ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ১৫
মিথুবুড়ি
_টিক
_টিক
_টিক
‘ টাইমারে অন্তিম সময় যখন ঘনিয়ে আসে ঠিক তখনই বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় বের-এয়ার হোটেলের বেজমেন্ট। কেঁপে উঠল চল্লিশ তলা বিশাল আকৃতির দালান। মিলিসেকেন্ডের মধ্যে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় পরিত্যক্ত বেজমেন্ট। বিস্ফোরক কেন্দ্রীক স্থান ছাড়া আশেপাশে তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি ছোট বোম বিধায়। অগ্নিকান্ড বিস্তৃত লাভ করার আগেই অটোমেটেড ফায়ার সেফটির স্প্রিঙ্কলার সিস্টেম থেকে পানি পড়তে শুরু হয়। ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণে আসতে থাকে পরিস্থিতি। হোটেল স্টাফরা দ্রুত পরিস্থিতি অনুকূলে আনার চেষ্টায় লেগে পড়ে। পুরো হোটেলে এনাউসমেন্ট করে দেওয়া হয় আতঙ্কিত না হবার জন্য৷ ‘
‘ বিস্ফোরণের সময় তাকবীর হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এলিজাবেথ কে বৃক্ষপটে চেপে ধরে। এলিজাবেথও তাকবীর বুকের অংশের শার্ট খামচে ধরে ছিল তখন । ভেবেছিল আজই হয়তো তাদের জীবনের অন্তিম দিন । যখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক এবং নিজেদেরও অক্ষত অনুভূত হলো তখন দুজনেই হতচেতন হয়ে ফিরে। হাতের বাঁধন আগলা করে তাকবীর। এলিজাবেথও চকিতে সরে আসে তাকবীরের বুক থেকে। কিছুটা লজ্জিত হলেও শরীর ছেড়ে দেয় মেঝেতে। আঁটকে রাখা নিশ্বাস এক দমে ছেড়ে হাঁপাতে থাকে।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘তাকবীর এদিকসেদিক তাকিয়ে কিছু খুঁজল। পরপরই শব্দ অনুসরণ করে বাইরে গিয়ে দেখতে পেল দরজার বাইরে একটা ছোট ডিভাইস রাখা। এটা থেকেই এতোক্ষণ টিক টিক শব্দ আসছিল। অমায়িক হাসি লেপ্টে থাকা চোয়ালে উদীয়মান হয় ক্রোধ। পা দিয়ে পিষে দেয় ডিভাইসটি। শক্ত চোয়ালে ভিতরে প্রবেশ করতেই ক্ষুব্দতার বারিধারা তলিয়ে যায় বহমান মন্থর শিথিলতায় এলিজাবেথের ঝরনার প্রবাহের মতো মাধুর্য ও কোমলতায় মোড়ানো মুখশ্রী দেখে। যা ঝরনার প্রবাহের মতো শীতল ও মুগ্ধকর এবং স্বস্তি এনে দেয় উতালপাতাল তরঙ্গে বাসিয়ে যাওয়া মন অশান্ত সাগরের খরখরে ওপার। ভোরের সূর্যের প্রথম কোমল আলোর মতোই, মায়াবী মুখ এক ধরনের নতুন আশা এবং আনন্দের প্রতীক নিয়ে এলিজাবেথের আগমন তাকবীরের শুকিয়ে খাঁ খাঁ হয়ে যাওয়া বুকে। ঠৌঁটে ফোঁটে ওঠে আবারো সেই অমায়িক হাসি।
” ওটা কি ছিল? ‘
” বোমা ব্লাস্ট হয়েছে। ”
‘ নেমে যাওয়া আতংক আবারো তিরতির করে উদিত হয় এলিজাবেথের অবয়বে। গলা কাঁপতে থাকে, বললো, ” কোথায়? ‘
‘ তাকবীরের অভিব্যক্তি অত্যন্ত স্বাভাবিক এবং গুরুগম্ভীর। অবিলম্বে আওড়ায়, ” এটা ছোট বোম ছিল। মাইক্রো চার্জ বলা হয় এটাকে। এই ধরনের বোমাগুলি খুব ছোট আকৃতির এবং বিশেষভাবে তৈরি করা হয়, যাতে একটি নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে প্রভাব ফেলে তাছাড়া আশপাশের তেমন কোনো ক্ষতি হয় না। চিন্তা কর না আমরা সেভ। ”
‘এলিজাবেথ যেন এখনো ঘোরের মধ্যেই পরে আছে। তাই মনের মধ্যে আর কোনো প্রশ্ন জাগল না। মস্তিষ্ক এখনো সেই বিকট শব্দ থেকে বের হতে পারেনি। তাকবীর রুমের অভিমুখে পা বাড়ালে পিছন থেকে তেড়ে আসে এলিজাবেথের অদ্ভুত প্রশ্নবান।
“আমরা কি এখনো বেঁচে আছি? ”
‘পা থামে তাকবীরের। বুক ফেটে হাসি আসে। তবে হাসলো না। বুঝতে পারল এলিজাবেথ এখনো আতংকের মাঝেই রয়ে গিয়েছে। সামনে এগিয়ে যেতে যেতে সবিনয়ে প্রত্যুত্তর করল, ” জান্নাত বা জাহান্নাম কোথাও-ই বের -এয়ার হোটেল নেই এলোকেশী। ঘোর থেকে বের হও।”
‘বের হবার প্রন্থা হিসেবে নিজের হাতে নিজেই চিমটি কাটলো এলিজাবেথ। চোখ মুখ বিকৃত করে ওঠে দাঁড়ায়। ছুটে যায় রুমে। দেখতে পায় তাকবীর তার জামাকাপড় লাগেজে রাখছে। এলিজাবেথ ছুটে গিয়ে বাঁধা দিল।
“আরে আরে কি করছেন? ”
‘হাত থামে না তাকবীরের। কাজে অটল থেকে বলল,
“আমরা এখনই এই হোটেল থেকে চলে যাব । ফ্রেস হয়ে আসো আমি সব গুছিয়ে নিচ্ছি। এই জায়গা আর এক মুহুর্তের জন্যও সেভ নয় আমাদের জন্য। গো ফাস্ট। ”
‘এলিজাবেথ আর কথা বাড়ায় না। তাকবীরের কথা মত ফ্রেস হতে চলে যায়। তাকবীরের ললাটের মধ্যেভাগ দুই ভাগে বিভক্ত হয় সুক্ষ্ম চিন্তার ভাঁজে।
‘হোটেল বের-এয়ারের অপজিট বিল্ডিংয়ের উপর কাঁচের জানালার সামনে দাঁড়িয়ে আছে এক বিধ্বংসী মানব। যেখান থেকে শহরের মনোরম দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। ব্যস্ত শহরের মানুষ গুলো কিভাবে ছুটে চলেছে, ধুলো উড়িয়ে চলে যাওয়া নামি-দামি গাড়িগুলো। তবে পৈশাচিক আত্মা মানবের শূন্য দৃষ্টি শুধু হোটেল বের-এয়ার থেকে এইমাত্র বেরিয়ে যাওয়া একটা রোলস রয়েলস গাড়ির দিকে। গাড়িটি হোটেল তৃসীমানা পেরিয়ে যেতেই অট্টহাসিতে ওঠে মানবটি। কাঁচের গ্লাস গলিয়ে ভিতরে দূত্যি ছড়িয়ে দিচ্ছে আলোক রশ্মি। সেই সূর্যের তির্যক রশ্মি গুলো এসে আঁচড়ে পড়ছে রিচার্ডের শরীরে। রিচার্ড যেন আলো বিস্তরণে বাঁধা দিচ্ছে তাদের। তবুও তারা বাঁধাহীন, শরীরের পাশ ঘেঁষে ঠেলেঠুলে প্রবেশ করছে ভিতরে। যার ফলস্বরূপ পিছন থেকে রিচার্ড কে সূর্য দেবতার মতো লাগছে।
‘পিছনেই ন্যাসো, লুকাস, আর আলাদিন দাঁড়িয়ে আছে মলিন মুখে । তিন জনেই ঘুমে ঢলছে। রিচার্ডের মতো তারাও সারারাত জাগ্রত ছিল। কালো জ্যাকেট ও প্যান্টে রিচার্ড কে বরাবরের মতোই গম্ভীর এবং রহস্যময় করে তুলেছে। তবে এই লুকে পিছন থেকে মনে হচ্ছে কোনো বড় কোম্পানির সিইও দাঁড়িয়ে আছে, প্রজেক্টের দুশ্চিন্তায় মত্ত হয়ে আছে। তবে তেমনটা মোটেও না। ঠোঁটের আগায় জড়ো হাসিগুলো জাল বুনছে ষড়যন্ত্রের। রিচার্ড চোখ বন্ধ করে কিছু ভাবছে এবং মুখে চওড়া হাসি, যেন অট্টহাসিতে ফেটে পড়ছে। শরীরের ভঙ্গি এবং অট্টহাসি এক ধরনের গোপন বিজয়ের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ-যেন সে তার নিজের অর্জনে অথবা নিজের ভেতরের কোনো নৃশংস উন্মাদনার মাতোয়ারার। শক্ত চোয়ালে বিরবির করল,
“ইউ হ্যাভ টু রিগ্রেট ফর ইওর ডিসিশন।”
‘রিচার্ড পিছন ঘুরে। তা দেখে আলাদিন এক প্রকার দৌঁড়ে আসে। আগ বাড়িয়ে জানতে চাইল,” বস ঘুমাবেন তো? আপনি বললে এখানেই রুম বুক করছি।”
‘ রিচার্ডের লম্বা লম্বা পায়ের স্বতঃস্ফূর্ত কদম। গুরুগম্ভীর কণ্ঠস্বর, বলল, ” আন্ডারগ্রাউন্ডে যাব। নতুন কি মা/ল বেরিয়েছে একটু দেখে আসি।”
‘ রিচার্ডের সাথে নিম্বাকৃতি আলাদিনের ছুটতে হচ্ছে। চেহারা মলিন, স্মিত স্বরে বলল, ” এখনই যেতে হবে? ইয়ে মানে কাল থেকে ঘুম নেই আপনার। এতো দূর জার্নি করে আসলেন। ”
‘পায়ের গতিয়ে কমিয়ে থামে রিচার্ড। শক্ত চোখে তাকাল আলাদিনের দিকে। রিচার্ডের শশব্যস্ত বিদুৎ বেগী চাহনি দেখে চোয়াল ঝুলে গেল আলাদিনের। রিচার্ডের চোখেমুখে কাঠিন্যোতার সঙ্গে চোয়াল ক্রোধে মটমট করতে থাকে। লঘু-দেহি আলাদিনের উপর ঝুঁকে চিবিয়ে চিবিয়ে বলে, ” আমার লাইনে থাকতে হলে বিশ্রাম জিনিসটা কি তা ভুলে যেতে হবে। সুখ, দুঃখ বর্জন করে নিজেকে পাথর বানাতে হবে, যেন মনে কখনো ব্যাথা না লাগে। অক্লান্ত পরিশ্রম করে মানষিক ক্লান্তি আর একগুয়েমি দূর করতে হবে ৷ এতো পরিশ্রম করতে হবে যে কখনো ক্লান্তি অনুভূত না হয়। আবেগহীন বা সংবেদনশীলতাহীন হয়ে মানব শরীর কে যান্ত্রিক মেশিনে কনভার্ট করতে হবে। গট ইট? ”
‘পরপর তিনবার শুকনো ঢোক গিলে আলাদিন। খৈয় হারিয়ে তড়িঘড়ি করে কয়েকবার মাথা ঝাকায়। ” ফ্রেস হয়ে আসছি “। বলে রিচার্ড চলে যায়। ফোঁস নিশ্বাস ছাড়ে আলাদিন। তাকাল ন্যাসো আর লুকাসের দিকে। দুজনের মধ্যে কোনোরকম হীনমন্যতা দেখা গেল না। খুবই স্বাভাবিক। আলাদিন এবার হতাশার দীর্ঘশ্বাস ফেলে। খুব করেই বোধগম্য হয়ে যায় যান্ত্রিক মানবের সাথে এরাও যান্ত্রিক মেশিনে রুপান্তরিত হয়ে গিয়েছে।
“এই আলু। ‘
‘ক্ষিপ্ত হলো আলাদিন। তবুও তা বাইরে প্রকাশ হতে দিল না। শূন্য অভিব্যক্তিতে তাকায় লুকাসের দিকে। লুকাস পূর্ণিমার চাঁদের মতো ঝকঝকে চব্বিশ কপাটি বের করে এগিয়ে আসছে তার দিকে। আলাদিন ধরাশায়ী গলায় জবাব দিল, ” আমাকে এই নামে ডাকা বন্ধ করুন। ”
“তোকে তো আমি আলুই ডাকব। এইবার যা হবার হোক। তোর নামটা খুবই ভালো রে আলু ”
“মানে?”
“কারণ আলু হচ্ছে রয়াল সবজি। শীত,গ্রীষ্ম, বর্ষা কখনোই ছেড়ে যায় না। ”
‘চোয়াল শক্ত হল আলাদিনের। দাঁতে দাঁত পিষতে পিষতে রুষ্ট গলায় বলল, ” প্রথম, প্রথম প্রেমে পড়লে যেমন গুলশান কেও আমেরিকা মনে হয় তেমনি আপনারও আলাদিন কে আলু মনে হচ্ছে। ”
“শা*লা তুই কি আমাকে অপমান করলি?”
‘জিভ কাটে আলাদিন, তড়িঘড়ি করে উত্তর দিল, ” না না সেই সাধ্য আমার আছে কি। ”
‘লুকাস তেরছা নজরে একপলক ন্যাসোর দিকে তাকাল। ন্যাসো বিরক্তিমাখা মুখ নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে। ন্যাসো অত্যন্ত ধৈর্যবান একজন। সবসময় সবকিছু ঠান্ডা মাথায় অবজার্ভ করবে। লুকাস আবারো দৃষ্টি ফেরায় আলাদিনের দিকে। ছোট সাইজের আলাদিন কে প্রথম দিন থেকেই তার কাছে মোটু পাতলুর জনের মতো লাগত। চেহারা আকৃতি, গঠনও কিছুটা তেমনই। এই তিক্ততার মাঝেও একটু এন্টারটেইন করা যায়। এতে মন্দ হয় না।
“আলু।”
‘বিরক্তে চ’ উচ্চারণ করে প্রত্যুত্তর করল আলাদিন,
“হ্যাঁ।”
‘ঠৌঁট কামড়ে হাসল লুকাস। পরপর গলায় গাম্ভীর্য এনে বিটলামি করে বলল, ”
“মেজাজ খারাপ?”
“প্রচুর ঘুৃম পাচ্ছে। ”
‘লুকাস ফেইক হাম তুলে মুখের সামনে টুরি বাজিয়ে বলল, “আমারও।
থেমে, গুরুগম্ভীর গলায় অপ্রত্যাশিত হাস্কি ভয়েসে বলল,
” I am depressed
-You are depressed
-Let’s get undressed
‘ নিস্তব্ধ কক্ষে যেন বোমা বিস্ফোরণ হলো এবার । ন্যাসোর চোয়াল ফাঁক হয়ে যায় বিস্ময়ে। আলাদিন এবার সংযম হারায়, হারায় ভর,ভয়। লুকাসের দিকে শক্ত চোখে তাকিয়েও আবার কি মনে করে দৃষ্টি পরিবর্তন করে। তুষ্ট হোসে বলল,
” আপনার কি মনে হয় আমেরিকায় এতো ফর্সা ফর্সা মেয়ে রেখে আপনার মতো কালো মানিকের কাছে যাব? সরি ব্রো আই’ম নট ইন্টারেস্টেড ইন ব্ল্যাক। ”
‘ লুকাসের চোখ বড় বড় হয়ে যায়। রঙ নিয়ে টিটকারি সে একদমই সহ্য করতে পারে না। তেড়ে গেল আলাদিনের কাছে। সাড়ে চার ফুটের আলাদিন কে শক্ত দানবীয় এক হাত দিয়ে শার্টের কলার চেপে ধরে উপরে তুলে ফেলে । আলাদিনের শরীর শূন্যে। চোখেমুখে স্পষ্ট আতংক। গলায় দাগ বসে যাচ্ছে। লুকস আগুন বর্জন করল কথায়, চোখে জ্বলছে ক্রোধের অগ্নি।
” আমাকে কালো বলছিস শা/লা। জানিস আমাদের তামিল নাড়ুতে এটা ঐতিহাসিক রঙ। যুগ যুগ ধরে বিস্তার হচ্ছে আসছে সবার মাঝে। ”
‘ আলাদিনের চোখ প্রায় উল্টে যাবে এমন ভাব। পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে এবার ন্যাসো এগিয়ে এল। লুকাসের হাত থেকে আলাদিন কে ছাড়ায়। আলাদিন নিচে পড়ে গলা ধরে কাশতে থাকে। নিশ্বাস নিতে না পারার জন্য সমস্ত শরীর অসাড় হয়ে আসছে। হাঁপাতে থাকে। লুকাসের তবুও ক্রোধ কমে না।
” জানিস আমার গায়ের এই রঙ নিয়েও কত মেয়ে আমাকে প্রপোস করেছে। ”
” ওটা জাতীয় পুরুষ্কার পাওয়ার পর লোকা।”
‘ থতমত খেয়ে যায় লুকাস। থমথমে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ন্যাসের দিকে,বলল ” ন্যাসো তুমিও?
‘ ঘাড় ঘুরিয়ে ঠৌঁট কামড়ে হাসল ন্যাসো। তবে গুরুগম্ভীর মুখশ্রীতে তা স্থায়ী হলো না বেশিক্ষণ। অতঃপর দু-জনের দিকে তাকিয়ে গমগমে গলায় বললো, ” নিজেদের মধ্যে এভাবে ঝগড়া করার কোনো মানে হয় না। বস যে কাজ দিয়েছে তা কর মরতে না চাইলে “। বলে হনহনিয়ে চলে যায় ন্যাসো। তপ্ত শ্বাস ফেলে লুকাস। সামনে এক পা বাড়িয়েও আবার পিছন ফিরে তাকালো নিচে পড়ে থাকা আলাদিনের দিকে। ঠৌঁট গোল করে গরম নিশ্বাস বের করে পিছন ঘুরে। দূর্বল আলাদিন কে কাঁধে তুলে নিয়ে আবার হাঁটা দিল সামনে।
‘লস এঞ্জেলসের একটা চিপা গলি থেকে বেরিয়ে খোলা রাস্তায় আসল রিচার্ডরা। ভিতরে গাড়ি নেয়া যায় না রাস্তা সরু তাই । ওরা এখানে গাড়ি রেখে ভিতরে গিয়েছিল। রির্চাডের পরণে সবসময়ের মতো একটি কালো স্যুট , এবং স্যুটের কলারের অংশও কালো , যা ভিতরের কালো রঙের শার্টের সাথে তীব্র কনট্রাস্ট তৈরি করেছে। এই রঙের বৈপরীত্য রিচার্ডের চরিত্রকে আরও রহস্যময় এবং জটিল করে তুলে সবসময়ের মতো। কালো শার্ট, কালো বেল্ট, এবং কালো প্যান্টের সাথে ওর লুকটি পুরোপুরি ছিমছাম এবং মার্জিত, যা রিচার্ডের চরিত্রে উচ্চপর্যায়ের ভিলেনের লুককে পূর্ণতা দিতে সক্ষম ।গাম্ভীর্যতায় মোড়ানো ঠান্ডা এবং গভীর দৃষ্টি মানসিকতার গোপন শক্তি ইঙ্গিত দেয় রিচার্ডের। কপালের দু’পাশ দিয়ে চুলগুলো বিছিয়ে আছে। এলোমেলো থাকার কারণ আজ কানের নিচে ধনুকের ফলা ট্যাটু টি সুস্পষ্ট উদীয়মান।
‘হঠাৎ করেই রিচার্ডের মস্তিষ্ক অজানা কারণে কোনো কিছু একটার ইঙ্গিত দেয়। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কিছুর আভাস দিচ্ছে। রিচার্ড তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আশেপাশে। হঠাৎ করে একটা অর্ধ নগ্ন মাতাল মেয়ে রাস্তার পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় ঢুলতে ঢুলতে রিচার্ডের উপর এসে পড়ে । সঙ্গে সঙ্গে রিচার্ডের চেহারায় হিং*স্রতা ফুটে উঠল। থমকে যাওয়া মস্তিষ্ক টা ফিরে গেলো তার চিরাচরিত পৈশাচিক আত্মায়। ধাক্কা মেরে মেয়েটিকে গাঁ থেকে ছুঁড়ে ফেলে। কোটের ভিতর থেকে গান বের করে মেয়েটির দিকে তাক করে। ট্রিগারে প্রেস করতে করতে হিংস্র*তা প্রভাবে বিড়বিড়িয়ে ওঠে পৈশা*চিক, সাই*কো মস্তি*ষ্ক।
” ইউ ব্লা*/ডি বি/*চ। ”
‘ পিছন থেকে ছুটে আসে মেয়েটির বয়ফ্রেন্ড। সেও ডাঙ্ক, তবুও কন্ট্রোলে। রিচার্ডের গান পয়েন্টের সামনে দু’হাত মেলে দাঁড়িয়ে বলতে থাকল, ” হেই ম্যান, হেই। ড্রপ দ্য গান। শি ইজ মাই গালফেন্ড। সরি ব্রো। ”
‘ ব্যাপারটা এত দ্রুত ঘটেছে যে লুকাস ন্যাসো দু’জনেই হতভম্ব। আলাদিনের চেহারা দেখার মতো হ’য়ে আছে। ভয়ে ভিতরে চুপসে গিয়েছে একদম । এই ভরা প্লেসে মার্ডার করা মানেই হট নিউজ। আর নিউজে নিউজে খবরটা নিশ্চয়ই লাগ ভেগাস যাবে। যদি কোনোভাবে মাফিয়া লিডার অ্যালেক্সের কাছে রিচার্ড আমেরিকায় আসার খবর যেতে পারে তাহলে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধ হতে দেরি নেই। আলাদীনের বডিগার্ডরা সংকীর্ণ হয়ে তাকিয়ে আছে তার পানে। হঠাৎ কি মনে করে রিচার্ড গান নামিয়ে ফেলে। বন্দু/কের সরু নলের ইশারায় ছেলেটিকে বলল চলে যেতে। ছেলেটি এক মুহূর্ত ও সময় ব্যয় করে না। মাতাল মেয়েটিকে তুলে সঙ্গে সঙ্গে স্থান ত্যাগ করে। স্বস্তির নিশ্বাস ছাড়ে আলাদিন। রিচার্ডের চোয়াল ক্রোধে মটমট করছে। খোলা উতপ্ত আকাশের নিচে উতপ্ত খরখরে মরুভূমির মতো গালের মধ্যে ভাগের কাটা দাগ রোদের সাথে যেন চুক্তিতে আবদ্ধ হয়েছে। দু’জনেই চকচক করছে। গাঁ থেকে কোট খুলে পাশের ওয়েস্টবিনে ফেলে দিল রিচার্ড।
‘ ন্যাসো গিয়ে ড্রাইভিং সিটে গিয়ে বসল। লুকাস ডোর খুলে দেয় রিচার্ডের জন্য। গাড়িতে উঠতে গিয়েও থেমে যায় রিচার্ড। তার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বলছে কোনো গড়বড় আছে। লুকাসের দিকে তাকিয়ে চোখে চোখে কিছু একটা বুঝাল রিচার্ড। লুকাস মুখে কোনো প্রত্যুত্তর না করে শুধু চোখের পলক ফেলল। অতঃপর নিজে আগে গিয়ে গাড়িতে বসল। ন্যাসো লুকাস কে রিচার্ডের জায়গায় বসতে দেখে ভ্রু কুঁচকে পিছন তাকালে রিচার্ড একই ভাবে ন্যাসোকেও কিছু বুঝায়। পরপর সুযোগ বুঝে নিজে গাড়ি থেকে দূরে সরে গিয়ে দাঁড়াল রিচার্ড ।
‘আলাদিন কিছুই বুঝতে পারছে না ওদের কর্মকান্ড। দূর থেকে দাঁড়িয়ে শুধু বোকার মতো তামাশা দেখছে। রিচার্ড দূরে সরে যেতেই অপর পাশের ডোর দিয়ে ন্যাসো, লুকাস লাফ দিয়ে বেরিয়ে গেল। ওরা দূরে গিয়ে ছিটকে পরতেই গমগমে ব্যস্ত রাস্তা প্রকম্পিত হল। গাড়ির পার্টস গুলো শূন্য উড়তে থাকে। বিস্ফোরণের সাথে সাথে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। ধোঁয়া কুন্ডলী গুলো স্বচ্ছ আকাশে আঁধার নামিয়ে আনে। বিস্ফোরণের শব্দের তীব্রতায় আতঙ্কিত হয় সকলে এবং আশপাশের পরিবেশ কেঁপে উঠল। আশেপাশের মানুষ ও অন্যান্য যানবাহনও গুলো দ্রুত নিরাপদ দুরত্ব বজায় রেখে দূরে সরে যায়। মুহুর্তের মধ্যে ছিমছাম পরিবেশ রণক্ষেত্র পরিনত হল।
‘ রিচার্ড শিকারী দৃষ্টি এদিকসেদিক তাকাতে থাকে। সুগভীর, নিকষ সমুদ্র নীল চোখ হতে অগ্নিশিখা বিচ্ছুরিত হচ্ছে। হঠাৎ চোখ আটকায় সামনের একটি বাইকের দিকে। রিচার্ডের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার উপর যেতেই তৎক্ষনাৎ হাতে থাকা ছোট রিমোট জ্যাকেটের ভিতর ঢুকিয়ে বাইক স্টার্ট দেয় লোকটি। লুকাসেরও কালো জামা হওয়ায় লোকটি ভেবেছিল লুকাসই রিচার্ড। লুকাস যখন গাড়ির ভিতর ঢুকে তখনই সামনে দিয়ে একটা ট্রাক যায়, যার কারণে দেখতে পায়নি রিচার্ড যে পিছনে সরে গিয়েছিল। কাজ হয়েছে ভেবেই রিমোটে প্রেস করে আর ব্লাস্ট হয়ে যায়। কিন্তু সে জানত না তার আগেই যে লুকাস আর ন্যাসো গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিল এবং রিচার্ড সকল প্ল্যান বুঝে গিয়েছিল। এটাও ভাবতে পারেনি রিচার্ডের বাজপাখি নজরে পড়ে যাবে।
‘ আলাদিন যেন এখনো ঘোরের মধ্যে আছে। তার ঘরের মধ্যে দিয়েই রিচার্ড পাশের একটি ক্যাফের সামনে থেকে বাইক নিয়ে ছুটে ঐ বাইকটির পিছনে। ন্যাসো, লুকাস রিচার্ডের পিছু নেবার আগেই রিচার্ড ধুলো উড়িয়ে মুহূর্তের মধ্যে স্থান ত্যাগ করে। আলাদিন নিজেকে ধাতস্থ করে পরপর তিনবার ঢোক গিলে গিয়ে দাঁড়াল ন্যাসোর পাশে। চুপসানো গলায় বলল, ”
” উনি এতো রাফলি বাইকও চালাতে পারে? ”
‘ ন্যাসো আলাদিনের কথায় ঠৌঁট বাঁকিয়ে হাসল, পরপর বাষ্পের ন্যায় বাইকের ইঞ্জিন থেকে নির্গত ধোঁয়ার দিকে তাকিয়ে দাপুটে গলায় বলল, ”
” হি ইজ এ্যন অল রাউন্ডার। ”
‘ক্যালিফোর্নিয়ার প্রশস্ত ও মসৃণ হাইওয়ে ধরে দুটি বাইক বেসামাল গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। স্পিড এবং কন্ট্রোল দেখে বুঝা যাচ্ছে দুজনেই খুবই দক্ষ। তাদের প্রতিটি বাঁক, প্রতিটি ওভারটেকিং, এবং প্রতিটি গতি নিয়ন্ত্রণে প্রকাশ পাচ্ছে তাদের দক্ষতা। দুই বাইকের গতি এবং গর্জনরত ইঞ্জিনের শব্দ পুরো পরিবেশে উত্তেজনা ছড়িয়ে যাচ্ছে। রিচার্ডের বাইকে তখন স্পিড মিটারের কাটা দেখা যায় দু’শ ছাড়িয়ে। ক্ষুধার্ত প্রাণীর মতো ছুটছে অপর বাইকটির পিছন। সামনের বাইকটার যখন বাইকের রিয়ার ভিউ মিরর দিয়ে পিছনে ধৈউয়ে আসা রিচার্ডকে দেখল, বুক শুকিয়ে গেল তার, বাইকের স্পিড বাড়ায় আরো। বারবার মিরর দিয়ে পিছনে দেখতে থাকে। সে জানে একটু ভুল করলেই প্রতিপক্ষ রিচার্ড তাকে ধরে ফেলবে এবং আজই তার মৃত সুনিশ্চিত। তাই লোকটা দ্রুত বাঁক নেয় এবং রাস্তার প্রতিটি অংশকে কাজে লাগিয়ে নিজেকে সামনে রাখার চেষ্টা করে যাচ্ছে।
‘রিচার্ডও শিকার ছেড়ে দেওয়ার লোক না। ক্রমাগত গতির ওপর চাপ দেয়, ইঞ্জিনের গর্জন আরও তীব্র হতে থাকে, এবং প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগিয়ে সামনে থাকা বাইকারকে ধরার চেষ্টা করে। রিচার্ডের ড্রাগন এবং ইতালিয়ান অক্ষরে ট্যাটু করা হাতের খপ্পরে বাইকের গ্রেয়ার। লোকালয় ছাড়িয়ে বাইক গুলো ছুটে চলছে পাহাড়ি ঢালু পিচঢালা রাস্তায়। রাস্তার ওঠা-নামা, বাঁকানো অংশ, এবং সামনের দিক থেকে আসা অন্যান্য মালবাহী ট্রাকগুলো তাদের এই চোর পুলিশের রেসকে আরও কঠিন করে তোলে। সামনের বাইকার টি যত নিজেকে রক্ষা করার চেষ্টায় স্পিড বাড়িয়ে ছুটতে থাকে বাঁচার আশায়, রিচার্ডেরও সেখানে সমস্ত মনোযোগ একটি সুযোগ খুঁজে তাকে ধরার জন্য। হেরে যাওয়া পাত্র রিচার্ড নয়।
‘নিজের শিকারকে পাতাল থেকে হলেও খুঁজে বের করে এনে নৃশংস মৃত্যু উপহার দিবে। হাইলি মডিফাইড বাইক হওয়ায় টাংকির উপর ঝুঁকে চালাতে হচ্ছে। যার ফলের বাতাসের সকল ঝাপটা বুকের মধ্যে পড়ছে । বাতাসের তোড়ে রিচার্ডের শার্টের উপরের কয়েকটি বোতাম ছিরে যায়। এবং কলারের দুইপাশের অংশ বার বার এলোমেলো ভাবে উড়ে ঝাপ্টে বারি খাচ্ছে প্রশস্ত বুকে। আক্রমনাত্মকভাবে ছুটে চললেও এই লুকে খুবই আকর্ষণীয় লাগছে গ্যাংস্টার বসকে। ঝুকিপূর্ণ পাহাড়ি রাস্তায় বার বার পিছন ফেরার জন্য হঠাৎ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সামনের বাইকটি খাদের নিচে পড়ে যায়।
‘ খাদের কিনারায় গিয়ে জোরে ব্রেক কষে রিচার্ড। স্পিড হাই থাকায় হঠাৎ ব্রেক কষায় বাইকের পিছনের চাকা উপরে উঠে যায়। রিচার্ড খুবই দক্ষতার সাথে তা সামলে নেয়। মাথা থেকে হেলমেট খুলে মাথা ঝাঁকিয়ে এলোমেলো চুলগুলো কপাল থেকে সরিয়ে নিল। একটু সামনে এগিয়ে গিয়ে খাদের দিকে তাকালে দেখতে পায় লোকটি এখনও নিচে পরেনি। একটু ছোট পাথরের নিথর দেহ ঝুঁলে আছে। পাথরের সরু অংশ পেট ছিঁ/ড়ে ভিতরে ঢুকে গলগল করে রক্ত/পাত হচ্ছে। মাথায় হেলমেট থাকার কারণে অবয়ব অস্পষ্ট এখনও। রিচার্ড লোকটার নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে ঠৌঁট এলিয়ে হেঁসে চলে আসল। মাথায় হেলমেট দিয়ে বাইক স্টার্ট দেয় আবারো । সে চাইলে লোকটাকে বাঁচিয়ে জানতে পারত এর পিছনে মাস্টারমাইন্ড কে। কিন্তু তার একমাত্র উদ্দেশ্যই ছিল তার দিকে হাত বাড়ানোর হাতটা ভেঙে মোচড়ে দেয়া। বুঝিয়ে দেওয়া নিজের স্থান, যে কার দিকে হাত বাড়িয়ে ছিল। তবে রিচার্ডের আচরণে একটা জিনিস এখনও অস্পষ্ট, এতো মাইল ছুটে এসেও আসল মাস্টারমাইন্ড কে এটা না জেনে এতো সহজ মৃত্যু দিল কীভাবে? তাহলে কি সে জানে আসল মাস্টারমাইন্ড কে,,,,,?
‘ ভোরের আলো ধীরে ধীরে আকাশে ছড়িয়ে পড়ছে, সূর্যের সোনালি রশ্মি পাহাড়ের চূড়ায় এবং সমুদ্রের ওপর পড়ে এক স্বর্গীয় পরিবেশ তৈরি করেছে ক্রমশ। আকাশে হালকা গোলাপি, কমলা এবং নীল রঙের মিশ্রণ সকালকে আরও মনোরম করে তুলে। বাতাসে হালকা ঠান্ডা ভাব থাকলেও সূর্যের নরম উষ্ণতার মিষ্টি বাতাস এসে আঁচড়ে পড়ছে এলিজাবেথের শরীরে। বেঘোরে ঘুমাচ্ছে সে। কাল হোটেল চেঞ্জ করে নতুন হোটেলে উঠেছে তারা। নতুন জায়গায় এডজাস্ট করতে পারছে না এলিজাবেথ। রাতে ঘুমিয়েছে সেই শেষ রাতে। সূর্যি মামার মিষ্টি রোদ গুলো পর্দার ফাঁক গলিয়ে ভিতরে এসে সোনালী দূত্যি ছড়াচ্ছে ভিতরে । পিটপিট করে চোখ মেলে এলিজাবেথ। আড়ম্বরপূর্ণ ঘুম ভেঙে মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে নরম বিছানায়। হঠাৎ হাত যায় বালিশের পাশে। হাতে কিছু একটা লাগে, জিনিসটি হাতে তুলে নিল এলিজাবেথ। আদৌ আদৌ চোখ মেলে তাকিয়ে দেখে এক টুকরো কাগজ ভাঁজ করা। ভাঁজ খুলতেই ঘুম ছুটে যায় এলিজাবেথের।
ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ১৪
” ঘুমালে তোমাকে আরো বেশি সুন্দর লাগে মাই ফা*কিং ডার্ক রেড। ”
‘ এলিজাবেথের চিৎকারে পাশের রুম থেকে ছুটে আসে তাকবীর। দরজার সামনে এসেই দেখতে পায় এলিজাবেথ দু’হাতে কান চেপে হাঁটুতে মুখ গুঁজে হাঁপাচ্ছে। পুরো শরীর কাঁপছে। তাকবীর ছুটে গেল এলিজাবেথের কাছে। এলিজাবেথ কোনো কথা বলছে না, অদ্ভুত ভাবে কাঁপছে। শুধু আঙুল তুলে সামনে দেখাল। সামনে তাকাতেই চোয়াল শক্ত হয়ে আসে তাকবীরের। দেয়ালে রক্ত দিয়ে লেখা _
” Regret, Regret, Regret, Regret, Regret ”