প্রেমপিপাসা পর্ব ২৭

প্রেমপিপাসা পর্ব ২৭
সুমাইয়া সুলতানা

অরু ওয়াশরুমের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। চকচকে দর্পণে স্বীয় প্রতিবিম্ব ভীষণ ভয়ংকর দেখাচ্ছে। অরু গাঢ় চোখে নিজের বিভৎস রূপকে শান্ত ভাবে অবলোকন করে চলেছে। সারা মুখশ্রী, গলা, বুকের কাপড়, বাহুর হাতার কাপড়ের মধ্যে ছোপ ছোপ তরতাজা রক্তের দাগ সুস্পষ্ট, যা এখন শুকিয়ে গিয়েছে। এই রক্ত ওর নয়, হ্যাভেন নামক রহস্যময় পুরুষের, যে বিদীর্ণ অবস্থায় এখন হসপিটালে অবস্থান করছে।
হ্যাভেন’কে হসপিটালে নেওয়ার পর, ডক্টর দ্রুত চিকিৎসা শুরু করেন। সনামধন্য একজন ব্যক্তি সে। বিজনেসে সফলতা এবং দাপট দেখানো দুটোই সমান তালে জনসম্মুখে প্রদশর্নের করতে ওস্তাদ। ডক্টর অন্য রোগীর চিকিৎসা করছিলেন, হ্যাভেন’কে দেখে সেই রোগীকে ফেলে তার চিকিৎসা শুরু করেন। নামীদামী লোকের সাহচার্যে থাকলে পকেট গরম করা সহজ হয়। এমন সুযোগ হাতছাড়া করা যায়?

হ্যাভেনের চিকিৎসা চলাকালীন হসপিটালের ওয়েটিং রুমে বাবার বুকে মুখ গুঁজে বসে ছিল অরু, ঠিক জীবন্ত মানব মূর্তির ন্যায়। মুখটা শুকিয়ে এইটুকুন হয়ে গিয়েছে। কেমন বিধ্বস্ত, নিষ্প্রাণ দেখাচ্ছিল তাকে। জামশেদ মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলেছিলেন, বাড়িতে ফিরে যেতে, ফ্রেশ হয়ে দরকার হলে পরে আসবে। অরু না সূচক মাথা নাড়ে, সে যাবে না। কিন্তু বাবার জোরাজুরিতে বাড়িতে চলে আসতে বাধ্য হয়। ও যখন চলে আসে, তখনো হ্যাভেনের জ্ঞান ফেরেনি। অবচেতন হয়ে পড়ে রয়েছে হসপিটালের বেডে।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

হ্যাভেনের রক্তাক্ত মুখটা, হৃদয় নিঙড়ানো বাক্যবাণ না চাইতেও অরুর অন্তঃকরণে ঝড় তুলে ছিল। তাকে দেখতে ফ্যাকাশে লাগছিল, যেন রোদে পুড়ে গিয়েছে বা দীর্ঘ সময় ধরে কোনও জীবন্ত রং হারিয়ে ফেলেছে। ত্বক ছিল ম্লান, রঙটা হালকা হয়ে গিয়ে সাদা আর ধূসর মিশ্রিত হয়ে গিয়েছে। চোখের তলায় ক্লান্তিকর কালি, এবং ঠোঁট শুষ্ক সাদা, কোনো জীবন্ত ভাব ছিল না। একেবারে নিঃসঙ্গ, জড়বস্তুর ন্যায় সারা শরীরের রক্ত প্রবাহ বন্ধ হওয়ার মতো। অরুর হৃদয় বিষাদে ঘেরা। বিষণ্ণতা যখন গভীরভাবে মনের অন্তঃস্থলে বাসা বাঁধে, তখন তা এক অভূতপূর্ব অন্ধকারের মতো ছড়িয়ে পড়ে, যেন সব আলো এবং উচ্ছলতা ধীরে ধীরে তার অস্তিত্ব হারাতে থাকে। চেতনার মধ্যে এক গহিন গভীরতা তৈরি হয়, যা সমস্ত ভাবনা ও অনুভূতি এক বিক্ষিপ্ত, অভাবিত ধ্বংসের পথে ধাবিত হয়। সময় নিজেকে এক কালো সিলিন্ডারের মধ্যে আবদ্ধ করে নেয়, প্রতিটি মুহূর্ত অমিতব্যয়ী এক শূন্যতায় রূপান্তরিত হয়ে যায়। এক অসীম ভারাক্রান্ততা বুকের মাঝে জমে ওঠে, মনে হয় কোনো পাথরের ব্লক চাপিয়ে রাখা হয়েছে হৃদয়ের উপর, যেখান থেকে নিঃশ্বাস নেওয়া কষ্টকর এবং প্রাণশক্তি নিঃশেষিত।

একবারে গোসল করে বের হয় অরু। উদ্দেশ্য রেডি হয়ে পুনরায় হসপিটালে যাবে। আলমারি থেকে জামাকাপড় বের করার সময় তাড়াহুড়ায় হাত লেগে হ্যাভেনের শার্ট সহ কয়েকটা ফাইল মেঝেতে পড়ে যায়। একটা ফাইলের টিপ-বোতাম আলগা ছিল বলে, পড়ে গিয়ে ফাইলে থাকা কাগজপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছে। অরু বিরক্তবোধ করল। যত তাড়াতাড়ি করতে চায়, তত দেরি! অরু ফটাফট শার্ট, বদ্ধ ফাইল গুছিয়ে যথাস্থানে রেখে দিল। মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা বাকি কাগজপত্র উঠানোর সময় হঠাৎ একটা ছবির উপর নজর পড়ল। ফাইলে ছবি আসলো কোথা থেকে? অরু ভ্রু কুঁচকে ছবিটা হাতে তুলে নিলো। ছবিতে দৃষ্টি তাক করতেই, অমনি বিস্ময়ে চক্ষুদ্বয় চূড়ায় উঠল। থমকে গেল বক্ষঃস্থল। আচানক বিস্ফোরণ ঘটলো মস্তিষ্কে। নিঃশ্বাস আটকে আসা স্তব্ধ মুহূর্ত। বিস্ময়ে মনঃক্ষুণ্ন হৃদপুট যেন সমগ্র পৃথিবীর ভার একা বহন করছে। অনড় হতবিহ্বল অক্ষিপট, কাঁপতে থাকা নিঃশব্দ ঠোঁট, বিবর্ণ মুখাবয়ব সমস্ত অনুভূতির মিশেলে এক অলৌকিক স্তব্ধতা। চিন্তার জটিল জালে আটকে পড়া মন কোন সঠিক সত্যের কাছাকাছি পৌঁছাতে ব্যর্থ, কিংকর্তব্যবিমূঢ় এক অসহায় অবস্থা। আবেগ আর বাস্তবতার দ্বন্দ্বে ছিন্নভিন্ন অরু, যার চোখে-মুখে জমে থাকা বিস্ময় ঠিকরে পড়ছে।

অরুর হাত কাঁপছে। মস্তক দাউদাউ করছে। বুক ধড়ফড় করতে লাগলো। ছবির এই মেয়েটাকে চেনে ও, খুব ভালো করেই চেনে তাকে। অরু কাগজপত্র গোছানো রেখে উল্টো কম্পিত হাতে ফাইলের ভেতর থাকা বাকি কাগজপত্র বের করে, উন্মাদের মতো খুঁজল আর কোনো ছবি আছে কি-না। আরেকটা ছবি পেলো, একই পোশাক পরিহিত, তবে শরীরের ভাবভঙ্গি ভিন্ন, সাথে ছোট ছোট চিরকুটের মতো তিনটা কাগজ। অরু কাগজগুলো জহুরি চোখে পরখ করল। মেঝেতে পড়ে থাকা দুইটা কাগজ অফিসের বিষয়ে, তবে এই তিনটা তেমন দরকারী না। অরু তিনটা চিরকুটের ভাঁজ খুলল। নজর বোলালো সেথায়। সেখানে কিছু লেখা আছে। মনোযোগ সহকারে স্বীয় মনে পড়তে লাগলো,

” হতে পারো তুমি অনেক দূরে, কিন্তু তুমি থাকো সবসময় আমার কল্পনা জুড়ে। শহরের কোলাহলে, নিঃশব্দ রাতেও, ক্ষণিকের দেখা পাওয়া এই তুমিটার ছায়া পাশে অনুভব করি। তুমি না থাকলেও, তোমার হাসিটা মনে গেঁথে রয়েছে। তুমি না বললেও, তোমার কথাগুলো বাজে হৃদয়ের গভীরে। ”
” আমার খুব তৃষ্ণা পেয়েছে, হরিণী নেত্রদ্বয়ের অধিকারী মেয়ে! তোমাকে আরও একটিবার দেখার জন্য, তোমার মিষ্টি সুরেলা কন্ঠ শোনার জন্য, বেহায়া বক্ষপট পিপাসিত। যেমন করে চৈত্রের মাঠ খাঁ খাঁ রোদে পুড়ে যায় বৃষ্টির আশায়, তেমনিই করে আমারও বুক পুড়ে যায় তোমাকে দেখার ইচ্ছায়। ”

” অন্য কাউকেই যখন চাইবে, তখন তোমার সাহস কি করে হলো, হ্যাভেন তালুকদারের নজরে আসার? তুমি কি জানো, তোমার হেঁটে চলে যাওয়ার লতানো কোমরের আঁকাবাঁকা স্রোত আমাকে পাগল করে দিচ্ছে? তোমার কাজল টানা চোখে তাকিয়ে খোকার নিঃকণ্টক, গন্ধরবত অন্তরের আকুল দুর্বোধ্য পরিণতি যদি মোছা যেত, তবে এতদিনে আমি ইছামতী নদী হয়ে তোমার দুয়ার অবধি পৌঁছে যেতাম। ” ❞
তিনটা চিরকুটের লেখাগুলো পড়ে অরু বাকরুদ্ধ, স্থবির! শূন্য দৃষ্টি শুধু ফ্যালফ্যাল করে দেখে চলেছে ছবির মেয়েটিকে। অযাচিত অস্বস্তিতে বুঁদ হলো সর্বাঙ্গ। উচাটন মেয়েটির হতভম্বের চেতনাগত অনুভূতিগুলো শিকড়হীন নেতানো বৃক্ষের ন্যায়। নৈঃশব্দে শূন্য অনুভূতির জোয়ার তলিয়ে যায় গভীর সন্ন্যাসে নিস্তব্ধ এক সাগরের মতো। চোখের মণি হয়ে উঠেছে ম্লান, হৃদয়ের আওয়াজ নিঃশেষিত, আর বাক্যহীনতা এক গুমোট গূঢ় ধ্বনি হতে থাকে সঙ্গী। প্রতিটি শ্বাস, অতি-প্রাকৃত কঠিন, তীব্র বেদনা অবশ হয়ে থাকা শরীরের প্রতিটি কোণে ছড়িয়ে পড়েছে। মন যেন এক অব্যক্ত শূন্যতার প্রবাহে ভেসে চলে, যেখানে আর কোনো দ্বিধাদ্বন্দ্ব থাকে না।

অরু মুখশ্রী কাঠিন্য করে উঠে দাঁড়ায়। ফাইলে সমস্ত কাগজপত্র গুছিয়ে আলমারিতে রেখে দিল। এতক্ষণের বিষাদের ছায়া সরে গিয়ে মুখমন্ডল জুড়ে ঠাঁই পেয়েছে তীব্র ক্ষোভ! ক্রোধে ফুঁসতে থাকল সে। রাগের বহিঃপ্রকাশ অগ্নি প্রবাহের মতো জ্বলে উঠে দেহভাগে, স্নায়ুতন্ত্রের প্রতিটি কণায় ছড়িয়ে পড়ছে। এটি একটি অদৃশ্য, অশান্ত শক্তির স্ফুলিঙ্গ, যা মনের অন্ধকার গহ্বরে জ্বালিয়ে রাখে ধোঁয়া ও জ্বলন্ত আগুনের নীল হালকা। মুখাবয়বের প্রতিটি রেখায় উত্তেজনার আগুন ক্ষত তৈরি করছে, সমস্ত কিছু লন্ডভন্ড করে দিতে ইচ্ছে করছে। কপালের শিরাগুলো ফর্সা মুখে স্ফীত হয়ে উঠছে। বুকের মাঝে কোনো অতীভূত তীব্রতা ভীড় করছে, এবং প্রতিটি শ্বাসে অনুভূত হচ্ছে এক জ্বালাময় অব্যক্ত তাপ। চোখে এক ক্ষিপ্রতার ঝলক, প্রতিটি দৃষ্টি বাষ্পীভূত হয়ে নিজস্ব ক্ষোভের স্ফুলিঙ্গ ছড়াচ্ছে।

ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে, টী-টেবিলের উপর দুই পা তুলে, সম্মুখের মনিটরের মতো দেখতে টিভিতে রিয়েলিটি শো দেখছে হ্যাভেন। কপালে ব্যান্ডেজ, পিঠের মাঝখানের অল্প একটু চামড়া জ্বলে উঠে গিয়েছে বিধায় সেখানেও ব্যান্ডেজ করা হয়েছে। রাস্তায় ঠাস করে পড়ে যাওয়ায় শরীর ব্যথায় জর্জরিত। ব্যথার মেডিসিন খেয়েছে, তবুও ব্যথা আগের মতোই। হুট করে কোনো রোগ নিরাময় হয় না, নির্দিষ্ট কিছু সময় তো লাগবেই। এছাড়া, আর কোনো প্রকার ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। ওর কোলে মাথা দিয়ে, পেটে মুখ গুঁজে গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে টুটুল। হ্যাভেনের অ্যাক্সিডেন্টের কথা শোনেনি, কিন্তু বাড়িতে আসার পর বাবার কপালে ব্যান্ডেজ দেখে টুটুলের শিশুসুলভ হৃদয় ব্যথিত হয়। গলা ফাটিয়ে কান্নাকাটি করেছে দীর্ঘক্ষণ। ছেলেকে অনেক বুঝিয়েছে হ্যাভেন, বুঝ মানতে নারাজ সে। অতঃপর কেঁদে-কেটে বাবার কোলেই ঘুমিয়ে পড়েছে।

হসপিটাল থেকে অরু বাড়িতে ফেরার ঘন্টা খানেকের মধ্যেই হ্যাভেনের চেতনা ফিরে আসে। জ্ঞান ফেরার পর থেকেই সে বউকে দেখার জন্য উতলা হয়ে উঠেছে। জামশেদের কাছ থেকে জানতে পারে অরু বাড়িতে। তখন হ্যাভেন বলে, ও বাড়ি ফিরে যাবে। যত দ্রুত সম্ভব বাড়িতে যাওয়ার ব্যবস্থা করতে। হসপিটালে থাকবে না এক মুহূর্ত। ডক্টর বললেন, ওর শরীর প্রচন্ড দুর্বল, আজকের দিনটা হসপিটালে থেকে আগামীকাল বাড়ি ফিরতে। কিন্তু হ্যাভেন বিরোধিতা করেছে। জামশেদ মানানোর স্বরে জানিয়েছেন, অরু ফের হসপিটালে আসবে। এতেও হ্যাভেনের আপত্তি। মোটকথা সে হসপিটালে থাকবে না। ডক্টর কড়া ভাবে বলেছেন, তিনি হ্যাভেন’কে ডিসচার্জ করবেন না। এরকম ভঙ্গুর রোগী ডিসচার্জ করা হসপিটালের রুলসের অবমাননা! এতেও হ্যাভেনের ভাবান্তর ঘটেনি আর না তো সিদ্ধান্ত বদলেছে! উল্টো তিরিক্ষি মেজাজ সহিত রুষ্ট গলায় কাটকাট নিজস্ব হুংকার ছুড়েছে,
” আমার এখন বউয়ের সঙ্গ চাই। বউয়ের সাথে ঘেঁষাঘেঁষি করলে এসব টিপিক্যাল অসুস্থতা বহুত দূর পালিয়ে যাবে। ভালোয় ভালোয় যেতে দিন। আপনাদের ফর্মালিটির ধারধারি না আমি। বেশি বাড়াবাড়ি করলে, আপনার বউয়ের নিকট ছয় মাস যেতে পারবেন না, তার ব্যবস্থা আমি নিজ হাতে করবো। ”

ডক্টরের মুখখানা চুপসে যায় তৎক্ষনাৎ। বউ ছাড়া থাকতে কোনোমতেই রাজি না তিনি। এই হ্যাভেন’কে বিশ্বাস নেই। যদি সত্যি সত্যি এমনটা করে? কি দরকার অন্যের জন্য বউ ছাড়া দীর্ঘ ছয় মাস দূরে থাকার? এরচেয়ে বরং সাইকোটার কথা মেনে নেওয়া ঢেরবেশি ভালো। হ্যাভেনের জেদের সঙ্গে কবে কে পেরেছে? ঘাড় ত্যাড়া বলে কথা! অগত্যা বাধ্য হয়ে ডক্টর তাকে ডিসচার্জের পারমিশন দিয়েছেন।
অরু ততক্ষণে রেডি হয়ে বেরিয়ে এসেছিল। গাড়িতে উঠতে যাবে, তক্ষুনি জামশেদের ফোন কল পেয়ে হ্যাভেনের কান্ডকারখানা জানতে পেরে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বাড়ির ভেতর চলে যায়।
হ্যাভেন বাড়িতে ফিরলে ওকে ড্রয়িংরুমে বসানো হয়। সকলে তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। তবে অরু একটিবারের জন্যও রুম হতে বের হয়নি। সায়রা ডাকলেও আসেনি। হ্যাভেনের তৃষ্ণার্ত চক্ষু জোড়া তার অরু পাখিকে খুঁজেছে অথচ অভিমানী পাখির দেখা পেলো না। অরুর এরকম আচরণে হ্যাভেন আড়ালে বক্ষঃস্থলে লুকায়িত চাপা কষ্ট অনুভব করেছে, কিন্তু বাইরে প্রকাশ করেনি।
টিভি হতে নজর ফিরিয়ে হ্যাভেন হাঁক ছুড়ল,

” কাকীমা? ”
সায়রা হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসেন। বুক ধড়ফড় করছে। তার কন্ঠে উদ্বেগ,
” কিছু লাগবে? ”
” না, টুটুল’কে নিয়ে শুইয়ে দাও। আমি রুমে যাব।”
সায়রা অস্থির চিত্তে উচ্চারণ করলেন,
” কোনো দরকার হলে ডাকবে আমাকে। ”
” ডাকবো। টুটুল’কে নাও। ”
” একা যেতে পারবে? ”
সায়রার মাতৃস্নেহের বোকা বোকা কথায় নিঃশব্দে হেসে ফেলল হ্যাভেন। প্রশান্তির ঢেউ খেলে গেল বক্ষপটে। আশ্বস্ত করে বলে,
” কেন পারবো না? পায়ে কোনো আঘাত পাইনি। ”
সায়রা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছেড়ে, টুটুল’কে কোলে নিয়ে চলে গেলেন সায়রের রুমে। হ্যাভেন টিভি অফ করে পা বাড়াল বেডরুমের উদ্দেশ্যে।

হ্যাভেন রুমে এসে দেখে, অরু ডিভানে মাথা এলিয়ে ফোনে ভিডিও দেখছে, আর চিপস খাচ্ছে। আশ্চর্য হলো সে। ও বাড়িতে আসলো অথচ এই ধানিলংকা নিরুদ্বেগ! এই মেয়ের মধ্যে কি মায়া দয়া বলতে কিছু নেই? হ্যাভেন ফোঁস করে ক্ষুদ্র শ্বাস ফেলল। অসন্তোষ মুখাবয়বে, হতবিহ্বল নেত্রদ্বয়ে ত্রস্ত কদমে অরুর নিকট এগিয়ে গেল। মৃদু চটে কিছু বলবে, তার পূর্বেই শুনতে পেলো অরুর উদাসীন রূঢ় সুর,
” পৃথিবীতে সবচেয়ে নরম জিনিস হচ্ছে মানুষের মন। এটা ভাঙতে কোনো পাথর বা হাতুড়ির প্রয়োজন হয় না, শুধু নির্বিঘ্নে কয়েকটি অবহেলিত ভাষাই যথেষ্ট! ”
তার মানে ওর উপস্থিতি অরু উপলব্ধি করতে সক্ষম হয়েছে? বিভ্রান্তিতে লুটোপুটি খেলো হ্যাভেন। এখন আবার কি করল ও? আচানক এসব বলার মানে কি? অরু তড়াক করে উঠে বসে। নজর ফোনে চলমান ভিডিওতে। ওর ভাবভঙ্গি নির্লিপ্ত। ঠোঁট নেড়ে ফের বলে,

” আমি হাসি। আমার হাসির পেছনে লুকানো থাকে এক আশ্চর্য মুখোশ, তাতে সুখের চেয়ে দুঃখের রঙ বেশি। তবুও এই মুখোশ আমার খুলতে ইচ্ছে হয় না। কারণ এই পৃথিবী কারোর গল্প শুনতে চায় না! ”
বিস্মিত হলো হ্যাভেন। তটস্থ ভঙ্গিতে অরুর পাশে বসলো। অকস্মাৎ তেড়ে আসা কতগুলো বাক্যবহরে দ্বিধাগ্রস্ত সে। কোনো কথা বোধগম্য হচ্ছে না। তীব্র কৌতূহলে পুরুষালি মোটা জোর ভ্রু বেঁকে এলো অমনি। ও বসতেই অরু ফোন হতে নজর সরিয়ে হ্যাভেনের দিকে তাকাল। অরুর চঞ্চল চাউনি নিভে গিয়ে সেথায় আহত, কাতরতা ঠাঁই পেয়েছে। এর মানে হ্যাভেন জানে না, তবে সেই আকুতিভরা দৃষ্টি ওর সত্তা নাড়িয়ে দিল। অন্তঃকরণ ভীষণ অস্বস্তিতে গাঁট হলো।
হ্যাভেন রয়েসয়ে মুখ খুলল,
” আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে হঠাৎ এসব কথা কেন বলছো? আমি তোমাকে অবহেলা করেছি কখন? তোমার মন ভেঙেছি মানে? তোমার কথা শুনতে চাইনি কবে? তুমি সর্বদা বলো আমি চুপচাপ শুনি, তবুও এত অভিযোগ? ”
অরু বিদ্রূপ হাসে। চিপসের প্যাকেট রেখে দেয়। সূচালো প্রখর চাহনি! ঠোঁটে উদাসীন ভাব। কন্ঠে ঢালল অমায়িক নিদারুণ তেজ,

” মিথ্যা বলা একপ্রকার মন ভাঙা। নির্বিকার থাকাও অবহেলা। হ্যাঁ, আমি বলি আপনি শোনেন, প্রত্যুত্তর করেন না, এটা আরও যন্ত্রণার। সেজন্যই বলেছি, আর কক্ষনো আপনার থেকে কোনো কিছু জানতে চাইবো না, শুনতে চাইবো না। আমার প্রশ্নে তো আপনি বিরক্ত হন। ”
অরুর শেষের কথাটা করুণ শোনালো। হ্যাভেন দৃষ্টি তুলল। সন্ধি হলো চার জোড়া আদ্র লোচনের। অরুর গালে এক হাত রাখল হ্যাভেন। সে তৎক্ষনাৎ হাত সরিয়ে দেয়। মুখ ঘুরিয়ে নিশ্চুপ বসে থাকল। হ্যাভেনের মুখবিবরে সূক্ষ্ম উত্তেজনা। চোখ ছাপানো হতভম্বের মাঝে। অশান্ত হৃদয়ের কন্ঠস্বর শৃঙ্গে,

” এমনি আমি অসুস্থ। তার উপর তোমাকে কাছে না পেয়ে, ছুঁতে না পেরে শরীর আরও খারাপ হচ্ছে। আবার তুমি ধোঁয়াশাময় কথাবার্তা বলছো! এখন যদি তোমাকে ভালো মতো দেখতে না দাও তাহলে কি করে হবে? ”
এই মুহূর্তে অরু এরকম উত্তর আশা করেনি। ওর কথা কি বজ্জাত লোক কখনো সিরিয়াসলি নিবে না? সবসময় এতটা খামখেয়ালি কেন সে? সর্বদা মস্তিষ্কের ভেতর কি রোমান্স ঘুরপাক খায়? শরীরে বিদ্যুৎ প্রবাহের ন্যায় রাগ তরতর করে বৃদ্ধি পেলো অরুর। রক্তের স্রোত যেন অস্বাভাবিক গতিতে শিরা-উপশিরায় হুড়মুড়িয়ে ছুটছে। ত্বরিত ফুঁসে উঠে হ্যাভেনের কাছাকাছি আসে। দূরত্ব ঘোচায় অল্পস্বল্প। হ্যাভেনের শরীর উন্মুক্ত। পড়নে শুধু ট্রাউজার। পিঠের ব্যান্ডেজের দরুন গায়ে পোশাক জড়ায়নি।
অরু পেলব হস্তে হ্যাভেনের গলা জড়িয়ে ধরে। চোখে চোখ রেখে শুধায়,
” আমাকে ভালোবাসেন? ”
বিস্ফোরিত ছুটন্ত বাক্যে হোঁচট খেলো হ্যাভেন। চোখের হোঁচট, মনের হোঁচট সবটা জড়ো হয়ে কুন্ডলী পাকালো কণ্ঠনালিতে গিয়ে। বুঝতে না পেরে বিহ্বলিত খুব জোরে গলা হতে ধ্বনিত হলো,
” কী! ”

অত্যাধিক উঁচু শব্দে এক কান চেপে ধরল অরু। কপাল কুঁচকে ফেলল নিমিষে। তেতে উঠল তৎক্ষনাৎ। ক্ষুব্ধ হয়ে রাগান্বিত চওড়া বাক্যের বহিঃপ্রকাশ ঘটাল,
” ষাঁড়ের মতো চিৎকার করছেন কেন? নরমাল একটা কথা জিজ্ঞেস করেছি বলে কি কানের পর্দা ফাটিয়ে দেবেন? ”
নিরুত্তর হ্যাভেন নিষ্পলক চোখে চেয়ে থাকে। তার বিমূর্ত অক্ষিরা অরুর ক্ষেপাটে মুখাবয়বে আটকে। পুরুষটির অমন গোলাকার কৌতূহল চোখ দুটো দেখে খিটখিটে মেজাজে ভ্রু উঁচায় সে,
” অত্যন্ত ছোট্ট একটা প্রশ্নের জবাব দিতে আপনি এতটা অপারগ? ”
অরুর তীক্ষ্ণ চাহনি, কন্ঠ তীর্যক। হ্যাভেনের গলবিল শুকিয়ে কাঠ। চক্ষুপটে অবিশ্বাস। অরু এরকম প্রশ্ন করবে ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি। সত্যিই তো, এ কথার জবাবে ও কি বলবে?
হ্যাভেন জিভে শুষ্ক অধর ভেজিয়ে, অরুর উপর হতে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। অন্যদিকে নজর ফিরিয়ে প্রত্যুত্তর করলো,

” ন….না। ”
হ্যাভেনের চিবুক ধরে নিজের দিকে ফেরাল অরু। বিলম্বহীন বিদ্রুপ জাবাব দেয়,
” আপনার গলা কাঁপছে কেন? আমার দিকে তাকিয়ে স্পষ্ট বলুন? ”
গলা থেকে অরুর পেঁচিয়ে রাখা হাত সরাতে সরাতে জানালো হ্যাভেন,
” ছাড়ো, ওয়াশরুমে যাব। ”
অরুর মনঃক্ষুণ্ন হয়। চিড়বিড়িয়ে গর্জে উঠে সহসা কাঁধে শক্ত কামড় বসিয়ে দিল। হ্যাভেন ভ্রু কুঁচকে তাকায়। সরু চোখে চেয়ে গমগমে কন্ঠে শুধায়,
” কামড়া-কামড়ি খেলার শখ জেগেছে? বাট আ’ম টাইয়র্ড। সুস্থ হতে দাও। তারপর দুজন মিলে কামড়া-কামড়ির প্রতিযোগিতায় নামবো। ”
অরু পাত্তা দিল না। ব্যাপকভাবে পুনরায় ঘাড়ে কামড় বসায়। এবারের কামড়টা সহ্যশক্তির বাইরে। দাগ বসে গিয়ে রক্ত ভেসে উঠেছে। হ্যাভেন দাঁতে দাঁত পিষে সহ্য করল, কিন্তু অরু’কে আটকালো না। শুধু মুখনিঃসৃত ঘটলো শান্ত বাক্য,

” কিছুদিন পরপর তোমার মাথায় কি শয়তান ভর করে? দূরে যাও। ব্যথা পাছি। ”
অরু নিরাশ দম ফেলল। ভাবভঙ্গি দায়সারা,
” আমাকে কতবার কামড়ে ছিলেন? কুত্তার মতো তীক্ষ্ণ সূচালো দন্তকপাটির ছাপ ফেলে তবেই ক্ষান্ত হয়েছেন। এখন কেমন লাগে? ”
” প্রতিশোধ নিচ্ছো? ”
” যদি বলি, হ্যাঁ? ”
ফোঁস করে নিঃশ্বাস ছাড়ল হ্যাভেন। উচ্চারণ করল মেঘমন্দ্র কন্ঠে,
” কামড় দেওয়া খতম? এখন সরো। ”
” সরবো না। ভালোবাসেন? ”
অরু ফের শুধায়। হতবাক হ্যাভেন। এই মেয়ের কি হলো আজ? ধানিলংকা একেকদিন একেক কথার ঝুলি সাজিয়ে বসে! অরুর গহিন লোচনে নজর পড়তেই মেরুদন্ড সোজা করে ফেলল হ্যাভেন। ভেতরে উন্মত্ত একটা ভাব বাসা বেঁধেছে। চোখেমুখে অদ্ভুত নিস্পৃহা। বিস্ময়ে তুরন্ত পাতলা ঠোঁট সরে গেল দুদিকে।
” শুনেছি, মেয়েদের চোখ নাকি খুব ধারালো হয়। তারা যেকোনো ছেলের চোখের দিকে তাকিয়ে অবলীলায় বলে দিতে পারে, সেই ছেলে তাকে কোন নজরে দেখছে। তাহলে আমার অনুভূতি নিয়ে এত সংশয় কেন? ”
অরুর কন্ঠে নেপাত জেদ,

” মুখে স্বীকার করলে কি হয়? ”
সে অকপটে জানায়,
” স্বীকার করলে বিশ্বাস করবে? মুখের কথাই সব? ”
” অবশ্যই। ”
হ্যাভেন গমগমে গলায় প্রশ্ন ছুড়ল,
” তাহলে নিখিলের মুখের কথায় বর্তমানে আফসোস করো কেন? ”
অরু মিইয়ে যায়। বীতস্পৃহায় গলা ভিজল। ইতস্তত বিক্ষিপ্ত হলো মনগহীন। এড়িয়ে গেল অযাচিত প্রশ্ন। গজগজিয়ে রেগে আঙুল তুলল এবার,
” অন্যের কথা বাদ দিয়ে আপনার অভিব্যক্তি বক্ত করুন। ”
” জবাব দিয়েছি। ”

অরুর ঠোঁটের কোণে এক টুকরো শীতল বাঁকা হাসি খেলে গেল। চোখ দুটো গভীর কুটিলতায় দীপ্ত, যেন আঁধারের গর্ভে লুকিয়ে থাকা হিং’স্র কোনো শিকারি। রাঙা অধরের হাসিতে লুকায়িত হিমশীতল কৌশলের ছায়া, নিষ্ঠুর মন্দ্র ধ্বনি, আর মনস্তলের গভীরতম রহস্য। চারপাশের নীরবতা ঘনীভূত হয়ে অরুর হৃদয়ের অন্ধকারকে আরো গাঢ় করে তুলল। মনে হচ্ছিল, তার ভেতরেই বাসা বেঁধেছে এক চতুর ষড়যন্ত্রকারী, যে সুযোগের প্রতীক্ষায় গা ঢাকা দিয়ে বসে আছে।
গলা খাঁকারি দিল অরু। কিঞ্চিৎ দূরে সরে বসে। ঠোঁট এলিয়ে দুর্বোধ্য হাসল। কন্ঠে চটপটে ভাব,
” ধন্যবাদ বলার জন্য। আসল কথায় আসা যাক। আ…”
মাঝ পথে ফোঁড়ন কেটে হ্যাভেন ভ্রু নাচাল,
” আসল কথা মানে? ”
অরু কঠোর দ্বিধাহীনভাবে বিরক্তি প্রকাশ করল তৎক্ষনাৎ,

” বলার আগেই তো কথা কেড়ে নিলেন। যাকগে, আপনার থেকে যেচে পড়ে ভালোবাসেন কি-না জানতে চাইনি। ভেবেছিলাম ভালোবাসি বললে, অতীতের সমস্ত কিছু ভুলে, জোর করে হলেও আপনার সাথে নিজেকে এডজাস্ট করার চেষ্টা করবো। সেটা আর হবে না। আসল কথা হলো, একটা ছেলের প্রতি আমার একটু একটু ইন্টারেস্ট জন্মেছে। হালকা ভাবে ভালোবেসে ফেলেছি ছেলেটাকে। এখন সারাজীবনের জন্য তাকে চাই। একমাত্র আপনি ভরসা। আপনিই পারেন ছেলেটাকে আমার করে দিতে। প্লিজ হেল্প মি, মিস্টার হ্যাভেন তালুকদার। আপনার তো দয়াশীল মন। ”

ইতোমধ্যে চোয়াল শক্ত হয়ে উঠেছে হ্যাভেনের। হাত যুগল মুষ্টিবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। ক্রোধে নাকের পাটাতন ফুলছে। অগ্নিশিখার স্ফুলিঙ্গের ন্যায় পুরো মুখমন্ডল রক্তিম আভায় ছেয়ে গিয়েছে। পুরুষালি কন্ঠমণি ঘনঘন আপ-ডাউন হচ্ছে। গ্রীবা বাঁকালো হ্যাভেন। নিগূঢ় রক্তিম তীর্যক চাউনি বর্তায় ভাবলেশহীন মেয়েটির উপর। বলিষ্ঠ হাতের করতল ভেলভেট তুল্য কোমল শরীরটাকে আচানক টান দিয়ে নিজের ইস্পাত কঠিন বলিষ্ঠ বুকে আছড়ে ফেলল সে। পরক্ষণেই তাকে ডিভানে চেপে ধরল। দাঁত কিড়মিড় মেয়েটার মুখের কাছে মুখ নিয়ে ধমকে বলল,
” হাউ ডেয়ার ইউ সে দ্যাট ইউ লাভ অ্যানাদার বয় ইন ফ্রন্ট অভ মি? মেরে ফেলব ওই ছেলেকে। টেল মি, হু ইজ হিম? ”

হ্যাভেনের রাগত্ব মুখবিবর দেখে, অরু ঘাবড়ে গেল না। তার চক্ষু সহজসরল। কন্ঠ নির্লিপ্ত থমথমে,
” বলবো না। আপনি ক্ষমতাবান বিখ্যাত একজন মানুষ। নিজে নিজে খুঁজে নিন। ”
দায়সারা জবাবে আক্রোশে ফেটে পড়ল হ্যাভেন। চিবিয়ে চিবিয়ে আওড়াল,
” অলরাইট, খুঁজে নেবো। ভার্সিটিতে গিয়ে নতুন কাউকে জুটিয়ে ফেলেছো! ওই ছেলের সাথে যা ঘটবে তার জন্য তুমি দায়ী থাকবে, অরু! ”
অরু অগোচরে ঠোঁট টিপে চাপা হাসে। উত্তর দিল মিহি স্বরে,
” আচ্ছা। ”
হ্যাভেনের মস্তিষ্ক এলোমেলো। কর্ণকুহরে বারংবার প্রতিধ্বনি হচ্ছে, অরুর অন্য ছেলের প্রতি ইন্টারেস্ট জন্মেছে এবং তাকে ভালোবাসে! হ্যাভেন ক্রোধ সংবরণ করতে উদ্ভ্রান্তের মতো অরুর রক্তলাল ঠোঁটের নিকট এগুতেই, অরু সঙ্গে সঙ্গে মুখ ঘুরিয়ে নিলো। চোখ পাকিয়ে ফুঁসে ওঠে,
” আপনি না অসুস্থ? ”
হ্যাভেনের ব্যাকুল চিত্ত হতাশ হলো। ললাটে প্রগাঢ় ভাঁজ ফেলে নিরুৎসাহিত হয়ে বলল হাস্যহীন,

” ঠোঁট কি অসুস্থ? এটা এখনো সুস্থ। ঝটপট একটা চুমু খাও। তাহলে অসুস্থতা ফটাফট বিদায় হবে, সেই সাথে ওই বদমাশ ছেলেটাকে ধরতে হবে। হ্যাভেনের বউয়ের দিকে নজর দেওয়ার সাধ মিটিয়ে দেবো! তাছাড়া, ভুলে যেও না, তোমার জন্যই আমার এই হাল! ”
অরুর তোতাপাখির ন্যায় প্রত্যুত্তর ঠোঁটের ডগায়,
” আপনার জন্য ডিপ্রেশনে ভুগছি আমি, তার বেলা? ”
” বলেছি না স্ট্রেস না নিতে? ”
অরু ঠোঁট উল্টে জানতে চাইল,
” সংসার আমার, আমি না নিলে কে নিবে? আপনার ভালোবাসার সেই বউ? ”
রাগান্বিত, চওড়া হওয়ার দরুন হ্যাভেনের শরীর ফুলে-ফেঁপে উঠছে। অশান্ত হৃদয় ভারাক্রান্ত! কটমটিয়ে দাঁতে দাঁত পিষল,

” ইচ্ছে করছে রাগে, দুঃখে তোমার ওই বিশ্রী ঠোঁটে একটা কড়া ডোজের চুমু খেয়ে বসি! ”
” পারেন তো শুধু চুমু খেতে, আর কামড় দিতে! ”
” আরো অনেক কিছু পারি। একটু সুস্থ হতে দাও, তারপর সেটাও দেখাবো। ”
হ্যাভেন’কে ঠেলে সরিয়ে, অরু উঠে দাঁড়ায়। লতানো কোমরটা হেলেদুলিয়ে রুম ত্যাগ করতে করতে কন্ঠ খাদে টানল। অতঃপর ধ্বনিত হলো গভীর বাক্যবহর,
” বেশি বাড়াবাড়ি করলে কপালে ডিভোর্স ঠুকে দিবো, চান্দু! ”

প্রেমপিপাসা পর্ব ২৬

বাকরুদ্ধ হয়ে গেল হ্যাভেন। নেত্রদ্বয় কোটর ছেড়ে বেরিয়ে আসার উপক্রম। চক্ষুদ্বয় সংকুচিত করে ভ্যাবলা কান্তের ন্যায় থম মেরে বসে রইল। দুর্ঘটনায় কি ধানিলংকার মাথার স্ক্রু ঢিলে হয়ে গিয়েছে? আজকে এত আবোল-তাবোল বকছে কেন? এত সাহস, স্পর্ধা আসলো কোথা থেকে? পরমুহূর্তে অরুর মুখনিঃসৃত ডিভোর্স শব্দটা শুনে চিবুক, চোয়াল কাঠিন্য হয়ে এলো। স্বীয় মনে বিড়বিড়ালো,
” বেয়াদপ নারী! কথায় কথায় ডিভোর্সের ভয় দেখায়! আল্লাহ তার স্বামীকে বউকে চুমু খাওয়ার জন্য বেশি বেশি তৌফিক দান করুক, আমিন। ”

প্রেমপিপাসা পর্ব ২৮