প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ১৭
মিমি মুসকান
সকাল হয়েছে বেশ অনেকক্ষণ আগে। গতকালও সে ভোরে উঠে বর মশাইয়ের জন্য চা নাস্তা বানিয়ে তার সামনে হাজির হয়েছিলো। কিন্তু আজকের সকাল ভিন্নরকম। কি অদ্ভুত ভাবে একদিনের মধ্যে সবকিছু বদলে গেলো। মানুষের পরিস্থিতি, মন বদলাতে সময় নেয় না। গতকালে যে ভালোবাসার চাদরে নিজেকে জড়িয়ে নিয়েছিলো আজ সেখানেই যেন নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। পুরো রাতে এক মূহুর্তের জন্য ঘুমাতে পারেনি সে। চোখ পিট পিট করে মাথার উপর ঘুরন্ত ফ্যানের দিকে চেয়ে আছে প্রিয়তা। ভালোবাসা কেন মানুষকে কাঙাল বানায় এখন তা হারে হারে টের পেয়েছে সে।
পর্দা ভেদ করে আলো টুকু আসার ব্যর্থ চেষ্টা। প্রিয়তা চায় আলো না আসুক। অন্ধকারে সে মিশে যাক। এই জীবন আর ভালো লাগছে না তার। প্রান্তিক চৌধুরী কেন এমনটা করল, কি ছিল তার মনে এসব কিছুতে তার যায় আসে না। কেবল মনে হয় প্রান্তিক তাকে কখনো ভালোবাসেনি। যা ছিল সব অভিনয়, নাটক। এই মেকি ভালোবাসা নিয়ে সে এতো গর্ববোধ করত সে। ধিক্কা’র নিজেকে!
সেই মেয়েটার কথা মনে পড়ছে। সেদিন যাকে রেস্টুরেন্টে এতো অপমান করল, বরের হয়ে এতো কথা বলল! কিন্তু এখন! এখন তার মুখ কোথায় গেলো। নিজের কাছেই কতোটা ছোট হয়ে গেল গেছে সে। ছোট হতে হতে যেন মাটিতে মিশে গেছে একদম। এই বাড়িতে তার দমবন্ধ হয়ে আসে। এখান থেকে বেরুতে চায় সে। এই ভালোবাসা, আবেগ, সংসার সবকিছুই তার কাছে ফেলনা মনে হচ্ছে। অথচ এগুলো আঁকড়ে ধরেই সারাটে জীবন কাটাতে চেয়েছিল সে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
বিছানা ছেড়ে ক্লান্ত শরীর নিয়ে উঠে দাঁড়াল। অগোছালো শাড়িটা গোছানোর ইচ্ছে হলো না। সবকিছু কেবল অসহ্য লাগছে তার কাছে। হঠাৎ তার বোধ হলো, ফোনটা কোথায়? গতকাল থেকে ফোনের সন্ধান সে পায় নি। পুরো ঘর তন্ন তন্ন করে খুঁজেও যখন কোথাও ফোন পেলো না তখন ভেবেই নিল এটা প্রান্তিকের কাজ। তাকে আটকানোর সবরকম কাজ সে ইতোমধ্যেই সেরে ফেলেছে।
সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে এলো প্রিয়তা। প্রান্তিক আজও অফিস গেছে। এই লোকটার আদৌও কি কোনো মাথাব্যথা আছে তাকে নিয়ে। বোধ হয় নেই! কাজের মেয়েটা তাকে দেখেই ছুটে এলো। গরগর করে বলতে লাগল, “স্যার বলেছে দু ঘণ্টা আগেই ফিরে আসবে ম্যাম। আপনাকে নাস্তা দিবো!”
প্রিয়তা কিছু বলল না। উল্টো প্রশ্ন করল, স্যার খেয়েছে?
মেয়েটা জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে নিল। এর অর্থ প্রান্তিক না খেয়েই বেরিয়েছে। টেবিলের উপর খাবার সাজানো অথচ প্রিয়তার ক্ষুধা নেই। গতরাত থেকেই না খেয়ে আছে, এরপর কান্না কাটিতে শরীর ভেঙে গেছে। তবুও খেতে ইচ্ছে করছে না তার। মেয়েটাকে ব্যাগের কথা জিজ্ঞেস করল। এবারও জবাব দিতে ব্যর্থ হলো সে। ব্যাগের ভেতর এই বাড়ির কোনো জিনিস ছিল না। নেবার ইচ্ছেও ছিল না নূন্যতম। এখানকার কোনো স্মৃতি সে চায় না।
ধীর পায়ে হেঁটে বাড়ি ছেড়ে বেরুল প্রিয়তা। প্রান্তিক যেহেতু বাসায় নেই সে চাইলেই তো বেরিয়ে যেতে পারে। এখন কে আটকাবে তাকে? তাকে অবাক করে দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে রাফি ভাই। অন্য দিনকার চেয়ে আজ বাড়ির চারদিকে গার্ডের পরিমাণ বেশি। প্রিয়তা হাসার চেষ্টা করল। নিজের উপরই হাসি আসছে তার। রাফি ভাই নরম স্বরে বলল,
“ম্যাম, ভেতরে যান!”
“আপনারা কি আমায় বেঁ’ধে রাখবেন রাফি ভাই?”
“স্যার বলেছে আপনাকে দেখে রাখতে।”
“দেখে রাখতে? নজরে রাখতে বলেনি। আ’টকে রাখতে বলেনি। বলেনি বাড়ির বাইরে যাওয়া আমার জন্য নিষিদ্ধ!”
রাফি ভাই নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে রইলেন। প্রিয়তার জন্য তার মায়া অবশ্যই হয়। মেয়েটাকে যতটুকু চিনেছি তার জন্য মায়া না হয়ে পারে না। তবু সত্য অস্বীকার করা যায় না। তার জন্য স্যারের উন্নতি হয়েছে। স্যার আগের চাইতে বদলে গেছেন। স্বার্থপরের সেও প্রান্তিকের চিন্তাই করল। কেউ ভাবল না প্রিয়তার কথা!
দুর্বল পায়ে হেঁটে আবারো ঘরে ফিরল প্রিয়তা। তার বাড়ির লোক নিশ্চয়ই চিন্তা করবে। বাবা ফোনে না পেয়ে ছট’ফট করবেন। রোজ একবার হলেও তাদের সাথে কথা বলত সে। কিন্তু আজ কি করবে?
প্রান্তিক অফিসে ঢুকে দু মিনিট হলো চেয়ারে নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। গতরাতে ঘুম হয়নি কোনো। এতো কিছুর মাঝেও অফিসে আসার একটা কারণ আছে অবশ্য। আবার দ্রুত বাসায় ফিরতে হবে। প্রিয়তাকে এখন একা রাখা কোনভাবে সেভ নয়। ভালোবাসায় ঠকে মানুষ অনেক রকম অনা’কাঙ্ক্ষিত কাজ করে ফেলে। সেও করেছে। প্রিয়তা এমন কিছু করুক সে চায় না। জীবনে এতো পা’প করার পর এখন নিজেকে পা’পী মনে হচ্ছে তার। কই? যখন পাপ করল তখন কেন টের পেলো না? মনুষ্যত্ব, বিবেক বোধ তখন কি এতোই নিচে নেমে গেছে। নিজের পা’প কাজের পিছনে কাউকে দায়ী করা চলে না। প্রান্তিক বুঝে গেছে, যা করেছে স্বজ্ঞানে নিজ ইচ্ছায় করেছে তবে আর কাকে দোষ ঠেকাবে। তার মনে পড়ে ঐশীর বলা কথাগুলো। তার প্রথম ভালোবাসা।
যখন ম’দ খেয়ে অন্য পুরুষের বুকে মাথা তার দিকে ফিরে হেসে হেসে বলেছিল, “ভালোবাসা! ইউ থিংক ইউ আর মাই লাভ। ওহ, কি বোকা তুমি। জানো তো বোকার সাথে টাইমপাস হয়। ভালোবাসা হয় না। ভালোবাসা থাকলে বুঝি আমি এখানে থাকতে পারি? এই যে তোমার সামনে অন্য পুরুষের বুকে মাথা রেখে ঘুমাচ্ছি। আজ রাতটা তার সাথেই থাকব। তোমার সাথে থাকা চলে না। ইউ আর অ্যা বয় নট মাই ম্যান ডালিং!” বলামাত্র তার সামনেই ওই পুরুষের ঠোঁটে চুমু খেয়েছিল। প্রান্তিক কেবল হা হয়ে দেখল। সে বাকরুদ্ধ ছিল। কিছু বলার সাহস হলো না। এই মেয়েটাই গত একবছর ধরে তাকে ভালোবাসার স্বপ্ন দেখাল আর আজ এতো সহজেই তাকে ছেড়ে দিল। কিভাবে পারল? তখন মনে পড়ে তার দুর্ভাগ্যের কথা। নয় মাস গর্ভে রাখার পর যেই মা তাকে ভুলে যায় সেখান ঐশীর ভুলে যাওয়া তুচ্ছ ব্যাপার। ছোট থেকেই মায়ের প্রিয় ছেলেটা হবার জন্য সে উঠে পড়ে লেগেছিলো। কিন্তু পারেনি। প্রান্তিক দেখতে পুরোপুরি তার বাবার মতো। এই কারণেই কি মায়ের অ’প্রিয় ছিল সে। কিন্তু সন্তানরা মায়ের অপ্রিয় হয় কিভাবে? হতে পারে আদৌও! অতঃপর প্রান্তিক বিগড়ে গেল। একদমই বিগড়ে গেলো। ধরেই নিল এই জীবনে তাকে নিয়ে ভাবার কেউ নেই। তার কোনো পিছুটান নেই। কেউ তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখবে না। দাদাজান যদ্দিন আছে ততোদিন এরপর কেউ কি তাকে দেখবে? না নেই তো!
এরপরের একদিনের ঘটনা বলা যাক। তখন সবে সবে প্রান্তিক ঐশীর ছল’নার স্বীকার হলো। জীবনে প্রথমবার তার ইচ্ছে করল মা কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে। ভীষণ ভাবে কাঁদতে! ছোট থেকেই মায়ের ভীষণ ভক্ত ছিল সে। অথচ মায়ের সাথে কাটানো কোনো মূহুর্ত তার মনে পড়ে না। তেমন কিছু আসলে নেই। বরাবরই দেখেছে তার মা ফোন আলাপে ব্যস্ত থাকতেন। প্রান্তিক সময়ের পর সময় মায়ের পায়ের কাছে পড়ে থাকত। দাদাজানের কাছ থেকে নতুন নতুন শব্দ শিখে মা কে শোনাত আসত। মা কখনো আগ্রহ করেনি। ছোট প্রান্তিক সেই অবহেলা তখনো টের পায়নি। আরো উঠে পড়ে লাগত বরং। ছবি আঁকার চেষ্টা করত। কিন্তু হতো না! ছবি আঁকার যোগ্যতা সবার হয় না। কিন্তু তার মা ছিলেন একজন চিত্রশিল্পী। দারুণ ছবি আঁকতেন তিনি। বাইরের দেশে তার আঁকা চিত্রকর্মের খুব নামডাক ছিলো। তার নাম ছিলো মিস ক্যারি! বিদেশী বংশোদ্ভূত। একদিন তার আর্ট এক্সিবিশনে গিয়ে তার সাথে দেখা হয় তরুণ চৌধুরীর। পুরো নাম আসাদুজ্জামান তরুণ চৌধুরী। শিল্পের প্রতি বেশ আগ্রহ তার। বড়লোকের কতোই না শখ থাকে। যারা ভাত খেয়ে ভাত পায়না তারা কি বুঝে শিল্পের কদর। ওসবে তাদের আগ্রহ নেই। সময় নষ্ট কাজ। বড়লোকেরা আবার এসব দেখেন খুব আগ্রহ করে। এভাবেই তো মিস ক্যারির সাথে তার পরিচয়।
সম্পর্ক, ভালোবাসা, বিয়ে সবকিছুই টানা চলতে লাগল। তরুণ চৌধুরী আদৌও যেভাবে ক্যারির প্রেমে মুগ্ধ হয়েছিলেন, তাকে ভালোবেসেছিলেন ক্যারি বোধহয় তা পারেনি। ছেলেটা হবার পরই তার মনে হলো এসব ভ্রম, মোহ! সবকিছুই কেটে গেলো এক নিমিষে। যেই তরুণ চৌধুরীর এক কথায় বিয়ে করার জন্য রাজি হয়েছিল এখন তাকেই অস’হ্য ঠেকছে তার কাছে। বিয়ে, বাচ্চা, সংসার এসব তার জন্য না। এখন এসব থেকে রেহাই পেতে চান তিনি। গলার কাটা যেন সবকিছু। সবচেয়ে বেশি জ্বা’লায় ছেলেটা। দেখতে পুরোই বাবার মতো। মায়ের একটা গুণ ও পায়নি সে। মিসেস ক্যারি মনে করলেন এই ছেলেকে দিয়ে আদৌও কিছু হবে না। সে হবে পুরো বাপের ডুপ্লিকেট। কোনো গুণ, শখ, আহ্লাদ কিছু নেই ছেলেটার। এতো চেষ্টা করেও ছবি আঁকা শিখাতে পারছেন না। ঠিক করে পেন্সিল টাই ধরতে জানে না। একটু ধমক দিলেই আবারো কেঁদে ফেলে। কি আশ্চর্য! এভাবে বাচ্চা পালা যায় নাকি। রেগে গিয়ে ইংরেজি ভাষায় অশ্রাব্য গালিগালাজ করতেন। প্রান্তিক অসব বুঝত না। কেবল তার হাত কাঁপত, পেন্সিল কাঁপত।সে ভীষণ ভয় পেতো। তাকে নিয়ে এসব আর্ট ফার্ট হবে না এটা তরুণ চৌধুরী বুঝে যেতেন। কিন্তু বুঝতেন না মিসেস ক্যারি। ধৈর্য্যের সীমা দিন দিন পেরিয়ে যাচ্ছে তার।
কিন্তু প্রান্তিক হাত মানত না। সাত বছর বয়সী প্রান্তিক রাত জেগে ছবি আঁকার চেষ্টা করত। মায়ের আঁকা ছবিটা সামনে রেখে আঁকত। কিন্তু হতো না যে। সবাই যে সবকিছু পারে না। মা যে কেন বুঝে না! নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করত মায়ের মন জয় করার। হতো না! কতো রাত এভাবে পেরুল। আঁকতে আঁকতে ক্যানভাসের উপরই ঘুমিয়ে পড়েছে কতোবার। দাদাজান কতো রাত তাকে জেগে তুলে বিছানায় পাঠিয়েছেন হিসেব নেই। কিন্তু এই যে ছোট প্রান্তিকের এতো পরিশ্রম, এতো রাত জাগা এসব দিকে কি মিসেস ক্যারির নজর আছে? না নেই তো! তিনি তো ধম’কের পর ধ’মক দিতেন তাকে। এটা কেন এমন হলো? এটা কেন হচ্ছে না। চিত্রটা জীবন্ত কেন মনে হচ্ছে। এভাবে কি পেন্সিল ধরে?
ধ’মক খেয়ে আরো কুঁকড়ে যেতো সে। কোথায় তার মনোবল বাড়বে তা না উল্টো ভেঙে গুঁড়িয়ে যেত। চোখে আঙুল দিয়ে দেখাত তুমি আমার ছেলে হবার যোগ্যই না। কোনো যোগ্যতা নেই তোমার। মনকে পি’ষিয়ে দিত। আত্মবিশ্বাস মিশে যেত ধুলিসাৎ হয়ে। তখন একমাত্র দাদাজান ই ছিলো আঁকড়ে রাখার জন্য। বাবার দিন কাটতো মা কে নজরে রেখে রাত কাটতো তার সাথে ঝ’গড়া করে। সন্দেহ কেবল সন্দেহ। অকারণে তো সন্দেহ করত না। কারণ তো ছিল বটে!
সেই কারণ দেখিয়ে মিসেস ক্যারি চলে গেলেন বিদেশের মাটিতে তাদের ছেড়ে চিরদিনের মতো। আর ফিরেনি! প্রান্তিকের জন্য কোনো মায়া মততা কোনোকালেই ছিলো না তার। থাকলে কি আর ডির্ভোসের সময় ছেলের অধিকার চাইতো না? চাইনি তো! দাদাজান যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচলেন। নাতিকে তিনিই চাইলেন। পুরো পৃথিবীতে তার দাদাজানই একমাত্র তাকে চাইলো। কিন্তু সে যাদের চাইলো তারা তাকে চাইলো না। এতোই কি ঘৃ’ণা করত মা তাকে। বাবার মৃ’ত্যুর পরেও তো একবারের জন্য এলো না। একটিবারের জন্যও খোঁজ নিলো না। মায়েরা তো এমন হয় না! তাহলে? তাকেই কেন দুর্ভা’গ্যের সঙ্গী হতো হলো। সেই ছোট্ট বয়সেই প্রিয়জন হারানোর স্বাদ পেয়ে গেলো সে।
ফিরে আসি সেখানে, যেদিন তার খুব মাকে প্রয়োজন হলো। মা কে হঠাৎ করেই দেখতে ইচ্ছে করল। এর অবশ্য একটা কারণ আছে। সে খোঁজ নিয়ে জেনেছে মা আর সে একই দেশে আছে। একই শহরে, লন্ডনে! ঠান্ডা বরফের রাতে প্রান্তিক বেরিয়ে গেলো মায়ের খোঁজে। ঐশীর দেওয়া ব্যাথা সে ভুলে গেলো মা’কে দেখার আনন্দে। সেদিন ছিল ক্রিসমাস। রাস্তা ঘাট মাঝরাতেও আলোয় আলোকিত। শীতে কাঁপতে কাঁপতে বরফের শক্ত পথ হেঁটে প্রান্তিক পৌঁছাল তার গন্তব্যে। মা কে দেখবে কতো বছর পর। মায়ের চেহারা কি তার মনে আছে? অবশ্যই মনে আছে।
বিশ বছর বয়সী যুবক গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে একটি নজর মাকে দেখার জন্য। আচ্ছা সে কি সামনে যাবে? একটিবারের জন্য জড়িয়ে ধরবে।
বলবে ঐশীর কথা? গত একবছর ধরে ঐশী তাকে কিভাবে ঠকালো সেসব কথা কি মা কে জানাবে? বলবে সে কতোখানি কষ্ট পেয়েছে? কতোই না কথা জমিয়ে ছিল সেই যুবকটি। কিন্তু সবকিছু চুর’মার হয়ে গেল এক মূহুর্তে। মায়ের নতুন সংসার দেখে আনন্দ মূর্ছা গেল প্রান্তিকের। মিসেস ক্যারি তখনো একইরকম আছেন। যৌবনকে এখনো ছাপিয়ে যেতে পারেননি। পাশে ১৩ কি ১৪ বছরের একটা ছেলের হাত ধরে দাঁড়িয়ে তিনি। ভেতরে ক্রিসমাসের কেক কাটা হচ্ছে। স্বচ্ছ আয়নার জানালার ফাঁকে সবটাই চোখে পড়ল প্রান্তিকের। তাকে বলে দিতে হলো না, পাশের ছেলেটি তার মায়ের। তার পাশে পুরুষটি মায়ের নতুন জীবনসঙ্গী। তিনি নতুন জীবন শুরু করেছেন। স্বামী সংসার নিয়ে সুখে আছেন। প্রান্তিক কে তার মনে নেই। প্রান্তিক নামে কেউ ছিলো, সেই অস্তিত্ব তিনি মুছে ফেলেছেন। ছেলেটিকে কেক খাইয়ে আবার ঠোঁট মুছিয়ে দিচ্ছেন। বাদামী চুল ওয়ালা ফর্সা ছেলেটার অর্ধেক বয়সী ছিল তখন সে। কই? মা তো এতো আদর করে তাকে কখনো খাওয়াইনি।
ব্যাথা কমার বদলে নতুন ব্যাথা যোগ হলো। বরফের রাতের ঠান্ডা তুষার পাতেও সেই ব্যাথা দমন করতে পারল না। যেই আ’গুন প্রান্তিকের মনে জ্বল’ছিলো সেই আগু’ন নিভানোর সাধ্যি সেই বরফের নেই। এতোই কি দুর্ভাগা ছিলো সে।
চোখের কোণে অশ্রু জমেছিল। প্রান্তিক দ্রুতই তা মুছে নিল। বিয়েটা তার অমতে হয়েছিলো। সে ভাবেনি প্রিয়তা তাকে বোকার মতো ভালোবাসবে। ভেবেছিলো প্রিয়তাও বুঝি তাকে ছেড়ে একদিন চলে যাবে। বরাবরই ভাগ্য তার সাথে এমনটা করে এসেছে। কিন্তু এবার যেন ভিন্ন রকম কিছু হলো। ভাগ্য এবার ভাবল প্রিয়তাকে এতো সহজে হারিয়ে দেবে না। আবার একটু খেলে নিবে প্রান্তিকের সাথে। প্রান্তিক নিজেও বুঝে নি কখন, কিভাবে ভালোবাসতে শুরু করল। যতই প্রিয়তার কাছে আসল ততোই বুঝল এই মেয়েটা ভীষণ বোকা। বোকা বলেই তাকে জান প্রাণ দিয়ে ভালোবাসে। তাদের মাঝে এতো আয়োজন করে ভালোবাসা নিবেদন হয়নি কখনো তবুও দু’জন দু’জনকে চরম ভালোবাসে। কখন যে প্রিয়তার মায়ায় আটকে গেলো বুঝে উঠতে পারল না।
প্রিয়তে তুমি প্রাণ পর্ব ১৬
যখন বুঝতে পারল তখনি পিছনের কাঁদা মাটি তাকে টেনে ধরল। ওসব ভুলে গেলে কি চলে নাকি? জীবনে আরো একবার মনে হলো প্রিয়তা হয়তো কখনো অভিমান করে তাকে ছেড়ে চলে যাবে না। প্রিয় মানুষ তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার ব্যাপারটায় প্রান্তিক প্রায় অভ্যস্ত। ক’ষ্ট পাবার কথা নয়। কিন্তু প্রিয়তার থেকে দূরে থাকার বিষয়টা তাকে বড্ড পীড়া দেয়। তাকে ছাড়া একদণ্ড নয়, এক মুহুর্ত সে থাকতে পারবে না। কিন্তু এভাবেও তো থাকা যায় না। প্রিয়তাকে কি করে বুঝাবে সে। কিছু পাপের যে কোনো ক্ষমা হয়না। কিছু অভিমানে অভিযোগ থাকে না। কিছু সম্পর্ক এভাবেই ভেঙে যায়। কা’রণ লাগে না!