আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২০

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২০
তানহা ইসলাম বৈশাখী

শুনছো,
স্নিগ্ধ মেঘ ফুল!
এমন করে কেন ছুলে?
ধূলো জমা হৃদয়ে
কেন সচ্ছতা হয়ে এলে?
শোনো,
প্রভাতির কোমল সূর্য।
আমার এমন কেন হয়?
তুমি ছাড়া বুকের ভেতর
কেন জৈষ্ঠ্যের বন্যা বয়?
শুনছো স্বপ্নচারীনি!
এইযে আমার এমন লাগে
তোমার হওয়ার ইচ্ছে জাগে!
তুমি তো আমার নও
তবুও কেন আমার হও?
শোনো, অপ্রিয় অসুখ!
বুকের ভেতর কি নিদারুন বিসুখ!
এই অসুখের ওষুধ কি?
যদি তুমিই হও সেই নিরাময়ী সুখ
তবে সারিয়ে দাও তুমি নামক এই অসুখ।
তুমি কি জানো?
বুকের ভেতর পুষেছি তোমায়।
না চাইতেও হচ্ছে তোমার আমার প্রনয়
এ কেমন বিষাদময় যন্ত্রনা!
সে যন্ত্রনায় আমার তরী যায় ডুবিয়া
এ কেমন বিভীষিকা!
তোমার জন্য শূন্য হৃদয়ও আজ উঠেছে ভরিয়া।
কি নাম দেবো এই মরিচিকার?
ভালোবাসা?
তবে যে ধুঁকে মরতে হবে তৃষ্ণায়
আমি কেমন করে সইবো?
তোমার আমরণ প্রেমতৃষ্ণা!

গানের মানুষ, মনের মানুষ, সুরের মানুষ, ছন্দের মানুষ। যে সুর তৈরী করে, গান করে। সে কবিতাও তো লিখতে জানে। তার ভেতরে যে ছন্দের মেলা। সে ছন্দের মিলন ঘটিয়ে নিজের অব্যাক্ত অনুভুতি ব্যাক্ত করার প্রয়াস করছে। কবি’র ভাবে ফুটিয়ে তুলছে মনের ভাব।
কনসার্ট শেষে মাত্রই বাড়িতে ফিরেছে প্রার্থ। আজকের কনসার্ট সুষ্ঠুভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। কোন সন্দেহভাজন কাজও চোখে পড়েনি। হয়তো আগেরবার ধরা পরায় এবার আর ঝামেলা বাধায়নি তারা।
কনসার্ট শেষ করে প্রার্থ বাড়িতে ফিরেছে রাত দুইটার দিকে। এত রাতে ফিরেছে তবুও নিজের রুমে শুতে যায়নি। মন টানছিলো না। মন মস্তিষ্কে সারাক্ষন পুষ্প ঘুরে বেড়ায়। অশান্তি লাগে। তাই একটু শান্তির জন্য ডায়েরি আর কলম টা নিয়ে বসেছিলো মিউজিক রুমে গান লিখতে। কিন্তু অবুঝ মন বসে বসে লিখে ফেললো আস্ত এক কবিতা।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

নিজের লেখা এমন কবিতায় নিজেই থমকায় প্রার্থ। মনের সাথে তার লেখা কবিতাটা কি সুন্দরভাবেই না মিলে গেলো। এজন্যই বলে। প্রেমে পড়লে মানুষ কবি হয়, জটিল অসুখ জরানো রোগী হয়। এ রোগ কি সহজে ধরা দেয়? দেয় না। নিজেদের বুঝে নিতে হয় এই রোগ। আবার নিজেদেরকেই এর নিরাময়কারী ওষুধের খোজ করতে হয়।
এইযে প্রার্থ। যে তার রোগটা সহজে ধরতে পারছে না। বা বলা চলে ধরতে গিয়েও ধরছে না। দুরে ঠেলে দিচ্ছে সবকিছু।অনুভুতিদের তো একবার দুরে ঠেলা যায়, দুইবার যায়, তিনবার যায় কিন্তু বারবার! বারবার কি তাদের দুরে ঠেলা যায়? যায় না৷ প্রার্থ তাদের এতবার দুরে সরিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও তারা এসে আষ্টেপৃষ্ঠে জাপটে ধরছে তাকে।
এখন নিজের উপরেই তিতিবিরক্ত সে। সবকিছুর মিল মিশেলে নিজেকে পাগল মনে হয়।
প্রার্থর বুঝে আসে না যে এই কয়টা দিনে কেউ কারো ঘৃণা থেকে কি করে ভালোবাসায় পরিনত হতে পারে? এটা কি আদোও সম্ভব? হয়তো সম্ভব। কিন্তু কিভাবে?

কাউকে ভালোবাসার জন্য একটা কারন তো অন্তত লাগে? কিন্তু প্রার্থর কাছে তো কোন কারন নেই। তাহলে?
নিজেকেই নিজের মনে প্রশ্ন করলো সে। আবার ভেতরের অদৃশ্য আত্মাটা উত্তর হয়ে এলো। বললো,
ভালোবাসতে কারন লাগে না। কারন দিয়ে ভালোবাসলে তো ওটা ভালোবাসা হয় না। তাহলে তুই কেন কারন খুচ্ছিস? তুই ভালোবাসিস? তোর অন্তর কাঁপে? তোর খালি খালি লাগে? তোর হৃদয় পু*ড়ে? তোর মন বেহায়া হয়?
প্রার্থর মন থেকে উত্তর আসলো হ্যাঁ অন্তর কাপে, শূন্য শূন্য লাগে, হৃদয়ও পু*ড়ে, বেহায়া তো হচ্ছিই।
অদৃশ্য আত্মাটা আবার বলে।
“-তাহলে আর কি কারন চাই? এই কারন গুলো কি যথেষ্ট নয় অনুভুতি বোঝার জন্য?
প্রার্থ দীর্ঘ শ্বাস নিলো। হতাশ ভঙ্গিতে ছাড়লো শ্বাস। হার মেনে নিলো হয়তো। আর কতদিন এমন যুদ্ধ করবে নিজের সাথে? স্বীকার কি করবে না কখনো? অবশ্যই করবে। করতে হবে স্বীকার। নয়তো প্রতিটা মুহুর্তে নিজের সাথে নিজের যুদ্ধ চলবে তার মাঝে। এর চেয়ে ভালো আত্মসমর্পণ করা। ভালো যখন বেসেছে তখন স্বীকার করতে ক্ষতি কি?

গুনে গুনে পেরিয়ে গেছে ছয়টা দিন। আজ রবিবার কার্তিকের বিয়ে। বিয়ের জন্য বড় একটা কমিউনিটি সেন্টার বুক করা হয়েছে।
পুষ্পদের বাড়ির সামনে কালো একটি গাড়ি দাড় করানো। ভেতরে ড্রাইভিং সিটে প্রার্থ বসা এবং তার পাশের সিটে বসা অন্ত। দুজনেই ফর্মাল লুকে এসেছে। প্রার্থর পরনের সবকিছু কালো। কালো প্যান্ট কালো শার্ট তার উপর কালো কোট। অন্তরও একই সাজসোজ্জা।এমন সাধারন লুকেও দুইভাইকে অস্থির লাগছে।
কিছুক্ষনের মধ্যে ভেতর থেকে বেড়িয়ে এলো পুষ্প, প্রিয়া এবং প্রান্ত। প্রান্ত প্রার্থদের সাথেই এসেছে। সে এসেই পুষ্পদের ডাকতে চলে গেছিলো ভেতরে।
এখন পুষ্পর হাত ধরে লাফিয়ে লাফিয়ে আসছে।
প্রার্থ একফাকে গাড়ি থেকেই তাকালো জানালার বাইরে। আচমকা চোখ গিয়ে বার্তালো এক রমনীর দিকে। সেথায় তাকিয়ে আটকে গেলো চাওনি, থমকে দাঁড়ালো হৃদস্পন্দন।

কাকতালীয় ভাবে আজ তারা দুজনেই ম্যাচিং ড্রেস পড়ে আছে। প্রার্থর পরনে কালো সুট বুট আর পুষ্পর পড়নে কালো একটা শাড়ী। ফর্সা মেয়েদের বোধহয় কালোতে একটু বেশিই মানায়। প্রার্থ তো চোখই ফেরাতে পারছে না।মুখে কিন্তু তার তেমন কোন প্রসাধনীও নেই। তবুও কত স্নিগ্ধ কত মায়াবী লাগছে তাকে। এরকম নিষ্পাপ কোমল দেখতে মেয়েটাকে প্রার্থ এত অবহেলা করে? সে তো এরকম অবহেলা পাওয়ার যোগ্য নয়।
ভাইয়ের মতো করে চোখ আটকে গেছে অন্ত’রও। আজ কি সব কাকতালীয় ভাবে হয়ে গেলো? অন্তও সব ব্ল্যাক পড়েছে প্রিয়াও কালো রংয়ের একটা লেহেঙ্গা পড়েছে। সাথে মুখে সুন্দর করে মেকআপ করেছে। প্রাইমার থেকে হাই লাইটার কোন কিছুই বাদ রাখেনি বোধহয়। এমনিতেও প্রিয়া সুন্দর মানুষ তার উপর তার এমন সাজে আরো সুন্দর লাগে। চোখ ধাধানো সৌন্দর্য যাকে বলে। এতদিন পর চোখের সামনে তার অন্তঃপ্রিয়াকে দেখে হৃদয়ে শান্তি অনুভব হলো বোধহয়।

প্রিয়া পুষ্প দুইবোন কোনরকম কথাবার্তা ছাড়াই গাড়িতে উঠে বসলো। সাথে প্রান্তও ওদের সাথে বসলো।
প্রিয়া একবার অন্ত’র সাথে কথা বলতে চাইলো কিন্তু বললো না প্রার্থর জন্য। ওই টপিকটা এখানে না উঠানোই বেটার। তাই চুপ রইলো। অন্তও তেমন কোন আগ্রহ দেখায়নি প্রিয়ার সাথে কথা বলার জন্য। প্রায় ২৩, ২৪ দিন হয় অন্তর প্রিয়ার সাথে কোন কথা হয় না। দেখা হয় না। ছেলেটা কেমন ছিলো এই কদিন শুধু সে-ই জানে। আজ তাকে দেখেও শান্তি কথা বলার প্রয়োজন নেই।
গাড়ি স্টার্ট করার আগে প্রার্থ সামনের মিররটা পুষ্পর দিকে তাক করলো। আবার সেথায় ভেসে উঠলো সেই হৃদয়হরনী চোখদুটো।
সময় ব্যায় না করে গাড়ি স্টার্ট করলো। গাড়ি চালানোর মাঝে মাঝেই একটু একটু দেখবে তাকে। অনেকদিন তো হলো দেখা না দেখার খেলা। আর কত! এবার লুকিয়ে হলেও একটু দেখতে হবে তার ফুলকে।

কার্তিকের বিয়ের জন্য বিশাল কমিউনিটি সেন্টার বুক করা হয়েছে। সেখানেই সব আয়োজন করা হয়েছে।
কিছুক্ষণের মধ্যেই প্রার্থরা চলে আসলো সেন্টারে। সবাইকে নিয়ে এগিয়ে গেলো ভেতরে। খুব সুন্দর ডেকোরেশন করা হয়েছে হলটা। প্রার্থ সবাইকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। একটু সামনে যেতেই দেখা মিললো সবার। সন্ধ্যার দিকে বিয়ে পড়ানো হবে এখন সকলে আনন্দমতো নাচ গান করছে। সন্ধ্যার পরে প্রার্থরাও পারফরম্যান্স করবে। তাদের দলের সিংগারের বিয়ে তাদের গলায় গান হবে না এটা হয় নাকি!
প্রার্থদের দেখেই সামনে চেয়ারে বসা থেকে উঠে এলো অর্নব আর রকি। অর্নব সামনে এসেই সুন্দর একটা হাসি দিয়ে পুষ্পর উদ্দেশ্যে বললো।

“-বাহ! প্রিন্সেস। তোমাকে তো কালোতে প্রিন্সেস ডায়না’র মতো লাগছে। অনেক সুন্দর লাগছে।
রকি বললো।
“-ঠিক ঠিক। যাই বলিস। আমাদের প্রার্থ কিন্তু সুন্দরী বউই পেয়েছে। এখন এরকম সুন্দরী বউ দুই চারটা আমাদের কপালেও জুটুক।
সবাই হাসলো একটু। অর্নব তাকালো প্রার্থর দিকে। প্রার্থর চাহনি ছিলো শক্ত। অর্নব ওই চাহনি দেখেই ভ্যাবলার মতো হেসে বললো।
“-হে হে কিরে তুই ওইভাবে তাকিয়ে আছিস কেন? তোকেও সুন্দর লাগছে। কিন্তু প্রিন্সেসকে একটু বেশিই লাগছে।
প্রার্থ কিছু বললো না। দাঁতে দাঁত চেপে রইলো। প্রিয়া ঠোট উল্টিয়ে বললো।
“-হুহ্! অর্নব ভাই শুধু বুবুকেই চোখে দেখে। এখানে যে আরেকটা সুন্দরী দাড়িয়ে আছে তার কি কোন খেয়াল আছে।
প্রিয়ার কথায় হাসলো সকলে। শুধু হাসলো না প্রার্থ আর অন্ত। অন্ত বিড়বিড় করে বললো।
“-যে তোর সৌন্দর্যের প্রশংসায় পঞ্চমুখ থাকে সবসময় তার থেকে প্রশংসা না শুনে শুনতে চাস অন্যদের কাছে। অসভ্য!

অর্নব প্রিয়াকে বললো।
“-তুমি তো আমাদের চেরি। আর চেরিফল দেখতে যেমন সুইট খেতেও তেমন সুইট। তুমি তো আগে থেকেই সুন্দরী মিষ্টি একটা মেয়ে। তোমার আবার প্রশংসা করতে হয় নাকি।
প্রিয়া খুশি হয়ে গেলো অর্নবের কথায়।
প্রার্থ রকিকে বললো।
“-কার্তিক, হৃদয় কোথায়।
রকি দুঃখী ভাব নিয়ে হতাশাভরা কন্ঠে বললো
“-আর বলিস না। আমাদের জামাইবাবু তো ফুরসতই পাচ্ছে না কোথাও বসার। একটু আগে আমাদের সাথে ছিলো কে যেন ডাকলো আর চলে গেলো। আর হৃদয় ও গেছে ওর কোন নতুন গার্লফ্রেন্ডকে এগিয়ে আনতে। শা*লা নাকি আমাদের সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো। এখন এগিয়ে আনতে গেছে কোন মেয়েকে। এটাও টিকবেনা দেখিস।
হৃদয়ের কথা শুনে কারো ভাবান্তর না হলেও প্রিয়ার মাঝে উদ্বিগ্নতা দেখা গেলো। হৃদয়ের সাথে কোন মেয়ের কথা শুনেই শ্বাস আটকে আসছে তার। অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে রকির দিকে। যেন বিশ্বাস হচ্ছে না রকির কথায়।
এর মাঝে হুট করে পেছন থেকে ডেকে উঠে হৃদয়।

“-হেই গাইস!
বলতে বলতেই একটা মেয়ের হাত ধরে উপস্থিত হলো সবার সামনে। প্রিয়া অবাক দৃষ্টিতে শুধু তাকিয়ে রইলো দুজনের দিকে।
হৃদয় মুখ ভরা হাসি নিয়ে মন ভরা খুশি নিয়ে মেয়েটির সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো সকলকে। বললো।
“-তোদের বলেছিলাম না সারপ্রাইজ দিবো। এইযে আমার সারপ্রাইজ। ও মোহ। আমার জান।
ইশশ! প্রিয়ার বোধহয় একটু কষ্ট লাগলো এভাবে অন্য কাউকে জান ডাকায়। যে ডাক সে শুনতে চেয়েছিলো সেই ডাক নিজের চোখের সামনেই অন্য কাউকে ডাকতে দেখছে। কেমন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা হয়ে যাচ্ছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। মেয়েটার দিকে তাকালে হিংসে হচ্ছে ভীষন। মেয়েটা এত সুন্দর কেন? অনেক সুন্দর মেয়েটা। প্রিয়ার থেকে একটু বড় হবে বোধহয়। গায়ের রং ফর্সা লম্বাও অনেকটা। কেমন ইনোসেন্ট দেখতে চেহারা। যে কেউই প্রেমে পড়ে যাবে। গায়ের শাড়ী পরায় স্টাইল দেখে মনেহচ্ছে বেশ সৌখিন মেয়ে। প্রিয়ার ভীষন হিংসে হচ্ছে। ও কেন এই মেয়েটার মতো সুন্দর নয়? এরকম সুন্দরী হলে নিশ্চয়ই হৃদয় ভাই তাকে পছন্দ করতো। মনে মনে হাজারটা কথা চিন্তা করে যাচ্ছে প্রিয়া।

হৃদয়ের কথায় কারো মাঝে কোন প্রতিক্রিয়া দেখা গেলো না তেমন। সবাই জানে এটাও দুদিনের বেশি টিকবে না। রকি হাত বাড়িয়ে দিলো মেয়েটার দিকে। বললো।
“-হাই। আমি রকি। হৃদয়ের বন্ধু।
হৃদয় খপ করে ধরে ফেললো রকির হাতটা। বললো
“-সর শা*লা। ওকে ছুবি না।
রকি যেন আকাশ থেকে পড়লো। বললো অবাক হয়ে।
“-ছুবো না? ভাই এটা তুই তো? তোর সব গার্লফ্রেন্ডের সাথেই তো হাত মেলাই। এখন…..
“-চুপ কর শা*লা। আমার গার্লফ্রেন্ড ছিলো কয়টা? তুই সবগুলো বলছিস যে। শোন ওর বিষয়ে আমি অনেক সিরিয়াস। ও তোর ভবিষ্যৎ ভাবি হবে।
প্রার্থ একবার ওদেরকে দেখে গিয়ে বসলো সামনের টেবিলটাতে। ওদের কথা শুনতে ইচ্ছুক নয় সে। পুষ্পরা সকলে দাড়িয়ে রইলো মেয়েটার সাথে কথা বলতে।
অর্নব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।

“-তোদের রিলেশন কতদিনের রে?
“-এক সাপ্তাহ।
অর্নব, রকি একে অপরের দিকে চাওয়া চাওয়ি করে একসাথে বলে উঠলো।
“-ওওওওওওও! এজন্যই। আচ্ছা আরো এক সাপ্তাহ যেতে দে।
হৃদয় ওদের কথায় পাত্তা দিলো না। মোহ মেয়েটাকে বললো।
“-মোহ! ওরা আমার বন্ধু। তুমি তো চেনোই ওদের। আর ও হচ্ছে পুষ্প আমাদের প্রার্থর বউ। আর ও হচ্ছে প্রিয়া পুষ্পর ছোট বোন।
পুষ্প হেসে মেয়েটাকে বললো।
“-বাহ! আপনি তো বেশ মিষ্টি দেখতে। হৃদয় ভাইয়ের পছন্দ আছে বলতে হবে।
মেয়েটা মিষ্টি হেসে সবার সাথে পরিচিত হয়ে নিলো। কথা বললো রিনরিনে গলায়।
“-আপনি বলতে হবে না। তুমি বলতে পারো। আমরা সমবয়সীই হবো। তুমিও দেখতে অনেক মিষ্টি।
কথাবার্তা শুনেই মনেহয় ভদ্রটাইপ মেয়ে। অল্প কথাতেই কি সুন্দর মিশে গেলো। পুষ্পরা তো দাড়িয়ে দাঁড়িয়েই গল্প জুরে দিলো।

কিন্তু এগুলো সহ্য হলো না প্রিয়ার। ওই মেয়েটার প্রতি নিজের বোনের আদিখ্যেতাও পছন্দ হলো না।
আজকে হৃদয় বোধহয় প্রিয়াকে শুধু কষ্ট দেওয়ার জন্যই এখানে এসেছে। সহ্য হচ্ছে না হৃদয়ের পাশে মেয়েটাকে দেখে। একটা কথাও বললো না মোহ’র সাথে। পুষ্পকে ছোট্ট করে বললো।
“-বুবু আমি ওয়াসরুম থেকে আসছি। থাকো।
পুষ্প কিছু বলার আগেই হনহনিয়ে চলে গেলো সে। পুষ্পও যেতে দিলো তাকে। প্রিয়ার দিকে ধ্যান না দিয়ে কথা বললো মহো’র সাথে।
তবে অন্তর নজরে এলো সবই। সে এতক্ষণ চুপচাপ প্রিয়ার রিয়েকশন দেখেছে। এক দিকে খুশিও হয়েছে অন্যদিকে রাগও হচ্ছে। খুশি হচ্ছে কারন হৃদয় একেবারে ঠিক জায়গায় তার গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে। এখন আর প্রিয়া হৃদয় হৃদয় করতে পারবে না। বিষয়টা আনন্দের। কিন্তু রাগ হচ্ছে এজন্য কারন প্রিয়া হৃদয়ের জন্য কষ্ট পাচ্ছে। জিনিসটা ভালো লাগছে না। প্রিয়ার সুখ দুঃখ সব অন্ততেই সীমাবদ্ধ থাকবে। সেখানে তার অন্তঃপ্রিয়া কেন অন্যের জন্য কষ্ট পাবে।

সে-ও পেছন পেছন হাটলো প্রিয়ার।
প্রিয়া রাগে ওয়াসরুমের বাহানায় করে কোনদিক দিয়ে কোথায় যাচ্ছে নিজেও জানেনা। ল্যাহেঙ্গা ধরে হাটতে হাটতে দেখলো সামনে সিঁড়ি। সিঁড়ি সোজা চলে গেছে ট্যারেসে। সে সেই সিঁড়ি বেয়েই হনহনিশে উপরে উঠলো। ছাদটাও খুব সুন্দর ডেকোরেট করা। প্রিয়া একেবারে গিয়ে রেলিং ধরে দাঁড়ালো। হুট করেই ফুপিয়ে কেদে উঠলো
অন্তও পিছুপিছু এসে দাঁড়ালো। পেছন থেকেই প্রিয়াকে ফুপাতে দেখে বুকে ব্যাথা হলো ভীষন। আস্তে ধীরে এগিয়ে গেলো কাছে। ঠিক পেছনে দাড়িয়ে হাত বাড়ালো প্রিয়ার দিকে। কাধে আলতো করে হাত রাখতেই চমকে যায় প্রিয়া। হরবার করে চোখ মুছে পেছনে ঘুরে। দেখে অন্ত করুন চোখে তাকিয়ে আছে। চশমার আড়ালে থাকা চোখটায় স্পষ্ট মায়া জরানো। প্রিয়া চোখ মুছে বললো।

“-তুমি!
অন্ত নিজের মাঝে গম্ভীর্যতা আনার চেষ্টা করলো। না জানার ভান ধরে বললো।
“-কাকে আশা করেছিলি? কাঁদছিস কেনো?
“-এমনি।
“-এমনি এমনি কেউ কাঁদে না। বল কেন কাদছিলি?
প্রিয়া বললো না। কথা ঘুরিয়ে নিলো। বললো।
“-এমনি কিছু না। আর তোমার সাথে কথা ছিলো। আসলে সরি ওইদিন তোমার সাথে বাজে ব্যাবহার করে ফেলেছি। আমি ভেবেছিলাম তুমিই প্রার্থ ভাইকে বলেছো হৃদয় ভাইয়ের কথা।
অন্ত পুরোনো টপিকে গেলো। সবে তৈরী হওয়া নতুন টপিকটা নিয়ে আলোচনা করতে চাইলো। বললো।
“-তা তোর হৃদয় ভাইয়ের গার্লফ্রেন্ড দেখেছিস? পছন্দ হয়েছে তোর?
মেয়েটা এমনিতেই কান্না ধরে রাখতে পারছে না তার উপর অন্ত আবার এই কথা বললো।
প্রিয়া ঠোট উল্টে কেদে দিলো আবার।

“-তুমি কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা কেন দিচ্ছো?
“-আমি কিছুই করছিনা। তোকে সত্যটা বললাম। একটু আগেই তো দেখলি কত সুন্দর গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরছে।
প্রিয়া আরো কেঁদে উঠলো। কান্নার আওয়াজ বেশিনয় শব্দহীন কাদছে। কাঁদতে কাঁদতে বললো।
“- হৃদয় ভাই আমাকে কেন ভালোবাসলো না অন্ত ভাই? কেন সে অন্যকাউকে ভালোবাসলো?
প্রিয়ার প্রশ্নের বিপরীতে ভেসে এলো শান্ত স্রোতহীন নদীর ন্যায় শীতল কন্ঠ
“-তুই কেন আমাকে ভালোবাসলি না প্রিয়া?যে তোকে ভালোবাসে তাকে কেন তুই ভালোবাসিস না?
প্রিয়া হয়তো বুঝলো না অন্তর কথার অর্থ। সে কান্না থামিয়ে বোকা বোকা চোখে তাকালো অন্তর দিকে।
অন্ত এগিয়ে এলো দুই কদম। বললো অসহায় কন্ঠে।

“-তোকে একটু ছুতে পারি?
প্রিয়া কিছু বললো না কিন্তু অন্তর হাবভাব তার বুঝে আসছে না। প্রিয়া কিছু বলছেনা বলে তার অনুমতির অপেক্ষায় রইলো না অন্ত। দুহাত বাড়িয়ে প্রিয়ার দুইগাল স্পর্শ করলো। কৃষ্ণবর্নের হাতজোড়ার আজলায় পুরে নিলো প্রিয়ার মুখ। বুড়ো আঙ্গুলের সাহায্যে মুছিয়ে দিলো চোখের জল।
ভাঙা ভাঙা গলায় বললো।

“-তোর কি আর কাউকে চোখে পরে না প্রিয়া? হৃদয় ছাড়া কি আর কাউকে নজরে পরে না? এমন কেউও তো আছে পৃথিবীতে যে তোকে তোর থেকেও বেশি ভালোবাসে। তাকে কেন তুই দেখিস না? তার ভালোবাসা কেন তোর নজরে আসে না? তোর মুখে যতবার হৃদয় নামটা শুনি ততবার আমার হৃদয় পুড়ে ছাড়খাড় হয়। বুকের ভেতরে আগুন জলে। শান্ত হয়ে থাকতে মন চায়না। জালিয়ে পুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে সব। তুই কোনো কারনে কষ্ট পেলে সেই কষ্টটা আমার মনে গিয়েও লাগে। এজন্য কখনো তোকে কষ্ট দিতে চাইনা। তোর খারাপ লাগা জিনিস এড়িয়ে চলি সবসময়। প্রতিটা ছোট ছোট বিষয়ে খেয়াল রাখার চেষ্টা করি। আমার ভালোবাসায় তাহলে কিসের কমতি রইলো যে তোর নজরেই এলো না? আমাকে কেন ভালোবাসিস না প্রিয়া? কেন এত কষ্ট দিস? একটু ভালোবাস না। তোর বিরহে আর কতদিন পুড়বো। পুড়িয়ে ছাই করে দিলিতো আমাকে। অনেক ব্যাথা করে এখন জানিস। তুই আমার প্রিয়া। আমি তোকে অন্য কারো সাথে দেখতে পারবো না।

প্রিয়া এতক্ষণ ধরে চুপচাপ শুনে গেলো কথাগুলো। কথাগুলো কি বুঝেছে সে? অবশ্যই বুঝেছে। এইটুকু জিনিস বুঝার বয়স তার হয়েছে। বুঝেছে বলেই তার চোখে মুখে অবিশ্বাস। অশ্রু জলে টলটলে হওয়া চোখে অবিশ্বাস নিয়ে তাকিয়ে আছে অন্তর দিকে। ভেতর থেকে কথা বের হচ্ছে না। সে বাকরুদ্ধ। অন্ত হাতদুটো এখনো প্রিয়ার মুখে। প্রিয়া জিভ নাড়িয়ে শুধু বললো।
“-কি বলছো তুমি?
অন্ত একইভবে বললো।
“-সত্যিই বলছি প্রিয়া। আমি ভালোবাসি তোকে। আই লাভ ইউ। এন্ড নাও আই উইল ব্যাডলি নিড ইউ। তোকে ছাড়া, তোকে মনের সব অনুভুতি না জানিয়ে থাকা আর সম্ভব হচ্ছে না। ছোটবেলায় অনেক হিংসে করতাম তোকে। ভীষন রাগ হতো তোর উপর। আমার সবকিছুতে তুই আগে ভাগ বসাতি। ছোটবেলায় অনেক শান্ত ছিলাম বলে কিছু বলতেও পারতাম না। কিন্তু আমাকে জালিয়ে তোর যে খুশিটা হতো ওই খুশি দেখলে আমিও খুশি হয়ে যেতাম। তখনও জানিনা ভালোবাসা কাকে বলে। ধীরে ধীরে তুই অভ্যেসে বদলে গেছিস। তোকে ছাড়া কিছুই ভালো লাগে না। একদিন ঝগড়া না হলে মনে ক্ষুত ক্ষুত লাগে। একদিন তোকে না দেখলে পাগল পাগল লাগে। এত কিছু কেন হয় বল? ভালোবাসার জন্যই তো হয় তাইনা? তোর মুখে হৃদয় শুনলে আমার এত জলে কেন বল? তোকে ভালোবাসি বলেই তো।
কথা শেষেই প্রিয়া অন্তর হাতটা ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে নিলো নিজের মুখ থেকে। ভ্রুকুটি করে বললো।
“-তুমি পাগল হয়ে গেছো অন্ত ভাই। কিসব বলছো? তোমার আমার মাঝে এমন সম্পর্ক আসলো কোত্থেকে?
অন্ত হেসে বললো।
“-এজন্যই তোকে কখনো মনের কথা বলিনি। আমি জানি তুই মানবি না এটা।কিন্তু আজ আর নিজেকে আটকাতে পারলাম না। আর কত চেপে রাখবো বল। তোকে ছাড়া আমার চলছে না।
“-চুপ করো। তোমার লজ্জা লাগছে না আমাকে এগুলো বলতে? মদ গিলেছো? কি বলছো বুঝতে পারছো? কি হয়েছে তোমার?

“-অসুখ হয়েছে আমার। তোর অসুখ। তোকে ভালোবাসার অসুখ।
“-নির্লজ্জের মতো কথা বলছো তুমি। তোমার মাথা ঠিক নেই যাও এখান থেকে।
“-হুম আমি নির্লজ্জ। নির্লজ্জ বলেই এখনো এখানে দাড়িয়ে আছি।নির্লজ্জ বলেই তোকে এখনো ভালোবাসি। নির্লজ্জ বলেই তোকে পাওয়ার যন্ত্রনায় ধুকে মরছি। আমাকে কি ভালোবাসা যায় না প্রিয়া? আমি দেখতে খুব খারাপ? আমার ক্যারেক্টার খারাপ? আমাকে কেন ভালোবাসা যায় না বল?
প্রিয়া বুঝতে পারছে না সে কি বলবে। অন্তর কাছ থেকে হঠাৎ এমন কথা কখনো আশা করেনি সে। অন্ত ভালোবাসে তাও প্রিয়াকে? সব তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।
প্রিয়াকে চুপ দেখে অন্ত আবার বললো।
“-ঠিকাছে ভালোবাসিস না কিন্তু অন্য কাউকে মনে জায়গা দিতে পারবি না। তুই শুধু আমার। আমি তোকে অন্যকারো হতে দেখতে পারবো না প্রিয়া। মরে যাবো আমি।

প্রথমে স্বর কঠোর থাকলেও শেষ কথাগুলোতে মিয়িয়ে আসে অন্ত। শান্তশিষ্ট ভদ্র ছেলেরা প্রেমে পড়লে ভীষন অগোছালো হয়ে পরে। কোনটা ভুল কোনটা ঠিক বুঝে আসে না। অন্তরও তাই হচ্ছে হয়তো। ভুল সঠিক বোঝার সময় নেই। তার প্রিয়াকে চাই মানে চাই-ই। যেকোন কিছুর মূল্যে হলেও তার তাকেই চাই।
প্রিয়াকে বাকরুদ্ধ বিমূঢ় করে দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলো অন্ত। প্রিয়া অনুভুতিহীন চোখে তাকিয়ে রইলো সামনে। তার কি করা উচিত বা কি বলা উচিত সে জানে না। অন্ত তাকে আজ বিশাল বড় একটা শক দিয়ে গেলো। এরকম ঝটকা আগে কখনো খেয়েছে কিনা মনে পড়ছে না। হৃদয়ের অন্য মেয়ের সাথে রিলেশনের কথাও প্রিয়াকে এতটা নাড়িয়ে তুলেনি যতটা অন্তর ভালোবাসি কথায় নাড়িয়েছে।

প্রার্থরা তিন বন্ধু একটা রুমে সোফায় আরামে বসে আছে। কার্তিক ওদেরকে বর্তমানে এখানে রেস্ট করতে বলেছে। সন্ধ্যার দিকেই বিয়ে পড়ানো হবে।
প্রার্থর আর ভালো লাগছে না এখানে। সে একটু পুষ্পর আশেপাশে থাকতে চেয়েছিলো কিন্তু এ মেয়ে প্রার্থর সামনে আসতেই চাইছে না। প্রার্থর সামনে থেকে সরে যেতে গেছে সুস্মিতার কাছে। বউয়ের সাথে কথা বলতে। প্রার্থর ভালো লাগেনি বিষয়টা। আজ কতদিন পর একটু দেখা পেলো একটু দেখবে তাকে তা না সে ঘুরে বেড়াচ্ছে অন্য জায়গা দিয়ে। এতদিনে প্রার্থ এটুকু বুঝেছে যে এই মেয়েকে তার লাগবে। মস্তিস্কে তার অবাধ বিচরন থামাতে হলেও তাকে লাগবে। ফাকা শূন্য হৃদয় ভরে তুলতেও তাকে লাগবে। মনের শান্তির জন্য হলেও তাকে লাগবে। চোখের শান্তির জন্যেও তার পুষ্পকে লাগবে। আর এটা উপলব্ধি করতে প্রার্থর অনেকটা সময় লেগে গেছে।
রুমে তিনজন তিনজনের ভাবনায় ডুবে আছে। প্রার্থ আছে তার ফুলের চিন্তায় আর অর্নব আর রকি নিজেদের ফোন স্ক্রল করছে। বিয়ে বাড়িতেও তিনজন এত শান্ত রয়েছে মনেহয় নয় এরা বিয়েতে এসেছে। সব আনন্দ হৃদয়ের। সে দিব্বি তার নতুন প্রেমিকা মোহকে নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
রকি হঠাৎ উঠে কিছু না বলে বাইরে চলে গেলো।

বাকি বসে রইলো ওরা দুইজন। কিছুক্ষণ সময় নিরবতায় কেটে যাওয়ার পর প্রার্থ ডাকলো অর্নবকে।
“-অর্নব!
অর্নব ফোন স্ক্রল করছিলো। ওইভাবে স্ক্রীনে চোখ রেখেই বললো।
“-হুম বল।
প্রার্থ সোফায় মাথা এলিয়ে দিলো। চোখ বন্ধ রেখে বললো।
“-পুষ্পকে এখনো পছন্দ করিস?
অর্নব এবার ঘুরে তাকায় প্রার্থর দিকে। সন্দিহান গলায় বললো।
“-হঠাৎ এ প্রশ্ন কেন?
প্রার্থ একইভাবে থেকে বললো।
“-প্রশ্নের বদলে প্রশ্ন পছন্দ করি না জানিসই তো। যা বলেছি তার উত্তর দে।
অর্নব নির্দিধায় বললো।

“-তোকে কেন বলবো?
প্রার্থ চোখ খুললো। নিগূঢ় ভঙ্গিতে তাকিয়ে শক্ত গলায় বললো।
“- আমাকেই বলবি। বউ হয় আমার। তাকে তুই লাইক করিস কিনা জানবো না?
অর্নব ঝোপ বুঝে কো*প মারতে চাইলো। সে জানে প্রার্থ জেলাস৷ তাই তাকে আরো জালানোর জন্য বললো।
“-যদি বলি হ্যা। তো কি করবি?
প্রার্থ ছো মেরে অর্নবের কলার টেনে ধরলো। তাকে মুখোমুখি করে দাঁতে দাঁত পিষে বললো।
“- ভুলে যাস না অর্নব ও এখন আমার বউ। তোর ভাবি হয়। ওর দিক থেকে নজর সরিয়ে নে নয়তো ভুলে যাবো তুই আমার বন্ধু।
অর্নবের কিছু এলো গেলো না। সে হাসতে হাসতে বললো।
“-তুই তো বউ বলে মানিস না ওকে। তাহলে আমি চান্স নিলে ক্ষতি কি? এন্ড ইউ নো আই লাইক হার।
প্রার্থ রাগে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে অর্নবের গালে থাপ্পড় মারলো দাঁড়িয়ে। কলার ধরে টেনে দাড় করিয়ে বললো।
“- অর্নব দূরে থাক ওর থেকে। যতদিন ওর প্রতি আমার কোন অনুভুতি ছিলো না ততদিন তোকে কোনকিছুতেই বাধা দেইনি। কিন্তু এখন…….!
প্রার্থ থেমে গেলো। অর্নব গালে হাত রেখে বললো

“- এখন কি বল? এখন কেন বাধা দিচ্ছিস? ভালোবাসিস ওকে?
প্রার্থ অর্নবকে ছেড়ে বললো ।
“- হ্যাঁ বাসি। এতদিন ওকে দূরে ঠেলেছি তোর কারনে। আমাদের বিয়ের আগেই আমি জানতাম তুই ওকে পছন্দ করিস। আমি কিছু বলিনি কারন তুই নিতান্তই ভালো ছেলে। তোর সাথে ওকে দিতে আমার সমস্যা ছিলো না। এরপর ও নিজে এসে আমাকে বলে ও আমাকে ভালোবাসে তখনও ওকে ফিরিয়ে দিয়েছি কারন ওকে তোর ভালো লাগতো বলে। তারপর আমাদের বিয়ে হলো হুট করে যার জন্য আমি সব দোষ পুষ্পকে দিয়েছি। আমার ধারনা ছিলো ওই সবাইকে ভুলিয়ে ভালিয়ে বিয়েতে রাজি করিয়েছে। এরপর বারবার যখন ওকে দেখতাম তোর কথা মনে পরতো। বিষয়টা বাজে লাগতো আমার কাছে। এজন্য ওকে আরো দুরে ঠেলেছি। কিন্তু আমি জানিনা কোন ডোরে আমি ওকে দূরে ঠেলেও দূরে করতে পারছি না। এটাকে কি ভালোবাসা বলে না?

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ১৯

তোর জন্য যাকে ছাড়তে চেয়েছি দূর করতে চেয়েছি তাকে তোর সাথে দেখলে জ্বলে যায় আমার।
আই এম জেলাস। আই এম নট রেডি টু শেয়ার হার উইদ এনিওয়ান। সি ইজ মাইন এন্ড অলওয়েজ উইল বি মাইন। তুই ভুলে যা ওকে অর্নব। আমি ওকে ছাড়তে পারবো না।

আমরণ প্রেমতৃষ্ণা পর্ব ২১