সুগন্ধি ফুল পর্ব ২৬
জান্নাত সুলতানা
-“তুমি তাদের কাছে শাড়ী পড়তে যাচ্ছো?”
আবরাজ সোফায় বসে থেকে চোখ পিটপিট করে জিজ্ঞেস করলো। ফিজা শাড়ী ব্যাগ টা মাত্র আলমারি থেকে নামিয়েছে। সেটা নেড়েচেড়ে দেখতে দেখতে বলে,
-“হ্যাঁ। যাই? শুধু শাড়ী পড়ে চুল টা বেঁধে চলে আসবো। আর কিছু না।”
আবরাজ বসা ছেড়ে উঠে এলো। গায়ের গেঞ্জি টা টেনেটুনে ঠিক করে। হাতের পেশি গুলো ফুলেফেঁপে উঠে। ফিজা ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। আবরাজ বউয়ের সামনে এসে দাঁড়ালো। গম্ভীর স্বরে বলে উঠলো,
-“শাড়ী পড়বে? পড়ো। কিন্তু কারোর হাতে নয়। নিজে পারলে পড়ো নয়তো লেহেঙ্গা পড়ে নাও।”
-“এটা কেমন কথা আবরাজ? তাহলে মেক-আপ আর্টিস্ট কেনো ডেকেছেন বাড়িতে? রুমে আনতে দিচ্ছেন না। তাদের কাছে গিয়ে শাড়ী পড়তে দিবেন না। তো তাদের শুধু শুধু আনার কি প্রয়োজন ছিলো?”
ফিজা বিরক্তিকর বিরস মুখে বলে উঠলো। আবরাজ ফিজার আপাদমস্তক দৃষ্টি বুলিয়ে থমথমে কণ্ঠে বললো,
-“এই মানুষ টা আমার। তার মাথা থেকে শুরু করে পায়ের তলা। সবটাই আমার। এই মানুষ টার সর্বাঙ্গে আমার ছোঁয়া থাকবে। এখানে অন্য কারোর ছোঁয়া? ইম্পসিবল।”
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
আবরাজ ফিজার ঘাড়ে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে নিলো। ফিজা অপ্রস্তুত হলো। মোচড়ামুচড়ি করে নিজে কে ছাড়াতে চায়। আবরাজ তা হতে দিবে না-কি! উঁহু। ফিজা বরাবর এর মতো ব্যার্থ হলো। আবরাজ ফিজার কানে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। ফিজা চোখ বন্ধ করে। ইদানীং সে অতিমাত্রায় আবরাজ খান এর প্রতি দুর্বল হচ্ছে। এমন টা হলে এই পুরুষ টাকে ছেড়ে সে থাকবে কি করে? ফিজা ভাবনায় বিভোর হয়ে পরে। আবরাজ ফিসফিসিয়ে আবার বলে,
-“এই-যে এখানে আমার দেওয়া চিহ্ন! এগুলো দেখবে কেউ! আবরাজ খান এটা কখনো মেনে নিবে না।”
কাঁধের কাপড় টেনে উন্মুক্ত করে আবরাজ। অল্পস্বল্প ভেজা চুল সরিয়ে দেয়। ফিজা চোখ বন্ধ করে নেয়। পরপর কয়েকদিন আবরাজ খান এর করা পাগলামির সাক্ষী স্বয়ং তার এই ক্ষত-বিক্ষত শরীর। ফিজা বুঝতে পারে আবরাজ যেতে দিবে না তাকে। গোপনে দীর্ঘ এক নিঃশ্বাস ছাড়লো। চোখ বন্ধ রেখে বলে উঠলো,
-“আবরাজ ছাড়ুন। ব্যাথা পাই৷ যাবো না আমি শাড়ী পড়তে।”
আবরাজ মুখ তখনও ফিজার ঘাড়ে ডুবিয়ে রেখেছে। কাঁধে গতকাল রাতের ক্ষতস্থানে আবারও আবরাজ দাঁত চেপে ধরেছে। ফিজার কলিজায় যেন লাগছে সেই ব্যাথা। তবু্ও দাঁতে দাঁত চেপে রইলো মেয়ে টা। আবরাজ অনেকক্ষণ পর দাঁত ছেড়ে ঠোঁট বুলিয়ে দিতে লাগলো। ফিজার চোখের কোলে জল জমেছে। চোখ চিকচিক করে। আবরাজ ঘাড় থেকে মুখ তুলে বউয়ের চোখের পাতায় ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়।
পরপরই আবরাজ ফিজার ঠোঁটের কোণে আঙুল দিয়ে স্পর্শ করলো। ঘোরলাগা দৃষ্টিতে মেয়ে টার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
-“একটু কাঁদো। ভালো লাগে তুমি কাঁদলে।”
-“আপনি খুব খারাপ। অসভ্য বাজে। জঘন্য আবরাজ।”
ফিজা নাক টেনে বলে। আবরাজ এর চোখ যেন হাসছে। ঠোঁট নেড়ে আওড়াল,
-“সব তোমায় ঘিরে।”
-“তৃণা আসবে।”
হঠাৎ আবরাজ ফিজার এমন কথায় হাত সরিয়ে নিলো। এমন কথা এই মূহুর্তে সে মোটেও আশা করে নি। বিরক্ত কপালে ভাঁজ। আর রাগে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে। বারবার ওই মেয়ে টাকে তাদের মাঝে টেনে আনা কি খুব প্রয়োজন? ফিজার বোকামি আবরাজ আগে মেনে নিলেও এখন মানতে নারাজ। আগে তার সম্পর্ক জানতো না। সেইজন্য ভুল যখন যা ইচ্ছে হতো তৃণা কে নিয়ে বলতো। এখন তো সব জানে। তারপরও কেনো তাদের ভালো মোমেন্ট গুলোর মধ্যে সব সময় ওই মেয়ে টাকে টানে? ও বুঝতে পারে না আবরাজ বিরক্ত হয় এতে। আবরাজ নিজের রাগ সর্বোচ্চ কন্ট্রোল এর চেষ্টা চালায়। রয়েসয়ে বিরক্তিকর স্বরে জানায়,
-“জানি আমি।”
বলেই ওয়াশ রুম চলে গেলো। ফিজা শাড়ী ভাঁজ খুলে খুশি মনে। ভালোই লাগে বিরক্ত করতে আবরাজ কে তার। কি সুন্দর রেগে-মেগে তাকে কিছু বলতে না পেরে চলে গেলো। শাড়ির সাথে সব প্রয়োজনীয় জিনিস পড়ে সে শাড়ী পড়তে লাগলো। শাড়ী পড়তে ভালোই লাগে ফিজার। অনেকবার পড়া হয়েছে শাড়ী। জার্মানি থাকতে। আবার দেশে এসেও পড়েছে। বিয়ের প্রথম প্রথম ও পড়তো। আয়ত্তে বেশ ভালোই এসছে। শাড়ির কুঁচি টা অবশ্য একা ঠিক করা খুব একটা সম্ভব নয়। ফিজা আঁচল টা কাঁধে তুলে কুঁচি ভাঁজ করলো। সেগুলো কোমড়ে গুঁজে মাথা তুলে সামনে তাকাতেই নজরে এলো উন্মুক্ত শরীরে কোমড়ে টাওয়াল পেঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে আবরাজ। এতো দ্রুত কিভাবে শাওয়ার শেষ হলো? ফিজা ঘড়ি দেখলো। ঘড়িতে টাইম দেখে চোখ ছানাবড়া হয়ে এলো। সাতাশ মিনিট হয়েছে সে শাড়ী পড়া শুরু করেছে।
আবরাজ বউয়ের শাড়ির কুঁচি ঠিক করে দেওয়ার জন্য নিচে হাঁটু গেঁড়ে বসে গেলো। ফিজা ড্রেসিং টেবিলের উপর রাখা চুড়ির বক্স থেকে চুড়ি তুলে এরমধ্যে হাতে পরে নিলো।
আবরাজ এর গম্ভীর স্বর আবার ভেসে আসে,
-“শাড়ী পড়ে কম্ফোর্ট পাবা?”
-“আপনি বড্ডো ন্যাকা হয়েছেন আবরাজ। আমি আগেও অনেকবার শাড়ী পড়েছি।”
আবরাজ হাঁটু গেঁড়ে বসে থাকা অবস্থায় বউয়ের উন্মুক্ত কোমড়ে লাল হওয়া স্থানে ঠোঁট ছুঁয়ে দেয়। আচমকা স্পর্শ ফিজা একটু কেঁপে উঠলেও নিজে কে সামলে নিলো। হাতের কাজ শেষ হতে উঠে দাঁড়ালো আবরাজ। সম্পূর্ণ দৃষ্টিতে বউয়ের দিকে তাকালো। আবরাজ এর পছন্দ নয় অতিরিক্ত সাজসজ্জা। ফিজা তো আরো পছন্দ করে না অতিরিক্ত। তাই সাজে না সে। এতেই ভালো লাগে।
-“ওকে পড়ো। শরীর খারাপ লাগলে আমায় সাথে সাথে জানাবা।”
আবরাজ ফিজার কানে কানের জিনিস টা পড়িয়ে দিতে দিতে বললো।
ফিজা মাথা দুলিয়ে বলে,
-“আচ্ছা।”
-“আপনি বউ পাগল হয়ে যাচ্ছেন।”
পরপর আবার বললো। আবরাজ বউয়ের কপালে ওষ্ঠদ্বয় ছুঁয়ে দেয়। ঠান্ডা শীতল স্পর্শ। ফিজা চোখ বন্ধ করে অনুভব করে সেই ভালোবাসার ছোঁয়া। আবরাজ মৃদু স্বরে বললো,
-“তোমার জন্য শুধু।”
-“তৃণা কে চিকিৎসার জন্য বলিয়েন একবার। মেয়ে টা সত্যি অসুস্থ।”
একবার দু’বার কতবার সহ্য করবে সে? কপালের রগ গুলো বলে দিচ্ছে ভালোই রেগেছে এবার আবরাজ। ফিজা নিজেও এতো সময় চুল ঠিক করছিলো। তবে আবরাজ এর সাড়াশব্দ না পেয়ে আবরাজ এর দিকে তাকিয়ে থতমত খেলো। আবরাজ খাবলে ধরে ফিজার বাহু। কিছু টা উচ্চস্বরে বলে উঠলো,
-“আমাদের মাঝে থার্ড পারসন টানবে না। বিরক্ত হই আমি।”
-“আবরাজ ও অসুস্থ ওর বাবা ক,,,
ফিজা বলতে পারে না সম্পূর্ণ কথা। তার আগে কানে আসে বিকট শব্দ। নিচে কাঁচের টুকরো এদিকে সেদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। ফিজা দৃষ্টি ঘুরিয়ে ড্রেসিং টেবিলের উপর তাকালো। নেই। দামী সেই পারফিউম এর বোতল টা। আবরাজ এর পছন্দ সেটা। ফিজা টলমল অবাক চোখে আবরাজ এর দিকে তাকাতেই আবরাজ আরেক কান্ড করে বসলো। ফিজার মাথার পেছনে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে নিলো। পুরুষালী ওষ্ঠপুটের নিচে চাপা পরে ফিজার অধর। টুঁশব্দ করে না সে। আবরাজ নিজে থেকে ছেড়ে দেয় বউয়ের অধর। হাতের অবাধ বিচরণ থামিয়ে গালে রাখে হাত। জিহ্বা দ্বারা ওষ্ঠ ভিজিয়ে মোলায়েম স্বরে বলে,
সুগন্ধি ফুল পর্ব ২৫
-“রাগিয়ে দিবে না। সহ্য হয় না আমার। তুমি বুঝো। তারপরও আমাকে রাগিয়ে দাও। কলিজা আমার এমন করো না আর। আমি সময় মতো সব করবো।”
এরপর কি! আর রেগে থাকা যায়? অভিমান আসে এই পুরুষের ওপর? ফিজা তপ্ত শ্বাস ফেলে চুপচাপ বসে গেলো ড্রেসিং টেবিলের সামনে রাখা চেয়ার টায়। আবরাজ বউ কে সাজাতে হাতে নিলো সর্বপ্রথম কাজল।