বিকেলের প্রণয় পর্ব ১০
Arshi Ayat
রেভান দেখার আগেই মিলাত ওকে খেয়াল করে জায়গা থেকে সরে পড়েছে।ফুপু,ফুপাতো বোনের সামনে এসে যদি আলাপ শুরু করতো তাহলে মুশকিল হতো।আপাতত এই লোক থেকে মুখ বাঁচিয়ে চলতে হবে।
মিলাতকে না পেয়ে হতাশ হয়ে আবার বন্ধুদের কাছে চলে এলো রেভান।বন্ধুরা সব একসাথে হওয়ায় তুমুল আড্ডা চলছে।সভায় একেকজনের পদমর্যাদা একেকরকম।এই যেমন রেভান হলো চিরকুমার বিষয়ক উপদেষ্টা।তেমনই আরও রয়েছে ছ্যাঁকা বিষয়ক উপদেষ্টা,প্রেম বিষয়ক উপদেষ্টা,লেডি কিলার রোমিও উপদেষ্টা,বাসর বিষয়ক উপদেষ্টা।
এখন শুরু হবে হলুদ।প্রথমে গুরুজনেরা শুরু করবে শেষ হবে বন্ধুদের দিয়ে।নিরু তখন থেকে মিলাতকে বলে যাচ্ছে হলুদের স্টেজের সামনে যাওয়ার জন্য কিন্তু মিলাত রাজি হচ্ছে না তাই গাল ফুলিয়ে বসে আছে মেয়েটা।মিলাতের খারাপ লাগলো।তাই সে একটু ভাবলো কি করা যায়।মাথায় একটা বুদ্ধি আসতেই বলল,’তোর কাছে মাস্ক হবে?’
নিরু ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,’কেনো?’
‘আমার এতা মানুষের ভিড়ে অস্বস্তি হয়।মাস্ক পড়লে একট কম লাগে।’
‘তো এটা আমাকে আগে বলবা না?আছে মাস্ক।দাঁড়াও দিচ্ছি।’
নিরু নিজের পার্স থেকে একটা মাস্ক বের করে দিলো।এটা অনেকদিন আগে রেখেছিলো তবে পরা হয় নি।মিলাত মাস্কটা পরার পর নিরু ওর হাত ধরে চললো স্টেজের দিকে।মিলাত মনে মনে শুধু এটাই চাইছে যেন রেভান ওকে খেয়াল না করে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
অনুরুপ আজ হাসপাতাল থেকে ফিরেছে রাত দশটায়।হঠাৎ একটা ইমার্জেন্সি পড়ে যাওয়ায় দেরি হয়ে গেছে।কলি বেগম ছেলেকে দেখেই বললেন,’ক্লান্ত লাগছে রে?’
‘হ্যাঁ,মা।’অনুরুপ মায়ের দিকে এগুতে এগুতে বলল।
‘যা গোসল সেরে আয়।তারপর একসাথে খাব।তোর বাবাও খায় নি।ছেলের সাথে খাবে বলে বসে রয়েছেন।’স্ব স্নেহে বললেন কলি বেগম।অনুরুপ মৃদু হেসে বলল,’আচ্ছা।আসছি।’
রুমে এসে মায়ের কথা মতো প্রথমেই গোসল সেরে নিলো অনুরুপ।তোয়ালে দিয়ে মাথা মুছতে মুছতে ফোন হাতে নিতেই দেখলো একটা মেসেজ এসেছে,’সব ইনফরমেশন পেয়ে গেছি।ফ্রী হয়ে কল করিস।’
মেসেজটা দেখেই ভাবলো কল করবে পরক্ষণেই মনে হলো মা-বাবা বসে আছে ওর জন্য।তাদের অপেক্ষা করানো ঠিক হবে না তাই ফোনটা রেখেই চলে গেলো খাবার টেবিলে।
আমিনুল হক ছেলের পাতে রুই মাছের বড় টুকরো দিয়ে বললেন,’আজ আমি বাজার করেছি।’
‘কেন?আমি তো জামাল কাকাকে বলে গিয়েছিলাম বাজার করে দেওয়ার জন্য।’
‘হ্যাঁ,তোর জামাল কাকার সাথে আমিও গিয়েছিলাম।ওই ব্যাটা মাছ চেনে না।পঁচা মাছ নিয়ে আসছিলো পরে আমি বেছে কয়েক দোকান দেখে বড় একটা রুই এনেছি তোর জন্য।’কথাটা বলেই আমিনুল হক হাসলেন।সাথে অনুরুপ আর কলি বেগম দু’জনেই তাল মেলালো।বাবা-মায়ের সাথে টুকটাক আলাপ আলোচনা করতে করতে খাওয়া শেষ করে উঠতেই আমিনুল হক বললেন,’তোর সাথে কথা আছে।একটু বস।’
‘কি কথা,বাবা?’অনুরুপ পুনরায় বসে প্রশ্ন করলো।
‘কাল রাতের ট্রেনের টিকিট করেছি তিনটা।ছুটি নিয়ে নিস হাসপাতাল থেকে।’
‘আমাকে না বলেই করে ফেললে?’
‘তোকে বললে তুই হাজার বাহানা করতি।’
‘কিন্তু বাবা…’
‘কোনো কিন্তু নেই।’
অনুরুপ দ্বিমত করলো না আর।রুমে এসে কথামতো কল করলো।ওপাশ থেকে ডিটেকটিভ হিমেল বলল,’মেয়েটার নাম মিলাত।বয়স ২৪।শর্ট ডিভোর্স হয়েছে।বিয়ের ছয়মাস পর স্বামী ডিভোর্স দেয় যদিও তাদের প্রেমের বিয়ে।’
অনুরুপ ভ্রু কুঁচকে বলল,’কেনো?’
‘ইন্টারেস্টিং বিষয়টা এখানেই।মেয়েটার বড় বোন ছিলো অবিবাহিত।তার সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে মেয়েটাকে ডিভোর্স দেয় ওর স্বামী।পরবর্তীতে ওর বড়বোনকে বিয়ে করে সে।’
অনুরুপ খুব একটা চমকালো না।কারণ সে কিছুটা আন্দাজ করেছিলো।সে বন্ধু হিমেলকে বলল,’আর কিছু জেনেছিস?’
‘আপাতত এ পর্যন্তই।এখন বল তো এই মেয়ে কি করেছে?কেন এর পিছনে পড়েছিস তুই?’
‘মেয়েটা নিজের অজান্তেই ওর সম্পর্কে জানার কৌতুহল তৈরি করেছে আমার মনে।’
‘সে কি!তুই প্রেমে পড়েছিস?’
‘আরে না।’
‘মনে তো হচ্ছে।’
‘তোর তো কতো কিছুই মনে হয়।সেগুলো ধরতে নেই।বাসায় সবাই কেমন আছে?’
‘ভালো,আলহামদুলিল্লাহ।আঙ্কেল,আন্টি কেমন আছে?’
‘আলহামদুলিল্লাহ।আচ্ছা,বন্ধু রাখছিস।’
‘আচ্ছা।’
কথা শেষ করে অনুরুপ ভাবতে বসলো কি এমন কারণে ওর বড়বোন এমনটা করলো!
বন্ধুদের মাঝে এখন রেভানের হলুদ লাগানোর পালা।সে স্টেজে উঠে বন্ধুকে হলুদ লাগিয়ে,একটু দুষ্টুমি করে যখন স্টেজ থেকে নামবে তখনই মাস্ক পরা মিলাতের দিকে চোখ গেলো।কোনো সন্দেহ নেই সে চোখ দেখেই চিনতে পারলো মিলাতকে।কিন্তু ও মাস্ক পরেছে কেনো?কোনো সমস্যা হচ্ছে?রেভান স্টেজ থেকে নেমে ওর দিকে এগিয়ে আসতে নিলেই মিলাত ভয় পেলো যেটার ভয় পাচ্ছিলো সেটাই হলো।এখন কি করবে ভাবতে ভাবতেই হুট করে একটা লোক এসে রেভানকে জড়িয়ে ধরলো।আর উচ্চস্বরে হেসে বলল,’আর রেভান!অনেকদিন পর দেখলাম তোমাকে।কেমন আছো?’
‘এইতো আঙ্কেল ভালো।আপনি?’
‘আমিও ভালোই আছি আল্লাহর রহমতে।তা ব্যবসা ভালো চলছে তো?’
‘হ্যাঁ,আঙ্কেল।আলহামদুলিল্লাহ।’
লোকটার সাথে কথা বলা শেষ হতেই রেভান মিলাতকে খুঁজলো কিন্তু পেলো না।এবার ও বুঝতে পারলো মেয়েটা ওর থেকে মুখ বাঁচিয়ে চলছে।রেভান হাসলো।মনে মনে বলল,’দ্বিতীয়বার যেহেতু প্রেমে পড়েছি।পূর্ণতা আমি দিয়েই ছাড়বো।আমার মত বেহায়া,জেদি আর একরোখা প্রেমিক তুমি দেখো নি,মায়াকেশী।’
চৈতি ভাবলো সে সাইফুলকে ডিভোর্স দেবে।আজ আসলেই বলবে ডিভোর্সের কথা।সে-ই প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিলো।কিন্তু যখন সাইফুল এলো ওর জন্য ফুলের তোড়া নিয়ে তখন সাময়িক খুশি হয়ে কথাটা ভুলে গেলো।তবে খাবার টেবিলে বসে যখনই বলবে কথাটা তখনই সাইফুল বলল,’চট্টগ্রাম যাবার সব ব্যবস্থা হয়ে গেছে।তুমি গোছগাছ শুরু করো।আমি ছুটি পেয়েছি।’
বিকেলের প্রণয় পর্ব ৯
কথাগুলো শুনে নিজের কথাটা আর বললো না চৈতি।আগে চট্টগ্রাম যাওয়া যাক মনের কথাটা রেভানকে জানানো হোক তারপর সিদ্ধান্ত নেবে।