আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৮
তানহা ইসলাম বৈশাখী
গায়ে কম হলেও ১০৩ বা ১০৪ ডিগ্রি জ্বর। পুরো শরীর তাপে পু*ড়ে যাচ্ছে। পুষ্পর হাতের মুঠোয় ধরে রাখা প্রার্থর হাতটাও তাপে ঝলসে যাওয়ার উপক্রম। প্রার্থ নিজের অন্যহাতটা দিয়ে পুষ্পর নরম গরম হাতটা ধরে ছাড়িয়ে নিলো। খাটের উপর আলগোছে রেখে দিলো হাতটা।
পুষ্প প্রশ্ন তো করেছে অনেকগুলোই কিন্তু উত্তরের আশায় রইলো না। প্রশ্নগুলো করেই তলিয়ে গেলো ঘুমে। শরীরের ব্যাধা, জ্বর নিয়ে আর জেগে থাকতে পারলো না। স্বায় দিলো না শরীর। ক্লান্তিতে তলিয়ে গেলো ঘুমের রাজ্যে।
প্রার্থ আনমনেই পুষ্পর নিষ্পাপ মুখটার দিকে চেয়ে রইলো কিয়ৎক্ষন। নজর এড়ালো না চোখের কোন দিয়ে বেয়ে পড়া নোনা জলটুকুও।
জলধারা দুপাশ দিয়েই গড়িয়ে কান অব্দি এসে ঠেকেছে। প্রার্থ একবার হাত বাড়ালো পানিটুকু মুছে দেওয়ার জন্য। পরক্ষণেই আবার হাতটা গুটিয়ে নিলো। মন চাচ্ছে ওখানটা একটু ছুয়ে দিতে। ওই পানির রাশিটুকু হাত দিয়ে মুছে দিতে কিন্তু মস্তিস্ক স্বায় দিলো না। সেথায় শুধু বাজতে থাকলো ঘৃণার বাজনা। সহ্য করতে না পারার সুর। এখন তো সহ্যও হয় না এই মেয়েকে তাহলে কেন তার চোখের পানি মুছিয়ে দিবে? কেন তার অসুস্থতায় তার খেয়াল রাখবে? কোন প্রয়োজন নেই এসব আজাইরা কাজ করার। যে ভালোবাসে তাকে কষ্ট পেতেই হয়। প্রার্থ তো তাকে বলেনি যে আয় আমাকে ভালোবাস। সে কেন জেনেশুনে স্রোতে ভাসা নদীতে পা ফেলেছে। নদী তো তাকে টেনে নিবেই। স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যাবে বহুদুর যেখান থেকে ফেরার কোন পথ নেই। হয় ভেসে যাও নয় ডু*বে ম*রো।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এসব ভেবে ভেবে হাতটা গুটিয়ে নিলো আরো একটু। চলে যেতে চাইলো এখান থেকে। কিন্তু চোখদুটো আটকে রয় সেই অশ্রুধারায়। কেমন চিকচিক করছে বেয়ে পড়া পানির জায়গাটা। আস্তে ধীরে নিজে থেকেই হাত চলে গেলো সেখানে। খুব স্বযত্নে বুড়ো আঙ্গুলটা ছুয়িয়ে দিলো চোখের কোনায়। আলতো ছেয়ায় মুছে নিলো অশ্রুজল। অন্যপাশের চোখটাও বুড়ো আঙুল দিয়ে মুছিয়ে দিলো। মুখে হাত দিলে বুঝতে পারলো ঠিক কতটা গরম তার পুরো শরীর। অথচ ক্ষণে ক্ষণে কাপছে শরীর। চিকন গোলাপি ঠোঁট জোরাও সমানতালে কাপছে। একটা ব্ল্যাঙ্কেট পুষ্পর গায়ে আগে থেকেই দেওয়া ছিলো। কাবার্ড থেকে আরেকটা এনে সেটাও উপর দিয়ে দিয়ে দিলো যাতে শীত কম লাগে।
গায়ে ব্ল্যাঙ্কেট জরিয়েই প্রার্থ চলে গেলো সোফায় ঘুমানোর জন্য। এর থেকে বেশি এখন সে আর করতে পারবেন না। মনো মনে বললো। “প্রার্থ চৌধুরীর সেবা কখনোই পাবি না প্রাপ্তি এহসানা। শুধুমাত্র মায়ের জন্য তোকে টলারেট করছি। একদিন তোকে আমার জীবন থেকে বের করে দেবো৷ মুছে ফেলবো তোর নাম। ইউভান প্রার্থ চৌধুরীর নামের পাশে আর প্রাপ্তি এহসানা পুষ্প নামটা থাকবে না। চিরজীবনের জন্য মুছে ফেলবো তোর এই নাম।
সকালের শীতল শীতল পরিবেশ। বেশ ঠান্ডা ঠান্ডা আবওহাওয়া আজ। হয়তো বৃষ্টি হবে। খুব একটা সময় হয়নি সকাল হয়েছে। ভোর সকাল বলা যায়। এই ভোরেই পুষ্পর ঘুম ভেঙে গেলো। চোখ খুলে প্রথমে এদিক ওদিক তাকালো। বুঝতে পারলো এটা প্রার্থর রুম। দেয়াল ঘরিটায় দেখতে পেলো সবে সারে পাঁচটা বেজেছে।
পুষ্প শুয়া থেকে উঠে বসতে চাইলো কিন্তু মাথাটা এত ভার লাগছে ঠিকঠাক উঠে বসতেও কষ্ট হচ্ছে। কপালে হাত রাখলে বুঝলো মাথায় ব্যান্ডেজ। মনে পড়ে গেলো কালকের সব ঘটনা। কিছুক্ষন চোখ বুজে বসে রইলো বিছানায়। মাথাটা প্রচন্ড ভার। হালকা ব্যাথাও অনুভব করছে।
চোখটা খুলে সামনে তাকাতে দেখলো প্রার্থ সোফায় সুয়ে আছে। গায়ের কাঁথাটা পরে আছে নিচে। হয়তো শীত করছে। একদম কাচুমাচু হয়ে শুয়ে আছে। পুষ্প উঠলো ওর গায়ে কাথা দিয়ে আসতে। কিন্তু শরীর স্বায় দিলো না। মাথাটা ভারের জন্য হাটতে কষ্ট হচ্ছে। আবার পায়ের ব্যাথা। পয়ের আঙ্গুলটায়ও ব্যাথা। এরকম ব্যাথা নিয়েই নিজের একপ্রকার জোর খাটিয়ে খুড়িয়ে হেটে গেলো প্রার্থর কাছে। কাঁথা টা উঠিয়ে জরিয়ে দিলো তার গায়ে।
প্রার্থর চুলগুলো একটু বড় বড় থাকায় অগোছালো হয়ে পড়ে আছে সমস্ত কপালজুরে। মন চাইলো চুলগুলোকে একবার হাত দিয়ে গুছিয়ে দিতে। হাতটা এগোলোও কিন্তু পরক্ষনেই আবার গুটিয়ে নিলো। দরকার কি এত যত্ন করার। যে যত্ন, ভালোবাসার মর্ম বুঝেনা তাকে অযত্নে রাখাই উচিত। অযত্নে থাকতে থাকতেই একদিন বুঝবে যত্নে থাকার মর্ম।
পুষ্প ঘুরে পা বাড়ালো চলে যাওয়ার জন্য। ওমন সময় দরজায় টোকা দিলো পূর্নিমা বেগম। প্রার্থকে ডেকে ডেকে বলছে।
“-প্রার্থ। প্রার্থ বাবা উঠেছিস? দরজাটা খোল। পুষ্প উঠেছে? কিছু লাগবে ওর?
বড়আম্মুর গলা শুনে পুষ্পর চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। প্রার্থ তো সোফায় ঘুমিয়ে। বড়আম্মু এসে দেখলে কি ভাববে যে বিয়ের এতদিন পরেও তারা আলাদা ঘুমায়। কষ্ট পাবে তো।
পুষ্প ঘুরে ডাকলো প্রার্থকে। কন্ঠ যথাসম্ভব ধীর করে বললো।
“-প্রার্থ! প্রার্থ ভাই। শুনছেন? উঠুন ।
পুষ্পর হাতের ঝাকুনি আর ডাকে চোখ মেলে তাকালো প্রার্থ। চোখের সামনে পুষ্পর মুখ দেখে লাভিয়ে উঠে বসলো। ওকে এত কাছে দেখেই রেগে গেলো।ভ্রু কুচকে দাত খিচে বললো।
“-তুই এখানে কেন? তুই না অসুস্থ? তারপরও আমার কাছে কেন এসেছিস? সবসময় কাছে আসার বাহানা খুজিস?অসুস্থ শরীর নিয়েও এখানে এসে দাড়িয়ে আছিস?
পুষ্প সোজা হয়ে দাড়ালো। রাগে ক্ষোভে হাতদুটো মুঠোয় পুরে নিলো। দাতে দাত চাপলো কথাগুলো হজম করার জন্য কিন্তু হলোনা। সাত-সকালে এমন বিষাদময় কথা কারই বা হজম হয়। কিছু বলবে তার আগে আবার ডাক পরলো বাইরে থেকে। প্রার্থ যেতে চাইলো দরজা খুলে দেওয়ার জন্য। কিন্তু পুষ্প আটকে দিলো তার কঠোর কথার বানে।
দাতে দাত লাগিয়ে বললো।
“-এজন্যই ডাকছিলাম। আপনার কাছে আসার জন্য বাহানার প্রয়োজন নেই আমার। বিয়ের পর একবারও দেখেছেন আপনার কাছে যাওয়ার জন্য বাহানা খুজেছি বা আপনার পাশে গিয়ে ঢলাঢলি করেছি? সবসময় নেগেটিভ মাইন্ড নিয়ে কেন ঘুরেন? আল্লাহ মাথা তো দিয়েছে তবে ঘটে ঘিলু দেয়নি মনেহয়। আপনার কি মনেহয় আমি এতটাই নির্লজ্জ? আপনি….
“-হয়েছে তোর? বকবক থেমেছে? তাহলে আমি গিয়ে দরজাটা খুলে আসতাম।
প্রার্থর কথায় পুষ্প থেমে গেলেও আবার ক্ষেপে উঠলো। বললো।
“-না হয়নি। একটা বিষয় আগে ক্লিয়ার করে দেই। এখানে এসেছিলাম আপনাকে ডাকতে। বড়আম্মু আপনাকে সোফায় দেখলে খারাপ ভাবতে পারে। টেনশনে পড়তে পারে যেটা বড়আম্মুর জন্য মোটেও ভালো নয়। সেজন্য ডাকতে এসেছিলাম। ওইখান থেকে ডাকলে শুনতেন না। এজন্য এখানে এসেছি। আপনাকে দেখার জন্য বা আপনার কাছে আসার জন্য নয়। আমি আগেও বলেছি আমি ভালোবাসার জন্য ভিক্ষারি হবো না। নির্লজ্জও হবো না। চাইলে আমাকে মেনে নিবেন না চাইলে না নিবেন। তবুও আমার উপর বাজেভাবে আঙ্গুল উঠাবেন না। আপনার এত অপমান সহ্য করে এখনো এখানে আছি শুুধুমাত্র বড় আম্মুর অসুস্থতার জন্য। এর বেশি ভাবার দরকার নেই। সুযোগ দিয়েছিলাম সেটার ডেট ওভার হয়ে গেছে। সময় এলে আমি নিজে আপনার জীবন থেকে, এই পরিবার থেকে অনেক দূরে চলে যাবো। বারবার আমাকে হেয় করার চেষ্টাও করবেন না। যান বালিস কাথা বিছানায় রেখে দরজা খুলে দিন।
এতবড় একটা ভাষন দিয়ে ঘুরে গেলো চলে যাওয়ার জন্য। অসুস্থ শরীর নিয়ে এই কথাটুকু খুব কষ্ট করে বললো। মাথা প্রচন্ড ব্যাথা, ভার থাকা সত্তেও কঠোরভাবে দাঁড়িয়ে কঠরতা বজায় রেখেই বলেছে কথাগুলো। পুষ্প ঘুরতেই প্রার্থ তার হাতের বাহু ধরে জোরে টান দিয়ে নিজের দিকে ঘুরালো। পুষ্পর মাথা চক্কর কেটে উঠলো সাথে সাথে। দুহাতে চেপে ধরলো মাথা।
প্রার্থ দাঁতে দাঁত চেপে বললো।
“-একটা থাপ্পড় দিলে না সব বড় বড় ডায়লগ বেড়িয়ে যাবে। আমার সামনে একদম ডায়লগ দিবি না। তোর গায়ে হাত তুলতে দুবারও ভাববো না আমি।
পুষ্প নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে বললো।
“-জানি আমি। আপনি গায়ে হাত তুলতে পারবেন জানি। কিন্তু আমি ভয় পাই না মিস্টার ইউভান। নিজেকে খুব বড় কিছু মনে করবেন না কখনোই। উপরে উঠতে উঠতে হুট করে মাটতে পড়তে সময় লাগবে না।
এখন আপনার যদি ঝগড়া করার ইচ্ছে থাকে তো একা একা বকবক করুন। আমাকে আর একটা কথাও বলবেন না। যদি ইচ্ছে হয় দরজাটা খুলে দিয়েন। বড়আম্মু হয়তো এখনো দাঁড়িয়ে আছে বাইরে।
কথাটুকু বলে পুষ্প আস্তে আস্তে হেটে চলে গেলো বিছানার কাছে। প্রার্থ দুহাত মুঠো করে নিলো। হাতের রগগুলো ফুলে উঠলো। চোয়াল শক্ত করে আছে। রাগে গলার রগগুলোও ফুলে উঠেছে। কপালে চুলের আড়ালে ফুলে উঠেছে নীল রগগুলো। আজকাল পুষ্পকে ঠিকঠাক চিনতে পারছে না প্রার্থ। কাল রাতেও তার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য কতটা আকুতি জানালো অথচ আজ! আজ সকালেই সব চেঞ্জ হয়ে গেলো? এত বড় বড় কথা ফুটে গেলো মুখে? এতকিছুর পরও প্রার্থ আর পুষ্পকে কিছু বললো না। বাইরে মা দাঁড়িয়ে আছে এখন কোন ঝামেলা করলে সমস্যা হবে। তাই দুবার বড়বড় শ্বাস নিয়ে গেলো দরজা খুলতে। দরজার ওপাশে কাউকে পেলো না। পুর্নিমা বেগম হয়তো ডেকে সাড়া না পেয়ে আবার চলে গেছে। প্রার্থ আর দরজা আটকালো না। খোলা রেখেই ঢুকলো ঘরে। পুষ্পকে এখন কয়েকটা কথা না বললেই নয়। কিন্তু পুষ্পর দিকে তাকাতে দেখলো পুষ্প দুহাতে মাথার দুপাশ ধরে আছে। হয়তো মাথায় ব্যাথা করছে।
শরীর অসুস্থ বলে আর কিছু বললো না। এখন নিজেরও ওর সাথে কথা খরচ করতে ইচ্ছে করছে না।তাই বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। মিউজিক রুমে বসে একটু শান্তির খোজ করবে এখন।
বেলা একটু গড়িয়েছে। সময় এখন ঘড়ির কাটায় প্রায় আটটা। ড্রয়িংরুমে সকলে বসে আছে। পুষ্পও এসেছে। পূর্নতা বেগম দেখা করতে গিয়েছিলেন তখনই মাকে বলে নিচে এসেছে। রুমে বসে থাকতে আর ভালো লাগছিলো না। ময়ের সাহায্যে নিচে নেমে এসেছে। পূর্নিমা বেগম এবং প্রত্যয় সাহেব আজকেই চলে যাবেন। মেয়ের অসুস্থতায়ও থাকতে পারছেন না তারা। দুজনেই চাকুরীজীবি। পুষ্পর বাবা একজন সরকারী কর্মকর্তা এবং মা একটা হাই স্কুলের টিচার। দুজনেরই ছুটি মঞ্জুর হবে না। তাই তাদের যেতেই হবে নিজেদের কাজে।
সময় হয়ে এসেছে চলে যাওয়ার। একটু পরেই বেড়িয়ে যাবে তারা৷
সবার কথাবলার একফাকে পুষ্প বলে উঠলো।
“-আম্মু আমি বাসায় যাবো। আমাকে বাসায় নিয়ে চলো।
উপস্থিত সকলের চোখ গিয়ে পরলো পুষ্পর উপর। পূর্নতা বেগম বললেন।
“-কেন রে ? এসময় তোকে বাড়িতে নেই কিভাবে? বাড়িতে তো কেউ থাকবে না। আমি তোর বাবা সারাদিন কাজের জন্য বাইরে থাকবো। প্রিয়া তোকে একা দেখে রাখতে পারবে না। এখানে আপা আছে প্রার্থ আছে সবাই আছে তোর খেয়াল রাখতে পারবে। আর কয়েকটা দিন থাক, একটু সুস্থ হ তখন এসে নিয়ে যাবো। কেমন?
পুষ্প শুনতে চাইলো না কথা। মাথা নিচু করে মন খারাপ করে বললো।
“-আমি বাসায় যাবো আম্মু। আমাকে নিয়ে চলো। আব্বু আমি বাসায় যাবো।
প্রত্যয় সাহেব মেয়েকে প্রশ্রয় দিলেন। বললেন।
“-পূর্ন! ও যখন যেতে চাইছে তাহলে নিয়েই যাই। কিন্তু পুষ্প আমাকে একটা কথা বল। তোর এখানে থাকতে খারাপ লাগছে? প্রার্থ তোর সাথে খারাপ ব্যাবহার করে?
এবার সবার চোখ আটকালো প্রত্যয়ের দিকে। ভদ্রলোক প্রথমেই চাননি তার মেয়ের সাথে প্রার্থর বিয়ে হোক। তবুও ওইযে অসুস্থ মানুষটা আর তার স্ত্রীর জন্য বিয়ে দেওয়া। এখন মেয়ে যদি একবার বলে সে এখানে থাকবে না। তাহলে ভদ্রলোক আর এক মুহুর্তও দেরি করবে না। মেয়ে যা চাইবে এবার তাই হবে।
পূর্নিমা বেগমও পুষ্পকে প্রশ্ন করলো।
“-তুই হঠাৎ যেতে চাইছিস কেন রে মা? তোর কষ্ট হচ্ছে এখানে থাকতে? প্রার্থ কিছু বলেছে?
পুষ্পর চোখ টলটল করছে। চোখ লুকাতে মাথা নিচু করলো। বললো।
“-তেমন কিছু না। আমার এলাচির কথা মনে পড়ছে। আমি এলাচির কাছে যাবো।
সবার জানে জান এলো। সবাই ভেবেছে কি না কি হয়েছে। কিন্তু সে তো তার এলাচির জন্য মন খারাপ করে আছে। প্রিয়াও একই কথা বললো।
“-আমারও রে বুবু। এলাচি টাকে কতদিন হয় দেখি না।
অন্ত প্রিয়ার মাথায় টোকা দিয়ে বললো।
“-কতদিন হয় আবার? দুদিনই তো হলো তোরা এখানে এসেছিস।
প্রিয়া মাথায় হাত দিয়ে চেচিয়ে উঠলো অন্তর উপর।
“-তুমি চুপ করো অন্ধের বাচ্চা। তুমি কি বুঝবে আমাদের ভালোবাসা। এলাচিকে ছাড়া আমরা একদিনও থাকতে পারি না। সেখানে দুদিন আমাদের কাছে অনেককিছু।
পুর্নিমা বেগম বললেন।
“-হয়েছে। তোরা থাম। আমি এলাচিকে আনার ব্যাবস্থা করছি।
অন্ত বললো।
“-কিন্তু প্রার্থ ভাই তো ওটাকে পছন্দ করে না। যদি আবার রাগ করে।
প্রিয়া আবার চেতে উঠলো।
“-ওই অন্ধের বাচ্চা। ওটা বললি কেন? ওটা কি শব্দ? ওর নাম এলাচি। নাম ধরে ডাকবি। একদম এটা ওটা বলবি না।
অন্ত প্রিয়ার মাথায় আরেকটা থাপ্পড় মেরে বললো।
“-তুই আমাকে তুই তুই করে ডাকলে আমিও ওটাকে এটা ওটাই বলেই ডাকবো। ফেল্টুস কোথাকার।
“-অন্ধের বাচ্চা।
প্রিয়া তেড়ে যেতে চায়। তার আগেই মেয়েকে ধমকে উঠলেন পূর্নতা এবং প্রত্যয়।
“-চুপ কর প্রিয়া। দিনদিন অসভ্য হচ্ছিস। ও তোর বড় না? তুই করে কেন কথা বলিস?
প্রত্যয়ও বললেন।
“-প্রিয়া আমরা তোকে এরকম শিক্ষা দেইনি। সরি বল অন্তকে। আর কখনো তুই বলবি না।
অন্তই আবার বকা খাওয়া থেকে বাচাতে চাইলো প্রিয়াকে। বললো।
“-সমস্যা নেই আঙ্কেল। ও মজা করে আমার সাথে। এসব নিয়ে আমি মাইন্ড করি না। আপনি বইকেন না।
প্রিয়া বিড়বিড় করে বললো।
“-ঢং! নিজে বকা খাইয়ে নিজেই আসে তেল দিতে। হুহ্!
সবার কথা থেমে গেলে পুষ্প আবারও বললো।
“-আমার এলাচিকে চাই। হয়তো আমাকে এলাচির কাছে নিয়ে চলো নয়তো ওকে এনে দাও আমার কাছে।
পুর্নিমা বেগম বললো।
“-আচ্ছা ঠিকাছে। এলাচিকেই এখানে নিয়ে আসবো। ঠিকাছে? খুশি?
পুষ্প চুপ থাকলেও প্রিয়া খুশিতে লাফিয়ে উঠলো।
এমন সময় উপর থেকে নেমে আসছিলো প্রার্থ। কালো শার্ট জরানো গায়ে। হাতে ঘড়ি। চুলগুলো আজ ঝুটি করা নেই। সবগুলো পেছনে ঠেলে দেওয়া। হাটার কারনে বারবার সামনে আসছে সেগুলো। আবার হাত দিয়ে ব্যাকব্রাশ করে পেছনে ঠেলছে সে। পুষ্প ওকে আসতে দেখে আজ আর তাকিয়ে রইলো না মুখ আমাবস্যার মতো ভার করে তাকালো অন্যদিকে। প্রার্থ একবার পুষ্পর হাবভাব দেখে নিয়ে দাড়ালো পূর্নিমা বেগমের সামনে। সামনে এসে বললো।
“-ছোট মা, আঙ্কেল কি বাসায় যাচ্ছো? থাকবে না?
“-না রে বাবা। আমার তো স্কুলের ছুটি নেই তোর আঙ্কেলেরও ছুটি হবে না নয়তো থেকে যেতাম।
“-ঠিকাছে চলো আমি ওদিকেই যাচ্ছি তোমাদের নামিয়ে দেবো।
পুর্নিমা বেগম বললেন।
“-কিন্তু আজ তো মনেহয় বৃষ্টি হবেরে প্রার্থ। আজ বাইরে না গেলি।
“-কিছু হবে না মা। আমি গাড়িতে থাকবো বৃষ্টির পানি লাগবে না শরীরে।
“-যখন গাড়ি থেকে নামবি তখন তো লাগবেই।
“-মা টেনশন করোনা। ওইটুকুতে কিছুই হবে না।
পুর্নিমা বেগম আর বাধ সাধলেন না। প্রার্থর এই একটা জিনিস খুব নাজুক। বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লে জ্বর আসে। কঠিন রকমের জ্বর। এজন্য পুর্নিমা কখনোই ছেলেকে বৃষ্টিতে ভিজতে দেয় না। প্রার্থও সবসময় বৃষ্টি এড়িয়ে চলে।
প্রার্থ যখন যাবেই তাই পূর্নতা বেগম ভাবলেন এলাচিকে নাহয় প্রার্থর কাছেই পাঠিয়ে দেবে।
“-শোন প্রার্থ। পুষ্প আর প্রিয়া বলছিলো এলাচিকে ওদের কাছে এনে দিতে। তুই নিয়ে আসতে পারবি?
এলাচির নাম শুনেই প্রার্থর চোখ মুখ কুচকে গেলো। ওইভাবেই বললো।
আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ৭
“-ইউ নো ছোটমা আই জাস্ট হেট দিস এনিমেল। ওটাকে আমি আমার বাড়িতে আনবো না।
“-বলছিলাম তো আমাকে নিয়ে চলো। আমার এলাচিকে লাগবে। ওর কাছে দুদিন থেকে চলে আসবো।
পুষ্প ক্ষানিক রাগ দেখিয়ে মায়ের উদ্দেশ্যে বললো কথাটুকু। পুর্নিমা বেগম বললো।
“-তোকে যেতে হবে না। প্রার্থ না আনুক আমি অন্তকে দিয়ে আনিয়ে দেবো। এলাচি এখানেই থাকবে। তোকে কোথাও যেতে হবে না।