আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩
তানহা ইসলাম বৈশাখী

প্রার্থ সিঁড়ি থেকে নেমে পকেটে হাত দিয়ে সোজা চলে গেলো মায়ের সামনে। এমন ভাবে হেটে গেলো যেন এখানে তার মা ছাড়া আর কেউ নেই। মায়ের সামনে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে একহাত বের করে তার দিকে এগিয়ে দিলো। নরম কন্ঠে বললো।
“-মা এসো। তোমাকে রুমে দিয়ে আসি। একটু রেস্ট করবে চলো।
পূর্নিমা বেগম হাত না বাড়িয়ে বললো।
“-এখানে ঠিক আছি তো বাবা। ওরা এসেছে একটু কথা বলি।
প্রার্থ নাকচ করে বললো।
“-না মা। ডাক্তার তোমাকে বেশি কথা বলতে বারন করেছে। তুমি ঘরে চলো রেস্ট নিবে। এসো।
প্রার্থ নিজে ধরেই উঠালো তাকে। এক হাতে তার কাধ জরিয়ে ধরলো। অন্য হাতে মায়ের হাতটাকে আলতো হাতে ধরে নিয়ে গেলো রুমে।
প্রার্থ যেতেই হৃদয় বললো।

“-আন্টিকে নিয়ে গেলো কেন?
“-বড় আম্মুর শরীরটা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না। এজন্য ফুল বেড রেস্ট করতে বলেছে। এজন্য হয়তো নিয়ে গেলো।
পুষ্পর কথায় মাথা নাড়িয়ে বললো।
“-হুম তাহলে রেস্ট করাই বেটার। তুমি দাঁড়িয়ে আছো কেন? বসো। তোমাদের দুজনের তরফ থেকে আজকে ট্রিট নেব আমরা।
পুষ্প মুখে জোরপূর্বক হাসি টেনে প্রিয়ার পাশে বসলো।
প্রার্থ পূর্নিমা বেগমকে বেডে শুয়িয়ে দিয়ে উপরে কাথা দিয়ে দিলো। তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললো।
“-তুমি একটু রেস্ট নাও। আমি পরে এসে তোমার সাথে গল্প করে যাবো।
প্রার্থ উঠে যেতে নিলে সে আটকে দিলো। হাত ধরে বললো।
“-শোন বাবা।
“-হ্যা বলো।
তিনি উঠার চেষ্টা করলেন দেখে প্রার্থ তাকে ধরে উঠিয়ে দিলো।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“-কিছু বলবে?
প্রার্থর দুহাত ধরে কাতর স্বরে বললো।
“-পুষ্পকে কখনো কষ্ট দিস না বাবা। আমার মেয়ে নেই ওরা দুই বোনই আমার মেয়ে। তোর বাবার ইচ্ছে ছিলো পুষ্পকে তোর বউ হিসেবে দেখা। কিন্তু উনি তো দেখতে পারলেন না। তবে উনার স্বপ্নটা আমি পূরন করতে পেরেছি। আমি জানি বিয়েটা তোর আর পুষ্পর অমতে হয়েছে। এখন বিয়েটা মানতে কষ্ট হতে পারে দুজনেরই। তবে পুষ্প কিন্তু পুরো চেষ্টা করছে সম্পর্কটা মেনে নিতে। শুনেছি তিন কবুলের অনেক জোর। দেখিস আল্লাহ তায়ালা তোদের সুখী করবে। তুই ওকে কষ্ট দিস না বাবা।
মায়ের আরজিতে শুধু মুখ খুলে ” হুম” টুকু উচ্চারন করলো। আর কিছু না বলেই বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।
ড্রয়িং রুমে এসে সোজা গিয়ে একটা সোফায় বসে পড়লো। পায়ের উপর পা তুলে দিলো। মাথাটা এলিয়ে দিলো সোফার গায়ে। দু চোখ বন্ধ করে সবার উদ্দেশ্যে বললো।

“-কি চাই? এখন কেন এসেছিস সবকটা?
রকি সোজা হয়ে বসে বললো।
“-এটা কেমন কথা ভাই? কেন আসবো আবার? তোর বিয়ের ট্রিট নিতে এসেছি। একে তো বিয়ে করছিস সেটা বলিসনি পর্যন্ত। অন্তর কাছ থেকে শুনে ছুটে এসেছি কাল তার ওপর এত্ত সাদামাটা বিয়ে। ট্রিট তো আমাদের চাই-ই।
হৃদয় বললো।
“-এত কিপ্টে কবে হলি বন্ধু? ব্যাচেলার পার্টিটা অব্দি দিলি না৷ আজ পুষ্প মানে ভাবির হাতের রান্না না খেয়ো যাচ্ছি না।
প্রার্থ একইভাবে চোখ বুজে সোফায় হেলে আছে। কার্তিক বলে উঠলো।

“-তুই যে বিয়ে করেছিস। একটা কাক পক্ষিও জানে না। বিয়ের ব্যাপারটা সবার সামনে আনছিস না কেন?
প্রার্থর সোজা কথা।
“-প্রয়োজন মনে করছি না।
“-কিন্তু কেন প্রার্থ? তুই দেশের পরিচিত মুখ। সবাই চেনে তোকে। তাহলে সবাইকে জানাতে ক্ষতি কি?
এবার তীর্যক চোখে তাকালো অর্নবের দিকে।
“-যেখানে আমার সম্মতি নেই। সেখানে আমার কোন ইনট্রেস্ট নেই। দেশের মানুষ জেনে কি করবে? উদ্ধার করবে আমাকে?
পুষ্প এখানেই বসে ছিলো। হঠাৎ উঠে দাঁড়িয়ে বললো।

“- আপনার জন্য কফি আনবো?
এমন সময় পুষ্পর এমন কথা আশা করেনি কেউ। প্রার্থ সরু চোখে তাকিয়ে বললো।
“-চেয়েছি তোর কাছে?
“-আমি কখন বললাম চেয়েছেন? আমি তো জিজ্ঞেস করলাম, কফি আনবো কিনা?
প্রার্থ কপালে দুই আঙ্গুল ঘষে বললো।
“-আজকাল বড্ড বেশি কথা শিখেছিস।
“- আপনার থেকেই শেখা। অল ক্রেডিট গোস টু ইউ।
প্রার্থ বাকা হেসে বললো।
“-থ্যাংক’স।
পুষ্পও একই ভাবে বললো।
“-ওয়েলকাম।
এদিকে সবাই বসে বসে দুজনের নিরব যুদ্ধ দেখছে।
প্রার্থ সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো।
“-তোরা কি খাবি বল রুবি খালা বানিয়ে দেবে। (কাজের বুয়া)
রকি উঠে দাঁড়িয়ে বললো।
“-আজকে কি খালার হাতের রান্না খেতে এসেছি নাকি? আজ পুষ্পরানীর রান্না খাবো। কি বলো পুষ্প?
পুষ্প হেসে বললো।

“-ঠিকাছে কি খাবেন বলুন? আজকের ট্রিট আমার তরফ থেকে।
“-এইত বলে দিলে আমাদের ভাবির মতো একটা কথা। তুমি বরং চট জলদি বিরিয়ানি করে ফেলো। তোমার হাতের বিরিয়ানি খাবো আজ।
“-ঠিকাছে আমি এক্ষুনি বসিয়ে দিচ্ছি।
পুষ্প প্রিয়াকে নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেলো। কিন্তু প্রিয়ার এখান থেকে যেতে ইচ্ছে করছে না। তার আরো কিছুক্ষন বসে বসে হৃদয় ভাইকে দেখতে ইচ্ছে করছে। কি সুন্দর কোকড়া চুলগুলো হাত দিয়ে নাড়াচারা করে। কি সুন্দর করে কথা বলে। প্রিয়া বারবার মুগ্ধ হয় ছেলেটাকে দেখে। এতক্ষণ একটা কথাও বলেনি শুধু হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো। এখন বোনের সাথে রান্নাঘরে যেতে হচ্ছে বলে মুখটা নিমিষেই ভার হয়ে গেলো।
প্রার্থ অর্নবদের উদ্দেশ্য বললো।

“-তোরা বোস আমি আসছি।
অর্নব বললো
“-কোথায় যাবি?
“-মিউজিক রুমে। কাজ আছে একটু।
রকি উঠে এসে পেছন থেকে গলা জরিয়ে বললো।
“-এখন মিউজিক রুমে যাওয়া যাবে না বন্ধু। এখন আমরা যাবো ছাদে।
“-ছাদে কেন?
“-একটু পার্টি করবো। চল তুই। গান আজ ছাদেই হবে। আজ কত সুন্দর চাঁদ উঠেছে দেখেছিস? ছাদে বসে চাদ দেখবো আর গলা ছেড়ে গাইবো।
“-মাথা ঠিক আছে তোর? কাল প্রোগ্রাম আমাদের। ছাদে বসে গান গেয়ে গলা খারাপ করিস না। মিউজিক রুমে চল।
হৃদয় এসে বললো।
“-আরে ধুর গলার কিছু হবে না। চল তুই। আজ ছাদেই গাইবো। তোদের পাশের বাড়িটায় অনেক সুন্দর সুন্দর মেয়েরা আছে। যদি দু একটা পটাতে পারি। ছাদেই যাবো আমরা চল।
কার্তিক হৃদয়ের পেটে কুনুই দিয়ে গোঁতা দিয়ে বললো।
“-শালা মেয়ে ছাড়া কিছু বুঝিস না নাকি? ওখানে তোর ভাবি, বেয়ান ও থাকবে। ভাওতাবাজি করলে থাপড়ে গাল লাল করে দেবো।
পুষ্প, প্রিয়ার কথা শুনে প্রার্থ শক্ত কন্ঠে বললো।
“-ওদের যাওয়ার কোন প্রয়োজন নেই। আমরাই ঠিকাছি।
অর্নব বললো।
“-ঠিকাছে। এখন চল সবাই। হৃদয় ওকে ছাদে নিয়ে যা। আমি আর কার্তিক গিটার নিয়ে আসছি।

সন্ধ্যার আযান পেরিয়েছে অনেকক্ষণ হলো। কাদা মাটি দিয়ে মাখিয়ে মাত্র বাড়িতে ফিরলো অন্ত, প্রান্ত। দুজনেই নোংড়া কাদায় মাখো মাখো হয়ে আছে। বাড়িতে ঢুকে দেখলো ড্রয়িংরুম একদম ফাকা। এসময় ড্রয়িংরুম খুব একটা ফাকা থাকে না। বিশেষ করে পুষ্পরা এখানে থাকলে তো ড্রয়িংরুম ফাকা হয়ই না। প্রিয়া সারাদিন বসে বসে টিভিতে কার্টুন দেখবে। ফাকা ড্রয়িংরুম পেরিয়ে যেতেই শুনতে পেলো রান্নাঘরে টুকটাক আওয়াজ হচ্ছে। অন্ত, প্রান্ত রান্নাঘরের সামনে এসে দাঁড়াতে দেখলো ভেতরে পুষ্প এবং রুবি খালা মিলে কাজ করছে।
প্রান্ত পুষ্পকে ডেকে বললো।
“-ফুল আপু কি করছো?
পুষ্প পেছনে ঘুরে ওদের দেখেই চমকে উঠলো।
“-একি! তোরা দুজন এভাবে কাদায় মাখোমাখো হয়ে আছিস কেন?
অন্ত বললো।

“-মাঠে অনেক কাদা ছিলো এজন্য খেলতে গিয় মেখে গেছি। বাড়ি এত ফাকা কেন?প্রিয়া, প্রার্থ ভাই ওরা কোথায়।
“-সবাই ছাদে আছে। হৃদয় ভাইয়ারা এসেছে। সবাই আড্ডা দিচ্ছে। তোরা গোসল সেরে ওপরে চলে যা।
হৃদয়ের কথা শুনে অন্ত প্রান্ত কে রেখেই হনহন করে চলে গেলো নিজেকে পরিষ্কার করতে। হৃদয় নামটা শুনলেই ওর ভালো লাগে না। একদমই সহ্য হয় না হৃদয় ভাইকে।

গিটারে টুংটাং শব্দ তুলছে প্রার্থ। কালো রংয়ের সাদামাটা দেখতে একটা গিটার। এটা তার প্রিয়। গিটারটা ইউসুফ চৌধুরী দিয়েছিলো প্রার্থ জন্মদিনে। সেই থেকে এটা তার প্রিয় একটা অংশ। বাবার স্মৃতি এই গিটার।
ছাদে চাদর বিছিয়ে গোল হয়ে বসে আছে সকলে। মিউজিকের ইন্সটুমেন্ট তো অনেকই আছে তবে ছাদে শুধু আনা হয়েছে দুটো গিটার। একটা প্রার্থর হাতে অন্যটা অর্নবের হাতে। অর্নব প্রথমে গান শুরু করলো। জেমসের গান দিয়েই শুরু হলো আসর। গলা ছেড়ে গাইলো।
❝তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম, কি দোষ দিবি তাতে?
বন্ধু তোরে খুজে বেড়াই, সকাল- দুপুর – রাতে।
(এবার সবাই মিলে সুর ধরলো)
আগুন জেলেও পুড়লাম আমি, দিলাম তাতে ঝাপ
তোর আমার প্রেম ছিলোরে বন্ধু, ছিলো পুরোটাই পাপ
আগুন জেলেও পুড়লাম আমি, দিলাম তাতে ঝাপ
তোর আমার প্রেম ছিলোরে বন্ধু, ছিলো পুরোটাই পাপ
তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম, কি দোষ দিবি তাতে?
বন্ধু তোরে খুজে বেড়াই সকাল দুপুর রাতে। ❞

পুরো গান শেষ করে থামলো সবাই। সবাই বলতে প্রার্থ বাদে বাকি সবাই। সকলে অর্নবের সাথে তাল মিলিয়ে গান ধরলেও প্রার্থ একটা টু শব্দ করেনি। পকেট থেকে সিগারেট বের করে ঠোঁটদ্বয়ের মাঝে পুরে নিলো। দুপকেট হাতরে বেড়ালো কিন্তু ম্যাচের দেখা মিললো না। সিগারেটটাকে ঠোঁটের ভাজে ধরেই বললো।
“-হৃদয় ম্যাচ দে।
হমদয়ের পকেটে সবসময়ই সিগারেট, ম্যাচ থাকে। ছেলেটা ভীষন সিগারেট প্রেমি। পকেট থেকে ম্যাচ বের করে দিয়ে নিজেও একটা সিগারেট নিলো। প্রিয়া এগুলো দেখে চোখমুখ কুচকে বললো।
“-আপনারা কি শুরু করলেন? প্রার্থ ভাই তুমি সিগারেট কেন খাও? বুবু কিন্তু সিগারেট খাওয়া একদম পছন্দ করেন না।
প্রার্থ সিগারেটের মাথায় আগুন লাগিয়ে ম্যাচটা হৃদয়ের দিকে দিলো। গাল থেকে করে এক গাদা ধোয়া বের বললো।

“-হো কেয়ার’স
এমন সময় ছাদে এসে দাড়ালো অন্ত প্রান্ত। প্রান্ত দৌড়ে এসে প্রার্থর কাছে বসলো। প্রান্তকে দেখে সে আধ খাওয়া সিগারেটটা ফেলে দিলো।
অন্ত এসে প্রিয়াকে হৃদয়ের পাশে বসতে দেখে নিমিষেই রেগে গেলো। শান্ত শিষ্ট ছেলে হুট করে বলে উঠলো।
“-তুই এখানে কেন? পড়ালেখা নেই তোর?টেস্টে করিস ফেল। এস এস সি তে পয়েন্ট কত তোর?পড়ালেখা বাদে এখানে বসে আছে ফেল্টু কোথাকার।
প্রিয়া লজ্জায় মূর্ছা যাচ্ছে। লজ্জায় কেদে ফেলার যোগাড়। এতগুলো মানুষের মধ্যে কি এই কথাগুলো বলার খুব প্রয়োজন ছিলো? এসব ভেবে মাথায় রাগ চরে বসলো। ফুঠে উঠে বললো।
“-তোমার কি তাতে অন্ধের বাচ্চা? নিজে পড়ালেখায় ভালো বলে বেশি ভাব করো? আমাকে নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না। আমি এখানেই থাকবো।
অন্তর কিছু বলার আগে প্রার্থ গম্ভীর গলায় বললো।

“-থাম দুজন। বাচ্চাদের মতো সবসময় ঝগড়া করিস কেন? অন্ত প্রিয়ুকে থাকতে দে। তুই বোস।
অন্ত মুখ কালো করে চুপচাপ বসে পড়লো। হৃদয় আর রকি বলে উঠলো।
“-ধুর এভাবে গান গাইতে মজা লাগছে না। চল ইন্টারেসটিং কিছু খেলি।
“-হুম। ঠিক বলেছিস। আচ্ছা শোন আমরা মিডেলে একটা বোতল রাখি। ওটা ঘুরালে যার দিকে থামবে তাকে গান গাইতে হবে। এটা করলে কেমন হয়।
কার্তিক বললো।

“-হ্যাঁ চলে। কিন্তু ভাবিকে ছাড়া মজা লাগবে না। ভাবিকে ডেকে আন কেউ।
হৃদয় অন্তকে আদেশ করে বললো।
“-অন্ত যা তো পুষ্পকে ডেকে আন।
অন্ত হৃদয়ের প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে প্রিয়াকে বললো।
“-ফেল্টুস যা পুষ্প আপুকে ডেকে আন।
“-তোমাকে বলেছে। তুমি নিয়ে এসো। আমাকে কেন বলছো?
অন্ত চশমা ঠেলে বললো।
“-আমি তোকে বলছি। তুই ডেকে আন।
“-পারবো না।
হৃদয় আবারও বললো।
“-প্রিয়তমা! তুমিই যাও। আপুকে ডেকে আনো
হৃদয়ের কথায় বাধ্য মেয়ের মতো উঠে চলে গেলো পুষ্পকে ডাকতে। এটা দেখে দাতে দাত চেপে বসে রইলো অন্ত।
প্রার্থ কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো ব্যাকব্রাশ করতে করতে বললো

“-তোরা খেল। আমি নিচে যাচ্ছি। ভালো লাগছে না।
রকি ওকে দুহাতে শক্ত করে ধরে বললো।
“-না বন্ধু। আজ এখান থেকে নড়তেও পারবি না। চুপচাপ বসে থাক।
প্রার্থ মুখে ‘চ্ব’ সূচক সব্দ করে বললো
“-ছাড় রকি। আমি ছাড়ালে ব্যাথা পাবি।
রকি ভয়েই ছেড়ে দিলো। ছেড়ে দিয়ে বললো।
“-ঠিকাছে ছাড়লাম। কিন্তু কোথাও যাবিনা তুই। এখানেই বসে থাক।
বাকি সবাইও জোর করলো বসিয়ে রাখার জন্য। বেচারা আর উঠে যেতে পারলো না। বসেই রইলো।
প্রিয়া পুষ্পকে নিয়ে চলে এসেছে। শাড়ী পড়া পুষ্পকে পাকা গিন্নি গিন্নিই লাগছে। কপালের কাছের বেবি হেয়ারগুলো ঘামে লেপ্টে আছে। ফরসা কপালজুরে বিন্দু বিন্দু ঘামের রেখা। সে এসেই বললো।

“-আমাকে কেন ডাকছিলেন? আপনারা খেলুন না। চুলোয় রান্না বসানো আমার।
অর্নব ওর দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বললো।
“-তুমিও বসো লিটেল প্রিন্সেস। রান্না রুবি খালা দেখে নিবে।
সবাই জোর করে বসিয়েই দিলো তাকে। একদম প্রার্থর মুখোমুখি করে বসানো হলো ওকে।
খেলা শুরু করে দিয়েছে। ছোট একটা কোকের বোতল মাঝে রেখে দিয়েছে। প্রথমেই বোতল ঘুরালো হৃদয়। বোতলটা ঘুরতে ঘুরতে একসময় থেমে গেলো। বোতলের মুখ পড়েছে সোজা পুষ্পর দিকে।
প্রান্ত হৈ হৈ করে বললো।
“-ইয়েএএ! ফুল আপু আগে। ফুল আপু, সুন্দর দেখে একটা গান গাও প্লিজ।
পুষ্প হেসে বললো।
“-আগে তুই একটা গা।

“-এমা বোতল তো তোমার দিকে ঘুরেছে। আমি কেন গাইবো। তুমি একটা গাও না ফুল আপু। শোনো আপু প্রার্থ ভাইকে নিয়ে সুন্দর একটা গান গাইবে। তাহলে অনেক রোমান্টিক হবে। তাইনা প্রার্থ ভাই?
শেষ কথাটা প্রার্থর দিকে তাকিয়ে বললো। প্রার্থ চোখ গরম করে তাকাতেই সে নিভে গেলো।
এদিকে বাচ্চাটার কথায় বাকি সবাই হেসে উঠলো। সবাই জোর করলো গান ধরার জন্য। পুষ্প নিজেকে ধাতস্ত করে সোজা তাকালো প্রার্থর দিকে। একভাবে তাকি থেকেই গাওয়া শুরু করলো।

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২

❝তুমিও তো পারতে,
আমারই মতো।
ভালোবেসে মরতে,
প্রতিনিয়ত!
বুঝতে আমি কেমন করে
পুড়ে পুড়ে হয়ে গেছি ছাই
প্রেমের চিঠি চলে গেছে
ভুল ঠিকানায়!
একা কি রাত, একা কি আমি নিরবে
সয়েছি কিজে জালা!
তোমাকে ভালোবাসার
অপরাধে, অপরাধে

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৪