তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৫

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৫
Raiha Zubair Ripti

পুরো দু’দিন হসপিটালে থেকে আজ বাড়ি ফিরেছে সন্ধ্যা। এই দুদিন বাসার সব কাজ,আরশি কে স্কুলে দিয়ে নিয়ে আসা,সব আরু একা হাতে করলেও রান্নার কাজে আরাধ্য তাকে অনেক হেল্প করেছে। দু’জনে মিলে রেঁধেছে। আরাধ্য একটা রান্নার বই কিনে এনে দিয়েছে। আর বলেছে-
-” ছি এত বড় দামড়ি মেয়ে হয়েছিস অথচ রান্না পারিস না। এ তো মেয়ে জাতির জন্য লজ্জার বিষয়। তোর জন্য মেয়ে জাতি লজ্জিত হবে তা আমি কখনই মানবো না। হয় ফোন দেখে রান্না শিখবি আর তা না হলে বই দেখে। রান্না কিন্তু তোকে শিখতেই হবে। সো শেখা স্টার্ট করে দে।

আরু কিয়ৎ ক্ষন বইটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো। এখন সকাল বিকাল বইটা মুখস্থ করে। এর মাঝে আজ আরুর কানে খবর আসলো আরাধ্য কে চট্টগ্রাম শহরে যেতে হবে কয়েক দিনের জন্য। তাদের মেডিক্যাল কলেজ থেকে আউটরিচ প্রোগ্রামের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে আরাধ্য যাবে। যেহেতু আরাধ্যর মেডিক্যাল পড়া শেষ এখন ইন্টার্নি করছে। তো প্রোপার কয় দিনের জন্য আরাধ্য যাচ্ছে সেটা আরু জানে না। সেটা জানার জন্যই সে আরাধ্যর আশেপাশে বারবার ঘুরঘুর করছে। আরাধ্য ল্যাপটপে কাজ করতে করতে আরু কে বলল-
-” যা তো আরু ব্লাক কফি বানিয়ে আন। উইদাউট চিনি। সেদিনের মতন চিনি,দুধ ঢেলে চা বানিয়ে আনিস না আবার।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

আরু বুঝে না এই পুরুষ মানুষ গুলো কেনো ব্লাক কফি খায়? না আছে চিনি এতে আর না আছে দুধ এতে।জাস্ট গরম পানি ঢালো আর তার ভেতর কফি ঢেলে নিয়ে আসো। এটা কোনো কফি হলো? এজন্য বুঝি পুরুষ মানুষ এমন। তার গুষ্টির সব পুরুষই এই ব্লাক কফি খায়। গুষ্টি তে পুরুষ বলতে আছেই বা আর কে, তার বাবা,চাচা,আরাধ্য আর আয়ুশ।আয়ুশ টাও আজকাল ব্লাক কফি খায়। প্রথম দিন খেতে গিয়ে তো একেবারে ওয়াক করে সব ফেলে দিয়েছিল। তারপর আরাধ্যর দেখাদেখি একটু একটু করে খাওয়া শিখতেছে।
আরাধ্য এখনও আরু কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল-
-” কি রে যা না, গিয়ে বানিয়ে আন। কাল তো চলেই যাব।
আরু মুখ বাঁকিয়ে বলল-

-” এমন ভাবে বলছেন যেন একেবারে চলে যাচ্ছেন আর আসবেন না।
আরাধ্য টি-টেবিলের উপর দু পা রেখে বলল-
-” ফিরে নাও তো আসতে পারি। গ্রাম এলাকায় যাচ্ছি। শুনেছি ওখানে নেটওয়ার্ক ও ঠিক মতো পায় না।
-” আচ্ছা কতদিনের জন্য যাচ্ছেন?
-” উমম ১৫-১৭ দিনের জন্য।
-” অনেক দিন।
-” হু শান্তি তে থাকতে পারবি।
-” আসলেই। কে কে যাচ্ছেন?
-” আমি,সুমি,সৌরভ আর কিছু বড় ডক্টর। আমাদের চট্রগ্রামের দায়িত্ব এসেছে। আর বাকি গুলোর খবর জানি না। ওদের হয়তো অন্য বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

-” ওহৃ আচ্ছা কাল বের হবেন কখন?
আরাধ্য বিরক্ত হলো।
-” ওহ্ হো এত বকবক করছিা কেনো? কফি টা নিয়ে এসে তারপর বকবক করে আরামসে শুনবো তখন যা।
আরু চলে আসলো কফি বানাতে। আসার আগে একবার সন্ধ্যার রুমে উঁকি দিলো। মামনি তার শুয়ে আছে। রুমে ঢুকে জিজ্ঞেস করলো-
-” কিছু লাগবে মামনি তোমার? কিছু বানিয়ে আনবো? খাবে?
সন্ধ্যা পাশ ফিরে বলল-
-” না না কিছু লাগবে না।
-” শরীর এখন ভালো আছে?
-” হু।

-” আচ্ছা কিছু লাগলে আমাকে ডাকবে কিন্তু। আমি গেলাম তোমার গুনধর পুত্রের জন্য কফি বানাতে।
আরু এক কাপ ব্লাক কফি বানিয়ে নিজের জন্য দুধ,চিনি দিয়ে কড়া করে চা বানিয়ে রুমে ফিরে আসলো।
কফির মগ আরাধ্যর হাতে দিয়ে আরু আরাধ্যর পাশে বসে বলল-
-” ঐ শুনুন।
আরাধ্য ধোঁয়া ওঠা গরম কফিতে চুমুক দিয়ে বলল-
-” বল শুনছি।
-” ওখানে গিয়ে আমাকে ভিডিও কল দিবেন। আমি দেখবো গ্রাম টা।
আরাধ্য ঠান্ডা চোখে আরুর দিকে তাকালো। একটু আগে এই মেয়েকে সে কি বললো?
-” ওভাবে তাকাচ্ছেন কেনো? দিবেন না ভিডিও কল?
-” একটু আগে কি বলেছি আমি?
-” কি বলেছেন?
-” বলি নি ওখানে নেটওয়ার্ক পায় না ঠিক মতো। আর আমি ওখানে পিকনিক করতে যাচ্ছি না আরু।
-” তাতে কি ভিডিও করে রাখবেন। নেট পেলে হয় ভিডিও সেন্ট করে পাঠাবেন আর তা না কল দিবেন।
-” এত বুদ্ধি কই রাখিস তুই?
-” ঐ তো আপনার বেডের বালিশের তলায়। কাপড় গুছাবেন না?
-” গুছিয়ে দে।
-” ওক্কে। কি কি নিবেন বলুন আমি গুছিয়ে দিচ্ছি।

আরু আলমারি থেকে আরাধ্যর জামাকাপড় বের করলো। আরাধ্য মুখে মুখে বলে দিলো। আরু সুন্দর করে সেই মোতাবেক আরাধ্যর জামাকাপড় প্যাক করে দিলো।
আজকের রাত টা একটু অন্যরকম ছিলো। ডিনার শেষ করে রুমে এসেছে আরু আর আরাধ্য। রুমের লাইট নেভানো ছিলো। রুমে ঢুকতেই তারা দেখেছিল জানালার ফাঁক দিয়ে জ্যোৎস্নার আলো রুম রা আলোকিত করে তুলছে। আরু লাইট জ্বালাতে গেলে আরাধ্য মানা করে জ্বালাতে। আরু জ্বালায় না। আরাধ্য চেয়ার নিয়ে গিয়ে বড় বেলকনিটায় গিয়ে বসে। পেছন পেছন আরুও আসে। আগে থেকেই একটা চেয়ার এখানে ছিলো। আরাধ্য ইশারায় বসতে বলে। আরু বসে আকাশের দিকে তাকায় কি সুন্দর আকাশ।

রাতের এই আকাশ টা যেন এক বিশাল, নীল সিল্কের চাদরে মোড়া। জ্যোৎস্নার আলো মেঘের মাঝে সোনালি রঙে ছড়িয়ে পড়েছে, আর পৃথিবী যেন সেই আলোতে স্নান করছে। দূরের গাছগুলোর শীর্ষভাগ সাদা আভায় আলোকিত হয়ে গেছে, আর নিচে মাঠে, বাগানে, যেন কোনো এক রহস্যময় শীতলতা ভর করেছে।
হালকা ঠান্ডা বাতাস আরুর গা স্পর্শ করে যাচ্ছে, মনে হচ্ছে প্রতিটি শ্বাসে এই শীতলতার মিষ্টি অনুভূতি শুষে নিচ্ছে।
বাড়ির গেটের সামনেই দারোয়ান তার লাঠি হাতে হাঁটছে, আর বাতাসে তার পদধ্বনি ফিকে হয়ে আসছে। রাস্তায় কিছু গাছের পাতা হালকা ঝরে পড়ছে। কি অপরূপ সেই দৃশ্য। আরু আড়চোখে তাকালো আরাধ্যর দিকে। আরাধ্য কে মুচকি হাসতে দেখে বলল-

-” পাগলের মতন হাসছেন কেনো?
-” একটা জোক্স মনে পড়লো সেজন্য।
-” কিসের জোক্স?
-” বলা যাবে না।
-” বললে কি হয়?
-” না বললেই বা কি হয়?
-” এখন তো আমি আপনার বউ।
-” তো?
-” তো মানে? আপনার সব বলা উচিত আমায়।
-” উমমম। ঠিক বলেছিস। আচ্ছা বল তো পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সময় কোনটা?
-” বলবো?
-” হু। বলতেই তো বললাম।
-” প্রিয় মানুষটার সাথে এমনই এক রাত, পাশাপাশি বসে কাঁধে মাথা রেখে হাতে হাত রেখে মূহুর্ত টা ফিল করা।
-” তাহলে আমরা এত দূরে কেনো? আমার কাঁধে মাথা রাখ।আর হাতে রাখ হাত। তারপর চল দুজন মিলে ফিল করি মূহুর্ত টা।

আরু মুখ বাঁকিয়ে বলল-
-” আপনি আমার প্রিয় মানুষ নাকি?
-” তাহলে কি অপ্রিয় নাকি?
-” অবশ্যই।
-” তাতেই আমি সই। অপ্রিয়র ভেতরও প্রিয় আছে মেয়ে।
-” তাতে কি অর্থ তো আর এক প্রকাশ করে না দুটোর।
-” মাঝেমধ্যে কিছু মানুষের মুখের ভাষা আই হেট ইউ হলেও তার অর্থ বের হয় আই লাভ ইউ। সো এসব শব্দ ডাজেন্ট ম্যাটার।

-” বাট আমার কাছে ম্যাটার করে।
-” সেটা তো তোর সমস্যা আরু। আমার নয়।
-” তো সমাধান তো করার দায়িত্ব আপনার।
-” আমার নিজের জীবনের সমস্যার ই সমাধান বের করে কূল পাচ্ছি না। সেখানে তোর সমস্যার সমাধান মনে হয় না করতে পারবো। নিজের সমস্যার সমাধান নিজে করতে শেখ।
-” হুমম। বুঝলাম।
-” কি বুঝলি?

-” বুঝলাম আমার ঘুমাতে হবে এখন। আমি গেলাম। আপনি আসেন। কাল তো আবার সফরে বের হবেন।
-” তোরে সাথে নিয়ে গেলে আমাদের হানিমুন টাও হয়ে যেত রে আরু।
আরু চলে গেলো। আরাধ্য আরো কিছুক্ষণ একাকী বসে থেকে রুমে এসে আরু জামা ভেদ করে উন্মুক্ত পেটে হাত রেখে জড়িয়ে ধরলো। আরু কেঁপে উঠলো।
-” কি হচ্ছে এসব?
-” কিছুই হচ্ছে না আরু। জাস্ট কমন বিষয়। কেঁপে উঠছিস কেনো এত?
-” আমার সুরসুরি লাগছে।
-” লাগুক। সেটা তোর সমস্যা আমার নয়।
-” জামার উপর দিয়ে রাখুন।
-” না। আমি এভাবেই রাখবো। ঘুমা চুপচাপ।
আরু আরাধ্যর দিকে ফিরলো। এতে আরাধ্য আরু কে টেনে আরে নিজের কাছে টেনে আনলো। আরাধ্যর নিশ্বাস গিয়ে পড়ছে আরুর চোখ মুখে। আরাধ্য আরুর কাঁপা ঠোঁট টার দিকে একবার তাকালো। তারপর আলতো করে চুমু খেয়ে ফিসফিস করে বলল-

-” ভালেবাসা প্রকাশ বিহীন আমাদের এই টোনাটুনির সংসার টা এগিয়ে যাক আরো সহস্র বছর। তারপর ও মুখে বলবো আরু তোকে আমি ভালোবাসি না। অথচ হৃদয়ে থাকবে অন্য কিছু।
আরু আরাধ্যর বুকে মাথা গুজিয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললো।
সকাল ছিল অন্য রকম। মেঘলা আকাশ,দমকা বাতাস,সূর্যর দেখা নেই। ঘড়ির কাটা আঁটকে আছে আটে। সকাল আটটা বিশ বাজে। আরু রান্না ঘরে সকালের ব্রেকফাস্ট বানাচ্ছে। রান্না ঘর থেকেই বসার ঘরের দিকে উঁকি দিতেই দেখলো আষাঢ় সন্ধ্যা কে ধরে নিয়ে আসছে। সোফায় সযত্নে বসিয়ে জিজ্ঞেস করছে-
-” কিছু খাবে? আনবো?
সন্ধ্যা অসুস্থ শরীরে মাথা এলিয়ে দিলো আষাঢ়ের কাঁধে। আষাঢ় মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। আরুর চোখ জুড়িয়ে আসলো। কত ভালোবাসা,কত আন্ডারস্ট্যান্ডিং তাদের মাঝে এই বয়সেও।
আসলেই জীবনে চলার পথে একটা সাপোর্টিভ জীবনসঙ্গীর খুব প্রয়োজন। আরাধ্য কি তেমন? মোটেও না। সে তো তাকে সহ্য করতে পারে না। আরুও পারে না সহ্য করতে।
আরু কথা গুলো ভাবতেই মন খারাপ হয়ে আসলো। খাবার গুলো টেবিলে সাজিয়ে আষাঢ় সন্ধ্যাকে উদ্দেশ্য করে বলল-

-” মামনি, বাবাই এসো। খেয়ে নাও।
আষাঢ় সন্ধ্যা কে ধরে চেয়ারে বসিয়ে বলল-
-” আরাধ্য কোথায়?
-” উনি ঘুমাচ্ছে। আজ রাতে তো চট্টগ্রাম যাবে।
-” হুম শুনলাম কাল। আরশি কোথায়?
-” উঠে পড়েছে বোধহয়। নিয়ে আসছি ডেকে।
আরু আরশি কে ডেকে নিয়ে আসলো। আষাঢ় আরুকেও বললো বসতে এক সাথে খাবার খাওয়ার জন্য আরু বসলো না। বলল- পরে খাবে।
আষাঢ় খাবার খেয়ে সন্ধ্যার মাথায় হাত রেখে বলল-
-” মেডিসিন খেয়ো টাইম টু টাইম। আমি তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করবো। কিছু খেতে ইচ্ছে করলে আমায় বলিও। আমি পাঠিয়ে দিব।
সন্ধ্যা আষাঢ়ের হাতের পিঠে চুমু খেয়ে বলল-
-” এত উতলা হবেন না ডাক্তার সাহেব। আপনি নিশ্চিন্তে কাজে যান। শুধু টাইম টু টাইম ফোন করবেন। তাতেই হবে।

আষাঢ় মুচকি হেঁসে আরশির গালে চুমু খেয়ে চলে গেল।
আরাধ্যর ঘুম ভাঙলো ১০ টার দিকে। আড়মোড়া ভেঙে ফ্রেশ হয়ে বসার ঘরে আসতেই আরু কে সোফায় বসে টিভি দেখতে দেখে বলল-
-” বাবা চলে গেছে?
-” হুম।
-” খাবার দে।
আরু প্লেটে খাবার বেড়ে দিলো। আরাধ্য প্লেট টেনে বসে বলল-
-” তুই খেয়েছিস?
-” না।
-” খাস নি কেনো? খাবার বাড় প্লেটে। আর পাশে বস।
আরু প্লেটে নিজের জন্য খাবার বাড়লো। আরাধ্য খাবার খেতে খেতে বলল-
-” আমি তো থাকবো না। টাইম টু টাইম খাবার খেয়ে নিস। পড়াশোনা ঠিক রাখিস। কিছু খাওয়ার হলে আমায় বলবি। আমি ব্যবস্থা করে দিব।

-” কিভাবে?
-” ম্যাজিক। রাতে তাড়াতাড়ি ঘুমাবি। এখন তো আর কেউ বিরক্ত করবে না।
-” আসলেই।
-” হুমম। সেজন্য তোর উচিত আমায় ধন্যবাদ দেওয়া।
-” কিন্তু দিতে পারছি না।
-” কেনো?
-” বুঝতেছি না।
-” আচ্ছা পরে বুঝিস। আমার খাওয়া শেষ। আমি একটু বাহির থেকে আসছি।
আরাধ্য চলে গেলো বাহিরে। আরু প্লেট গুলো ধুয়ে উপর করে রাখলো। মন মেজাজ ভালো লাগছে না। কেমন অস্থির অস্থির লাগছে। মনে হচ্ছে ভালো কিছু হবে না। অস্থিরতা নিয়েই সারা দিন কাটলো। সন্ধ্যার পর আরাধ্য রেডি হলো। এখন বের হবে সে। গাড়ি অপেক্ষা করছে বাহিরে। আরু নির্নিমেষ চোখে তাকিয়ে আছে আরাধ্যর দিকে।
আরাধ্য সেটা বুঝতে পেরে চুল গুলো পেছনের দিকে ব্রাশ করতে করতে বলল-

-” কিরে আমাকে অনেক হ্যান্ডসাম লাগছে নাকি?
-” হুমম..পরক্ষণে হুশ আসতেই আরু ফের বলল— ” মোটেও হ্যান্ডসাম লাগছে না।
-” তাহলে চোখ দিয়ে ওমন গিলে খাচ্ছিস কেনো?
-” গিলে খাই নি। আপনার ভাবসাব দেখলাম।
আরাধ্য ল্যাগেজ টা হাতে নিয়ে আরুর দিকে এগিয়ে এসে আরুর বা গাল টেনে বলল-
-” সাবধানে থাকিস। সাবধানে রাখিস সবাই কে।
-” পৌঁছে একটা ফোন দিয়েন?
-” আচ্ছা। চললাম।
আরাধ্য চলে গেলো মায়ের সাথে দেখা করে। আরু বাড়ির গেট অব্দি গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। আরাধ্য গাড়িতে ঢুকে হাত দিয়ে আরুকে বিদায় জানালো। আরুর কেনো জানি বুক ফেটে কান্না পেলো। চোখ ছলছল করলো। হাত উঁচু করে বিদায় দিলো আরাধ্য কে। গাড়িটা চলতে শুরু করলো। যতদূর দেখা যায় গাড়িটা আরু গাড়িটার দিকে তাকিয়ে রইলো।

রাতে আর খাবার খেতে পারলো না আরু। না খেয়েই ঘুমাতে চলে আসলো। অথচ ঘুম নেই চোখে। পুরো রুমে কি যেনো নাই নাই। এখন বাজে রাত ১ টা। চারিপাশ মেঘ ডাকার আওয়াজে মুখরিত হচ্ছে। অথচ আরুর মনআকাশেও আজ মেঘ জমেছে। একটু পর হয়তো বর্ষন ও হবে। বেলকনিতে বসলো আরু।
অভ্যাস কতটা বাজে হতে পারে তা আজ আরু বেশ টের পাচ্ছে। আরাধ্য তার অভ্যাসে পরিনত হয়ে গেছে। রোজ ঝগড়া, রাতে জড়িয়ে ধরা,কথায় কথায় টিচ্ করা। সব জীবনের একটা অংশে পরিনত হয়ে গেছে। আর আজ কিছুটা সেই অভ্যাসে বিগ্ন ঘটায় আরুর দম বন্ধ হয়ে আসছে।
এটা কি ভালোবাসা? উঁহু! আরু তো আরাধ্য কে ভালোবাসে না। জাস্ট অভ্যাস সে। এই অভ্যাসের নেশাও দেখছি মারাত্মক।
আরু ফোনের গ্যালারি থেকে তার আর আরাধ্যর বিয়ের ছবি বের করলো। আরাধ্য আরুর দিকে তাকিয়ে আছে আর আরু মাথা নিচু করে।
আরু আরাধ্যর ছবির উপর হাত বুলিয়ে বলল-

-” এই প্রথম আপনাকে এত মিস করতেছি। এর আগেও তো আমরা দূরে ছিলাম। কই এমন তো হয় নি। তাহলে কি সুদূর চট্টগ্রামে যাওয়ার কথা শুনেই এমন হচ্ছে? কত দিন আপনায় দেখা হবে না বলুন তো। ঝগড়া না করে কিভাবে থাকবেন? পেট ফেটে ব্লাস্ট হয়ে যাবে না? আপনাকে কিন্তু আমি সহ্য করতে পারি না। তবুও এক দিন না পেরোতেই কেমন খা খা লাগছে। ঘুম তো নিয়ে চলে গেলেন সাথে৷ এখন কি আপনার ছবির দিকে তাকিয়েই রাত্রি পার করে দিব? বেয়া’দব অসভ্য ছেলে।
আরাধ্য এখানে এখন থাকলে। আরুর মুখের এই কথাটা শুনে চেতে বলে উঠতো-

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৪

-” এই বে’য়াদব মেয়ে আমাকে বে’য়াদব অসভ্য বলছিস কেনো? কি করেছি? তোর ঠোঁটে চুমু খেয়েছি নাকি তোর সাথে ইয়ে করার চেষ্টা করেছি। লুচি মেয়ে৷
আরু হেঁসে ফেললো কথাটা ভেবেই।

তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৬