ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২২

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২২
মিথুবুড়ি

‘রাতের গভীরতম প্রহর। আকাশ কালো চাদরে ঢাকা, সমস্ত জগৎ নিথর হয়ে আছে। চারদিকে নিস্তব্ধতা। শহরের রাস্তাগুলো শূন্য, বাতিগুলো ফিকে আলো ছড়াচ্ছে। কোনো গাড়ির শব্দ নেই, নেই মানুষের কোনো চলাচল। ঘড়ির কাঁটা তখন তিনটে ছুঁয়ে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে। বাতাসে এক ধরনের ঠাণ্ডা ভাব, রাত তার শীতল পরশ দিয়ে সমস্ত কিছু ঢেকে রেখেছে।
‘হঠাৎ কর্কশ এক খটখট শব্দ ভেঙে দেয় নিস্তব্ধতা। সেই শব্দে তন্দ্রাচ্ছন্ন এলিজাবেথের ঘুম মুহূর্তেই উধাও হয়ে যায়। বিছানা থেকে হড়বড়িয়ে উঠে বসে। ঘরের ভেতর ছড়িয়ে থাকা আঁধারে অদ্ভুত এক অস্বস্তি বিরাজ করছে। জানালা দিয়ে ফালি ফালি আলো এসে পড়েছে কক্ষের মেঝেতে। এলিজাবেথের দৃষ্টি ধীরে ধীরে জানালার দিকে ঘুরল। আলোর উৎস খুঁজতে গিয়ে ওর চোখ স্থির হয় এক মানব ছায়ার উপর। শিউরে উঠে অভ্যন্তর। জানালার পাশে, আধো আলো-অন্ধকারে দাঁড়িয়ে আছে এক দৈহিক আকৃতির মানবসদৃশ মূর্তি। সে স্থির, নিঃশব্দ। তার লম্বা এবং অস্বাভাবিক চেহারা মনে ভয় ধরিয়ে দেয়। পেছন থেকে দেখা সেই অবয়ব যেন মানব নয়, কোনো ভিন্ন জগতের সৃষ্টি। আলোর রেখা তাকে এমনভাবে ছুঁয়ে যাচ্ছে যে তাকে এক অগ্নি-ছায়ার মতো দেখাচ্ছে। এলিজাবেথের শ্বাস ভারী হয়ে আসে। কম্পন হচ্ছে কণ্ঠগহ্বরে।

“ক-ক-কে?”
‘মূর্তি ছায়াটি ধীরে ধীরে পিছন ফিরে দাঁড়ায়। প্রতিটি মুহূর্তের ভার চারপাশের পরিবেশকে আরও গাঢ় করে তুলছে। ঘরের নিস্তব্ধতা ভেঙে ভেসে আসে এক গম্ভীর, ভারিক্কি কণ্ঠস্বর। সেই কণ্ঠে এমন এক প্রভাব, এমন এক গভীরতা, যা হৃদয়ের শিরায় শিরায় কাঁপন ধরায়। স্বরটির নিজস্ব ওজন এতটাই ভারী যে তা সহ্য করা যেন অসম্ভব। প্রতিটি শব্দে ভর করে আছে অদ্ভুত এক রহস্যময় শক্তি।যা এলিজাবেথের শ্বাসকেও কঠিন করে তুলেছে। মূর্তি ছায়াটি তালি বাজাতে শুরু করল। কর্কশ সেই শব্দে ঘরের নিস্তব্ধতা ভেঙে কেঁপে উঠল সবকিছু।
”ডার্ক”
“ডার্ক”
“ডার্ক”
“ডার্ক”

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

“ওয়েলকাম টু মাই ফ্রিকিং ডার্ক সাইড রেড।”
‘উদীয়মান হলো রিচার্ডের চওড়া তামুক চেহারা। চোখেমুখে লেগে আছে স্পষ্ট শয়তানির ছাপ। ঠোঁটের কোণে এক রহস্যময় হাসি, যা ভয় এবং আকর্ষণ দুটোই তৈরি করে। চেহারায় এমন এক অভিব্যক্তি যেন গভীর রাতে শিকারে বের হয়েছে কোনো এক অভিজাত শিকারী। শরীর জুড়ে বৈদুত্যিক তরঙ্গ খেলে গেল এলিজাবেথের। জবুথবু হয়ে কাঁপতে থাকে।
“আ আপনি এএ এখানে?”
‘লম্বা পায়ের স্বতঃস্ফূর্ত কদম। এক পা এক পা করে এগোতে থাকে রিচার্ড। সোডিয়াম লাইটের আলোতে স্পষ্ট ওষ্ঠপুটের বাঁকা হাসি।
“ইয়েস সুইটহার্ট। ইউ ক্যান্ট স্টে অ্যাওয়ে ফ্রম মি, সুইটি।”
‘থেমে,
“আমার সাম্রাজে এসেছ একটু সাক্ষাৎ না নিলে হয়?”
‘রিচার্ডের প্রতিটি পদক্ষেপ এলিজাবেথের বুকের ভেতর চৈত্র মাসের খরখর সুর তুলে দেয়। পিছিয়ে যেতে যেতে পিঠ ঠেকে বিছানার শেষ প্রান্তে। কম্পিত স্বরে বহু কসরতে আওড়ালো,
“কেন এসেছেন?”
”যখনই তুমি আমাকে ভুলে যেতে শুরু করবে তখনই আমার আগমন ঘটবে তোমার জীবনে।”

“কেন এমন করছেন আমার সাথে?”
‘রিচার্ড নিশ্চুপ।
‘ভয়ে কেঁদে দেয় এলিজাবেথ। কম্ফোর্টার দিয়ে নিজেকে ভালোভাবে মুড়িয়ে থরথর করে কাঁপতে থাকে। পদচিহ্ন নিকটস্থ হতে থাকল। বাড়তে থাকে ভিতরের সংকীর্ণতা। রিচার্ডের দৈত্যমান ছায়া এসে পড়ল এলিজাবেথের উপর। আলগোছে রিচার্ড হাত রাখে এলিজাবেথের মাথায়। এক ঝাঁটকায় সরিয়ে দেয় এলিজাবেথ। সহসাই কান্নায় জর্জরিত কন্ঠে গর্জে উঠল,
“ছুঁবেন না আমায়। আপনি একটা নরখাদক।”
‘অধর এলিয়ে বিদঘুটে হাসি দিল রিচার্ড। ক্রোধ মিশ্রিত স্বরের পরিবর্তে শোনা গেল পুরুষালি হাস্কি স্বর,
“কল মি ড্যাডি বেইব।”

“আপনি ডক্টর দেখান। কোনো সুস্থসবল মানুষের আচরণ এমন হতে পারে না।”
‘বন্ধ কক্ষে ভেঙে পড়ল এক অট্টাহাসি। সেই কর্কশ হাসির শব্দ এলিজাবেথের ভেতরে ঝড় তুলে। হাসির সাথে সাথে কাঁপতে থাকে রিচার্ডের সুগঠন শরীর। রিচার্ড এক টানে মুহূর্তেই টাই খুলে ফেলে দিল গলা থেকে। শোনা গেল গ্যাংস্টার বসের ধীর,শীতল কণ্ঠ,
“আই অ্যাডমিট, আই’ম টক্সিক, স্টাবর্ন, অ্যারোগ্যান্ট, অ্যাগ্রেসিভ, ডেঞ্জারাস, অ্যান্ড সাইকো… বাট হোয়েন ইট কমস টু ইউ, আআই’ম নাথিং বাট ইওর রোমান্স কিং।”
‘বাক্য সম্পূর্ণ করে ঝুঁকে ছুঁতে গেল এলিজাবেথকে৷ এলিজাবেথ চকিতে সরে যায় রিচার্ডের হাতের ছোবল থেকে। এক লাফে বিছানা থেকে নেমে ছুটে দরজার দিকে। রিচার্ড এলিজাবেথের কাজে একটুও অবাক হয় না এমনকি ক্ষোভ প্রকাশ করে না। বরংচ বাঁকা হাসল। পরপর লম্বা পা থেকে দুই কদমে আঁটকে দেয় এলিজাবেথকে। অতঃপর এক টানে নিয়ে আসে নিজের বাহুতে। আবদ্ধ করে নিল নিজের সাথে মিশিয়ে। গাঁ ঘিনঘিন করতে থাকে এলিজাবেথের। মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে মুক্তির প্রয়াসে। রিচার্ড গ্রীবা নামিয়ে দেখতে থাকল এলিজাবেথের ছটফটানি। কান্নার তোড় বাড়তে থাকে এলিজাবেথের। রিচার্ড কুটিল হাতে চেপে ধরল ওর বাঁকানো উন্মুক্ত কোমর। কাপড়ের ফাঁক গলিয়ে বিচরণ করতে থাকল হাত দু’টো। রিচার্ডের ঠান্ডা হাতের শীতল স্পর্শে সহসাই জমে যেতে থাকে এলিজাবেথ। রিচার্ডের লাগামহীন কথা,

“ইউর রোমান্স কিং ইস ব্যাক রেড। ”
‘বুকের ভিতর ঘূর্ণিঝড়ের তান্ডব শুরু হল এলিজাবেথের পূর্বের কথা মনে হতেই। অসহায়ত্বতার সাথে সাথে বাড়তে থাকে ক্রোধ। রিচার্ডের বুকে অসংখ্য কিল-ঘুষি দিয়ে গলা ছেড়ে চেঁচাতে থাকে,
“ছেড়ে দিন বলছি আমাকে। আমি কিন্তু চেঁচাব।”
“চেঁচাও না। এখানেই তো প্রকাশ পাবে আমার ছোয়ার গভীরতা। ”
“জা/নোয়ার একটা আপনি। ছ,,,,
‘এলিজাবেথের ঠৌঁটের উপর হাত রেখে থামিয়ে দেয় রিচার্ড। আশ্চর্যজনক ভাবে আজ একটু রাগ প্রকাশ করছে না সে। এই আচরণ তার বৈশিষ্ট্যের সাথে যায় না, একেবারেই না। হঠাৎ করে এলিজাবেথের ঘাড়ে নাক গুঁজে দেয় রিচার্ড। শুষে নিতে থাকে শরীরের সমস্ত ঘ্রাণ। সেই সাথে ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিচ্ছে গ্রীবাদেশ। শীতল ছোঁয়ায় ভিজে যাচ্ছি চারিধার। এলিজাবেথের গলায় কান্না কুন্ডলী পাকিয়ে ধরে। শব্দ বের হয় না কণ্ঠগহ্বর থেকে। কাতর চোখে তাকিয়ে আছে দরজার দিকে। কিছু মুহুর্তের অবসান ঘটার পর মুখ তুলল রিচার্ড। হঠাৎ অতর্কিত আক্রমণে বুকের ভিতর ধপ করে উঠল এলিজাবেথের। ব্যাথার চোখমুখ কুঁচকে ফেলে ৷

‘রিচার্ড এলিজাবেথের গ্রীবাদ্বয়ের পিছন হাত বাঁকিয়ে মুষ্টিবদ্ধ করে নেয় ওর লাল ঘন কেশ। টেনে মুখ উপরে তুলল। রিচার্ডের রুক্ষ নাক আলতোভাবে ছুঁয়ে যায় এলিজাবেথের ত্বক, যেন বর্ষার প্রথম ফোঁটা মাটিতে মিশছে। নাকের ডগা দিয়ে মুখে দিল ওর গালে লেপ্টে থাকা শ্রাবনধারা। ওষ্ঠ এতটাই কাছে যে নিশ্বাসের উষ্ণতা মিশে একে অপরকে আরও কাছে টেনে নিচ্ছে। রিচার্ডের শরীরের সমস্ত উত্তাপ ঠোঁটের ফাঁক গলিয়ে ছড়িয়ে আঁচড়ে পড়ছে এলিজাবেথের অস্তিত্বে। ওর গভীর, মগ্ন কণ্ঠে মিশে থাকে এক রহস্যময় আবেগে যেন সারা দুনিয়া থেমে গেছে এই মুহূর্তে! শুধু তারা দুজন ছাড়া।

“আমি খুব কষ্ট দিই নাহ ?কোথায়, কোথায় কষ্ট ? সমস্ত কষ্ট আজ ভুলিয়ে দিব আদরে আদরে। ”
‘রিচার্ডের হাত বিচরণ করতে থাকে এলোমেলো পথ ধরে। এলিজাবেথ নিজেকে শক্ত করে রাখে। তাকাচ্ছে না রিচার্ডের নীল আকাশ চোখে। যেখানে আজ নেই হিংস্রতা, নৃশংসতার ছাপ। দুই শরীরের মধ্যে সমস্ত দুরত্ব গুছিয়ে দিল রিচার্ড। যেন এই মুহুর্তে এক পশলা শীতল হাওয়ারও অধিকার নেই তাদের মধ্যে আসার ৷ রিচার্ড এলিজাবেথের সরু নাকের সাথে নাক ঘষতে থাকে।
“ডার্ক রোমান্সের এই যুগে আমি তোমাকে সাত রঙে রাঙিয়ে দিব রেড।”
‘এতোক্ষণে মুখ খুলে এলিজাবেথ। তবে চোখ তখনও বন্ধ। চিবিয়ে চিবিয়ে রুষ্ঠ গলায় বলল,
” আপনার স্পর্শে গা ঘোলাচ্ছে আমার।”

“ঘোলাচ্ছে? এটা তো হওয়ারই কথা। রিচার্ড কায়নাতের স্পর্শে কোনো তৃপ্তি নেই, শুধু ঘৃণা আর যন্ত্রণা। আমি যা ছুঁই, তা অগ্নিতে পুড়ে ছাই হয়ে যায়। আমি মধু নই, আমি বিষ। আমার ছোঁয়া মানে শেষ, আর কোনো দয়া বা সহানুভূতি নেই—শুধু শূন্যতা আর ধ্বংস।”
‘নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে চেঁচাল এবার এলিজাবেথ, ” কোন অধিকারে আপনি আমাকে স্পর্শ করছেন?”
‘থমকে থাকা মস্তিষ্ক আবার জেগে উঠল, ফিরে গেল তার চিরাচরিত পৈশাচিক স্বরূপে। সমুদ্রের নীল গভীর চোখ দু’টোতে জ্বলে উঠে আগ্নেয়গিরির অগ্নি। শান্ত জলে লুকিয়ে আছে ভয়াবহ বিস্ফোরণের অপেক্ষা। রিচার্ড চুলের মুঠি ছেড়ে চেপে ধরল এলিজাবেথের কণ্ঠনালি। দ্বিগুণ তেজে চেঁচিয়ে বলল,”পূর্ণ অধিকারে।”
‘ তৎক্ষনাৎ কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে এলিজাবেথের ঠৌঁট আঁকড়ে ধরে রিচার্ড। বাঁকানো কোমরে আঁকড়ে ধরার স্পর্শে যেন এক অন্ধকারের দাবি। নিশ্বাসের ভারী ঘনত্বে ছড়িয়ে পড়ে অদৃশ্য শিকল, যা পিষে ফেলে সমস্ত প্রতিরোধ। ললাটে ললাটের তীব্র ছোঁয়া! বিষাক্ত অথচ অমোঘ আকর্ষণ। অধরের প্রতি অধরের নিঃশব্দ অগ্রসরতা। ভাঁজে ভাঁজে মিশে যায় এমন এক অনিবার্যতা, যেখানে নিজের সত্তা হারিয়ে যায়। নিশ্বাস একাকার হয়ে আত্মা টেনে নেয় এক অদৃশ্য গহ্বর। হৃদয়ের ছন্দ থেমে যায়, সময় নিজেও আতঙ্কিত।

‘রির্চাডের চঞ্চল হাতগুলো ধীরে ধীরে পরিণত হয় এক দুর্নিবার দাসত্বে।এলোমেলো পথ ধরে খুঁজতে থাকে অনিশ্চিত এক প্রান্ত। এলিজাবেথের নিশ্বাস আটকে আসে! শিরা-উপশিরায় ছড়িয়ে পড়ে এক শীতল শিহরণ। কোনো প্রাচীন, অমর অভিশাপ ঘিরে ধরেছে ওকে। স্পর্শে লুকিয়ে থাকা অন্ধকারে ডুবে যায় মন-প্রাণ, যেখানে আলো নেই, শুধু রয়েছে পাপড়ি ছেঁড়া এক লাল গোলাপের মতো রক্তিম আকাঙ্ক্ষা। প্রতিটি স্পর্শে প্রকাশ পাচ্ছে অযাচিত ক্ষোভ, ক্ষুব্ধতা। ঠৌঁটের কার্নিশ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে ভালোবাসা নামক অত্যাচারের তাজা উষ্ণ র’ক্ত। উগ্র থেকে উগ্র প্রতিটা ছোঁয়া। প্রতিটি পদক্ষেপে বেপরোয়াতা।
‘সরে আসে রিচার্ড। শরীর ছেড়ে দেয় এলিজাবেথের। লুটিয়ে পড়ে মেঝেতে। ঠুকরে কেঁদে উঠল। রিচার্ড ভ্রু কুঁচকে তাকায় ক্রন্দনরত এলিজাবেথের দিকে। হাতের পিঠ দিয়ে ঠৌঁট মুছতে মুছতে বলল,
“আই নো আই’ম হট। আমার সংস্পর্শে আসা প্রতিটা জায়গা এভাবেই জ্বলসে যায়। আমি আশেপাশে না থাকলেও থেকে যায় আমার স্পর্শের জ্বলছ এবং চিন্হ।

সো ডোন্ট ক্রাই। নিজেকে মানসিক এবং শারিরীক ভাবে প্রিপেয়ার্ড রাখো। শর্ট পিরিয়ড।”
‘লজ্জা ও ঘৃণায় এলিজাবেথ নিজের মাথা তুলতে পারে না। চোখের জলে ভেসে উঠতে থাকে অদৃশ্য বেদনা, আর প্রতিটি অশ্রু আত্মার গভীরে ক্ষত রেখে যাচ্ছে । ঘৃণার ছোবল আরও তীব্র হয়ে ওঠে, নিজেকে ঘৃণা করতে করতে এলিজাবেথ নিজের অস্তিত্বকেই অস্বীকার করতে শুরু করে। হৃদয়ে গহিন এক অজানা ক্ষতের দাগ, যা কখনো শুকাতে জানে না। যা কেউ জানে না।
‘রিচার্ডের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে পুরুষালি উত্তাপ। অনবরত ঘামতে থাকে শরীর। প্রতিবার পুরুষালি আকর্ষণ উদিত হয়, বড় বড় ঢোল গিলার সাথে সাথে ভেসে উঠে আসে আ্যডামস অ্যাপল।
“ইওর টেস্ট ইজ সুইটার দ্যান সুইট হানি। ”
‘নিঃশব্দ! শুধু নাক টানার শব্দ।

“রেড গেট আপ।”
‘এবারও নিশ্চুপ এলিজাবেথ। ক্রোধ বাড়তে থাকে অভিশপ্ত রাজার। স্বরে বিরাজ করে কঠোরতা,
“আই সেইড গেট আপ ইউ ফা’কিং ডার্ক রেড।”
‘নিরবতার বাঁধ ভাঙে না এলিজাবেথের। হঠাৎ করেই ঠৌঁটের কোণে পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠল রিচার্ডের। নিরেট ঠান্ডা গলায় বলল,
“আর ইউ আস্কিং মি টু নি’ল ডাউন?”
‘কর্নপাত হবার সাথে সাথে চব্বিশ বোল্ডের ধাক্কা খেল এলিজাবেথ। শরীর জুড়ে এক ধরনের বিদ্যুৎ প্রবাহ অনুভূত হলো। তড়িঘড়ি করে ওঠে দাঁড়ায় সে। সন্তুষ্টি জনক বাঁকা হাসি দিল রিচার্ড।
“নরপ’শু।”
‘পকেট থেকে সিগারেট বের করতে থাকে রির্চাড বলল,
“ওয়াচ ইয়োর ওয়ার্ডস,মাই লেডি।”
‘ঠৌঁট গোল করে সিগারেটের বিষাক্ত ধোঁয়া সমস্ত ছেড়ে দিল এলিজাবেথের মুখের উপর রিচার্ড। নিশ্বাস আঁটকে আসে এলিজাবেথের। খোকখোক করে কাশতে থাকে। শ্বাসকষ্ট শুরু হয়ে যায় মুহুর্তেই৷ বুকে হাত চেপে হাঁটু ভেঙে বসে পড়ল এলিজাবেথ। হাঁপাতে হাঁপাতে অস্পষ্ট স্বরে আওড়ায়,

“প্লিজ স্টোপ। সিগারেটের ধোঁয়ায় আমার এলার্জি। ‘
‘থুরি তোয়াক্কা করল হৃদয়হীন গ্যাংস্টার বস। নিরুদ্বেগহীন ভাব নিয়ে বলল,”ওয়েল আই ফা’কিং ডু।”
‘নিশ্বাস থেমে আসে এলিজাবেথের। অবাক হয় না রিচার্ডের আচরণে। অবার হবার বিষয়ও না। ভেজা চোখে এক পল তাকাল রিচার্ডের দিকে। নিভু স্বরে শোধায়,
“কেন এমন করছেন আমার সাথে?”
“আমি কোনো হৃদয়বান প্রেমিক পুরুষ নই, যে ভালোবাসার গল্প লেখে। আমি ভিলেন, টক্সিক ভিলেন, যে ভালোবাসাকে নিজের শর্তে চালায়। ”

‘এলিজাবেথ কিছু বলার সুযোগই পেল না। রিচার্ড এক লাফে জানালা পেরিয়ে বাইরে। বিস্ফারিত চোখে হতবাক হয়ে এলিজাবেথ দৌড়ে গেল জানালার কাছে, ঝুঁকে নিচে তাকাল। ঠিক নিচেই রিচার্ডের গাড়ি দাঁড়িয়ে ছিল। রিচার্ড একপা এগিয়ে মাথা উঁচু করে।তার চোখে চিরচেনা বিদ্রূপের ঝলক। এলিজাবেথের দৃষ্টি মিলে গেল রিচার্ডের সঙ্গে। এক দুর্বোধ্য, ব্যাখ্যাতীত মুহূর্ত। ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসি টেনে রিচার্ড চোখ টিপল। তারপর কোনো অপেক্ষা না করেই গাড়িতে উঠে মুহূর্তেই মিলিয়ে গেল রাতের অন্ধকারে। সেকেন্ড ফ্লোর থেকে লাফ দেওয়া রিচার্ডের মতো কারও জন্য তেমন কঠিন কিছু ছিল না। কিন্তু এলিজাবেথের জন্য? ধীরে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে বসে পড়ল মেঝেতে। চোখ থেকে ঝরতে থাকা কান্নার ভার আর সামলাতে পারল না।
‘হঠাৎ দরজার বাইরে থেকে ডাকতে থাকে তাকবীর। বারবার দরজায় ধাক্কা দিচ্ছে। বুক শুকিয়ে এলো এলিজাবেথের। মুছে নিল চোখের জল। পরপর গিয়ে দরজা খুলল। তাকবীর কে কিছুটা অস্বাভাবিক লাগছে। ঘুমে টলছে সে। তবে মাতাল মনে হচ্ছে না। হাতের পিঠ দিয়ে বারবার চোখ কচলাচ্ছে।

“আ আপনি ভালো মানুষ?”
‘ঘন ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নিল তাকবীর।
“ঘুমাওনি তুমি?”
‘মিথ্যে হাম তুলতে থাকে এলিজাবেথ,” হ্যাঁ ঘুমাচ্ছিলাম তো। আপনি ঘুমাননি? কোথাও কি গিয়েছিলেন?”
‘তাকবীর একটু আগ বাড়িয়ে ই জবাব দিল,”না না ঘুমাচ্ছিলাম তো। হঠাৎ মনে হলো তুমি কান্না করছ। এমন শব্দ আসছিল ভিতর থেকে। তাই একটু দেখতে আসলাম। ঠিক আছো তুমি?”
‘গলা কাঁপছে এলিজাবেথের। এত মহৎ হৃদয়ের একজন মানুষের সামনে বারবার মিথ্যে বলা তার পক্ষে আর সম্ভব হচ্ছিল না। কিন্তু সত্যি স্বীকার করলেই নতুন ঝামেলা তৈরি হবে। আর রিচার্ড যদি কোনো ঝামেলায় জড়ায়, চুপ করে বসে থাকার লোক সে নয়। এলিজাবেথ ক্লান্ত-হারাতে হারাতে অবশ হয়ে গেছে মন। তবু ঠোঁটে হাসি টেনে ফিসফিস করে বলল,

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২১

“হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। আপনি অযথা চিন্তা করবেন না।”
‘তাকবীরের চোখের সামনে সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসছিল। তাই নজরে পড়ল না এলিজাবেথের গলার জমাট বাঁধা রক্তের দাগ, কাটা ঠোঁট, চোয়ালের গভীর আঙুলের চিহ্ন। মৃদু হাসল তাকবীর।
“আচ্ছা শুয়ে পড় তবে। আমিও গেলাম।”
‘চলে গেল তাকবীর।এলিজাবেথ নিথর হয়ে দাঁড়িয়ে রইল, শূন্য দৃষ্টিতে।ঠিক যেমন ছিল-একদম একইভাবে।

ভিলেন ক্যান বি লাভার পর্ব ২৩