বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৪
Arshi Ayat
অনুরুপ তিনজনকেই ধরাশায়ী করে ফেললো।ওর হাতের ভারী ঘুষি আর লাথি খেয়ে তিনজনের অবস্থায়ই বেহাল তবে অনুরুপের হাতে লেগেছে একটু।ওদের মধ্যে একজন চাকু বের করে আচমকা ওর বাজুতে মা’রে।সেখানেই জখ’ম হয়েছে তবে গুরুতর নয় তবুও মিলাত ভয় পেয়ে গেছে।তখনই স্বামীর কাছে এগুতে নিলে অনুরুপ হাতে ইশারায় বাঁধা দেয়।
মা’র খেয়ে তিনজনই যখন মেঝেতে পড়ে ছিলো সেই মুহুর্তেই চলে এলো পুলিশ।অনুরুপ ডাকে নি তাদের ডেকেছে মিলাত।ওদের নিয়ে যাওয়ার পর মিলাত দৌড়ে ভেতর থেকে ফাস্ট এইড বক্স নিয়ে এলো।অনুরুপকে সোফায় টেনে বসিয়ে ম্লান স্বরে বলল,’আমার জন্যই আপনার এই অবস্থা।’
‘মোটেই না।নিজেকে দোষ দেওয়া বন্ধ করো মিলাত।সম্পূর্ণ দোষ হলো চৈতির।ওই মহিলা বেয়াদব আর নষ্ট প্রজাতির।
অনুরুপের ক্রোধের উত্তাপ বুঝতে পারলো মিলাত।সে স্বামীকে শান্ত করতে তার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।স্ত্রীর শীতল পরশ পেয়ে অনুরুপের রাগ পড়ে গেলো।মিলাত নমনীয় স্বরে বলল,’চলুন,ডাক্তারের কাছে চলুন।’
‘আমার কাছে তুমিই আমার ডাক্তার।এই যে ব্যন্ডেজ করে দিয়েছো এতেই সেরে যাবে।’
মিলাত স্মিত হেসে বলল,’আপনি বসুন এখানেই আমি নাস্তা নিয়ে আসছি।’
মিলাত নাস্তার জন্য উঠে যেতেই অনুরুপ মনে মনে বলল,’অনেক হয়েছে আর না ওই ন’ষ্ট মহিলার ব্যবস্থা আমি অতি শীঘ্রই করব।’
চৈতি রেভানকেও ফোন করেছিলো।কিন্তু রেভান রিসিভ না করায় মেসেজে লিখেছে,’জান,তোমার মিলাত তো বিপদে আজ ওর এমন অবস্থা করব যে তুমি ওকে ভালোবাসার জন্য আফসোস করবে সারাজীবন।’
এই মেসেজটুকু পড়েই রেভান হার্টবিট বেড়ে গেছে,এসির ভেতরেও কপালে চিকন ঘামের রেখা।সবকিছু ভুলে সে ফোন করলো মিলাতকে।রিসিভ হতেই উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন করলো,’মিলাত তুমি ঠিকাছো?’
ওপাশ থেকে পুরুষ কন্ঠে মার্জিত স্বরে কেউ বলে উঠলো,’জ্বি,মিলাত ঠিকাছে।’
‘আপনি কে?’
‘আমি ওর বর।’
আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন
‘ওর বর’ এই কথা শুনে রেভান ধপ করে নিভে গেলো নিমিষেই।কিছু না বলে খট করে লাইন কেটে দিলো।অনুরুপ ফোনটা টেবিলের ওপর রাখতেই মিলাত নাস্তা নিয়ে এসে বলল,’কে ছিলো?’
‘রেভান।’
এই নাম শুনে মিলাত একটু ভীত হলো।ওই লোকটা কি অনুরুপকে উল্টাপাল্টা কিছু বলেছে?অনুরুপ কি ওকে ভূল বুঝছে?মিলাত ভয়ে ভয়ে প্রশ্ন করলো,’কি বলেছেন উনি?’
‘তুমি ঠিকাছো কি না জানতে চেয়েছে।’
‘ও আচ্ছা।’
মিলাত একটু হাঁপ ছেড়ে বাচলো।পর মুহুর্তেই সোজা হয়ে বসে বলল,’আপনাকে কিছু বলার ছিলো।’
‘বলো।’অনুরুপ পূর্ণ মনযোগ দিলো স্ত্রীর কথায়।
মিলাত নাস্তার প্লেট সামনে দিয়ে বলল,’খাওয়া শুরু করুন।খাওয়া শেষ করলে পরে বলব।’
‘তুমি খাইয়ে দাও।’
‘আমি?’
‘হ্যাঁ,তুমিই।অসুস্থ স্বামীর সেবা করো বউ।’
মিলাত এবার আর কথা বাড়ালো না।নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলো।অনুরুপ বাধ্য ছেলের মত চুপচাপ খেতে শুরু করলো।এক পর্যায়ে কথা গুছিয়ে মিলাত বলতে শুরু করলো,’রেভান কে সেটা বলতে চাই আপনাকে।’
‘লাগবে না।ও কে আমি জানি।’অনুরুপ বাঁধা দিয়ে বলল।
মিলাত ভীষণ অবাক হলো।চোখ বড় বড় করে বলল,’কিভাবে জানেন আপনি?’
‘ওর বোনকে দেখতে গিয়েছিলাম।’
‘কবে?’
‘ওই যে প্রথম দিকে যখন আমাদের পতেঙ্গায় দেখা হয়েছিল তখন।মায়ের জোরাজোরিতে যাই।’
‘ওর বোনকে পছন্দ হয় নি?’
‘পছন্দ হয় নি সেটা না,আসলে তখন মনটা একজনের দিকে চলে গিয়েছিলো অলরেডি।আর কাউকে দেখার প্রয়োজনই মনে করি নি।’
এই ‘একজন’ টা যে মিলাত নিজেই এতটুকু খুব ভালোই বুঝেছে সে।
‘আমার সাথে কিভাবে পরিচয় এটা জানেন?’
‘জানি।রক্ত দিয়েছে তোমাকে।পছন্দও করে।’
‘এতকিছু কিভাবে জানেন?’
‘আমি অনেক পজেসিভ তোমার বিষয়ে।তোমার সাথে দেখা হওয়ার পর থেকে তোমার সব খবর রাখি।’
মিলাত কথাই বলতে ভুলে গেলো।লোকটা মোটেও সাধাসিধা নয়।বুঝতে পারলো তার স্বামী ব্যক্তিটি ভেতর ভেতর অনেককিছু লালন করে।
রেভান বাসায় ফেরার পর সালেহা বেগম ছেলেকে ডাকলেন।নিজের পাশে বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,’তোকে কয়েকদিন ধরে এমন লাগছে কেনো?’
রেভান ভ্রু কুঁচকে না জানার ভান ধরে বলল,’কেমন লাগছে?’
‘এই যে আনমনা,কোনো উচ্ছ্বলতা নেই।আগে তো এমন ছিলি না।’
রেভান ঠোঁটে হাসি টেনে বলল,’মা ব্যবসায়ীক প্রেশার পড়ছে খুব তাই আর কি!তুমি অযথা টেনশন করো না।’
‘আচ্ছা,তবুও নিজের খেয়াল রাখতে হবে আর সেইজন্যই আমি তোর বিয়ে দেব ঠিক করেছি।তিনদিন পর এক জায়গায় মেয়ে দেখতে যাব।’
রেভান মাথা নাড়লো।মলিন স্বরে বলল,’তোমার যা ভালো লাগে করো।আমার আপত্তি নেই।’
সালেহা বেগম খুশি হলেন ছেলের কথায়।মাথায় স্নেহের পরশ দিতে দিতে বললেন,’যা বাবা,ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।’
‘আচ্ছা।’
রেভান নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আঁটকে দিলো।ধীর পায়ে বিছানায় এসে ধপ করে বসে পড়লো মাথা চেপে।অসহ্য লাগছে সব কিছু!জীবন কতটা নিষ্ঠুর কারো পাড়ে ভেঙে দিয়ে কারো পাড় গড়ে।
বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৩
অনুরুপ সারাদিন এক মুহুর্তের জন্যও মিলাতের কাছ ছাড়া হলো না।মেয়েটা এত করে বলল রেস্ট নিতে।কে শোনে কার কথা!শেষে দুপুরে আর টিকতে না পেরে মিলাতের খাটেই ঘুমিয়ে গেলো বেচারা।দুপুরের খাবারও খায় নি।অনুরুপ খায় নি বলে মিলাতেরও খেতে ইচ্ছে হলো না।সে গোসল করে রুমে এসে দেখলো অনুরুপ বালিশ ছাড়াই উল্টো হয়ে শুয়ে আছে।তাই ওর মাথা বালিশে দেওয়ার জন্য তুলতেই আধঘুমে জড়ানো গলায় অনুরুপ বলল,’তোমার কোলে ঘুমাবো।কোলে নাও।’
মিলাত লজ্জা পেয়ে গেলো।তবুও স্বামীর কথা রাখতে বিছানায় বসে ওর মাথাটা কোলেই রাখলো।নরম কোল পেয়ে অনুরুপের যেন আরাম হলো।ও ঘুমের ঘোরেই মিলাতের কোমড় পেঁচিয়ে ধরলো দু’হাতে।বউয়ের নরম কোলে মুখ ডুবিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে লাগলো।মিলাত অনুরুপের চুল হাত বুলাতে বুলাতে ওর দিকেই তাকিয়ে রইলো দীর্ঘক্ষণ।এর মাঝে কখন যে নিজেই ঘুমিয়ে পড়লো জানা নেই।
নুহা সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে পাত্রের ছবি আর বায়োডাটা পেলো মায়ের কাছ থেকে।এই ছেলেই ওকে কয়েকদিনের মধ্যে দেখতে আসবে।নুহা এতটাও গুরুত্ব দিলো না।ছবি বা বায়োডাটা কিছুই দেখলো না।যা দেখার সামনাসামনিই দেখবে।পছন্দ হলে ওইদিনই বিয়ে নয়তো আউট!