কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ২৯

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ২৯
মিসরাতুল রহমান চৈতী

রাতের অন্ধকার কাটতে না কাটতেই পূর্ব আকাশে সূর্য উঠেছে। নতুন ভোরের আলোয় সোনালি আভা ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে। আজকের সকালটা যেনো একটু অন্যরকম, বাতাসে অদ্ভুত এক আবেগের সুর।
রাতুল, চৈতী আর আসিফ তিনজন একসঙ্গে পথে বেরিয়েছে। আজ তাদের গন্তব্য সেই অভিশপ্ত জায়গা, যেখানে বছরের পর বছর অন্যায়ের ছায়া পড়েছিল। আজ সেই জায়গার শেষ দিন।
গাড়ির জানালা দিয়ে চৈতী বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে। সূর্যের আলো তার চোখে এসে লাগছে, কিন্তু সে যেনো অন্য কিছু দেখছে—অতীতের করুণ স্মৃতিগুলো ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে, আর তার জায়গায় নতুন আশার আলো জ্বলছে।

রাতুল গাড়ির ভিতরে গম্ভীর হয়ে বসে আছে। তার মুখে এক ধরনের কঠিন দৃঢ়তা। তার এই সিদ্ধান্ত শুধু একটি পরিবর্তন নয়, এটি এক প্রতিজ্ঞা—একটি সমাজকে বদলে দেওয়ার প্রথম ধাপ।
আসিফ সামনের সিটে বসে গাড়ি চালাচ্ছে, তার চোখেও একরাশ উত্তেজনা। তার কণ্ঠে আত্মবিশ্বাস, “আজ একটা ইতিহাস তৈরি হবে, ভাই।”
রাতুল একপলক চৈতীর দিকে তাকিয়ে বললো, “তুমি দাঁড়িয়ে থেকে দেখবে, চৈতী, কীভাবে এক অন্ধকার অধ্যায়ের ইতি ঘটবে আর নতুন আশার দ্বার খুলবে।”
চৈতী কোনো কথা বললো না, শুধু নিঃশব্দে মাথা নেড়ে সম্মতি জানালো। তার হৃদয়ের গভীরে যেন এক অদ্ভুত প্রশান্তি ছড়িয়ে পড়ছে।
গাড়ি ছুটে চলছে, সামনে অপেক্ষা করছে এক নতুন ভোর—এক নতুন শুরু।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

গাড়ি এসে থামলো সেই জায়গায়, যেখানে দাঁড়িয়ে আছে বছরের পর বছর ধরে গড়ে ওঠা অন্যায়ের প্রাচীর। সূর্যের আলো ততক্ষণে পুরোপুরি ছড়িয়ে পড়েছে, কিন্তু সেই জায়গাটা এখনো যেনো অন্ধকারেই ঢেকে আছে।
চৈতী গাড়ি থেকে নেমে ধীর পায়ে সামনে এগিয়ে এলো। তার চোখে এক অদ্ভুত অনুভূতির ঝলক, যেনো সে নিজের চোখেই দেখছে কত শত মেয়ে এখানে বন্দী ছিল, স্বপ্নহীন জীবন কাটিয়েছে। আজ সেই অধ্যায়ের শেষ।
রাতুল শক্ত গলায় বললো, “ভাঙো! একটাও ইট যেন অবশিষ্ট না থাকে।”
একপাশে দাঁড়িয়ে আছে বিশাল এক বুলডোজার, প্রস্তুত ধ্বংসের নিদর্শন মুছে ফেলার জন্য। শ্রমিকরা অপেক্ষায় আছে, শুধু রাতুলের একটা ইশারার জন্য।
রাতুল গভীর দৃষ্টিতে ভবনটার দিকে তাকিয়ে বললো, “শুরু করো!”

বুলডোজারের ইঞ্জিন গর্জে উঠলো। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিশাল শাবলের মতো ফলা এগিয়ে গিয়ে প্রথম আঘাত করলো দেয়ালে। কংক্রিটের চাঙড় গুঁড়িয়ে পড়তে লাগলো ধুলোর স্রোতে।
চৈতী পাশে দাঁড়িয়ে নীরবে দেখছে। ধুলোর ঝাঁঝালো গন্ধ নাকে লাগছে, কিন্তু তার চোখের জল আটকে রাখতে পারলো না। এই দেয়ালগুলোই তার মতো কত মেয়েকে বন্দী করে রেখেছিল। আজ সেই দেয়াল ভেঙে পড়ছে, সাথে সাথে ভেঙে যাচ্ছে একটা কালো অধ্যায়।
আসিফ পাশ থেকে বললো, “ভাই, শেষ হয়ে যাচ্ছে! আর কিছুক্ষণ পর এখানে শুধু ধ্বংসস্তূপ থাকবে!”
রাতুল ধীরে ধীরে মাথা ঝুঁকিয়ে বললো, “না, এখানে শুধুই ধ্বংসস্তূপ থাকবে না, আসিফ! এখানে গড়ে উঠবে একটা নতুন জীবন, একটা নতুন আশ্রয়।”
বুলডোজারের প্রতিটা আঘাতে ভবনটা ধসে পড়ছে, আর চৈতীর চোখের সামনে একটা স্বপ্ন স্পষ্ট হয়ে উঠছে। পতিতালয়ের শেষ ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে সে অনুভব করলো—আজ সত্যিই একটা নতুন সূচনা হলো!
ঠিক তখনই, গুঞ্জন শুরু হলো চারদিকে। সাংবাদিকদের ভিড় দেখা গেলো। প্রেস মিডিয়া এসে গেছে!
মাইক্রোফোন হাতে সাংবাদিকেরা এগিয়ে আসছে, ক্যামেরাগুলো দ্রুত চলতে শুরু করেছে। একাধিক চ্যানেলের রিপোর্টারদের ভিড় জমে গেছে সামনে।

একজন এগিয়ে এসে বললো, “মিস্টার রাতুল আহম্মেদ, এই পতিতালয় ধ্বংসের পেছনে আপনার মূল উদ্দেশ্য কী? সরকার কি এই উদ্যোগে কোনোভাবে জড়িত?”
রাতুল ধীর চোখে সাংবাদিকের দিকে তাকালো, তারপর একপাশে ধূলিধূসরিত ভবনটার দিকে ইঙ্গিত করে বললো, “এটা শুধুমাত্র একটা দালান ছিল না, এটা ছিল নারীদের বন্দিশালা। এখানে কত জীবন শেষ হয়ে গেছে, তার কোনো হিসাব আছে? আমরা সেই অন্ধকার অধ্যায় মুছে ফেলতে এসেছি।”
আরেকজন জিজ্ঞেস করলো, “কিন্তু এটা তো ব্যক্তিগত উদ্যোগ, তাহলে এত বড় কাজ কীভাবে করছেন?”
আসিফ পাশে দাঁড়িয়ে বলে উঠলো, “আমরা শুধু ধ্বংস করছি না, এখানে একটা নতুন ভবিষ্যৎ গড়তে যাচ্ছি। খুব শিগগিরই এখানে একটি আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে উঠবে, যেখানে নির্যাতিত নারীরা নতুন করে বাঁচার সুযোগ পাবে।”
চৈতী চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, চোখেমুখে এক অদ্ভুত প্রশান্তি। তার দিকে মাইক্রোফোন এগিয়ে দিল এক সাংবাদিক, “আপনি কি এই উদ্যোগের অংশ?”

চৈতী এক মুহূর্ত চুপ থেকে বললো, “আমি এখানে একদিন বন্দী ছিলাম। আজ আমি দাঁড়িয়ে দেখছি, এই দেয়ালগুলো ধসে যাচ্ছে। শুধু একটা ভবন নয়, একটা দুঃস্বপ্ন শেষ হয়ে যাচ্ছে আজ!”
চারপাশের ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বলে উঠছে, গুঞ্জন বাড়ছে। কিন্তু রাতুল নিশ্চুপ। তার চোখে এখন শুধুই একটাই স্বপ্ন—এই জায়গাটা একদিন নতুন আশার প্রতীক হয়ে উঠবে!
একজন সাংবাদিক ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে স্পষ্ট গলায় প্রশ্ন করলো, “মিস্টার রাতুল, আপনার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা এই মেয়েটি কে? ওনার সাথে আপনার সম্পর্ক কী?”
সবার চোখ এখন রাতুলের দিকে। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বলছে, মাইক্রোফোনগুলো তার মুখের সামনে এগিয়ে আসছে।
রাতুল চুপচাপ একবার চৈতীর দিকে তাকালো। চৈতীর চোখে একধরনের স্বাভাবিক ভাব, যেন এই প্রশ্নের উত্তর সে নিজেও জানতে চায়।

এক মুহূর্ত অপেক্ষার পর রাতুল দৃঢ় কণ্ঠে বললো, “ও আমার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আমার হৃদয়ের সেই অংশ, যা আমি কাউকে বুঝিয়ে বলতে পারবো না।”
সাংবাদিকরা আরও উৎসাহী হয়ে উঠলো, “মানে আপনি বলতে চাইছেন, উনি আপনার….?”
রাতুল একটুও বিচলিত হলো না। তার ঠোঁটে হালকা হাসি, চোখে দৃঢ়তা—
“যাকে একবার আমার জীবনে গ্রহণ করেছি, তাকে প্রশ্নের খাঁচায় পুরে পরিচয় দিতে চাই না। ও আমার সাথেই থাকবে, আজীবন!” “ও আমার অর্ধাঙ্গিনী!”
তার কণ্ঠের দৃঢ়তায় মুহূর্তেই চারপাশে ফিসফাস শুরু হয়ে গেলো। ক্যামেরার ফ্ল্যাশ জ্বলে উঠলো একের পর এক। একজন সাংবাদিক সামনে এগিয়ে এসে প্রশ্ন করলো,
“মিস্টার রাতুল, তাহলে এতদিন কেন জানাননি? আর ম্যামের মুখটা একটু দেখাতে বলুন, আমরা ওনার পরিচয়টা জানতে চাই!”
এই প্রশ্ন শুনে রাতুলের চোখ ধীরে ধীরে কঠিন হয়ে উঠলো। মুহূর্তের মধ্যেই তার কণ্ঠে বজ্রধ্বনির মতো গর্জন ফুটে উঠলো—

“আমার অর্ধাঙ্গিনীকে আমি দেখবো, বাহিরে কাউকে দেখাবো না! আমার বুকের বাঁ পাঁজর দিয়ে বিধাতা যাকে সৃষ্টি করেছেন, তাকে সমাজের সামনে উন্মুক্ত করা আমার জন্য পাপ! আমার বউ আমার ঘরের সৌরভ, আমার সম্মান, আমার আত্মার প্রশান্তি! তাকে অসম্মান করার স্পর্ধা আমার নেই!”
তার কথায় যেন মুহূর্তের জন্য সবাই স্তব্ধ হয়ে গেলো। চারদিকে নিস্তব্ধতা নেমে এলো, ক্যামেরার ফ্ল্যাশ থেমে গেলো, আর সাংবাদিকদের মুখে কোনো শব্দ নেই। শুধু রাতুলের দৃঢ়তা আর চৈতীর শান্ত চোখের ভাষা যেন বাতাসে ভেসে থাকলো।
হঠাৎ করেই ভিড় চিরে উকিল আর পুলিশের দল নিয়ে সামনে এসে দাঁড়াল এক লোক— নাহিদ হাসান। চোখে ঠান্ডা কিন্তু চাতুর্যময় দৃষ্টি, হাতে কাগজের ফাইল, মুখে বিজয়ীর হাসি।
তিনি মিডিয়ার সামনে কাগজ উঁচিয়ে বললেন, “মিস্টার রাতুল আহমেদ, আপনি কি জানেন, এই জায়গাটা আমার? সরকারের অনুমোদন ছাড়া আপনি এই স্থাপনা ভাঙতে পারেন না। এটি বেআইনি! আমি আপনার বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছি।”

তার কথা শেষ হতে না হতেই চারপাশে ফিসফাস শুরু হয়ে গেল। সাংবাদিকরা উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রাতুলের দিকে।
কিন্তু রাতুল একটুও বিচলিত হলো না। বরং ঠোঁটের কোণে একধরনের বাঁকা হাসি ফুটিয়ে ধীরস্থির কণ্ঠে বলল, “আপনার কাগজপত্র নিয়ে এত উত্তেজিত হওয়ার কিছু নেই, মিস্টার নাহিদ হাসান। আমি আগেই এন্টিসিপেটরি বেল করিয়ে রেখেছি।”
তারপর কয়েক ধাপ এগিয়ে এসে মিডিয়ার সামনেই চোখে চোখ রেখে বলল,
“আপনি বলছেন, এই জায়গাটা আপনার? তাহলে আপনি স্বীকার করছেন যে, এতদিন এই জায়গার মালিক আপনিই ছিলেন? তার মানে, বছরের পর বছর ধরে এই পতিতালয় আপনার আওতাধীন ছিল?”

মুহূর্তেই চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল। ক্যামেরার লেন্সগুলো এখন নাহিদ হাসানের দিকে ঘুরে গেছে।
রাতুল আরেক ধাপ এগিয়ে এসে কঠোর স্বরে বলল, “আপনি যখন এতদিন এই জায়গার মালিক ছিলেন, তখন কেন কিছু করেননি? সরকারের অনুমোদন ছাড়াই আমার এই জায়গাটা ভাঙতে হলো কেন? কেন আপনার কাছ থেকে কোনো পদক্ষেপ আসেনি?”
রাতুলের সরাসরি প্রশ্নে নাহিদ হাসান হকচকিয়ে গেল। তার মুখের হাসি মিলিয়ে গিয়ে কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ল। সাংবাদিকরা একের পর এক ক্যামেরার ফ্ল্যাশ মারছে, মাইক্রোফোন এগিয়ে দিচ্ছে তার দিকে।
কিন্তু নাহিদ হাসান কিছু বলতে পারলো না। শুধু কাগজগুলো শক্ত করে মুঠোতে চেপে ধরে দাঁড়িয়ে রইল। সমাজের সামনে তার মুখোশটা যেন খসে পড়তে শুরু করেছে।
নাহিদ হাসান মুখে কৃত্রিম কঠোরতা রাখার চেষ্টা করলেও তার কপালের ঘাম আর হাতের অনবরত কাঁপুনি স্পষ্ট করে দিচ্ছিল যে, সে চাপে পড়ে গেছে। সাংবাদিকরা মুহুর্মুহু প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছিল, কিন্তু সে কোনো সুস্পষ্ট উত্তর দিতে পারছিল না।

রাতুল এক পা এগিয়ে এসে নির্লিপ্ত স্বরে বলল, “আপনার নীরবতাই যথেষ্ট, মিস্টার নাহিদ হাসান। এই জায়গাটার অন্ধকার অতীত আপনি নিজেই স্বীকার করেছেন। আর আপনার মতো লোকের কাছ থেকে নৈতিকতার ভাষণ শোনার কোনো ইচ্ছা আমার নেই।”
তারপর চারপাশের সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলল, “আমি আপনাদের সামনে আজ একটা সত্য উন্মোচন করলাম। এই জায়গাটা এতদিন ধরে অবৈধ কার্যকলাপের কেন্দ্র ছিল, আর এর পিছনের মানুষগুলো ছিল সমাজের উচ্চবিত্তরাই। এখন এটাকে বদলানোর সময় এসেছে।”
সাংবাদিকদের ভিড়ে দাঁড়িয়ে থাকা একটি মেয়ে সামনে এসে দাঁড়াল। তার চোখেমুখে ভয় আর দ্বিধার ছাপ স্পষ্ট, কিন্তু কণ্ঠস্বরে ছিল সাহসের ঝলক।
সাংবাদিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিল, “আপনি কি বলতে পারেন, নাহিদ হাসানের এই জায়গায় আসা-যাওয়া ছিল কি না?”
মেয়েটি এক মুহূর্ত থেমে, চোখ বন্ধ করে যেন সমস্ত ভয় কাটিয়ে উঠে দৃঢ় কণ্ঠে বলল, “হ্যাঁ, সে এখানে বহুবার এসেছে। তার মতো আরও অনেক প্রভাবশালী মানুষ এই অন্ধকার ঘরে রাত কাটিয়েছে।”
এই কথা শোনা মাত্রই নাহিদ হাসান প্রচণ্ড রেগে গিয়ে গর্জে উঠল, “ও কি বলবে? ও নিজেই একজন পতিতা! হাজার পুরুষের সামনে নিজেকে বিক্রি করেছে! নিজের পোশাকের ঠিক নেই, চরিত্রের ঠিক নেই, ওর কথা কেউ বিশ্বাস করবে?”

তার কণ্ঠে তাচ্ছিল্য, চোখেমুখে ঘৃণা। যেন সে এই মেয়েটিকে অস্বীকার করে তার সত্য গোপন করতে চাইছে।
ঠিক তখনই রাতুল এক ধাপ এগিয়ে এসে বজ্রকণ্ঠে বলল, “পতিতা কারা তৈরি করে, মিস্টার নাহিদ হাসান? আপনি? আমি? সমাজের তথাকথিত উচ্চবিত্ত পুরুষেরা? আজ যাকে আপনি ঘৃণার চোখে দেখছেন, একসময় তার দেহের উত্তাপে নিজেকে তৃপ্ত করেছেন! আজ সে নোংরা, কারণ সে সত্যটা বলে দিয়েছে?”
চারপাশ নিস্তব্ধ হয়ে গেল। সাংবাদিকদের ক্যামেরা একের পর এক ক্লিক করছে। সবাই নিঃশব্দে রাতুলের কথা শুনছে।
রাতুল চোখ রাঙিয়ে বলল, “একটা নারী কোন পেশায় আছে, সেটা মুখ্য নয়। মূল বিষয় হলো, সে একজন মানুষ! আমাদের সমাজ, আমাদের পুরুষেরা তাকে পতিতা বানিয়েছে, তার শরীরকে পণ্য করেছে, তার জীবনকে নরকে পরিণত করেছে। আজ তাকে আপনি ধিক্কার দিচ্ছেন? লজ্জা হওয়া উচিত আপনার!”
তার কণ্ঠ ক্রমশ কঠিন হয়ে উঠল, “একটা মেয়ে কী পোশাক পরবে, সেটা ঠিক করার অধিকার আপনার নেই, আমারও নেই। নারীর সম্মান পোশাকে নয়, সম্মান নির্ভর করে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গির উপর। ধর্ষণ পোশাকের জন্য হয় না, ধর্ষণ হয় নোংরা মানসিকতার জন্য। আগে আপনার মানসিকতা পরিবর্তন করুন, তারপর সমাজ বদলানোর কথা বলবেন!”

চারপাশ নিঃস্তব্ধ। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো বাতাসও থমকে গেছে।
নাহিদ হাসান কোনো উত্তর খুঁজে পেল না। সে ফুঁসে উঠতে চাইলো, কিন্তু তার কথাগুলো আটকে গেল গলায়। সাংবাদিকদের ফ্ল্যাশলাইটের আলোয় তার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেল।
এই বলে সে একপাশে দাঁড়িয়ে বুলডোজার চালানোর নির্দেশ দিল। ভারী ইঞ্জিনের শব্দে বাতাস কেঁপে উঠল। আর সেই সঙ্গে নাহিদ হাসানের মুখেও ভয় ফুটে উঠল।
চৈতী দূর থেকে দাঁড়িয়ে তাকিয়ে ছিল। তার চোখে জল, কিন্তু তা আনন্দের। এতদিনের অবরুদ্ধ কান্নাগুলো যেন ভিতরে থরথর করে কাঁপছিল। আজ সে স্বচক্ষে দেখছে, একটা অন্ধকার অধ্যায়ের অবসান হচ্ছে।
আসিফ পাশ থেকে ফিসফিস করে বলল, “ভাই, এবার নাহিদ হাসান শেষ। এত সাংবাদিকের সামনে তার মুখোশ খুলে গেছে।”

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ২৮

রাতুল মৃদু হেসে বলল, “সে শেষ হয়েছে অনেক আগেই, আসিফ। আজ শুধু প্রমাণ হলো।”
বুলডোজারের ভারী আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে পতিতালয়ের দেয়াল ধসে পড়তে লাগল। ধুলোর ঝড় উঠল, আর সেই ধুলোর আড়ালে এক নতুন আশার সূচনা হতে থাকল।

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৩০