শেষ থেকে শুরু পর্ব ৩৩
Sabihatul sabha
বিয়ের মার্কেটে এসে দাঁড়িয়ে, এক ধরনের অদ্ভুত শূন্যতায় চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে অভ্রকে। চারপাশে নানা মানুষের ভিড়, সাজগোজ, হাসি-হাসি মুখ, বিয়ের সাজের জন্য বিক্রি হওয়া শাড়ি, গহনাগুলো সব কিছুই যেন তাকপ তীব্রভাবে এক জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেখানে এক তীব্র যন্ত্রণার অনুভূতি, যে মুহূর্তে তার চোখে পড়ে, সামনে হাসিহাসি মুখে আসিফের পাশে দাঁড়ানো মেয়েটা আজ বাদে কাল তার ভাইয়ের বউ, মনের গভীরে এক চরম যন্ত্রণা সৃষ্টি হচ্ছে।
অভ্রত ভেবেছিল একদিন তার সাথে সারাজীবন থাকার প্রতিজ্ঞা করবে, হাত ধরে বৃদ্ধ হওয়ার প্রতিজ্ঞা করবে। অথচ ভাগ্য!
অভ্র আর সামনে যায় না সেখান থেকে ফিরে চলে আসে। চাইলেই বিয়ে ভাঙার হাজার মাধ্যম পাওয়া যায় তবে দুই পক্ষের অনুভূতি এক হওয়া লাগে। নিরুপমা হয়তো বিয়েতে খুশি সেই ৬ বছর আগেও কখনো নিরুপমা বলেনি ওকে ভালোবাসে তবে অভ্র ধরে নিয়ে ছিল বাসে। আজ ছয় বছর পরও নিরুপমা বলেনি ভালোবাসে তবে আজ আর অভ্র ধরতে পারে না! চোখের ভাষা পড়তে পারে না। মনে হয় এটা অপরিচিত কেউ অভ্র ত এই নিরুপমা কে চিনেনা। কতো খুশি আসিফের পাশে , ভালোবাসার রং বদলায় সেকেন্ডে সেখানে তাদের মাঝে কি কখনো ভালোবাসা ছিল.? ছয় বছর কম নয়! ছয় মাস কেউ অপেক্ষা করে না সেখানে নিরুপমা ওকে ভুল বুঝেছে ছয় বছর আগে অবশ্য ছয় বছরে আসিফকে ভালোও বেসে ফেলেছে হয়তো।
অভ্র হাল্কা হাসলো নিজের না হোক তবুও সে ভালো থাকুক। ঠিক এভাবে সারাজীবন চোখে মুখে হাসির ঝিলিক ছড়িয়ে থাকুক
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বিয়ের আগের রাতের মেহেদী অনুষ্ঠানে সবাই ছাঁদে করেছে।
মেহেদী অনুষ্ঠান সাধারণত রাতে হয়, রাতের পরিবেশ রঙিন হয়ে আছে, প্রাণবন্ত আড্ডায় মেতে উঠেছে সবাই । চারপাশে আলো, ফুল, এবং নানা ধরনের ডিজাইন করা গয়না। চারপাশে ছড়িয়ে আছে মেহেদীর হালকা গন্ধ এবং মৃদু সঙ্গীতের শব্দ। মেহেদী ফোঁটা দেওয়ার জন্য সাধারণত পাত্র-পাত্রীর হাত সাজানো হচ্ছে এবং প্রতিটি হাতের উপর মেহেদীর নকশা আঁকা হচ্ছে অত্যন্ত যত্নসহকারে।
এদিকে বিয়ের কনের জন্য বিশেষ সাজ হয়েছে,নিরুপমা কে পরিধান করা হয়েছে সাদা রঙের সুরম্য শাড়ি, সাথে সোনালী গহনা, আর মাথায় একটি সুন্দর ফুলের মুকুট। নিরুপমার হাতে মেহেদী আবির্ভূত হওয়ার পর এক ধরনের আনন্দ এবং উৎসাহ ছড়িয়ে পড়েছে। মেহেদী আঁকার সময় বিয়ের নানা শুভেচ্ছাবাদী গান বাজছে, , হাসি-মজায় গমগম করে আছে পুরো পরিবেশ।
বেলী আঁড়চোখে আয়ানকে দেখছে, এই আয়ানের মধ্যে কিছু ত একটা হয়েছে এভাবে বেলীকে চোখে চোখে কেন রাখছে.?
অনিক দুইবার কথা বলতে চেয়েছে হয়তো কোনো প্রয়োজন অথচ এই বিড়াল মুখোর জন্য বলার সুযোগ আর পাচ্ছে কই.?
অনিক একটা কাগজে কিছু লিখে একটা বাচ্চার হাতে দিয়ে পাঠালো।
বেলী নিরুপমার পাশে বসে মজা করছে তখনি একটা বাচ্চা এসে বেলীর হাতে কাগজটা ধরিয়ে দিয়ে এক দৌড়ে চলে গেলো।
নিরুপমা বেলীর দিকে তাকাতেই বেলী ইনোসেন্ট মুখ করে বললো,’ আমি কিছু জানিনা!”
নিরুপমা হাসতে হাসতে বললো,’ বিয়ে বাড়ি কোন ছেলের নজর পড়েছে আমার দেবরের বউয়ের উপর.? ‘
‘ ভাবি তেমন কিছু না’
‘ তাহলে কেমন কিছু.? ‘
গম্ভীর কন্ঠ পেয়ে দুইজন সামনে তাকালো।
আয়ান কে দেখেই বেলীর গলা শুকিয়ে গেলো। আজকাল বড্ড ভয় লাগে এই আয়ান কে। ভয় লাগার যথেষ্ট কারণ আছে। আগের মতো স্বাভাবিক থাকে না কেমন গম্ভীর হয়ে থাকে, মনে হয় সামনে ওর জম দাঁড়িয়ে আছে, একটুও হাসে না, কথার মধ্যে একটা দায়িত্ব দায়িত্ব ভাব, কথা না বলতেই ধমক আর ভয় দেখানো। বেলী কি ভয় পায় না.?
আয়ান খপ করে বেলীর হাত থেকে কাগজটা নিয়ে নিলো।
বেলী ভয়ে নিরুপমার হাত চেপে ধরেছে।
আয়ান কাগজটা মেলে নিজের সামনে ধরে রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,’ আশেপাশে সবার নজর সব সময় আমার জিনিস গুলোর উপর কেন থাকে.? বেলীর বাচ্চা তুই এখনি মুখ ধুয়ে আসবি, আর এইসব কি.? তুই এখন থেকে শাড়ি পড়ে থাকবি। ‘
বেলী কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,’ কি বলো ভাই! আমি ত শাড়ি পড়ে হাঁটতে পাড়ি না!’
‘ তোর ভাই কে..?’
বেলী হাসফাস করতে লাগলো.
‘ আজকের পর মুখে ভাই শুনলে মুখ সেলাই করে ফেলবো আর শাড়ি পড়ে হাটতে না পারলে সারাক্ষণ রুমে বসে থাকবি, মুখে রংচং মেখে ছেলেদের আকর্ষণ পাওয়ার চেষ্টা জামাই থাকতে করতে হয়.?
বেলীর ইচ্ছে করলো মুখের উপর বলে দিতে, ‘ জামাই কে.? তুই আমার কেউ না! বছরে একটা বার খুঁজ খবর নেয় না আজ আসছে জামাই সাজতে। শুধু জামাই হলেই হয় না কর্তব্য পালন করতে হয়!’
আপসোস মনের কথা আর মুখে আসলো না।
আয়ান ধমকে রুমে পাঠালো কাজের মহিলাদের মতো প্যাচিয়ে শাড়ি পরতে জেনো কেউ বলতে না পারে ” আপনাকে অসম্ভব মায়াবতী লাগছে!’
নিরুপমার হাতে খুব সুন্দর করে মেহেদী দিয়ে দেওয়া হয়েছে। বলা হলো হাতের মাঝে স্বামীর প্রথম অক্ষর লিখবে.?
নিরুপমা কিছু সময় চুপ থেকে বললো,’ আমি নিজেই লিখে নিব! ‘
বেলী মন খারাপ করে একটা শাড়ি পড়ে এসে দাঁড়ালো। নিরুপমা বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ মাশাল্লাহ তোমার দিক থেকে চোখ সরাতে পারছি না বেলী। তোমার প্রয়োজন প্রতিদিন শাড়ি পড়ে আমার দেবরের মাথা এলোমেলো করার”
নিরুপমার কথা শুনে গাল ফুলিয়ে বেলী নিরুপমার পাশে বসলো।
নিরুপমা বেলীর হাতের দিকে তাকিয়ে বললো,’ জানো তোমার হাতের মেহেদী রং অনেক বেশি গাঢ় হয়েছে! ‘
বেলী হাত গুলো সামনে এনে বললো, ‘ হুম আমার এতো গাঢ় রং ভালো লাগে না ‘
‘ তুমি জানো মেহেদীর রং গাঢ় হলে কি হয়.?’
বেলী ঠোঁট উল্টে বললো,,’ কি হয়.?’
নিরুপমা বলার আগেই ওদের সামনে এসে হাঁটু গেড়ে অভ্র বসে বললো,’ লোক মুখে শোনা যায় হাতের মেহেদীর রং গাঢ় হলে স্বামীর ভালোবাসা বুঝা যায়! হাতের মেহেদীর রং যত বেশি গাঢ় স্বামীর ভালোবাসা ও ততবেশি গভীর ‘
বেলী মুগ্ধ নয়নে অভ্রর মুখের দিকে তাকালো। আজ ছেলেটাকে বেশ অগোছালো লাগছে, এলোমেলো চুল, চোখের নিচে গাঢ় কালো দাগ পরে গেছে মনে হচ্ছে শান্তিতে কতোদিন ঘুমায় না! কিসের এত কষ্ট অভ্র ভাইয়ের.? বেলীর মনে হাজার খানেক প্রশ্ন উঁকি দিল। তবে আজ আর আগের মতো এতো এতো প্রশ্ন করলো না। জিজ্ঞেস করনো ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া কেন করেন না অভ্র ভাই.? আজ আর বলতে ইচ্ছে হয় না আমাকে আপনার জীবন গোছানোর দায়িত্ব কেন দিলেন না অভ্র ভাই.? আমাকে কেন বিয়ে করলেন না.? কিসের এতো কষ্ট আপনার.?
অভ্র নিরুপমার দিকে একটা প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললো,’ সকাল থেকে ত কিছুই খাওয়া হয়নি তোমার খেয়ে নাও!’
বেলী আরও অবাক হয় ছেলেটা নিজে খায়নি সেই দিকে খেয়াল নেই অথচ নিরুপমার খবর রেখেছে!
নিরুপমা হাত দুইটা সামনে এনে বললো,’ হাতে মেহেদী ‘
অভ্র শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বেলীর দিকে প্লেট এগিয়ে দিয়ে বললো,’ খাইয়ে দে’
বেলী আচ্ছা বলে প্লেটে হাত দেওয়ার আগেই ওর সামনে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়ান। বেলী এবার সত্যিই মনে হচ্ছে কান্না করে দিবে। ঠোঁট উল্টে বললো,’ আবার কি.?’
” শাড়ি পড়তে না পারলে পড়তে কে বলেছে!’
বেলীর বেশ রাগ হলো। একটু আগে জোর করে নিজে পড়িয়ে এখন বলছে কে বলেছে.?
বেলী কোমরে দুই হাত বেঁধে বললো,’ তুমিই ত বললে’
আয়ান বেলীর হাত শক্ত করে ধরে বললো,: রুমে আয়!’
গেলো গেলো বেলীর প্রাণ পাখি এখন ভেতর থেকে বের হয়ে গেলো ভয়ে।
অভ্র ওদের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে হাসলো। আয়ান যে তার বউয়ের উপর ক্রাশ খাওয়া ছেলের উপর বেশ জেলাস তা খুব করে বুঝতে পারছে অভ্র । বিয়ে এমন একটা পবিত্র বন্ধন যা নিজের অজান্তেই মনের গভীরে অনুভূতি জন্মদেয়।
নিরুপমা চোখ গুড়িয়ে গুড়িয়ে চারপাশ দেখছে অভ্রর দিকে ভুলেও তাকাচ্ছে না।
অভ্র এক টুকরো খাবার নিরুপমার মুখের সামনে ধরে বললো,’ নাও খেয়ে নাও। সবাই ব্যাস্ত, আম্মু অফিস বাসা সব সামলাচ্ছে, মেঝো আব্বু, ছোট আব্বু তোমার মামা সবাই ব্যাস্ত, তোমার মামি আর ছোট আম্মুও ব্যাস্ত তাই আমি নিয়ে আসলাম।’
নিরুপমার পেটে এতোক্ষণ খিদে না থাকলেও খাবার দেখে খিদে পেয়ে বসেছে। অভ্রর হাত থেকে খাবার মুখে নেওয়ার আগেই আসিফ বলে উঠলো, ‘ অভ্র তোকে মেঝো আব্বু ডাকছে তুই যা আমি ওকে খাইয়ে দিচ্ছি।’
অভ্র হাতের খাবারের টুকরো টা প্লেটে রেখে আসিফের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ছাদ থেকে নেমে গেলো।
আসিফ হাসিহাসি মুখে নিরুপমা কে খাওয়াতে গেলে। নিরুপমা কাটকাট কন্ঠে বলে উঠলো, ‘ খিদে নেই!’
মধ্যে রাত! চারপাশে গান বাজছে। সবাই মেতে উঠেছে আড্ডায়।
বেলী দেখলো অভ্র মন খারাপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে সবার থেকে দূরে বসে আছে। একটু পর পর সিগারেটে টান বসাচ্ছে।
বেলী সবার উদ্দেশ্য বলে উঠলো, ‘ এমন একটা আনন্দের মুহূর্তে আমরা ত অভ্র ভাইয়ের কন্ঠে একটা গান শুনতেই পারি। ‘
সবাই একসাথে বলে উঠলো, ‘ একদম, অভ্রর গানের গলা ত শিল্পী দের ও হার মানায়। ‘
সবাই এমন ভাবে চেপে ধরলো অভ্রকে। আসিফ ত রুম থেকে গিয়ে গিটার নিয়ে আসলো।
অনিক বেলীর দিকে তাকিয়ে বললো,’ অভ্র কিন্তু খুব ভালো করে ডান্সও পারে ‘
বেলী অবাক হয়ে বললো,’ সত্যি.? আর আপনি কিভাবে জানলেন.?’
‘ হুম সত্যি, আমি জানবো না ত কপ জানবে.? আমরা ত এক সাথে ওই রাতে… ‘
আর কিছু বলার আগেই অভ্র অনিকের গলা জড়িয়ে ধরে বললো,’ নেশে কি আজ বেশি হয়ে গেছে?? ‘
‘ ছিঃ ছিঃ অভ্র ভাই আমি ওইসব ছাইপাঁশ খাই না!’
‘ আচ্ছা.? এতো ভদ্র.? ‘
অনিক নিজেকে হিরো দেখাতে চাচ্ছে বেলীর সামনে অথচ এই অভ্র এখন দেখছি সব সিক্রেট ফাঁস করে দিবে।
অভ্র অনিকের কানে ফিসফিস করে বললো,’ আর একবার ভুল করেও ওই রাতের কিছু বলতে গেলে তোমার সব সিক্রেট ফাঁস হয়ে যাবে’
অনিক মুখে আঙ্গুল দিয়ে নিজের মুখ তালা দিয়ে ফেললো।
দূর থেকে সবটা খেয়াল করলো নিরুপমা। নিরুপমা এমনি এমনি সিআইডি অফিসার হয়নি। সে মুখের আকার ভঙ্গি দেখে সব বুঝে যায়। ওই রাতের ভূতের রহস্য ও বুঝা হয়ে গেছে। রাগ আরও বাড়লো অভ্রর উপর।
সবার জোরাজোরিতে অভ্র গিটার হাতে নিল। টুংটাং শব্দ তুলে নিরুপমার মুখের দিকে তাকালো।
” তোমার চির চেনা পথের
ঐ সীমা ছাড়িয়ে
এই প্রেম বুকে ধরে আমি
হয়তো যাবো হারিয়ে
চোখের গভীরে তবু মিছে, ইচ্ছে জড়িয়ে
একবার শুধু একটিবার
হাতটা দাও বাড়িয়ে ”
অভ্র দৃষ্টি নিরুপমার দিকে স্থির। বেলী বার বার চোখ ঘুরিয়ে দুইজন কে দেখছে।
আসিফ হাল্কা হেঁসে নিরুপমার হাত ধরলো। অভ্র সেই দিকে তাকিয়ে হেঁসে আকাশের দিকে তাকিয়ে তাঁরা গুণতে শুরু করলো।
বিয়ের মঞ্চে নিরুপমার আগমন যেন এক অনবদ্য দৃশ্য। মাঝ খানে নিরুপমা লাল বেনারসি শাড়ি পড়ে এগিয়ে আসছে দুই পাশে মেয়েরা মাথার উপর ছাউনি ধরে এগিয়ে আসছে। এক পাশে বেলী নিরুপমার পাশে । চারপাশে হাজারো বাতি, সোনালী আলোয় ভাসমান মঞ্চ, ক্যামেরাম্যান ক্যামেরায় সব ভিডিও করে নিচ্ছে।
এখন, সবার নজর মঞ্চের দিকে—অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবাই। ধীরে ধীরে, নিরুপমা এগিয়ে আসছে গায়ে লাল বেনারসি, এমন এক বেনারসি, যা যেন কোনো রাজকীয় সাজ। গা ভর্তি সোনালি কাজ, চমৎকার সূক্ষ্ম তন্তু দিয়ে ঝলমল করা শাড়ি, পুরো শাড়ি যেন একেবারে ঝলকাচ্ছে। কোমরে লাল চুড়ি, হাতে সোনালী কড়ি, আর নাকে বড় নথ একেবারে নিখুঁত। গায়ের রং দুধে আলতা, যেন রূপের পূর্ণতা।
মঞ্চে তীব্র আলো পড়ে, আর নিরুপমা স্টেজের দিকে পা বাড়ায়, মনে হয় যেন এক দেবী আসছে। সবার চোখ তার দিকে নিবদ্ধ, আর মনে হয়, পুরো পরিবেশ স্থির হয়ে গেছে। হাঁটতে হাঁটতে নিরুপমা একে একে চারপাশে তাকিয়ে সবার দিকে মিষ্টি হাসি ছড়িয়ে দেয়, যেন নিরুপমা এই মুহূর্তে কেবল নিজের নয়, সকলের জীবনের বিশেষ মুহূর্ত। তার হাঁটার সাথে সঙ্গীতের তালে তালে নরম সুর যেন একে একে হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
তখনই শুরু হয় নাচ—সঙ্গীতের সাথে এক অপূর্ব নাচ নাচছে বেলী একটু পর আচমকা বেলীর সাথে নাচের তালে এগিয়ে আসলো আয়ান। বেলী নিজেও অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ান খুব সুন্দর করে গানের তালে তালে বেলীর হাত ধরে ঘুরিয়ে নিচ্ছে বেলী শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। বিশ্বাস হচ্ছে না ওর এটা আয়ান.?
বেলীর পা গুলি যখন মঞ্চে ছন্দময় হয়ে ওঠে, শাড়ির কোণা খেলা করে বাতাসে, গায়ে মৃদু ঝলকানির ঝিলিক, মুগ্ধ দর্শকরা আর কিছুই দেখতে পাচ্ছে না নিরুপমা থেকে গিয়ে চোখ এখন সবার আঁটকে আছে বেলী আর আয়ানের দিকে । তাদের নাচে যেন এমন এক তান, এমন এক প্রেমের আবেগ, যা দেখে সবার মনের কোণে এক ভালোবাসার জোয়ার ছুটে যায়।
তাদের শরীরী ভাষা, মুখাবয়ব, দৃষ্টির মায়াজাল—এই পুরো সময় যেন মুগ্ধতায় আটকে গেছে। সারা মঞ্চ এক অদ্ভুত আলোর দ্যুতি ছড়িয়ে পড়ে, যেন একরকম চমক দিয়ে সবার মনে জায়গা করে নেয়।
নিরুপমা স্টেজে বসে ঠোঁটের কোনে মৃদু হাসির রেখা ফুটিয়ে তাকিয়ে আছে বেলী আর আয়ানের দিকে।
অভ্র এক কোনায় দাঁড়িয়ে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল নিরুপমার হাসোজ্জল মুখের দিকে। কতো খুশি সে এই বিয়েতে মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে। নিজের অজান্তেই চোখে জল এসে জমা হচ্ছে। রাগে কপালের রগ গুলল ফুলে উঠলো অভ্রর। সে খুশি তাহলে আমার চোখে কেন জল.? কেন আমার চোখ, মন আমার কথা শুনছে না.? আজ থেকে তাকে ভুলে যেতেই হবে। সে আমার ভাইয়ের বউ হতে যাচ্ছে । রাতের ফ্লাইটেই ত দেশ ছেড়ে কানাডা চলে যাব। বুকে পাথর রেখে না হয় শেষ বিয়েটা দেখে যাই।
শেষ থেকে শুরু পর্ব ৩২
অভ্র ঠিক করে নিল সে এই জীবনে আর বাংলাদেশে পা রাখবে না। আজ রাতেই সে দেশ ছাড়বে আজীবনের জন্য । আজীবনের জন্য মুক্তি আমার জবারাণী সরি তুমি ত কখনো আমার ছিলেই না!’