বিকেলের প্রণয় পর্ব ৯
Arshi Ayat
অনুরুপ চমকালো!মেয়েটা ওর কন্ঠস্বর মনে রেখেছে!মনে মনে একটু খুশিও হলো যেনো।প্রথমেই জানতো চাইলো,’মিলাত,আপনি কেমন আছেন?’
‘আমি এখন ভালো আছি।তবে আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?’
‘হাসপাতালের রিসিপশন ডেস্ক থেকে।’
‘তো হঠাৎ নাম্বার খুজে আমাকে ফোন করার কারণ কি,ডাক্তার?’
‘বিশেষ কিছু না।খোঁজ খবর নিতে ফোন করেছিলাম।’
‘ও আচ্ছা।হাসপাতালে আসা সব মেয়েরই কি এভাবেই খোঁজ নেন?’
অনুরুপ হেসে ফেললো।ঠোঁটে মৃদু হাসি রেখেই বলল,’জ্বি না,মিস মিলাত।শুধু আপনারই নিচ্ছি।’
‘কেনো?’
‘নিজের জানের বাজি রেখে নয় তলার বারান্দা থেকে পানির পাইপ বেয়ে ছাঁদে উঠে যে মেয়েটাকে বাঁচালাম সে মেয়েটা এখন কেমন আছে সেটা জানতে চাওয়াটা কি অন্যায়?’
‘মোটেই না।’
‘তো মিস,আপনার তো আরও একদিন থাকার কথা ছিলো আপনি চলে গেলেন কেন একদিন আগেই?’
‘আমার হাসপাতালে থাকতে ভালো লাগে না।দমবন্ধ লাগে।’
‘তাহলে কি ভালো লাগে আপনার?’
‘পাহাড়।’
‘পার্বত্য চট্টগ্রাম গিয়েছেন কখনো?’
‘এখন চট্টগ্রামেই আছি।এর আগেও এসেছিলাম।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘তাই নাকি,বাহ!আমার বাড়িও চট্টগ্রাম।কাজের জন্য ঢাকায় থাকা হয় আর কি!’
‘ও আচ্ছা।আমি কিছুদিনের জন্য এসেছি ফুপির বাসায়।তারপর আবার ঢাকায় ফিরবো।’
‘হু,হাওয়া বদল করে আসুন।ভালো লাগবে।’
‘ধন্যবাদ ডাক্তার।’
‘তো মিস,মিলাত আপনি ভালো থাকুন,সুস্থ থাকুন,নিজেকে ভালোবাসুন আর নিজের খেয়াল রাখুন।আবারও কথা হবে।শুভরাত্রি।’
‘শুভরাত্রি,ডাক্তার।’
ফোন রেখে অনুরুপ ইজি চেয়ারে শরীর ছেড়ে দিয়ে চোখ বুজলো।বন্ধ চোখের পাতায় ভেসে উঠলো মিলাতের অসহায়, কান্নারত মুখশ্রী।মেয়েটা বাঁচতে চায় না।ম’রে যাওয়ার কত প্রবল ইচ্ছা।আচ্ছা,সেদিন ছাদে আসতে যদি আরেকটু দেরি হতো তাহলে?অনুরুপ চোখ খুলে ফেললো।ভাবতেই বুক কাঁপছে।অনুরুপ মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলো মেয়েটির অতীত সম্পর্কে জানার।ব্যাপারটা ভাবাচ্ছে।
রেভান ফেসবুকে এসেছে মিলাতের আইডি খুঁজতে।তবে এসে নতুন একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট চোখে পড়লো।প্রোফাইল পিকচারটা ভালোমত খেয়াল করতেই বুঝলো এটা সাইফুলের বউ।রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলো না ও।দেখেও ফেলে রাখলো।কেনো জানি এই মেয়েটাকে দেখলেই একটা খারাপ অনুভূতি হয়।সাইফুলদের বাসায় যতবারই ওর মুখোমুখি হয়েছিলো ততবারই এমন মনে হয়েছে।সবচেয়ে অদ্ভুত ওর দৃষ্টি।কেমন করে যেন তাকায়!
সারাদিন অপেক্ষা করেও যখন ভালোবাসার মানুষটি সাড়া দেয় নি তখন রাগে সবকিছু ভেঙে ফেলতে মন চাইছে চৈতির।একটু আগ্রহ দেখালে কি হয়?এমন নিষ্ঠুর হৃদয়ের কাছেই বাঁধা পড়তে হলো শেষ পর্যন্ত!
নিরু সকাল সকালই চলে এসেছে।এসেই আপু,আপু করতে করতে বাড়ি মাথায় তুলে ফেললো।মিলাত সবে ফ্রেশ হয়ে রুমে এসেছে।নিরুর গলা শুনে বাইরে বেরিয়ে আসতেই নিরু প্রজাপতির মতো উড়ে এসে মিলাতের গলা জড়িয়ে ধরলো।নিলাত হাসতে হাসতে বলল,’তুই একদম পাল্টাস নি,নিরু।’
নিরু ঠোঁট উল্টে অভিমানী স্বরে বলল,’তুমি আমাকে একদমই ভুলে গেছো আপু।’
‘না রে,পাখি।ভুলি নি তোকে।’
‘হ্যাঁ,হয়েছে আমি সব জানি।তোমাকে আর আমি যেতে দেব না।’
‘আচ্ছা,ঠিকাছে আমি তোর সাথেই থেকে যাব।’
‘পাক্কা?’
‘পাক্কা।’
রুজিনা দুই বোনের কান্ড দেখে বললেন,’তোরা দুইটা পারিসও বটে!’
নিরু মুখ বাকিয়ে বলল,’মা,তুমি কি জেলাস?’
‘আমি জেলাস হতে যাব কেন?’
‘না,আমার মনে হচ্ছে তুমি জেলাস।তোর কোনো বান্ধবী নেই তাই।’
‘মিলাত তোর আগে আমার বান্ধবী বুঝেছিস?’
‘মানি না,মানব না।আপু বলো তো তুমি কার বান্ধবী?’
মিলাত দুই মা,মেয়ের দিকে একবার চেয়ে হঠাৎ ভেঙচি দিয়ে ভেতরের ঘরের দিকে যেতে যেতে বলল,’আমি শাঁকচুন্নিদের বান্ধবী হই না।’
দুপুরের খাবার খেতে বসে রুজিনা বললেন,’সন্ধ্যায় একটা হলুদের দাওয়াত আছে।তোর ফুপার বন্ধুর ছেলের বিয়ে।ভাইজান অনেক করে বলেছেন যাওয়ার জন্য।দুইবোনে রেডি হয়ে থাকিস।পার্লারে যাওয়ার হলে খেয়েই বের হ।’
মিলাত গাঁইগুঁই করে বলল,’ফুপি,আমি যাব না।তোমরা যাও।’
মিলাতের কথা শুনে নিরুও বাচ্চাদের মতো বলল,’আপু না গেলে আমিও যাব না।’
‘দুটোকে ঝাড়ুর পেটা করলে তারপর সব ভূত নামবে।’
‘ফুপি,ওরা তো তোমাদের দাওয়াত দিয়েছে।আমি গিয়ে কি করব?’
‘তো?তুই আমার মেয়ে না?’
‘হ্যাঁ,কিন্তু..’
‘কোনো কিন্তু নেই।ঘরে বসে বসে থাকলে আরও হতাশা বাড়বে তারচেয়ে মানুষের সাথে মিশলে ভালো লাগবে।চট্টগ্রাম এসেছিস ঘরে বসে থাকার জন্য না।দরকার হয় দু’টো প্রজাপতির ডানা লাগিয়ে উড়ে বেড়াবি তবুও থেমে থাকবি না।’
‘আচ্ছা,আচ্ছা যাব আমি।এবার খুশি?’
নিরু উচ্ছ্বাসে বলে উঠলো,’খুশিইই!’
রুজিনা মেয়ের মাথায় গাট্টা মেরে বললেন,’কবে বড়ো হবি তুই?অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়া মেয়ের এখনও বাচ্চামি যায় না।’
মিলাত ফুপুকে থামিয়ে দিয়ে বলল,’থাক না,ফুপু।ও এভাবেই সুন্দর।’
বিকেল সাড়ে পাঁচটায় অফিস থেকে ফিরেছে রেভান।অন্যদিন ফিরে একটু রেস্ট নেয় তবে আজ রেস্ট নেওয়ার একদমই সময় নেই।রেডি হয়ে বের হতে হবে।একদম পিচ্চি কালের বন্ধুর বিয়ে।মিস দেওয়াই যাবে না।বাসন্তী রঙের পাঞ্জাবি,সাদা পায়জামা আর চুলগুলোকে পরিপাটি করে নিজের বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়লো ও।
রুজিনা বেগম,নিরু আর মিলাত মাত্রই হলুদে উপস্থিত হলো।অনেক মানুষ ইতিমধ্যেই চলে এসেছে।অনেক বলার পরও মিলাত হলুদ শাড়ি পরে নি।ধূসর রঙের একটা মণিপুরি শাড়ি পরেছে।তবে নিরু পরেছে হলুদ আর রুজিনা বেগম অফ হোয়াইট রঙের শাড়ি পরেছেন।
রেভান হলুদে আসার পরই বন্ধুরা ওকে জেঁকে ধরলো গ্রুপ সেলফি তোলার জন্য।একে একে সবাই দাঁড়ানোর পর বন্ধুদের একটা গ্রুপ সেলফি তোলা হলো।সেলফি তোলার পর রেভান ছবিটা আপলোড করলো।তারপর ছবিটা ভালো করে লক্ষ্য করতেই দেখলো পেছনে মিলাতের মতো একটা মেয়ে দাড়িয়ে হাসছে আরেকটা মেয়ের সাথে।রেভান তৎক্ষনাৎ পুরো জায়গাটা চষে ফেললো তবুও মিলাতের দেখা পেলো না।কিন্তু মেয়েটা স্পষ্ট মিলাতই ছিলো।গেলো কোথায়!
বিকেলের প্রণয় পর্ব ৮
সন্ধ্যায় চা হাতে নিয়ে চৈতি রেভানের আইডিতে আসলো।এখন সকাল বিকাল ওর আইডিতে ঘোরাও দৈনন্দিন কাজের তালিকার যোগ হয়েছে।রেভান একটা নতুন ছবি আপলোড করেছে।হয়তো কারো হলুদের ছবি।কিন্তু ছবিটা জুম করে দেখতেই চৈতির মাথা গরম হয়ে গেলো।মিলাত!এই মেয়ে এখানে কি করছে?চৈতি ভাবলো মনের ভুল কিন্তু পাশে দাঁড়ানো নিরুকে দেখে নিশ্চিত হলো এটা মিলাতই।রাগে অন্ধ হয়ে ফোনটা এক আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেললো ও।তারপর পাগলের মতো চিৎকার করতে করতে বলল,’তোকে ম’রতে হবে।তুই ওর ছবিতে আসার সাহস কি করে পাস?আমি তোকে কঠিন থেকে কঠিম মৃ’ত্যু দেবো।তৈরি থাক।’