প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১৭

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১৭
মারশিয়া জাহান মেঘ

“এইটাতে সবগুলো ট্যাবলেট মিশিয়ে দেন।”
স্মিতা ওয়েটারকে কথাটি বলেই হাতে ১ হাজার টাকার ৫ টা নোট ধরিয়ে দিলো। তারপর লুকোচুরি করে দ্রুত গতিতে খাবারের টেবিলে ধ্রুবর পাশে বসে পড়লো। আঁধারীনি স্মিতাকে দেখতেই বললো,
“খেতে এসেও এত সাজতে হয় কেন বুঝি না। আচ্ছা, তারা কি খাবার খায়? নাকি লি’প’স্টি’ক খায়।”
ধ্রুব জবাবে বললো,
“স্মিতা লি’প’স্টি’ক খাবে কেন? এইটাতো আমি খাব। এজ আ বয়ফ্রেন্ড হিসেবে।”
“মানুষের আজকাল ল’জ্জা-শরম বলতে নেই।”
“বোনের সামনে আবার কিসের ল’জ্জা।”
আঁধারীনি চুপসে গেল। তারপর কিছু একটা ভেবে বললো,
“শায়ান ভাইয়া, আপনার কেমন মেয়ে পছন্দ?”
“তোমার মতো আঁধার।”
আঁধারীনি শায়ানের হাত ধরলো। ধ্রুবর দৃষ্টি সেদিকেই। আঁধারীনি বললো,
“বিয়ে কখন করছেন শায়ান ভাইয়া?”
“যখন তোমার মতো কাউকে পেয়ে যাব।”
“শায়ান ভা…”

আঁধারীনি অর্ধেক কথায় থেমে গেল। ওয়েটার এসেছে খাবার নিয়ে। তাই এই মুহুর্তে সে আর কিছু বললো না। সবার দিকে ওয়েটার খাবার এগিয়ে দিচ্ছে। আঁধারীনি কোল্ড ড্রিংকসটা খেতে যাবে এমন সময় ধ্রুব বললো,
“এইটা খাস না আঁধার, এতে বি’ষ আছে।”
আঁধারীনি চমকে হাত থেকে গ্লাসটা ফেলে দিলো। তুলতলিয়ে বললো,
“ক্ কি! বি্ বি’ষ!”
ধ্রুব চ’ট করে এগিয়ে গেল আঁধারীনির দিকে। ঝা’প’টে ধরে আঁধারীনিকে। আঁধারীনির একটা সমস্যা আছে। আচমকা কোনো বিস্ময়কর ঘটনায় ওর শ’রী’র কেঁ/পে উঠে। ধ্রুব এইটা অনেক আগে থেকেই জানে। তাই আঁধারীনিকে সঙ্গ দিতে আঁধারীনির কাছে যায় দ্রুত।
“কিছু হয়নি আঁধার, কিছু হয়নি। কুল ডাউন।”
আঁধারীনি হাত গুটিয়ে চুপসে ধ্রুবর বু’কে মাথা রাখলো। ভীত হয়ে মৃদু কাঁ’পছে সে। শায়ান সঙ্গে সঙ্গে উঠে দাঁড়ালো। চিন্তিত স্বরে বললো,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“কি হয়েছে আঁধার? তুমি এমন করছ কেন?”
ধ্রুব জবাবে বললো,
“আগে এখন ওকে রুমে নিয়ে যেতে হবে। বিষয়টাতে আপসেট আঁধার।”
“চল, রুমে নিয়ে যাই।”
ধ্রুব আঁধারীনিকে ধীর পায়ে হাঁটিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ালো। পেছন পেছন শায়ানও গেল। গেলো না শুধু স্মিতা। ওয়েটার সামনে আসতেই রাগে গজগজ করতে করতে বললো,
“ইউ ব্লা’ডি বয়, ইডিয়ের কোথাকার, একটা কাজও ভালোভাবে করতে পারেনি।”
ওয়েটার মাথা নিচু করে বললো,
“সরি ম্যাম, বাট আমিতো ঠিকভাবেই দিয়েছিলাম। ওই স্যার কিভাবে জানলো, তা কি করে বলব বলুন?”

আঁধারীনি ঘুমাচ্ছে। পাশেই বসে আছে ধ্রুব। শায়ান চিন্তিত হয়ে বললো,
“এত বড় অ’প’রা’ধটা করলো কে?”
“বুঝতে পারছি না। মানে, আমরা এই রিসোর্টে কোনো সেইফ নই?”
ধ্রুবর কথা শুনে শায়ান বললো,
“তুই কিভাবে বুঝলি? জুসে কিছু একটা ছিল?”
“যেইটাই মেশানো হয়েছে, ওইটা পুরোপুরি গ’লে’নি। ভাসমান ছিল। আমি দেখতে পেয়েছিলাম। তাই তখন বুঝে গেছি সহজেই।”
“আঁধারীনি অনেক বেশি ভ’য় পেয়েছে। লিসেন ধ্রুব আমি ওকে নিয়ে কোনো রিস্ক নিতে চাই না। আমরা আজই ফিরে যাব।”
“কোথায় শায়ান!? বাসায়?”
“অফকোর্স বাসায়। ওইখানে গিয়ে আমি আমার ফ্যামিলিকে আসতে বলব। আমি আর সময় ন’ষ্ট করতে চাই না।”
“কাম অন শায়ান, আঁধারীনি আমার। আমি ওকে কারোর হতে দিব না। দরকার হলে আমার জা’ন দিয়ে দিব, তাও ওকে কারো হতে দিব না।”
তখনি স্মিতা আসে রুমে। শায়ান সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকালো স্মিতার দিকে। স্মিতা আমতা আমতা করে বললো,
“হুয়াটস ইউর প্রবলেম শায়ান? আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছ কেন?”
“কোথায় ছিলে এতোক্ষণ?”

“নিচে।”
“আঁধারের সাথে এত বড় একটা ঘটনা ঘটে গেল, আর তুমি নিচে ছিলে?”
“তো, আমি কি নিচে থাকতে পারি না? আঁধারীনির পেছনে ঘুরঘুর করা কি আমার জব?”
ধ্রুব বিরক্ত কন্ঠে বললো,
“শাট আপ ইডিয়ট, এই মুহুর্তে এইসব বলা উচিত বলে তোমার মনে হয় স্মিতা? যাও, এই রুমের বাইরে যাও তুমি। তোমার চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙ্গে যাবে আঁধারীনির।”
স্মিতা নাক ভেংচি কে’টে চলে গেল সেইখান থেকে। শায়ান কিছু একটা ভেবে বললো,
“এত বড় কাজটা একজন ওয়েটার করে ফেললো আর তার কোনো বিচার হবে না? নো ওয়ে…”
ধ্রুব বললো,
“এইটাতো হবেই। এমনি এমনি ছেড়ে দিব?”
“তুই যাবি? নাকি আমি?”
“তুই যাহ। আঁধারীনির মেডিসিন লাগবে। আমি না থাকলে কে দিবে?”
“ওকে ফাইন, থাক তুই, আমি নিচে ম্যানেজারকে বিষয়টা জানাচ্ছি।”
“ওকে।”
শায়ান রুম থেকে বেরুতেই, ধ্রুব আঁধারীনির ঘুমন্ত চেহারায় চু’মু খেলো। আজকাল মেয়েটা একটু বেশি জেলাস ফিল করাচ্ছে তাকে। তার জেলাসীর, পাল্টা জবাব দিচ্ছে।

আঁধারীনির ভীত চেহারা বার বার চোখে ভাসছে শায়ানের। ভেতরটা মুচড়ে উঠছে বার বার তার। সে জানে, আঁধারীনির প্রতি তার উইকনেস অনেক বেশি। সে কিছুতেই আঁধারীনিকে কারোর হতে দিবে না। ধ্রুব যা শুরু করেছে হীতে বিপরীত ঘটবে সব। তাই, আজই সে আঁধারীনিকে নিয়ে যেভাবেই হোক ব্যাক করবে। বিয়েটা সেরে ফেলতে পারলেই স্বস্তি পায় সে। এইসব ভাবতে ভাবতেই, রিসিপশনে গেল শায়ান। চোয়াল শ’ক্ত করে রাগান্বিত স্বরে বললো,

“আপনাদের সার্ভিসে কি মানুষদেরকে বি’ষ দেওয়া হয় নাকি মিস্টার?”
“হুয়াট! সরি স্যার, আপনার কথা আমি কিছু বুঝতে পারছি না।”
“এই রিসোর্টের ম্যানেজার কে?”
দূর থেকে কালো ব্লেজার পরিহিত একজন এগিয়ে আসলো। এসে ব্যস্ত স্বরে বললো,
“আমি ম্যানেজার স্যার, কি হয়েছে? আপনি এমন বিহেভ কেন করছেন?”
“আমাদের সাথের একজনকে বি’ষ মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে কুল্ড ড্রিংকসে।”
“কি!”
“ইয়েস। ভালোই ভালোই ওয়েটারকে বলবেন? সে এইটা কেন করেছে। নাকি এই রিসোর্ট বন্ধ করার বন্দবস্ত করব?”
শায়ানের দাম্ভিক কথায় ভ’য় পেলেন ম্যানেজার। সঙ্গে সঙ্গে বললেন,

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১৬

“ওই টেবিলে কে ছিল?”
“ফখরুল ছিল স্যার।”
“ডাকো ওকে।”
আরেকজন ওয়েটার বেশ জো’র করে ধরে নিয়ে আসে ফখরুল নামক ওয়েটারটাকে। শায়ান গা’লে থাপ্পড় মে’রে বললো,
“বল, কেন করেছিস এইটা? কে বলেছে এইটা করতে?”
মা’র খেতে খেতে ওয়েটার কোনোরকমে বললো,
“স্মিতা, স্মিতা ম্যাডাম।”

প্রিয় ডাক্তার সাহেব সিজন ৩ পর্ব ১৮