বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৮

বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৮
Arshi Ayat

বাসার সামনে এসে গাড়ি থেকে নেমে জানালার সামনে একটু ঝুঁকে কৃতজ্ঞতা স্বরুপ অনুরূপ’কে বলল,’ধন্যবাদ,ডাক্তার।’
উত্তরে অনুরূপ হেসে বলল,’এবার বাসায় গিয়ে রেস্ট নিন।’
‘আপনিও,বাই।’
‘বাই,মিলাত।’
অনুরূপ চলে যাওয়ার পর মিলাত ঘরে ঢুকলো আর তখনই নিরু ফোন করলো।মিলাত রিসিভ করতেই বলল,’মামা,কেমন আছেন আপু?’
‘আলহামদুলিল্লাহ,এখন ভালো।’
‘মা’কে ফোন দিলাম একটু আগে ধরলো না।’
‘ব্যাগে থাকায় হয়তো আওয়াজ শুনতে পায় নি।আর ফুপু,আম্মুর সাথেই আছে।চিন্তা করিস না।’
‘আচ্ছা,শোনো।তোমাকে একটা কথা বলব।’
‘বল।’
‘তোমার সাতকানিয়ায় কোনো বন্ধু আছে?’
মিলাতের তৎক্ষণাৎ রেভানের কথা মনে পড়লো না তাই সে না ভেবেই বলে দিলো,’না,তো।’

‘ও আচ্ছা।’
‘কেন বল তো?’
‘না,এমনিই।’
‘কি লুকাচ্ছিস?’
নিরু ভাবলো মামা অসুস্থ তার ওপর সকালের ঘটনাটা বললে আপু আরও চিন্তা করবে তাই নিরু ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলো।আরও দু’চারটে কথা বলে ফোন রেখে দেওয়ার পর নিরু ভাবলো লোকটা কে যে মিলাতকে নিজের বন্ধু বলে পরিচয় দিলো!কোনো খারাপ লোক নয় তো?
কাল অনেক ঘোরাঘুরি হয়েছে।তাই আজ বিশ্রাম নিচ্ছিলো সাইফুল আর চৈতি।তবে চৈতি দুপুর হতেই উঠে গেছে।কিছু কেনাকাটা করা লাগবে।আজ রাতের বাসেই ওরা কক্সবাজার যাবে।চৈতি নিজেই তৈরি হলো সাইফুলকে ডাকার প্রয়োজন মনে করলো না।
শপিংয়ে বেরিয়ে প্রথমে কিছু সুতি টপস,একটা সানগ্লাস নিলো তারপর আরেকটু ঘুরে মেক-আপ আইটেম কিনে মল থেকে বেরিয়ে কিছুদূর এগিয়ে রিকশা নিলো।কিছুটা যাওয়ার পরই দেখলো রাস্তার মধ্যে একটা মেয়ে ছেঁড়া জুতা হাতে দাড়িয়ে আছে কিন্তু খালি রিকশা পাচ্ছে না।চৈতি তৎক্ষনাৎ রিকশা থামিয়ে রিকশা থেকে নেমে গিয়ে মেয়েটার সামনে বলল,’তুমি রেভান ভাইয়ার বোন না?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নাইমা কিছুটা অবাকের স্বরে বলল,’হ্যাঁ,কিন্তু আপনি কে?’
‘আমি তোমার ভাইয়ার ইউনিভার্সিটির জুনিয়ার।’
‘আমাকে চেনেন কিভাবে?’
‘কি বলো!তোমাকে চিনবো না!রেভান ভাইয়ার আইডিতে দেখেছি।’
‘ও আচ্ছা।’
‘হ্যাঁ,চলো।আমার সাথে রিকশায় আসো।এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে পাবে না এখন রিকশা।ওদিক থেকে ফিলআপ হয়ে আসে।’
নাইমারও আর মন চাচ্ছিলো না এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে তাই ও চৈতির সাথে রিকশায় উঠে গেলো।বেশ খানিকটা দূরেই বাস স্টেশন।একেবারে বাস স্টেশনে পৌঁছে দু’জনেই নেমে পড়লো।নাইমা ভাড়া দিতে চাইলেও চৈতি দিতে দিলো না একদমই।এরপর নাইমা বিদায় জানানোর জন্য বলল,’ধন্যবাদ আপু।’
‘ইট’স ওকে।কোথায় যাবে তুমি?’

‘সাতকানিয়া।’
‘ও আচ্ছা।আমিও যাব।আমিও ওখানেই থাকি।’
‘তাহলে তো ভালোই।চলুন একসাথে যাই।’
নাইমা আর চৈতি একইসাথে বাসে উঠলো।যদিও চৈতি সদরেই থাকে তবুও রেভানদের বাড়ি যাওয়ার লোভ সামলাতে পারলো না।প্রথমে ওর বাড়ির লোকদেরকে আয়ত্তে আনতে পারলেই কাজ অর্ধেক শেষ।
বাসে যেতে যেতে অনেক কথা হলো দু’জনের।ইতিমধ্যেই অনেকটা ফ্রী হয়ে গেলো নাইমা চৈতির সাথে।সাতকানিয়া পৌঁছে নাইমার সাথে ওদের বাসার সামনে আসতেই চৈতি ভান ধরে বলল,’আচ্ছা নাইমা।আসি তাহলে?’
‘না,আপু বাসায় আসুন।’
‘আরে না।আরেকদিন।’
‘আরেকদিন আবার আসবেন।আজকেরটা আজকে আসেন।’
নাইমা নাছোড়বান্দা।চৈতি মনে মনে হাসলো।বলল,’আরে,ননদিনী আস্তে,আস্তে!পারমানেন্টলি তোমাদের বাড়ি আসার ব্যবস্থা করছি,দাঁড়াও।’
তবে উপর দিয়ে নিপাট ভালো মানুষের মত মুখ করে ভেতরে ঢুকলো।নাইমা সালেহা বেগমকে ডাকলো।তিনি আসতেই বলল,’মা,এই আপুটা ভাইয়ার ইউনিভার্সিটির জুনিয়র।আজ আমার জুতা ছিঁড়ে যাওয়ার পর যখন খালি পায়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম রিকশার জন্য তখন উনি আমাকে হেল্প করেন।ওনার বাসাও এদিকেই তাই বাড়ি নিয়ে এলাম।’

সালেহা বেগম চৈতির কাছে গিয়ে বললেন,’আসো,মা বসো।চা নিয়ে আসি আমি।’
‘আরে,আন্টি ব্যস্ত হয়েন না।আমি চলে যাব এখনই।’
‘না,তুমি বসো।আমি আসছি।’
সালেহা বেগম চলে গেলেন চা বানাতে।চৈতি বসলো ওর সামনে নাইমাও বসলো।কথার ছলেই নাইমা বলল,’আজ রাতে ঢাকা যাচ্ছি আমরা।’
‘কেন?’
‘আমার কাজিনের বিয়ে।তবে ভাইয়া যাবে না।’
চৈতি যেন একটু শান্তি পেলো।বলল,’যাবে না কেনো?’
‘ভাইয়ার অফিস আছে।শুধু বিয়ের দিন যাবে।আবার চলে আসবে।’
‘ও আচ্ছা।’

এরমধ্যেই সালেহা বেগম চা নিয়ে হাজির হলেন।চা শেষ হতে হতেই তিনজন আড্ডা দিলো।
বেশ খানিকক্ষণ রেভানের মা,বোনের সাথে কাটিয়ে চৈতি বেরিয়ে এলো।এবার আবার সদরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হলো।মনে শান্তি লাগছে এখন।
বিকেলে ঘুম থেকে ওঠার পরই মিলাতে ফোন বাজলো।ও ভাবলো হয়তো মা ফোন দিয়েছে।তড়িঘড়ি করে ফোন হাতে নিতেই দেখলো রেভান।একটু বিরক্তি নিয়েই রিসিভ করে বলল,’হ্যালো।’
‘হ্যালো,মিলাত।তোমার বাবা কেমন আছে?’
‘আলহামদুলিল্লাহ,তবে আপনি জানলেন কিভাবে?’
‘যেভাবেই জানি তার আগে উত্তর দাও চট্টগ্রাম ফিরবে কবে?’
‘ফিরবো না।আমি তো ওখানে বেড়াতে গিয়েছিলাম।এখন এখানেই থাকব।’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৭

‘তোমার বেড়ানো শেষ?’
‘না,আবার গেলে বাকিটা।’
‘আচ্ছা।ফ্রী আছো?কিছুক্ষণ কথা বলা যাবে?’
‘না,আসলে হাসপাতালে যেতে হবে দেরি হয়ে গেছে।রাতে কথা বলি?’
‘আচ্ছা।’
ফোন রেখে মিলাত তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে হাসপাতালে ছুটলো।
বাসে বসেই নিজের আইডি থেকে মিলাত আর সাইফুলের তালাকনামার একটা ছবি আর ওদের যুগলবন্দী ছবি একটা রেভানকে পাঠালো চৈতি।তারপর নিচে লিখলো দেখুন প্রমাণ।আমি সত্যি বলেছি।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৯