বিকেলের প্রণয় পর্ব ২০
Arshi Ayat
অনুরুপের চেম্বারটা বেশ গোছালো।সামনের অংশটুকুতে রোগী দেখে আর পেছনের দিকটায় নিজস্ব জায়গা।এখানে ছোটো একটা ঘর।এরমধ্যে একজনের বিছানা,পড়ার টেবিল-চেয়ার,একটা বই রাখার সরু কাঠের শেলফ।তাতে মেডিকেল সেক্টরের বইয়ে ভর্তি।এছাড়াও দু’টো ইনডোর প্ল্যান্টও আছে।মিলাত চারপাশে চোখ বুলিয়ে মনে মনে বলল,’বাহ!ডাক্তার সাহেব বেশ সৌখিন মানুষ।’
অনুরুপ বুঝতে পারছে না এই কাজগুলো সে কেন করছে?কেন একটা মেয়েকে নিয়ে সে এত চিন্তা করে?এই কেনোর উত্তরও হয়তো ওর কাছে আছে কিন্তু মানতে চাইছে না।তবে মেয়েটাকে নিয়ে ভাবতে ভালো লাগে।যেটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই।
সকালে মিলাতের ঘুম ভাঙে সোয়া সাতটায়।আড়মোড়া ভেঙে নিজের পোশাক ঠিক করে হাতব্যাগ আর ফোনসহ অনুরুপের চেম্বার ছেড়ে বেরিয়ে আসতেই অনুরুপের সাথে দেখা।কেবিনের দিকেই আসছিলো সে।ওকে দেখে মৃদু হেসে বলল,’ঘুম হলো?’
মিলাতও হাসি মুখে জবাব দিলো,’জ্বি,ডাক্তার।ধন্যবাদ আপনাকে।এই নিন আপনার চাবি।’
‘ধন্যবাদ।’
‘আচ্ছা,বাবাকে নিয়ে যেতে পারব কবে?’
‘আজই।আমি আটটায় রুটিন চেক-আপ শেষে রিলিজ দিয়ে দেব।’
‘আচ্ছা।তাহলে আমি এখন বাবার কাছে যাই।’
‘ঠিকাছে।আপনি যান।আমি আধঘন্টা পর আসছি।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মিলাত চলে গেলো হারুন সাহেবের কেবিনে।এসেই দেখলো মিনারা বেগম আর রুজিনা বেগম হারুন সাহেবকে খাওয়াচ্ছেন।ওকে দেখে মিনারা বেগম বলে উঠলেন,’কি রে!কোথায় ছিলি?’
মিলাত একবার ভাবলো অনুরুপের চেম্বারের ঘুমিয়েছে এটা কি বলা ঠিক হবে না-কি অন্যকিছু বুঝবে?আশঙ্কার কথা চিন্তা করে মিলাত সত্যিটা বলল না।এগিয়ে আসতে আসতে বলল,’কাছেই গিয়েছিলাম চা খেতে।’
রুজিনা বেগম ভাবিকে বললেন,’ইশ!সারারাত জেগে ছিলো মেয়েটা।এইজন্যই ঘুম পাচ্ছিলো বলে চা খেতে গেছে।’
মিনারা বেগমও মাথা নাড়লেন।বললেন,’তুই বাসায় যা।আমরা তোর বাবাকে নিয়ে আসছি।’
‘সমস্যা নেই।আর কিছুক্ষণই তো।বাবাকে একটু পরই রিলিজ দেবে।’
এবার হারুন সাহেব মুখ খুললেন।বললেন,’হ্যাঁ তোর মায়ের কথা শোন।বাড়ি যা।আমি ঠিকাছি।’
বাবা,মা ফুপুর জোরাজোরিতে মিলাত আর থাকতে পারলো না।বেরিয়ে যাবার সময় শুনতে পেলো দু’টো নার্স ওর পেছনে নিচু গলায় কথা বলছে ওর ব্যাপারেই।একজন বলছে,’দেখেছো,তমা?এই মেয়েটা গতকাল রাতে অনুরুপ স্যারের চেম্বারে ঘুমিয়েছিলো।’
‘কি বলো,সত্যি?’
‘তা আর বলতে?আমি নিজের চোখে দেখেছি ওকে ঢুকতে।’
‘ও চাবি পেলো কোথায়?’
‘কোথায় আবার স্যার দিয়েছে হয়তো।’
‘আশ্চর্য,জীবনেও তো স্যার নিজের চেম্বারের চাবি কাউকে দিতে দেখি নি!’
‘আমার মনে হয় ওদের ভেতর কিছু চলছে।’
‘কি চলছে?’
‘বোকা নাকি তুমি?ওরা বিয়ে টিয়ে করেছে হয়তো!’
‘স্যার তো কিছু বলল না।’
‘পরে বলবে হয়তো।শোনো,এগুলো কাউকে বলো না।’
‘আচ্ছা।’
মিলাতের বিরক্ত লাগলো।এসব মহিলারা এমন নিম্ন চিন্তাধারার কেন?ও আর এসব শুনলো না।সোজা বাসায় চলো গেলো।এদিকে পুরো হাসপাতালে নার্সদের মধ্যে রটে গেছে ডাক্তার অনুরুপ বিয়ে করেছে এবং তার দু’টি পুত্র সন্তানও রয়েছে।এসব কথা অনুরুপের কানেও এসেছে।রাগের বদলে অনুরুপ যেন মজাই পেলো কথাগুলো শুনে।
সাইফুল খেয়াল করছে ইদানীং চৈতির ব্যাবহার অন্যরকম।আগের মত মাখোমাখো ভাবটা নেই।কেমন যেন এড়িয়ে চলে।সারাক্ষণ নিজের মনে কি যেন ভেবে ভেবে হাসে আবার ও সামনে গেলে মুখটা বেজার করে রাখে।কি হয়েছে জিজ্ঞেস করলেও ঠিকঠাক উত্তর পাওয়া যায় না।আজ ঢাকায় ফিরে খোলাখুলি আলোচনা করার কথা ভাবছে সাইফুল।চৈতির কি হয়েছে এটা জানতে হবে।
রেভানের কোনো কাজেই মন বসছে না।কেমন যেন ছন্নছাড়া দিন কাটছে আজ।নিজের ওপরই নিজে বেজায় বিরক্ত হলো সে।প্রত্যেকবারই মানুষ চিনতে কি করে ভুল হয় আবার এদিকে বেনামী কেউ ওকে আজ একটা ফুলের তোড়া আর দামী ঘড়ি পাঠিয়েছে।কোনো নাম ঠিকানা,ফোন নাম্বার কিছু নেই।কি হচ্ছে এসব?হঠাৎই রেভানের মনে হলো যদি কখনো আবার মিলাতে সামনে দাঁড়ায় তখন কিভাবে কথা শুরু করবে না-কি না চেনার ভান করে চলো আসবে?
ভাইকে বাসায় দিয়ে রুজিনা বেগম চলে গেলেন চট্টগ্রাম।নিরুর পরীক্ষা পিছিয়েছে।বেচারি পরীক্ষা শেষ হওয়া ছাড়া আসতেও পারবে না আবার বাসায় একাও তাই রুজিনা বেগম চলে গেলেন।
দুপুরে ঘুম থেকে উঠে গোসল সেরে বাবা,মায়ের সাথে খেতে বসলো মিলাত।খেতে খেতেই হারুন সাহেব বললেন,’মাস্টার্সে ভর্তি হয়ে যা।’
‘হ্যাঁ। যাব কাল পরশু।তোমার অফিসে কি কোনো পোস্ট খালি হবে?পাশাপাশি চাকরিও দরকার একটা।’
‘তোর চাকরি করতে হবে না।তুই পড়।মাস্টার্স করে স্কলারশিপের আবেদন কর বাইরে গিয়ে ডাবল মাস্টার্স করে সেখানেই সেটেল্ড হয়ে যা।’
মিলাত কিছু বলার আগেই মিনারা বেগম ধমকে উঠে বললেন,’কি বলো এসব?মেয়েকে কি সারাজীবন নিজের কাছেই রাখবা?ওর বয়সই বা হলো কত?’
‘তুমি চুপ করো।আমি মেয়ের ভালোই চাই।’
মিলাত দেখলো অবস্থা বেগতিক।তাই সে পরিস্থিতি ঠান্ডা করার জন্য বলল,’তোমরা চুপ না করলে কিন্তু আমি বাসা ছেড়ে দেব।’
বিকেলের প্রণয় পর্ব ১৯
এইতো ঠান্ডা!চুপচাপ তিনজনে খাওয়া শেষ করলো।খাওয়া শেষ করে এসেই মিলাত দেখলো ওর ফোনে একটা মিসড কল উঠে আছে।ডাক্তারের মিসডকল।মিলাত ব্যাক করলো কিন্তু ধরলো না মানুষটা।
দুপুরের খাবারের পর নিজের বিছানায় একটু শুতেই মিলাতের গায়ের ঘ্রাণটা নাকে এলো।এতেই যেন ভীষণ ভালো লাগা কাজ করলো ওর।মিলাতের গায়ের ঘ্রাণে এমন এক আরামদায়ক অনুভূতি তৈরি হলো অনুরুপের মনে, যেন সমস্ত ক্লান্তি মুহূর্তেই দূরে সরে গেল। খাবারের পরের সেই অলস দুপুরে নিজের বিছানায় শুয়ে অনুরুপ যেন ঘ্রাণের ভেতর দিয়ে মিলাতের অস্তিত্বকে আরও গভীরভাবে অনুভব করতে পারল।অনুরুপের মনে হলো, পৃথিবীর সমস্ত সুন্দর মুহূর্ত যেন এই ছোট্ট ঘ্রাণেই বন্দী।তবে মুহুর্তটা স্থায়ী হলো না বেশিক্ষণ।একজন নার্স দ্রুত এসে খবর দিলেন,ইমার্জেন্সি রোগী এসেছে।একটা মেয়ে এক্সিডেন্ট করেছে।মেয়েটার নাম নাইমা জাহান।