তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা শেষ পর্ব 

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা শেষ পর্ব 
আমেনা আক্তার

রুদ্রের যেনো ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে।ওর আর অপেক্ষা সইছে না। মনের ভিতরে কেমন যেনো অস্থিরতা অনুভব হচ্ছে। অনবরত রুদ্র নিজের পা দুটো দিয়ে মেঝেতে আঘাত করছে তা থেকেই রুদ্রের ব্যাকুলতা প্রকাশ পাচ্ছে। রুদ্রকে পাশে বসেই রুদ্রকে বারবার পর্যবেক্ষণ করে চলেছে সিরাত। রুদ্রের মনের ভিতর অস্থিরতা কাজ করলেও সিরাত খুব শান্ত ভাবে বসে আছে।সিরাত রুদ্রের এই অবস্থা দেখে রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলল।
এমন বিহেভ করছ কেনো?
রুদ্র সিরাতের কথা শুনে বলল।
আমাকে তুমি বলছ এমন বিহেভ করছি কোনো।এটা জানা সত্ত্বেও আমরা এখন কি পরিস্থিতিতে আছি।এক তো তুমি আমাকে হঠাৎ করে অফিস থেকে হসপিটালে ডেকে এনেছ তার উপর আমাকে বলছো না কি হয়েছে। বারবার বলছো যে তোমার রিপোর্ট আসছে। কিসের রিপোর্ট এটাও বলোনি। আমার টেনশনে মাথা ফেটে যাচ্ছে। কিন্তু তবুও তুমি আমাকে বলছো না হয়েছে কি।

এক দমে কথাগুলো বলে থামে রুদ্র।সিরাত খুব মনোযোগ দিয়ে কথাগুলো শুনছিলো।সিরাত রুদ্রের কথার প্রতি উত্তরে কিছু বলার আগেই কেবিনে প্রবেশ করলেন ডাক্তার। ডাক্তার রুমে আসায় ওরা দুজন চুপ হয়ে যায়। ডাক্তার নিজের বরাদ্দকৃত চেয়ারে বসে পরে এবং সিরাতের উদ্দেশ্যে বলল।
আপনার রিপোর্ট এসে পরেছে,আপনি যা সন্দেহ করেছিলেন তা ঠিক হয়েছে।
কথাগুলো বলেই ডাক্তার সিরাতের দিকে এগিয়ে দেয় ওর রিপোর্ট।সিরাত ডাক্তার কে বলল।
আমাকে না ওকে দিন না হলে কিছুক্ষণের মধ্যে ও হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে।
রুদ্র কাঁপা কাঁপা হাতে রিপোর্ট গুলো নিজের হাতে নেই।ওর বুকের ভিতর এখন ধুকধুক করছে খুব তীব্র ভাবে। আল্লাহ জানে রিপোর্টে কি আছে। রুদ্র বিসমিল্লাহ বলে রিপোর্ট টি খুলতেই কিছু সময়ের জন্য স্তব্ধ হয়ে গেল রুদ্র। রুদ্র এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে ওর হাতে থাকা রিপোর্টির দিকে।ওর যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না সিরাত প্রেগনেন্ট।
রুদ্র সিরাতের দিকে তাকায়,সিরাতে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। রুদ্র এখন বুঝাতে পারবে না ওর অনুভূতি। রুদ্র সিরাতের হাত দুটো নিজের হাত দ্বারা আঁকড়ে ধরে বলল।
ধন্যবাদ, আমাকে এত বড়ো একটি উপহার দেওয়ার জন্য।

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

পুরো বাড়ি আলোতে জ্বলমল করছে। বাড়ির আনাচে কানাচে মানুষের আনাগোনা বেড়েই চলেছে।সকলে মেতে আছে হাসি ঠাট্টায়।আজ যে অনেকদিন পর এই খুশির মুহুর্তে এসেছে।পুরো দু বছর পর আজ সকলের মুখে এই বিস্তৃত হাঁসির রেখা দেখা যাচ্ছে।আজ বিয়ের উৎসবে মেতে উঠেছে পুরো বাড়ি। তবুও যদি একটি বিয়ে হতো তাহলেও হতো।আজ যে একসাথে দুটি বিয়ে হচ্ছে।আজ একসাথে দুটো জুটির ভালোবাসা পূর্ণতা লাভ করছে।
রুদ্ররা হাসি ঠাট্টা করছে একজন আরেকজনের সাথে। রুদ্রের পাশে সিরাত বসে আছে ছ মাসের উঁচু পেট নিয়ে। রুদ্র নিজের বন্ধুদের সাথে গল্প করার সাথে সাথে সিরাতের সম্পূর্ণ খেয়াল রাখছে।সিরাতকে ঘিরে কোনো কিছু রুদ্র এখন না নিজে হেলাফেলা করে আর না কেউ সিরাতকে ঘিরে কোনো প্রকার হেলাফেলা করলে ও সহ্য করে।
হৃদিতা ফাজলামোর ছলে রুদ্র কে জিজ্ঞেস করলো।
মেয়ের বাবা হতে চাস নাকি ছেলের বাবা,
রুদ্র হৃদিতার কথার জবাবে বলল।

ছেলে কিংবা মেয়ে দুটোই দোয়া আল্লাহর হাতে।আমি কখনো বেজার হবো না আল্লাহ আমাকে ছেলে মেয়ে দুটোর থেকে একটি দিলেও। কিন্তু আমার ইচ্ছা সম্পর্কে যদি জিজ্ঞেস করিস। তাহলে আমি চাই একটি ছোট্ট পরি।যা সম্পূর্ণ আমার অর্ধাঙ্গিনীর মতো হবে।
রুদ্রের কথায় আরশাদ মুচকি হেসে ঠাট্টার স্বরে বলল।
বাহ্ বাহ্ বন্ধু,আগে যেই মেয়ের চেহারা পর্যন্ত দেখতে পারতিস না।আজ তার জন্যই তোর কত পাগলামী।দু মিনিট চোখের আড়াল ও করতে চাস না।এমকি সিরাত ওর মায়ের বাড়িতে গেলেও তোর জন্য শান্তি মিলে না। বারবার ফোন দিয়ে অস্থির হয়ে যাস।
ও অস্থির হবে না ,ওর তো এখন বউ ছাড়া এক মিনিট ও চলে না।

পিছন থেকে বলে উঠলো নূর। নূরের সাথে পকেটে হাত ঢুকিয়ে এক পাশে দাঁড়িয়ে আছে আদিত্য।আরেক পাশে নিলয়। কিছুদিন আগে নিলয় সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে নিজ মাতৃভূমিতে ফিরেছে। নিজের আপন মানুষ নিজের বোনের কাছে।নিলয় সুস্থ হওয়ার পরেও তো নিজের কষ্ট ভুলতে পারছে না।ভুলবেই বা কি করে।ও তো কম ভালোবাসে নি নিজের স্ত্রী কে। নিজের সর্বত্র দিয়ে ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখতে চেয়েছে। নিজের স্ত্রী ও সন্তানকে। কিন্তু ভাগ্য ওর সাথে ছিল না তাইতো পেয়েও তাদের হারিয়ে ফেলেছে।
নূর আগে বেড়ে ওর বন্ধুদের উদ্দেশ্যে বলল।
সবাই এখানে কিন্তু আমাদের জামাই রাজারা কোথায়।বউ রেখে আবার পালিয়ে গেল নাতো।
এত সাধনার পর বিয়ে করার সুযোগ হয়েছে।আর তুই বলছিস আমরা পালিয়ে যাবো। আমরা আমাদের বউ রেখে পালানোর তো দূর আমরা পারলে আরো আমাদের বউদের কুলে চড়ে বসে থাকবো। কিন্তু আমাদের বউ অনেক নির্দয় ওদের দেখার জন্য আমাদের জান বের হয়ে যাচ্ছে তাই ওদের বললাম একটা ছবি অন্তত পাঠাতে কিন্তু না ওরা তাও করল না।

কথাগুলো বলে উঠলো আব্রাহাম ও রাজ।
রাজ ও আব্রাহামের কথা শুনে হৃদিতা বলল।
তোদের আর ওদের ছবি দেখে নিজের চোখের পিপাসা মিটাতে হবে না।ওই যে ওরা নামছে এখন সরাসরি ওদের কে দেখতে পারবি।
হৃদিতার কথা শুনে সকলে সিঁড়ির দিকে তাকাতেই দেখতে পায় আয়না ও সাইরা নেমে আসছে সিঁড়ি বেয়ে। দুজনে নববধূ রুপে সজ্জিত হয়েছে।দুজনের মুখে লেগে আছে লজ্জিত ভাব। আয়না ও সাইরার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে আব্রাহাম ও রাজ। ওদের দৃষ্টি সরাতে দুজনে ব্যর্থ। ওদের অবস্থা দেখে রুদ্র মজা করে বলল।
মুখ বন্ধ কর কিছুক্ষণ পরেই ওরা তোদের স্ত্রী হয়ে যাবে তখন যত খুশি দেখে নিস।
চুপ কর তুই আমাদের মন ভরে দেখতে দে।

(আয়না সুস্থ হয়েছে দেড় মাস আগে। আয়না অসুস্থ থাকা অবস্থায় ওর প্রতি আব্রাহামের যত্ন, ভালোবাসা ওর জন্য কষ্ট পাওয়া এই সকল কিছু দেখে আয়নার জমে থাকা অভিমান চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গিয়েছে। আয়না খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছে আব্রাহাম ওর করা ভুলের জন্য সত্যি অনুতপ্ত।তাই আয়না ওকে মাফ করে দিয়েছে)
মহিমা একটি কোণায় বসে ওর ছেলেকে খাবার খাওয়াচ্ছে। নিজের বোনের বিয়েতে মহিমা অনেক খুশি। মহিমা শুধু ওর বোনদের জন্য এই দোয়া করে যেনো ওদের কপালো মহিমার মতো না হয়। সবার নিজের জীবনে একটি সঙ্গি চায় নিজের সুখ দুঃখ তার সাথে ভাগ করে নেওয়ার জন্য। কিন্তু মহিমার জীবনে এখন এমন কোনো চাওয়া নেই ও শুধু নিজের সন্তানকে নিয়ে বাঁচতে চায়।ওর ভালোবাসার উপর বিশ্বাস উঠে গিয়েছে। তাই ও চায় নিজের বাকি জীবন নিজের মতো করে কাটিয়ে দিতে। সবার ভালোবাসা যে পূর্ণতা পাবে এমন তো কোনো কথা নেই।
বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ ধরে। রুদ্র ও ওর বন্ধুরা দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। ওদের উদ্দেশ্যে হলো আজ কোনো মূল্যেই রাজ ও আব্রাহাম কে বাসর ঘরে ঢুকতে দিবে না। রাজ ও আব্রাহামের এক বাড়িতে বিয়ে হওয়ার সাথে বাসর ঘর ও পাশাপাশি সাজানো হয়েছে। আব্রাহাম ও রাজ বন্ধুদের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলল।

দরজার সামনে থেকে সর আমরা ভিতরে জাবো। আমাদের বউ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে।
রুদ্র ওদের কথা শুনে কিছুটা কঠিন কন্ঠে বলল।
আজ কালরারত্রি,আজ তোদের অন্য রুমে ঘুমাতে হবে। এখন এখান থেকে ফোট।
রুদ্রের কথা শুনে আব্রাহাম ও রাজ রাগ দেখিয়ে বলল।
নাটক বন্ধ করে সর সামনে থেকে, আমাদের ভিতরে যেতে দে।
ওদের কথা শুনে সকলে একসাথে বলে উঠল।
না যেতে দিবো না,
ওদের কথা শুনে রাজের মাথায় একটি বুদ্ধি উদয় হয়।রাজ রুদ্রের উদ্দেশ্যে বলল।
আমি তোকে বলতে ভুলে গেছি,সিরাত তোকে ডেকেছিল কিছু গুরুত্বপূর্ণ কথা বলার জন্য। তোকে তাড়াতাড়ি যেতে বলেছে।

তুমি শুধু গল্প না আমার ভালোবাসা পর্ব ৫৮

সিরাতের কথা শুনে রুদ্র আর থাকতে পারলো না।ও সকলকে ঠেলে এক দৌড় দিল সিরাতের কাছে যাওয়ার জন্য। রুদ্র সকলকে ঠেলে দৌড় দেওয়ার কারণে সকালে দরজা থেকে ছিটকে গেল।এই সুযোগে আব্রাহাম ও রাজ রুমের ভিতর ঢুকে দরজা আটকিয়ে দিলো।
আজ রাজ ও আব্রাহামের জীবনেও ঘটলো একটি নতুন সূচনা। সকলের পথ চলা এভাবেই হাসি ঠাট্টায় আগে বাড়তে লাগলো। জীবন শেষ হলেও কি বন্ধুত্ব শেষ হয় এটি কখনো শেষ হওয়ার নয়। সকলে জীবনে সুখ দুঃখ লেগেই থাকবে তবুও সকলে যেনো জীবনে একসাথে থেকে তাদের মোকাবেলা করতে পারে এই কামনা করে শেষ করছি।

সমাপ্ত