বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৬

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৬
Arshi Ayat

একটু আগে যা হলো তাতে মিলাত এতটুকু বুঝে গিয়েছে তার স্বামী মহাশয় মোটেও সভ্য নয়,বরংচ একটু বেশিই বেপরোয়া।কোন কুক্ষণে যে তখন ওই কথাটা বলল মিলাত জানে না।ওই কথার পর এই বদ্ধ ঘরে,এই বিছানায় যে ঝড় উঠেছিলো দুই মানব মানবীর তনু মনে তাতে উন্মাদ হতে সময় লাগে নি কারোই।
রাতের শেষ প্রহরে অনুরুপ স্ত্রীর কানে ফিসফিসিয়ে বলল,’বউ,পুরুষত্ব প্রমাণ করতে পেরেছি?’
মিলাত লজ্জায় মুখ ঘোরালো।অনুরুপ ওর দিকে আরেকটু ঝুঁকে বলল,’মনে হচ্ছে এখনও তোমার সন্দেহ আছে,তাহলে চলো আরেকবার…’
মিলাত দ্রুত তার অসভ্য,বেহায়া স্বামীর মুখ চেপে ধরলো।জড়ানো স্বরে অনুনয় করে বলল,’অনুরুপ,প্লিজ!’

‘কি প্লিজ,বউ?’
‘আর না।’
‘সন্দেহ আছে?’
‘একদমই না।’
অনুরুপ হাসলো।নিজের চুলে হাত বুলিয়ে বলল,’আজ তোমার কাছে কুমারত্বের বিসর্জন দিলাম।নিজেকেই দিয়ে দিলাম।এরপর আর একটা দিনও থাকতে পারব না তোমাকে ছাড়া।’
‘কিন্তু বাবা তো এখন দেবে না।আরও একবছর পর আমাকে নিয়ে যেতে পারবেন।’
‘একবছর তো দূর একদিনও সম্ভব না।দরকার হলে তৃতীয় যুদ্ধ ঘোষণা করব তবুও আমার বউ আমার চাই।’
‘বাবা না মানলে?’
‘শ্বশুর আব্বা,না মেনে যাবে কোথায়?মানিয়েই ছাড়ব আমি।’
‘তাই না?ঠিকাছে আগে মানিয়ে নিন।’
‘চ্যালেঞ্জ করছো?’

আরও গল্প পড়তে এখানে ক্লিক করুন 

মিলাত অনুরুপের চোখে চোখ রেখে বলল,’করছি।’
‘হারবে।’
‘হারিয়ে দেখান।’
‘ঠিকাছে,হারাতে পারলে কি দেবে?’
‘কি চান?’
‘সেটা তোলা থাক।চেয়ে নেব সময় মতো।’
‘ঠিকাছে।’
এভাবেই স্বামী স্ত্রীর কথোপকথন চললো আরও কিছুক্ষণ।তারপর স্বামীর নগ্ন,উষ্ণ বুকেই ঘুমিয়ে পড়লো মিলাত।
রেভান আর ওর পরিবার নুহাকে আজ দেখতে এসেছে।যদিও রেভান অনুভূতি নেই এখন আর।মায়ের ইচ্ছেতেই হচ্ছে এসব।দেখাদেখির একপর্যায়ে নুহা সবার সামনে বলল,’আমি একটু ওনার সাথে আলাদা কথা বলতে চাই।’
নুহার কথায় উপস্থিত সবাই একটু থমকালো।পরমুহূর্তে রেভানের মা’ই আগ্রহের সাথে বলল,’হ্যাঁ হ্যাঁ যাও তোমরা আলাদা কথা বলো।’
অগত্যা রেভানকেও নুহা পেছন পেছন যেতে হলো।ওরা নুহার রুমে আসলো।ঘরে প্রবেশ করতেই নুহা বলল,’আজই যে আমাদের বিয়ে জানেন আপনি?’

‘জানি।’রেভান নির্বিকার।
‘আপনার আপত্তি নেই?’
‘না।’
‘আমাকে পছন্দ হয়েছে?’
‘না।’
নুহা তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,’তাহলে কেন বিয়ে করতে চাইছেন।’
‘ফ্যামিলি চাইছে তাই।’
‘আপনার কোনো পছন্দ আছে?’
‘না।’
‘কাউকে ভালোবাসতেন?’
‘হ্যাঁ।’
‘তাকে বিয়ে করছেন না কেন?’
‘ও অন্য কোথাও বিয়ে করেছে আর ও আমাকে ভালোবাসে না।’
‘ঠিকাছে চলুন যাওয়া যাক।’

ওরা ফিরে এলো।তারপর নুহাকে আংটি পরানো হলো।এর কিছুক্ষণ পরই নুহা আর রেভানের আকদ হলো।নুহার কাহিনি ও ধরতে গেলে একই।দু’বছর ভালোবাসার পর ছেলেটা চিট করে ওকে।আর এই মুহুর্তে এখন ভালোবাসার প্রতি বিশ্বাস নেই।তাই এমন কাউকেই দরকার যারও ওর মতই অবস্থা।
মিলাত ক্লাস শেষ করে অনুরুপের হাসপাতালের দিকে রওনা হলো।আজ সকালে ঘুম থেকে উঠে অনুরুপকে পায় নি সে তবে একটা চিরকুট পেয়েছিলো।যেখানে লেখা,’বউ পাখি,আ’ম স্যরি।ইমারজেন্সি ছিলো।খেয়ে ক্লাসে যেও।দুপুরে দেখা হবে।আই লাভ ইউ।’
চিরকুট’টা পেয়ে মিলাতের মন ভালো হয়ে গিয়েছিলো।তাই এখন সে ক্লাস শেষে স্বামীর সাথে দেখা করতে যাচ্ছে।হাসপাতালে পৌঁছে অনুরুপের চেম্বারের সামনে আসতেই দেখতে পেলো অনুরুপ রোগী দেখছে।তাই আর ভেতরে গেলো না,বাইরে দাঁড়ালো।অনুরুপের এসিস্ট্যান্ট বলল,’আপনি সিরিয়সল নিয়েছেন?স্যারকে দেখাতে হলে সিরিয়াসল নিতে হয় দু’দিন আগে।’

মিলাত একগাল হেসে বলল,’আপনার স্যারই আমার সিরিয়াল নিয়ে রেখেছেন।চিন্তা করবেন না।’
ওর কথা শেষ হতে হতেই রোগী বেরিয়ে এলো আর তখনই মিলাত চেম্বারে ঢুকে গেলো।পেছন থেকে এসিস্ট্যান্ট চিল্লাতে চিল্লাতে বলছে,’বাইরে আসুন,এভাবে সিরিয়াল ভঙ্গ করা যাবে না।’
মিলাতকে দেখে অনুরুপ আওয়াজ তুলে বলল,’আবিদ,ভেতরে এসো।’
অনুরুপের এসিস্ট্যান্ট আবিদ ভেতরে এসেই অভিযোগ করে বলল,’স্যার আমি বলেছিলাম আসতে না কিন্তু শোনে নি এই মহিলা।’
‘শাট আপ!এসব কি কথা?ভাষা ঠিক করো আর ওকে ম্যাম ডাকবে।আরেকটা কথা কান খুলে শুনে রাখো ওর এখানে আসতে কোনো সিরিয়াল লাগবে না।ও সুপার ভিআইপি।এখন স্যরি বলো আর আধঘন্টার মধ্যে রোগী পাঠাবে না।’
আবিদ মিলাতের দিকে চেয়ে বলল,’স্যরি ম্যাম।’
তারপর চলে গেলো।মিলাত ওর কাঁধের ব্যাগটা টেবিলের ওপর রেখে বলল,’এত বকা না দিলেও পারতেন।ও তো জানতো না।’

‘বকা না দিলে মাথায় ঢোকে না।এখন এদিকে আসেন আপনি।’
মিলাত অনুরুপের কাছাকাছি আসতেই অনুরুপ ওর হাত টেনে নিজের কোলের ওপর বসিয়ে দিলো।জামার ওপর দিয়েই মিলাতের পিঠে চুমু খেয়ে বলল,’ভীষণ মিস করেছি তোমায়।’
মিলাত হাসলো অল্প।বলল,’খেয়েছেন?’
‘না।’
‘খাবেন না?’
‘হ্যাঁ,একটু পর।তুমি খেয়েছো?’
‘বাসায় গিয়ে খাব।’
‘ঠিকাছে আমি বিকেলেই ফিরব।’
‘লাভ নেই।বাবা,মা ফিরছে আজ রাতেই।’
অনুরুপের মন খারাপ হলো।ও মুখ ভার করে বলল,’সমস্যা নেই।শ্বশুরবাড়িই থাকব আজ থেকে।আমার বউ না দিলে আমিও নড়বো না।’
মিলাত হেসেই ফেললো।বলল,’ঢং,ছাড়ুন তো!’
অনুরুপ ওর কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল,’এই,চলো আমাদের ফ্ল্যাটে চলো আজকে।পরে তোমার বাপকে বুঝিয়ে বলব।’

‘মোটেই না,কাল রাতের চ্যালেঞ্জের কথা ভুলে গেছেন?’
অনুরুপ হতাশ গলায় বলল,’ঠিকাছে,জেতার পর তোমার খবর আছে।’
‘ঠিকাছে,এবার ছাড়ুন।’
অনুরুপ ছাড়লো ঠিকই তবে মুখ ভার করে রইলো।মিলাত স্বামীর কপালে একটা চুমু দিয়ে আলতো স্বরে বলল,’খেয়ে নিয়েন।’
এবার একটু হাসির দেখা মিললো অনুরুপের মুখে।ও মিলাতের হাতে চুমু খেয়ে বলল,’তুমিও,খেয়ে নিও।রাতে আসছি।’
‘আচ্ছা।’
মিলাত যাওয়ার পর অনুরুপের ফোন একটা টেক্সট এলো।ও টেক্সট’টা চেক করেই একটা কুটিল হাসি দিলো।তারপর চৈতির ফোনে ফোন করলো।রিসিভ হতেই বলল,’কি অবস্থা?’
‘ফোন কেন করেছন?’চৈতি কঠোর স্বরে বলল।
অনুরুপ হাসি মুখেই বলল,’বউয়ের বড়বোনের খোঁজ খবর নিতে।’
‘নাটক বাদ দেন।আসল কথা বলুন।’
‘গেইম অন।এতদিন তুই আমার বউটাকে অসহায় পেয়ে যা ইচ্ছা করেছিস।আজ থেকে উল্টো গোণা শুরু কর।’
‘মানে?’

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৫

‘মানেটা কিছুদিন পরই বুঝবি তার আগে একটা নিউজ দেই।তুই যাকে ভালোবাসিস সে বিয়ে করেছে।কাকে জানিস?’
চৈতি কথা বলতে পারলো না।রেভান বিয়ে করেছে!বুকের ভেতর প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হলো ওর।
অনুরুপ ওর উত্তরের অপেক্ষা না করেই বলল,’রেলমন্ত্রী মতিউর হাসানের মেয়ে নুহা হাসান।এবার দেখা যাক রেলমন্ত্রীর রক্ষিতার দৌড় কতদূর!’
কথাটা বলেই অনুরুপ অট্টহাসি হেসে ফোন কেটে দিলো।

বিকেলের প্রণয় পর্ব ৩৭