মন ফাগুন পর্ব ৩৪

মন ফাগুন পর্ব ৩৪
তাইয়্যেবা বিনতে কেয়া

নিহান একটা লম্বা নিশ্বাস ছাড়ে তারপর জামশেদ তালুকদারের সাথে গ্রামের উন্নয়নের বিষয়ে কথা বলতে থাকে। অনেক সময় অতিক্রম করার পর জামশেদ সাহেব নিহানকে বলে –
“- তাহলে মন্ত্রী সাহেব আপনি যেহেতু এই গ্রামে থেকে উন্নয়ন করতে চান তাহলে সেটা গ্রামের মানুষের জন্য বেশ ভালো হবে। তবে আপনার কাজের জন্য বেশ কয়েকদিন সময় লাগবে ততদিনে এই বাড়িতে থাকতে পারবেন আপনি।শহরের মানুষ আপনারা তাই গ্রামের অন্য বাড়িতে হয়তো মানিয়ে নিতে পারবেন না “।
নিহান কথাটা শুনে অনেক খুশি সে নিজেই বলতো জামশেদ সাহেবকে এই বাড়িতে থাকার কথা এখন যখন ওনি বলছেন তাহলে সেটা তার জন্য ভালো হলো। আর মিহির কাছাকাছি থাকতে চাই সে আর মিহির বিয়ে ভাঙতে হলে এই বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া খুব জরুরি। নিহান বলে –

“- ধন্যবাদ স্যার আপনাকে। আপনার বাড়িতে থাকতে দেওয়ার জন্য তবে আমার নাম নিহান আপনি আমার নাম ধরে ডাকতে পারেন। বয়সে আমি আপনার থেকে অনেক ছোট “।
“- হুম বয়সে আপনি অনেক ছোট কিন্তু সম্মানে বড়ো। এতো অল্প বয়সে একজন মন্ত্রী হওয়া সহজ বিষয় না তাই আপনাকে সম্মান করা উচিত “।
“- স্যার সত্যি আপনার কথা অনেক সুন্দর তবে আমি আপনার ছেলের বয়সী। বাবার কাছে ছেলের কখনো সম্মানে বড়ো হয় না শুধু ছেলে হয়। তাই আপনি আমাকে নাম ধরে ডাকবেন নিহান বলে “।
জামশেদ তালুকদার বেশ খুশি হয় নিহানের এইরকম আন্তরিক আর মিশুক ব্যবহার দেখে সত্যি ছেলেটা দারুণ। শহরের এতো বড়ো একজন মন্ত্রী হয়ে ও সকলে সম্মান করতে যানে আর ওর মনে কোনো অহংকার নাই বিষয়টা মুগ্ধকর জামশেদ তালুকদার বলে –

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“-পিশু নিহানকে তার রুম দেখিয়ে দেয়। আর নিহান যদি কোনো সমস্যা হয় তাহলে অবশ্যই আমাকে জানাবে “।
নিহানের যোনো হাতে আকাশের চাঁদ পেয়ে গেছে তার খুশির আর সীমা নাই। কিন্তু মিহি তার শরীর রাগে ফুঁসতে থাকে ইচ্ছে করছে এখন নিহানকে নিজের হাত খুন করতে কিন্তু সেটা মিহি বিধবা হয়ে যাবে। মিহি ব্যাগের থেকে জামা কাপড় বের করে ওয়াশরুমে চলে যায় ফ্রেশ হওয়া জরুরি আর মাথা ঠান্ডা করা ও। নিহানকে পিশু তার রুম দেখিয়ে দেয় নিহান পিশুর সাথে কথা বলতে চেয়েছে কিন্তু পিশু বেশ গভীর প্রয়োজনের চেয়ে অতিরিক্ত কিছু বলে নাই।
নিহান রুমে আসে এরপর ব্যাগ রেখে চারপাশের সবকিছু ভালো করে খেয়াল করে রুমটা বেশ সুন্দর পরিপাটি করা। নিহানের রুমটা বেশ পছন্দ হয়েছে তাই সে খুশি মনে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়। সেখান থেকে ফ্রেশ হয় বাহিরে এসে দেখে মিহি তার সামনে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিহান একটা শুকনো ঢুক গিলে তারপর বলে –

“- মিহি আপনি এই রুমে কি করছেন? দেখুন খুব কষ্ট করে সকলকে মিথ্যা কথা বলে এই বাড়িতে থাকার জায়গা পেয়েছি। এখন যদি সবাই সত্যি কথা জানতে পারে তাহলে কিন্তু শশুড় মশাই আমাকে খুন করে ফেলবে।
নিহানের এইসব কথা শুনে মিহির রাগ আরো বেড়ে যায় তার ভাবতে অবাক লাগে। এইরকম একটা ভিতুরডিম না কি একজন মন্ত্রী আর সে না কি মিহির বর মিহি গিয়ে সোজা নিহানের শার্টের কর্লার চেপে ধরে আর রাগী কণ্ঠে বলে –
“- নিহান আপনার শশুড় কি খুন করবে আপনাকে আমি আগে আপনাকে খুন করব। কোনো আপনি আব্বুকে বললেন না আমি আপনার বউ দুইমাস আগে আমাদের বিয়ে হয়েছে মিথ্যা কোনো বললেন। যখন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে গুছিয়ে মিথ্যা কথা বলছিলেন আপনি ইচ্ছে করছিলো আব্বুর হাতে থাকা বন্ধুকটা দিয়ে আপনার মাথায় গুলি করে দেয় “।

মিহির রাগ দেখে নিহান বুঝতে পারে তার কপালে দুঃখ আছে বাবাকে সত্যি বললে গুলি করে মারবে তাকে। আর মেয়েকে মিথ্যা কথা বললে গুলি করে মারতে চাই এই বাবা মেয়ে দুইজনে গুন্ডা কার পরিবারে যে বিয়ে করলো সে সেটক উপর ওয়ালা জানে। কিন্তু এখন মিহিকে শান্ত করা দরকার তাই নিহান বলে –
“- মিহি বিশ্বাস করুন আমি সত্যি কথা বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু পরিস্থিতি এমন হয়ে গিয়েছিলো যার কারণে মিথ্যা বলতে বাধ্য হয়েছি আমি। এখন সত্যি জানালে সমস্যা হতে পারে তাই কয়েকদিন সময় দেন একবার আপনার বাবাকে খুশি করতে পারলে তখন সব ঠিক হয়ে যাবে “।
নিহানের কথা শুনে মিহির রাগ কমে না বরং বেড়ে যায় ইচ্ছে করছে কর্লার রেখে গলা টিপে মেরে ফেলতে নিহানকে। ইয়াসিনের সাথে মিহির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কয়েকদিনের মধ্যে বিয়ে হয়ে যেতে ও পারে কিন্তু নিহান এখনো সময় চাই। মিহি এইবার সত্যি নিহানের গলা চেপে ধরে বলে –

“- শালা তুই থাক আমার বাপকে খুশি করা নিয়ে।অন্যদিকে আমার যখন ওই ইয়াসিন না কেরাসিনের সাথে বিয়ে হয়ে যাবে তখন তুই বুঝতে পারবি বউ ছাড়া কেমন লাগে। বুকে আড়াই ছটাকের কলিজা নাই সে আবার জামশেদ তালুকদারের মেয়ের জামাই হবে। তোর থেকে ওই কেরাসিন অনেক ভালো এখন আমি ওকেই বিয়ে করব “।
মিহির ভাষা শুনে নিহান অবাক এই তার আগের বউ যে তাকে কখনো আপনি ছাড়া কথা বলতো না আর এখন সোজা তুই করে কথা বলছে। আর শালা এইটা কি রকম ডাক অন্য বউরা আদর করে তাদের জামাইকে জান কলিজা বলে ডাকে আর নিহানের বউ তাকে শালা বলে ডাকে। নিহান বলে –
“- মিহি এইসব কি ভাষা বলছেন আমি আপনার শালা হতে যাবে কোনো আমি আপনার জামাই হয়। আর এইরকম তুই করে কথা বলছেন কোনো দেখো জামাইয়ের সাথে এইরকম করে কথা বলতে হয় না মিহি। তুমি না ভালো মেয়ে আমার মিষ্টি বউ “।
নিহানের এইসব মন ভুলানো কথা এখন মিহির কানে ঢুকে না তার শরীরে এখন অনেক রাগ ইচ্ছে করছর নিহানকে কাঁচা চাপায়ে খেয়ে ফেলতে। মিহি বলে –
“- তুই থাক তোর ভালো মুখের ভাষা নিয়ে তোর মতো এইরকম একটা বুইড়া ব্যাটারে জামাই হিসাবে মানি না আমি। একটা কথা ভালো করে শোনে রাখ আজকের পর থেকে আমাকে বোনের মতো দেখবি তুই যদি অন্য নজরে তাকাবি তোর চোখ তুলে আমি কাবাডি খেলবো।
“- মিহি কি বলছেন এইসব আপনি আমার বোন হতে যাবেন কোনো। বউ আপনি আমার ভালোবাসি আপনাকে আমি “।

“- তোর ভালোবাসা ধুয়ে পানি খা তুই শালা। আর শোন এখন ওই কেরাসিনকে আমি বিয়ে করব। আর আমাদের বিয়ের পর গুণে গুণে এগরোটা বাচ্চার মা হবো সবগুলোকে দিয়ে তোকে মামা ডাক শুনাবো। তখন তুই বুঝতে পারবি বউয়ের বাচ্চার মুখ থেকে বাবা ডাকের জায়গায় মামা শুনতে কেমন লাগে। থাক তুই আর আমার বিয়ে খা “।
মিহি কথাটা বলে চলে যায় নিহান এখনো থ মেরে দাঁড়িয়ে আছে একটু আগে ওর সামনে কি মিহি ছিলো। এই সেই মিহি যে সবসময় বাচ্চামি করতো তার বউ কিন্তু এখন যা দেখছে তাতে মনে হচ্ছে একটা গুন্ডা।
নিহান মনে মনে বলে –

“- এইসব কি হচ্ছে তার সাথে তার বউ তাকে বলছে তাকে যোনো বোনের মতো দেখে। আর তার এগোরাটা বাচ্চার মুখে যাতে মামা ডাক শুনে সেই আয়োজন করবে। এখনো বিয়ের দুইমাস পর ও বাসর করতে পারে নাই কিন্তু তার বউ অন্য কারো সাথে এগোরাটা বাচ্চার পরিকল্পনা করে ফেলেছে। মিহি যে এতো ফাস্ট সেটা নিহান জানতো না “।
কিন্তু নিহানের নিজের মাথা ঠান্ডা রাখতে হবে এখন তার এই রাগী শশুড় আর ঘ্যাড় ত্যাড়া বউকে ম্যানেজ করতে হবে। একসাথে জামশেদ তালুকদারের মন জয় করতে হবে আর মিহির বিয়ে ভাঙতে হবে এই কেরাসিনকে দেখে নিবে নিহান।
অন্যদিকে একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে কল আসে –

মন ফাগুন পর্ব ৩৩

“- বস নিহান নেহাল শিকদার আর মিহি কেউ এখন শিকদার বাড়িতে উপস্থিত নাই। এই সুযোগ পুরো পরিবারকে শেষ করে দেওয়া অনুমতি দেন আপনি “।
“- হুম ঠিক বলেছো তবে নিহান নেহাল শিকদার এতো বোকা না সে বাড়ি থেকে দূরে কিন্তু তার পাহাড়া বাড়ির উপর রয়েছে। তাই এইবার বাহির থেকে নয় বাড়ির ভিতরে থেকে আক্রমণ করতে হবে নিহান ভাবতে ও পারবে না কে হয় আমি তাদের। আর ঠিক কি কি করতে হবে “।

মন ফাগুন পর্ব ৩৫