মন ফাগুন পর্ব ৩২
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া
মিহি আর নিহান বাড়ির সবাইকে বলে বেড়িয়ে যায় সকালে সবাইকে সবকিছু জানায় মিহি আর নিহান। হানিয়া বেগম আর মুরাদ শিকদার মনে করেন এখন তাদের বিয়ের বিষয়টা মিহির পরিবারকে জানানো দরকার। মেয়ের বিয়ের বিষয়ে জানার অধিকার অবশ্যই সব বাবা মায়ের আছে। নিহান গাড়ি ড্রাইভ করছে আর মিহি তার পাশে বসে রয়েছে হাত পা কাঁপছে মিহির।
কালকে নিহানের রাগ দেখে বলে ছিলো আজকে তার বাবাকে সব বলে দিবে তাই এখন বাবার বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিয়েছে তারা। কিন্তু সত্যি কি মিহির মনে এতো সাহস আছে তার বাবাকে সে খুব ভালো করে যদি সত্যিটা জানে তখন যে কি হবে সেটা ভাবছে মিহি। মিহি মনে মনে বলে –
“- কোনো যে কালকে নিহানকে সাহস দেখিয়ে বলতে গেলাম যে আজকে তাকে সাথে নিয়ে বাবার বাসায় যাবো সব সত্যি জানাবো। যানি না কি হবে আজকে আমার সাথে আব্বু হয়তো জীবিত কবর দিয়ে দিবে তাকে এই কথাটা ভেবে মিহির গলা শুকিয়ে আসতে থাকে।
মিহির চোখের সামনে তার বাবার রাগী মুখ ভেসে উঠে নিহান অনেক সময় ধরে মিহির অবস্থা বুঝতে চেষ্টা করছিলো। তবে দেখে মনে হচ্ছে মিহি অনেক ভয় পেয়ে রয়েছে তাই সে পাশে থেকে একটা পানির বোতল হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলে –
“- কি হয়েছে মিহি কোনো সমস্যা আপনার।এইরকম ভয় পেয়ে হাত পা কাঁপছে কোনো আপনার টেনশন কোনো করছেন মিহি। আপনান আব্বু সত্যি জানলে কি মেরে ফেলবে আমাদের বুঝিয়ে বললে সব বুঝতে পারবেন ওনি। আর এই নিহান আছে আপনার পাশে সবসময় “।
মিহি পানিটা খেয়ে নিহানের দিকে তাকায় সে যদি জানতো তার আব্বু কেমন তাহলে কখনো এইরকম কথা বলতো না।মিহির নিজের পরিস্থিতির উপর নিজের হাসি পাচ্ছে কোনো যে চুরি করে সেইদিন খাবার খেতে গিয়েছিলো কে যানে।মিহি বলে –
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
“- নিহান আপনি কি মনে করেন আমার আব্বুকে কোনো সিনেমার ভিলেন শশুড় যে গল্পের শেষে নায়ক নায়িকাকে মিল করিয়ে বিয়ে দিয়ে দিবে। যদি আমার বাবা ভিলেন হয় না তাহলে গল্পের নায়ক জীবনে নায়িকাকে পাবে না। আর টেনশন করবেন না এতো একবার শুধু আমার বাবার সাথে দেখা করেন আপনি সব ভুল ধারণা ভেঙে যাবে। বুঝতে পারবেন কার মেয়েকে বিয়ে করছেন আপনি নিহান হাড়ে হাড়ে টের পাবেন “।
নিহান মিহির কথাটা এতো গুরুত্ব দেয় না কিন্তু যত রাস্তা পার হচ্ছে মিহির ভয় আরো বাড়ছে। জীবনে হয়তো এতো দোয়া কখনো নামাজে পড়ে নাই যতটা এখন পড়ছে সে। অবশেষে অনেক সময় পর মিহি তাদের গ্রামে এসে পৌঁছে যায় বেশ সুন্দর একটা গ্রাম দারুণ মিষ্টি দেখতে। মিহি বলে –
“- নিহান গাড়ি থামান আর নেমে আসুন “।
মিহির কথা শুনে নিহান একটু তাকায় দেখে এখানে কোনো বাড়ি নাই একটা ধানের খেত রয়েছে। নিহান অবাক হয়ে বলে –
“- মিহি এখানে কোনো গাড়ি থামাতে বলছেন? এইটা দেখে ধান খেত মনে হচ্ছে এখানে কোনো বাসা নাই? আপনা কি এই ধানের খেতে থাকেন তাহলে যে আপনি বলেছিলেন যে আপনারা খুব বড়লোক?
নিহানের কথা শুনে মিহিন ভ্রু কুঁচকে যায় এমনি তার মনে ভয়ে হাজার রকমের বাসা বেঁধেছে তার উপর এই লোকটার এইরকম আজাইরা কথা। মিহি বলে –
“- শুনুন মিহি মিথ্যা কথা বলে না আমরা কতটা বড়লোক সেটা একটু পর দেখতে পাবেন আপনি। আর এখানের সামনে রাস্তা কাঁচা তাই গাড়ি ঢুকবে না পায়ে হেঁটে যেতে হবো “।
“- তাহলে কি গাড়ি এখানে রেখে যাবে যদি চুরি হয়ে যায় তাহলে। আর শশুড় বাড়িতে কি পায়ে হেঁটে যাবো মানে তাহলে আমার শশুড় শাশুড়ি কি মনে করবে তাদের জামাই গরিব। আফটান অল আমি একজন মন্ত্রী আপনি একজন মন্ত্রীর বউ এতো ভয় কোনো পাচ্ছেন আপনি “।
মিহি নিহানের দিকে তাকিয়ে থাকে সে হাসবে না কাঁদবে সেটা বুঝতে পারছে না তবে নিহানের কথা শুনে তার বেশ মায়া হচ্ছে। মিহি বলে –
“- একবার বাসায় চলুন নিহান তখন বুঝতে পারবেন আপনার শশুড় শাশুড়ি আপনাকে দেখে কি মনে করে। আর যদি বেঁচে থাকেন তাহলে পরে গাড়ি করে আসতে পারবেন এখন চলুন যাওয়া যাক “।
নিহান মিহি যেতে থাকে গ্রামটা বেশ সুন্দর কিন্তু রাস্তা ভালো না মিহির এইসব বিষয় নিয়ে মাথা ব্যাথা নাই।তবে নিহান বলে –
“- আপনাদের গ্রামের রাস্তা এইরকম কোনো মিহি আপনার বাবা না অনেক বড়লোক তাহলে কি একটা রাস্তা করতে পারে না। শহরে আমার এলাকার রাস্তা গুলো কি সুন্দর শশুড় মশাইকে বলে গ্রামে একটা রাস্তা তৈরি করবো ভাবছি মন্ত্রীর শশুড় বাড়ির রাস্তা যদি খারাপ হয় তাহলে কি মানুষের সামনে মুখ দেখানো যাবে “।
মিহি নিহানের মুখের দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকায় এই লোকটা আজকে এতো কোনো কথা বলছে সেটা বুঝতে পারছে না। অন্য সময় মুখে বোমা মারলে ও কথা বের করা যায় না আর আজকে রেলগাড়ীর মতো বকবক করেই যাচ্ছে অসহ্য। মিহি মনে মনে বলে –
“- খুব শখ না শশুড়ের সাথে মিলে রাস্তা তৈরি করার দেখা যাবে রাস্তার জায়গায় ওর আব্বু নিহানকে নতুন করে তৈরি করে দিবে। আর এই মন্ত্রী গিরি আমার আব্বু যদি চিনির শরবতের সাথে মিশিয়ে আপনাকে না খায়িয়ে দিছে তাহলে ওনি ও জামশেদ তালুকদার না “।
নিহান বাকি রাস্তা বকবক করে গেলো মিহি চুপচাপ সব শুনছে অবশেষে তারা মিহির বাবার বাড়ির সামনে পৌঁছে গেছে। দেখতে অনেকটা রাজপ্রাসাদের মতো সামনে কিছু গার্ড রয়েছে দারুণ বাসাটা নিহানের বাড়ির থেকে কোনো দিক থেকে কম না। নিহান বাড়ি দেখে বুঝতে পারছে মিহি ভুল বলে নাই ওরা সত্যি বেশ ভালো ধনী একদম নিহানদের মতো। নিহান বলে –
“- ওয়াও আমার শশুড় বাড়িতো দেখি দারুণ সুন্দর নিশ্চয়ই ভিতরে আরো ভালো হবে। জামাই আদর ঠিক করে করতে পারবে “।
মিহি নিহানেরদিকে তাকিয়ে দেখে এরপর বাড়ির ভিতরে ঢুকে যায় বাড়ির দারোয়ান মিহিকে দেখ বেশ অবাক হয়। আর সাথে এক ছেলেকে দেখে কিন্তু সে শুধু ছোট ম্যাডাম বলে সালাম দিয়ে বাড়ির দরজা খুলে দেয় ওদের জন্য।
গেইছ খুলে দিতে একটা দারুণ রাজকীয় বাড়ি নিহানের সামনে আসে কি সুন্দর দেখতে বাড়িটা পুরো জোস। এখন মনে হচ্ছে তাদের বাড়ি ও এই বাড়ির সৌন্দর্যের কাছে কম মনে হচ্ছে।
মিহি একবার নিহানের দিকে তাকায় নিহান বাড়ি দেখতে বিজি মিহি একবার শেষ বার নিজের জামাইকে দেখে নাই।হতে পারে বাড়িতে ঢুকার পর হয়তো আর কখনো নিহানকে না ও দেখতে পারে মিহি কথাটন ভেবে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে। নিহান আর মিহি যখন দরজার সামনে দাঁড়ায় কিছু পালোয়ানের মতো লোক তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। কেমন যেনো ভয়ানক দৃষ্টিতে।
নিহানের কাছে বেশ অদ্ভুত লাগে বিষয়টা তবুও সে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়ে কিন্তু হঠাৎ করে একটা গুলির শব্দে নিহান আর মিহি দুইজনে কেঁপে উঠে। গুলিটা নিহানের পিছনে একটা গ্লাসে গিয়ে লাগে নিহান দেখে সামনে একটা লোক দাঁড়িয়ে রয়েছে যার হাতে বন্ধুক। বেশ দেখতে লোকটা ভয়ংকর চেহারা হাতে বন্ধুক আর চোখে মুখ রাগ রয়েছে। নিহান বলে –
“- মিহি আপনাদের বাড়িতে এইসব কি হচ্ছে আর এই লোকটা কে এইরকম করে গুলি ছুড়ছেঁ। এইটা কি আপনি আমাকে মিলিটারিতে নিয়ে এসেছেন সত্যি করে বলুন “।
মন ফাগুন পর্ব ৩১
মিহি নিহানের দিকে তাকিয়ে থাকে বেশ ভয় পেয়ে রয়েছে নিহান কে বলবে সে একজন মন্ত্রী। মিহি বলে –
‘- এইটা মিলিটারি নয় আপনার শশুড় বাড়ি। আর সামনে বন্ধুক হাতে থাকা মানুষটা আপনার শশুড় সো মিস্টার নিহান নেহাল শিকদার ওয়েলকাম টু ইউর শশুড় বাড়ি না সরি অশুড় বাড়ি। এখন বুঝতে পারবেন কোনো এতো ভয় পায় আমি আমার বাপকে আগে আগে দেখো হোতাহে কিয়া “।