পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩২
সাদিয়া আক্তার
ঘুমের মধ্যে পায়ের তলায় কিছু বাজতেই ঝনঝন শব্দ হয় ভ্রু কুচকে নেয় পুনম পা সরিয়ে নেয় ফের রাখতে শব্দটা আবার হয়। এবার পুনম উঠে বসে ঘুম আজকে কেমন ছাড়া ছাড়া হচ্ছে পুনমের মনটাও খুব একটা ভালো নেই শের “এ আলী সাহেবের সাথে কথা হয়নি আজে।
পুনম উঠে বসে গায়ের পাতলা চাদর খানা সরিয়ে খাটের ঐপাশে নজর দিতেই দেখে দুই মুঠো চুলি একটা শাড়ি আর একজোড়া পায়েল। এতো রাতে এইসব দেখে অবাক পুনম এগুলো কে দিলো ভেবেই শাড়ি খানা হাতে নেয়। দেখে চুড়ির নিচে চাপা দেয়া ধূসর রঙা চিরকুট পুনম কিছুটা আন্দাজ করেই চিরকুটটা খুলে
— কাল তো নবীন বরণ উৎসব,, আমার জোহরা কি তার শের” এ আলী সাহেবের জন্য সাজবে??
পুনমের ঠোটের কোণে হাসি ফুটে ওঠে। ল্যাভেন্ডার আর সাদা সংমিশ্রণে জামদানি শাড়ি। সাথে ল্যাভেন্ডার ও সাদা চুড়ি রুপার পায়ের এই পায়েলেরই ঝনঝন শব্দ পুনমের কানে গেছে ভেবেই হাসল।। পুনম দৌড়ে বারান্দায় গেলো দেখল আজ আর ডিজিটাল কবুতর মানে হেলিকপ্টার নেই।
মন খারাপ হলেও নিজেকে সামলায়। ঘরে ফিরে শাড়িতে হাত বুলায় তার বেশ পছন্দ হয়েছে শাড়ি খানা।
রাতে ঠিক মতো ঘুম না হওয়ার দারুন সকালে দশটার দিকে মিহির কলে ঘুম ভেঙেছে পুনমের। পুনমের উঠেই কোনো রকম গোসল সেড়ে মুক্তির ঘরে যায়।
— আপু আমাকে শাড়ি পরিয়ে দিবে??
আলমারিতে কি যেনো করছিল মুক্তি। পুনমের দিকে হেসে বলল — তোর জন্যই শাড়ি খুজছিলাম কাল বললি না আমার শাড়ী থেকে একটা শাড়ি পরবি,,,,;,,
মুক্তির কথায় ঢোক গিলল পুনম কাল মুক্তি আপুকে বলা কথা তার মনেই নেই। এদিকে ওদিকে তাকায়। ঢোক গিলে বলে — আপু শাড়ি আমার কাছে আছে,,,,
— তুই শাড়ি কই পাইলি আর কাল শপিং এ ও গেলি না চাচী এতো করেও বলার পর।।
— ঐ ঐঐ কলেজে থাকাকালীন মিহি গিফ্ট করেছিল সেটাই আছে আমার মনে নেই সকালে মিহি ফোন দিয়ে বলল সেটাই পরতে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মুক্তি মেনে নিল পুনমের কথা পুনমের দিকে তাকিয়ে দেখে তার ভেজা চুলে জামা ও ফ্লোর ভিজে যাচ্ছে মুক্তি পুনমকে ভিতরে ঢুকায় ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে ভালো মতো চুল শুকিয়ে দেয়। পুনমের চুলে হাত খোপা করতে করতে বলল — এই ভেজা চুলেই তো খোপা করে হিজাব করতি পরে মাথা ব্যথা করতো কার,,,,
পুনমের চোখ জোড়া ছলছল করল। বসা থেকেই মুক্তিকে জড়িয়ে ধরে বলল — তুমি আছো না আমার খেয়াল রাখার জন্য,,,,,,,,
মুক্তি হাসে মাথায় হাত বুলাতে চট করে পুনম উঠে দাড়ায়। বলে — দাড়াও আমি শাড়ি নিয়ে আসছি,,, বলেই নিজের ঘর থেকে শাড়ি সহ প্রয়োজনীয় সব নিয়ে আসে। পুনমের কাছে ব্লাউজ নেই এখন সেই চিন্তায় দুই বোন বিভোর।
মুক্তির ব্লাউজও হবে না এই পাটকাটি শরীরে
— এই জন্যই বলি একটু বেশী বেশী খা। বেশী বেশী খাইলে এখন এতো চিন্তা করে লাগত না।
পুনম মুখ কুচকে উঠে আলমারির সামনে যায় ঘাটাঘাটি করতে করতে তার হাতে লাগে ফুল সোল্ডার ফুল স্লিভের একটা ক্রপ টপ যেটা পুনমের প্রায় পুরো পেট ঢাকা পরবে। আর রঙটাও সাদা পুনম বিস্তর হেসে সেটা নিয়ে মুক্তির সামনে দাড়ায়।
— গরম লাগবে না এটা শীতের দিনে ঠিক আছে,,,,
— আরে চাপ নিও না তুমি তো জানো আমার গরম কম আর বাইরে অতোটা রোদও নেই আবহওয়া বেশ ঠাণ্ডা তাই চলে যাবে।
মুক্তি মানে পুনমের কথা পুনমকে সাদা পেটিকোট দিতে সে সেগুলো নিয়ে ওয়াশরুমে যায়। পরে আসতে মুক্তি শাড়ি পরানো শুরু করে।।
হাতে ল্যাভেন্ডার সাদা মিশ্রণে চুড়ি পরাতে পরাতে বলল — চুড়ি কই পেয়েছিস??
পুনমও সেই কথাই আওড়ায় মিহি দিয়েছে। মুক্তির কেনো জানি পুনমের কথা বিশ্বাস হলোনা তবুও কিছু বলল না। বড় বড় চোখে মোটা করে কাজল দিয়ে মুখে হালকা ফেস পাউডার দিয়ে ঠোটে হালকা লিপস্টিক দিয়েই পুনমের সাজ শেষ। এবার পুনম ল্যাভেন্ডার কালার হিজাব বাধল। ভাগ্যিস পুনমের কাছেই অনেক কালারের হিজাব ছিলো তাই রক্ষে। পুনম পায়ে নুপুর জোড়া পরে দাড়াতে দেখে মুক্তি ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
পুনম ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করতে মুক্তি এগিয়ে পুনমের কপালে চুমু দিয়ে বলে — পূর্ণ বড় হয়ে গেছে শিগগিরই বিয়ে দিতে হবে। বউ বউ লাগছে
শেষে বিড়বিড়িয়ে বলে — আমার ভাইয়ের বউ,,,,
মা চাচীদের থেকে বিদায় নিয়ে পুনম বের হয় বাসা থেকে নিচের মেইন গেট পাড় হতেই দেখে অটো পুনম খুশী হলো সচরাচর এই দিকে অটো থাকে না সামনে যেতে হয় আর পুনমে এই শাড়ি পরে এতো দূর হাটা সম্ভব না।।
— এই মামা যাবেন,, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়,,,
— হ আহেন
বলেই লোকটা তাকে তুলে নিলো পুনম ভাড়ার কথা জিজ্ঞাসা করলেই বলল যেই ভাড়া আহে হেইডাই দিয়েন।।
পুনম আর কিছু বলে না। ভার্সিটির সামনে নামতেই দেখে মিহি দাড়িয়ে আছে মেরুন কালারের শাড়ি পরা ভালো সেজেছে ও। পুনমের দিকে তাকায় মিহি মুগ্ধ হয় সচরাচর যাদের সাজতে দেখা যায় না তাদের সাজলে বেশ ভালো লাগে পুনমকেও সেরকমই ভালো লাগছে।
— ও মাই গুডনেস পুনু মাশাল্লাহ্ লাগছে,,,,
— ধন্যবাদ
হেসে বলল পুনম। দুইজন ভিতরে চলে গেলো বেলা বারোটা বাজে অনুষ্ঠান ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে সন্ধ্যা পযর্ন্ত চলবে। স্টুডেন্টস এ গিজগিজ করছে ভার্সিটি।
অনুষ্ঠান শুরু হলো চন্দ্রের পরিচালনা দিয়ে। গম্ভীর স্বরে একে একে অতিথিদের অভ্যর্থনা জানাচ্ছে।। আবার যারা পার্ফম করবে তাদের ডাকছে,,,, স্টেজে থাকতেই কারো দিকে চোখ গেলে একনজর তাকিয়ে চোখ সরিয়ে দেয় ঠোটের কোণে সূক্ষ্মভাবে হাসির রেখা দেখা দেয়।। মুখের সামনে থেকে মাইক সরিয়ে ছোটভাই রাব্বির কানে কানে কিছু বলতেই রাব্বি মাথা নাড়িয়ে স্টেজ থেকে নামে।
— আসসালামু আলাইকুম ভা,, আপু ঐদিকে চলেন সেখানেই বসার কথা বলেছে চন্দ্র ভাই,,,
— ভাইয়া আমি আপনার ছোট আপনি বলা লাগবে না,, আর আপনি কি যেনো বলতে নিয়েও থেমে গেলেন
পুনমের কথায় রাব্বি বোকা হেসে বলল — ঐ স্লিপ অব টাঙ,, আপনারা আসুন
পুনম ভীড় ঢেলে ভিতরে ঢুকতে যেয়েও কুকড়ে গেলো অশ্রুকণা ভীড় করল চোখের কোণে চন্দ্র স্টেজ থেকে পুরোটাই লক্ষ্য করে হাতের মুঠ শক্ত করে। এখন নামাও যাচ্ছে না
পুনম এদিক ওদিক তাকিয়ে বলল — রাব্বি ভাইয়া ওয়াশরুমে যাব,,,,,
রাব্বি তাকে লেডিস ওয়ারুমের সামনে নিয়ে যায়। পুনম ভিতরে ঢুকে ছেড়ে রাখা আচল কাধে উঠিয়ে টপটা উঠাতেই পেটে তিনটে নখের আচর পায়।
ঢুকরে কেদেঁ দেয় পুনম এমন শালীনতা বজায় রেখে শাড়ি পরেছে তাও মানুষ রুপী পশুদের থাবা দেকে বাচতে পারল না। পুনমের গা ঘিনঘিন করছে হঠাৎই লাইট বন্ধ হয়ে গেলো পুনম আরো ভয় পেয়ে গেলো
— রররাব্বি ভভভাইয়া,,
বলে ডাকলেও কেউ সাড়া দিল না। হঠাৎই কেউ পিছন থেকে হালকা ভাবে ধরল পুনম চিৎকার দিতে নিলে পুরুষটি ডেকে ওঠে জোহরা “”
এই ডাকটিতে কতটা স্নেহ ছিলো পুনম জানে না তবে বর্তমানে তার কাছে এই ডাকটি দুনিয়ার সবচেয়ে স্নেহের। পুনম ডুকরে কেদেঁ উঠল চন্দ্র পুনমের কপাল ধরে তার পিছন থেকে তার বুকে মিশায় অন্ধকারের নিয়ন আলোয় ক্ষত স্থানে মলম লাগায়। পুনমের মাথার তালুতে চুমু দিয়ে বলল — পুরো দশ মিনিট তুমি কেদেছ,,, যার জন্যে এমন হয়েছে তার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর দশ মিনিট আমি তাকে উপহার দিব বলেই আবার ও তালুতে চুমু দিয়ে বেড়িয়ে যেতে নিলে শার্টির কোণা ধরে আটকায় পুনম — ককে ককরেছে আআমি জজানি না আআপনি পপ্লিজ ঝামেলা ককরবেন না,,,,
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩১
অন্ধকারাচ্ছন্ন ওয়াশরুমে চন্দ্রের রাগে জ্বলজ্বল করা চোখ দেখলে যে কেউ ভয় পাবে।। চন্দ্র পুনমের কথার জবাব না দিয়ে বলল — মিহিকে বলছি ওর সাথে বাসায় চলে যাও ওকেই আর এখন থেকে হাটতে গেলে সাবধান সচেতনতা বজায় রেখে হাটবা অনাকাঙ্খিত স্পর্শ পেলেই প্রতিবাদ স্বরুপ ঠাডিয়ে একটা চড় দিবে বাকিটা পরে দেখা যাবে। তাদের বুঝাতে হবে নো মিনস নো,,,,,