তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৪০
তানিশা সুলতানা
আবরার খাবার পরিবেশ করছে। এখানকার বিখ্যাত রেস্টুরেন্টে থেকে অর্ডার করা হয়েছে বিভিন্ন রকমের খাবার। এ্যানির জন্য স্পেশাল সিদ্ধ মাছও অর্ডার করা হয়েছে। আদ্রিতা কাটা বেছে খেতে দিয়েছে তাকে। লক্ষী বাচ্চার ন্যায় গভীর মনোযোগে মজা করে খাচ্ছে সে। কোনো বায়না করছে না। কারণও রয়েছে গত দুই দিন খেতে পায় নি। কে দিবে তাকে খাবার? সুইজারল্যান্ড এর ছোট্ট বাড়িটায় একা ছিলো।
আদ্রিতা আবরারের পাশে বসে আছে। লাল রংয়ের শাড়ি পড়েছে। পৃথিবীতে কিছু মেয়ে মানুষ আছে যারা সুন্দর করে শাড়ি পড়তে জানে, অন্যকে পড়িয়ে দিতেও জানে, মেহেদী লাগাতে পারে, মেকাপও করতে পারে। আদ্রিতাও সেই দলে রয়েছে। একা একাই সব পারে সে।
আগে যখন আতিয়া বেগম এর নতুন শাড়ি আনা হতো। সেটা প্রথমে আদ্রিতাই পড়তো। তিথির নতুন মেকাপ প্রডাক্ট দেখলে সেটা নিয়েই সাজতে শুরু করতো।
তার ফলে এখন একাই সবটা ম্যানেজ করতে পারে।
আদ্রিতার পরনে শাড়ি দেখেও আবরার কিছু বলে নি। এমনকি একটু খানি সময় নিয়ে ভালো করে তাকায়ও নি। বরং ভীষণ ব্যস্ততার সাথে খাবার পরিবেশ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
অন্য সময় তো ঠিকই লুচ্চা মতো তাকিয়ে থাকে।
আদ্রিতা অবশ্য মনে মনে ভেংচি করে বিরবির করে বলেছে
“হাতির বাচ্চা। রোমান্টিকতার র ও জানে না। বউ প্রথমবার শাড়ি পড়েছে। কোথায় একটু সময় নিয়ে দেখবে। প্রশংসা করবে। তা না গেলার ধান্দায় ব্যস্ত। ইচ্ছে করছে সব খাবার গলা দিয়ে ঢুকিয়ে দেই”
আদ্রিতার বিরবির করে বলা কথা বোধহয় শুনতে পেলো আবরার।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
তাই ভ্রু বাঁকিয়ে জবাবে বলে
“আমি দেখতে শুরু করলে তো আবার বলবে ” প্লিজজ এভাবে দেখিয়েন না। আপনার চোখ দুটো আমার কলিজা কাঁপিয়ে তোলে।
মাথা নিচু করে ফেলে আদ্রিতা। রিনরিনিয়ে বলে
“বলবো না? যখন তাকান মনে হয় ওই চোখ দিয়েই গিলে খাবেন আমায়। কি ভয়নক আপনার দৃষ্টি এবং মুখের ভাষা”
আবরার খাবারের থালা এগিয়ে দেয় আদ্রিতার পানে এবং বলে
“আমার ছোঁয়া আরও ভয়ংকর।
আমাকে সামলাতে বেশ হিমসিম খাবে তুমি।
আদ্রিতা খাবারের থালা হাতে নেয়। মনে মনে বলে
” সে কি আর আমি জানি না? ডার্ক রোমাঞ্চ ওপর পিএইচডি করে ফেলেছেন। চুমু খেলে তো মনে হয় এক ঘন্টার মধ্যে ছাড়বেন না। চুমুর তালে তালে গোটা আমাকেই আস্ত গিলে নিবেন। জানা আছে আমার।
কপাল খারাপ তাই আপনার পাল্লায় পড়েছি। অল্প দিনেই জীবন বিসর্জন দিতে হবে আমার।
হতদম্ভ সিয়াম চুপচাপ বসে আছে ফ্লোরে। এই তো কিছু মুহুর্ত আগের ঘটনা। হুজুরকে এগিয়ে দিয়ে ফিরছিলো হোটেলে তখন একটা মেয়ের ওড়না বেঁধে যায় হাতে। প্রথমে তো ভেবেছিলো জুতার বারি কপালে নাচছে। কিন্তু সিয়ামকে অবাক করে দিয়ে মেয়েটা মিষ্টি স্বরে “স্যরি” বলে ওঠে কয়েকবার। এবং যত্ন সহকারে সিয়ামের ঘড়ি থেকে নিজের ওড়না ছাড়িয়ে নেয়।
কমলার কোয়ার ন্যায় ওষ্ঠ মেলে হাসি দিয়ে বলে
“হ্যালো আমি ইশারা। বাংলাদেশি।
সিয়াম এতোটাই হতদম্ভ হয়ে গিয়েছিলো যে মেয়েটার হাত ছোঁয়ার কথা ভুলেই গিয়েছিলো। অগত্যা রমনি নিজের হাত গুটিয়ে নেয়। ঠোঁটের কোণের হাসি বিলিন করে চলে যায় অজানা গন্তব্যে। মুহুর্তেই ভিড়ের মাঝে হারিয়ে যায়।
সিয়াম কতো খুঁজলো কিন্তু আর পেলোই না।
আহাদ সিয়ামের ঘড়িটা খুলে নিয়েছে এবং সেটা ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে। ইতোমধ্যেই কয়েকবার জিজ্ঞেস করে ফেলেছে “কোন মার্কেট থেকে কিনেছিস ঘড়ি? আমিও কিনবো”
আমান মাছি তাড়ানোর মতো হাত নারায়।
“সিয়াম মিথ্যে বলছে। ওর জয়েন্ট এ জয়েন্ট এ মিথ্যে লুকিয়ে আছে।
ইভান বলে
” না রে ভাই। ঘটনা সত্যি
দেখছিস না কেমন হা হয়ে গেছে। প্রথমবার কোনো নারী আগ বাড়িয়ে কথা বলেছে। বেচারা হজম করতে পারছে না।
সেই মুহুর্তেই সিয়াম মৃদু হেসে ওঠে। বিরবির করে বলে
“ওহে আমার ইশারা
তুমি তো করে দিয়েছো আমায় দিশেহারা
মন দিল কিডনি নাড়িভুড়ি সবই নিয়েছো কেড়ে
প্রেম নামক অসুখ আসছে আমার দিকে তেড়ে।
আবরার তাসনিন নামের মতো মানুষটাও পারফেক্ট। তার কোথাও ভুল নেই। এই মুহুর্তে জনাব সাদা রংয়ের শার্ট পড়ে আছে। ওপরের দুটো বোতাম খোলা। কনুই অবদি হাতা গোটানো।
এক হাতে কাটা চামচ এবং আরেক হাতে ছুড়ি ধরে খুবই যত্ন সহকারে মাংসের টুকটো কাটছে। এবং মুখে পুরছে। গোলাপি অধর নেরে খাবার চিবচ্ছে। যখনই খাবার গিলছে গলার উঁচু অংশ ওপর নিজ হচ্ছে।
ইসস শরীর জ্বারিয়ে ওঠে আদ্রিতার। তলপেট নানান রংয়ের প্রজাপতিরা সুরসুরি দিচ্ছে। আজকে তাদের বাসর?
এই সুন্দর লোকটি আদ্রিতাকে ছুঁবে? না কি ছুঁবে না।
ভাবনার মাঝেই একটা কথা মাথায় আসে। এই মুহুর্তে লোকটা মুখ থেকে ভালোবাসার কথা জেনে নিবে কি?
অবশ্যই এটাই সুযোগ।
ইতোমধ্যেই আদ্রিতার খাওয়া শেষ। হাত ধুয়ে বসে আছে আবরারের পাশে।
এ্যানি এসে দখল করেছে আদ্রিতার কোল। খেয়ে দেয়ে তবলা হয়ে গিয়েছে সে। এই মুহুর্ত জম্পেশ একটা ঘুম দেবে। আর মায়ের কোল ছাড়া কি ঘুম ভালো হয়?
আদ্রিতা শুকনো কাশি দিয়ে গলা পরিষ্কার করে। তারপর বলে
” আমায় ভালোবাসেন?
আবরারের খাওয়া শেষ। টিস্যু দ্বারা মুখ মুছছে এই মুহুর্তে। আদ্রিতার প্রশ্ন শুনে তার পানে তাকায় দুই ভ্রু আড়াআড়ি ভাবে কুঁচকে।
“আই হেট লাভস।
আদ্রিতা কপাল কুঁচকায়।
” তাহলে আমায় বিয়ে করলেন কেনো?
একটু হাসলো বোধহয় আবরার। ডান হাত বাড়িয়ে বুড়ো আঙুল দ্বারা চেপে ধরে আদ্রিতার ওষ্ঠ। পরপরই ওষ্ঠ হতে আঙুল সরিয়ে গলায় নারায়। নিজের মাথা খানা একটু এগিয়ে ফিসফিস করে বলে
“তোমাকে দেখলেই আমার গায়ের লোম দ্বারিয়ে যায় ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য। কামড়ে খেয়ে নিতে ইচ্ছে করে তোমার ঠোঁট এবং বুকের ওপরে থাকা তিল। জাস্ট ইন্টিমেট হওয়ার জন্যই বিয়ে করেছি।
ফুঁসে ওঠে আদ্রিতা। আবরারের হাত খানা ছাড়া মেরে সরিয়ে দেয়। এই মুহুর্তে ইচ্ছে করছে এই সুন্দর পুরুষটির সুন্দর চুল গুলো টেনেটুনে ছিঁড়ে দিতে। টাক করতে পারলে হৃদয়ের জ্বালা মিটতো।
“আপনি ভীষণ খারাপ আবরার তাসনিন
” আই নো দ্যাট মেরি জান
এন্ড এই খারাপ আবরার তাসনিন এর বেড পার্টনার হয়েই তোমাকে সারাজীবন থাকতে হবে।
“বয়েই গেছে আমার। চলে যাবো বাংলাদেশ। আসিফ আ
বাকিটা শেষ করার আগেই আবরার আদ্রিতার গলা চেপে ধরে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে
” পর পুরুষের নাম মুখে আনলে জিভ টেনে ছিঁড়ে দিবো। মাইন্ড ইট।
সঙ্গে সঙ্গে গলা ছেড়ে দেয়। ভয়ার্তক আদ্রিতা কাচুমাচু হয়ে বসে। কলিজা খানা কাঁপছে তার। আঁখি পল্লবে ভিড় করেছে অশ্রু কণা। এই মুহুর্তে অতি প্রিয় আবরার তাসনিনকে ভীষণ ভয় করছে।
“আপনি ভয়ংকর আবরার তাসনিন।
আমার মরণ আপনার হাতেই লেখা আছে।
তোমাতেই আসক্ত পর্ব ৩৯
” ইয়েসস
এন্ড আজকেই ছটফট করবে তুমি আমার নি*****
এন্ড কেঁদেকেটে বলবে “মেরে ফেলুন আবরার”
লজ্জায় কান গরম হয়ে যায় আদ্রিতার। দুই হাতে ঘুমন্ত এ্যানিকে ধরে দাঁড়িয়ে পড়ে।
পা বাড়ায় চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে। তখনই আবরার