পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩১
সাদিয়া আক্তার
ফজরের আজানের ধ্বনি কানে যেতেই নড়েচড়ে ওঠে পুনম ঘুম ঘুম চোখে এদিক ওদিক তাকাতেই নিজের অবস্থান বুঝে অবাক হয়।
কাল রাতে চন্দ্রের সাথে চিঠিতে কথা বলতে বলতে কখন যে বারান্দায় ঘুমিয়ে গেছে বলতে পারবে না।।
পুনম ঘরে এসে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে পাঁচটা তিন বাজে পুনম আর কিছু না ভেবে ওয়াশরুমে যায় ওযু করে নামাজে দাড়ায়। নামাজ পরে ঢুলতে ঢুলতে আবার ঘুমিয়ে যায় ঘুম পাগলী পুনম যে অর্ধ রাত জেগে চন্দ্রের সাথে কথা বলেছে তাই ঢের।
ওদিকে চন্দ্র ঘুমিয়ে আছে ঘুমের মধ্যেও প্রশান্তি চেহারা বিরাজমান। শিহাব দশটার দিকে ঘুম থেকে ওঠে চন্দ্রকে বারান্দায় ঘুমাতে দেখে অবাক হয় সবচেয়ে বেশী অবাক হয় এখনো ঘুমাতে দেখে চন্দ্র কখনও আটটার উপরে ঘুমায় না সে যতরাতেই ঘুমাক।।
শিহাব ভয় পেলো আবার জ্বরটর এলো নাকি এই ছেলের জ্বর ভয়ানক। বারান্দায় গিয়ে শান্ত চন্দ্রের গায়ে হাত দিয়ে দেখল নাহ কোনো জ্বর নেই আর মুখটাও বেশ শান্ত।
উঠে দাড়িয়ে যায় এই ব্যাটা যদি দেখে তাকে ধরেছে শিহাব তাহলে কুরুক্ষেত্র বানিয়ে ছাড়বে।।
— চন্দ্র এই চন্দ্র উঠ এতোক্ষণ ঘুমাচ্ছিস কেনো??
নড়েচড়ে ওঠে চন্দ্র ঘুম ঘুম চোখে শিহাবের চেহারা নজরে আসতেই লাফ দিয়ে ওঠে দ্রুত ওয়াশরুমে যায়। যেতে যেতে শিহাবকে বলে — দাড়িয়ে আছিস ক্যান গাধা আজকে ভাইবা আছে মনে নাই বারোটার দিকে।
শিহাব ও তড়িঘড়ি করে রিশানকে উঠিয়ে আরেকটি বাথরুমে যায়। তিনজন একেবারেই গোসল করে রেডি হয় কাল তারা পোটলা পুটলি একসাথে নিয়ে এসেছে এখানে কয়েকদিন থাকবে সেই জন্য চন্দ্রর কথা শুনে শিহাব ভেবেছে কোনো পার্টি টার্টি হবে তবে সেগুরে বালি দিয়ে রিশান নিজের মতো ফোনে ব্যস্ত আর চন্দ্র কি হেলিকপ্টার গুতাগুতি করল তাই রাগে দুঃখে শিহাব ঘুমিয়ে পরেছে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এগারোটার দিকে চুলে হাত বুলাতে বুলাতে বাসায় ঢুকে চন্দ্র। পুনম সোফায় বসে টিভি দেখছে চন্দ্র সেদিকে একবার তাকিয়ে টেবিলে বসে গম্ভীর স্বরে বলল — খেতে দে,,,,,
চন্দ্রের গমগমে স্বরে পুনম তার দিকে তাকায় দেখে চন্দ্র টেবিলে বসে ফোন দেখছে তাই বিরক্তি নিয়ে উঠে চলে যায় রান্নাঘরে তার পরপরই শিহাব রিশান এসে হাজির। রিশান চিল্লিয়ে বলল — পুনম আমরাও আছি,,,
পুনম হটপটের থেকে রুটি বের করে প্লেটে নিয়ে ছোট বাটিতে ভাজি নেয় আরেকটা বাটিতে ছোলার ডালের ভুনা নেয়। দুই হাতে দুই প্লেট নিয়ে বের হতে চন্দ্র এগিয়ে ওর হাতের প্লেট গুলো নিয়ে নেয়। ঐদুইটা শিহাব ও রিশানের সামনে রেখে নিজের জায়গায় বসে পুনম লাষ্ট প্লেট নিয়ে আসে চন্দ্রের সামনে রাখে। চন্দ্র বিনা বাক্যে খাওয়া শুরু করে পুনম পাশ থেকে সরতে নিলে। চন্দ্র মাথা নিচু করেই বলে সেখানে বসতে পুনমও বিরক্তি নিয়ে বসে চন্দ্র তাকায় পুনমের বিরক্তিকর চেহারাই মনে মনে হাসে এই মেয়েটাই কালকে তার সাথে বেশ সহজ হয়ে চিঠিতে কথা বলেছে এখন দেখো কি বিরক্ত। মনে হচ্ছে দুনিয়ার সবচাইতে কঠিন কাজ দিয়েছে তাকে।।
খাওয়া দাওয়া শেষে চন্দ্র হাত ধোয়ার জন্য পানি আনতে বলে পুনম তাই করে পানি এনে দিতে চন্দ্র ইশারা করে ঢেলে দিতে । পুনম পানি ঢালতে শুরু করলে চন্দ্র হাত ধোয়া শুরু করে বোলে। হাত ধুয়ে পুনমের ওড়নায় হাত মুছতে মুছতে বলে — তুই খুব ভালো বউ হবি,,, শেষে বিড়বিড় করে বলে
— আমার বউ আলীর জোহরা হবি তুই,,,,
— কি বললেন??
— হু,, মা চাচী কই??
— বড় চাচী আম্মুকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে গেছে আর মুক্তি আপু কলেজে,,
— পুনম বইনা এককাপ চা দিবি
— অবশ্যই দিব শিহাব ভাইয়া তুমি বসো আমি এখনই আনছি,,, রিশান ভাইয়া তুমি খাবে
রিশান আড়মোড়া ভাঙে — দিলে ভালোই হয়,,,,
চন্দ্র দাড়িয়ে দেখল চন্দ্রকে কিছুই জিজ্ঞাসা করল না চন্দ্র ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইল শিহাব ও রিশানের দিকে শিহাব রিশান মিটিমিটি হাসছে।
কিছুক্ষণ পর পুনম শিহাব ও রিশানের হাতে চায়ের কাপ ধরিয়ে দিয়ে চন্দ্রের হাতে কফির মগ দিতে চন্দ্র শিহাব রিশানের দিকে তাকিয়ে ঠোট বাকায়।
শিহাব ভেংচি মারে রিশান হেসে ওঠে। হঠাৎই রিশানকে হাসতে দেখে পুনম অবাক হয় — কি হয়েছে ভাইয়া??
— হু কিছু না
কোনো রকম হাসি সামলে বলে। — চল দেরী হচ্ছে
বলেই চন্দ্র বেড়িয়ে যায় তার পিছু পিছু শিহাব রিশান ও বেড়িয়ে যায়।
আজ ভ্যাপসা গরম পরেছে তাই চন্দ্র বাসায় এসে আগে গোসলে ঢুকেছে। শাওয়ারের নিচে দাড়িয়ে ভাবে আজ তার জোহরাকে জিজ্ঞাসা করবে চন্দ্রকে দেখতে না পারার কারণ।
সন্ধ্যায় পুনম পড়তেছিল তখনই হঠাৎই ফোনটা ঝংকার দিয়ে বেজে ওঠে পড়ার সময় হঠাৎই ফোন আসায় পুনম বিরক্ত হয় ফোন হাতে নিয়ে দেখে অচেনা নাম্বার। না উঠিয়ে আবার রেখে দেয়। ফোনটা বাজতে বাজতে কেটে যায়। ফের বাজে এরকম পরপর তিনবার হলে চতুর্থবারে রিসিভ করে
— হ্যালো আসসালামু আলাইকুম
অপর পাশ থেকে কোনো কথা আসে না স্রেফ নিঃশ্বাসের শব্দ শোনা যায়। অনেকবার পুনম হ্যালো হ্যালো বললেও কোনো কথা না আসায় পুনম ফোন কাটে।।
ফোনটা পাশে রাখে আবার পড়ায় মনোযোগ দিতে নিয়েও পারে না আজ সারাদিনে শের “এ আলী সাহেবের সাথে কথা হয়নি। তাই মনটা কেমন করছে ভালো লাগছে না তার তাই বারান্দায় যায় পুনম।
খোলা আকাশের বুকে থাকা দ্বাদশের চাদেঁর দিকে তাকিয়ে আছে আজকের চাদঁটা বেশ উজ্জল মনে হচ্ছে পূর্ণিমা। হঠাৎই এই সময় হেলিকপ্টার ড্রোন ল্যান্ড করে তার বারান্দায়।
পুনম হাটু গেড়ে বসে বলল — কি ডিজিটাল কবুতর আজ সারাদিন পর বুঝি শের “এ আলী সাহেবের মনে পরল।
পুনম চিঠি খুলল — তুমিময় তৃষ্ণায় তৃষ্ণার্ত আমি এর সুরাহা কি বলতে পারো এতো জ্বালাও কেনো??
— যে নিজেই দহনে জ্বলে পুড়ে অঙ্গার তাকে আর কি জ্বালাব
ঘরে বসে পুনমের চিঠি পড়ে ঠোট কামড়ে হাসে চন্দ্র হ্যা পুনমের কথাই ঠিক চন্দ্র তো নিজেই জ্বলে পুড়ে অঙ্গার তাকে আর কি জ্বালাবে। চন্দ্র এবার একটা ধূসর রঙ্গা পেপার নেয় গুটিগুটি অক্ষরে লিখে — সেই দহন যে জোহরা বিহীন মিটবে না। যেদিন আমার জোহরা এই বুকে মাথা রাখার লাইসেন্স পাবে সেদিনই এই দহনে প্রলেপ পরবে।
চন্দ্রের চিঠি পড়ে বুকে জড়ায় পুনম কেউ তাকে এতোটা ভালোবাসে। আচ্ছা তার কপালে এতো ভালোবাসা সইবে তো???
— আপনি কে???
পুনমের হঠাৎই প্রশ্নে চন্দ্র থমথমে থাকে কিছুক্ষণ ফের ঘুরিয়ে পুনমকে চিঠি লিখে — আচ্ছা চন্দ্র কে??
পুনম ভ্রু কুচকায় চন্দ্রের চিঠি দেখে এই লোকটা চন্দ্রকে চিনে কিভাবে?? পুনম উত্তরে লিখে
— চন্দ্র আমার চাচাতো ভাই কেনো আপনি তাকে চিনেন??
চন্দ্র মনে মনে হাসে চন্দ্রকে জিজ্ঞাসা করছে চন্দ্রকে চিনে কিনা। চন্দ্র জবাবে লিখে — হ্যা খুব চিনি তুমি কিন্তু চন্দ্রর থেকে দূরে থাকবে বলা তো যায়না কখন ক্রাশড হয় যাও,,,,,
চন্দ্রের চিঠি পড়ে পুনম নাক কুচকে নেয়। লিখে
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩০
— শের “এ আলী সাহেবের ঐ ব্যাটা তিতা করলা সেজে গুজে মেকআপ করে আমার সামনে বসে থাকলেও তার দিকে আমি ফিরে তাকাই না। আমি বুঝি না ঐ তিতা করলার জন্য মেয়েরা এতো পাগল কেনো আমার তো একদমই ইন্টারেষ্ট নাই।
পুনমের এমন কথায় চন্দ্রের বেশ চিন্তা হয় এই মেয়ে সত্যিটা জানলে তুলকালাম বাধিয়ে ফেলবে ভেবেই ঢোক গিলল চন্দ্র। সারা দুনিয়ায় ড্যামকেয়ার ভাবে চলা চন্দ্র একটা পুচকে মেয়েকে ভয় পাচ্ছে যে কিনা তার থেকে সাত আট বছরের ছোট।