কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৩২

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৩২
মিসরাতুল রহমান চৈতী

রাতুলের গাড়ি গ্রামের রাস্তা ছেড়ে শহরের পথে উঠল। রাস্তার দুই পাশে ফাঁকা জমি, দূরে দূরে কয়েকটা দোকানের আলোর টিমটিমে ঝলক। বাতাসে একটা অদ্ভুত চাপা গন্ধ, যেন কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।
চৈতী জানালার বাইরে তাকিয়ে ছিল। ওর মনের মধ্যে একটা অস্বস্তি হচ্ছিল, কিন্তু কারণটা ঠিক বুঝতে পারছিল না।
রাতুল একদম চুপচাপ ড্রাইভ করছিল, তার চোখ সতর্ক, শরীর শক্ত হয়ে আছে।
ঠিক তখনই একটা কালো মাইক্রোবাস আচমকা সামনে এসে দাঁড়াল।
পেছনে দ্রুতগতিতে কয়েকটা মোটরসাইকেল ছুটে এল।
চৈতী শ্বাস আটকে রাতুলের দিকে তাকাল।

রাতুল কোনো কথা বলল না, শুধু একটা গভীর শ্বাস নিয়ে গাড়ি থামাল।
“বেল্ট লাগিয়ে রাখো,” কণ্ঠের স্বর শক্ত, দৃঢ়।
তারপর দরজা খুলে নেমে গেল সে।
চৈতীর হাত আপনাআপনি কাঁপতে শুরু করল।
এই লোকগুলোর উদ্দেশ্য কী?
চারপাশ থেকে মুখোশধারী লোকগুলো এগিয়ে এল। একজন বন্দুক তুলতেই রাতুল ঝটকা মেরে তার হাত ধরে একটা মোচড় দিল।
লোকটা চিৎকার করে বন্দুক ফেলে দিল।
রাতুল কোনো সুযোগ দিল না—সামনের এক জনকে ঘুষি মারল, পেছনের জনের কলার ধরে ছুঁড়ে ফেলল।
কিন্তু লোকগুলো এত সহজে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র না।
পাশ থেকে আচমকা দুই দিক থেকে দুটো গুলি ছুটে এল।
একটা গিয়ে লাগল রাতুলের হাতে!
আরেকটা সোজা তার ডান পায়ে!
চৈতী শিউরে উঠল।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

রাতুল এক হাঁটু মাটিতে ঠেকাল, ঠোঁট চেপে ধরল কষ্ট চেপে রাখার জন্য।
চৈতী আর এক মুহূর্তও ভাবল না।
সে দরজা খুলে বাইরে বেরিয়ে এল।
তার চোখের সামনে বন্দুকটা পড়ে আছে।
সে কি পারবে?
তার হাত কাঁপছিল, গলা শুকিয়ে গিয়েছিল।
সে চোখ বন্ধ করল।
রাতুল কীভাবে বন্দুক চালিয়েছিল?
মনে করার চেষ্টা করল।
তারপরে ধীরে ধীরে চোখ খুলল।
“বিসমিল্লাহ!”
চৈতী বন্দুক তুলে প্রথম গুলি চালাল সামনের লোকটার হাঁটুতে।
লোকটা আর্তনাদ করে পড়ে গেল।
চারপাশে মুহূর্তের জন্য স্তব্ধতা নেমে এল।
লোকগুলো চৈতীর দিকে তাকিয়ে গেল—এই মেয়েটা গুলি চালাতে পারে?
চৈতী দ্বিতীয় গুলি চালাল আরেকজনের পায়ে।
একজন বন্দুক তুলতেই চৈতী তার হাতে গুলি চালাল।
আরও দুজন সামনে আসতে চাইলে চৈতী সরাসরি তাদের পায়ের দিকে গুলি করল।
চারপাশের লোকগুলো হতভম্ব হয়ে গেল।
কেউ এমন আশা করেনি!
রাতুল ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ানোর চেষ্টা করল। তার শরীর রক্তে ভিজে যাচ্ছে, কিন্তু চোখে যেন অন্য এক যুদ্ধের ঝলক।
চৈতী দ্রুত ছুটে গিয়ে তাকে ধরল।

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৩১

“গাড়িতে উঠুন!”
রাতুল এবার কোনো কথা বলল না।
চৈতী দরজা খুলে তাকে বসিয়ে দিল, তারপর স্টিয়ারিং হাতে নিল।
গাড়ির এক্সিলেটরে চাপ দিতেই পেছনে পড়ে রইল রক্তাক্ত মাঠ, ধোঁয়া আর আতঙ্কিত মুখগুলো।
গাড়ির ভেতরে এক মুহূর্তের জন্য নীরবতা।
চৈতী একবার পাশ ফিরে তাকাল—রাতুলের শরীর কাঁপছে, রক্ত ঝরছে।
তার চোখে একরাশ যন্ত্রণা, কিন্তু কণ্ঠে কোনো শব্দ নেই।
চৈতীও কিছু বলল না।
এই লড়াই এখানেই শেষ না…

কোন গোপনে মন ভেসেছে পর্ব ৩৩