পারমিতা পর্ব ৫০
Nabila Ahmed
–অরিয়ন?
–*******?
–অ*****?
আবছা আবছা কিছু শুনতে পেয়েই মিটমিট করে চোখ খোলার চেষ্টা করে অরিয়ন।
কে কি বলছে তা কিছুই স্পষ্ট নয় অরিয়নের কাছে। চোখ খোলার চেষ্টা করতেই যেন প্রচন্ডরকমের ব্যাথা অনুভব করতে লাগলো মাথায় ও চোখে।
–উফ…
মাথায় হাত দিয়ে গোংরানি দিয়ে উঠে অরিয়ন।
–অরিয়ন? কেমন লাগছে এখন?
আবারও কারো কন্ঠস্বর শুনতে পায় অরিয়ন। শরীরের সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করে চোখ খুলতেই অরিয়নের মুখের কাছাকাছি দেখতে পায় আনিকা চৌধুরীকে।
–বাবা, কেমন লাগছে এখন? খারাপ লাগছে না তো তোর?
হঠাৎ করে আনিকা চৌধুরীকে কেমন যেন বয়স্ক বয়স্ক লাগছে অরিয়নের কাছে। চোখে মুখে গ্লানি,চিন্তা,ক্লান্তি,বিষন্নতার ছাঁপ নাকি চোখের ভুল তা বুঝতে পারছে না অরিয়ন।অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো আনিকা চৌধুরীর দিকে।
–সরুন, পেসেন্টকে দেখতে দিন।
আনিকা চৌধুরীর পিছন থেকে কারো কণ্ঠ ভেসে আসে।
সাদা এপ্রোনে ৩০/৩২ বছরের একজন মহিলা অরিয়নের নজরের সামনে আসতেই বুঝতে পারে হাসপাতালে আছে অরিয়ন। পরক্ষণেই চোখের সামনে ঘটে যাওয়া সবকিছু যেন ফ্ল্যাশব্যাক হতে লাগলো।
দ্রুত একবার পুরো রুমে মিতাকে খোঁজার চেষ্টা করে। যে অরিয়নকে হাসপাতালে এনেছে সে হয়তো মিতাকেও ছাড়িয়ে আনতে পেরেছে সেই আশায়। কিন্তু অরিয়নের আশায় যেন কেউ পানি ঢেলে দিলো। পুরো রুমে আনিকা চৌধুরী ছাড়া আর কেউ নেই।
–মা,পরী কোথায়? আর আমাকে এখানে কে আনলো?
ডাক্তারকে উপেক্ষা করেই আনিকা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–বিপি নর্মাল আছে। আপাতত ভয় পাওয়ার কিছু নেই। র*ক্ত পড়া বন্ধ হওয়াতে তেমন কোনো মারাত্মক ক্ষতি হতে পারেনি।
আনিকা চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বলে ডাক্তার।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–থ্যাংক ইউ, ডাক্তার।
জবাব দেয় আনিকা চৌধুরী।
–মা? আমি তোমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছি।
উঠে বসার চেষ্টা করতে করতে বলে অরিয়ন।
হাসপাতালের রুমের জানালা দিয়ে বাইরে দেখার চেষ্টা করে। অনেকটা অন্ধকার হয়ে আছে বাইরে। ‘রাত নাকি সন্ধ্যা?’ মনে মনে ভাবে অরিয়ন। বুকের মধ্যে অজানা এক ভয় কাজ করতে শুরু করেছে অরিয়নের। ‘পরীকেও সাথে করে এনেছে’ মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করে অরিয়ন।
–তোর বাবা নিয়ে এসেছে তোকে।
জবাব দেন আনিকা চৌধুরী।
–বাবা?
অবাক হয়ে প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–হুম।
সায় দেন আনিকা চৌধুরী।
–বাবা কীভাবে গেলেন সেখানে? ওখানে তো আমার একার যাওয়ার কথা ছিলো?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–আর পরী? পরী কোথায়,ওকে দেখছি না কেন?
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–ঐ মেয়ে কোথায় আমি জানিনা।
জবাব দেন আনিকা চৌধুরী।
–কিহ?
–আমার সাথে পরীকে আনেনি ?
কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে অরিয়ন।
–না।
জবাব দেন আনিকা চৌধুরী।
–বাবা কোথায়?
–তোকে হাসপাতালে রেখে কোথায় যেন গেছে। আর আসেনি।
উত্তর দেন আনিকা চৌধুরী।
–কোথায় যাচ্ছিস?
অরিয়ন বিছানা থেকে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতেই জিজ্ঞেস করেন আনিকা চৌধুরী।
–অরিয়ন, কি করছিস তুই?
অরিয়ন হাত থেকে স্যালাইন খুলতেই দৌড়ে এগিয়ে যান।
–পরীকে খুঁজতে। ওকে কেউ তুলে নিয়ে গেছে মা।
শার্ট পরতে পরতে বলে অরিয়ন।
–কিহ?
অবাক হয়ে বলেন আনিকা চৌধুরী।
–হ্যাঁ মা। তোমার মোবাইলটা আমাকে দেও। বাবা আসলে আমাকে এখানে কল করতে বলো।
আনিকা চৌধুরীর হাত থেকে মোবাইল নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় অরিয়ন।
আনিকা চৌধুরীর হঠাৎ করেই কেমন যেন দুশ্চিন্তা হচ্ছে। বুকের মধ্যে অশান্তি লাগছে হঠাৎ করেই। মিতা চলে যাক এটাই সব সময় চেয়েছেন আনিকা চৌধুরী। তাই বলে এতোটাও খারাপ কিছু হোক তা তিনি চাননি।
–দোয়া করি ঠিক মতো বাসায় ফিরে আয়। তারপর আমার ছেলের জীবন থেকে দূরে চলে যাস।
বিরবির করে বলেন আনিকা চৌধুরী।
মাথা নিচু করে বসে আছে মিতা। কোথায় আছে কিছুই জানেনা। লোকগুলো অরিয়নকে বেহুশ করতে সফল হলে মিতাকে গাড়িতে তুলে নেয়। গাড়িতে উঠা মাত্রই চোখ বেধে ফেলা হয় মিতার। কতক্ষণ গাড়িতে ছিলো জানা নেই মিতার। তবে যখন চোখ খোলা হলো তখন মিতাকে একটি খালি রুমে নিয়ে আসা হয়েছে।
লোকগুলোদের মধ্যে থেকে একজন একটু পরেই কোথা থেকে একটা চেয়ার নিয়ে আসে। চেয়ারের সাথে বেধে ফেলে মিতাকে। সকালে বৃষ্টিতে ভিজেছিলো মিতা,সেই কাপড়েই এখনো বসে আছে চেয়ারে।
মিতাকে বাধা শেষ করেই একে একে সবাই বেরিয়ে যায়। কিছুক্ষণ একা বসে থাকলেও একটু পর খেয়াল করে রুমটা একদম নতুন। মনে হচ্ছে কিছুদিন আগেই করা হয়েছে।
এখন কি বিকাল নাকি সন্ধ্যা নাকি রাত তার কিছুই বুঝতে পারছে না। আশেপাশে কোথাও থেকে আজানের আওয়াজও ভেসে আসছে না। “তাহলে কী আশেপাশে কোনো মানুষ নেই?” মনে মনে ভাবে মিতা।
মিতার কাপড়চোপড় প্রায় শুকিয়ে গেছে। হাবিব চৌধুরী, যাকে মিতা নিজের বাবার মতোই দেখেছে,যাকে মিতা সম্মান দিয়েছে, ভালোবেসেছে সেই নাকি মিতার বিশ্বাস ভঙ্গ করতে মরিয়া হয়ে গেছে। অরিয়ন যে এই সম্পর্কে কিছুই জানেনা আজ তা পরিষ্কার মিতার কাছে। অরিয়ন যেভাবে মিতাকে বাঁচানোর জন্য পাগল হয়ে গিয়েছিলো তাতে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছিলো অরিয়ন নিরপরাধ।
হঠাৎ করেই মিতার বুকের মধ্যে প্রচন্ড ব্যাথা করছে। এই ব্যাথাটা অরিয়নের সাথে অন্যায় করার কারণে, অরিয়নকে বিশ্বাস না করার কারণে। এবার আর মিতার জীবিত বাড়ি ফিরার আর কোনো উপায় নেই তা মিতা বুঝতে পারছে। এতোকিছুর মধ্যে অরিয়নকে শেষবারের জন্য বিদায় দিতে পারেনি মিতা। অরিয়ন থেকে নিজেও শেষ বিদায় নিতে পারেনি। কথাগুলো ভাবতেই হাসি ফুঁটলো মিতার ঠোঁটে তবে এই হাসি আনন্দের না, এই হাসি নিজের পোড়া কপাল নিয়ে, অরিয়নকে বিশ্বাস না করার আফসোস নিয়ে। ঠোঁটে হাসি ফুঁটলেও চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ে যাচ্ছে মিতার।
–আমাকে ক্ষমা করে দিও। ক্ষমা করে দিও।
বিরবির করে বলে মিতা।
–তোমার পরী তোমাকে খুব ভালোবাসে,রিয়ন। খুব বেশি।
কাঁদতে কাঁদতে বলে মিতা।
হাসপাতাল থেকে বেড়িয়ে সবার প্রথমে পার্কে যায় অরিয়ন। স্বাভাবিক ভাবেই সেখানে যে মিতাকে পাওয়া যাবে না তা জানা কথাই। তাও গিয়েছিলো অরিয়ন। আশে পাশের সিসিটিভি ক্যামেরা দেখে বুঝতে পারে মিতাকে কালো রংয়ের গাড়িতে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। নারায়নগঞ্জ প্রবেশ করার পর গাড়িটির আর কোথাও দেখা যায় নি।
রাত ১২ টা করে অরিয়ন তাদের ঢাকার বাড়িতে প্রবেশ করে। পুলিশের সাহায্যে শেষবার গাড়ির অবস্থান জানতে পেরেছে অরিয়ন। এছাড়া গাড়ির নাম্বার দেখে কার গাড়ি তা কাল সকালের মধ্যে খুজে বের করবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ।
বাড়িতে আগে থেকেই অরিয়নের জন্য অপেক্ষা করছেন আনিকা চৌধুরী ও মায়া চৌধুরী । অরিয়নকে দরজার সামনে দেখা মাত্রই দ্রুত দুজনে এগিয়ে যান।
–কি হলো? কিছু জানতে পারলি? ওকে খুঁজে পেলি?
একের পর এক প্রশ্ন করতে থাকে আনিকা চৌধুরী।
–মিতার কী হলো? মিতাকে কে নিয়ে গেছে?
কান্নারত মায়া চৌধুরী দৌড়ে অরিয়নের সামনে এসে জিজ্ঞেস করে।
–বাবা কোথায়? তোমাকে বলেছিলাম আমাকে কল করতে বলতে।
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
–হাবিব কোথায় জানিনা। আমার সাথে আর কথা হয়নি।
বলে আনিকা চৌধুরী।
–আমার কল কেন ধরছেন না উনি? আর চাচ্চু কই?
বিরক্ত হয়ে বলে অরিয়ন।
–ওয়াহিদ আমাকে বাসায় দিয়েই বের হয়ে গেছে। চট্রগ্রাম থেকে বের হওয়ার সময় হাবিব ভাই কল করেছিলো।
বলে মায়া চৌধুরী।
–পুলিশ কী বললো?
সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলে আফরিন।
অরিয়ন কিছু বললো না। হাটতে হাটতে দিয়ে সোফায় বসলো। মাথার ব্যাথাটা কমছেই না।
দু হাত দিয়ে মাথার চুলগুলো একটু টেনে ধরে।
–গাড়িটা কার জানতে পারলেই অনেকটা এগিয়ে যাওয়া যাবে। তা ছাড়া আর কোনো কিছুই বলা যাচ্ছে না।
বলে অরিয়ন।
–আরিয়ান কোথায়? ইচ্ছে করছে আরিয়ানকে ধরে চড় মারতে। ও যদি এতোদিন সবকিছু না লুকাতো তাহলে আর এসব দেখতে হতো না।
বলে মায়া চৌধুরী।
–তার আগে তোমার মেয়ে কে মা*রো মায়া। ও না পালালে এরকম কিছুই হতো না। এসবের মধ্যে আবার আমার আরিয়ানকেও জড়িয়ে নিয়েছে।
–আনিকা ভাবি!!
–আপনারা একটু চুপ করুন। নিজেদের মধ্যে ঝগড়া না করে কী করতে হবে তা ভাবুন।
সকলের উদ্দেশ্যে বলে আফরিন।
–আরিয়ান কোথায়?
সোফায় হেলান দিয়ে বলে অরিয়ন।
–বলতে পারিনা। চট্টগ্রামেই আছে হয়তো।
জবাব দেন আনিকা চৌধুরী।
–আমাদের সাথেও আসেনি।
বলে আফরিন।
–ওহ।
বলে অরিয়ন।
দরজা খোলার শব্দে চোখ খুলে মিতা। বসে থাকতে থাকতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছিলো তা খেয়াল নেই। সামনের দাঁড়িয়ে আছে ৩ জন। যার মধ্যে ২ জনকে আগে দেখেনি। দুজন হেটে মিতার কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। মিতার হাতের বাধণ খুলতেই দু হাত এক সাথে ঘষতে থাকে মিতা। এতো শক্ত করেই বেধে রেখেছিলো যে, হাতের র*ক্ত চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। নিজের হাত নিজেই অনুভব করতে পারছে না।
–দে।
যে লোকটা অরিয়নের মাথায় আঘাত করেছিলো সে হঠাৎ করেই বলে উঠে।
কি চাইলো তা দেখতে মাথা বাঁকা করে দেখার চেষ্টা করে মিতা। দুজনের মধ্যে একজনের হাতে কাগজ।
–এটাতে সাইন কর।
কাগজ এগিয়ে দিয়ে বলে লোকটি।
–কী এটা?
–ঐটা জানতে হবে না। চুপচাপ সাইন কর।
মিতার হাতের উপর কাগজ দিয়ে বলে লোকটি।
মিতা লোকটির দিকে একটু তাকিয়ে থাকলো। চেহারা টা কতই না ভয়ানক। পরণে তার একটা লুঙ্গি আর চেক শার্ট। মাঝে মাঝে শরীর থেকে ম*দের দুর্গন্ধ আসছে।
–কী দেখস? পছন্দ হইছে? বিয়া করবি?
কুৎসিত নজরে মিতার দিকে তাকিয়ে বলে লোকটি।
লোকটির কথা শুনতেই যেন বমি বমি ভাব লাগছে মিতার। লোকটির থেকে নজর সরিয়ে কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজটি খুলে পড়তে শুরু করে।
“আমি পারমিতা মেহেরিন চৌধুরী (১৯), পিতা: ওয়াসিম চৌধুরী, মাতা : সুমাইয়া রহমান, নিজের সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সম্পূর্ণ হুশ থাকা অবস্থায় আমার বড় চাচা হাবিব চৌধুরীর নামে লিখিয়া দিচ্ছি। আমাকে কোনোরূপ জোর-জাবরদস্তি করা হয়নি।” কাগজের লিখাটা দেখে যেন পায়ের র*ক্ত মাথায় উঠে গেলো মিতার।
নিজের চাচা এতোটা বেঈমানী করবে তা ভাবতে পারেনি মিতা।
–আমি সাইন করবো না।
দাঁতে দাঁত চেপে বলে মিতা।
–সোনামনি সাইন করবে না। সাইন না করতে চাইলে কী করা উচিৎ, সাব্বির?
পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা একজনের উদ্দেশ্য বলে লোকটি।
–তাকে ডিম থেরাপি দেওয়া উচিৎ, জসিম ভাই।
বলে সাব্বির নামের লোকটি।
এদের কথা শুনে ক্রমাগত হাত পা ঠান্ডা হয়্র আসছে মিতার। কিন্তু হাবিব চৌধুরীকে কোনোভাবেই জিততে দিবে না মিতা। তাতে যদি মিতার মৃত্যুকে সাদরে গ্রহণ করতে হয় তাই করবে।
–শেষবারের মতো জিজ্ঞেস করমু, সাইন করবি কি না?
বলে জসিম নামের লোকটি।
–না।
একনিষ্ঠভাবে বলে মিতা।
–খারায় আছস কেন, মা*গ*রে ধর।
জসিম কথাটা বলতেই দুজন এসে মিতার দু হাত ধরে ফেলে।
–না না না, ছাড় আমাকে।
চেঁচাতে থাকে মিতা।
দুজনে মিতার হাত শক্ত করে ধরতেই জসিম মিতার চুলের মুঠি শক্ত করে ধরে। মনে হচ্ছে এক্ষুনি চামড়া ছিড়ে সব চুল চলে আসবে।
–ছাড় আমাকে, ছাড়।
–সাইন করবি কি না?
–না। ম*রে গেলেও করবো ন..
–ঠাসসসসসসসস।
মিতার গালে স্বজোরে থাপ্পড় মারে জসিম। সাথে সাথে মিতার ঠোঁট কেটে র*ক্ত বের হয়। এতো জোরেই থাপ্পড় মে*রেছে যার দরুন চোখে সব ঝাপসা দেখতে শুরু করেছে মিতার। চোখে পানি চলে এসেছে।
–সাইন কর।
–করবো না।
কাঁদো কাঁদো অবস্থায় বলে মিতা।
–দেখ, সময় নষ্ট করাইস না। সাইন কর।
–করবো না আমি।
–ঠাসসসসসসসস।
–ঠাসসসসসসসস।
একের পর এক থাপ্পড়ের কারণে মিতার নাক আর ঠোঁট দিয়ে র*ক্ত পড়া শুরু হয়েছে। তাও যেন মিতার ইচ্ছাশক্তিকে হার মানাতে পারছে না কেউ।
–সাইন করবো না, করবো না, করবো না।
জসিমের দিকে তাকিয়ে বলতে থাকে মিতা।
–খা*কি মাগ*, তোরে তো…
কথাটা বলেই চেয়ারে লাথি মারে জসিম।
–আহহহহহ….রিয়নননননন।
সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যায় মিতা। পাকা করা ফ্লোরে পড়তেই মাথায় আঘাত পায় মিতা।
–সামনে থেকে সর।
বাকি দুজনের উদ্দেশ্যে বলে মাটিতে পড়ে থাকা মিতার সামনে গিয়ে দাঁড়ায় জসিম।
মিতার মনে হচ্ছে খুব শীঘ্রই সে উপরে পৌঁছে যাবে। “এভাবেই যদি ম*রণ লিখা ছিলো তবে কেন মিতার জীবনে অরিয়নকে আনা হলো? কেন অরিয়নের কোলে মাথা রেখে ম*রার সুযোগ পেলো না মিতা?” কথাগুলো ভাবতেই যেন আরও বেশি কান্না পাচ্ছে মিতার। “রিয়ন নিশ্চয়ই এখন ভালো আছে। হাবিব চৌধুরী তার ছেলেকে অবশ্যই সেখানে ফেলে রাখবেন না। তুমি ভালো থেকে,রিয়ন।” বিরবির করে বলতে থাকে মিতা।
জসিম মিতার সামনে যাওয়া মাত্রই পৈশাচিক এক হাসি দেয়। মিতার চোখেমুখে ভয় ফুঁটে উঠেছে। তাতে কি? ম*রে গেলেও হাবিব চৌধুরীকে সফল হতে দিবে না মিতা।
–সাইন করবি?
জিজ্ঞেস করে জসিম।
মাথা নাড়িয়ে না বলে মিতা।
–আয়ায়ায়ায়ায়ায়া।
মিতার পেটে লা*থি মারে জসিম। ব্যাথায় চিৎকার করে উঠে মিতা।
–সাইন করবি?
আবারও লা*থি মারে।
–নায়ায়ায়ায়ায়ায়া। নায়ায়ায়ায়ায়া।
–সাইন করবি?
–রিয়নননননন…আমাকে বাঁচাও রিয়ন।
কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে মিতা।
–সাইন কর, সাইন কর সাইন কর।
একই সাথে অনেক গুলো লা*থি মা*রে মিতার পেটে।
কাশতে কাশতে মিতার মুখ দিয়ে র*ক্ত পড়া শুরু হয়েছে। অনেকটা নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছে মিতা।
–জসিম ভাই ছাড়েন। বেশি মা*রলে ম*ইরা যাবে।
–তুই দেখ, কি খারাপের খারাপ এই মাইয়া। এতো মা*ইর খাইয়াও সাইন করলো না।
বলে জসিম।
–কালকে আইসা আবারও একটু ট*র্চার করলে তখন ঠিকি করবো। একসাথে এতো মারলে বাঁচবো না।
বলে সাব্বির।
পারমিতা পর্ব ৪৯
–বা*ল। বসরে কী বলমু?
বলে জসিম।
–বলবেন মা*রতে মা*রতে অজ্ঞান করে দিছেন তাও রাজি হয় না। দুই/একদিন আরও সময় দিতে।
–আচ্ছা চল।
মাটিতে পড়ে থাকা মিতাকে সেভাবেই ফেলে রেখে চলে যায় সবাই।
–রি…রিয়ন।
কথাটা বলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে মিতা। পড়ে থাকলো মাটিতে।