প্রেমের সমর পর্ব ১৮

প্রেমের সমর পর্ব ১৮
অলকানন্দা ঐন্দ্রি

স্বচ্ছ একটু সুস্থ হতেই শুরু হলো তার বলদময় কান্ডকারখানা। সকাল সকাল উঠেই ঘরময় পায়চারি করে সে গুগলে সার্চ দিয়েছে কিভাবে মেয়েদের মন জয় করা যায়। অতঃপর বিভিন্ন সোর্স খোঁজাখোঁজি করে সে উপহার দেওয়া এবং বউয়ের প্রশংসা করার সিদ্ধান্ত নিল। কিন্তু এইখানেও বিপত্তি। কি উপহার দিবে?এসব নিয়ে ভাবতে ভাবতেই রাহাকে পেল।তারপর রাহাকে নিয়ে বের হয়ে সারা বিকেল ঘুরঘুর করে রাতে ফিরল স্বচ্ছরা।সুহা যখন দরজা খুলল? এমন ভাবে চাইল যেন স্বচ্ছকে গিলে খাবে। স্বচ্ছ বোকাবোকা চোখে তাকায়। চোখে হেসে বউয়ের প্রশংসা করার উদ্দেশ্যে বলে,
“ সুহাসিনী? এভাবে তাকাচ্ছো কেন? রেগে তাকালে তোমায় সুন্দর লাগে।প্রেমে পড়ে যাই। ”
স্বচ্ছ যদিও মন থেকেই প্রশংসাটা করল কিন্তু সুহা বিরক্ত হলো।অহেতুক এই প্রশংসায় সে গলে গেল না। বরং বোনের আর স্বচ্ছর হাত ভর্তি শপিং ব্যাগ দেখে বিরক্ত গলায় শুধাল,
“ এতক্ষন সময় ধরে দুইজনে কোন রাজকার্য উদ্ধার করলেন? আর হ্যাঁ, আপনার না জ্বর? পরশু তো উঠে বসে খেতেও পারছিলেন না। ”
স্বচ্ছ দাঁত কেলিয়ে হেসে দেয়। তৎক্ষনাৎ উত্তর করে,

“ বউয়ের সেবা পেয়ে সু্স্থ হয়ে গেছি। একেবারে ফাইন। দেখো কপালে হাত দিয়ে। জ্বর নেই। ”
“ভালো, তাহলে কাল সকালে এখান থেকে চলে যাবেন। দাদাজান পছন্দ করছেন না আপনার থাকাটা। আর পাড়া-প্রতিবেশিও অনেক কিছু বলে বেড়াবে আপনি এভাবে থাকলে। ”
স্বচ্ছর খুশিখুশি মনটা এক মুহুর্তেই বোধহয় নিরব হয়ে এল। চাপা রাগ লাগল
“ তুমি খুব অহংকারী সুহাসিনী। সবসময় এমন ভাবে অপমান করো যেন মনে হয় আমাকে একটা সাধারণ মানুষ হিসেবেও গণ্য করো না তুমি। ”
সুহা সরু চোখে তাকায়। ফোঁস করে বলে,
“ গণ্য করার পথ রাখেননি। তাই। ”
কথাটা বলেই সুহা বিরক্ত মুখে চলে যায় সেখান থেকে৷ স্বচ্ছ তপ্তশ্বাস ফেলে। একনজর সুহার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পরমুহুর্তে রাহাকে বলে উঠে,
“ সবসময় মেজাজের বারোটা বাজিয়ে দেয় তোমার বোন। কতসুন্দর প্রেম নিবেদন করে গিফ্ট করতাম শাড়িগুলো। তা না! আমার প্রেম নিবেদনের আর মুডই রাখে নি। ”
রাহা হেসে উঠে। বিনিময়ে বলে উঠে,
“রাগ করবেন না ভাইয়া। আমি আছি তো। আপু শেষ অব্দি আপনার হবেই। চিন্তা করবেন না। ”
স্বচ্ছ হতাশ হয়ে শ্বাস টানে। কিড়মিড় করে বলে উঠে,

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ ঐ ভিলেইন দাদাজান তো চায় না। মনে হয় না শেষ অব্দি তোমার বোনরে সে আমায় দিবে। আচ্ছা যদি ওর বিয়ে অন্য কোথাও দিয়ে দেয় তোমার ঐ ভিলেইন দাদাজান? ”
“ আপনার সাথে তো ডিভোর্স হয় নি এখনো। কি করে দিবে?”
স্বচ্ছ দাদাজানের প্রতি রাগ ফুঁসে। নাক ফুলিয়ে নিয়ে বলে উঠে,
“ দিতে চাইলে কিন্তু আমি সোজা বউ নিয়ে ভাগব। একচুলও ছাড় দিব না। সাহস কত, আমায় নোটিশ পাঠাল। ”
রাহা ফের হাসে। বলে,
“ নোটিশ পাঠানোর ৯০ দিনের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ এমনিতেও কার্যকর হবে না। আপনার হাতে আরো অনেকদিন দুলাভাই। চেষ্টা করে যান, আপু ঠিক রাজি হবে। ”
স্বচ্ছ বিড়বিড় করে বলে উঠে,
” ৯০ দিনকে কমিয়ে তোমার দাদাজান ষড়যন্ত্র করে ১৫ দিন বানিয়ে দিয়েছে। শা’লা ষড়যন্ত্রকারী দাদাজান! ”
রাহা এবারে হেসে জিজ্ঞেস করে,
“ ভালোবাসেন আমার আপুকে? ”
স্বচ্ছ চুপ থাকে। প্রশ্নটা নিজেই নিজেকে করে থমকে যায়। তার কপালে কি এই অস্থিরতা, এই দুর্বলতা আসার কথা ছিল? সে তো ভাবেই নি কখনো এভাবে সে দুর্বল হয়ে যাবে কোন নারীর প্রতি। স্বচ্ছ দীর্ঘশ্বাস ফেলে। উত্তর এড়িয়ে গিয়ে বলে উঠে,
“ ভালোবাসলে কি কি প্রমাণ করা লাগে রাহা? ”
রাহা উত্তর করে,
“ ভালোবাসা প্রমাণ করার বিষয় নয় দুলাভাই, ভালোবাসা হলো অনুভবের বিষয়।”

তখন রাত। স্বচ্ছকে আলাদা রুমে অর্থ্যাৎ দাদার সাথে থাকতে দেওয়া হলেও রাহার সাহায্য নিয়ে সে কিছু সময়ের জন্য সুহার রুমে গেলে। পা টিপটিপ করে বিছানায় বসে সুহার জন্য কিনে আনা শাড়িগুলা রাখল সুহার মাথার কাছেই। পরমুহুর্তেই একটা চিরকুট রাখল। স্বচ্ছ তাকায় ঘুমে থাকা মেয়েটার দিকে। অল্প আলোয় নিঃসন্দেহে মায়াবী বোধ হচ্ছে। স্বচ্ছ একটু ঝুঁকে। কয়েক সেকেন্ড এক পলকে তাকিয়ে থেকে শুধায়,
“ তুমি আমার প্রথম অস্থিরতা সুহাসিনী, তুমি আমার প্রথম অনুভূতি। তুমিই প্রথম যার কথা আমি ঘুমাতে গিয়েও ভাবি। বউ না তুমি? বউ হয়েই থেকো আমার। অন্য কারোর বউ হতে কিন্তু আমি দেব না সুহাসিনী। মাইন্ড ইট। ”
কথাগুলো বলেই স্বচ্ছ পা বাড়াল রুমে বাইরে। তার ঠিক মিনিট দুয়েক পরই রুমে এল রাহা। ইচ্ছে করেই সুহাকে জাগিয়ে দেওয়ার জন্য ঠেলে বলে উঠল,
“ আপু?এই আপু?তুই কি ঘুমের মধ্যে শপিংয়ে গিয়েছিস? তোর কাছে এতগুলো শপিং ব্যাগ কেন? ”
ছোটবোনের ডাকে সুহা বিরক্ত হয়। চোখ কাচুমুচু করে উঠে বসতেই রাহা আলো জ্বালাল। শপিং ব্যাগ সামনে রেখে বলল,

“ দেখ দেখ, এগুলা তোর মাথার কাছে ছিল।”
সুহা তাকায়। মনোযোগ দিয়ে দেখে বুঝতে পারে এগুলো স্বচ্ছর হাতে থাকা সে শপিং ব্যাগ গুলোই। আর রাহার হাতে যেগুলো ছিল ঐগুলো রাহার জন্য কিনে দিয়েছে সম্ভবত। সুহা রাহা এবং স্বচ্ছর এই নাটক বুঝে উঠে বিরক্ত কন্ঠে বলে,
“ কি শুরু করেছিস এসব? তুই নিজেই ঐ লোকের হয়ে এগুলো এখানে রেখে এখন নাটক করছিস? মার লাগাব? ”
“ আপু? দেখ, দেখ না ভেতরে কি আছে৷ দেখা না কি দিয়েছে.. ”
“ দেখাব না। তোকে কি দিয়েছে তা কি জানতে চেয়েছি আমি? ”
“ আমাকে? আমাকে তো শুধু তিনটা শাড়ি দিয়েছে আপু। বেশি না। ”
তিন তিনটা শাড়ি! তাও কিনা বেশি না। সুহা রাগ ফুঁসে। তাকে আগে গিপ্ট না করে তার বোনকে কেন গিফ্ট করবে? কি সম্পর্ক তার বোনের সাথে হুহ?পুরুষমাত্রই ছুঁকছুঁকে স্বভাব। বিশ্বাস নেই। সুহা বাঁকা চোখে তাকায় বোনের দিকে। কিছু বলতে নিবে ঠিক তখনই রাহার ফোন বাঁজে। রাহা যেন বিরক্ত হয়। নিরাস স্বরে বলে,
“ কোন ছাগল যে এই রাত বিরাতে আমায় কল দিচ্ছে এটাই বুঝে উঠছি না আপু। কল যখন দিচ্ছিসই কথা তো বলবি নাকি। অথচ কথাই বলছে না। কল করে চুপ করে বসে আছে। ”

কথাগুলো বিরক্ত হয়ে ঝাঝালো স্বরে বলতে বলতেই রাহা জানালার পাশে গেল। ঠান্ডা বাতাস শরীর ছুঁয়ে যেতেই কল রিসিভড করল সে। বিরক্ত হয়ে বলে,
“ সমস্যা কি ভাই?কে আপনে? রাতদুপুরে কল দিয়ে বিরক্ত করছেন কেন বলুন? ”
ওপাশের মানুষটা কথা বলে না৷ শুধু নিঃশ্বাসের শব্দই ভেসে আসে। রাহা ফের বিরক্ত হয়ে কল রাখল। অথচ একটু পর আবারও কল এল।রাহা ফের কল তুলল। কিন্তু এবারেও নিরবতা। কোন শব্দ নেই, কথা নেই, কেবল নিঃশ্বাসের আওয়াজ!
.
রাহা ঘুমিয়ে পড়তেইসুহা শাড়িগুলো দেখল নিজে একা একাই। শাড়ির সাথে অবশ্য মিলেছে কাজল, আলতা,হাতের চুড়ি, রূপোর নুপূর এবং একটা শুকনো বেলিফুলের মালা। সাথে একটক চিরকুট। সুহা বুক ধুকপুক করে। বোকা লোকটার বোকা কান্ডকারখানা দেখে তার ইচ্ছে হয় বকাঝকা করতে। একসাথে এতকিছু গিফ্ট করে কে? যেন মনে হচ্ছে বিয়ের কেনাকাটা করেছে সে। সুহা মনে মনে হালকা হাসেও। চিরকুট মেলে পড়া শুরু করে,
“ সুহাসিনী,আজকের রাতটায় তোমায় শাড়ি পরিহিত অবস্থায় দেখতে পারি? একটা বার দর্শন দিবে? অপেক্ষায় থাকব ছাদে। ”
সুহা পুরো রাতটা এই চিরকুট হাতে নিয়েই কাঁটিয়ে দিল তীব্র অস্থিরতায়। সে শাড়ি পরবে? ছাদে যাবে? নাকি পরবে না? এই দ্বিধা নিয়েই সারাটা রাত কাঁটল তার। পরমুহুর্তেই কি বুঝে মায়া হলো যখন প্রায় ভোর হয়ে আসবে তখন। হুট করেই হৃদয় গলল তার। একটা লাল শাড়ি হাতে নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল সে। তারপর যত্ন নিয়েই শাড়িটক পরল।এলোমেলো খোলা চুলে গুঁজল বেলিফুলের মালাটা। চোখে কাজল। পুরো এক নির্ঘুম রাত্রির অস্থিরতা নিয়েই সে রুম ছেড়ে বের হলো। হৃদয়ে তখন ধুকপুক করা অনুভূতি। এই প্রথম সে ঐ মানুষটার কথা রাখতে নিজেকে শাড়িতে সাঁজিয়ে তার সামনে যাচ্ছে! এই প্রথম!

তখনও সকালের আলো ফুটে নি। আধো অন্ধকার। দূর রাস্তায় দুয়েকটা গাড়ি ছুটছে। আশপাশে কোথাও শোনা যাচ্ছে কুকুরের গলার শব্দ। সুহা পা বাড়িয়ে ছাদে গেল। আশপাশে ছাদে তাকাল। নাকে এল নিকোটিনের তীব্র গন্ধ। কানে এল স্বচ্ছর গলা,
“ সুহাসিনী?অবশেষে একটা পুরো রাত অপেক্ষা করিয়ে দেখা দিলে বলো? ”
সুহার বুকের অস্থিরতা আরেকটু বাড়ল বোধহয়। প্রতিদিনের সাহসী সুহাকে আজ একটু নড়বড়ে দেখাল। কেমন যেন অপ্রস্তুত। তাকিয়ে দেখল স্বচ্ছকে। ঠোঁট এলিয়ে হেসে পরমুহুর্তে নিজেকে শক্ত দেখানোর উদ্দেশ্যে বলে উঠে,
“ এখনও ছাদে থেকে গেছেন আপনি? কি করছেন এখানে? ”
স্বচ্ছ নিরব দৃষ্টিতে চেয়ে থাকে। মৃদু আলোয় সুহাকে লাল শাড়িতে পরখ করে মনোযোগী হয়ে। মেয়েটাকে শাড়িতে বোধহয় আরেকটু বেশিই সুন্দর বোধ হলো স্বচ্ছর। তাকিয়েই থাকতে ইচ্ছে হলো। বুকের ভেতর অনুভূতির শিহরণ জাগল। স্বচ্ছ পা বাড়ায়। সামনে এসে সুহার কানের কাছে চুলগুলো উড়িয়ে দিয়ে ঘোরলাগা স্বরে বলে,
“ ভাগ্যিস ছিলাম। নাহলে তো তোমায় শাড়িতে দেখা হতো না। ”
সুহা কেমন যেন কেঁপে উঠে কন্ঠটা শুনে। ঘাবড়ানো স্বরর বলে উঠে,
“ আমি ভেবেছিলাম আপনি চলে যাবেন তাই এসেছি। ”
স্বচ্ছ হাসে তার সাহসী বউয়ের এমন কথা শুনে৷ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“ শিওর? আমার তো মনে হচ্ছে আমি আছি বলেই তুমি এসেছো সুহাসিনী। ”
সুহা চুপ থাকে কিয়ৎক্ষন। নার্ভাস ফিল হয় তার। স্বচ্ছ এমনভাবে তাকিয়ে আছে কেন? কি দেখছে এভাবে তাকিয়ে? সুহার তো অস্বস্তি লাগছে এই দৃষ্টিতে। হাত পা ঘামছে। সুহা কিছুটা পিছু সরে কথা ঘুরাতে বলে,
“ রাত জেগে কি কেবল সিগারেটই টেনেছেন? গন্ধে তো থাকা যাচ্ছে না। ”
স্বচ্ছ হেসে উঠে।হেসে বলে,

“ কি করব বলো, যাদের বউ থাকে না তাদেরকে সিগারেট দিয়েই শান্তি খুঁজতে হয়। আর বাসায় হলে তো তোমার ভিলেইন দাদাজান আবার নেশাখোর বলে লা’থি মেরে বের করর দিত। তাই ছাদই বেস্ট। ”
কথাটা বলেও ফের হাসে স্বচ্ছ।তাকিয়ে দেখে ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়া শুরু হয়েছে। স্বচ্ছ বুঝে উঠে এটা কিসের বৃষ্টি। সারা রাত সে জেগে থাকল, ভ্যাপসা গরমে সিগারেট টানল অথচ বৃষ্টি নামল না। আর যখনই তার সুন্দরী প্রেয়সী শাড়ি সামনে উপস্থিত হলো তখনই বৃষ্টি নামল। এটা কি প্রেমের বৃষ্টি? নাকি আকাশ ও তার বউয়ের এরূপ রূপ দেখে মুগ্ধ? তাই বৃষ্টির মাধ্যমে বুঝাচ্ছে? স্বচ্ছ ফের বলে,
“ এই অসময়ে বৃষ্টিটা কিসের বলো তো? প্রেমবৃষ্টি? নাকি বউবৃষ্টি? ”
সুহা কেমন করে তাকাল এবারে। যেন রেগে খেয়ে নিবে স্বচ্ছকে। স্বচ্ছ তা দেখে হাসে। কিঞ্চিৎ ঝুঁকে গিয়ে সুহার কপালে আলতো করে ঠোঁট ছোঁয়াল সে। বিড়বিড় স্বরে বলে,
“এভাবে রেগে চাইবে না। কলিজা কেমন করর আমার। মন বলে এই রাগী মুখটা দেখার জন্য হলেও মেয়েটাকে ধরেবেঁধে জীবনে রেখে দেওয়া উচিত। আমি আবার খুব ভালো নই। জেদী মানুষ ছোট থেকে। জেদ ছাপলে জোরজবরদস্তি করেই তোমাকে নিয়ে চলে যাব, নিজের করে রেখে দিব। আর এখন তো আরো নিশ্চিত যে তোমার মনে আমার জন্য এইটুকু হলেও অনুভূতি আছে সুহাসিনী। নয়তো শাড়ি পরে এখানে আসতে না তো। আমি শুধু কতটুকু আমার যাওয়া উচিত তা বুঝে নিতে এটা পরীক্ষা করেছি সুহাসিনী। নাও আই গট মাই আন্সার। ”
কথাগুলো এক টানে বলেই স্বচ্ছ পা বাড়ায়৷ ঠোঁট গোল করে শিষ বাড়ায়।
.
দুপুর বারোটা।
দাদাজান কার সাথে যেন ঘন্টাখানেক আলাপ জুড়েছে৷ আলোচনার বিষয়বস্তু হলো সুহা। সুহাকে কোন পরিবারের পুত্রবধূ করা নিয়েই কথা বলা হচ্ছে। তাও স্বচ্ছকে শুনিয়ে শুনিয়েই। স্বচ্ছ ধৈর্য্যসহিত এতক্ষন কথাগুলো শুনলেও এক পর্যায়ে উঠে দাঁড়ায়। হেঁটে গিয়ে পকেটে হাত গুঁটিয়ে একদম সোজা হয়ে দাঁড়াল সুহার সামনে। সুন্দর করেই বলল,
“৫ মিনিট সময় আছে। তোমাকে নিচে যেতে বলেছে সুহাসিনী। এটা কিন্তু তোমার দাদাজানই বলেছে।সুতারাং পাঁচ মিনিটেই তৈরি হয়ে নাও। নয়তো দাদাজান রাগ করে বসবে আবার। ”

সুহার বিশ্বাস হলো না যেন। কেমন করে তাকাল। দু পা বাড়িয়ে দাদাজানের কাছে যেতে নিতেই স্বচ্ছ হাত আটকে দাঁড়ায়। ইশারায় রাহাকে কিছু বুঝাতে রাহাও বলে উঠল,
“ আরেহ হ্যাঁ, দাদা তো মাত্রই আমাকে যেতে বলল। চল,চল। নিচে চল। দুজনকেই যেতে বলেছে। ”
স্বচ্ছ হাসে। সুহার সন্দেহ দূর করতে বলে উঠে,
“ বিশ্বাস হচ্ছে না? বললাম তো দাদাজান বলেছে। দাদাজান গাড়ি আনতে গেছে। তোমাকে নিয়ে বেরুবেন তো। দেরি হলে কিন্তু রেগে যাবে। ”
সুহা জানে দাদাজান দেরি করা পছন্দ করে না। কিন্তু তবুও খটকা লাগে তার।উপায় না পেয়ে সে নিচে গিয়েই দাঁড়ায় স্বচ্ছ তখন হাসে। দাদাজানের কাছে গিয়ে বলে,
“ হেই ভিলেইন দাদাজান! কথা ছিল পনেরোদিন। আমি কিন্তু তিনদিনের মধ্যেই আপনার নাতনির মতামত পেয়ে গিয়েছি। কিভাবে পেয়েছি তা বলব না। এখন কথা হচ্ছে এই যে আমার চোখের সামনেই আমার বউকে পাচার করার ষড়যন্ত্র চলছে এসব আমি সহ্য করব? মোটেও না। বউকে এখন নিয়ে যাব নিজের সাথে। তারপর একসাথে সংসার করব। হ্যাপি থাকুন হুহ?”
দাদাজান রেগে উঠলেন,

প্রেমের সমর পর্ব ১৭

“ এই ছোঁখরা! আমার সাথে শয়তানি দেখাচ্ছো?মেরে না হাড় ভেঙ্গে দিব। ”
স্বচ্ছ ঠোঁট বাঁকিয়ে বলে,
“ এত সহজ? যদি একটাও মার দিন তাহলে আপনার নাতনিকে ডিভোর্স দেওয়া তো দূর সারাজীবন আঠার ন্যায লাগিয়ে রাখব। আপনার আশা তখন কিছুতেই পূরণ হবে না বুঝলেন। ”
কথাগুলো বলেই রুম থেকে বেরিয়ে বাইরে থেকে দরজা লাগিয়ে দিল স্বচ্ছ। ভেতর থেকে শোনা যাচ্ছে দাদাজানে রাগত স্বর। স্বচ্ছ হাসে। আপাতত তার কাজ হলো নিচে গিয়ে তার বউটাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া! আপাতত এটাই তার একমাত্র কাজ!

প্রেমের সমর পর্ব ১৯