একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৮

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৮
Mousumi Akter

কাজী সাহেব তরীর দিকে তাকিয়ে বললেন, ” তুমি তোমার স্বামীর কাছে কত টাকা কাবিন চাও মা। কাবিন হল একটা মেয়ের জীবনের সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয়। কাবিন তোমার অধিকার। তবে কাবিন স্বামীর উপার্জনের ওপর ভিত্তি করে নির্ধারণ করতে হয়। কাবিনের টাকা পরিশোধ না করে স্বামী তোমাকে স্পর্শ করলেও গোনাহ হবে। ”
তরী এক সেকেন্ড ও না ভেবে উত্তর দিলো,
” কাবিনা নামায় মীর মৃন্ময় লিখে দিন কাজী সাহেব। মীর মৃন্ময় হল আমার জীবনের সব চেয়ে মূল্যবান সম্পদ। আমার আর কিচ্ছুই লাগবে না এটুকু ছাড়া। ”
কাজী সাহেব হাসলেন। হেসে বললেন,

” এটা আবেগের কথা মা। আবেগে সব চলে না। আজ ভালবাসা আছে কাল নাও থাকতে পারে। সময় খারাপ, যুগ যামানা ভয়াবহ। আজকাল ভালবাসার কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই কাবিন এর জায়গা আবেগ রাখা ঠিক নয়।”
তরী সরল মুখে বলল,
” ভালবাসার মানুষ ই যদি না থাকে, কাবিনের টাকা দিয়ে কি হবে। তার থেকে সম্পর্কের বিনিময়ে আমি একটি সুতার ও দাবি করব না।”
মৃন্ময় বলল,
” আরে কাজী সাহেব কয়েক বিলিয়ন লিখে দেন সমস্যা নেই।”
কাজী সাহেব আবার ও হেসে বললেন,
” তোমার ক্ষেত্রেও একই কথা, আবেগে এসব বলোনা। সময় কখন কোনদিকে যায় কেউ জানেনা। পা’গ’লা’মি করে এত বড় এমাউন্ট লেখা ঠিক নয়।”
সারাহ বলে উঠল,
” মৃন্ময় তোর কাছে কত টাকা আছে?”
মৃন্ময় বলল,
” বাবার বিজনেস এর টাকা থেকে নিয়ে নিয়ে ব্যাংকে তিন লাখ মত জমিয়েছি। বংশের একমাত্র ছেলে বলে জন্মের পর কিছু গোল্ড উপহার পেয়েছিলাম। ”
দ্বীপ বলল,
” শালা বড়লোক। ”
সারাহ বলল,
” কাবিন পাঁচ-দশ লাখ দিয়ে দে।”
কাবিনের এমাউন্ট ঠিক করার পর ওদের বিয়ে হয়ে গেল। রোশান -সারাহ,দ্বীপ-তন্ময় সাক্ষী দিয়ে মৃন্ময়-তরীর বিয়ে হয়ে গেল। কত শত ঝ-ড়,তুফানের পর দুটো অশান্ত আত্মা মিলিত হল। এই আনন্দ মানুষকে পা-গ-ল পারা সুখের সাগরে ভাষিয়ে দেয়।

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

তখন সন্ধ্যা। মাগরিবের আজানের সুর চারদিকের মসজিদ হতে ভেসে আসছে। মৃন্ময় মীর ভিলাতে তখন কলিং বেল বাজছে। দু’বার কলিং বেল বাজতেই ভেতর থেকে পিহু এসে দরজা খুলল। পিহুর মুখে হাসি, দৃষ্টি ছিলো ফোনের দিকে। কারো সাথে যে গভীর ভাবে মেসেজে বিজি সেটা বোঝা যাচ্ছিলো। দরজায় কারা দাঁড়িয়ে খেয়াল করেনি। এমন সময় দ্বীপ বলে উঠল,
” বয়ফ্রেন্ডের সাথে চ্যাটিং কম করে করো পিহু। ভাই ব্রাদার এর দিকে একটু নজর দাও। ”
দ্বীপের কণ্ঠস্বরে পিহুর বুকের কম্পন বেড়ে গেল। সে ঝ’ড়ে’র গতিবেগে তাকালো। তাকাতেই চমকে উঠল পিহু। তার সামনে মৃন্ময় আর তরী। পেছনে দ্বীপ আর তন্ময়। তরীর বধূবেশ দেখেই বোঝা যাচ্ছে মৃন্ময় আর তরী আজ বিয়ে করেছে। পিহু হা করে তাকিয়ে রইলো মৃন্ময়ের দিকে।
দ্বীপ বলল,
” হা করে তাকিয়ে না থেকে ভাবিকে বরণ করার ব্যবস্থা করো।”
পিহু মৃন্ময়ের দিকে তাকিয়ে বলল,
” ভাইয়া এসব কি। তোমরা সত্যি বিয়ে করেছো?”
মৃন্ময় কিঞ্চিৎ পরিমাণ হেসে জানাল,
” আমার জীবনে কোনো সিরিয়াসনেস নেই বলে তুই আমার একশ বার কবুল বলা বউকে বলবি সত্যি বিয়ে করেছি কীনা!”

পিহুর মুখটা শুকিয়ে গেল। সে জানে তার বাবা কিছুতেই তরীকে মেনে নিবেনা। সংসারে তুমুল একটা অশান্তি হবে। তবুও পিহু খুশী সে তরী আর মৃন্ময়ের এক হওয়ার জন্য রোজ আল্লাহর কাছে মোনাজাত করেছে। তরীর শুকিয়ে যাওয়া মুখ দেখে মৃন্ময় বলল,
” বাবাকে নিয়ে ভ’য় পাচ্ছিস?”
পিহু মিথ্যা হাসি দিয়ে মিথ্যা কথা বলল,
” না ভাইয়া। এই দিনটা দেখব বলে আল্লাহর কাছে অনেক কেঁদেছি আমি।” বলেই তরীকে কাছে টেনে খুব শক্তভাবে জড়িয়ে ধরল। এ যেন দীর্ঘদিনকার এক সেতুবন্ধন। ড্রয়িং রুমের সোফায় গিয়ে ওরা সবাই বসল। পিহু ওর আম্মুকে ডাকল। পিহুর আম্মু ফরজ নামাজ শেষ করে সালাম ফিরিয়ে দ্রুত ড্র‍য়িং রুমে এলো। এসেই সবটা ক্লিয়ার বুঝে গেল। মৃন্ময় তরীকে বলল,
” আম্মুকে সালাম করো।”
তরী মৃন্ময়ের আম্মুকে সালাম করল। মৃন্ময়ের আম্মু তরীকে বুকে টেনে নিলেন কিন্তু টেনশন এ গলা বুক শুকিয়ে এল। যতটা খুশী আর ভালবাসা নিয়ে একমাত্র ছেলের বউকে আশির্বাদ করার কথা ছিলো মৃন্ময়ের আম্মু তা পারলেন না। মৃন্ময় বলল,

” তোমার না আমার বউ দেখার খুব শখ ছিলো আম্মু। আমার বউ এর জন্য বালা ও বানিয়ে রেখেছিলো। তোমার ছেলে আজ বউ নিয়ে এসছে। তুমি কি দোয়া করবে না।”
মৃন্ময়ের আম্মু বললেন,
” এভাবে একা একা বিয়ে করে ফেললে। আমাদের একটা বার ও জানালে না।”
তন্ময় বলল,
” আন্টি পরিস্থিতি তেমন ছিলোনা। ওদের দু’জনের কেউ একজন আগে মা’রা যেত। কেউ একজন পরে মা’রা যেত। তার চেয়ে এটাই উত্তম হয়েছে আপনার ছেলে তার ভালবাসার মানুষ নিয়ে আপনার বুকে ফিরে এসছে। ”
মৃন্ময়ের আম্মু বলল,
” তোমাদের আঙ্কেল কে তো চিনোই তোমরা। এক কথার মানুষ। কেমন জেদী ধরনের মানুষ। উনি এই বিয়ে মানবেন কীনা সন্দেহ!”
তন্ময় বলল,

” আপনি একটু বুঝিয়ে বলবেন আন্টি। আমরাও বলব। তরীর মুখের দিকে তাকিয়ে দেখুন কত মায়া। পিহুর ফটোকপি দেখুন।”
মৃন্ময়ের আম্মু তরীর দিকে তাকালো। কি সরল চেহারা মেয়েটার। কি অদ্ভুত এক মায়া কাজ করছে। মৃন্ময়ের আম্মু পিহুকে ইশার দিলো। পিহু সাথে ইশারা বুঝে আলমারি থেকে মোটা স্বর্ণের বালা সহ গহনার সেট নিয়ে এলো। নিজ হাতে ছেলের বউকে বালা সহ গলার হার সহ মোট আট ভরো গহনা পরিয়ে দিলেন। স্বর্ণ পরাতে তরীর মুখটা কেমন চিকচিক করছে। হঠাৎ করে মৃন্ময়ের বাসাটা কেমন আনন্দমুখর হয়ে উঠল। মৃন্ময়ের আম্মু সাথে সাথে রান্নার আয়োজন ও শুরু করলেন। কিন্তু এই আনন্দ কতক্ষণ কতটুকু সময় স্থির থাকবে কে জানে? মৃন্ময়ের বাবা আসার পর ই বা কি হবে? এরই মাঝে কারেন্ট চলে গেল। কারেন্ট যেতেই মৃন্ময় তরীকে জড়িয়ে ধরে একটা চুমু দিতে যেতেই কারেন্ট চলে এলো। সবার চোখ তখন মৃন্ময় আর তরীর দিকে। তরী লজ্জায় কাপড়ের আঁচল দিয়ে মুখ ঢাকল। মৃন্ময় কারেন্ট কে বিশ্রী গালি দিয়ে বলল,
” চুমুটা কম্পিলিট করতে দিলোনা।”
দ্বীপ বলল, ” কি লুইচ্চা রে তুই।”
মৃন্ময় চোখ পাকিয়ে বলল,

” তোরা কি ননসেন্স নাকি বুঝলাম না। নিজেদের দায়িত্ব পালনে এর গাফেলতি কেন?”
তন্ময় বলল,
” কি বলতে চাস?”
” তোরা বলবি না, তোরা দু’জন একটু তোদের রুমে যা। একটু রেস্ট কর।”
তন্ময় বলল,
” আচ্ছা রেস্ট লাগবে তোর?”
দ্বীপ হেসে দিয়ে বলল,
” যা রেস্ট কর, একটু কম করে রেস্ট নিস।”
মৃন্ময় তরীর হাত ধরে বলল,
” চলো, তুমি ক্লান্ত।”

রোশান-সারাহ গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছে। সারাহ’র ক্লান্ত লাগছে। বড় বড় দুইটা হাই তুলে গাড়ির সিটে পা তুলে বসল। রোশান খয়েরি ফ্রেমের চশমাটা খুলে সারাহ’র দিকে তাকাল। এমন চাহনি দেখে সারাহ বলল,
” কি সমস্যা পাড়ার কুটনি মহিলাদের মত তাকাচ্ছেন কেন?”
রোশান সিদ্দিকী গম্ভীর কণ্ঠে বলল,
” হোয়াট?”
সারাহ এবার রোশানের কোলে মাথা রেখে সুয়ে পড়ল। গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
” গাড়িতে আমি ঘুমোতে পারছিনা, একটা বিছানা নেই গাড়িতে। এত কষ্ট করে জার্নি করার জন্যই কি বয়স্ক বুড়ো লোককে বিয়ে করেছিলাম? এখনো আমার জন্য একটা গাড়ি বানাতে পারলেন না। যে গাড়িতে থাকবে একটা সুন্দর বিছানা,একটা ওয়াশ রুম, একটা সোফা।”
” তোমার দ্বারাই এসব উদ্ভট কথা বলা সম্ভব। ” বলেই রোশান অন্যদিকে তাকালো।
এরই মাঝে সারাহ থমথমে মেজাজে বলল,
” আমার কাবিনের টাকা এত কম দিছিলেন কেন?”
রোশান গম্ভীর কণ্ঠে বলল,

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৭

” আমার সামর্থ্য অতটুকু ছিলো তাই।”
সারাহ এক আঙুল রোশানের দিকে তুলে বলল,
” মিথ্যা বলেন কেন শিক্ষক মানুষ। শিক্ষরাও মিথ্যা বলে,এইজন্য দেশটা আজ রসাতলে।”
” কি মিথ্যা বলেছি?”
“চাইলে আরো দু’লাখ বাড়াতে পারতেন।”
রোশান সিদ্দিকী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,
” হাউ?”
সারাহ মুখ বাঁকিয়ে বলল,
” কেন আপনার দুইটা কিডনীর দাম ই তো দু’লাখ টাকা।”
রোশান অদ্ভুত থমথমে চেহারায় সারাহ’র দিকে তাকাল।

একটি নির্জন প্রহর চাই সিজন ২ পর্ব ৪৯