আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৪
তানহা ইসলাম বৈশাখী
রাতের খোলা আকাশ। মাঝে গোলাকার একটা চাঁদ জ্বলজ্বল করছে। চাঁদের আলোয় চারিপাশ আলোকিত হয়ে আছে৷ উত্তরের হিমশীতল বাতাস এসে গা ছুয়ে যাচ্ছে। সিগারেটের সাদা ধোয়া আচ্ছন্ন চারিপাশ। আপন মনে সিগারেট ফুকছে প্রার্থ। বন্ধুদের গানের আড্ডা থেকে উঠে এসে ছাদের এক কোনে দাড়িয়েছে। ওইখানে প্রান্ত আছে বলে এখানে এসে খাচ্ছে। বাচ্চাদের সামনে সিগারেট না খাওয়াটাই শ্রেয়।
প্রার্থর চোখ আটকে আছে বহুল ব্যাস্ত সড়কটার দিকে। বহু গাড়ি আসছে যাচ্ছে রাস্তা দিয়ে। সেদিকেই আপাতত তার ধ্যান জ্ঞান।
আচমকা কেউ এসে প্রার্থর পিঠে চাপড় মারলো। শান্ত স্বরে বললো।
“-এখানে একা দাঁড়িয়ে কি করছিস?
প্রার্থ একবার চোখ তুলে তাকালো অর্নবের দিকে। তারপর আবার রাস্তায় তাকালো। সিগারেটটায় আরেকটা টান বসিয়ে ধোয়া ছেড়ে বললো।
“- জুয়া খেলছি।
অর্নব বিষম খেলো প্রার্থর কথায়। ভ্যাবলার মতো বললো।
“-মানে? কি বলছিস? সিগারেট খাওয়াকে জুয়া খেলা কে বলে?
“-দেখেছিস যখন কি করছি তাহলে আবার জিজ্ঞেস করলি কেন?
অর্নব হতাশ গলায় বললো।
“- ত্যারা জবাব ছাড়া কি তোর কাছে আর কোন জবাব নেই। সবসময় ত্যারামি করাটা কি খুব প্রয়োজন?
“-হুম।
“-কি হুম?
প্রার্থ মুখে ‘চ্ব’ সূচক শব্দ বের করে বললো।
“-জ্বালাস না তো। কি বলবি বল।
অর্নবও এবার আসল কথায় আসতে চাইলো। ওর পাশ ঘেষে দাড়িয়ে রয়ে সয়ে বললো।
“-লিটেল… সরি পুষ্প ভাবিকে এখনো মানতে পারছিস না কেন?
“-লিটেল প্রিন্সেসটা আটকে নিলি কেন?
“-এখন ও তোর বউ আমার ভাবি। এখন কি আর এই নামে ডাকা যায় নাকি?
“-কেন যায় না? তুই কি বউ ডাকতি নাকি?
অর্নব বিষম খেল এমন কথায়। কাশি উঠে গেছে। চোখ গোল গোল করে বললো।
“- তোর কি হয়েছে বলতো? এভাবে কেন কথা বলছিস?
প্রার্থ জবাব দিলো না। সে সিগারেট ফুকতে ব্যাস্ত। অর্নব নিজেকে ঠিকঠাক করে বললো।
“-শোন। পুষ্প আমার কাছে অনেক কিছুই শেয়ার করেছে। ও আন্টিকে ফোর্স করেনি। ইভেন ও নিজে এই বিয়েটা করতে চায়নি। শুধুমাত্র তুই ওকে পছন্দ করিস না বলে ও তোর থেকে দূরে যেতে চেয়েছিলো কিন্তু…..
ওকে আর বলতে দিলো মধ্যিপথেই থামিয়ে দিলো। গরম চোখে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“-সাফাই গাইতে এসেছিস?
“-না। সত্যি বলতে এসেছি। আর সত্যিটা এটাই। তুই ভুল বুঝে বেশি রিয়েক্ট করছিস। বিয়েটা তোদের দুজনকেই জোর করে দেওয়া হয়েছে। সেই হিসেবে তো পুষ্পও এমন রুড বিহেভ করতে পারে তোর সাথে। কিন্তু ও করেনা কেন জানিস? কারন ও তোকে ভালোবাসে। তাই হেরে যাওয়ার পরও একটা সু্যোগ দিতে চেয়েছে যদিই সব ঠিক হয়। কিন্তু তোর এই বিহেভিয়ারে কিচ্ছু ঠিক হবে না। সব বিগড়ে যাবে। বেশ আত্মমর্যাদাশীল মেয়ে ও। আঘাত বেশি পেলে ছেড়ে যেতে দুবারও ভাববে না মনে রাখিস।
প্রার্থ সিগারেটে শেষ টানটা দিয়ে সেটা পায়ের নিচে পিষে ফেললো। মুখ থেকে সমস্ত ধোয়া বের করে বললো
“-তাহলে তো আমার থেকে বেশি তুই চিনিস ওকে। বিয়েটা তুই-ই করতি।
অর্নব হেয়ালি হাসে। মলিন কন্ঠে বলে
“-আমার ভাগ্যে থাকলে অবশ্যই করতাম।বাট ভাগ্যে তো তোর ছিলো। তুই ভাগ্য মানতে পারছিস না। পরে পচতাতে হবে তোকে বলে দিলাম।
প্রার্থ কাধ উচিয়ে বললো।
“-দেখা যাক।
এমন সময় হঠাৎ আশেপাশের সমস্ত বাতি নিভে গেলো। ছাদের যে বাতি ছিলো সেটাও নিভে গেলো। কেবল চাঁদের আলোতে আলোকিত হয়ে আছে চারপাশ।
লোড সেডিং হয়েছে বোঝাই যাচ্ছে। প্রার্থ অর্নব এগিয়ে গেলো আড্ডার ওদিকে। হৃদয় আর প্রান্ত রিতীমত হৈ-হুল্লোড় শুরু করে দিয়েছে। কারেন্ট যাওয়াতে যেন তাদের বেশি খুশি লাগছে। রাতের বেলায় কৃত্রিম আলোর চেয়ে জোছনার আলো বেশি সুন্দর। ঠান্ডা ঠান্ডা আমেজ তৈরী হয়।
ওদের দুজনের হৈচৈয়ে ভাটা পড়লো প্রার্থরা আসায়। অর্নব ধমকে বললো।
“-চুপ কর। কারেন্ট গেলে কেউ এভাবে চেচায়?
“-তুই কি বুঝবি কারেন্ট যাওয়ার কি মজা। চাঁদের আলোয় সবার চাঁদবদন মুখ দেখতে বেশি মজা। খোলা আকাশের নিচে জোছনার তরে অন্ধকার বিলাস করবো। আহা মজাই আলাদা।
একদম কবি কবি ভাব নিয়ে বললো হৃদয়। এদিকে ওর এমন বলাতে মনে মনে লজ্জা পাচ্ছে প্রিয়া।
কার্তিক বললো।
“-এতক্ষণে তো পুষ্পর রান্না হয়ে গেছে মনেহয়। প্রার্থ গিয়ে দেখে আয় যা। ক্ষিদে পেয়েছে ভাই।
প্রার্থ গা ছাড়া ভাবে বললো
“-যার ক্ষিদে পেয়েছে সে নিজে যাক।
“-ভাই এমন করিস কেন? নিচে তো মনেহয় অন্ধকার। আমি অন্ধকার ভয় পাই। তুই যা একটু সাহায্য করে আয়। বেচারি একা এতজনের খাবার এখানে আনতে পারবে না।
প্রিয়াও সায় জানিয়ে বললো।
“- আরে ভালো কথা মনে করিয়েছো তো। এই প্রার্থ ভাই বুবু তো অন্ধকারে ভয় পায়। একটু গিয়ে নিয়ে আসো না।
“-তুই যা। ভালো লাগছে না আমার।
রকি খোচা দিয়ে বললো।
“-সেই কখন থেকে শুনছি ভালো লাগছে না। কি হয়েছে তোর? তোদের বাসায় খেতে এসেছি বলে কি এখন আমাদেরই সব করতে হবে? বিয়ের পর বেশি কিপ্টে হয়েছিস।
রকির নাটকীয় কথায় দাড়িয়ে থেকেই পাছায় লাথি দিয়ে বললো।
“-নাটক কম কর।
বলেই চলে গেলো নিচের দিকে।
অন্ধকারেই হেটে গেলো। ফোনের ফ্ল্যাশলাইটটাও অন করেনি। কিচেনের সামনে যেতেই দেখলো সেখানে একটা মোম জালানো। মোমের আলোতে চারপাশ আধো আবছা লাগছে। পুষ্প কোমড়ে কাপড় গুজে কাজ করছে। বড় কড়াইটা থেকে বিরিয়ানি সব একটা বোলে বারছে।বারা শেষে উঠাতে গিয়ে দেখে বেশ ভারি বোলটা। তখনই প্রার্থ বলে উঠলো
“-আমাকে দে।
হঠাৎ পেছন থেকে পুরুষালী শব্দতে আতকে উঠে পুষ্প। হুট করে পিছনে ঘুরে যায়। বুকের উপর হাত রেখে বড় বড় শ্বাস নেয়। দম নিয়ে বলে।
“-ওহ আপনি?
“- তো কার আশায় ছিলি?
পুষ্প আবার ঘুরে গিয়ে বললো।
“-কারোরই না।
বিরিয়ানির গামলাটা নিজে উঠাতে গেলে প্রার্থ এসে উঠিয়ে নিলো। উঠিয়েই ডাকলো রুবি খালাকে।
“-রুবি খালা!
পুষ্প নিজে থেকে বললো।
“-খালা বড় আম্মুর কাছে গেছে। আমি পাঠিয়েছি।
প্রার্থ আর কোন কথা না বলে চলে গেলো।
একেবারে ছাদে নিয়ে সবার মধ্যিখানে রাখলো গামলাটা। বিরিয়ানি থেকে বেশ সুন্দর একটা ঘ্রান বের হচ্ছে। হৃদয় নাক টেনে ঘ্রান নিয়ে বললো।
“-বাহ! ঘ্রানটা তো দারুন হয়েছে। বাবুর্চি কই?
প্রার্থ পেছনে ঘুরে দেখলো পুষ্প আসেনি। ও ভেবেছে পুষ্প ওর পিছু পিছু এসেছে। কিন্তু পেছনে কাউকেই দেখলো না।
প্রিয়া আবার বললো।
“-প্রার্থ ভাই তুমি বুবুকে রেখে আসলে কেন? একা একা আসতে পারবে? সিঁড়ির ওখানে এত অন্ধকার। গিয়ে নিয়ে আসো না।
সবাই বলে বলে আবারও পাঠিয়ে দিলো তাকে নিচে। ড্রয়িংরুম পেরিয়ে যেতেই কারো সাথে ধাক্কা লাগলো বেশ জোরে। প্রার্থ হাত বাড়িয়ে খপ করে ধরে ফেললো তাকে। এমন সময় অন্ধকার ছাপিয়ে আলোকিত হয়ে উঠলো পুরো ড্রয়িং রুম। কারেন্ট চলে এসেছে। আলোতে সবকিছু স্পষ্ট দেখতে পেলো এবার। প্রার্থ পুষ্পের কোমড় জরিয়ে ধরে আছে তাকে পড়ে যাওয়া থেকে বাচাতে। পুষ্প দুহাতে ধরে আছে প্রার্থের টিশার্টটা। এ অবস্থায় নিজেকে দেখে হুট করে ছেড়ে দিলো পুষ্পের কোমড়। নিজের ভর প্রার্থের হাতে থাকায় পড়ে যেতে নিলো। কিন্তু পড়লো না। দুহাতে ধরা টিশার্টের গলাটায় আরো শক্ত করে আকড়ে ধরলো। নিজের ভরে প্রায় ঝুলে গেলো পুষ্প।
প্রার্থ চোখ বন্ধ করে দাতে দাত লাগিয়ে বললো।
“-ছাড়।
পুষ্প টিশার্টের ওখানে আরো শক্ত করে ধরে সেখানে ভর দিয়ে সোজা হয়ে দাড়ালো। প্রার্থর টিশার্টের গলা ঢিলে হয়ে গেছে। ওটাকে ঠিক করে ধমকের সুরে বললো।
“-চোখে দেখিস না? মোম নিয়ে আসতে পারলি না?
পুষ্প উল্টো ওকে প্রশ্ন করলো।
“-আপনার কাছেও তো ফোন ছিলো। আপনি ফ্ল্যাশ অন করে আসতে পারলেন না।
প্রার্থর আরো কিছু বলার আগেই পুষ্প প্রস্থান করলো। প্রার্থ ভ্রু কুচকে তাকিয়ে রইলো সেই প্রস্তানের দিকে।
খাওয়া দাওয়ার পাট চুকিয়ে সবাই বেশ অনেক্ক্ষণ আড্ডা দিয়েছে। গানের আসর বসিয়েছে। তবে পুষ্প, প্রিয়া, অন্ত, প্রান্ত ছিলো না সেই আড্ডায়। রাত ১০ টার দিকে অহনা বেগম ফিরেছেন বাড়িতে। তার আগেই তারা চলে গিয়েছে যার যার রুমে। পুষ্প পূর্নিমা বেগমকে খায়িয়ে দায়িয়ে ওষুধ দিয়ে একেবারে ঘুম পাড়িয়ে এসেছে।
অর্নবরা সবাই প্রার্থদের বাসা থেকে বের হলো রাত ১২ টার দিকে। সবাইকে বিদায় দিয়ে প্রার্থ গিয়ে দাড়ালো মায়ের রুমের দরজার সামনে। তিনি ঘুমাচ্ছে দেখে কিছুক্ষণ মায়ের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে এসেছে নিজের রুমে। ভেতরে পুষ্প অন্যপাশ হয়ে সুয়ে আছে চাদর মুড়ো দিয়ে। দরজার সামনে দাড়িয়ে কিছুক্ষন তাকে পরখ করো ঢুকে গেলো ভেতরে। পুষ্পের সামনে দাড়িয়ে তাকে ডেকে বললো।
“-উঠ। এই উঠ।
পুষ্পর নড়চড় নেই দেখে ঘুমন্ত অবস্থায় এক বাহু ধরে টেনে উঠালো তাকে। এভাবে টেনে উঠানোতে ভয় পেয়ে যায় মেয়েটা। সামনে প্রার্থকে দেখে সামান্য রাগ দেখিয়ে বললো।
“-সমস্যা কি আপনার? এভাবে টেনে তুলছেন কেন?
প্রার্থ টলতে টলতে বললো।
“-সমস্যা তুই। আমার বিছানায় তুই থাকতে পারবি না।
প্রার্থর শরীর থেকে এ্যালকোহলের তীব্র গন্ধ বের হচ্ছে। পুষ্প নাক মুখ কুচকে বললো।
“-আপনারা সবাই মদ খেয়েছেন?
“-খেয়েছি। তো? বিছানা থেকে সর।
“-দেখুন এই নিয়ে আমি কালকেও বলেছি আপনাকে। এক কথা বার বার বলতে ভালো লাগে না। এটা এখন আপনার একার বিছানা নয়। বিয়ে হয়েছে আমাদের। আমার সমান অধিকার আছে এখানে থাকার।
প্রার্থ এখন গেলো অন্য কথায়।
“-কি করে বস করলি মাকে?যে এত জোর জবরদস্তি করে বিয়েই দিয়ে দিলো।
দু চোখ বন্ধ করে হাত দুটো মুঠো করে নিলো পুষ্প।
“-আপনাকে জোর করা হলে আমাকেও জোর করা হয়েছে। আমি কাউকে কিছু বলিনি। না কাউকে বস করেছি।
প্রার্থ পুষ্পের বাহু টেনে তাকে মুখোমুখি দাঁড় করালো। দাত কিড়মিড়িয়ে বললো।
“-মিথ্যে কথা। তুই বস করেছি মাকে আর ছোটমাকে। আমি তোকে বারন করার পরেও কেন করলি এমনটা?
“-আমি কিছুই করিনি। আপনি বিশ্বাস করছেন না কেন?
“-কি করে করবো। তুই তো বিয়ের আগে আমাকে বলেছিলি তুই ভালোবাসিস আমাকে। আমি বারন করে দিয়েছি বলে এভাবে বিয়ে করলি?
পুষ্প এবার চেতে উঠলো। প্রার্থর গায়ে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে বললো।
“-বলছিনা আমি কিছু করিনি। আপনাকে যেভাবে জোর করা হয়েছে আমাকেও সেভাবেই জোর করা হয়েছে। আমি এতটাও নিচু নই যে আপনাকে পাওয়ার জন্য এত নিচে নামবো। আমার ভুলটা কি ছিলো জানেন? আমার ভুল ছিলো আপনাকে বিশ্বাস করা, আমার ভুল ছিলো আপনার ছোট ছোট কেয়ার দেখে মুগ্ধ হওয়া, আমার ভুল ছিলো আপনাকে ভালোবাসা এবং আমার সবচেয়ে বড় ভুল ছিলো আপনার কাছে ভালোবাসা প্রকাশ করা। কারন আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে আপনার জীবনে অন্য কেউ ছিলো। ছিলো না এখনো আছো হয়তো। যার কারনে না বিয়ে মানছেন না আমাকে।
প্রার্থ রাগে পুষ্পের চোয়াল চেপে ধরলো। ফুসতে ফুসতে বললো।
“-আমার জীবনে কেউ নেই। না তুই না অন্যকেউ।
“-তাহলে তো আপনার আমাকে নিয়ে কোন সমস্যা হবার কথা নয়। আমি তো নেই আপনার জীবনে তো এত কেন সমস্যা আমাকে নিয়ে।
“-তুই অদশ্য এক খামে আমার নামে লেখা হয়ে গেছিস। জরিয়ে গেছিস তুই আমার জীবনে। সমস্যা তো হবেই
পুষ্প মলিন হেসে বললো।
“-এটাই। আমিও এটাই ভেবেছিলাম। ভেবেছিলাম অদৃশ্য এক অধিকারে আমি তো এখন আপনারই। হয়তো সব ভুলে নতুন করে শুরু করবেন। বিয়েটা যখন হয়েছে হয়তো দুজনকে একটা সুযোগ দিবেন। কিন্তু আমি ভুল ছিলাম। আমি আমাদের সুযোগ দিলেও আপনি আমাকে বা আমাদের কোন সুযোগ দেননি। কাল আবেগের বসে আপনাকে অনেক কিছু বলে বসেছি। সেগুলো বলাও উচিত হয়নি।
প্রার্থ ওর গাল ছেড়ে টলতে টলতে বললো
“-ভালো সাজতে চাস?
“-প্রয়োজন মনে করছি না। আমাকে ভিক্ষুক ভাবার কোন প্রয়োজন নেই। ভালোবাসতে পারি কিন্তু তাকে পাওয়ার জন্য ভালো সেজে ভিক্ষা করতে পারি না। আমরণ প্রেমতৃষ্ণায় ভুগবো তবুও ভালোবাসা ভিক্ষা চাইবো না।
“-তাহলো বিয়ে করলি কেন?
“-এক কথা আর কতবার বোঝাতে হবে আপনাকে? প্রশ্ন তো আমিও করতে পারি। আপনি কেন বিয়ে করলেন আমাকে?
“-তুই বস.. বস করেছিস…
কথা বলতে বলতে ঢলে পরলো পুষ্পর কাধে। দু হাতে আগলে ধরলো তাকে। এত বড় সুঠাম দেহি যুবককে একা হাতে ধরে রাখতে পারছে না।তারউপর মদের বিশ্রী গন্ধ এসে নাকে লাগছে। বিছানার উপর ধপ করে শুয়িয়ে দিলো তাকে। পা উপরে তুলে দিয়ে। গায়ে কাথা জরিয়ে দিয়ে হনহন করে বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে।
রুম থেকে বেড়িয়ে গেলো প্রিয়ার রুমে। যেখানে বিয়ের আগে আসলে দুবোন থাকতো। প্রিয়া ঘুমায়নি এখনো। জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছে হৃদয়কে নিয়ে। আবেগি মনের কত বিবাগী স্বপ্ন তার। টিন এজার তো মন নিজের নিয়ন্ত্রনে থাকে না। প্রথম ভালোলাগাকেই ভালোবাসা হিসেবে ধরে নেয়। যেখানে ঠিক ভুল কিছুই দেখে না তারা।
পুষ্পকে হঠাৎ রুমে ঢুকতে দেখে আতকে উঠলো প্রিয়া। ভয়ে কেবলই চিৎকার দিবে তার আগেই বুঝলো এটা পুষ্প। পুষ্প এসেই ওর পাশের জায়গাটা দখল করো শুয়ে পড়লো।
প্রিয়া কিছু বুঝতে না পেরে বোনকে ঝাকিয়ে বললো।
“-বুবু? কি হয়েছে তোমার? এখানে এলে কেন? প্রার্থ ভাই কিছু বলেছে?
পুষ্প সারাশব্দ করলো না। ক্ষণে ক্ষণে শরীর কাপছে তার। প্রিয়া আবারও তাকে ঝাকিয়ে বললো
“-বুবু কি হয়েছে? কাঁদছো কেন?
এবার উঠে বসলো সে। চোখ মুছে বললো।
“-তুই বল প্রিয়ু আমি প্রার্থ ভাইকে ভালোবাসি বলে তাকে বিয়ে করার জন্য কাউকে বস করতে পারি?
“-এমন কথা কেন বলছো? আমি তো জানিই তুমি বিয়েতে রাজি ছিলেনা। সবার ব্ল্যাকমেল, জোরাজুরি আর বড় আম্মুর জন্য করেছো বিয়েটা।
“-তাহলে আমি কি করে বড় আম্মুকে আর আম্মুকে বস করলাম?
“-কি হয়েছে বলো না?
“-প্রার্থ ভাই ভাবছে আমি এসব করেছি। আমি ইচ্ছে করে সবাইকে বলে তাকে বিয়ে করেছি। অথচ আমি নিজে সবাইকে বুঝিয়েছি যাতে আমাদের বিয়েটা না দেয়।কিন্তু কে শুনেছে আমার কথা। বিয়ে হওয়ায় ভেবেছিলাম প্রার্থ ভাই সবকিছু মেনে নিবে। বিয়েটা যেহেতু হয়েই গিয়েছে তাহলে হয়তো মানার চেষ্টা করবে। তাই তাকে সুযোগ দিয়েছিলাম। কিন্তু না, উনি সবকিছুতে শুধু আমাকে ব্লেম করেই যাচ্ছ। যেখানে আমার কোন দোষই নেই।
প্রিয়া রেগে গেলো মুহূর্তেই। বিছানা থেকে উঠতে উঠতে বললো।
আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৩
“-প্রার্থ ভাই এবার অতিরিক্ত করছে। আমি আগে কথা বলে আসি ভাইয়ের সাথে। সবসময় সবকিছু চলবে না।
পুষ্প বোনের হাত ধরে আটকে দিলো তাকে।
“-কিছু বলার দরকার নেই। চলতে দে সব। একসময় ঠিকি বুঝবে। আর যেদিন বুঝবে সেদিন কোনকিছুই পাবে না সে। অতিরিক্ত অবহেলায় পেতে পেতে মানুষ একসময় হারিয়ে যায়। আর যখন হারিয়ে যায় তখন অবহেলা করা মানুষটা অনুতাপে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আমি নিজের হারিয়ে যাওয়ার অপেক্ষায় আছি।