বিকেলের প্রণয় পর্ব ২৪
Arshi Ayat
গাড়ি স্টার্ট দেওয়ার সময় পাশের সীটে খেয়াল করতেই অনুরুপ দেখতে পেলো মিলাত নিজের হাতব্যাগটা রেখে গেছে ভুলে।নিজেই দিয়ে আসবে ভেবে ওর ব্যাগটা হাতে নিয়ে গাড়ি থেকে নেমে ভেতরে আসলো।একতলার সিড়ি পেরিয়ে দোতলায় ওঠার সময় চৈতির কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে পেলো।রাগে মুহুর্তেই মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো।হনহন করে উপরে উঠে এসে মিলাতের পাশাপাশি দাঁড়িয়ে কঠোর স্বরে বলল,’অনেক বলেছেন।আর একটা উল্টোপাল্টা কথা বললে খুব খারাপ হয়ে যাবে।আপনার কি লজ্জা করে না বড়বোন হয়ে ছোটোবোনের জীবনটা নষ্ট করলেন।’
চৈতি কুৎসিত একটা হাসি দিয়ে বলল,’কি রে,মিলাত তোর নাগর দেখি আমারে হুমকি দেয়।’
‘মাইন্ড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ।’এবার মিলাত মুখ খুললো।কেন জানি এই মানুষটার অপমান সহ্য হলো না।চৈতি এবার উচ্চস্বরে হেসে বলল,’বাপরে!এত পিরিত।সাইফুলও কিন্তু তোরে অনেক ভালোবাসতো।তবুও তো আমার প্রেমেই মজিলো।’
‘সবাই কে আপনার মত নীচ ভাবেন কেন?’অনুরুপ ক্ষেপে উঠলো।চৈতি তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,’ওরে বাপরে!এত পিরিত।তাইলে ওরে বিয়ে করেন।আজকে,এখনই।’
‘প্লিজ,চুপ করবে?’মিলাত চিৎকার করে বলল।
অনুরুপের জেদ চেপে গেলো।ওর চরিত্র আরেকজনের সাথে তুলনা করার সাহস পায় কোথায় এই মেয়ে?অনুরুপ হঠাৎই মিলাতের দিকে হাত বাড়ালো।দৃঢ় স্বরে বলল,’আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই মিলাত।ভেবেছিলাম ধীরে ধীরে মনের অনুভূতি ব্যক্ত করব।হাতে হাত রেখে পথ চলব,তোমার কানে লাল গোলাপ গুঁজে দেওয়ার ছলে তোমার কাছাকাছি আসব।কিন্তু সেটা হলো না।এই দুশ্চরিত্রা মেয়েটা আমাকে অন্য ছেলের সাথে তুলনা করছে।আমি মোটেও ওরকম না।আর আমি সেটা প্রমাণ করতে চাই।তুমি কি আমাকে একটা সুযোগ দেবে।অন্তত একটা সুযোগ দাও এটা প্রমাণ করার জন্য যে সব পুরুষ এক নয়।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
মিলাতের প্রচন্ড ভালো লাগা কাজ করলো।মন বলছে অনুরুপকে বিশ্বাস করতে।মিলাত ধীরে ধীরে নিজের হাতটা অনুরুপের পুরুষালি হাতের মধ্যে রাখলো।অনুরুপ সন্তুষ্টচিত্তে নিজের হাতের মুঠোয় ওর হাতখানা বন্দী করে চৈতির দিকে বলল,’ঘন্টা দুয়েক পর দেখা হচ্ছে।বরণডালা সাজিয়ে রাখুন।’
একদম হুট করে বলা নেই,কওয়া নেই অনুরুপ আর মিলাতের বিয়েটা হয়ে গেলো।মিলাতদের বাসা থেকে বেরিয়ে নিজের বন্ধুদের খবর দিয়ে কাজি অফিসে আসতে বলল।আর নিজেও মিলাতকে নিয়ে চলল সেদিকে।পথে দু’জনের মাঝে টু শব্দও হলো না।একরকম বিনা প্ল্যানেই বিয়েটা হয়ে গেলো।মিলাত এখনও ঘোরের মধ্যে।
এদিকে চৈতি মনে মনে খুশিতে ফেটে পড়ছে।এটাই তো চেয়েছিলো সে।এভাবে যে পথের কাটা সরবে ভাবতেই পারে নি।এবার রেভান আর ওর মাঝে কেউ বাঁধা হতে পারবে না।এসব ভাবতে ভাবতেই রেভানের মেসেজ এলো।ও দেখা করতে বলছে।ইশ!সব আনন্দ কি আজই পেয়ে যাবে?নিজের মত সাজতে বসলো চৈতি।
কাজী অফিস থেকে ফেরার পথে প্রথমে মিলাতই মুখ খুললো।বিমর্ষ গলায় বলল,’কাজটা কি আমরা ঠিক করলাম?না আপনার ফ্যামিলি,না আমার ফ্যামিলি কেউ জানে না।আমরা বিয়ে করে ফেললাম।এখন যদি তারা না মানে?’
অনুরুপ মৃদু হেসে বলল,’না মানার ব্যাপারটা হলো বিয়ের আগের আর একবার বিয়ে হয়ে গেলে মানতেই হবে।হয়তো রাগ করবে একটু।পরে ঠিকই মেনে নেবে।’
‘তবুও,আমার ভয় করছে।’
অনুরুপ ভরসা দিয়ে বলল,’এবার থেকে আর ভয় লাগবে না।আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।’
‘এখন আমরা কোথায় যাচ্ছি?’
‘তোমার বাসায়।আগে তোমার বাবা,মা’কে জানাই।পরে আমার বাসায় বলব।’
‘আচ্ছা।’
মিলাতদের বাড়ির সামনে এসে অনুরুপ গাড়ি থামালো।নিজের সীটবেল্ট খুলে মিলাতের দিকে তাকাতেই দেখলো মেয়েটা রিতীমত যুদ্ধ করছে।অনুরুপ হেসে এগিয়ে যেতেই মিলাত ভয়ে সিঁটিয়ে গেলো।অনুরুপ সীটবেল্ট খুলতে খুলতে গভীর স্বরে বলল,’যতদিন না তুমি আমার ব্যাপার নিশ্চিত হচ্ছো,আমাকে বিশ্বাস করতে পারছো ততদিন তুমি এখানেই থেকো।আর চিন্তা করো না।আমি সব ঠিক করে দেবো।এখন থেকে তোমার সমস্ত দুশ্চিন্তা আমার।তুমি শুধু তোমার মত এগিয়ে যাও।আমি পাশেই থাকব,বাঁধা হব না।’
মিলাত মুগ্ধ হয়ে কেবল কথাগুলো শুনলো।এই লোকটা এত সুন্দর করে কথা বলতে পারে!যেন জাদু জানে।
অনুরুপ মিলাতকে নিয়ে বাসায় প্রবেশ করার পর হারুন সাহেব আর মিনারা বেগমের চিন্তিত মুখ দেখতে পেলো।দু’জনেই চিন্তায় অস্থির হয়ে আছে।ওদের দেখে মিনারা বেগম এগিয়ে এসে বলল,’কোথায় গিয়েছিলে তোমরা?মিলাতের বাবা তো অফিস থেকে ফিরেই ওকে না পেয়ে চিন্তায় অস্থির।আমি এতক্ষণ বুঝ দিলাম হয়তো বান্ধবী বাসায় গেছে।তোমরা আসলে কোথায় গিয়েছিলে বলোতো?’
অনুরুপ অত্যন্ত বিনয়ের স্বরে বলল,’মা,আপনি বসুন।আমি বলছি।’
মিনারা বেগম বুঝতে পারলেন না।ছেলেটা তাকে মা ডাকছে কেনো।তবুও তিনি কিছু বললেন না।চুপচাপ বসলেন।অনুরুপ ইশারা করলো মিলাতকেও বসতে।মিলাতও বসলো মায়ের কাছে।অনুরুপ এবার মিলাতের বাবা-মাকে সবটা খুলে বললো।সব শোনার কর দু’জনেই গম্ভীর হয়ে আছে।অনুরুপ মিলাতে বাবার হাত ধরে বলল,’বাবা,আমাকে একটা সুযোগ দিন।আমি আপনাকে বলব না আমাকে বিশ্বাস করুন।আমি জানি একটা সময় আপনি আমাকে অবশ্যই বিশ্বাস করবেন।’
অনুরুপের দৃঢ় অথচ আকুতিভরা কন্ঠ শুনে হারুন সাহেব কিছু একটা ভাবলেন।পরে বললেন,’তোমার বাসায় জানে?’
‘না।এখন গিয়ে জানাবো।’
বিকেলের প্রণয় পর্ব ২৩
‘তোমার বাবা,মা’কে বলবে আমার সাথে দেখা করতে।’
‘তার একসপ্তাহের মধ্যে দেখা করবে আপনাদের সাথে।’
‘ঠিকাছে।এখন তুমি যাও।মিলাত এবাড়িতেই থাকবে।ওর মাস্টার্স শেষে ওকে উঠিয়ে দেবো।’
‘আচ্ছা,বাবা।’অনুরুপ মেনে নিলো বাধ্য ছেলের মত।