ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৩
মিথুবুড়ি
‘বাগানবাড়িটা বাইরে থেকে যতটা অদ্ভুত, ভিতর থেকে ঠিক ততটাই ভয়ংকর। পুরো বাড়িটাই কালো রঙে মোড়ানো। সদর দরজা পেরিয়ে ভিতরে ঢুকতেই প্রথমেই চোখে পড়ল গ্র্যান্ড লিভিং এরিয়া। বিশাল থাই গ্লাস গলিয়ে বাইরের ভিউ দেখা যায়, তবে গ্রেট ভিউ বলার মতো কিছুই নেই। কেবল গার্ডরা বন্দুক হাতে মৌমাছির মতো ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের শশব্যস্ত চাহনিতে এলিজাবেথ ভয়ে ফাঁকা ঢোক গিলল। সৌভাগ্যবশত থাই গ্লাসের কারণে তারা ভেতরের কিছু দেখতে পায় না। ডুপ্লেক্স এই বাগানবাড়ির নিচতলায় রয়েছে চারটি রুম, কিন্তু উপরের পুরো তলাটা দখল করে আছে একটি মাত্র রুম।
‘বাগানবাড়ির উপরের একমাত্র কক্ষটি রিচার্ডের ব্যক্তিগত সাম্রাজ্য। কেউ সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। এলিজাবেথ রিচার্ডের কাঁধে ঝুলে থাকলেও চারপাশটা ঝাপসা চোখে দেখতে চেষ্টা করছিল। উল্টো অবস্থায় থাকা সত্ত্বেও বুঝতে পারছিল, কালো ছাড়া এই বাড়িতে অন্য কোনো রঙের অস্তিত্ব নেই। পুরো পরিবেশটাই এক ভূতুড়ে নৈঃশব্দ্যে মোড়া। রিচার্ড কালো টাইলের সিঁড়িতে লম্বা, লম্বা পা ফেলে উপরের দিকে এগিয়ে চলল। প্রতিটি কদমে এলিজাবেথের বুকের ভেতরটা শুকিয়ে আসছিল। সংকীর্ণতায় ভরা মনের কোণ ধীরে ধীরে এক ভয়াবহ ছায়ার নিচে ডুবে যাচ্ছিল। রুমে পৌঁছে দরজা পেরিয়ে রিচার্ড এলিজাবেথকে কাঁধ থেকে ছুড়ে ফেলে দিল বিছানায়। যেন এতক্ষণ কোনো ঘৃণ্য বোঝা বয়ে এনেছে। বিছানাটা তুলতুলে হওয়ায় শরীরে কোনো আঘাত লাগল না। কিন্তু এলিজাবেথের ভেতরটা তছনছ হয়ে যাচ্ছিল ভয়ে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘রুমটা দেখে এলিজাবেথের চোখ বিস্ফারিত হয়ে গেল। এত বড় আয়তাকার কক্ষ ও আগে কখনো দেখেনি। লিভিং এরিয়ার চেয়েও বিস্তৃত জায়গা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এই প্রাসাদোপম ঘর। বিলাসিতার স্পর্শে মোড়া সুবিশাল বিছানাটা কালো চাদরে। দেয়ালের একপাশে 3D ড্রাগনের পেইন্টিং, যা দেখে মনে হচ্ছিল ড্রাগনটি জীবিত হয়ে উঠে আসতে চাইছে। পেইন্টিংয়ের ড্রাগনের চোখে অগ্নিশিখার ঝলক, আর গলার কর্কশ আওয়াজ কক্ষের ভারী নীরবতাকে আরও গাঢ় করে তুলছিল। এলিজাবেথের চোখ রিচার্ডের ডান হাতে আটকালো। রিচার্ডের হাতেও ড্রাগনের ট্যাটু। বুক শুকিয়ে গেল এলিজাবেথের। এতক্ষণ নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করলেও আর পারল না। ঠোঁট কেঁপে উঠে কান্না ছাপিয়ে বেরিয়ে এলো। রিচার্ড এলিজাবেথকে দেখে মুচকি হাসল। ঠোঁটের কোণে পৈশাচিক আনন্দ।
“Cross my heart and hope to die… Welcome to my Dark Side.”
‘গম্ভীর স্বরে উচ্চারিত শব্দগুলো অন্ধকারকে আরও বেশি ঘনীভূত করে তুলল। এলিজাবেথ ভয়ে বিছানার চাদর শক্ত করে খামচে ধরল, অথচ নিজের মনকে সান্ত্বনা দেওয়ার সমস্ত চেষ্টা ব্যর্থ হচ্ছিল। ভেতরের প্রতিরোধ ক্রমেই ভেঙে পড়ছিল। থমকে যাওয়া মস্তিষ্কটা ভয়ের শীতল শিকলে বাঁধা পড়ে যায়। হঠাৎ রিচার্ডের পেছন থেকে রোশনাই আলো বেরিয়ে এলো। কাঁপা কাঁপা চোখে এলিজাবেথ তাকাল সেই দিকটায়। শিউরে উঠল গা তৎক্ষনাৎ। আলো আসছে দেয়ালের সেই বিশাল ড্রাগনের পেইন্টিং থেকে। পেইন্টিংটি যেন জীবন্ত হয়ে উঠল। ড্রাগনের মাথা নড়ে উঠল। গভীর, নিকষ কালো চোখগুলো থেকে অগ্নিশিখা বিচ্ছুরিত হতে লাগল। ড্রাগনের গলা থেকে কর্কশ আওয়াজ ভেসে আসতে চাইছে, যেন সে বন্দিত্ব ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাইছে। হিংস্রতায় ভরা পেইন্টিংয়ের সেই ড্রাগনটা প্রতিটি মুহূর্তে আরও বেশি বাস্তব হয়ে উঠল।
‘এতক্ষণ নিজেকে শক্ত রাখার যত চেষ্টাই করলেও, সব ব্যর্থ হয়ে গেল এবার। ঠোঁট কাঁপতে লাগল। অজান্তেই কান্না ফেটে বেরিয়ে এলো। এলিজাবেথের রক্তজবার মতো লাল ঠোঁটের কম্পন দেখে রিচার্ডের ঠোঁটে এক পৈশাচিক হাসি খেলে গেল। রিচার্ড একটানে পরণের ওভারকোট আর ওয়েস্টকোট খুলে মেঝেতে ছুঁড়ে মারল। ঠোঁটের কোণের পৈশাচিক হাসি আরও গভীর হলো। অধৈর্য্য হয়ে শার্টের বোতাম ছিঁড়ে ফেলে দিল। বোতামগুলো মেঝেতে পড়ে টুংটাং শব্দ তুলতেই সেই শব্দে এলিজাবেথ আরও বেশি কেঁপে উঠল। সমস্ত শরীর এক অভূতপূর্ব শঙ্কা আর প্রশ্নে আচ্ছন্ন হয়ে গেল। ঠিক কী ঘটছে তার সাথে? এই অসীম অন্ধকার, রিচার্ডের ভয়ানক হাসি, আর সেই জীবন্ত হয়ে ওঠা ড্রাগন—সবকিছু মিলে এক তীব্র বিভীষিকাময় পরিস্থিতি তৈরি করল। যার থেকে পালানোর পথ খুঁজে পাচ্ছিল না এলিজাবেথ।
‘শরীরের উপরের অংশে আর কোনো কাপড় থাকে না রিচার্ডের। ওর সুঠাম, শক্তপোক্ত বুক উন্মুক্ত হয়। যেখানে ছয়টি শক্ত ফোলা ফোলা ভাঁজ স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। এলিজাবেথের চোখের সামনে দৃশ্যটা পড়লেও, মন পুরোপুরি অন্যদিকে ছিল। শোক আর উদ্বেগে ডুবে থাকা এলিজাবেথ এক অন্ধকার, গুমোট পরিবেশে নিঃশব্দভাবে কাঁপছে। ঘন নিশ্বাসের শব্দ কক্ষের ভারী নীরবতাকে ভেদ করছিল। গলায় গাঁথা কষ্টের কারণে কথাগুলো ঠিকভাবে বের হচ্ছিল না। রিচার্ডের প্রতিটি কদম এলিজাবেথের ভিতরকার ভয় এবং অস্থিরতা আরও গভীর করে তুলে। এলিজাবেথ অসহায়ভাবে এক দুর্বল গলায় শুধু বলতে পারল,
“দয়া করে আমার এতো বড় ক্ষতি করবেন না। আমি পবিত্র।”
‘রিচার্ড তার লালসিত চোখে তাকিয়ে, ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসল। “কিন্তু এখন তো আমার রক্ষিতা।”
‘এলিজাবেথ কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠল, “আমাকে যেই কাজ করতে বললেন, সেটাই করব আমি। কিন্তু দয়াকরে আমার ইজ্জতে হাত দিবেন না। মরে যাব আমি।”
‘রিচার্ড ঠান্ডা গলায় উত্তর দিল, “নিজের ইচ্ছায় এসেছ।”
‘রিচার্ডের ভারী গলার কথাগুলো তীরের ফলার মতো এলিজাবেথের বুকে বিঁধে গেল। সে নিজেই তো এখানে এসেছিল, নিজের ইচ্ছায়। এই চিন্তা এলিজাবেথের মনকে আরও বিষিয়ে তুলল। তখন কি তবে চাঁচি এই ধ্বংস থেকেই বাঁচানোর কথা বলেছিল ইবরাতকে ? কীভাবে সে এক নারীর ইজ্জত বাঁচাতে গিয়ে নিজের সম্মানকে কলঙ্কের মুখে এনে ফেলল? বুকের ভেতর থেকে কান্না আর্তনাদ হয়ে বেরিয়ে এলো এলিজাবেথের। এলিজাবেথ জানত না, কীভাবে এই আজাবের মোকাবিলা কিভাবে করবে। যখন সে নিজের স্বেচ্ছায় পা এই আগুনে ঢেলেছে। রিচার্ড বেডে হাঁটু গেড়ে ঝুঁকে এলিজাবেথের দিকে এগিয়ে গেলো। অন্ধকারে এলিজাবেথ তখনও রিচার্ডের মুখ দেখেনি৷ এলিজাবেথ পিছিয়ে যায়, নিজেকে রক্ষা করার জন্য। কিন্তু রিচার্ডের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া ছিল অসম্ভব।
সে বাঁকা হেসে এক টান দিয়ে এলিজাবেথকে নিজের কাছে নিয়ে আসলো। পুরুষালী, গুরুগম্ভীর হাস্কি কণ্ঠে শব্দ উঠে এলো,
“JUST BE MY LADY.”
‘রিচার্ড ঝাপিয়ে পড়ল এলিজাবেথের উপর। তার নিষ্ঠুর লালসা কোনো বাধাই মানল না। এলিজাবেথের বুক ফাটানো কান্না, চিৎকার—কোনোটাই রিচার্ডের কান পর্যন্ত পৌঁছাল না। সমস্ত শক্তি দিয়ে নিজেকে রক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলো। এক মুহূর্তে এলিজাবেথ হারিয়ে ফেলল তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস—তার পবিত্রতা। একজন নারীর ইজ্জত, যা তার গৌরবের প্রতীক। সেই অলংকারে দাগ লেগে গেল। এলিজাবেথের প্রতিটি আর্তনাদ ঘরের প্রতিটি দেয়ালে ধাক্কা খেয়ে ফিরে এলো। কিন্তু সেই হিংস্র হৃদয় এতে বিগলিত হলো না। নেতিয়ে পড়া এলিজাবেথের শরীর আর কোনো প্রতিরোধ করতে পারল না। ওর শরীর অবশ, মন ভেঙে চুরমার। চোখ দিয়ে শুধু নোনা জল গড়িয়ে পড়ল। এলিজাবেথ অনুভব করল, এই ঘরে কেবল ওর দেহ ছিল। ওর আত্মা বহু দূরে পালিয়ে গেছে। যেখানে এই দুঃস্বপ্ন আর তাকে ছুঁতে পারবে না।
‘বিষাক্ত অমানবিক এক রাত শেষে অবশেষে সূর্যের আলো ঢুকল ঘরে। কিন্তু সেই আলোতে কোনো আশার রেশ ছিল না; বরং তা উদঘাটন করল গত রাতের ভয়ংকর দুঃস্বপ্নের ধ্বংসাবশেষ। রিচার্ডের হাত থেকে ঘটে যাওয়া বর্বর অত্যাচারের ভার সইতে না পেরে শেষ রাতে জ্ঞান হারিয়েছিল এলিজাবেথ। ত্রিশ বছরের ক্ষুধার্ত বাঘের মতো হিংস্র রিচার্ডের লালসার শিকার হয়েছিল এলিজাবেথ।
‘ফোনের রিংটোনে ধীরে ধীরে ঘুম ভাঙল রিচার্ডের। শেষ রাতে অনেকদিন পর শান্তির ঘুম ঘুমিয়েছিল। মাথা ভারী, চোখে ক্লান্তির রেশ। ফোন হাতড়ে বের করে দেখতে পেল ন্যাসোর নাম্বার। কল ইতোমধ্যেই কেটে গেছে। রিচার্ডকে একাধিকবার কল করার নিয়ম নেই। তাই পরপরই একটি টেক্সট আসে—’তাড়াতাড়ি নিচে যাওয়া বার্তা’। মেসেজ পড়ে রিচার্ড উঠে বসতে গেল কিন্তু হঠাৎই টের পেল তার হাতের উপর ভারি কিছু। কপালে ভাঁজ পড়ল। রিচার্ড কম্ফোর্টার সরিয়ে দেখতে পেল এলিজাবেথ তার হাতে ঢলে পড়ে আছে জ্ঞানহীন। রিচার্ডের বিশাল দেহের সঙ্গে পিঁপড়ার মতো ছোট দেখাচ্ছে এলিজাবেথকে। ঘুমের মধ্যে পুরোপুরি রিচার্ডের বুকে লেপ্টে ছিল এলিজাবেথ। এই অবস্থায় এলিজাবেথকে আড়াল করা যাবে সহজেই। যেন দুই হাত বাড়ালেই ঢাকা পড়ে যাবে মেয়েটি।
‘কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল রিচার্ড এলিজাবেথের দিকে অদ্ভুত ভাবে। স্নিগ্ধ চেহারায় এখন ক্লান্তি আর যন্ত্রণা। গালে শুকিয়ে যাওয়া জল, কালচে দাগ গলায় ও গলার নিচে ছড়িয়ে থাকা রক্তজমাটের চিহ্ন—সবকিছু এক ভয়াবহ দৃশ্যের আভাস। তবুও রিচার্ডের মনে একফোঁটাও মায়া জন্মায় না। বিরক্তিভরে লেপ্টে থাকা এলিজাবেথকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিল। অতঃপর কোমরে টাওয়াল পেঁচিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।
‘ওয়াশরুমের মিররের সামনে দাঁড়িয়ে নিজের প্রতিচ্ছবি একদৃষ্টিতে দেখতে থাকে রিচার্ড। পিঠ আর কাঁধ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখল অসংখ্য নখের আঁচড়ের দাগ, যা রাতের বুনো তাণ্ডবের সাক্ষ্য বহন করছে। কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে নিজের ভেতরের অন্ধকারকে মুখোমুখি করল রিচার্ড। ফ্যাসেটের দু’পাশে হাত রেখে আয়নায় তাকিয়ে থাকে রইল। কিছু মুহুর্তের মধ্যেই চোখের রং বদলে লালচে হয়ে উঠে ক্রোধের আগুনে জ্বলে উঠল। দাঁতে দাঁত পিষে চোয়াল শক্ত করে রিচার্ড নিজের প্রতিচ্ছবিকে দমন করতে চাইলো। এক মুহূর্তে সব ধৈর্য ভেঙে যায়। রিচার্ড হঠাৎ এক ঘুষি মেরে চুরমার করে দেয় মিররটি। কাঁচ ভেঙে মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে। হাত থেকে রক্ত গড়িয়ে নামে ফোঁটা ফোঁটা। রক্ত ঝরতে থাকে, কিন্তু রিচার্ডের চোখে কোনো অনুশোচনা নেই। রিচার্ডের জন্য রক্ত শুধু একটি সত্য। তাদের দিন শুরু হয় রক্ত ঝরানোর মাধ্যমে, আর রাত শেষ হয় সেই রক্ত মুছে।
‘একেবারে রেডি হয়ে নিচে নামে রিচার্ড। লুকাস ন্যাসো অপেক্ষা করছিল লিভিং রুমে তার জন্য। সকাল সকালই রিচার্ডের ভেজা চুল দেখে তাদের চোখ সপ্তম আকাশে। তেরছা নজরে দেখল একজন আরেকজনকে। টিভিতে নিউজ চলছিল।
[ব্রেকিং নিউজ: তথ্যমন্ত্রী আনিসুল হকের ব্যক্তিগত সহকারীর (পি.এ) লাশ পাওয়া যায় আজ সকালে। যদিও লাশটি পাওয়া গেলেও, মাথাটি এখনো নিখোঁজ। একটি কালো কফিনে ফুল দিয়ে সাজানো লাশ সরাসরি তথ্যমন্ত্রীর বাসভবনে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি, গতকাল রাতে দীর্ঘ ছয় বছর পর স্নাতক ডিগ্রি অর্জন শেষে দেশে ফিরেছিলেন তথ্যমন্ত্রীর একমাত্র ছেলে, সাদমান হক। তবে মা-বাবার সান্নিধ্যে আর ফেরা হয়নি সালমানের। বিমানবন্দর থেকে সাদমানকে গতকাল রাতে অপহরণ করা হয়। ছেলের অপহরণের খবর শুনে হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হন আনিসুল হকের স্ত্রী। বর্তমানে তিনি আইসিইউতে চিকিৎসাধীন। ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকে পরিকল্পিতভাবে করা হয়েছে। কেসটির তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সিআইডি অফিসার প্রেম আহসানের নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের একটি বিশেষ দলকে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুতই অপরাধীদের শনাক্ত করার ব্যাপারে আশাবাদী। ]
‘কড়া ফ্লেভারের ব্ল্যাক কফিতে চুমুক বসিয়ে রাজকীয় ভঙ্গিতে সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসে নিউজটি দেখল রিচার্ড। অপজিটে লুকাল আর ন্যাসো বসা । তাদেরও ঠোঁটের কোণে ও রিচার্ডের মতো বাঁকা হাসি। লুকাস নিশপিশ করছে কিছু বলার জন্য। তা লক্ষ্য করল রিচার্ড।
” Vuoi dire qualcosa? ”
“কিছু বলতে চাও?”
‘ শুকনো ঢোক গিলে মাথা তুলল লুকাস। _” বস আমি বাংলা এখন খুব ভালো বলতে পারি। ”
‘নিচের ঠোঁট উপরের ঠোঁটে ঠেলে উঁচিয়ে ভ্রু নাচাতে নাচাতে ন্যাসোর দিকে তাকিয়ে বলল রিচার্ড _”ন্যাসো ইস এ গুড ট্রেইনার।”
‘স্মিত হেসে মাথা নিচু করে ফেলল ন্যাসো। লুকাস তখনও হাত চুলকাচ্ছে। রিচার্ড আবারো বলল_” কি বলতে চাও? ”
‘গলা খাসকি দিয়ে নিলো লুকাস। ভণিতাহীন বলল,
“বস ঐ মেয়েটাকে কি পাচার করে দিবেন ? না মানে মেয়েটা কিন্তু আগুন সুন্দরী দাম আসবে খুব।”
“মেয়েটার সবকিছুই কেমন অদ্ভুত।”
‘ন্যাসোর কথায় চোখ বুজে মৃদু উপর-নীচ মাথা ঝাঁকাল রিচার্ড। _”মেয়েটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পুরোটাই রহস্যে ঘেরা।”
“বলছি কি বস মেয়েটাকে রেখে দিলে হয় না?না মানে চেহারায় খুব মায়া মেয়েটার।”
“লুকাস তোমার সম্ভবত রিটায়ার্ড নেওয়ার সময় হয়ে গিয়েছে। এই প্রফেশনে মায়ায় পড়লে চলে না।”
‘রিচার্ডের নিরেট ঠান্ডা গলায় চুপসে যায় লুকাস। সঙ্গে সঙ্গে বলল,” সরি বস।”
“ফিমেল মেড এর এরেঞ্জ করতে বলেছিলাম করা হয়েছে?”
‘উপরনিচ মাথা নাড়ায় ন্যাসো। _” জি বস।”
” অ্যাক্সেসরিজ?”
“অল ডান বস।”
“আজ থেকে ভিতরে মেল গার্ডদের আসা নিষেধ। বাইরে সিকিউরিটি আরো বাড়িয়ে দেওয়া হোক । ‘ বলে উঠে দাঁড়ায় রিচার্ড। কাল থেকে প্রতি পদে পদে অবাক হচ্ছে ন্যাসো, লুকাস। তবে ভিতরের কথা বাইরে আনার দুঃসাহস তাদের নেই। নিশ্চুপ পিছুপিছু যেতে থাকল রিচার্ডের। ন্যাসো ড্রাইভিং সিটে বসে জিজ্ঞেস করল,
“বস কোথায় যাবেন?”
‘রিচার্ড ব্রেস্ট পকেট থেকে কলম বের করে একটা ফাইলে সই করতে করতে তুষ্ট হেসে বলল_” অফিসে চল। গেস্ট আসবে নিজে দাঁড়িয়ে থেকে হোস্ট করব তাদের।”
‘রিচার্ডের দশ কথার মধ্যে খুব কথার মানেই বুঝতে পারে তারা। বরাবরের মতো এবারও ব্যর্থ রিচার্ডের কথার আড়ালে থাকা রহস্যভেদ করতে। ঠোঁট গোল করে গরম শ্বাস ফেলে ড্রাইভ করতে থাকে ন্যাসো। ______
‘গাড়ি চলছে তার নিজ গতিতে। মাত্রই আনিসুল হকের বাসভবন থেকে ফিরল সি.আই.ডি অফিসার প্রেম আর তার তিন সহকর্মী । তাদের প্রতিটি কাজেই রয়েছে শতভাগ সাফল্য। এই চার সদস্যের ট্রিমের লিডার হলো প্রেম আহসান। পুরো ট্রিম সে একাই লিড করে। ছাব্বিশ বছর বয়সেই ইতিমধ্যে নিজের দুঃসাহসের জন্য দু’বার এওয়ার্ড পেয়েছে। পাঁচ ফিট দশ ইঞ্চির প্রেমের খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি যুক্ত তামুক চেহারায় সবসময়ই দেখা যায় হাসির ঝলকানি। গাড়ি চালাচ্ছে অফিসার মাহাব। প্রেম প্যাসেন্জার সিটে গা এলিয়ে চোখ বুজে নিজের মতো করে কেসটা সাজাচ্ছে মস্তিষ্কে।
‘মাহাব ড্রাইব করতে করতে বলল_” স্যার গোপন সূত্রে জানা গিয়েছে কাল যখন মন্ত্রীর ছেলে অপহরণ হয় ঠিক তার আগের ফ্লাইটেই সেই ইটালিয়ান গ্যাংস্টার দেশে এসেছে তার দুই বডিগার্ড নিয়ে।”
‘চোখ খুলে সোজা হয়ে বসে প্রেম। কপালে ভাজঁ, দৃষ্টি গভীর, বলল,”গ্যাংস্টার রিদ কায়নাত?”
“জি স্যার রিচার্ড ওরফে রিদ কায়নাত। প্রতিবছরে একবার দেশে আসে এই গ্যাংস্টার তাও দু’দিনের জন্য। তখনই কারোর না কারোর লাশ পাওয়া যায়। অধিকাংশ সময়ই দেখা গিয়েছে বড় বড় রাজনীতিবিদ আর সংস্থার লোকজন। কিন্তু পর্যাপ্ত প্রমাণের অভাবে আজও পর্যন্ত এর বিরুদ্ধে প্রসাশন কোনো স্টেপ নিতে পারেনি।
“উপরের কারোর হাত আছে?”
“না স্যার! এই গ্যাংস্টার নিজের মতো চলে। কারোর ধার ধারে না। বরংচ বড় বড় লোকদের জন্য রিদ কায়নাত এক নতুন আতঙ্ক এখন। ইতালিতে গড়ে তুলেছে নিজের কালো ব্যবসার সাম্রাজ্য। সরকারও এর বিরুদ্ধে কিছু বলতে পারে না। সকল কিছু নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে। বাংলাদেশেও শেয়ারের ব্যবসার আড়ালে রয়েছে বড় বড় ক্যাসিনো। বিদেশি অস্ত্র আর মদ সাপলাই করে ইতালি থেকে। নারী পাচার থেকে শুরু করে সকল ধরনের অন্যায়ের সাথে জড়িত। তবুও পুলিশ ফাইলে নাম নেই।”
ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২
‘খুবই মনোযোগ দিয়ে কথা গুলো শুনলো প্রেম। হঠাৎ কিছু ভেবে ঠৌঁটে বাঁকা হাসি ফুটে উঠল। ওষ্ঠপুটে রহস্যময় হাসি বজায় রেখেই বলল_ ” একবার দর্শন নেয়ায় যায় সাহসী গ্যাংস্টাসের।”