রাজবধূ পর্ব ৬৯
রেহানা পুতুল
রাজ ফুঁসে উঠলো। বিক্ষিপ্ত মেজাজে মেয়ে দুজনকে বলল,
“তোমাদের এত বড় আস্পর্ধা! আমার চোখের সামনে আমার ওয়াইফকে ইনসাল্ট করেছো? কী বেহায়া, অসভ্য,অভদ্র তোমরা? আমি বলেছি কোক খেতে? এটা দেখে বোঝা যায়নি যে এটা আমার ওয়াইফের জন্য? এতটুকু কমনসেন্স নেই? চলে যাও। আজ হতে আমি আর তোমাদের দু’জনের সাথে কোন কাজ করবো না। বেরিয়ে যাও। আর কখনো আমার অফিসে আসবে না।”
মেয়ে দুজন চরম অপমানিত বোধ করলো। একজন তিরিক্ষি মেজাজে বললো,
“ওহ হো! এটা ওর ছিলো? বুঝতেই পারিনি। সরি রাজ। আশ্চর্য! গ্রামের সামান্য একটা আনস্মার্ট মেয়ের জন্য তুমি মিস বিহেভিয়ার করলে আমাদের সাথে? ওকে বিয়ে করেছো কতদিন হলো? আর আমাদের সঙ্গে তোমার পরিচয় ও কাজের বয়স কত বছরের? আর হ্যাঁ, আমাদের দুজনকে বাদ দিয়ে তুমি কোন কাজই পাবে না মিস্টার মডেল রাজ। মাইন্ড ইট!”
রাজ বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। টেবিলের উপরে ঘুষি মেরে বসলো। তাদের খাওয়া কাঁচের গ্লাসটা মোজাইক করা মেঝেতে সজোরে ছুঁড়ে মারলো। মুহূর্তেই ঝনঝন শব্দ করে গ্লাসটা ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে গেলো। মেয়ে দুটো ও শিখা নড়ে উঠলো। শিখা হতবুদ্ধির ন্যায় স্থানুবৎ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তার ইচ্ছে করছে বাসায় চলে যেতে। রাজের সামনে থাকতে মন চাচ্ছে না তার। এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি সে হজম করতে পারছে না কিছুতেই। কিন্তু সে পথঘাট কিছুই চিনে না। কীভাবে যাবে। অগত্যা নিরুপায় হয়ে অপেক্ষা করতে হলো তার।
” ও সামান্য নয়। অসামান্য! অন্তত আমার কাছে। শুধু মেয়ে বলে তোমাদের গায়ে হাত তুলতে পারলাম না এখন। তা না হলে, যে হাত দিয়ে ওর গ্লাসের কোক গিলেছো। দুজনের সেই হাতের কবজি আলগা করতে দুবার ভাবতো না নওশাদ তালুকদার রাজ।”
হাত মুষ্টিবদ্ধ করে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বজ্রনিনাদ কণ্ঠে বলল রাজ।
তারা প্রতিউত্তরে কিছু বলার জন্য উদ্যত হলে রাজ তাদের দিকে ফের রুক্ষ চাহনি তাক করলো। কর্কশ গলায় বললো,
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
” নো মোর এনি টক। আই সে গেট আউট!”
মেয়ে দুজন হনহন পায়ে অফিস থেকে বেরিয়ে গেলো। রাজ শিখার দিকে তাকালো। বললো,
” সরি শিখা। চলো আমার বাসায়।”
” নাহ যাব না। এখন বাসায় যাবো। ড্রাইভারকে বলুন আমাকে দিয়ে আসতে।”
গুমোট গলায় বলল শিখা।
রাজ বুঝতে পারলো শিখার আকাশে এখন মেঘের ঘনঘটা! যেকোনো সময় প্রবল বর্ষণ শুরু হবে। একে দ্রুত বাসায় পৌঁছে দিতে হবে। রাজ অপরাধীর মতো আস্তে করে বলল,
“আসো বলছি।”
রাজ বেরিয়ে গেলো ভারি ভারি পা ফেলে। শিখাও পিছন দিয়ে বেরিয়ে গেলো। নিচে গিয়ে রাজ তার প্রাইভেট কারে উঠে বসলো। স্টাফদের বলল উপরে যেতে। গাড়ির দরজা খুলে দিলে শিখাও ঢুকে বসলো। দুজন চুপচাপ। তাদের এপাটমেন্টের গ্যারেজে গাড়ি ঢুকলে শিখা তাড়াহুড়ো করে বেরিয়ে গেলো। রাজের সঙ্গে লিফটে উঠল না। সিঁড়ি ডিঙিয়ে চারতলায় চলে গেলো। রাজ বিমূঢ় হয়ে গেলো শিখার নিরব অথচ কঠোর আচরণ দেখে। রাজ শিখার আগেই পৌঁছে গেলো উপরে। চাবি দিয়ে ফ্ল্যাটের দরজা খুললো। তখন শিখা উপরে পৌঁছালো।
রাজ বলল,
“রাজহংসীর মতো এত সুন্দর পা দু’টোকে কষ্ট দেওয়া ঠিক হয়েছে? এত তেজ ভালো না অগ্নি!”
শিখা রাজের কথায় কর্ণপাত করলো না। ভ্রক্ষেপও করল না। অন্যরুমের বারান্দায় গিয়ে মেঝেতে হাত পা ছড়িয়ে বসে পড়লো। আম্মা! বলে ওড়না দিয়ে মুখ চেপে ফুঁফিয়ে কাঁদতে লাগলো। পিছন দিয়ে রাজ গেলো। শিখার কাছে এক হাঁটু ভেঙ্গে দ এর মতো হয়ে বসলো। হাত ধরতে গেলে শিখা টান মেরে হাত সরিয়ে নিলো। তবুও রাজ জোর করে শিখার দুহাত ধরে ফেললো।
নুয়ে আসা স্বরে বলল,
“আমার অপরাধ কী? এমন করছো কেন? তুমি নিজে দেখলে আমি কতটা নির্মম আচরণ করেছি তাদের সাথে। আর কী করার বাকি আছে বলো?”
“বললে করবেন?”
ভেজা শক্ত গলায় অনুরোধের ঢংয়ে বলল শিখা।
“অবশ্যই। তবুও তোমার মুখে অমাবস্যা দেখতে চাই না। আমার ভালো লাগে না শিখা।”
“আপনি মডেলিং পেশা ছেড়ে দিন একবারে।”
“বলা সহজ করা কঠিন। এটা তুমিও বেশ জানো। সো এত বছরের কাজ,চাইলেই হুট করে ছাড়া যায় না। এতে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হবে। তবুও যত ঝামেলা ও সমস্যাই হোক, আমি ছেড়ে দিবো। কারণ আমার বাটারফ্লাইর চাওয়া এটা। হ্যাপি?”
হুম বলে শিখা উপর নিচ করে মাথা ঝাঁকালো। রাজ স্বস্তি পেলো। শিখার মুখ মুছে দিয়ে উষ্ণ চুমু খেলো কপালে ও চোখের পাতায়।
বলল,
“আমি যাই? অফিসে কাজ আছে। নিচে বলে যাবো খালাকে ডেকে আনতে। আর কোন প্রবলেম হলে ইন্টারকমে কল করবে নীচে। দেখিয়ে দিলাম যে পারবে তো?”
“পারবো। আপনি যান অফিসে।”
রাজ চলে গেলো অফিসে। মোটামুটি সবকিছু শান্ত। দুজনে হাসিখুশি তাদের দাম্পত্য জীবন নিয়ে।
এক সকালে শিখা রাজকে বললো,
“আপনি পত্রিকা পড়েন না?”
“হ্যাঁ। পড়িতো। অফিসে ইনকিলাব নেওয়া হয়। তুমি পড়বে? তাহলে নিচে বলে রাখবো।”
“হুম। আমার খুব ভালোলাগে পত্রিকা পড়তে। কয়েকটি পাতার ভিতরে দেশ বিদেশের ভিন্ন ভিন্ন ধরনের খবর পাওয়া যায়। আমার কাছে এডভেঞ্চারের মতো মনে হয় বিষয়টা। গ্রামে আমাদের বাড়িতে এক কাকা মাঝে মাঝে বড় বাজারে গেলেই পত্রিকা নিয়ে আসতো। আমিও উনাদের থেকে এনে পড়তাম।”
“ভেরি গুড! আমার বউয়ের দেখি সব ভালো অভ্যাস। আর আমার বাজে অভ্যাস!”
“কোনটা বাজে আপনার?”
“এইযে মডেলিংয়ের কাজটা। ওহ শোন, এটা গতকাল আমি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দিয়ে ছেড়ে দিয়েছি। এতদিন সেই সাইড ক্লোজ করে আনলাম। ভালই হলো। এবার আমার মূল ব্যবসায় আরো ফোকাস করতে পারবো।”
শিখার সারামুখে এক চিলতে হাসি প্রস্ফুটিত হলো হেমন্তের মিঠে রোদ্দুরের মতো। পরেরদিন হতেই বাসায় ইনকিলাব পত্রিকা আসে রোজ। শিখা একরাশ ভালোলাগা নিয়ে পত্রিকা পড়তে লাগলো। বিনোদন পাতার একপাশে দেখলো রাজের একটি দাঁড়ানো ছবি মডেলিংয়ের ভঙ্গিতে। পাশে লিখা রয়েছে,
“ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে মডেলিং জগত পুরোপুরি ছেড়ে দিলো সুদর্শন যুবক জনপ্রিয় মডেল রাজ। এতে তার ভক্ত,অনুরাগীরা ভীষণভাবে মর্মাহত হলো। তবে সেই ব্যক্তিগত ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে তিনি মুখ খুলতে অপারগ। অনেকেই ধারণা করছেন তার স্ত্রীর জন্য তিনি ছেড়ে দিয়েছেন। কেননা তার স্ত্রী মফস্বলের এক অতি সাধারণ মেয়ে। তাই স্বামীর এমন কাজ তিনি পছন্দ করছেন না। কারণ মডেলিং পেশায় থাকলে অনেক মেয়ে মডেলিংয়ের সান্নিধ্যে আসতে হয় পেশাগত কারণেই। যদিও জানা গেলো তিনি শিক্ষিতা এবং পরমা সুন্দরী।”
শিখার মন আনন্দে নেচে উঠলো। রাজ মডেলিং ছেড়ে দিলো। এই সত্যতা রাজকে আরো বিশ্বস্ত করে তুললো শিখার কাছে। শিখা আল্লাহকে স্মরণ করলো কৃতজ্ঞচিত্তে। পত্রিকা পড়া বন্ধ করে ঝিম মেরে বসে রইলো। রাজকে নিয়ে এলোমেলো ভাবনায় নিমজ্জিত হলো তার সুপ্ত হৃদয়কখানি।
সকাল থেকে শিখা সারা বাসায় পায়চারি করছে খালি পায়ে। ঠিকভাবে নাস্তাও খেতে পারেনি। টান টান উত্তেজনায় সে অস্থির হয়ে আছে। কোথাও স্থিরভাবে পা জোড়া থামছে না তার। গতরাতেও আধো ঘুম আধো জাগরণে কেটেছে তার। রাজও অফিসে যায়নি। অপেক্ষা করছে হকার পত্রিকা দিয়ে যাওয়ার। কেননা আজ শিখার এইচএসসির ফল প্রকাশ হবে। অবশেষে পত্রিকা এলো। শিখা হুমড়ি খেয়ে পড়লো পত্রিকার উপরে। পাতা উল্টাতে লাগলো। এডমিট কার্ড বের করে আনলো। কুমিল্লা বোর্ডের মানবিক বিভাগের রেজাল্ট দেখতে লাগলো রোল নাম্বার মিলিয়ে। সাথে রাজও দেখছে। শিখা চিৎকার করে উঠলো রোল দেখতে পেয়ে। সে ফার্স্ট ডিভিশন পেয়েছে। রাজের গলা পেঁচিয়ে ধরলো। খুশীতে, উচ্ছ্বাসে শিখার পাগল পাগল দশা। কেঁদে ফেলল।
রাজ শিখার গালে চুমু খেয়ে বলল,
” তুমি যে অনেক খুশী তার প্রমাণ দাও। ঝটপট কয়েকটা চুমু খাওতো আমার দুইগালে।”
শিখা রাজের চাওয়ার চেয়েও বেশী কিছু দিলো।
“উফফস! আনটাইমে এমন অমৃতসুধা পাওয়ার জন্য সম্ভব হলে আমি প্রতি সপ্তাহে এমন রেজাল্টের ব্যবস্থা করে দিতাম।”
রোমাঞ্চিত সুরে বলল রাজ।
শিখার প্রথমেই মনে পড়লো মায়ের কথা,তারপর বাবা ও বোনের কথা। আলুলায়িত কণ্ঠে বলল,
“আম্মাকে খুব মনে পড়ছে। আম্মা আজকেই আপনার অফিসে টেলিফোন করবে। আমি জানি। করলে কাল নিদিষ্ট একটা সময়ে দিবেন আম্মাকে। সেই সময় আম্মা টেলিফোনের দোকানে আসবে। আমি টেলিফোন করে আম্মার সাথে কথা বলবো।”
“আপনার হকুম শিরোধার্য মহারানী। হায়ার সেকেন্ড ডিভিশন, সেকেন্ড ডিভিশন রেজাল্টই যথেষ্ট ভালো। সেখানে ফার্স্ট ডিভিশন ত ভালোর চেয়েও ভালো। স্বপ্ন পূরণের আরেক ধাপ এগিয়ে গেলে তুমি। অপেক্ষা গন্তব্যে পৌঁছানোর। তুমি জিতবে। তুমি জয়ী হবে। তোমার আছে শিখরে যাওয়ার দুচোখ ভরা স্বপ্ন ও বুক ভর্তি আশা।”
কেমন আনমনা সুরে বললো রাজ।
“আপনি আমার ভর্তির বিষয়ে খোঁজ খবর নেন।”
“নিবো। গাইড়,বই পড়ছো ভর্তি পরিক্ষার জন্য?”
“কবেই শেষ।”
“জুবায়েরকে মনে পড়ছে। যাওয়ার পর মাত্র দুইদিন ফোন দিয়েছে সে। আমার কাছে তার বন্ধু হারিসের দোকানের নাম্বার আছে। চাইলে ফোন দিতে পারি। দেখি।”
শিখা চুপ রইলো। কিছু বলল না।
রাজ অফিসে গেলো। গ্রামে জুবায়েরের দোকানে টেলিফোন করে শিখার রেজাল্ট জানালো। দোকানের একটা ছেলে তালুকদার বাড়ি গিয়ে রেজাল্ট বলে আসলো রাজের নির্দেশ মতো।
রাজ দেখলো শিখার কথা সত্যি। নূরী ফোন দিলো। সে রেজাল্ট জানে। কলেজ থেকে লোক পাঠিয়ে খবর নিয়েছে। পরেরদিন শিখা রাজের অফিসে গেলো। ফোনফ্যাক্সের দোকানে ফোন দিলো। মায়ের সাথে অনেকক্ষণ কথা বললো। জানতে পারলো কুসুমও পাস করেছে। তবে ভালো নয়। তৃতীয় বিভাগ পেয়েছে সে। রেজাল্ট দেওয়ার এক সপ্তাহ আগে সীমান্ত আর সে লুকিয়ে কোর্ট ম্যারেজ করে ফেলেছে। এগুলো নিয়ে সীমান্তদের ঘরে হাঙ্গামা চলছে। শিখা অশ্রুসজল গলায় মায়ের থেকে বিদায় নিলো।
এদিকে রাজ নিজেই খুব গর্বিত স্ত্রীর রেজাল্ট নিয়ে। তাই দুইদিনের ভিতরেই ভর্তির খোঁজ খবর সব নিয়ে নিলো। বাসায় এসে শিখাকে জানালো,
“তুমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরিক্ষা দিবে। দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ এটা। প্রাচ্যের অক্সফোর্ড বলা হয় যাকে।”
“সেখানে আইন বিভাগ আছে?”
উৎফুল্ল স্বরে জিজ্ঞেস করলো শিখা।
“আছে। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যে তিনটি অনুষদ নিয়ে যাত্রা শুরু করে, ‘আইন অনুষদ’ তাদের অন্যতম। ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত আইন অনুষদের অধীনে দু’বছর মেয়াদী স্নাতক কোর্স চালু ছিলো।১৯৭৬-৭৭ শিক্ষাবর্ষ হতে এল এল বি (অনার্স) কোর্সের মেয়াদ চার বছরে বর্ধিত করা হয়। এবং ১৯৯১-৯২ শিক্ষাবর্ষে আইন বিভাগে সর্বপ্রথম এম.ফিল. কোর্স প্রবর্তিত হয়। বুঝলে?”
“বুঝলাম।”
তারপর ভর্তি পরীক্ষা দিয়ে শিখা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে অধ্যায়ন করার জন্য চান্স পায়। ভর্তি হয়ে গেলো। অতি আগ্রহ ও মনোযোগের সহিত নিয়মিত ক্লাস করে। লেকচারগুলো শুনে শিক্ষকদের।
জুবায়ের নিজেই রাজের অফিসে ফোন দিলো। সবার কুশলাদি জিজ্ঞেস করে বললো,
” কিরে শিখার রেজাল্ট কি? জানালি না যে?”
“সরি দোস্ত।”
শিখার রেজাল্ট ও ভর্তি কোথায় হয়েছে তা জানালো রাজ। কিছুক্ষন কথা বলে নিলো দুজনে।
জুবায়ের মাঝে মাঝে ঊর্মি নামের মেয়েটার সাথে দেখা করে। স্বাভাবিক একটা সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বলা যায়। যা বন্ধুত্বেও গড়ায়নি। মনভেলাতে কেবল সেই কিশোরী মেয়ে শিখার প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠে বারবার।
একদিন রাতে রাজ শিখাকে বললো,
“আম্মাকে ঢাকায় নিয়ে আসবো আমি গিয়ে। তোমার কাছে থাকবে।”
“হঠাৎ? আমার কাছে তো সারাদিন খালা থাকে। আর সপ্তাহে চার পাঁচদিন ত আমি নিজেই ক্যাম্পাসেই থাকি ক্লাসের জন্য। বাসায়ও সব নিয়ে ব্যস্ত থাকি।”
“আমি তিনমাসের জন্য ব্যবসার কাজে দেশের বাইরে যাবো। তাই। রাতে তো আর খালা থাকবে না। তুমি একা কীভাবে থাকবে?”
অকস্মাৎ শিখার মন খারাপ হয়ে গেলো রাজ চলে যাবে শুনে। তার মুখাকৃতি পরিবর্তন হলো। সে কিছু একটা ভাবলো গোপনে। বললো,
“এমন কি আগেও যেতেন?”
“হুম। বছরে দুই বার যাই।”
“বুঝলাম। তাহলেতো আম্মাকে আনতেই হয়। আপাকেও বলবো দুলাভাইকে নিয়ে এসে বেড়ায়া যেতে। আর ভালো কথা, ঢাকায় আপনার এখন ফ্যামিলি আছে। বড় ভাইয়াদের আসতে বলা উচিত না?”
“আম্মা আর আপা এলে তখন একবারে দাওয়াত দিও তুমি। আমি না থাকলেও সমস্যা নেই।”
শিখা দুর্বোধ্য হেসে বলল,
” সেটাই। ভাইয়ের বাসায় ভাইরা আসবে সমস্যা কী। তবে আপনি একবার টেলিফোন করে বলে দিয়েন। নয়তো আপত্তি করতে পারে।”
“আমি যাওয়ার আগেই বলে যাবো। আসবে।”
রাজবধূ পর্ব ৬৮
ভার্সিটির ক্লাসের ফাঁকে শিখা গল্প করছে অন্যদের সাথে। তখন তাকে এসে অফিসের স্টাফ ডাক দিলো। বললো,
“অফিসে আপনাকে টেলিফোনে কেউ চাচ্ছে। আমাকে স্যার পাঠালো।”
শিখা চমকে উঠলো। এমনিতেই আজগর আলীর খু* নীদের কীভাবে বদ করবে,সেই ফন্দী আঁটতেই তার প্রাণ ওষ্ঠাগত। এরমধ্যে এখানে তাকে কে টেলিফোন করতে পারে? অথচ ভার্সিটিতে সে নতুন।
শিখা আইনবিভাগের অফিস-রুমে গেলো। মাত্র একজন সিনিয়র স্যার বসে আছে। তিনি মাথা ঝুঁকিয়ে কাগজপত্র দেখছেন। রিসিভার নামানো আছে টেবিলের উপরে। শিখা এগিয়ে গিয়ে রিসিভার কানে তুলে নিলো।
মার্জিত এবং অপ্রস্তুত গলায় বললো,
“হ্যালো আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?