পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৮
সাদিয়া আক্তার
মিহিকে টানতে টানতে লাইব্রেরিতে নিয়ে যাচ্ছে পুনম। মিহি যতই নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করুক পুনম হাত ছাড়ছে না শেষে লাইব্রেরিতে ঢুকে হাত ছেড়ে হন্য হয়ে বুক শেল্ফে কিছু খুজে চলেছে।
মিহি ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে কি করছে এই মেয়ে ভাবছে মিহি পাগল হলো নাতো।
— কি করছিস পুনম এভাবে বইয়ের ভাজে কি খুজে চলেছিস??
বিরক্তি কন্ঠস্বর মিহির তবে পুনমের সেদিকে কান নেই সে একটার পর একটা বই খুজে চলেছে কাঙ্খিত জিনিস না পেয়ে ধপ করে ফ্লোরে বসে পড়ে। মিহি চমকে ওঠে এমন ভঙ্গুর পুনমকে সে কখনও দেখেনি মায়ের লাঞ্ছনা সহ্য করেও যে মেয়ের মুখে মিষ্টি হাসির রেখা থাকত তার এমন অবস্থা। মিহি পুনমের দিকে গভীর ভাবেই চাইতেই আরো চমকে ওঠে শ্যাম বর্ণ বলে চোখের নিচে কালি পড়েছে তা সহজেই বুঝা যাচ্ছে না গভীর ভাবে না দেখলে কি হয়েছে মেয়েটার???
মিহি দৌড়ে যায় পুনমের সামনে বসে। — কি হয়েছে পুনু?? এমন করছিস ক্যান বোন বলনা,,,
মিহির আদুরে কথায় বাধ ভাঙ্গে পুনমের। হু হু করে কান্না করে দেয়। কান্নাভেজা স্বরে বলতে লাগে — আজ আজ চারটা দিন শের “এ আলী সাহেবের চিঠি নেই কোনো কথা বার্তা কিছুই নেই লোকটা কি করছে কেমন আছে কিচ্ছু জানি না,,,
পুনমের মুখে কারো কথা শুনে চমকে উঠল মিহি। কোনো ছেলে তাও আবার পুনম এ জেনো অবিশ্বাস্য কথা শুনল মিহি পুনম নিজের মুখে স্বীকার না করলে নিজেও জানতে পারত না আর অন্য কারো থেকে শুনলে বিশ্বাস ও করত না।
নিজেকে সংবরণ করে মিহি।
— কে এই আলী তাকে কিভাবে চিনিস তুই??
পুনম কাদতে কাদতে প্রথম দিনের গান শুনা চিঠি দেয়া নেয়া সবটাই বলে। সব শুনে হতবাক মিহি এই মেয়ে এতোদূর এগিয়ে গেছে অচেনা অজানা একটা উড়ো চিঠি দাতা প্রেমে পযর্ন্ত পড়েছে। মিহি গম্ভীর স্বরে বলল — এরকম কাউকে না জানিয়ে যে নিজেকে জলন্ত আগুনে ডুবালি এখন কি করবি লোকটা যদি ঠক জোচ্চোর হয়,,,??
— নাহ এমন বলিস না প্লিজ আমার মন বলছে লোকটা ভালো ভীষণ ভালো তার প্রত্যেকটা কথার ভাজে আমি আমার জন্য গভীর মায়া স্নেহ আর একরাশ ভালোবাসা অনুভব করেছি।
— আচ্ছা মেনে নিলাম তোর কথা তাহলে লোকটা এখন কই কোনো খোঁজ নেই কেনো?? আর হঠাৎই উধাও হলো কেনো??
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
এবার বুক শেল্ফে মাথাটা হ্যালান দিয়ে পুনম বলল — জানিনা আমি কিচ্ছু জানিনা আমার শুধু এটুকুই মনে হচ্ছে তার চিঠি আমার অভ্যাস বলতে পারিস বদ অভ্যাস আমি তার চিঠিতে আসক্ত।
পুনমের এমন কথায় অবাক মিহি। তবে তারা কেউ খেয়াল করল না অপর পাশে কেউ দাড়িয়ে আছে অন্ধকারের দিকে যার ঠোঁটে ঝুলছে বাকা হাসি। তৃপ্তির হাসি যে হাসিতে যেকোন মেয়েই কাবু তবে লোকটা যে হাসে কম তার হাসি দূর্লব।
ক্রন্দনরত পুনমকে অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে পুনম উঠায় নিজের সাথে বের হয় লাইব্রেরি থেকে।
— ওয়াশরুমে যা চোখে মুখে পানি দে নিজেকে ঠিক কর এমন অবস্থায় বাসায় যেতে পারবি না।
পুনম মাথা নেড়ে চলে যায় ওয়াশরুমে। চোখে মুখে পানি দিতে থাকে মিহি পুনমের ভাবনায় এতোটাই মশগুল যে খেয়াল করল না তার পাশ দিয়ে কেউ ওয়াশরুমে ঢুকে ধীর শব্দে ওয়াশরুমের মেইন গেট লাগিয়ে লাইট অফ করে দিয়েছে।
চোখে মুখে পানি দিচ্ছিল পুনম হঠাৎই লাইট বন্ধ হতে চমকে ওঠে। চারিদিকে তাকিয়ে হাতরে লাইট খুজতে যেতেই হ্যাচকা টানে কারো বাহু বন্ধনে আবদ্ধ হয়। ভয় পায় পুনম চেচিয়ে উঠতে যেতেই মুখ চেপে ধরে লোকটা পুনম হাতে কামড় দিলেও ছাড়ে না ধস্তাধস্তি শুরু হয়। লোকটা যেনো মজা পেলো পুনমের কান্ডে বাধন আরও শক্ত করল।।
শেষে না পেরে কেদেঁই দিল এবার লোকটার মায়া হলো সে ধীর হাস্কি স্বরে ডাকল — জোহরা,,
চট করে থেমে যায় পুনম। জোহরা এই নামে তো একজনই ডাকে তার শের ” এ আলী সাহেব। লোকটা এই কয়দিন কই ছিলো সে কি জানে না তার চিঠি পুনমকে কতটা স্বস্তি দেয়। কতটা প্রফুল্ল করে উহু জানে না জানলে কি তার সাথে এমন করতে পারত চারটি দিন ধরে চিঠি না পেয়ে পুনমের কেমন অবস্থা হয়েছে সেটা এই লোক জানে কথা বলবে না এই লোকের সাথে। অভিমান হয়েছে বেশ অভিমান,,,
চন্দ্র প্রেয়সীর অভিমান বুঝে তাকে ছেড়ে দেয়। তার থেকে ঠিক একহাত দূরে দাড়িয়ে যায় নিয়ন আলোয় দেখে প্রেয়সীর অভিমান রাঙা চোখ।
মনে মনে হাসে চন্দ্র। ফের এক কদম এগিয়ে পুনমের কানে বলল — ইয়্যু ক্যান ফিম মিই জোহরা,, বলেছিলে না আমাকে ফিল করতে চান দেখেন তার অনুপস্থিতিতে আপনি অস্থির এটাই তো টান হৃদয়ের।
আর দেখা সেটা দেখবেন মনের দেখা। বলেই পকেট থেকে একটা রুমাল বের করে পুনমের চোখ বাধে বেশ শক্ত বাধনে। এমনিতে অন্ধকার আবার চোখ বাধায় পুনম আরো অন্ধকার দেখে।
চন্দ্র রুপি শের “এ আলী সাহেবের কথায় পুনম অবাক একি বলে লোকটা। যাই হোক ফিল করা গেলো লোকটাকে কিন্তু দেখা তাও আবার মনের সেটা আবার কেমন? পুনমের ভাবনার মাঝেই চন্দ্র পুনমের বাম হাত ধরে হাত উচু করে নিজের মুখস্রীতে রাখে।
পুনম চোখ বন্ধ করে ধীর হাতে হাত বুলায় চন্দ্রের পুরো মুখস্রী জুড়ে। বন্ধ নেত্র জোড়া দ্বারা মন ও মস্তিষ্কের অনুভব করতে থাকে শের “এ আলী সাহেবের উপস্থিতি চন্দ্রের কথা অনুযায়ী তাকে দেখতে থাকে মনের চোখ দ্বারা।
পুনম হাত বুলাতে বুলাতে চন্দ্রের ঠোঁটের কোণে থামতেই ঢোক গিলল চন্দ্র। ইশশ এই বেপরোয়া অনুভূতি থেকে এখনই পরিত্রান পেতে হবে। নাহলে একবার যদি চন্দ্র বেপরোয়া হয় তাহলে তার সকল ধৈর্যের বাধ ভাঙবে। পুনম ও ঠোটের কোণে হাত রেখে বেশ লজ্জা পেলো তবুও ঐ যে বেহায়া মন আরেকটু চায় হাতটা মনে হয় ইঞ্চি খানিকটা ও নড়ল না এরমধ্যেই চন্দ্র পুনমের হাত ধরে তাকে থামায়। পুনম এবার আরো লজ্জা পায়।
আর থামে না সেখানে দৌড়ে বের হয়ে যায় ওয়াশরুম থেকে। মিহি এতোক্ষণে ওয়াশরুমের দরজা বারি দিলেও দুইজনের একজনও দুনিয়ার খেয়াল ছিলো না। মিহি অবাক ভ্যাবলার মতো দাড়িয়ে থেকে ফের পুনমের পিছু নেয় ততক্ষণে পুনম পগার পার।।
বাসায় কোনো রকম পৌঁছে নিজের ঘরে যেয়েই দরজা আটকে দরজায় হ্যালান দিয়ে বসে পুনম হাতের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে এই হাতটা দিয়েই তো আজ পুনম তার প্রান সখাকে ছুয়েছে তার পুরুষালি মুখস্রী অনুভব করেছে।
হাতের উপর চুমু খায় পুনম এর মধ্যে মুক্তি এসে দরজা ধাক্কানো শুরু করে।
পুনম নিজেকে সামলে চটযলদি গেট খুলে।
— কিরে এতোক্ষণ কি করছিলি কতক্ষণ ধরে গেট ধাক্কিয়ে চলেছি,,
— ঐঐ তো ওয়াশরুমে ছিলাম আপু,,;
আমতা আমতা করে বলে পুনম। মুক্তি সন্দিহান নজরে চাইতেই পুনম কথা ঘুরিয়ে জিজ্ঞাসা করে তাকে কেনো ডাকছে
— ও দেখেছিস ভুলেই গেছি চল শপিং এ যাব,,,
— এখন শপিং কিন্তু কেনো??
— হ্যা দরকার,, পুনম কিছু বলতে নিলে তাকে বলতে না দিয়ে ওয়াশরুমে পাঠিয়ে দেয়। ফ্রেশ হয়ে আসতেই দেখে মুক্তি এখনো তার ঘরে
— আপু খিদে লেখেছে খেয়ে দেয়ে যাই,,
— আচ্ছা দুপুরে খাওয়া দাওয়া করেই বের হবো,,,
পুনম মিষ্টি হাসি দিয়ে মুক্তির সাথে নিচে চলে যায় খেতে। তার মনটা আজ খুব ভালো তাইতো ঠোঁটের কোণ থেকে হাসি সরছেই না।।
খাবার টেবিলে চার রমনী বসে খাচ্ছে এর মধ্যেই চাদনী বেগম বলল — হ্যারে পুনম তোর যা যা লাগবে কিনে নিবি। আর বিয়েতে কি লেহেঙ্গা পরবি নাকি শাড়ি,,,
পূর্ণিমায় বিলীন চন্দ্র পর্ব ৩৭
— বিয়ে কার বিয়ে চাচী মুক্তি আপুর বিয়ে না আরো দেরী,,,
— হ্যারে মুক্তির বিয়ে তো ঢের দেরী তার আগেই তোর চাচা পুত্র বধূ ঘরে তুলতে চায়। তাই তো শর্ট নোটিশ কিছুই করতে পারছি না মা তুই রাগ করিস না জানি হয়তো তোর বিয়ে নিয়ে অনেক এক্সপেকটেশন। তবে ইনশাআল্লাহ তোর আর চন্দ্রের রিসিপশনে সব পূরণ করব।
খাওয়া থেমে গেছে পুনমের এ কি বলল তার চাচী সে আর চন্দ্র ভাই কোনো মতেই না। আর তাকে না জানিয়ে সবাই বিয়ের তোড়জোড় ও শুরু করে দিয়েছে। পুনম মায়ের দিকে তাকায় তাকে দেখে মনে হচ্ছে তিনি সব জানেন। সবাই জানে অথচ তার মতামত কেউ একটাবার জানতেও চাইল না। ঢোক গিলে খাওয়া রেখেই নিজের ঘরে চলে যায় দৌড়ে।