অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৯

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৯
ইয়াসমিন খন্দকার

আরিশা একদম বউয়ের মতো সেজে উঠেছে। আফিফাই মূলত আরিশাকে এভাবে সাজিয়ে দিয়েছে। আরিশাকে লাল বেনারসি পড়ে যেন লাল পড়ি লাগছে। আরিশাকে এভাবে সাজিয়ে আয়নার সামনে দাঁড় করিয়ে আফিফা বলে,”জানিস, বোনু আমার খুব ইচ্ছা ছিল যে তোকে বিয়ের দিন নিজের হাতে আমি সাজিয়ে দেব। অবশেষে আজ আমার সেই ইচ্ছেটা পূরণ হলো।”
আরিশা নিজের বোনের মুখে এই কথাটা শুনে হালকা হেসে বললো,”আমিও তো আগেরবার বিয়ের সময় সুন্দর করে সাজতে পারি নি৷ ঐ জাঈদ শেখ তো আমায় সালোয়ার কামিজ পড়িয়েই বন্দুকের নলে রেখে বিয়েটা করেছিলেন। তবে এবার আমি সুন্দর করে বউ সাজতে পেরেছি। আসো আপ্পি, এখন একটা সেলফি তুলি।”
বলেই দুই বোন মিলে কিছু সেলফি তোলে। এমন সময় রাহেলা খন্দকার এসে বলেন,”তোমাদের সাজগোজ হলো? কাজি সাহেব তো এসে গেছেন।”
আফিফা বলে,”হ্যাঁ, আন্টি হয়েছে।”

অতঃপর আফিফা আরিশাকে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামে। জাঈদ একটা সুন্দর কারুকাজ করা শুভ্র পাঞ্জাবি পড়ে বসেছিল৷ আরিশাকে দেখেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। যা দেখে তার পাশে বসা নির্ঝর হালকা হেসে তার হাতে টোকা দিয়ে বলে,”দেখার আরো অনেক সময় পাবে ভাই৷ আপাতত নিজের বিয়েতে মন দাও।”
আরিশাকে এনে জাঈদের পাশে বসানো হয়৷ অতঃপর কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শুরু করেন। তবে এই পুরোটা মুহুর্ত আরিশার দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিল জাঈদ। আরিশাও জাঈদের দিকে কয়েকবার আড়চোখে তাকিয়েছে। অবশেষে কবুল বলার পালা আসতেই আরিশা কিছুটা সময় নিয়ে “কবুল” বলে। এদিকে জাঈদকে তো বলতে না বলতেই কবুল বলে দেয়। যা দেখে নির্ঝর, আফিফা হালকা হাসে। আনিকা খান, রাহেলা খন্দকারও মুচকি হাসেন। এদিকে বিয়ে হতেই আলমগীর খন্দকার এগিয়ে এসে জাঈদের হাত শক্ত করে ধরে বলেন,”আমার মেয়েটাকে অনেক ভরসা করে তোমার হাতে তুলে দিলাম। মেয়েটার জীবনে অনেক দুঃখ ছিল তবে আশা করব তুমি এবার ওকে সুখী করার দায়িত্ব নেবে। ওর সুখের দায়িত্ব আমি তোমার কাধে তুলে দিলাম।”
জাঈদ বলে ওঠে,”আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে চেষ্টা করব আরিশাকে সুখে রাখার। আপনাকে আমি এই সিদ্ধান্তের জন্য আফসোস করতে দেব না।”

আরও গল্প পড়তে আমাদের গ্রুপে জয়েন করুন

আরিশা ফুল দিয়ে সাজানো বাসর ঘরে জাঈদের জন্য অপেক্ষা করছে। মাথায় একহাত ঘোমটা দিয়ে রেখেছে আফিফার কথা অনুযায়ী। আরিশা তাই এভাবেই চুপচাপ বসেছিল। এমন সময় ঘরে কারো প্রবেশ উপলব্ধি করতে পেরেই আরিশা সোজা হয়ে বসে। জাঈদ সরাসরি এসেই দেরি না করে দরজাটা বন্ধ করে। অতঃপর বিছানায় এসে আরিশার ঘোমটা সরিয়ে বলে,”থাক, নতুন বউয়ের মতো এত লজ্জা পেতে হবে। এমনিতেই আমাদের মধ্যে যা হওয়ার আগেই হয়ে গেছে।”
আরিশা বলে ওঠে,”হয়েছিল তো কিন্তু নেশাগ্রস্ত অবস্থায় আর আপনি আমাকে আপ্পি ভেবে..”

আরিশা নিজের পুরো কথা শেষ করার আগেই জাঈদ নিজের হাত দিয়ে তার মুখ আটকে ধরে বলে,”অতীত নিয়ে আর কোন আলোচনা নয়৷ চলো আজ আমরা অতীতের সব অন্ধকার অধ্যায় ভুলে গিয়ে নতুন আরম্ভ করি।”
বলেই জাঈদ আচমকা উঠে দাঁড়িয়ে আরিশাকে কোলে তুলে নেয়৷ আরিশা বলে,”এ কি করছেন?”
জাঈদ আর কোন কিছু না বলে আরিশাকে নিয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। আজ ছিল পূর্ণিমা আর তাই আকাশেও চাঁদ যেন পূর্ণ আলোর কিরণ ছড়াচ্ছিল৷ সেই চাঁদকে সাক্ষী রেখেই আরিশার ঠোঁট জোড়া দখল করে নিয়ে আদরে আদরে ভড়িয়ে দিতে থাকে জাঈদ। তার এমন নরম স্পর্শে আরিশা কাতর হতে শুরু করে। ধীরে ধীরে চিবুক, চোয়ালেও পড়ে প্রেমের আবেশ। অতঃপর আরিশাকে ধরে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়৷ অতঃপর তারা দুজনে ভেসে যায় প্রেমের সাগরে। অশ্রুজলের স্রোত পেরিয়ে অবশেষে প্রেমের স্রোত এসে ভড়িয়ে দেয় তাদের দেহ ও মন।
সকালে আরিশার যখন ঘুম ভাঙে তখন সে নিজেকে জাঈদের নগ্ন বুকে আবিষ্কার করে। এতে বেশ খানিক লজ্জা পেয়ে যায় আরিশা। জাঈদেরও ঘুম ভেঙে যায় আরিশার নড়াচড়ায়। অতঃপর সে বলে,”উঠে পড়েছ জান?”
আরিশা মাথা নাড়িয়ে বলে,”হুম।”

“কেমন লাগছে এখন?”
“ভালোই।”
“সত্যিই? আমার বুকে থাকতে তোমার ভালো লাগছে।”
আরিশা লজ্জা পেয়ে বলে,”ধুর আপনি কি যে বলেন না!”
জাঈদ বলে,”আপনি আজ্ঞে বাদ দিয়ে এখন একটু তুমি করে বলার চেষ্টা করো। আমাদের সম্পর্ক তো এখন স্বাভাবিক, তাই না জান? আর চাইলে একটু জান, বাবু, বেবি এসবও বলতে পারো।”
“আর লজ্জা দেবেন না।”
“আবারও আপনি আজ্ঞে!”
“বেশ তুমি করেই বলবো। এবার খুশি তো?”
জাঈদ আবারো আরিশার ওষ্ঠদ্বয় দখল করে নেয়। অতঃপর কিছুক্ষণ তার ওষ্ঠদ্বয় এর মাঝে ডুবে থেকে মুখ তুলে নিয়ে বলে,”ভীষণ খুশি।”

৬ মাস পর, সময়ের পরীক্রমায় পেরিয়ে গেছে আরো ৬ মাস। এই ৬ মাসে সবার জীবনে অনেক পরিবর্তন এসেছে। জাঈদ ও আরিশা দীর্ঘ ৬ মাস যাবৎ সুখে সংসার করছে। তাদের সম্পর্ক যেন দিনকে দিন গভীর থেকে গভীরতর হয়ে চলেছে। জাঈদ এখন নিজের শ্বশুরের সাথে রাজনীতির মাঠে নেমে পড়েছে। আগে থেকেই অভিজ্ঞতা থাকায় খুব একটা বেগ পেতে হয়নি৷ তারা দুজন এখন খন্দকার বাড়িতেই থাকে৷ সারাজীবন মেয়েকে কাছে না পেলেও মিস্টার ও মিসেস খন্দকার এখন নিজের মেয়েকে তো কাছে পেয়েইছেন সাথে একটা ছেলেও পেয়েছেন৷ জাঈদ তাদের জামাই না একদম ছেলে হয়ে উঠেছে।
এদিকে আজ একটা স্পেশাল দিন। আজ আফিফা ও নির্ঝরের সন্তান পৃথিবীতে আসতে চলেছে। সেই জন্য পুরো বাড়িতে খুশির আমেজ চলছে। আফিফাকে গতকালকেই হাসপাতালে এডমিট করানো হয়েছে। আজ তার ডেলিভারি ডেইট। আরিশা অপারেশন থিয়েটারের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। সাথে সাথে আনিকা খান, নির্ঝর, আবির খান, ছবি বেগম সবাই দাঁড়িয়ে আছেন। ছবি বেগম বলেন,”আল্লাহ, তুমি দেখো, আমাদের বংশধর যেন ভালোয় ভালোয় পৃথিবীর মুখ দেখে। আমি দেখ আমার নাতির ঘরের পুতি-পুতনীর মুখ দেখতে পারি।”
আরিশা বলে,”তুমি চিন্তা করো না দাদি৷ সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আনিকা খান বলেন,”আমি তো ডাক্তার,আমাকে নিশ্চয়ই ওরা ভেতরে যেতে দেবে। আমি গিয়ে দেখি কি অবস্থা।”
নির্ঝরও অস্থির পায়চারি করছিল। নির্ঝরকে সান্ত্বনা দিতে আরিশা বলে,”ভাইয়া আপনি বেশি চিন্তা করবেন না। আমার আপ্পি ফাইটার দেখবেন ফাইট করে আপনাদের সন্তানকে পৃথিবীতে আনবে।”
এমন সময় অপারেশন থিয়েটারের লাল বাতি নিভে যায়। আনিকা খান একটা ছোট বাচ্চাকে কোলে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে আসেন৷ তাকে দেখেই নির্ঝর খান বলে,”চাচি..”
আনিকা খান হেসে হেসে বলেন,”তোমাকে অভিনন্দন। তোমার একটা ছেলে হয়েছে। মা ও ছেলে দুজনেই ভালো আছে। এই নাও তোমার ছেলেকে কোলে তুলে নাও।”
ছবি বেগম খুশি হয়ে বলেন,”আল্লাহর কাছে লাখ লাখ শুকরিয়া যে ওরা দুজনেই এখন ভালো আছে। দেখি দেখি আমার পুতির মুখ দেখি।”
আফিফার ছেলেকে দেখেই ছবি বেগম খুশি হয়ে বলেন,”মাশাল্লাহ,কি সুন্দর চেহারা। একদম বাবার মতোই সুদর্শন হয়েছে।”

আনিকা খান বলেন,”আপনি শুধু নিজের নাতির সাথেই মিল দেখতে পাচ্ছেন। এদিকে আমার তো ওকে দেখে ওর মায়ের কার্বন কপি মনে হচ্ছে। যাইহোক আমি আপনার ছোট ছেলে আর নির্ঝরের বাবাকে ফোন করে সব জানাচ্ছি। ওদের নাতি হওয়ার সুখবর তো ওদের জানা দরকার।”
এদিকে আফিফার ছেলে হঠাৎ করেই কেদে ওঠে। তখন নির্ঝর, ছবি বেগম, আনিকা খান কেউই তার কান্না থামাতে পারে না। এমন সময় আরিশা তাকে কোলে তুলে নেয়। আরিশার কোলে উঠতেই আফিফার ছেলের কান্না থেমে যায়। এমন সময় জাঈদও হাসপাতালে চলে আসে।
সে আরিশাকে বাচ্চাকে কোলে নিয়ে থাকতে দেখে ভীষণ খুশি হয়৷ এমন সময় ছবি বেগম বলে ওঠেন,”বাহ, আরিশা তো খুব ভালোই বাচ্চা সামলাতে পারে। ওর বাচ্চা হলে তো ও একাই সামলাতে পারবে ”

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ পর্ব ৪৮

কথাটা শুনেই আরিশার মুখে আধার নেমে আসে। ছবি বেগম নিজের ভুল বুঝতে পেরে বলেন,”ওহ, আমি তো ভুলেই গেছিলাম..”
আরিশার চোখে জল চলে আসে। জাঈদ এগিয়ে এসে আরিশার কাধে হাত রাখে। আরিশার চোখের ভাষাই যেন তার মা হতে না পারার ব্যথা ফুটিয়ে তুলছিল।

অশ্রুজলে বোনা বিয়ে সিজন ২ শেষ পর্ব