা।
শায়েলা সিদ্দিকীর ঠোঁটে সেই আগের মতো হাসি তবে দেখেই মনে হচ্ছে ভীষণ ক্লান্ত তবুও নিরুপমা কে বুঝতে দিচ্ছে না। এতো অহংকার!..
নিরুপমা মনে মনে হাসলো। আর একটু পর তারপর নিজ থেকেই সবকিছু বলতে বাধ্য হবে।
নিরুপমা শায়েলা সিদ্দিকীর মুখের দিকে তাকিয়ে আলিফ কে বললো, ‘ নিয়ে আসো.. ‘
আলিফ শায়লা সিদ্দিকীর সামনে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে আসলো শায়লা সিদ্দিকীর বোন ” শিলা ” কে। মৌরি নিজের আম্মুকে দেখে ডুকড়ে কেঁদে উঠলো।

নিরুপমার চোখের ইশারায় এই রুমের সামনে একটা রুম ছিল সেই রুমে শিলা কে পাঠিয়ে দিল।
শিলার রুমে পাঁচ ছয় জন কালো কালো বিশ্রী লোক পাঠিয়ে বাহির থেকে দরজা বন্ধ করে দিলো।
মৌরি চিৎকার করে কান্না করার চেষ্টা করছে তবে হাত মুখ ত বাঁধা।
শায়েলা সিদ্দিকীর মনে মনে ভয় পেলেও মুখের হাসি সরলো না।
নিরুপমার ঠোঁটে ক্রুদ্ধ হাসি।
শায়েলা সিদ্দিকীর চোখের সামনে তার প্রাণ প্রিয় ছোট ভাইকে বাধা অবস্থা নিয়ে আসলো আলিফ।
নিরুপমা শায়েলা সিদ্দিকীর চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,’ এর হাত, পা, শরীরে ছুরি দিয়ে ছোলে ফেলো তারপর লবন মরচ লাগিয়ে দাও।
বুক কেঁপে উঠল মৌরির আর হাত পা বেধে রাখা পুরুষটির।
শায়েলা সিদ্দিকী তখনো চুপ। ভেতর থেকে শিলার চিৎকার বাহিরে আসছে। ওর সাথে ওই পুরুষ গুলো কি করছে.? এক একটা চিৎকার মনে হচ্ছে এই বুঝি শ্বাস বন্ধ হয়ে যাবে। কি ভয়ংকর! কি ভয়ংকর এই নিরুপমা! কি ভয়ংকর তার শাস্তির নিয়ম!

এইবার নিরুপমা ঠোঁট বাঁকিয়ে হেঁসে বললো নিয়ে আসো।
রুমে প্রবেশ করলো আসিফ ওর সাথে হাত পা বাধা, মুখে কাপড় দিয়ে রাখা ছেলেটা কে দেখেই শায়েলা সিদ্দিকীর চোখে মুখের হাসি উড়ে গেলো।
” আয়ান!”
আয়ানের অবস্থা দেখে শায়েলা সিদ্দিকী ততক্ষণাত নিরুপমার দিকে তাকালো।
নিরুপমা ঠোঁট ছড়িয়ে হেঁসে উঠলো, হাসতে হাসতে বললো, ‘ একে কি করা যায় বলুন ত মিসেস শায়েলা সিদ্দিকী.. .?

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৪

একটা গাড়ির ফুটেজ ভেসে উঠলো ওই রুমের দেয়ালে।
গাড়িটা চিনতে ভুল হলো না শায়েলা সিদ্দিকীর। এটা ত শফিক সাহেবের গাড়ি।
গাড়িতে বোম ফিট করে রাখা।
শায়েলা সিদ্দিকী চিৎকার করে বলে উঠলো, ‘ সব কিছু বন্ধ করো, আর সহ্য করা যাচ্ছে না আমি সবকিছু বলছি।’

শেষ থেকে শুরু পর্ব ২৬