ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৮

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৮
মিথুবুড়ি

[ব্রেকিং নিউজ : তথ্যমন্ত্রী আনিসুল হক গত কাল থেকে নিখোঁজ, একই সাথে কাল সন্ধ্যা সাতটা নাগাদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওনার একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যেটা বর্তমানে গণমাধ্যমে ঝড় তুলে দিয়েছে। ভিডিওটিতে তিনি নিজে সমস্ত কিছু উল্লেখ্য করেন কীভাবে তিনি চৌদ্দ বছর আগে নিজের ছেলের প্রাণ বাঁচানোর জন্য বস্তির অসহায় এক ছেলের জীবন নিয়েছে এবং ওনার সকল কালো ব্যবসার সন্ধানও পাওয়া যায়। তারপর থেকেই তিনি নিখোঁজ এখনও পর্যন্ত কোনো খবর পাওয়া যায়নি। অদ্ভুত ভাবে আজ সকাল ভোরে-ই গত চারদিন আগে অপহরণ হওয়া সাদমান কে অপহরণকারীরা তথ্যমন্ত্রী বাসভবনের সামনে মুখ বেঁধে ফেলে যায় অক্ষত অবস্থায়। পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করেও কিছুই জানতে পারেনি সাদমানের কাছ থেকে এবং পুলিশ এটাও কনফার্ম করেন তথ্যমন্ত্রীর পরিবার হতে কোনো কেস ফাইল করা হয়নি এখনো পর্যন্ত ওনার নিখোঁজের ব্যাপারে। ]
সোর্স : সময় টিভি

[ ব্রেকিং নিউজ : আজ বেলা নয়টায় নিউ মার্কেট এলাকায় পুরাতন এক বিল্ডিং থেকে একজন কলেজ শিক্ষার্থীর ক্ষত-বিক্ষত লাশ পাওয়া যায়। পুলিশ তদন্তের মাধ্যমে জানতে পারে কাল রাত থেকে নিখোঁজ মেয়েটি। ইতিমধ্যে লাশ পোস্টমর্টেমের জন্য পাঠানো হয়েছে। ধর্ষণের কোনো আলামত শরীরে পাওয়া না গেলে মুখের অংশ খুবই বিভ/ৎস ভাবে কা/টা হয়েছে। মেয়ের লাশের বি/ধ্বস্ত অবস্থা দেখে ঘটনাস্থলেই হার্ট অ্যাটাক করেন বাবা। ধারনা করা যাচ্ছে এটি কোনো সাইকো সিরিয়াল কিলারের কাজ হবে। ]
সোর্স : যমুনা টেলিভিশ।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

‘টিভিতে নিউজ রিপোর্টার ব্লার করে মেয়েটির ডেড বডি দেখালেও সার্বিকভাবে আন্দাজ করা যাচ্ছে কতটা জঘ/ন্য ভাবে হ/ত্যাকা/রী ধ্বংস/যজ্ঞ চালিয়েছে মেয়েটির মুখে। প্লা/স দিয়ে জা/মি থেকে দাঁত খুলে আলাদা করে ফেলা হয়েছে। এতেই ক্ষ্যা/ন্ত হয়নি কিলার জামির মাং°সের অংশ সিগারেটের জ্বল/ন্ত আগুন দিয়ে ঝলসে দেওয়া হয়েছে। জিভ এবং দাঁতগুলো মিসিং। জি°ভ একদম ভিতর থেকে ধারালো ছু°রি দিয়ে কেটে নেওয়া হয়েছে। সবথেকে ভয়ানক ছিল ঠৌঁটের অংশ। কিলার প্রথমে খুবই সুক্ষ্ম ভাবে লাইটার দিয়ে মেয়েটির ঠৌঁটের উপরের রঙিন চামড়া পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে ।

‘যেমনটা আমরা রেস্টুরেন্টে দেখে থাকি মাংসের সবথেকে নরম হাড্ডি বিহীন অংশ অগ্নিশিখার জলন্ত লাল লাবার ধারা পুড়িয়ে গ্রিল করা হয় ঠিক তেমন ভাবে পু°ড়িয়ে কালচেটে বানানো হয় প্রথমে মেয়েটির ঠৌঁট। পরবর্তীতে কিলার খুবই আক্রোশের সাথে সি°জোর দিলে স্লাইড, স্লাইড করে কেটে°ছিল মেয়েটির ঠৌঁট তবে আলাদা করে নেয়নি মুখ থেকে। সমুদ্র পাড়ে যেভাবে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা শুঁটকি প্রকিয়াকণের সময় শুকানোর জন্য রোদের মধ্যে সরু দঁড়িতে মাছের ঠৌঁট দঁড়ির সাথে বেঁধে ঝুলিয়ে রাখে ঠিক তেমন ভাবে ফলা ফলা করে কাটা ঠৌঁটের অংশ নাকের নিচের অংশে ঝুলে ছিল। এবং প্রতিটি অংশের ফাঁকে ফাঁকে চিলি ফ্লেক্স পাওয়া গিয়েছে।
‘কফিতে শেষ চুমুক দিয়ে লুকাস তাকায় ন্যাসোর দিকে। ন্যাসো তখনও টিভির দিকেই তাকিয়ে ছিল। এতো নৃশংস বর্ণনা শুনেও লিভিং এরিয়ায় অবস্থানরত তিন মানবের মুখভঙ্গি খুবই স্বাভাবিক, যেন দুধ ভাত। অবশ্য তাদের কাছে দুধ ভাত-ই। লুকাসের গলায় টিটকারির স্বর,বলল “নতুন মাল নেমেছে নাকি মাঠে?”
‘কালচে’টে ঠৌঁট ব্ল্যাক কফির মগে ভিজিয়ে লুকাসের দিকে তাকাল রিচার্ড। ঠৌঁটের কোণে বক্র হাসি। নিরব পরিবেশে শোনা যায় ন্যাসোর রাশভারি আওয়াজ,

“বস ডিল কি ফাইনাল করবেন আজ?”
‘রিচার্ড কোনো কারণে অন্যমষ্ক ছিল। ধরতে পারেনি ন্যাসোর কথা। বিভক্ত হয়ে থাকা ললাটের ভাঁজ গুলো গুটিয়ে প্রসারিত করল কপাল। পরপর গলা খাসকি দিয়ে পরিষ্কার করে বলে,”কোনটা ?”
‘কিছুটা আশ্চর্য হলো বটে ন্যাসো, লুকাস দু’জনেই। রিচার্ড নিজের কাজের ব্যাপারে খুবই স্ট্রিট। হাতের কাজ কখনও ফেলে রাখে না, যখনের টা তখনই। সময় থেকে একমিনিট হের-ফের হলেও ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। হঠাৎ কাজের প্রতি এতো অমনোযোগী দেখে মনে প্রশ্ন আসলেও ভিতরের প্রশ্ন ভিতরেই চেপে রাখে ওরা। কথার পারতে বলল,
“মিড নাইট ক্যাসিনোর মালিকের সাথে যেই ডিল হবার কথা ছিল সেটা বললাম।”
‘দু’জনের ছোট ছোট চোখ দেখে নিজেকে শক্ত খোলসে নিপাট করল রিচার্ড। কাঠকাঠ গলায় বলল,
“ওটা ভেবে দেখেনি এখনো। না মানতে না চাইলে কোনো ডিলের প্রয়োজন নেই ডিরেক্ট উড়িয়ে দিবে।”
‘আশ্চর্য! দ্বিতীয় বারের মতো আশ্চর্য। এতো বছর একসাথে কাজ করে আজ প্রথম তারা রিচার্ডের মুখে শুনেছে ভাবা হয়নি এখনো। যেই মানুষটা কখনো কিছু করার আগেও এক সেকেন্ডের জন্যও ভেবে নেয় না নিজেকে সর্বজনী ভেবে যা ইচ্ছা করে। আজ তার মুখে এহেন উদ্ভব কথাবার্তা। আশ্চর্য! আশ্চর্য! আশ্চর্য! লুকাস তেরছা চোখে তাকাল রিচার্ডের দিকে, তখনও কোনো কিছুর ভিতর ডুবে ছিল রিচার্ড। লুকাস জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিচু গলায় বলল,
“বস এইবার চালানে মেয়ে কম।”

‘তাৎক্ষণিক চোয়াল শক্ত হয়ে গেল রিচার্ড। চোখেমুখে ঝলকানি দেয় ক্ষুব্ধ রাগ আর তেজে চোখের পাতার নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায় । আগুনের লেলিহান সমুদ্র নীল চোখে। ন্যাসোর দিকে তাকিয়ে শক্ত চোয়ালে রুষ্ট গলায় বলল,
“টাকার অ্যামাউন্ট বাড়াতে বলছিলাম না?”
‘রিচার্ডের দ্বিতীয় বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ন্যাসো সেও ঘাবড়ে যায় রিচার্ডের কথায়। এই চোয়াল দিয়ে যেন করাত ও ধারানো যাবে। নত দৃষ্টি নিবিষ্ট করল ন্যাসো, গুরুগম্ভীর গলার ভারি কণ্ঠস্বর খাদে নামিয়ে প্রত্যুত্তর করল,
“সরি বস! ফাদার বলেছিল এই চালান দেখে তারপর বাড়ানোর জন্য।”
‘ফাদারের কথা শোনা মাত্র অযাচিত ক্ষুব্ধতায় পানি পড়ল। কুটিল হাতে ওয়াইনের গ্লাস তুলে নিয়ে তাতে চুমুক বসালো রিচার্ড । তুমুল ঝড়ের পরে শীতলতায় ছেয়ে যাওয়া পরিবেশের মতো ঠান্ডা গলায় বলে, “আর কি বলল ফাদার?”

“যত তারাতাড়ি সম্ভবত ইতালি ব্যাক করার জন্য। ওদিকে কিং কোবরা দলের লিডার ঝামেলা করছে।”
‘বাঁকা হেসে ওয়াইনের গ্লাস ঘোরাতে থাকে রিচার্ড। ঠোঁটের আগায় জড়ো হয়েছে তাচ্ছিল্যের হাসি। চোখগুলো এখনো সম্ভবত লাল হয়ে আছে। পরনে এখনো কালো শার্ট আর পেন্ট গত রাতের। উপরে ওভার কোট,ওয়েস্ট কোট না থাকায় উদীয়মান হয় শরীরের শক্ত শক্ত ভাঁজগুলো। শার্টের সামনের দুটো বোতাম খুলা। ফলস্বরূপ সুবিস্তৃত,শক্তপোক্ত সুঠোম বুকে শক্তপোক্ত হয়ে যে শার্ট’টা এঁটে আছে তা উদীয়মান । শরীরের সাথে লেপ্টে থাকার কারণে এ’বি’এস এর ছয়টি ভাঁজ সুস্পষ্ট। পুরুষালি রুক্ষ কাঁধ একটু বেশি উঁচু, এবং টানটান। ঘন কালো চুলগুলো গোটা গোটা হয়ে কার্নিশের দু’পাশ দিয়ে এলোমেলো ভাবে বিছিয়ে আছে সিঁতি বরাবর দু’ভাগ হয়ে। ওয়াইনের গ্লাসে হাতের উপরের অগ্রভাগ গোল করে তিন আঙুলে ধরে রাখার জন্য গৌড় বর্ণের শিরা উপশিরা গুলো স্পষ্ট দৃশ্যমান। ফলে ড্রাগনটি যেন জেগে উঠছে এমন অনুভূত হচ্ছে এবং ওয়াইনের গ্লাস ঘুরানোর সাথে সাথে সেটা নড়াচড়া করছে। অকস্মাৎ রিচার্ড মেইন দরজার দিকে তাকিয়ে রুষ্ট গলায় বলে,

“উমহু এখনো কিছু কাজ বাকি আছে।”
‘বলে কাউচে গা এলিয়ে দিল। রিচার্ড হলো বাস্তব এক গোলকধাঁধা তাদের কাছে। যার রহস্য আজও পর্যন্ত উন্মোচন করতে পারেনি তারা । কথার বিপরীতে আর কোনো প্রশ্ন করল না কেউ-ই। লুকাস ছোট করে বলল,
“ওকে বস।”
‘কিছু মুহূর্ত পর ই একজন গার্ড’কে ভিতরে আসতে দেখে সোজা হয়ে বসে রিচার্ড। গার্ড নিদ্রালুতায় মাথা নিচু করে দাঁড়ায় রিচার্ডের সামনে। পায়ের উপর পা তুলে বসে সরাসরি প্রশ্ন ছুঁড়ল রিচার্ড,”ইজ এভরিথিং ওকে?”
‘গার্ড সবিনয়ে মাথায় নাড়ায়,”জ্বি বস।”
“ইনফরমেশন?”

‘এবার বুক শুকিয়ে এলো গার্ডের। পরপর তিনবার ঢোক গিলে বলল,”সরি বস। ম্যামের ব্যাপারে তেমন কেউ-ই কিছু জানে না আশেপাশের। শুধু কয়েকবার দেখেছে এই যা, তাছাড়া কিছু-ই জানে না ম্যামের ব্যাপারে ৷ আর ওনার পরিবারের কাছ থেকেও কিছু জানতে পারেনি। ম্যামের চাচা ঘর থেকে বের হচ্ছে না দরজা বন্ধ করে রেখেছে। চাচি দুইদিন ধরে থানায় ছোটাছুটি করছে, শিহাব নামের ছেলেটা দুইদিন ধরে মিসিং।”
‘আবারও চোয়াল রক্ত হয়ে আসে রিচার্ডের। কপালের পাশের রগগুলো তড়তড়িয়ে করে ফুলে ফেপে উঠে। ন্যাসো খুবই বুদ্ধিমান এবং বিচক্ষণ। আগাম ঝড়ের আভাস পেয়ে গার্ড’কে চোখে ইশারা করে চলে যাওয়ার জন্য। তটস্থ গার্ড হেড ডাউন দিয়ে চলে গেল তৎক্ষনাৎ। ন্যাসো গিয়ে রিচার্ডের সামনে গিয়ে দাঁড়াল। বলল,
“কাম বস। আমি নিজে যাব। সব ইনফরমেশন কালেক্ট করব।”
‘গম্ভীর পরিবেশে হঠাৎ ভেসে আসে গরগর টাইপের অদ্ভুত শব্দ। শব্দের উৎস অনুসরণ করে রিচার্ড, ন্যাসো একসাথে তাকাল লুকাসের পেটের দিকে। লুকাস গোপাল ভাঁড়ের মতো ফুলু পেটে হাত বুলাতে বুলাতে বকলমের মতো হাসি দেয় ওর হিরের মতো চকচকে দাঁত বের করে। লুকাসের কালো মানিক চেহারায় হাসি পূর্নিমা রাতের আলোর মতো লাগে। যা এক হাসিতেই পুরো মুখে দূত্যি ছড়াতে বাধ্য। ঠৌঁট গোল করে তপ্ত শ্বাস ফেলল রিচার্ড। মেডদের উদ্দ্যেশ করে চেঁচাল,

“ব্রেকফাস্ট সার্ভ কর।”
‘সেই গর্জন কিচেন পর্যন্ত গেল। মেডরা জলদি দৌঁড়ে ছুটে তড়িঘড়ি করে টেবিল সাজাতে থাকে। কালকে দু’জন মেড সাথে সাথেই মারা গিয়েছিল। তাদের লাশের সাথে কি করা হ’য়েছে জানে না রেশমা আর নিশি। ঐ লোমহর্ষক ঘটনার পর দু’জনেই ভয়ে তটস্থ হয়ে আছে। কাজ করতেও হাত কাঁপছে তাদের। ন্যাসো আবার গিয়ে বসল রিচার্ডের পাশে। পরবর্তী প্ল্যান নিয়ে আলোচনা করতে থাকে।
“মেয়েগুলোকে আজ রাতেই চালান করে দিবো বস।”
“না! কাল পর্যন্ত অপেক্ষা কর।”
‘রিচার্ডের কথায় কপালে সুক্ষ্ম ভাঁজ পড়ল ন্যাসোর। রিচার্ড বলতে থাকে,”এবার বন্দরে ঝামেলা হতে পারে।”
‘ন্যাসো ভাবুক ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করল,” তবে?”
‘রিচার্ডের বিলম্বহীন জবাব,”আকাশ পথে কাজ চালাতে হবে এবার।”
‘বিস্ময়ে চোখ বড় বড় হয়ে যায় লুকাসের। ঢোক গিলে তড়িঘড়ি করে বলল,” কিন্তু বস এতোগুলা মেয়ের পাসপোর্ট করতে তো অনেক সময় লাগবে।”

‘চোখ গরম করে তাকাল রিচার্ড লুকাসের দিকে। ন্যাসো লুকাসের কথায় বিরক্ত হয়ে মাথায় চাটা মারে। ঝাঁঝালো স্বরে বলে,” শুধু কাটাছেঁড়াই শিখেছো। এয়ারলেন্স কি তোমার শ্বশুর লাগে যে এতোগুলা মেয়েকে পাচার করতে দিবে? স্টুপিট কোথাকার! প্রাইভেট জেট দিয়ে এগুলোকে খালাস করতে হবে।”
‘লুকাস কাচুমাচু হয়ে বসে। মিনমিনিয়ে জবাব দেয়,
“শ্বশুর হবে কি করে তুমি’ই তো বললে আমার কালারের সাথে মিশবে না।”
“হ্যাঁ ঠিক! মিশবে না। নিজের জাতের একটা পছন্দ কর আমি নিজে তুলে নিয়ে আসব।”
“বস’ই তো ছুটি দিচ্ছে না যে দেশে গিয়ে কাউকে পছন্দ করব। আর দুজনেই যদি কালো হই, তাহলে আমার বাচ্চারা কি অপরাধ করেছে? ওদেরও তো একটা মন থাকতে পারে,ইচ্ছে থাকতে পারে । কালো রং পছন্দ না ও হতে পারে।”
“আচ্ছা বলো এক বড় না দুই বড়? এটা বলতে পারলে সাদা মেয়ে এনে দিব।”
‘লুকাস লাফিয়ে উঠল। চটজলদি উত্তর দিল, “আমার মন বড়।”

‘আবারও লুকাসের মাথায় চাটা মারল ন্যাসো। কিছু বলতে যাবে তখনই শোনা যায় রিচার্ডের বিরক্তিকর চ’শব্দ। জমে যায় দুজনেই। নিশি এসে মাথা নত করে খাবার রেডি হয়েছে বলে চলে যায় একবারের জন্য চোখ তুলেও তাকাল না। তিনজন’ই গিয়ে টেবিলে বসলো। খেতে খেতে হঠাৎ রিচার্ডের চোখে পড়ল রেশমা খাবার নিয়ে উপরের দিকে যাচ্ছে। বাঁধা দিল রিচার্ড।
“দাঁড়ান ।”
‘থমকে যায় রেশমা, গতি হারায় হৃদস্পন্দন। শুকনো ঢোক গিয়ে ভয়কাতুরে চোখ নিয়ে পিছন ফিরে। স্মিত স্বরে বলল,”জ্বি স্যার।”
‘রিচার্ড পিছন না ফিরেই খেতে খেতে বলল, “খাবার নিয়ে কোথায় যাচ্ছেন ?”
“ম্যামের জন্য স্যার।”
“সে তেমন কিছু’ই না যে তাকে খাবার রুমে দিয়ে আসতে হবে।”
‘রিচার্ডের কর্কশ গলায় হাত কাঁপতে থাকে রেশমার। কণ্ঠ একেবারে খাদে নামিয়ে বলল, “ম্যামের পায়ে ব্যান্জেজ তো তাই।”
‘রিচার্ড কিছু বলতে যাবে তার আগেই লুকাস সবিনয়ে বলল, “বস এক পা দিয়ে নিচে আসা সম্ভব নয়। মেয়ে’টা এখানে আসার পর থেকে বাইরের আলো বাতাসও দেখেনি একটু যদি ছাড়,,,

‘কথা সম্পূর্ণ হওয়ার আগেই চোখ রাঙিয়ে থামিয়ে দিল রিচার্ড। রেশমাকে খাবার নিয়ে যেতে নিষেধ করে। ফোঁস নিশ্বাস ফেলে রেশমা কিচেনে চলে যায়। বেলা তখন এগারোটা। কাল সকালে শেষ খেয়েছিল এলিজাবেথ। লুকাস হতাশ চোখে খেতে থাকা রিচার্ডের দিকে তাকিয়ে নিজের খাওয়ায় আবারও মনোযোগ দিল। হঠাৎ কি মনে করে উঠে দাঁড়াল রিচার্ড। সকলে উৎসুক হয়ে তাকায় রিচার্ডের দিকে। সবার দৃষ্টি উপেক্ষা করে হনহনিয়ে উপরে চলে গেল রিচার্ড। এবং মিনিট দু’য়েকের মধ্যেই দেখা যায় রিচার্ড’কে সিঁড়ি দিয়ে নামতে, বাহুতে এলিজাবেথ। ছোটার জন্য ছটফট করছে এলিজাবেথ। রিচার্ডের বুকে অজস্র কিল-ঘুষি দিচ্ছে। তবে রিচার্ডের শক্ত বুকে এলিজাবেথের নরম তুলতুলে হাতের আঘাত খুবই নস্যি। উল্টে এলিজাবেথের হাতে ব্যাথা লাগছে।

‘রিচার্ড সরাসরি এলিজাবেথ’কে নিয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে আসে বসে এবং এলিজাবেথ’কে কোলে নিয়ে’ই। চোখ কপালে ওঠে যায় সকলের। কিচেন থেকে নিশি হা করে তাকিয়ে উঁকি দিয়ে আছে। ন্যাসো, লুকাস একজন আরেকজনের দিকে অবিশ্বাস্য চোখে চাওয়াচাওয়ি করছে। বিস্ময়ে হতভম্ব দুজনেই। এলিজাবেথ’কে রিচার্ড নিজের সাথে চেপে রেখেছে এক হাতে ওর বাঁকানো কোমর পেঁচিয়ে। অপর হাত দিয়ে কোনো কিছু তোয়াক্কা না করে নির্বিঘ্নে খাচ্ছে। চোখের পানি শুকাতে না শুকাতে আবারও এসে ভর করল কার্নিশে। ঘৃণায় গ্রীবা পর্যন্ত নড়াচ্ছে না,জীম মেরে রইল এলিজাবেথ। স্বচ্ছ জলে টইটম্বুর হরিণের মতো টানা টানা আঁখিদ্বয়। রিচার্ড খেতে খেতে জলদগম্ভীর গলায় বলল,

“বাম হাত কাটা, ডান হাত না। চুপচাপ খাও আমাকে না রাগিয়ে। ইট সো আই ক্যান ইট ইউ লেটার।”
‘ন্যাসো চটজলদি খাওয়ায় মনোযোগ দেয় আবারও। যেন সে কিছুই শুনেনি, নেই এখানে। লুকাসের মুখভঙ্গি স্বাভাবিক হলো যখন দেখল রিচার্ড এলিজাবেথ’কে নিজে নিজে খেতে বলল। এলিজাবেথের লজ্জায় আর কষ্টে মাটির নিচে চলে যেতে ইচ্ছে করছে। জীবন তো তাকে নিচ্ছে না, কিন্তু লজ্জা তাকে টেনেহিঁচড়ে মাটির নিচে নিয়ে যেতে চাচ্ছে। রেশমা এসে খাবার দিয়ে গেল। খাবারের গন্ধে পেটের ভিতর মোচড় দিয়ে উঠল, বড্ড খিদে পেয়েছে। এগুলো তার প্রিয় খাবারের তালিকায় রয়েছে। এলিজাবেথ এটা খুব ভালো করে বুঝে গিয়েছে পাপাচারে নিবিষ্ট এই অন্তহীন মরিচীকা থেকে এতো সহজে জীবন তাকে মুক্তি দিবে না। তার জীবন সংগ্রামে’ই হয়তো উপর থেকে লেখা ছিল কষ্ট, অবহেলা, তাচ্ছিল্য, অপমান। অম্তকঃকরণ সমীকরণে যখন থাকতেই হবে শুধু শুধু আত্মাকে কষ্ট দেয়ার মানে হয় না। খেতে শুরু করে এলিজাবেথ দ্বিতীয় বাক্য ছাড়ায়।

‘রিচার্ড বাঁকা হাসে এলিজাবেথের খাওয়া দেখে। তবে একটু অবাকও হয় বটে এলিজাবেথ কে নির্বিঘ্নে বয়েল ভেজিটেবল খেতে দেখে। অনেক প্রশ্ন জমেছে রিচার্ডের মনে এলিজাবেথকে নিয়ে। খুবই শীঘ্রই সে সকল রহস্য ভেদ করতে চলেছে । খাওয়া শেষ হতেই একই ভাবে এলিজাবেথ কোলে নিয়ে রুমে চলে যায় রিচার্ড ঠিক যেভাবে নিয়ে এসেছিল। রুমে নিয়ে এলিজাবেথ’কে বিছানায় বসিয়ে চট করে দরজা লাগিয়ে দেয় রিচার্ড।

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৭

‘আত্মা শুকিয়ে এলো এলিজাবেথের। কান্নার তোড় বাড়তে থাকে রিচার্ডের প্রতিটি কদমে। রিচার্ড ঠৌঁটের কোণে পৈশাচিক হাসি ঝুলিয়ে একটা একটা করে শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বেডের দিকে এগোতে থাকে। এলিজাবেথ গুটিয়ে যায়, চোখে ভাসতে থাকে ভয়ংকর ধ্বং/সযজ্ঞ। পিছাতে থাকে একটু একটু করে। রিচার্ড শক্ত হাতে এলিজাবেথের পা ধরে একটানে নিজের কাছে নিয়ে আসে। পুরুষালি সেই হাস্কি ভয়েস গিয়ে সোজা বিঁধল এলিজাবেথের বুকে।
“ইট’স মাই টাইম টু ইট রেড।”

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ৮ (২)