পারমিতা পর্ব ৫৪
Nabila Ahmed
–তুই আমার ভালোবাসার যোগ্য না।
মিতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে অরিয়ন।
–রিয়ন।
অবাক হয়ে বলে মিতা।
–তোর বোকামির কারণে দুটো মানুষ তাদের প্রাণ হারাতে বসেছিলো।
–বাবা, ছোটবেলা থেকে তোকে এতো আদর করেছে। কখনো ভাইয়ের মেয়ে বলে তোকে অবহেলা করেনি। আরিয়ান, তোকে কতোটা স্নেহ করে সব ভুলে গেলি তুই? তোর ভুলের জন্য কী হতে যাচ্ছিলো একবার ভেবেছিস তুই?
বলে অরিয়ন।
–সরি, সরি, আমি বুঝতে পারিনি। আমি তো… আমি তো শুধু বিশ্বাস করেছিলাম।
–বিশ্বাস? কাকে করেছিলি বিশ্বাস? দুই দিনের আসা এই লোককে?
তাচ্ছিল্যের সুরে বলে অরিয়ন।
–আর আমাদের? আমাদের কী করলি তুই? তোর সাথে তো আমাদের সম্পর্ক জন্ম থেকে।
প্রশ্ন করে অরিয়ন।
মিতা কিছু বললো না। বলার মতো কোনো ভাষা নেই মিতার। ঠিকি তো বলেছে অরিয়ন। নিচের দিকে তাকিয়ে রইল মিতা।
–ভালোবাসার সম্পর্ক এভাবে চলে না, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এভাবে চলে না, পরী।
–রিয়ন…আমি…আমি বুঝতে পারিনি উনি…. উনি আমাকে এভাবে ধোঁকা দিবে।
কান্না বন্ধ করার চেষ্টা করতে করতে বলে মিতা।
–আমি তা….তাকে বিশ্বাস করেছিলাম।
হেঁচকি দিতে দিতে বলে মিতা।
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
–এই বিশ্বাসটা তুই আমাকে করতে পারতি! তুই আমাকে জিজ্ঞেস করতে পারতি! সেদিন…আমি যখন তোকে আমার অনুভূতির কথা খুলে বলেছিলাম তখন তুই আমাকে প্রশ্ন করতে পারতি, পরী।
–জানিনা আমার কি হয়েছিলো। সেদিন তুমি আর চাচ্চু একা একা…. একা একা…
কথাগুলো মিতার গলায় আঁটকে আসছে। ঠিক মতো বলতেও পারছে না।
–একা একা কী যেন কথা বলেছিলে তোমরা। এরপরই… এরপরই আমাকে ভালোবাসি বললে। আ…আমি ভেবেছিলাম তুমি মিথ্যে বলছো। হয়তো কিছু প্ল্যান করেছো তোমরা।
–হাহ…আমরা ঠিক করেছিলাম সবকিছু তোকে জানাবো। আর সেটা নিয়েই কথা বলেছিলাম আমরা।
হাসি দিয়ে মিতাকে দূরে ঠেলে দিয়ে দেয় অরিয়ন।
–রিয়ন?
অরিয়নকে স্পর্শ করার চেষ্টা করতে এগিয়ে যায় মিতা।
হাত ছাড়িয়ে নেই অরিয়ন।
–রিয়ন?
অরিয়নের হাত ধরে মিতার দিকে ফেরায় অরিয়নকে।
–যখন থেকে বুঝতে শিখেছি তোমাকে ভালোবাসি, তখন থেকে শুধু অপেক্ষায় ছিলাম তোমার মুখ থেকে তা শোনার।
অরিয়নের হাত শক্ত করে ধরে বলে মিতা।
–সেদিন, সেদিন তুমি হঠাৎ করেই ভালোবাসি বললে। যখন….যখন আমাকে বোঝানো হলো চাচ্চু সব করেছে শুধুমাত্র টাকার জন্য। চাচ্চুর সাথে তোমার এতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আবার দুজনে একা একা কী যেন বললে। তাই….তাই আমি বিশ্বাস করতে পারিনি তোমাকে।
অরিয়নের দিকে তাকিয়ে নিজের মনের কথা খুলে বলে মিতা।
–স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক এমন একটা সম্পর্ক যেখানে সন্দেহ বা কোনো প্রশ্ন উঠলে তা সরাসরি কথা বলে সমাধান করতে হয়। মনে মনে রেখে কিছুই ঠিক হয় না। উলটো সেই সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায়। স্বামী হিসেবে না হয় বাদই দিলাম, কিন্তু আমি না তোর বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম? সেই হিসেবে কী তুই আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিলি? কথা বলেছিলি আমার সাথে?
মিতার থেকে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বলে অরিয়ন।
মাথা নাড়িয়ে না বলে মিতা।
–তোকে ছাড়া ৬ টা মাস আমি কীভাবে কাটিয়েছি তা শুধুমাত্র আমি জানি। আর যখন তোর সাথে দেখা হলো তখন? তখন আবারও মিথ্যে বললি তুই। তখন কী পারতি না সবটা খুলে বলতে?
–রিয়ন!!
–সবার মনে কষ্ট দিয়েছিস তুই।
–রিয়ন!!
–আমার মনে কষ্ট দিয়েছিস তুই।
–সরি,সরি।
অরিয়ন মিতার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইল। কিছু বলতে চেয়েও যেন মুখ দিয়ে কিছু বের হচ্ছে না। মিতার অবস্থাও যে ভালো না তা স্বচোক্ষে দেখতে পারছে অরিয়ন। তবে মিতা আজ যে ভুল করেছে তার জন্য অরিয়নের কি করা উচিৎ তা অরিয়ন বুঝতে পারছে না।
গু*লিগুলো যদি ওদের গায়ে না গেলে অরিয়নের গায়ে লাগতো তাহলেও হয়তো অরিয়ন বিনাদ্বিধায় মিতাকে মাফ করে দিতো।
–রি….
অরিয়ন কোনো কথা না বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মিতা ডাকতে নিয়েও চুপ হয়ে গেল।
অরিয়ন রুম থেকে বের হওয়া মাত্রই কান্নায় ভেঙে পড়ে মিতা। মাটিতে বসে নিজের হাত দিয়ে কপাল ধরে কাঁদতে থাকে। মিতা যে খুব বড় ভুল করে ফেলেছে। নিজেকে নিজেই ক্ষমা করতে পারছে না।
পরের দিন সকাল।
বিছানায় বসে আছে মিতা। পা মেলে খাটের মাথার সাথে হেলান দিয়ে আছে। চোখ বন্ধ।
গতকাল রাতে বাড়িতে কেউ আসেনি। ১ ঘন্টার জন্য শুধুমাত্র মায়া চৌধুরী এসেছিলেন। মিতাকে জোর করে খাবার খায়িয়ে, বক্সে করে সবার জন্য খাবার নিয়ে যান তিনি। মিতা সাথে করে যেতে চাইলেও মায়া চৌধুরীর না বলাতে থেকে যায় মিতা।
আফরিনের সাথে কিছুক্ষণ পর পরই কথা হয়েছে মিতার। হাবিব চৌধুরী আর আবরার দুজনেই আগের থেকে ভালো আছে। আজ বিকালে আবরারকে ছাড়পত্র দিয়ে দেওয়া হবে৷ হাবিব চৌধুরীকে আরও দু চারদিন রাখা হবে হাসপাতালে। রাতে হাসপাতালে অরিয়ন ছিলো না। বাসায় ও ফেরেনি। কোথায় ছিলো কেউ জানেনা।
অরিয়নের সাথে শেষ গতকাল দেখা হয়েছিলো মিতার। এরপর আর কলও করেনি। কতটা কষ্ট পেয়ে অরিয়ন,মিতাকে ইগনোর করছে তা বুঝতে পারছে মিতা।
দরজা খোলার শব্দে চোখ খুলে মিতা। অরিয়ন রুমে প্রবেশ করেছে। অরিয়নের সাথে চোখাচোখি হতেই হাসি দেওয়ার চেষ্টা করে মিতা। মিতাকে দেখেও যেন দেখলো না অরিয়ন। সরাসরি আলমারির কাছে গিয়ে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। অরিয়ন ওয়াশরুম যেতেই দ্রুত খাট থেকে উঠে দাঁড়ায় মিতা। ওয়াশরুমের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ায়। অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতে থাকে অরিয়নের জন্য।
দরজা খুলে অরিয়ন বের হতেই এগিয়ে যায় মিতা।
–কি অবস্থা এখন সবার? আর তুমি…তুমি কোথায় ছিলে রাতে?
প্রশ্ন করে মিতা।
–ভালো আছে।
জবাব দিয়ে সরে যায় অরিয়ন।
–রাতে বাসায় আসোনি কেন?
অরিয়নের দিকে এগিয়ে যায় মিতা।
অরিয়ন কিছু জবাব দিলো না। আলমারিতে টাই খুজতে লাগলো।
–বলো? তুমি কি এখন আমার মুখটাও দেখতে চাও না?
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে বলে মিতা।
মিতার কথা শুনে টাই শক্ত করে ধরে অরিয়ন। মিতার দিকে ফিরে তাকায়। মিতার চোখে পানি ছলছল করছে।
–আই এম সরি, রিয়ন। তুমি তো আমাকে বুঝো। আমি তো ইচ্ছে ক…..
মিতার কথা শেষ হওয়ার আগেই হাটা শুরু করে অরিয়ন।
নিমিষেই রুম থেকে বেরিয়ে যায়। মিতা নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকলো মূর্তির মতো।
বিকালে আবরারকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়। অরিয়ন আর আফরিন মিলে আবরারকে নিয়ে আসে। হাবিব চৌধুরীর সাথে বাড়ির বড়রা থেকে গেছেন।
হুয়িল চেয়ারে আবরার বসা। উরুতে গু*লি লাগার কারণে কিছুদিন হাটাহাটি বন্ধ রাখতে বলেছে ডাক্তার।
গাড়ির হর্ণের আওয়াজ শুনতেই তাড়াতাড়ি করে নিচে নেমে আসে মিতা। ড্রয়িং রুমে দাঁড়িয়ে আছে অরিয়ন আর আফরিন। পাশেই হুয়িল চেয়ারে আবরার বসা। অরিয়ন আর আফরিনের সাথে কি নিয়ে যেন কথা বলতে ব্যস্ত। মিতা সিড়ির কাছে দাঁড়িয়ে রইল। সাহস করে এগিয়ে গেলো না।
–কিরে, ওখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? এখানে আয়।
হঠাৎ করে মিতাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে আবরার।
আবরারের কথা শুনে সবাই মিতার দিকে তাকায়। আফরিনের মুখে আলতো এক হাসি ফুঁটেছে মিতাকে দেখে। অরিয়নের চেহারার এক্সপ্রেশন কোনো পরিবর্তন হলো না। মিতাকে দেখেও যেন দেখলো না।
মিতা ধীরে ধীরে এগিয়ে যায়। আবরারের কাছাকাছি আসতেই হাটু ভেঙ্গে বসে। আবরারকে দেখতেই নিজেকে অনেক অসহায় লাগছে মিতার। শুধুমাত্র মিতার ভুলের কারণেই আবরারের আজ এই অবস্থা। কথাগুলা ভাবতেই মিতার চোখ ভিজে আসে।
–সরি, পারলে ক্ষমা করে দিও।
আস্তে আস্তে বলে মিতা।
–ধুর পাগলি, কি বলছিস এসব?
জবাব দেয় আবরার।
আবরারের কথা শুনে আবরারের দিকে তাকায় মিতা। চোখের কোণ থেকে একফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো মিতার।
–তুই কেন সরি বলছিস? তুই তো ইচ্ছে করে কিছুই করিস নি।
বলে আবরার।
–তাও….আমি উনাকে বিশ্বাস না করলে এরকম কিছুই হতো না।
–তুই বিশ্বাস করেছিস কারণ তুই সহজ-সরল। তোর মনে কোনো কালি ছিলো না তাই।
পেঁছন থেকে বলে উঠে আফরিন।
–আফরিন আপু ঠিকি বলছে। গু*লি আমাকে না গেলে তোরও লাগতে পারতো। তাই বলে কি সব দোষ তোকে দিলেই হবে? তোকে রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব ছিলো, আর সেটাই করেছি আমরা।
মিতার মাথায় হাত রেখে বলে আবরার।
আবরারের কথা শুনে মিতার মন হালকা হয় কিছুটা। আড় চোখে অরিয়নের দিকে তাকায়। অরিয়নের চেহারা এখনো আগের মতোই আছে।
“তুমি কি মাফ করবে না আমাকে?” মনে মনে ভাবে মিতা।
ড্রেসিং টেবিলের কাছে বসে চুল আঁচড়াচ্ছে মিতা, তখনি রুমে ঢুকে অরিয়ন। আবরারকে বাসায় দিয়ে বের হয়েছিলো। এরপর আর বাসায় আসেনি। এখন প্রায় রাত ১২ টা। মিতা সেই কখন থেকে অপেক্ষা করছে অরিয়নের জন্য। অরিয়নকে দেখতেই উঠে দাঁড়ায় মিতা।
–খাবার গরম করে আনছি।
বলে মিতা।
–খেয়ে এসেছি আমি।
জুতার ফিতা খুলতে খুলতে বলে অরিয়ন।
মিতা গিয়ে অরিয়নের পাশে বসে। অরিয়নের হাতের উপর নিজের হাত রাখে।
নিজের হাতের উপর মিতার হাতের স্পর্শ অনুভব করতেই মিতার দিকে তাকায় অরিয়ন। মিতা কিছু বলার আগেই হাত সরিয়ে নেয়। তোয়ালে নিয়ে ফ্রেশ হতে চলে যায়।
মিতা খাটের উপর বসে অপেক্ষা করলেও অরিয়ন যখন ফ্রেশ হয়ে আসলো, তখন কিছু না বলেই খাটে গিয়ে শুয়ে পড়ে। মিতাকে পাশ ফিরে শুয়ে থাকে অরিয়ন। মিতার চোখ দিয়ে শুধু অঝোর ধারায় পানি পড়তেই থাকলো।
২ দিন পর।
আজ হাবিব চৌধুরীকে হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হবে। ১১ টা করে বাসায় চলে আসলে বিকালের ফ্লাইটেই চট্টগ্রাম চলে যাওয়ার প্ল্যান করেছে সবাই।
এই দুইদিনে অরিয়ন আর মিতার মধ্যে কিছুই ঠিক হয়নি। মিতা যতোটা অরিয়নের সাথে কথা বলার চেষ্টা করেছে অরিয়ন ততোই ইগনোর করে গেছে মিতাকে। যদিও আফরিন মিতাকে বুঝিয়েছে যে,সব ঠিক হতে সময় লাগবে। অরিয়নও যে কষ্ট পেয়েছে তা অতিক্রম করতে অরিয়নের সময়ের প্রয়োজন। সব বুঝেও মিতার মন কিছুতেই অরিয়নের এরূপ অবহেলা সহ্য করতে পারছে না।
–ভাই, আপনি বেশি উত্তেজিত হবেন না। অরিয়ন তো সবটা সামলে নিচ্ছে।
ড্রয়িং রুমে বসে বলে মায়া চৌধুরী
১১:৩০ টা করে বাড়িতে চলে এসেছে হাবিব চৌধুরী।
— অরিয়ন একা আর সবটা কীভাবে সামলাবে, মায়া। আমি আর আবরার এখানেই আছি। মিটিংগুলো একের পর এক ডিলে করা হচ্ছে।
জবাব দেয় হাবিব চৌধুরী।
–আহা, হাবিব। আজ চট্টগ্রাম পৌঁছালেই অরিয়ন সব সামলে নিবে। টেনশন নিও না তুমি।
বলে আনিকা চৌধুরী।
–আর ওয়াহিদ তো সব নিজে থেকেই দেখে নিচ্ছে।
বলে মায়া চৌধুরী।
হাবিব চৌধুরী বাসায় এসেছেন প্রায় ১০ মিনিটের মতো হবে। এর মধ্যে মিতা নিজের রুম থেকে বের হয়নি। আনিকা চৌধুরীর ভয়ে বের হয়নি। মিতাকে এমনিতেই পছন্দ করেন না আনিকা চৌধুরী, এখন যখন এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গেছে তখন আনিকা চৌধুরীর রিয়েকশন কী হবে সেটা ভেবেই কূল পাচ্ছে না মিতা।
–মিতা??
দরজায় নক করে আফরিন।
আফরিনের কণ্ঠ শুনে দরজা খুলে মিতা।
–চাচ্চু চলে এসেছে তো।
বলে মিতা।
–জানি।
জবাব দেয় মিতা।
–জানলে এখানে কী করছিস? চল, দেখা করে আসবি।
মিতার হাত ধরে বলে আফরিন।
মিতা নিজের জায়গায় থেকে নড়লো না। অনড় হয়ে দাঁড়িয়ে রইল।
–কী হয়েছে?
ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করে আফরিন।
–আনিকা আন্টি!
ভয়ে ভয়ে বলে মিতা।
–আনিকা আন্টি কিছুই না। কে কী বললো তাতে কিছুই যায় আসে না। তুই কিছুই ইচ্ছে করে করিসনি। সো এখানে সব দোষ তোর নয়।
মিতাকে আশ্বাস দিয়ে বলে আফরিন।
–কিন্তু চাচ্চু…যদি চাচ্চুও রাগ করেন?
–করবেন না। চাচ্চু কেমন তা কী তুই জানিস না?
–হুম।
–হুম নয়, চল তাড়াতাড়ি।
মিতার হাত ধরে হাঁটা শুরু করে আফরিন।
ড্রয়িং রুমে সবাই বসা। সোফায় হেলান দিয়ে বসে আছেন হাবিব চৌধুরী। তার পাশেই আনিকা চৌধুরী বসা। হাবিব চৌধুরীর সাথে কথা বলতে ব্যস্ত। মায়া চৌধুরী বা অরিয়নকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না।
মিতা আর আফরিন সিড়ি বেয়ে নামতেই হাবিব চৌধুরীর চোখ যায় মিতার দিকে। মিতাকে দেখে মিষ্টি এক হাসি দেয় হাবিব চৌধুরী। হাবিব চৌধুরীর হাসি দেখে মন হালকা হয় মিতার। এগিয়ে যেতে যেতে নিজেও এক হাসি ফিরিয়ে দেয়। হাবিব চৌধুরী থেকে চোখ ফিরতেই চোখ যায় আনিকা চৌধুরীর দিকে। গম্ভীরমুখে তাকিয়ে আছে মিতার দিকে। মিতার মুখ থেকে হাসিটা যেন আপনা-আপনি সরে গেল। নিজেকে প্রস্তুত করে নিচ্ছে যা পাওয়ানা তা শুনার জন্য।
–তুমি এখনো এখানেই আছো? অরিয়ন যে বললো ও চলে গেছে।
মিতার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে আনিকা চৌধুরী।
–চলে গেছে মানে? আমরা সবাই এখানে। তাহলে ও কোথায় যাবে?
কপাল কুঁচকে বলে হাবিব চৌধুরী।
আনিকা চৌধুরীর কথা কিছুই বুঝতে পারছে না হাবিব চৌধুরী।
–কেমন আছো তুমি?
হাবিব চৌধুরীর সামনে আসতেই বলে মিতা।
–বেঁচে আছে।
জবাব দেয় আনিকা চৌধুরী।
–আনিকা!!
রাগ করে বলে হাবিব চৌধুরী।
মিতা মাথা নিচু করে রাখলো।
–রাগ হচ্ছে তোমার? ওকে কিছু বললেই রাগ হয় তোমার। আর ওর জন্য আমার মেয়ে ম*রেছে। একটুর জন্য তুমি আর আরিয়ান ম*রতে বসেছিলো। এর আগে অরিয়নকে আধ-ম*রা অবস্থায় এনেছিলে ভুলে গেছো? তাতে আমার রাগ হবে না?
সোফা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।
–ওর জন্য অহনাকে আমরা হারাই নি, আনিকা।
শান্ত কন্ঠে বলে হাবিব চৌধুরী।
–কি!!!
অবাক হয়ে বলে আনিকা চৌধুরী।
পারমিতা পর্ব ৫৩
–মিতাসহ সবাইকে মা*রতে গাড়ির ব্রেকফেল করিয়েছিলো করিম রহমান। এখানে মিতার কোনো দোষ নেই। মিতা ওয়াসিমের সাথে খেলা না করলেও গাড়ির এক্সিডেন্ট হতো।
–করিম রহমান কার শত্রু? কাদের মা*রার জন্য ব্রেকফেল করা হয়েছিলো?
প্রশ্ন করে আনিকা চৌধুরী।
–আনিকা…
–একটা মাথামোটা মেয়ে ছাড়া আর কিছুই না ও। তোমরা এতো বিশ্বাস করেছো আর তার বিনিময়ে কিছুই দিতে পারেনি।
কথাটা বলেই হাঁটা শুরু করে আনিকা চৌধুরী।
আফরিন মিতার হাত শক্ত করে ধরে রাখে।