তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৮
Raiha Zubair Ripti
পনেরো দিন পর আরাধ্য ঢাকায় ফিরলো। আরাফাত দের সাথে দেখা হয় নি। তারা তাদের বাসায় চলে গেছে৷ বিছানায় পা দুলিয়ে বসে আছে আরু। আয়ুশ ল্যাগেজ থেকে জামাকাপড় বের করে সব আলমারি তে সাজাচ্ছে আর আড়চোখে আরু কে দেখছে। এসে থেকেই বাঁকা চোখে বারবার দেখে চলছে। আরাধ্য জামাকাপড় গুলো আলমারি তে গুছিয়ে রেখে আরুর সামনে এসে দাঁড়ালো। কোমরে দু হাত গুঁজে বলল-
-” সমস্যা কি তোর এভাবে বারবার তাকাচ্ছিস কেনো আমার দিকে?
-” আপনার রূপ চুইয়ে পড়ছে। সেজন্য দেখছি। আচ্ছা আপনি জানেন আমাদের বিয়ের কত দিন হয়েছে?
-” কেনো জানবো না।
-” বলুন তো।
-” দু মাস ২০ দিন।
-‘ তো আপনার কি উচিত না আমায় হানিমুনে নিয়ে যাওয়ার?
-” হানিমুনে গিয়ে তুই কি করবি?
আরু অন্য দিকে তাকিয়ে বলল-
-” আপনি কি কচি খোকা? জানেন না হানিমুনে কি হয়?
-” সব জানি হানিমুনে কি হয়। কি দরকার টাকা খরচ করে দূরে গিয়ে করার। আমার রুম আছে বিছানা আছে,রুমের দরজা আছে উপরে ছাঁদ ও আছে। একদম নিরাপদ পারফেক্ট। টাকাও বাঁচবে সাথে যাওয়া আসার সময়ও।
আরু রাগী চোখে তাকালো আরাধ্যর দিকে।
-” একটু তো রোমান্টিক হন।
আরাধ্য অবাক হওয়ার ভান করে বলল-
-” আমি রোমান্টিক নই! আমার মতন রোমান্টিক জামাই পাবি আর কোথাও খুঁজে?
-” সরেন চোখের সামনে থেকে।
-” চল বাহিরে যাই।
-” কেনো?
-” একটু হাটাহাটি করি। দেখ বাহিরে কেমন শীতল বাতাস বইছে।
-” ফুচকা খাওয়াবেন?
-” রাস্তায় ড্রেনে থাকা আবর্জনা ও খাওয়াবো চাইলে। চল।
-” এই অবস্থায়?
-” তাহলে কি ব্রাইড সেজে বের হতে চাচ্ছিস?
-” সোজা কথা সোজা ভাবে বলতে পারেন না?
-” কথা কম বলে চল।
আরাধ্য আরু কে নিয়ে বের হলো রুম থেকে। সদর দরজা পাড় হতেই সন্ধ্যা পেছন থেকে ডেকে বলল-
-” কোথাও যাচ্ছিস নাকি?
আরাধ্য পেছন ফিরে বলল-
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
-” হ্যাঁ মা।
-” কোথায়?
-” হাঁটতে বের হচ্ছি।
-” আচ্ছা তাড়াতাড়ি ফিরিস। রাস্তায় আজকাল যা হচ্ছে।
-” আচ্ছা টেনশন করো না। তাড়াতাড়ি ফিরবো।
আরাধ্য গিয়ে গাড়িতে বসলে। আরু আরাধ্য কে গাড়িতে বসতে দেখে বলল-
-” আরে গাড়িতে বসলেন কেনো?
-” তাহলে কিসে বসবো প্লেনে?
-” আপনি যে বললেন হাঁটতে বের হবেন৷ তাহলে না হেঁটে কেনো গাড়িতে বসলেন?
-” আরে ধূর ওটা তো কথার কথা বলেছি। আয় তো বস।
আরু গাড়িতে বসতেই আরাধ্য আরুকে নিয়ে সোজা মলের সামনে চলে আসলো। আরু আচমকা আরাধ্য কে মলের সামনে এনে গাড়ি থামাতে দেখে জিজ্ঞেস করলো-
-” এ্যাই এখানে আনলেন কেনো?
আরাধ্য গাড়ি থেকে বের হতে হতে বলল-
-” আরে বের তো হ আগে।
আরু বের হতেই আরাধ্য আরুকে নিয়ে জামাকাপড়ের দোকানে ঢুকলো। তারপর আরুকে উদ্দেশ্য করে বলল-
-” পছন্দ করে শাড়ি,থ্রি-পিস যা লাগে নে।
আরু ভ্রু কুঁচকে বলল-
-” এসব কেনো নিব?
-” আশ্চর্য আমি বলছি বলে নিবি।
-” ফর হোয়াই?
-” সামনে বিয়ে আছে।
-” কার?
-” সুমির।
-” কবে?
-” নেক্সট উইক। তাড়াতাড়ি নে। আমার জন্যও তো কিনতে হবে।
-” আপনি দেন পছন্দ করে। আমার চয়েস ভালো না।
-” তারমানে বলছিস আমার চয়েস ভালো? ওকে। এই বেগুনি টা দেখ। কেমন?
-” ভালোই।
-” আচ্ছা এটা প্যাক করে দিন। আর আরু গায়ে হলুদের জন্য কি নিবি শাড়ি নাকি লেহেঙ্গা?
-” লেহেঙ্গা নেই?
-” নে। ভাই গায়ে হলুদের জন্য লেহেঙ্গা বের করুন তো।
দোকানদার লেহেঙ্গা বের করলো কয়েকটা। তার ভেতর থেকে মাস্টার্ড কালারের লেহেঙ্গা পছন্দ হলো আরুর। আরুর জুতা ড্রেস সব কিনে আরাধ্য ছেলেদের জামাকাপড়ের দোকানে আসলো। আরাধ্য বুঝতে পারছে না কি কিনবে। তাই আরু কে বলল-
-” তোরে তো আমি পছন্দ করে দিলাম।এবার তুই আমাকে পছন্দ করে দে। কি নিব?
আরু দোকানদার কে বলল-
-” ভাই লুঙ্গি আছে?
আরাধ্য ভ্রু কুঁচকালো। আরুর বাহু টেনে বলল-
-” লুঙ্গি দিয়ে কি হবে?
-” লুঙ্গি পড়বেন।
আরাধ্য দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
-” থাপড়িয়ে তোর দাঁ’ত আমি ফেলে দিব আরু। বে’য়াদব বেডি। সর তোর পছন্দ করে দিতে হবে না৷ এ ভাই আপনি কিছু পাঞ্জাবি দেখান।
দোকানদার পাঞ্জাবি বের করলো। আরাধ্য সাদা আর নেভি ব্লু কালারের পাঞ্জাবি কিনে নিলো। তারপর বের হলো মল থেকে। পাশে চটপটি, ফুচকার দোকান দেখে আরু বলল-
-” খাওয়াবেন না?
-” কি খাওয়াবো?
আরু হাতের ইশারায় দেখিয়ে বলল-
-” ঐ যে ওগুলো।
আরাধ্য আরুর হাত ধরে নিয়ে গেল। ফুচকা ওয়ালাকে বলল-
-” মামা এক প্লেট দেন তো।
-” এক প্লেট কেনো? আপনি খাবেন না?
-” তোর মতন আনহেলদি খাবার আমি খাই না। ডক্টর মানুষ আমি।
-” তাতে কি? ডক্টর দের এসব খাওয়া মানা নাকি?
-” চুপচাপ খা।
-” এই মামা ঝাল বেশি দিবেন। একদম কড়া।
ফুচকা ওয়ালা শুকনা মরিচের সাথে কাঁচা মরিচ ও দিলো। আরু খাওয়া শুরু করলো। পাঁচটা খাওয়ার পর আরু নাকের জল চোখের জল এক হলো। হা হু করলো ঝালে। তবুও খাচ্ছে। আরাধ্য একবার বলল-
-” কি হচ্ছে কি আরু। ঝালে তো চোখ লাল হয়ে গেছে। পানি এনে দিব?
আরু কোনো রকমে বলল-
-” না। আমি ঠিক আছি।
আরাধ্য হাত থেকে ফুচকার প্লেট থেকে রেখে আরু কে টেনে পানির দোকানে নিয়ে গিয়ে পানি খাইয়ে দিল।
-” মানছি ঝাল খেতে পারিস। তাই বলে রাস্তা ঘাটে এভাবে কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল নাকের জল এক করে খাবি? চল তো বাসায় চল।
আরু কে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। বাসায় আসতেই দেখলো আরাফাত আর তার ছেলে কুনাল এসেছে। আরাধ্য তাদের সাথে কথা বলল। আরাধ্য কে দেখতেই এসেছে তারা। আরশি ডাইনিং এ বসে আছে। সন্ধ্যা খাবার খাইয়ে দিচ্ছে। কুনাল একবার আরশির দিকে তাকালো। কিউট মেয়ে। আষাঢ় বাসায় আসতেই আরাফাত আর একটু কথাবার্তা বলে চলে যায়।
রাতের দিকে কনা বসে ছিল রুমে। আচমকা তার বাবার ফোন আছে। ফোন করে জানালো শরীর তার আজকাল অনেক খারাপ। মেয়েটা যেন একটু এসে তার কাছে থাকে। রাত ফিরলে কনা কথাটা বলল। রাত সব শুনে বলল-
-” আগেই বলেছিলাম বাবা কে এখানে থাকতে। এক একটা লোক না ঠিক মত খাচ্ছে আর না ঠিকমতো নিজের যত্ন নিচ্ছে। তুমি আর আয়ুশ যাও কয়েক টা দিন থেকে বাবা কে নিয়ে আসো।
-” আব্বা আসবে বলে তোমার মনে হয়? আগেই তো আসে নি। মেয়ের বাসায় এসে থাকবে এটা যেন তার কাছে লজ্জার বিষয়।
-” কিসের মেয়ের জামাই? আমি তার ছেলে বলেছি না? আচ্ছা আমিও যাব। বাবা কে বুঝিয়ে নিয়ে আসবো। এখানে থাকলে ভালো থাকবে। তুমিও দুশ্চিন্তা মুক্ত হবে।
কনা এসে রাত কে জড়িয়ে ধরলো। কানের লতিতে চুমু খেয়ে বলল-
-” ইউ আর দ্য বেস্ট হাসবেন্ড রাত।
-” আমার চেয়েও বেস্ট হাসবেন্ড এই পৃথিবীতে আছে সোনা।
-” তাতে আমার কি? আমার কাছে তো তুমিই বেস্ট।
-” ওকে মাই লাভলি ওয়াইফ। আয়ুশ কোথায়?
-” কোথায় আবার নিজের রুমে।
-” আমি কিছু ভেবেছি ওকে নিয়ে।
-” কি?
-” ভাবছি বাহিরে পাঠিয়ে দিব।
-” এ্যাই কি বলছো। আমি থাকবো কি করে আয়ুশ কে ছেড়ে।
-” ছেলেকে তো মানুষ করতে হবে।
-” কেনো ও কি গরু নাকি?
-” গরুর চেয়ে কম কিছু তো না। সারাদিন রাত আরশি আরশি করে নাম জপে।
-” বড় হলে ঠিক হয়ে যাবে।
-” কচু ঠিক হবে। আরো বেশি বিগড়ে যাবে।
-” গেলে যাবে। আরশি কে এনে দিব।
-” আমার ভাইয়ের খেয়ে দেয়ে তো কাজ নেই এমন এক ছেলের কাছে তার মেয়ে দিবে।
বাদ দাও এসব। এই বছর টাই দেখবো। তারপরও যদি দেখি ওর কোনো উন্নতি হচ্ছে না তাহলে সোজা বাহিরে পাচার করে দিব। ওখানেই থাকবে।
পরের দিন রাত,কনা,আয়ুশ রাজশাহী আসলো। কনার বাবার হার্টে সমস্যা। বাসায় মেড সব কাজ করে দিলেও তিনি টাইম টু টাইম কিছু খাবেন না। একা মানুষ সারাদিন রুমেই পড়ে থাকে। রিটায়ার করেছে বছর এক হলো। রিটায়ার হওয়ার পর পেনশন পান ব্যাংক থেকে। সেটা দিয়েই চলেন। কনা বাবার বাড়িতে এসে বাবার সাথে কথা বললো। কিছু সময় অতিবাহিত করে বাবার পছন্দের সব রান্না করলো। তারপর নিজের হাতে বাবাকে খাইয়ে দিলো। খাওয়ার শেষে রাত কনার বাবার হাত খানা ধরে বলল-
-” আমাকে ছেলে হিসেবে কি মেনে নিতে পারেন নি বাবা?
কনার বাবা সাথে সাথে বলে উঠল-
-” এ কথা কেনো বলছো বাবা? তুমি তো আমার ছেলের মতই।
-” ছেলের মতন কিন্তু ছেলে বোধহয় হতে পারি নি তাই না?
-” কেনো বাবা কি হয়েছে?
-” যদি ছেলে মানতেন তাহলে ছেলের কথাটা রাখতেন। আপনাকে বলেছি আমাদের সাথে থাকতে। আপনি কেনো থাকছেন না?
-” এটা হয় না বাপ। লোকে কি বলবে।
-” লোকের ধার কবেই বা আমি ধেরেছি। লোকের টা তো আমি খাই না। আপনি এবার আমাদের সাথে ফিরবেন। আরুর বিয়েতে আসতে অব্দি পারলেন না।
-” কিন্তু..
-” কোনো কিন্তু নয় নানু ভাই। আমার ওখানে খেলার কেউ নেই। তুমি চলো। তুমি আমি ঘুরবো৷ ছাঁদে খেলবো। চাচ্চুর বাসায় যাব। আরশির সাথে পরিচয় করিয়ে দিব।
-” আচ্ছা দাদু ভাই। যাব।
আয়ুশ জড়িয়ে ধরলো নানা কে৷ রাত টা সে নানার সাথে ঘুমালো। নানা তার অনেক গল্প বলেছে রাতে। দুদিন থাকলো তারা রাজশাহী তারপর চলে আসলো ঢাকা কনা তার বাবাকে সাথে নিয়ে।
আরু নানা আসার কথা জেনে এসে দেখা করে গেছে। আজ সন্ধ্যায় গায়ে হলুদ সেজন্য বেশিক্ষণ থাকলো না। বাড়ি ফিরে লেহেঙ্গা টা পড়ে সেজে নিলো। হাল্কা মেক-আপ করলো। চুল গিলে স্ট্রেটনার দিয়ে স্ট্রেট করে মাঝখানে সিঁথি করে টিকলি পড়লো। কানে দুল নিল আর গলায় একটা হার পরে নিলো। দু হাত ভর্তি চুড়ি পড়ে নি। শুধু তিন করে মোটা চুড়ি পড়েছে। আয়নায় একবার দেখে নিলো। জোশ লাগছে তাকে। আরাধ্য রেডি হয়ে বসে আছে আধঘন্টা আগেই। ছেলেরা তো ৫ মিনিটেই রেডি হয়ে যায়। আরাধ্য রুমে আসলো। দরজায় শব্দ করে বলল-
-” ম্যাডাম আপনার হয়েছে? গায়ে হলুদে আমরা যাচ্ছি. হলুদ টা কিন্তু আপনার নয় ম্যাডাম। তাই এত না সেজে চলুন।
কথাটা বলেই মাথা উচু করে আরুর দিকে তাকাতেই আরাধ্যর হার্ট বোধহয় কিছুক্ষণ কার্যক্রম করা বন্ধ করে দিল। মাস্টার্ড কালারের লেহেঙ্গায় জাস্ট ওয়াও লাগছে৷ কানে শুধু একটা ফুলের অভাব। আরু আরাধ্য কে নিজের দিকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে লজ্জায় বলে উঠল-
-” কেমন লাগছে আমায়? সুন্দর তাই না?
আরাধ্যর হুঁশ ফিরে। মুখ বেকিয়ে বলে-
-” গতকাল রাতে এজন্য নাইট ক্রিম ইউজ করছিলি তাই না? এজন্য মুখ এত গ্লো করছে।
-” আশ্চর্য নাইট ক্রিম কে কেনো টানছেন? আমি কি এখনও ওটা মেখে আছে নাকি। একটু প্রশংসা করুন আমার।
-” করলাম তো৷
-” কখন করলেন?
-” ঐ যে বললাম চেহারা গ্লো করছে। এবার চল।
-” সরেন যাব না। এটা কোনো প্রশংসা হলো? আপনি তো রীতিমতো আমায় ঠেস মেরেছেন।
-” আচ্ছা চল রে অনেক সুন্দর লাগছে তোকে।
আরু আয়নায় নিজেকে দেখে বলল-
-” আসলেই?
-” হুমম।
-” তাহলে যাওয়াই যায়। চলুন।
আরাধ্য আরশি কে আনতে চেয়েছিল। কিন্তু শরীর ভালো না বলে নিয়ে আসে নি আর। সন্ধ্যাও বারন করেছে৷ শরীরে জ্বর আরশির। আরাধ্য গাড়ি টা নিয়ে আগে একটা ফুলের দোকানে আসে। আরু ভ্রু কুঁচকায়। অবাক হয়ে বলে-
-” গায়ে হলুদে ফুল! ফুল টুল কম পড়েছে নাকি ও বাড়িতে?
-” তোর মাথা কম পড়েছে। চুপ থাক দেখি। হলুদ,গোলাপ আনবে নাকি,সাদা,নাকি লাল?
-” কিসের জন্য?
-” পছন্দ মতন একটা বল তো বলদ।
-” হলুদ আনেন।
তোর প্রেমে উন্মাদ আমি পর্ব ১৭
আরাধ্য ফুলের দোকানে গিয়ে হলুদ কালারের একটা গোলাপ কিনে আনলো। গাড়িতে এসে আরুকে নিজের দিকে তাকাতে বলল৷ আরু তাকালো। আরাধ্য যত্নসহকারে ফুল টা কানে গুঁজে দিয়ে বলল-
-” নাউ পারফেক্ট। ফুলের সাথে আরেক ফুল।
আরু লজ্জা পেলো। সেটা দেখে আরাধ্য বলল-
-” ওপ্স সরি মিস্টেক। কাটার সাথে তার হলুদ গোলাপ ফুল।