ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৭
মিথুবুড়ি
‘পিচঢালা রাস্তা অতিক্রম করে জঙ্গলের আঁকা-বাঁকা সরু পথ ধরে পাশের লম্বা মূর্তির মতো ভয়ংকর দেখতে গাছগুলোকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যাচ্ছে জিপটি ক্রমাগত । এবড়োখেবড়ো রাস্তার ঝাঁকুনির সাথে সমান তালে কাঁপছে ডক্টর মালিহার গড়ন। কপালের পাশ দিয়ে সরু শীতল ঘামের রেখা বইয়ে চলেছে। জবুথবু হয়ে কাঁপতে থাকা গড়ন একদম প্যাসেঞ্জার সিটে যথাসম্ভব নিজেকে আড়াল করে লেপ্টে আছে। উদ্বিগ্নতায় ঠাঁসা ডাক্তর মালিহার ফরসা মুখ।
‘সবেমাত্র ঢাকা মেডিকেল থেকে এম.বি.বি.এস ডিগ্রি নিয়ে ইন্টার্নি শেষ করে ল্যাব.এইড হসপিটালের জয়েন করে ডক্টর মালিহা। ডিউটি শেষ করে বাসার ফেরার জন্য বের হলে রাস্তা থেকে তাকে একপ্রকার জোর করে তুলে আনে লুকাস। মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মাথায় গা/ন পয়েন্ট করে তুলে নিয়ে আসে ক্ষমতা দেখিয়ে । আজ কাল রোগী দেখতে নিয়ে যাওয়ার নতুন পন্থা মনে হয় এটা। তবে আর চার-পাঁচটা সাধারণ মানুষের জন্য নয়।
‘সুশীল সমাজের আড়ালে গড়ে তোলা নিজেদের অন্ধকার পাপ রাজ্যের অভিশপ্ত রাজাদের পন্থা এটা। এরা স্বাভাবিক জিনিসে অভ্যস্ত নয়। ওদের পাপাচারের জীবন তলিয়ে গিয়েছে বিষাদের ভারি ভারি বরফ খন্ডের গহবরের। যা হয়তো সেই অতল থেকে কখনো উন্মোচন হবে না। কেউ কি আসবে আদৌতেও, যে ঠান্ডা বরফের নিচে ঢাকা পড়া বিষাদের রাজাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে এনে তার উষ্ণতায় খন্ড খন্ড বরফগুলো মোমের মতো গলিয়ে? উষ্ণতার চাদরে জরিয়ে রেখে ওউম দিয়ে জাগিয়ে তুলবে জমে থাকা কোমল হৃদয়,,,,, ?
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘বাগান বাড়ির মেইন গেইটের সামনে এসে কালো জিপটি থামে। রিচার্ডের গাড়ি ব্যতিত অন্য কোনো গাড়ি ভিতরে ঢুকানো নিষেধ। লনের পাশে গাড়ি সাইড করে রাখল লুকাস। একজন কালো পোশাকধারী গার্ড দৌঁড়ে এসে ডোর হেন্ডেল টেনে খুলে দিলে উদীয়মান হয় তিরতির করে কাঁপতে থাকা ডক্টর মালিহা। একদম অপর প্রান্তে কর্ণারে গিয়ে জমে আছে, গতি হারানো হৃদস্পন্দনে। লুকাস জানে মেয়েদের নরম গলায় কাজ হয় না। ডক্টর মালিহাকে টেনে গাড়ি থেকে বের করে রুক্ষ পুরুষালি কাঁধে তুলে নিল লুকাস । মার্সেলার লুকাসের দানবীয় কাঠের মতো শক্ত শরীরে ডক্টর মালিহার পাতলা নরম তুলতুলে শরীর লাগতেই ব্যাথায় কুকড়িয়ে উঠল। কন্ঠগহ্বরে ভয়, ভীতি, সংকীর্ণতা দলা পাকিয়ে রাস্তা ব্লক করে রেখেছে। অতঃপর চেঁচাতেও পারছে না মালিহা।
‘তখন কাচের উপর দিয়ে হাঁটার কারণে পায়ের পাতার নিচের অনেকটুকু অংশ খুবই বিভৎস ভাবে কেটে গিয়েছিল এলিজাবেথের। কিছু কাচের অংশ একদম হাড্ডিতে গিয়ে বিঁধেছে সরাসরি । রিচার্ডের কোলে ঢলে পড়ার পর রিচার্ড ওকে উপরে নিয়ে গেলেও কোনোরকম ট্রিটমেন্ট করেনি। বজ্র কন্ঠে মেডদের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়ে বলে গিয়েছিল রাতে ফিরে যেন এলিজাবেথের পা সুস্থ দেখে। থরথর করে কাঁপতে থাকা মেড’রা সকলে রিচার্ড চলে যাওয়ার পর এলিজাবেথের পা থেকে সকল কাঁচ বের করে। ক্ষত/বিক্ষত হয়ে গিয়েছিল এলিজাবেথের পায়ের পাতা।
‘মেডরা সকলে চোখের পানি ফেলেছিল এলিজাবেথের এই করুণ দশা দেখে। রেশমা নার্সিং ইনস্টিটিউটে দুই বছর অর্ধায়নরত ছিল। পরবর্তীতে বাবা মারার যাওয়ার পর টাকার অভাবে পড়া শেষ করতে পারেনি। তবুও ড্রেসিং করা শিখে গিয়েছিল দুই বছরে। লুকাস রিচার্ডের আড়ালে ড্রেসিং এর সমগ্র সামগ্রি এনে দিলে রেশমা সুন্দর করে এলিজাবেথের পা ড্রেসিং করে দেয়। তখনও জ্ঞান ফেরেনি এলিজাবেথের। এলিজাবেথকে বেডে সুন্দর করে শুইয়ে দিয়ে মেড’রা নিচে চলে আসে। যে যার যার মতো কাজে লেগে যায়।
‘রেশমা এলিজাবেথের জন্য ভেজিটেবল সুপ বানায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে একটু প্রোটিন, ভিটামিনের দরকার। এমনিতেও কম কিছু যাচ্ছে মেয়েটার শরীরের উপর দিয়ে। এই দুইদিনেই এলিজাবেথের মায়াবী চেহারায় মায়ায় পড়ে গিয়েছে রেশমা। এলিজাবেথের ডাগর ডাগর আঁখিদ্বয় বেয়ে যখন পাহাড় সমপরিমাণ কষ্টের একাংশ ফোঁটায় ফোঁটায় বের হয় ভিতরে খুব ব্যাথা অনুভূত হয় রেশমার। আসলে মাতৃ মন তো নিজের চোখের সামনে দেখতে পারছে না একটা মেয়ের এত কষ্ট।
‘মেডরা চলে যাবার কিছুক্ষণ পরই এলিজাবেথের জ্ঞান ফিরে। ইনজেকশন দেওয়ার ফলে পায়ের পাতার নিচের অংশ অনুভব করতে পারছিল না । কিন্তু মনের ভিতরের যন্ত্রণা গুলো জ্বালিয়ে ছারখার করে দিচ্ছিল ওকে। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের ধোঁয়াগুলো বুক চিঁড়ে বের হয় দীর্ঘশ্বাস হয়ে, আর কার্নিশ বেয়ে ঝড়ে আগুনের জ্বলন্ত লাবা। হঠাৎ করেই অদ্ভুত ভাবে চোখে পানি সমেত হাসল এলিজাবেথ। উন্মাদের মতো হাসতে থাকে হতচেতন হারিয়ে। তাচ্ছিল্যের হাসিগুলো গেল না সাউন্ডপ্রুফ রুমের বাইরে। ঠৌঁটে প্রসারিত হাসি, অথচ গাল বেয়ে বইছে স্রোতের ধারা।
‘ক্রিয়া প্রতিক্রিয়ার বিশ্লেষণের মতো অদ্ভুত আচরণ করছে এলিজাবেথ। হাসতে হাসতেই উঠে বসল। তারপর হঠাৎ করেই মাথার চুল খামচে ধরে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকে। লাস্যময়ী মেয়েটির কান্নার তোড় শুধু ক্রমে ক্রমে বাড়তেই থাকে। মেঘলা আকাশে বজ্রপাতের পর যখন আকাশ ভেঙে বৃষ্টি ঝাঁপিয়ে পড়ে আর গাছ থেকে ঝড়ে পড়ে পাতা, সেভাবে কাঁদতে থাকল এলিজাবেথ। পুরুষালী রুক্ষ খসখসে হাতের দাগ চামড়ায় বসে গিয়েছে। হাতের দিকে তাকাতেও ঘৃণা হচ্ছে এলিজাবেথের। একটার পর একটা কামড় বসাতে থাকল হাতে। চামড়া ছিড়ে রক্ত বের হয়ে আসে, এতেও ক্ষ্যান্ত হয় না এলিজাবেথ। র/ক্ত ঝড়ে বিভৎস দেখতে হাত দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করতে থাকে নিজের শরীরে। ফর্সা গাল ফলা ফলা আঙুলের ছাপে তলিয়ে যায়।
‘দেয়ালে ঝুলিয়ে রাখা বিশাল আকৃতির হিংস্র ড্রাগনের পেইন্টিংটি শুধু রাজসাক্ষী হয়েছিল এলিজাবেথের সেই উন্মাদনায়। একসময় নিজেকে আঘাত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়ে এলিজাবেথ। জীবনের উপর আর অভিযোগ জানাতে ইচ্ছে করে না, হাঁপিয়ে গিয়েছে সে। জীবন চক্র তাকে আজ কোথা থেকে কোথায় নিয়ে এসেছে। কাছের মানুষগুলোর কাছ থেকে এতো কাঠিন্যতা আর নিজের ইজ্জত হারানোর বেদনা ভিতরে ভিতরে কুঁড়ে খেতে থাকে এলিজাবেথের। এই জীবন আর মেনে নিতে পারছে না সে। দিশেহারা হয়ে এদিকসেদিক কিছু খুঁজতে থাকে।
‘হঠাৎ নজরে আসে বেডসাইড টেবিলে রাখা একটা ইনজেকশন। এছাড়া পুরো কক্ষে আর তেমন কিছুই নেই আত্মঘাতী। রিচার্ড আগে থেকেই সব সরিয়ে ফেলেছিল। একটু আগে ব্যাথা কমানোর জন্য এই ইনজেকশন রেশমা এলিজাবেথকে পুশ করেছিল। অসাবধানতায় রুম পরিষ্কার করার সময় এটা বাদ পড়ে গিয়েছিল। এলিজাবেথের চোখ জ্বলজ্বল করে উঠল খুশিতে। হাতে নিয়ে একদৃষ্টিতে চেয়ে থাকল ইনজেকশনের দিকে। চোখমুখ অনুভূতি শূন্য, দেহে নাম মাত্র প্রাণ আছে। তবে সেই প্রাণের মধ্যে বাঁচার কোনো তাগিদ নেই। মুক্তি চায় এই অভিশপ্ত,ধ্বংসযজ্ঞ, পাপাচারে নিবিষ্ট এক অন্তহীন মরিচীকা থেকে। শেষবারের মতো চোখ বুঁজে কল্পনা করে নিল নিজের মা-বাবাকে।কণ্ঠ বুজে এলো কান্নায়। ফ্যাসফ্যাসে আওয়াজে বিরবির করল,
“আমি আসছি মম, ড্যাড।”
‘ইনজেকশনের লম্বা সরু অংশটি চালিয়ে দেয় কব্জির উল্টো পিঠের সবচেয়ে পাতলা চামড়ায়। পরপর চার বার হাতের উপর চালায় সেই সরু সুইচের মতো অংশ। হাতের চামড়া ছিঁড়ে ছিঁড়ে ফিনকি দিয়ে ছিটকে গিয়ে রক্ত আঁচড়ে পড়ে ওর রক্তাভ মুখে। ঠৌঁটের কোণে তখনও হাসির ঝলকানির। রক্তক্ষরণ বাড়তে থাকে। চোখের সামনে ঝাপসা হতে থাকে সকল কিছু। আশ্চর্যজনক ভাবে একটুও ব্যাথা অনুভূত হচ্ছে না এলিজাবেথের। শরীর ছেড়ে দেয় কটনের বালিশে। শূন্যে তাকিয়ে গলা হতে নির্গত কর্কশ গোঙানির শব্দে দূর্বল গলায় উচ্চারণ করল,
“অভিমান জমে জমে আমি ব্যাথাহীন। আহারে জীবন! আহা জীবন! বিদায় তোমায়। এই অভিশপ্ত আমার জন্য আর কষ্ট পেতে হবে না! মুক্তি তুমি।”
‘সহসাই চোখ বুঝে এলো এলিজাবেথের। সুপ নিয়ে এসে সবার আগে এলিজাবেথকে এই অবস্থায় রেশমা দেখে। রেশমার চিৎকারে পরে সকল মেড ছুটে আসে। রিচার্ড এলিজাবেথের এই অবস্থা দেখার পরও শক্ত হয়েছিল। এই যান্ত্রিক, নিকৃষ্ট মানবের একটু খারাপ লাগা কাজ করেনি এলিজাবেথের করুণ অবস্থা দেখে। অভিব্যক্তি ছিল অত্যন্ত স্বাভাবিক। শূন্য দৃষ্টিতে জমে ছিল ক্রোধের পাহাড়। শক্ত চোয়ালে কিড়মিড়িয়ে তাকিয়ে ছিল এলিজাবেথের নিথর দেহে।
‘ইটালিয়ান লাইন ও ড্রাগন খচিত হাতের গৌড় বর্ণের শিরা উপশিরা গুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান মুষ্টিমেয় করে রাখার জন্য। রিচার্ডের ধারালো চিবুকে তাকাতেই শুকলো ঢোল গিলে ন্যাসো আর লুকাস। তবে এলিজাবেথের অবস্থা বেগতিক দেখে আর চুপ থাকতে পারে না রেশমা । রিচার্ডের সামনে এসে দু’হাত জোড় করে হাঁটু ভেঙে বসে। কান্না মিশ্রিত গলায় আহাজারির স্বরে আকুতি-মিনতি করতে থাকে,
“স্যার দয়া করে কিছু করুন ম্যাডামের শরীর ঠান্ডা হয়ে আসছে। এমন হলে মারা যাবে ম্যাডাম।”
‘রিচার্ড তখনও নিস্প্রভ দ্বিধাহীন নজরে চেয়ে ছিল শক্ত চোখে। অভিব্যক্তিতে প্রকাশ না পেলেও তার ভিতরে কোনো এক অজানা কারনে জ্বলন হতে থাকে এই লাস্যময়ী মেয়ের ধ্বংসযজ্ঞ চেহারায়। হনহনিয়ে নিচে নেমে আসে রিচার্ড। লুকাস অচেতন এলিজাবেথের দিকে একপল তাকিয়ে রিচার্ডের পিছু পিছু যায় তপ্ত শ্বাস ফেলে। রিচার্ড সরাসরি গেল লিভিং এরিয়ায়। গোল করে সাজানো ডার্ক থ্রিমের সোফার মাঝখানে ছোট টেবিলে থাকা সকল মদের বোতল গুলো ছুঁড়ে মারে মেঝেতে। ক্রোধ কোনো ভাবেই কমাতে পারছে না; হতচেতন হারিয়ে যা পাচ্ছে তা-ই ছুঁড়ে মারছে।
‘মুহুর্তেই সাজানো পরিবেশ ধ্বংসলীলায় পরিণর হয়।
লুকাস এক কোণায় চুপসে দাঁড়িয়ে আছে ন্যাসোর পাশে। রিচার্ডের উগ্র মেজাজের জন্য রিচার্ডকে বেশি ভয় পায় লুকাস। তবে ন্যাসোর ভাবভঙ্গি একদমই স্বাভাবিক এবং দৃষ্টি গভীর। বডিগার্ডের পাশাপাশি ন্যাসো আর রিচার্ডের মধ্যে অদৃশ্য এক সম্পর্ক রয়েছে। দু’জনেরই দু’জনের উপর রয়েছে অগাত বিশ্বাস। না বললেও অবিশ্বাস্যকর ভাবে তারা একজন আরেকজনের মনে অভিব্যক্তি বুঝতে পারদর্শী। জমে যাওয়া মস্তিষ্ক আবারও মেতে ওঠে তার ধ্বংসলীলায়। উন্মাদনায় চারিপাশ ভস্ম করে দিচ্ছে রিচার্ড। ক্রোধে গিজগিজ করতে করতে ফিরে তাকাল লুকাসের দিকে। আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাতের মতো দু’টি চোখ দেখে শুকনো ঢোক গিলে লুকাস। কণ্ঠস্বরে জরিয়ে আসে সেই পাশবিক, পৈশাচিক, বিধ্বংসী গর্জন।
“এক্ষুনি ডক্টর নিয়ে আসবি। সময় বিশ মিনিট। এন্ড ইট মাস্ট বি আ লেডি ডক্টর।”
‘আঁটকে রাখা দম ছেড়ে মাথা নাড়িয়ে ব্যগ্র পায়ে বেরিয়ে পড়ল লুকাস। গভীর জঙ্গলে ঠেঙ্গিয়ে লোকালয়ে যেতেই সময় লাগে পনেরো মিনিট। অগত্যা এক মিনিট সময়ও ব্যয় করে না। সোর্স লাগিয়ে দেয় সব থেকে কাছের হসপিটাল ও লেডি ডক্টরের খোঁজে।
‘চল্লিশ মিনিট ধরে একই জায়গায় একদৃষ্টিতে নত দৃষ্টি নিবিষ্ট করে আছে রিচার্ড। এখনো কপালের পাশের নীলচে রগ গুলো ফুলা। অতি ফর্সা চেহারায় তীব্র ক্রোধে নিভি নিভি আগুনের উপরের লাল অংশের আভা দিচ্ছে। চারিপাশে কাঁচের টুকরো টুকরো অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। অসাবধানতায় হেঁটে গেলেই পায়ের সর্বনাশ । বাইরে থেকে শোনা যাচ্ছে কোনো মেয়ের মৃদু গোঙানির শব্দ।জলহস্তির মতো অধিক ওজনের ভারি ভারি পা ফেলে এগিয়ে আসা ফুটস্পেট। লুকাস ডক্টর মালিহাকে কাঁধে নিয়েই লিভিং এরিয়ায় রিচার্ডের সামনে দাঁড়াল।
‘রিচার্ড ক্রদনরত মেয়েটির দিকে একপল তাকালো না পর্যন্ত। এমনভাবে মাথা ঘুরিয়ে রেখেছে যেন খুবই নস্যি কিছু, দেখলেও পাপ। হাত নাড়িয়ে ইশারা দিলে লম্বা লম্বা কদমে সিড়ি ঠেঙ্গিয়ে মাস্টার বেডরুমের দিকে গেল লুকাস। ডক্টর মালিহা তখনও লুকাসের পিঠে কিল-ঘুষি দিয়ে ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করতে করছিল। সরাসরি এলিজাবেথের সামনে গিয়ে কাঁধ থেকে নামালো লুকাস। মালিহার গায়ে তখনও হসপিটালের এপ্রন। রেশমা ডক্টর দেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে এলিজাবেথকে বুক থেকে বালিশে শুইয়ে ওঠে পাশে দাঁড়ায়।
‘ডক্টর মালিহা এলিজাবেথের বিধ্বস্ত চেহারা দেখে আঁতকে ওঠে । মুখে, গলায়, হাতে শরীরে অজস্র আঘাতের চিহ্ন। তবে তার থেকেও বেশি বিস্মিত হয় এলিজাবেথের অন্যরকম চেহারা আর লাল চুল দেখে। এখন বুঝতে পারছে তাকে এভাবে তুলে নিয়ে আসার কারণ, আর এটাও বুঝতে পারে এরা সাধারণ কোনো লোক না। কান্নার তোড় কমে এলো, এক মুহুর্তের জন্য পুরো ঘরে চোখ বুলায় ডক্টর মালিহা। দেয়ালে ড্রাগনের ভয়ংকর পেইন্টিং দেখে শুকনো ঢোক গিয়ে নিচে তাকাতেই আতঙ্কে দু’হাতে মুখ চেপে ধরে নৃশংস অপ্রীতিকর দৃশ্যের স্বাক্ষী হয়ে।
‘ন্যাসো দু’ কাঁধে দুই মেডের লাশ তুলছে। গলা শুকিয়ে আসে ডক্টর মালিহার। লুকাস চোখ রাঙানি দিতেই সম্বিত ফিরে পায়, তড়িঘড়ি করে এলিজাবেথের চিকিৎসা করতে থাকে। লুকাস আগে থেকেই গার্ড দিয়ে সকল ঔষধ, ব্যান্ডেল,রিবোন গ*জ, আরটারি, ফ*রসপ্সে, টুথ ফ*রসেপ্স, সি’জোর, পোভি’সেপ, হেক্সিসল, স্পিরিট প্রয়োজনীয় সকল কিছু পাঠিয়ে দিয়েছিল। চারটে সেলাই লাগে এলিজাবেথের হাতে। ইনজেকশনের সরু সুইচ অতি সুক্ষ্ম হওয়ায় ক্ষত তেমন গাঢ় হয়নি।
‘কোনো এক ঘোরে পড়ে আবারও রিচার্ড উপরে আসে। দরজা কাছে দাঁড়িয়ে থেকে নিশ্চুপ। অবয়বে থরথর করা বিদ্বেষ। ডক্টর মালিহা কাজ শেষ করে ওঠে দাঁড়ায়। পিছন ফিরতেই রিচার্ডের সমুদ্র নীল চোখের সম্মুখীন হয়। উচ্চতায় পাঁচ ফিট সাত হয়েও ঘাড় তুলে তাকাতে হলো রিচার্ডের দিকে। তবে তাকিয়ে থাকতে পারল না সেই সমুদ্র নীল চোখ দু’টোতে,যেখানে এখনও অযাচিত কারণে ঘনীভূত হচ্ছে আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত। রিচার্ডের কাঠকাঠ গলা,
“ইজ শি ওকে ?”
‘লুকাস ডক্টর মালিহা ব্যাগ নিচ্ছিল পোঁছে দিবে বলে। রিচার্ডের মুখে এহেন অপ্রত্যাশিত কথা শুনে হাত থেমে যায়। ভ্রু কুঁচকানো অবাক চোখে তেরছা নজরে তাকাল ন্যাসোর দিকে। ন্যাসো আগে থেকেই ছোট ছোট চোখ করে রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর চোখেও অসীম বিষ্ময়। উপরনিচ মাথা নাড়ায় ডক্টর মালিহা।
“আউট অফ ডেঞ্জার নাউ। আপনার ওয়াইফের প্রতি একটু যত্নশীল হবেন। বয়স কম প্লাস খুবই দূর্বল উনি।”
“শি ইজ নট মাই ওয়াইফ। রক্ষিতা হয় আমার,রক্ষিতা।”
‘গোমট পরিবেশ রিচার্ডের হুংকারে কেঁপে উঠল। ডক্টর মালিহার সঙ্গোপন আতঙ্কে কেঁপে উঠল। কাঁপতে থাকে চোখের পাপড়ি জোড়া। সে নিজেও জানে না কেন রিচার্ড কে দেখে এলিজাবেথের হাসবেন্ড মনে হলো তার কাছে। হয়তো দু’জন ই এক সৌন্দর্যের পাল্লায় তাই। তাই তো নিজের মতো ভেবে সরল মনে আর সকল পেসেন্টদের মতো এডভাইস দিয়েছিল। রিচার্ডের মেজাজ আঁচ করতে পেরে ন্যাসো দ্রুত ডক্টরকে আলগোছে নিয়ে বেরিয়ে যায়। ক্রোধে মটমট করছে রিচার্ডের ধারালো চোয়াল। রেশমার দিকে তাকিয়ে রুষ্ট গলায় বলে,”লিভ।”
‘এলিজাবেথের নিস্তেজ মুখে একপলক তাকিয়ে রেশমা চলে যায়। রেশমা চলে যেতেই দরজা আটঁকিয়ে দেয় রিচার্ড। ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় এলিজাবেথের দিকে। বেডের সাথে কাঁধের একপাশ ঘেঁষে আদৌ ঝুঁকে বসলো এলিজাবেথের উপর। শূন্য দৃষ্টিতে জমে রয়েছে ক্রোধের পাহাড়। কুটিল হাতে হাত রাখল এলিজাবেথের ব্যান্ডেজ করা হাতে। ধীরে ধীরে চাপ প্রয়োগ করতে থাকে, দৃঢ় হয় হাতের বাঁধন। অচেতন অবস্থায় ই নড়েচড়ে, চোখমুখ কুঁচকে ফেলে এলিজাবেথ ব্যাথায়।
“ডাক্তার টা কিন্তু সুন্দর ।”
“হ্যাঁ! সুন্দর তবে তোমার কালারের সাথে যাবে না।”
‘চুপসে গেল লুকাসের মুখ। মাত্রই তারা দু’জনে ডক্টর মালিহাকে সেভ’লি বাসায় পৌঁছে দিয়ে আসলো। লুকাস, ন্যাসোর মুখে এহেন কথা শুনে চোখ রাঙিয়ে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বাইরে। ন্যাসো ঠোঁট কামড়ে হেসে স্পিড বাড়ায় গাড়ির।
‘পর্দা ভিজিয়ে দেওয়া হয়নি রাতে। সূর্য যখন পৃথিবীকে আলোকিত করতে ব্যস্ত আলোক রশ্মির মাধ্যমে। ঠিক তখনই গভীর জঙ্গলের উঁচু উঁচু গাছের ফাঁক-ফোকর গলিয়ে আলো আঁচড়ে পড়ে ট্যারেসে। সোনালী আলোর দূত্যি চোখে পড়তেই ঘুম ভাঙে এলিজাবেথের। সারারাত ঘুমিয়ে ঘুমের ঔষধের রিয়াকশন ফুরালো সবেমাত্র। মচরে পড়া নরম রোদ এসে গায়ে লাগছে কাচের গ্লাস ভেদ করে। এক পশলা শীতল হাওয়া এসে ছুঁয়ে দিল গা। পিটপিট করে চোখে মেলে তাকানোর চেষ্টা করল এলিজাবেথ। চেষ্টা করতেই চোখ জুড়ে নিদ্রারা আবারও ভীড় জমানোর চেষ্টা করল।
‘তাদের ব্যর্থ করার তাগিদে দু’হাত দিয়ে চোখ কচলাতে চাইল এলিজাবেথ। হঠাৎ বা হাত চোখে রাখতেই ব্যাথায় অসাড় হয়ে নীলাভ বর্ণ ধারন করে এলিজাবেথের শরীর। তাৎক্ষণিক ঘুম ছুটে যায়। চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে ব্যান্ডেজ করা হাত। তারমানে সে মরেনি, এখনো আছে এই অভিশপ্ত জীবনে। শুরু হয় মস্তিষ্কে তোলপাড়। কান্নার পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে বুকের ভিতর মোচড় দিয়ে ধরল। কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ার আগেই অতর্কিত আক্রমণে হচকিয়ে যায়।
ছিন্নভিন্ন প্রলয়ের মতো রিচার্ড শ্বাসনালী চেপে ধরে এলিজাবেথের। ওর অর্ধেক শরীর ঝুলে আছে এলিজাবেথের উপর। হঠাৎ আক্রমণে কান্নার আরও তোড় বেড়ে গেল এলিজাবেথের। ঠৌঁট ভাঙতে ভাঙতে তাকাল রিচার্ডের চোখে। অসম্ভব লাল হয়ে আছে রিচার্ডের চোখেজোড়া। যেমনটা হয় সারারাত কেউ না ঘুৃমালে। শক্ত হাতের চাপে ধরে রাখার ফলে কণ্ঠনালীর পথ নিভে এলো। বহু কসরতে সহসাই আওড়ালো এলিজাবেথ,
“কেন বাঁচালেন আমাকে ? মুক্তি দেন আমাকে এই নরক যন্ত্রণা থেকে। হয়নি আমার শরীরের স্বাদ নেওয়া? কয়’দিন পর তো এমনিতেও ছুঁড়ে ফেলে দিবেন, এখন কেন এভাবে আটকিঁয়ে রেখেছেন আমাকে?”
‘এলিজাবেথের কথার পারদে গলায় চাপ আরো বৃদ্ধি হলো। নিশ্বাস আঁটকে মুখশ্রী রক্তশূণ্য হয়ে নীলচে রূপ ধারণ করে। ওর ভিতর অশ্রুবিহীন আর্তনাদ, গোমড়ে ওঠা যন্ত্রণা। রিচার্ডের চোখে বিস্ফোরণের প্রতিক্ষা, হাতে নিস্তব্ধ মৃত্যুঘন্টা। কাঁপন ধরানো তান্ডবীয় স্বরে
চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৬
“মরতে চাস? খুব শখ না? হ্যাঁ তুই মরবি! তবে এতো সহজে না। পঁচে গলে মরবি তবুও আমার কাছেই থাকতে হবে তোকে। এখানেই মরতে হবে। আমার বাইরে যাওয়ার ক্ষমতা তোর নেই।”
‘এলিজাবেথের গলা ছাড়িয়ে রাগে উন্মত্ত রিচার্ড হনহনিয়ে ওয়াশরুমের দিকে চলে যায়। শ্বাস রুদ্ধ হওয়ার উপক্রম নিয়ে এলিজাবেথ খুকখুক করে কাশতে থাকে। আর একটু হলে তার শ্বাস চিরতরে থেমে যেত। এক ধ্বংসপ্রবণ, পাপাচারে নিমজ্জিত জীবনের মরিচিকা থেকে মুক্তি চাইছে সে। অথচ সেই জীবন তাকে যেন ধরে রাখতে মরিয়া।